- মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের
- জন্ম ১৯৩৮ সালে বাংলাদেশের সিলেটে। তুলনামূলক সাহিত্য, ভারতীয় নন্দনতত্ত্ব, ললিতকলার ইতিহাস নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডার টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয় ও পোল্যান্ডের ভাসভি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি প্রথম অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন মায়ানমারের রেঙ্গুনে। পরে পড়াতে আসেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ।
- তিনি কবিতা, শিশুসাহিত্য, উপন্যাস,ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস প্রভৃতি বহুক্ষেত্রেই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তবে বাংলা অনুবাদ সাহিত্যের ইতিহাসে তার অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রায় একক প্রচেষ্টায় দক্ষিণ আমেরিকা ও পূর্ব ইউরোপের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলি বাংলায় অনুবাদ করেছেন। তিনি ১৯৭০ সালে গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের লেখা কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না, সরলা এরেন্দিরা অনুবাদ করেন। লাতিন আমেরিকার কবিতা ও ছোটগল্প এবং রুশ সাহিত্য অনুবাদ করেছেন তিনি। মৌলিক রচনার পাশাপাশি এডগার অ্যালেন পো, আর্থার কন্যান ডয়েল, জুল ভের্ন অনুবাদ করে বাংলা শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখেন তিনি। এ ছাড়া মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদনার কাজও করেছেন। তার সম্পাদিত 'হরবোলা' ও 'জিয়নকাঠি' প্রভৃতি ছোটদের গল্প সংকলন ছাড়াও দেশবিদেশের শিশুসাহিত্য নামক গ্রন্থমালায় তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের শিশুসাহিত্যকে বাংলায় উপস্থিত করেছেন।
- মানবেন্দ্র খগেন্দ্রনাথ মিত্র স্মৃতিপুরস্কার পান ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে বিদ্যাসাগর পুরস্কারে ভূষিত করে। অনুবাদে তার কৃতিত্বের জন্য মূলত পাবলো নেরুদা, লাতিন আমেরিকার উপন্যাস সমূহ, হুয়ান রুলফোর কথাসমগ্র, শার্ল পেরোর রূপকথা, মিরোস্লাভ হলুবেরের কবিতা, নিকানোর পাররার কবিতা, পিটার বিকসেল, একাধিক স্প্যানিশ গল্প ইত্যাদি অনুবাদের জন্য ভারতীয় সাহিত্য একাদেমি তাঁকে অনুবাদ পুরস্কার-এ ভূষিত করেছিল।
- করোনা সংক্রমণের কারণে তিনি ৪ আগস্ট ২০২০, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তায় মারা যান।
- গ্রন্থসমূহ :
- ভেদ বিভেদ (১ম ও ২য়)
- দেশে ফেরার খাতা
- লাতিন আমেরিকার উপন্যাস সংগ্রহ
- লাতিন আমেরিকার গল্প সংগ্রহ
- মুখোশ ও মৃগয়া
- বাংলার ছয় মণীষী
- মিরোস্লাভ হোলুভের শ্রেষ্ঠ কবিতা
- খেলা অমনিবাস (১ম ও ২য় খন্ড)
- খেলা সমাচার
- আষাঢ়ে বই
- এই শহরে চোর নেই
- চারজনের চিহ্ন
- ঘণ্টা বাজে দূরে
- আত্মহত্যার অধিকার ও অন্যান্য
- নিকানোর পাররার শ্রেষ্ঠ কবিতা ও প্রতিকবিতা
- চেশোয়াভ মিউশ শ্রেষ্ঠ কবিতা
- বাস্তবের কুহক ও কুহকের বাস্তব
- গণ্ডি
- কাঁচের ঘর
- মৌচাক ঢিল
- চন্দ্রাহত
- হরবোলা
- সোনার দুয়ার
- রহস্যময় রোমাঞ্চকররহস্যময় রোমাঞ্চকর
- যে পুতুল পালিয়ে গেল
- বিঙ্গো ও আকাট
- আন্ডারসেনের গল্প
- এক যে আছে মায়াপুরে
- চোরকাঁটা
- আত্মাহত্যার অধিকার এবং অন্যান্য সনদ
- জুল ভের্ন অমনিবাস (৪ খণ্ড)
- ল্যাম্পপোস্টের বেলুন
- আলিবাবার গুহা
- কুড়িয়ে ছড়িয়ে দেশ-বিদেশের লোককথা
- কবিতা যারা পড়ে না তাদের জন্য কবিতা
- স্রষ্টা যখন সর্বপ্রথম বানিয়েছিলেন প্রাণী
- ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটে জয়ের প্রস্তুতি পর্ব
একাধারে কবি, অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, কথাসাহিত্যিক! তিনি মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সব ভূমিকার কথা বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ এখন নেই। তবে তাঁর জীবন জুড়ে রয়েছে বিশ্বসাহিত্যের তর্জমা। অনুবাদ নয়, তর্জমা শব্দটি ছিল তাঁর পছন্দের। বাংলা সাহিত্যে অনুবাদ বা তর্জমা যে আগে ছিল না, তা নয়। কিন্তু মানবেন্দ্রবাবুর হাত ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কালজয়ী রচনাগুলো বাংলার পাঠকের সামনে চলে এল একটা মস্ত বড় ক্যানভাসে। অনুবাদ-সাহিত্য ঋদ্ধ করল বাংলার সমগ্র সাহিত্য ভাণ্ডারকে। পণ্ডিত ব্যক্তিরা স্বীকার করবেন যে, অনুবাদ ব্যতীত যে কোনও সাহিত্যই অপূর্ণ থেকে যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন যে, তাঁর পরিচিতজনদের মধ্যে বিশিষ্ট পড়ুয়া ছিলেন মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সত্যি, দেশবিদেশের সাহিত্যের হালহকিকত ছিল তাঁর নখদর্পণে। বিশ্বসাহিত্যের জানালা খুলে দিয়েছিলেন তিনি আমাদের জন্যে। কলম্বিয়ার নোবেলবিজয়ী কথাসাহিত্যিক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের খবর বাঙালি পাঠক জানার অনেক আগেই তিনি তাঁর লেখা তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তাঁর হৃদয়স্পর্শী অনুবাদে আমরা পাঠ করেছিলাম ‘সরল এরেন্দিরা’ আর তার বিবেকহীন দিদিমার কাহিনি, তিনি অনুবাদ করেছিলেন মার্কেসের অনবদ্য নোবেল বক্তৃতাটিও। এছাড়াও তর্জমা করেন মার্কেসের বিখ্যাত উপন্যাস ‘কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না’। এর পরে ক্রমে বাঙালির প্রিয় হয়ে ওঠে লাতিন আমেরিকার কাব্য এবং গদ্য সাহিত্যে।
--------++++--++--+++-+-+++(+-+(+-++-++++
No comments:
Post a Comment