Thursday, 25 April 2024

শুভ জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি। কাজী আব্দুল ওদুদ। DT - 26.04.2024. Vol - 860. The blogger post in literary e magazine

 
ত্রিশ বছর বয়সে লেখা ওদুদের রবীন্দ্রনাথকাব্য পাঠ (১৩৩৩) পুস্তিকা পড়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে লিখেছিলেন “আমার রচনায় এমন সরস বিচারপূর্ণ সমাদর আর কারো হাতে লাভ করেছে বলে আমার মনে পড়ে না। এর মধ্যে যে সূক্ষ্ম অনুভূতি ও ভাসানৈপুণ্য প্রকাশ পেয়েছে তা স্মিয়কর। তোমার মতো পাঠক পাওয়া কবির পক্ষে সৌভাগ্যের বিষয় ।“ এর ৩০ বছরেরও বেশি পর লেখেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ নামের বিশালায়তন বই, বাংলা একাডেমির রয়াল সাইজের মুদ্রণের নয় শতাধিক পৃষ্ঠা। রবীন্দ্রনাথের নিজের স্বীকৃতির সত্ত্বেও রবীন্দ্র পুরস্কার ওদুদের প্রাপ্য হয় না। বাঙালি জাতিকে দুর্ভাগা ছাড়া আর কি বলা যাবে।

কাজী আবদুল ওদুদ।

 
জন্ম - ১৮৯৪ সালের ২৬ এপ্রিল।
 ফরিদপুর জেলার পাংশা উপজেলার বাগমারা গ্রামে।
 পিতা - কাজী সৈয়দ হোসেন। তিনি পেশায় ছিলেন রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার।
 মাতা-  খোদেজা খাতুন।
 ওদুদ ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯১৩ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি ১৯১৫ সালে আই-এ এবং ১৯১৭ সালে বি এ পাস করেন। ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পলিটিক্যাল ইকোনমিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। এমএ পাস করার অব্যবহিত পরেই তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। কিছুদিন একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকার পর ১৯২০ সালে তিনি ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে বাংলার প্রভাষকের পদে যোগদান করেন এবং ১৯৪০ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত এ কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪০ সালে বাংলা সরকার প্রাদেশিক টেক্সটবুক কমিটির সেক্রেটারি ও রীডারের পদ সৃষ্টি করলে তিনি উক্ত পদে নিয়োগ লাভ করে কলকাতায় শিক্ষাদফতরে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার উক্ত পদের সঙ্গে রেজিস্টার অব পাবলিকেশন্স পদটি যুক্ত করে। কাজী আবদুল ওদুদ এ গুরুত্বপূর্ণ পদে এগারো বছর কর্মরত থাকার পর ১৯৫১ সালের জুলাই মাসে অবসর গ্রহণ করেন।

আত্মপরিচয় দিতে গিয়ে ওদুদ লিখেন-

পিতা ছিলেন বুদ্ধিতে একান্ত খেয়ালী, কিন্তু অতি স্নেহময় অন্তঃকরণের, আত্মীয় স্বজনের দুঃখ আদৌ সহ্য করতে পারতেন না। আয় সামান্য কিন্তু পরিজনদের দান করতে মুক্তহস্ত। কিন্তু এই ঢিলেঢালা মানুষটির আত্মসম্মানবোধ ছিল অসাধারণ। রেলওয়েতে চাকরি করতেন সাহেবদের সঙ্গে মারামারি করে চাকরি ছেড়েছেন বহুবার। দরিদ্র আত্মীয়দের সঙ্গে প্রাণ খুলে মিশতেন। বড়লোক আত্মীয়দের গ্রাহ্য করতেন না। আমার মা ছিলেন দৃঢ় চরিত্রের ও প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন, কিন্তু কর্তৃত্ব ও অবিলাসিনী। বাবা আমার বুদ্ধিমত্তা পছন্দ করতেন। কিন্তু আমি যে শান্তশিষ্ট এটি খুব পছন্দ করতেন বলে মনে হয় না। (আমার জীবন কথা/ কাজী আবদুল ওদুদ)

