হেরমান হেস
৯ আগস্ট, ১৯৬২ পরলোকগমন করেন।
জার্মানি র একজন কবি এবং চিত্রকর, যিনি পরবর্তিতে সুইজারল্যান্ডীয় নাগরিক হন। তার সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যকর্মগুলির মধ্যে রয়েছে: স্টেপেনউলফ, সিদ্ধার্থ, এবং দ্য গ্লাস বিড গেম (যেটি ম্যাজিস্টার লুডি নামেও পরিচিত)। তিনি ১৯৪৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন
তিনি ১৮৭৭ সালের ২ জুলাই জার্মান সাম্রাজ্যের ভুর্টেমবার্গের কাল্ভের ব্ল্যাক ফরেস্ট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামহরা ভারতে বেসেল মিশন নামে একটি প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান মিশনারি সমাজের অধীনে একটি মিশনে কাজ করেছিল। তার মাতামহ হেরমান গুন্ডার্ট মালয়ালম ভাষার বর্তমান ব্যাকরণ রচনা করেন, মালয়ালম -ইংরেজি অভিধান সংকলন করে এবং মালয়ালম ভাষায় বাইবেল অনুবাদে অবদান রাখেন। হেসের মা মারি গুন্ডার্ট ১৮৪২ সালে ভারতে এমন একটি মিশনে জন্মগ্রহণ করেন। তার নিজের শৈশব বর্ণনা করে তিনি বলেন, " আমি একজন সুখী শিশু ছিলাম না ...", যা সেই সময়ে মিশনারিদের মধ্যে স্বাভাবিক ছিল, চার বছর বয়সে তার বাবা তাকে ইউরোপে রেখে ভারতে ফিরে আসেন।
হেসের বাবা ইয়োহানেস হেস ছিলেন একজন ডাক্তারের পুত্র। তিনি ১৮৪৭ সালে এস্তোনিয়ান শহরে পায়েডে (উইসেনস্টাইন) জন্মগ্রহণ করেন। ইয়োহানেস হেস রাশিয়ান শাসিত বাল্টিক অঞ্চলে জার্মান সংখ্যালঘু ছিলেন। ফলে তার পুত্র হেরমান জার্মান এবং রুশ উভয় সাম্রাজ্যের নাগরিক হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] হেরমানের পাঁচজন ভাইবোন ছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে দুজনই শৈশবে মারা গিয়েছিল। ১৮৭৩ সালে, হেসের পরিবার ক্যালভে চলে আসে, যেখানে ইয়োহানেস কাল্ভার ভের্লাগসভেরিনে জন্য কাজ করতেন। ভের্লাগসভেরিন ছিল ধর্মভিত্তিক রচনা এবং স্কুল-বইয়ের প্রকাশনী। মারির বাবা, হেরমান গুন্ডার্ট (এছাড়াও তার নাতির নাম), সেই সময়ে এই প্রকাশনী পরিচালনা করতেন এবং ১৮৯৩ সালে ইয়োহানেস হেস এর উত্তরাধিকারী হন।
শিক্ষাজীবন
১৮৮১ সালে হেসের যখন চার বছর বয়স, তার পরিবার সুইজারল্যান্ডের বাসেলের বাড়িতে ছয় বছর বসবাস করে এবং তারপর আবার কাল্ভে ফিরে আসেন। গ্যোপিঙেনের ল্যাটিন স্কুলে পড়াশুনা করার পর হেসে ১৮৯১ সালে মলব্রোন অ্যাবের ইভাঞ্জেলিকাল থিওলজিকাল সেমিনারিতে ভর্তি হন। জার্মানির সবচেয়ে সুন্দর এবং সুপ্রতিষ্ঠিত স্কুল অ্যাবেতে শিক্ষার্থীরা সপ্তাহব্যাপী ৪১ ঘণ্টা ক্লাস করত। যদিও প্রথম মাসগুলোতে হেসে ভাল করেছিলেন। এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন যে তিনি বিশেষ করে প্রবন্ধ লেখা এবং ধ্রুপদী গ্রীক পদ্যসমূহ জার্মান ভাষায় অনুবাদ করতে পছন্দ করতেন। পরে মলব্রোনে তিনি কিছু সংকট পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যান।