Sunday, 7 August 2022

স্মরণীয় প্রয়াণ দিবস। গদ্যকার রামরাম বসু। Vol - 820. Dt -07.08.2022. ২১ শ্রাবণ,১৪২৯. রবিবার। The bolgger in litareture e-magazine.



রামরাম বসু। 
         
                     
মৃত্যু - ৭ ই আগস্ট,১৮১৩ কলকাতা।


অষ্টাদশ শতাব্দীর ব্যক্তিত্ব। তার জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার চুঁচুড়ায়। তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ফার্সি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন ; কিছু ইংরেজিও জানতেন। প্রথম দিকে তিনি ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য আসা মিশনারি পাদ্রীদের বাংলা শেখাতেন। পরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে তিনি মুন্সি ও সংস্কৃত ভাষার সহকারী শিক্ষকের চাকরি পান। তার রচিত রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত বাঙালির লেখা প্রথম বাংলা মৌলিক গদ্যগ্রন্থ ও ছাপাখানায় মুদ্রিত প্রথম বই। বইটি ১৮০১ সালের জুলাই মাসে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। এটি ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া তিনি বাঙালা ভাষায় কয়েকটি খ্রিস্টধর্ম বিষয়ক বই লেখেন, রামায়ণ ও মহাভারত সম্পাদনা করেন ও উইলিয়াম কেরিকে বাইবেল অনুবাদে সহায়তা করেন।

১৭৯৩ সালে উইলিয়াম কেরি কলকাতায় এলে রামরাম বসু কেরির মুনশি নিযুক্ত হন। ১৭৯৫ সালের জুন মাসের ১৫ তারিখে কেরি মালদহ মদনবাটি নীলকুঠির তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হলে তিনিও সঙ্গে যান। ১৮০০ সালে শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন মুদ্রাযন্ত্র ও বাংলা বিদ্যালয় স্থাপন হলে তিনি এই বছরের জুন মাসে নিযুক্ত হন।[২] ১৮০১ সালের ৪ মে রামরাম বসু ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগে দ্বিতীয় পণ্ডিতের পদে মাসিক ৪০ টাকা বেতনে নিযুক্ত হন। শিক্ষকতার পাশাপাশি রামরাম বসু অনুবাদ ও সাহিত্য রচনা করেছেন। 'গসপেল মেসেঞ্জার'গ্রন্থটি 'হরকরা' নামে কবিতায় অনুবাদ করেন। পরে এটি ওড়িয়া ও হিন্দিতেও অনূদিত হয়। এরপর ১৮০০ সালে 'জ্ঞানোদয়' ও 'খৃষ্টবিবরণামৃতং' নামে কবিতায় খ্রিষ্টচরিত রচনা করেন। তবে তার প্রধান কীর্তি ১৮০১ সালে প্রথম বাংলা গদ্যে রচিত ষোড়শ শতাব্দীর 'বারো ভুঁইয়ার' অন্তর্গত বাঙালি জমিদার প্রতাপাদিত্যের জীবনী - 'রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র'। তিনি স্বয়ং রাজা প্রতাপাদিত্যের বংশধর হওয়ার কারণে এই গ্রন্থে ঐতিহাসিক ও লোকশ্রুতির সমাহার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিপিবদ্ধ করতে পেরেছেন।  এরপর'লিপিমালা' নামে আর একটি গ্রন্থ। এটিও বাংলা গদ্যে ১৮০২ সালে শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত হয়। রামরাম বসু উইলিয়াম কেরির বাংলা শিক্ষক ছিলেন। তিনি কেরির বাংলা বাইবেলের পরিমার্জনা করেছিলেন 