কলেজে অধ্যয়নকালেই কাজী আবদুল ওদুদ সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। ছাত্র অবস্থায়ই তাঁর একটি গল্পগ্রন্থ মীর পরিবার (১৯১৮) এবং উপন্যাস নদীবক্ষে (১৯১৯) প্রকাশিত হয়। এমএ পাস করার পর তিনি কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে অবস্থিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির আবাসিক ভবনে কিছুদিন অবস্থান করেন। কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে এখানেই। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির অফিসে সাহিত্যিকদের আড্ডা বসত। যুদ্ধফেরত নজরুলের উপস্থিতিতে সে আড্ডা আরও বেগবান হয়ে ওঠে। কাজী আবদুল ওদুদের লেখক জীবনের ভিত্তি গড়ে ওঠে এ কবি-সাহিত্যিকদের সাহচর্যেই। তবে তাঁর চিন্তা ও চেতনাকে পরিণতি দান করে ঢাকার মুসলিম সাহিত্য-সমাজ (১৯২৬)। সাহিত্য-সমাজের মুখপত্র শিখার প্রতিটি সংখ্যার পরিকল্পনা ও প্রকাশনায় আবুল হুসেনের সঙ্গে তাঁর সক্রিয় প্রয়াসপ্রযত্ন ছিল। তবে কাজী আবদুল ওদুদের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে সংকল্প (১৩৬১) ও তরুণপত্র (১৩৭২) নামে দুটি সাময়িক পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন প্রথমটির সম্পাদক এবং দ্বিতীয়টির সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি।

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারায় কাজী আবদুল ওদুদের প্রধান পরিচয় চিন্তাশীল লেখক হিসেবে। তবে তাঁর লেখালেখি শুরু হয় কথাসাহিত্যের মাধ্যমে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ মীর পরিবার পাঁচটি গল্পের সংকলন। এরপর তিনি তিনটি গল্প রচনা করেন যা পরবর্তী সময়ে তরুণ (১৯৪৮) গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। নদীবক্ষে ও আজাদ (১৯৪৮) তাঁর দু’টি উপন্যাস। নাটকও রচনা করেন দু’টি, পথ ও বিপথ (১৯৩৯) এবং মানব-বন্ধু (১৯৪১)। মানব-বন্ধু পরবর্তীকালে তরুণ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়।

কাজী আবদুল ওদুদের কয়েকটি গ্রন্থ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। তাঁর মননশীলতা এবং বৈদগ্ধের প্রকাশ লক্ষ করা যায় শাশ্বত বঙ্গ (১৯৫১) বাংলার জাগরণ (১৩৬৩), কবিগুরু গ্যেটে (১ম ও ২য় খন্ড ১৩৫৩), কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ (১ম খন্ড ১৩৬৯, ২য় খন্ড ১৩৭৬), হযরত মোহাম্মদ ও ইসলাম (১৩৭৩) গ্রন্থে। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঢাকায় যে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন সংঘটিত হয়, যাঁরা মুসলিম সাহিত্য-সমাজ নামে পরিচিত ছিলেন, কাজী আবদুল ওদুদ ছিলেন এ আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। বিচার-বুদ্ধিকে সংস্কার মুক্ত ও গতিশীল করার প্রচেষ্টায় যে সকল চিন্তা ও বক্তব্য নিয়ে কাজী আবদুল ওদুদ ও তাঁর সহকর্মীদের অগ্রসর হতে দেখা যায়, শাশ্বত বঙ্গ তার একটি মূল্যবান দলিল। তাঁর উদারনৈতিক মনোভাব এবং নিজের সমাজ ও সম্প্রদায়ের দৈন্যের জন্য আক্ষেপ এ গ্রন্থের আর একটি দিক। পরিবেশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গভীর ভালোবাসার, প্রেম তাঁর বক্তব্যের এক প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। শাশ্বত বঙ্গ তাই সাজাত্যবোধে উজ্জ্বল। তাঁর শাশ্বত বঙ্গ অনৈতিহাসিক সোনার বাংলা এবং আদর্শায়িত রূপকথার কাহিনী নয়। প্রকৃতপক্ষে এ বঙ্গে মানুষের জীবন দীনহীন ও নানা সংস্কারে পীড়িত। অনগ্রসরতার গ্লানি তাঁর নিত্য সঙ্গী। কিন্তু সে দীনতাকে চিরস্থায়ী বলে মনে করেন না তিনি। তাঁর বঙ্গ সৃষ্টিশীল ও সম্ভাবনাময়।পরিচয়বাহী গ্রন্থ। হযরত মোহাম্মদ ও ইসলাম তাঁর পরিণত বয়সের রচনা। তিনি এ গ্রন্থে হজরত মোহাম্মদকে রক্ত-মাংসের মানুষ এবং ঐতিহাসিক এক সঙ্কটকালের মহৎ পুরুষ হিসেবে উপস্থাপন করেন। সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং সমগ্র মানবজাতির প্রতি যাঁর ছিল অপরিসীম দরদ ও দায়িত্ব। হজরত মোহাম্মদ মানবজাতির মুক্তির লক্ষ্যে সাম্যদৃষ্টি ও জ্ঞানানুরাগের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কাজী আবদুল ওদুদ এ বক্তব্যটি তাঁর উক্ত গ্রন্থে বিশেষভাবে তুলে ধরেন।