[৫] ১৮৯২ সালের মার্চ মাসে হেসে বিপ্লবী হয়ে ওঠেন। তিনি সেমিনারি থেকে পালিয়ে যায় এবং পরের দিন এক খেতে তাকে পাওয়া যায়। হেসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্কুলে যেতে শুরু করেন এবং তার বাবা-মায়ের সাথে তীব্র দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হন। মে মাসে আত্মহত্যার চেষ্টা করার পর তিনি ধর্মতত্ত্ববিদ এবং মন্ত্রী ক্রিস্টফ ফ্রিডরিখ ব্লুমহার্টের অধীনে ব্যাড বোলের একটি প্রতিষ্ঠানে কিছু সময় কাটান। পরে তাকে স্ট্যাটেন আইম রেমস্টাল মানসিক হাসপাতালে এবং তারপর বাসেলের একটি ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়। ১৮৯২ সালের শেষের দিকে তিনি কান্সটাটের (বর্তমান স্টুটগার্টের অংশ) একটি জিমনেসিয়ামে যোগদান করেন। ১৮৯৩ সালে তিনি এক বছরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং এই পরীক্ষার মাধ্যমে তার স্কুল জীবনের সমাপ্তি ঘটে। একই বছর তিনি তার থেকে বড় সঙ্গীদের সাথে সময় কাটান এবং মধ্যপান ও ধূমপান শুরু করেন।
সাহিত্যকর্ম
১৯০০ - হেরমান লস্কার
১৯০৬ - বিনিথ দ্য হুইল (দ্য প্রডিজি নামে প্রকাশিত)
১৯১০ - গার্টুড
১৯১৪ - ইন দি ওল্ড সান
১৯১৯ - স্ট্রেঞ্জ নিউজ ফ্রম অ্যানাদার স্টার
১৯১৯ - ডেমিয়ান (এমিল সিনক্লেয়ার ছদ্মনামে প্রকাশিত)
১৯২২ - সিদ্ধার্থ
১৯২৭ - স্টেপেনউলফ
১৯৩২ - জার্নি টু দ্য ওয়েস্ট
১৯৪৩ - দ্য গ্লাস বিড গেম (ম্যাজিস্টার লুডি নামে প্রকাশিত)।
পুরস্কার
১৯০৬ - বুয়ের্নফেল্ড-প্রেইস
১৯২৮ - ভিয়েনার দ্য স্কিলার ফাউন্ডেশনের মাজস্ট্রিক-প্রেইস
১৯৩৬ - গটফ্রিড-কেলার-প্রেইস
১৯৪৬ - গ্যোটে পুরস্কার
১৯৪৬ - সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার
১৯৪৭ - বার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট
১৯৫০ - ভিলহেল্ম রাব সাহিত্য পুরস্কার
১৯৫৪ - পুর লে মেরিত
১৯৫৫ - জার্মান বুক ট্রেডের শান্তি পুরস্কার।
সিদ্ধার্থ নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জার্মান লেখক হেরমান হেস এর লেখা অন্যতম জনপ্রিয় একটি উপন্যাস। গৌতম বুদ্ধের সময়ে ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণকারী "সিদ্ধার্থ" নামে এক যুবকের আধ্যাত্বিক অভিযাত্রা এবং দর্শন এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য
হেরমান হেস এর এই নবম উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল জার্মান ভাষায় , খুব সরল অথচ মাধুর্যপূর্ণ ছন্দে । হেরমান হেস ১৯১০ সালে ভারতে কিছুদিন কাটানোর পর, বইটি সর্বপ্রথম প্রকাশ পায় ১৯১২ সালে । বইটি যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম প্রকাশ পায় ১৯৫২ সালে এবং ৬০ এর দশকে বেশ প্রভাব বিস্তার করে। হেস বইটি উৎসর্গ করেন প্রিয় বন্ধু এবং নবেল পুরস্কার বিজয়ী ফরাসি নাট্যকার রোমেইন রোনাল্ড কে।