জন টমাস ১৭৯২ সনে লিখে গিয়েছেন, তখন রামরামের বয়স হবে আনুমানিক ৩৫ বছর। ১৭৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টমাস ইংল্যান্ডে ফেরার আগ পর্যন্ত রামরাম তাঁর মুন্সি হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৭৯৩ সালের নভেম্বর মাসে টমাস যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা, পাদ্রী, শিক্ষাবিদ; তখন আধুনিক বাংলা গদ্য ও অভিধানের প্রধান পরিকল্পনাকারী উইলিয়ম কেরী এবং তাঁর পরিবার নিয়ে বঙ্গদেশে ফিরে আসেন। তখন তাঁর সুপারিশে কেরী রামরামকে তাঁর বাংলা মুন্সি হিসেবে নিযুক্ত করেন। এ থেকেই শুরু হয় কেরীর সঙ্গে রামরাম বসুর সম্পর্ক। দেশীয় লোকেদের মধ্যে খৃষ্টধর্ম প্রচারের কেরী রামরামকে তাঁর বিশ্বস্ত সহযোগী করে তুলেছিলেন। রামরামও যিশুর মাহাত্ম্য সম্পর্কে কবিতা, গান লিখে মিশনারীদের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। রামরাম খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ না করলেও খ্রীষ্টধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে ভালো রকম জানতেন। তিনি ‘গসপেল মেসেঞ্জার’ নামে একটি পুস্তিকা সম্পাদনা করেন এবং হিন্দুধর্ম ও সমাজের কুপ্রথা ও ধর্মবিশ্বাসকে সমালোচনা করে মিশনারীদের জন্য পুস্তক প্রস্তুত করে দেন, একটি গানের বইও লিখে দেন।

প্রথমবার ১৭৯৬ সাল পর্যন্ত রামরাম কেরীর কাজ করেন, কিন্তু এক বিধবার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রাখার অভিযোগে কেরী তাঁকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেন। কেরী তাঁর কাছ থেকে সামান্য বাংলা শিখে দুর্বল জ্ঞান নিয়েই তাঁর সাহায্যে বাইবেল অনুবাদ করতে আরম্ভ করেন। ১৮০০ সালে উইলিয়ম ওয়ার্ড এবং যশুয়া মার্শম্যানকে সঙ্গে নিয়ে কেরী যখন শ্রীরামপুর মিশন এবং প্রেস গড়ে তোলেন, তখন দ্বিতীয়বারের জন্যে রামরাম কেরীর অধীনে কাজ করতে আরম্ভ করেন। এবারে তাঁর কাজ হয় খ্রিস্টধর্ম সংক্রান্ত সাহিত্য রচনা এবং অনুবাদ করা।


লিপিমালা’ পুস্তক শ্রীরামপুরে কাষ্ঠনির্মিত মুদ্রাযন্ত্রে মুদ্রিত হয়েছিল। বিলাত থেকে আনীত এই মুদ্রা যন্ত্রটি কলকাতায় নিলামে বিক্রি হয়েছিল। বাংলায় বাইবেল অনুবাদ ছাপাবার ইচ্ছায় উডনি সাহেব এটি ক্রয় করেছিলেন মাত্র ৪৬ পাউণ্ডে। তিনি এটি কেরীকে দান করেন। মুদ্রাকর ওয়ার্ডের তত্ত্বাবধানে এবং কলকাতা থেকে ক্রীত হরফ সাজিয়ে কেরীর উদ্যোগে ও রামরাম বসুর সহায়তায় বাংলায় বাইবেল অনুবাদ ‘ধৰ্ম্মপুস্তক’ ১৮০১ সালে প্রকাশিত
হল।’ধৰ্ম্মপুস্তক’ (১৮০২) ও ‘লিপিমালা’ পুস্তক’ (১৮০২) দ্বয়ের হরফের উচ্চতা একই (৩ মিমি.) এবং হরফের আকারও এক।
‘লিপিমালা’ গ্রন্থের ৫ পৃষ্ঠা ব্যাপী ভূমিকা আছে। গ্রন্থারম্ভে সিদ্ধিদাতা পরম ব্রহ্মকে লেখক স্মরণ করেছেন। ভূমিকার শেষে ৬ পঙক্তির পদ্য আছে। শেষ দুই পঙক্তিতে ভাদ্র মাসে ১১৯৫
বর্ষে (১৮০২) গ্রন্থ রচয়িতার নাম আছে :
শতাদিত্য বসু বর্ষ পশু শ্রেষ্ঠ মাস।
পরম আনন্দে রাম করিল প্রকাশ।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে রচয়িতা ভণিতায় গ্রন্থ রচনার কাল ও আত্মপরিচয় দিতেন। সেই রীতিটি রামরাম বসু কিছুটা বজায়।
রেখেছেন। তার প্রথম গ্রন্থ ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ (১৮০১)-এর প্রারম্ভের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে তিনি আত্মপরিচয় জ্ঞাপনের কিছুটা ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি নিজেকে রাজা প্রতাপাদিত্যের স্বজাতি‌ ও উত্তর পুরুষের একজন হয়ে যে রাজার বিবরণ অধিক জ্ঞাত
ছিলেন তা জানাতে দ্বিধা করেন নি।
লিপিমালা প্রথম বাংলা পত্রসাহিত্য। বাংলা
অঙ্ক পুস্তকের আদি নমুনা আছে ১৫ পৃষ্ঠার
অঙ্কমালা’-য়। মধ্যযুগে পুথিতে রচিত মুকুন্দর ‘চন্ডীমঙ্গল’ কাব্যের প্রথম মুদ্রিত রূপ লিপিমালায় আছে। পুথিতে রচিত চৈতন্যজীবনী কাব্যের খসড়া ও আদি মুদ্রিত রূপও এই গ্রন্থে আছে। বহুমুখী জ্ঞান-কোষের প্রথম বাংলা রচনা লিপিমালা।
‘এটি স্হির কথা, বাঙ্গালা গদ্যের প্রাচীনতর
নমুনা যতই থাকুক না কেন, রাম বসুই
আধনিক গদ্য সাহিত্যের স্রষ্টা। তাঁহার পূর্বে
বাঙ্গালা ভাষায় আধুনিক ছন্দের গদ্যে
প্রতাপাদিত্যচরিতের মত একখানি
সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দর পুস্তক কেহ লেখেন নাই।…।
– রাম বসুর
লিপিমালাও একখানি উৎকৃষ্ট গ্রন্থ।
– দীনেশচন্দ্র সেন
‘বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাসে অনেক মহারথীর সঙ্গে নিতান্ত পদাতিক রামরাম বসুর স্থান হইয়াছে। কিন্তু কোন্ বিচারের মাপকাঠিতে ? তাঁহার রচিত রাজা প্রতাপাদিত্য-চরিত্র বাঙলা অক্ষরে মুদ্রিত বাঙালী রচিত প্রথম মৌলিক গদ্যগ্রন্থ। ইহা সামান্য সাফল্য নয়, এক হিসাবে সফলতার চরম।…
…পথভ্রষ্ট রাম বসু মিশনারীদের সঙ্গে না জুটে ওয়ারেন হেস্টিংস ও ক্লাইভের দলে ভিড়লে বাংলা দেশের অভিজাত সমাজ আর একটা রাজা-মহারাজার পদবীগৌরব লাভ করত। কিন্তু প্রতিভা এমন শক্তি যে, পথভ্রষ্ট হলেও পথ কেটে নিতে ভােলে না, রাম বসুর
প্রতিভাও পথ কেটে নিয়েছে—বাংলা গদ্য রচনারীতির পথ।