১৯৫৩ সালে প্রকাশিত হয় কাজী আবদুল ওদুদের ব্যবহারিক শব্দকোষ। আধুনিক বাংলা ভাষার একটি জনপ্রিয় অভিধান সংকলনে তাঁর ভাষা সচেতন মনের পরিচয় মেলে এখানে। অভিধানটির বিশেষত্ব হলো, এতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আরবি, ফার্সি ও তুর্কি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণের প্রয়াস আছে এবং বাঙালি মুসলমান সমাজে প্রচলিত শব্দসমূহ অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে।

কাজী আবদুল ওদুদের অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, প্রবন্ধ ও সাহিত্যসমালোচনা: নবপর্যায় (১ম খন্ড ১৩৩৩, ২য় খন্ড ১৩৩৬), সমাজ ও সাহিত্য (১৩৪১), হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ (১৩৪২), Fundamentals of Islam (১৩৫৭), State and Literature (১৩৬৪), Tagore’s Role in the Reconstruction of Indian Thought (১৩৬৮), আজকার কথা (১৩৪৮), স্বাধীনতা দিনের উপহার (১৩৫৮), রবীন্দ্রকাব্য পাঠ (১৩৩৪), নজরুল-প্রতিভা (১৩৫৬), শরৎচন্দ্র ও তারপর (১৩৬৮); জীবনীগ্রন্থ: অনুবাদ গ্রন্থ: Creative Bengal (১৩৫৭), পবিত্র কোরআন (১ম ভাগ ১৩৭৩, ২য় ভাগ ১৩৭৪)। এ ছাড়া রয়েছে কাজী আবদুল ওদুদ রচনাবলী (১ম খন্ড ১৯৮৮, ২য় খন্ড ১৯৯০, ৩য় খন্ড ১৯৯২, ৪র্থ খন্ড ১৯৯৩, ৫ম খন্ড ১৯৯৪ ও ৬ষ্ঠ খন্ড ১৯৯৫) এবং কাজী আবদুল ওদুদের পত্রাবলী (১৯৯৯)।
এ বঙ্গদেশে, কাজী আবদুল ওদুদ মনে করতেন, উনিশ শতকে একটি রেনেসাঁস সংঘটিত হয়, যার একটি বড় বক্তব্য ছিল, স্বদেশপ্রেমে দোষ নেই যতক্ষণ স্বাদেশিকতা না হয় বিশ্ববিমুখ। তাঁর বাংলার জাগরণ বিষয়ক আলোচনার এক প্রধান প্রেরণা ছিল এটা। এ প্রেরণায় তিনি লিখেছেন বাংলার জাগরণ গ্রন্থ। তাঁর মতে রামমোহন থেকে ঢাকার ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলন পর্যন্ত যে প্রয়াস, সেটা এ প্রেরণার ফল। অন্যদিকে তাঁর কবিগুরু গ্যেটে গ্রন্থের বক্তব্যও এ প্রেরণাজাত। গ্যেটের স্বচ্ছ ও সবল মুক্তবুদ্ধি এদেশের মানুষকেও সাহায্য করবে জীবনের দায়িত্ব, প্রতিভা, ধর্ম, স্বদেশপ্রেম, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের অর্থ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রকে বাড়িয়ে তুলতে। তিনি অনুপ্রাণিত হন গ্যেটের সত্যাশ্রয়ী ব্যাপক জীবনবোধ ও বিশ্ববোধের মন্ত্রে ও দৃষ্টান্তে।