বাংলাদেশে বইটি সর্বপ্রথম প্রকাশ করে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, ২০০২ সালে । বইটি অনুবাদ করেন জাফর আলম এবং সম্পাদনা করেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
সিদ্ধার্থ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত সমাস, সিদ্ধ (অর্জন) + অর্থ ( সম্পদ/ জ্ঞান ) = সিদ্ধার্থ (অর্জিত জ্ঞান)। অর্থ্যৎ কোন যাত্রী ( অনুষন্ধিৎসু ব্যক্তি বিশেষ) যিনি তার মোক্ষম লক্ষ্যে পৌছুতে সক্ষম হন। বুদ্ধত্ব লাভের পূর্বে গৌতম বুদ্ধের নাম ছিল রাজপূত্র "সিদ্ধার্থ "গৌতম। তবে এই উপন্যাসের সিদ্ধার্থ এবং গৌতম বুদ্ধ দু'জন ভিন্ন মানুষ।
সিদ্ধার্থ গ্রন্থ সম্পর্কে মার্কিন লেখক হেনরি মিলার বলেছেন : "সাধারণভাবে পরিজ্ঞাত বুদ্ধকে অতিক্রম করে এখানে নতুন এক বুদ্ধ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এ সাফল্য অভাবিতপূর্ব।"
গল্পের পটভূমি গৌতম বুদ্ধ - এর সময়কার প্রাচীন ভারত। ( পঞ্চম - দশম শতাব্দির মধ্যবর্তি সময়ে )গল্পের শুরু হয় ব্রাম্মণপূত্র সিদ্ধার্থ কে দিয়ে যে তার বাল্যবন্ধু এবং ছায়াসঙ্গী গোবিন্দ কে নিয়ে গৃহত্যাগ করে। তারা দুজন অন্তরাত্মার আলোর সন্ধানে যাত্রা শুরু করে। সিদ্ধার্থ বিভিন্ন ঘটনা এবং জীবনের ঘাত প্রতিঘাতের চেতনায় এক পর্যায়ে তার লক্ষ্যে পৌছুবার উপক্রম হয়। চেতনা হল মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া বিভন্ন ঘটনার অভিজ্ঞতার প্রতিফলন - যা কিনা মানুষের উপলব্ধি, শিক্ষা এমনকি জ্ঞানও বটে। উপলব্ধি আসে আত্মসিদ্ধি এবং অন্ত:করণ থেকে। হেসের সিদ্ধার্থ উপন্যাসটিতে মানুষের জীবনে লব্ধ অভিজ্ঞতাকে দেখানো হয়েছে সত্যকে জানার এবং আলোকিত হওয়ার সর্বোৎকৃষ্ট পথ হিসেবে। হেসের সৃষ্ট চরিত্র সিদ্ধার্থ দেখায় যে প্রকৃত জ্ঞান বিদ্যা, ধ্যান কিংবা পার্থিব সুখ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে কন্টক আসনে শায়ন করলেই পাওয়া যায় না, বরং তা আসে জীবনের মুখোমুখি হয়ে সংসার থেকে অভিজ্ঞাত উপলব্ধি দিয়ে।
সুতরাং, বিছিন্ন কিছু ঘটনা দিয়ে জীবনকে আসলে বিচার করা অর্থহীন - সিদ্ধার্থ উপোষ করে কিংবা প্রেম এবং বাণিজ্যের নেশায় নিমগ্ন হয়ে কোনও ভাবেই নির্বাণ লাভ করতে পারে না। যদিও এগুলোর কোনটিই নির্বান লাভের পথে বাধা হয়ে দাড়ায়নি বরং জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনাই সিদ্ধার্থ'র আত্মপলোদ্ধিতে কোনও না কোন ভাবে কাজে এসেছে। ঘটে যাওয়া এই সব ঘটনাগুলোই অভিজ্ঞতার ভান্ডারে যুক্ত হয়েছে।
=={{{{{{{{{{{{{∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆}}}}}}}}}}====
No comments:
Post a Comment