প্রমথনাথ বিশী
রামরাম বসু-র (১৭৬০-১৮১৩) জন্মস্থান চুঁচুড়ায় এক কায়স্থ বংশে। তিনি ১৭৮৭ সালে মুন্সীপদে নিযুক্ত হন। তিনি টমাস ও কেরি সাহেবকে বাংলা শিখিয়েছিলেন।বাইবেলের সর্বপ্রথম বঙ্গানুবাদে রামরাম বসুর সহায়তা সর্বাধিক ছিল। যিশু সম্বন্ধে বাংলা ভাষায় বসু মহাশয় যে গানটি রচনা করেন সেটির ইংরেজি তর্জমা প্রায় অর্ধ শতকব্যাপী মিশনারি পর্বে বাংলার গীর্জাগুলিতে ধ্বনিত হয়েছে।‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ (১৮০১) ও ‘লিপিমালা’ (১৮০২)—এই দুখানি মৌলিক বাংলা গদ্য গ্রন্থের রচয়িতা এবং বাংলা গদ্যরীতির দিশারীরূপে বাংলা সাহিত্যে তাঁর আসন চিরস্থায়ী।

<<*,,,,,,{==========================}==

No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। রুনা লায়লা । খ্যাতনামা বাংলাদেশী কণ্ঠশিল্পী। তিনি বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সংগীতের জন্য বিখ্যাত। তবে বাংলাদেশের বাইরে গজল শিল্পী হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে তাঁর সুনাম আছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় এবং পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। রুনা লায়লা বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দি, সিন্ধি, গুজরাটি, বেলুচি, পশতু, ফার্সি, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্পেনীয়, ফরাসি, লাতিন ও ইংরেজি ভাষাসহ মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন। Dt - 17.11.2024. Vol -1055. Sunday. The blogger post in literary e magazine.

রুনা লায়লা  (জন্ম: ১৭ নভেম্বর ১৯৫২ ----) একজন খ্যাতনামা বাংলাদেশী কণ্ঠশিল্পী। তিনি বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সংগীতের জন্য বিখ্যাত। ত...