কাজী আবদুল ওদুদ স্বদেশচেতনার সঙ্গে বিশ্বচেতনার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত লক্ষ করেন রবীন্দ্রনাথের জীবনে। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও কর্মক্ষেত্রের নিবিষ্ট পাঠক ও আলোচক ছিলেন তিনি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তাঁর গভীর সাহিত্যবোধ ও ব্যাপক মননশীলতার পরিচয়বাহী গ্রন্থ। হযরত মোহাম্মদ ও ইসলাম তাঁর পরিণত বয়সের রচনা। তিনি এ গ্রন্থে হজরত মোহাম্মদকে রক্ত-মাংসের মানুষ এবং ঐতিহাসিক এক সঙ্কটকালের মহৎ পুরুষ হিসেবে উপস্থাপন করেন। সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং সমগ্র মানবজাতির প্রতি যাঁর ছিল অপরিসীম দরদ ও দায়িত্ব। হজরত মোহাম্মদ মানবজাতির মুক্তির লক্ষ্যে সাম্যদৃষ্টি ও জ্ঞানানুরাগের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কাজী আবদুল ওদুদ এ বক্তব্যটি তাঁর উক্ত গ্রন্থে বিশেষভাবে তুলে ধরেন।

১৯৫৩ সালে প্রকাশিত হয় কাজী আবদুল ওদুদের ব্যবহারিক শব্দকোষ। আধুনিক বাংলা ভাষার একটি জনপ্রিয় অভিধান সংকলনে তাঁর ভাষা সচেতন মনের পরিচয় মেলে এখানে। অভিধানটির বিশেষত্ব হলো, এতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আরবি, ফার্সি ও তুর্কি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণের প্রয়াস আছে এবং বাঙালি মুসলমান সমাজে প্রচলিত শব্দসমূহ অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে।

কাজী আবদুল ওদুদ গতানুগতিক ভাবনার বাইরে সমাজ ও সম্প্রদায়ের নানা সমস্যার সমাধান খুঁজেছেন। মিলনের মনোভাব গড়ে তুলতে মননশীল সাহিত্যচর্চাকেই জরুরি মনে করেছিলেন তিনি। ফলে প্রগতিশীল যুক্তিবাদী আবদুল ওদুদের সারথি হয়েছিলেন অনেকে। যেমন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী নজরুল ইসলাম, আবুল মনসুর আহমদ, মোহিতলাল মজুমদার, মোতাহার হোসেন চৌধুরী, আবুল ফজল, আবুল হুসেন, কাজী আনোয়ারুল করিম, আবদুল কাদির প্রমুখ।

সমন্বিত আঙ্গিনায় সৃজনশীল মানুষের বিচরণ রাতারাতি বাড়তে দেখা যায়। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে কলকাতাকেন্দ্রিক রেনেসাঁও এমনটি ছিল। যেমন– যুক্তি ও মননশীলতায় সামাজিক মুক্তির জন্য কাজ করেছেন রামমোহন, বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত প্রমুখ।

প্রসিদ্ধ এ কৃতী ব্যক্তির পরিচয় দিতে অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছিলেন, ‘কাজী আবদুল ওদুদ ছিলেন জাতিতে ভারতীয়, ভাষায় বাঙালি, ধর্মে মুসলমান, জীবনদর্শনে মানবিক, মতবাদে রামমোহনপন্থি, সাহিত্যে গ্যেটে ও রবীন্দ্রপন্থি, রাজনীতিতে গান্ধী ও নেহরুপন্থি, অর্থনৈতিক শ্রেণিবিচারে মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক, সামাজিক ধ্যানধারণায় ভিক্টোরিয়ান লিবারেল। কোনরূপ চরমপন্থায় তার বিশ্বাস ছিল না।’

আমরা এ কথার প্রমাণ পাই ১৯১৯ সালে প্রকাশিত প্রথম ‘নদীবক্ষে’ উপন্যাসেই। পদ্মাপাড়ের বাগমারা গ্রামে বড় হয়ে ওঠা ওদুদ তুলে ধরেছিলেন উত্তাল পদ্মার বুকে মাঝিদের সংগ্রামমুখর জীবন ও সাধারণ কৃষকদের চালচিত্র। প্রান্তিক মানুষের জীবনের দুঃখ-বেদনার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা গ্রামীণ কৃষি জীবনের যে ছবি তিনি এঁকেছেন তা অনবদ্য। প্রশংসিত হয়েছে অনেক।



১৯৭০ সালের ১৯ মে কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। 

###############++++++##########

No comments: