Tuesday, 28 May 2024

শুভ জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে জন্মগ্রহণকারী বাঙ্গালী সাহিত্যিক যিনি প্রবাসী ও মডার্ণ রিভিউ পত্রিকাদ্বয়ের সম্পাদক হিসেবে বিশেষভাবে খ্যাতিমান ছিলেন। এছাড়া তিনি ধর্মবন্ধু, দাসী, প্রদীপ এবং মুকুল এই চারটি পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও দীর্ঘকাল কাজ করেছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তার বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। Dt - 29.05.2024. Vol - 893. The blogger post in literary e magazine


রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় 
(২৯ মে,১৮৬৫ - ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৩)



বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা সাহিত্যের যে আন্দোলন সঙ্ঘটিত হয়েছিল, তার পশ্চাতে কর্মবীর রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা ছিল দৃঢ়মূল। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে জেনিভায় অনুষ্ঠিত লীগ অব নেশনস্‌-এর বিশেষ অধিবেশনে তিনি ভারতবর্ষের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ১৯৪১-এ রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তিনি বিশ্বভারতীর আশ্রমিক সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।  বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সাংবাদিক হেমন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রীর নাম মনোরমা দেবী। এদের চার সন্তান, নাম যথাক্রমে কেদারনাথ, শান্তা,সীতা এবং অশোক। শান্তা সীতা এই দুই কন্যাই ছিলেন সুলেখিকা।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে জন্মগ্রহণকারী বাঙ্গালী সাহিত্যিক যিনি প্রবাসী ও মডার্ণ রিভিউ পত্রিকাদ্বয়ের সম্পাদক হিসেবে বিশেষভাবে খ্যাতিমান ছিলেন। এছাড়াও তিনি ধর্মবন্ধুদাসীপ্রদীপ এবং মুকুল এই চারটি পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও দীর্ঘকাল কাজ করেছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তার বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল। 


জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার পাঠকপাড়া ২৯ মে।১৮৬৫ সালে । পিতার নাম শ্রীনাথ চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম হরসুন্দরী দেবী। তিনি বাঁকুড়া জেলা স্কুল থেকে ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স,সেন্ট জেভিয়ার'স কলেজ, কলকাতা থেকে এফ.এ.এবং সিটি কলেজ থেকে ইংরাজীতে অনার্স সহ বি.এ পাশ করেন। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ.পাশ করেন। প্রতি পরীক্ষাতেই বিশেষ কৃতিত্ব দেখান ও বৃত্তিলাভ করেন। তিনি ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন।[৪] ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্রাহ্ম সমাজের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের সভাপতি হয়েছিলেন।

তিনি  ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদ কায়স্থ পাঠশালায় যোগ দেন। শেষে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক ও পরে অধ্যক্ষ হন।

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় নিজে সাহিত্যস্রষ্টা ছিলেন না,কিন্তু সাহিত্যসৃষ্টির পরম সহায়ক ছিলেন।  এম.এ পরীক্ষার পরই তিনি ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে 'ধর্মবন্ধু' পত্রিকার সম্পাদনা করেন।১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে মাসিক পত্রিকা 'দাসী' প্রকাশিত হলে তিনি সম্পাদক নিযুক্ত হন। ওই সময়েই নিজস্ব বাংলা ব্রেইল প্রথার উদ্ভাবন করেন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর সাহায্যে শিশুদের উপযোগী পত্রিকা মুকুল প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হন। শিবনাথ শাস্ত্রী ওই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে মাসিক 'প্রদীপ' পত্রিকার সম্পাদক হন। এলাহাবাদে বর্তমানে প্রয়াগরাজে কর্মরত থাকার সময় ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে (১৩০৮ বৈশাখ,বঙ্গাব্দে) বিখ্যাত ও আধুনিক কালের সর্বাঙ্গসুন্দর মাসিক 'প্রবাসী' পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন। দেশের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের রচনাসম্ভারে সমৃদ্ধ হয়ে প্রকাশিত হত। চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের সুন্দর প্রতিলিপিতে বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।


রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত রচিত প্রবাসী পত্রিকার প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ
১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রকাশ করেন ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরাজী সাময়িক পত্রিকা "দ্য মডার্ন রিভিউ"। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে হিন্দি মাসিক "বিশাল ভারত" প্রকাশ ও সম্পাদনা তার আরো একটি স্মরণীয় কীর্তি। জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে প্রণোদিত তিনি দেশের বহু বিখ্যাত ব্যক্তির সংগ্রাম ও সাধনার পোষকতা করে গেছেন তার পত্রিকার মাধ্যমে। সাংবাদিক হিসাবে নির্ভীক,নিরপেক্ষ এবং দৃঢ়চেতা ছিলেন। সাংবাদিকতার এই গুণের জন্য সরকারের কাছে তাঁকে বহুবার জরিমানা দিতে হয়েছে। সমসাময়িক রাজনৈতিক নেতাগণ এবং রবীন্দ্রনাথ, আচার্য যদুনাথ সরকার প্রমুখ প্রায়ই নিজেদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ নিতেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ও ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদে প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের মূল সভাপতি, এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং সেকেন্ডারি এডুকেশন রিফর্ম কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তিনি অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। ভারতবাসীর ঐক্য, অর্থনৈতিক জীবনের উন্নতি,স্বদেশী শিল্পকলা ও সাহিত্যের উন্নতি ছিল তার জীবনাব্যাপী সাধনা। বাংলা ভাষায় অর্থনীতি আলোচনার সূত্রপাত তিনিই প্রথম করেন। 

প্রতি ইংরাজী বা বাংলা মাসের ১লা তারিখ পত্রপত্রিকা প্রকাশের পদ্বতি এবং ভারতীয় পদ্ধতি অনুসারে অঙ্কিত চিত্রকলার প্রকাশ তিনিই প্রথম প্রচলন করেন। তার রচিত পুস্তক "Towards Home Rule"


রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বয়সে চার বছরের বড় ছিলেন। যদিও তার ছাপ তাঁদের বন্ধুত্বে কখনও পড়েনি। রামানন্দ যেমন রবীন্দ্রনাথের সখ্যকে তাঁর জীবনের ‘শ্রেষ্ঠ সৌভাগ্য’ বলে উল্লেখ করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের কাছেও রামানন্দ ছিলেন অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু। ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় লেখালেখি কিংবা বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠার সূত্রে আন্তরিক হৃদ্যতা দেখা গেলেও, তাঁদের সম্পর্কের আরও একটি দিক ছিল। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক বিষয়ে অন্যতম পরামর্শদাতাও।






১৯১৯ সালে জেনারেল ডায়ারের নেতৃত্বে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যালীলায় দেশ উত্তাল হয়। ডায়ারের কীর্তি নিয়ে রামানন্দ তাঁর ‘দ্য মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি করেন। সে সময়ে এই নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে ‘নাইটহুড’ উপাধি ত্যাগের বিষয়ে দ্বিধায় পড়েন রবীন্দ্রনাথ। বিষয়টি নিয়ে তিনি রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ও সিএফ অ্যান্ড্রুজের কাছে পরামর্শ চান। অ্যান্ড্রুজ রবীন্দ্রনাথকে উপাধি ত্যাগ করতে নিষেধ করলেও, রামানন্দ উপাধি ত্যাগে অনুমোদন জানান। বন্ধু রামানন্দের পরামর্শই গ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

আসলে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে মত প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম বলা যায় রামানন্দ চটোপাধ্যায় ও তাঁর ‘প্রবাসী’ পত্রিকাকে। রবীন্দ্রনাথের রাজনীতি বিষয়ক অনেক লেখা প্রকাশ পায় ওই পত্রিকায়। ১৯১৭-তে মন্টেগু-র আসার সময়ে তখন ভারতবর্ষে সংঘটিত হয়ে চলেছে একাধিক সভা-সমিতি। রামানন্দ বারে বারে রবীন্দ্রনাথকে তাড়া দিতেন দেশের রাজনৈতিক সমস্যা সম্বন্ধে লিখতে। রবীন্দ্রনাথও সে ডাকে সাড়া না দিয়ে পারেননি। ‘ছোট ও বড়’ জাতীয় একাধিক রাজনৈতিক প্রবন্ধ সে সময়ে ‘প্রবাসী’ ও ‘দ্য মডার্ন রিভিউ’-তে প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথ নিজেও রামানন্দের এই আহ্বানকে স্বীকার করেছেন এক পত্রে (৫-১১-১৯১৭), ‘আপনি যদি এই সময়ে আমাকে একটু ধাক্কা না দিতেন তবে আমি এই শরৎকালের স্বচ্ছ অতল দিনগুলির মধ্যে ডুব মেরে নিছক নৈষ্কর্ম্ম্যের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যেতুম, আমার টিকি দেখা যেত না’। ওই চিঠিতেই তিনি লিখেছেন, ‘এর মধ্যে হিন্দু-মুসলমান, হোমরুল, ইণ্টার্ণ্‌মেণ্ট্‌ প্রভৃতি কোনো কথাই বাদ পড়েনি।... হয়ত ছাপা হবার পূর্ব্বে একবার সভায় দাঁড়িয়ে পড়লে আসর গরম করা যেতে পারে। সে সম্বন্ধে যথাকালে আপনার পরামর্শ নেওয়া যেতে পার্ব্বে’।


প্রবাসী’ ও ‘দ্য মডার্ন রিভিউ’-কে কেন্দ্র করে যে সব রাজনৈতিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হত, সে সবের জন্য রামানন্দের পিছনে সর্বদা গোয়েন্দা পুলিশ লেগে থাকত। তবে তিনি কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। কত বার যে রামানন্দকে সমস্ত ছাপা ‘ফর্মা’ পুড়িয়ে আবার নতুন করে ছাপতে হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু কোনও দিন তিনি ইংরেজ সরকারের কাছে মাথা নত করেননি। এমনকি, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেও বেশ কয়েক বার মতবিরোধ দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক বিষয়ে। এক বার সিটি কলেজের বিরুদ্ধে সুভাষ বসুর আক্রমণে রবীন্দ্রনাথ অসন্তুষ্ট হন। তিনি রামানন্দকে বলেন, ওই আচরণ নিয়ে নিন্দাসূচক কিছু লেখার জন্য। রামানন্দ সে সময়ে তা করেননি। রবীন্দ্রনাথ পরে সেটি জেনে লিখেছেন, ‘...কিন্তু তারপরেই মনে হয়েছিল প্রস্তাবটা সঙ্গত নয়। ... সময় উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও অন্যায়কে আমি ক্ষমা করতে পারি নে এ আমার দুর্বলতা।... আপনি আমাকে অনুতাপের হাত থেকে রক্ষা করেছেন’। (২৫-০১-১৯৩৮)

এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন এক খ্যাতনামা ব্যক্তি সম্পর্কে লেখা চিঠি রামানন্দের পত্রিকায় প্রকাশ করতে। কিন্তু রামানন্দ তা করেননি। রবীন্দ্রনাথ পরে লিখেছিলেন, ‘আপনি ওটা ছাপতে চান না শুনে আমি আরাম বোধ করলুম’। (১১-১০-১৯২৮)

একাধিক সময়ে রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন কারণে যা করতে চেয়েছেন, শান্ত-বিচক্ষণ রামানন্দ তাঁর বিচারের ছাঁকনিতে ছেঁকে সে বিষয়ে তাঁকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন। এতে অবশ্য কোনও দিন রবীন্দ্রনাথ ক্ষুণ্ণ হননি। তাঁর উদার-চেতনায় বন্ধু রামানন্দ চিরকাল পরামর্শদাতা হয়েই থেকে গিয়েছেন। তাই কখনও দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়নি।

১৯১৭-তে অ্যানি বেসান্তকে নিয়ে যখন কংগ্রেসের সভাপতির পদ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়, সে সময়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে রামানন্দের মতানৈক্য ঘটেছিল। রামানন্দ জাতীয় কংগ্রেসে অন্য দেশের মানুষের সভাপতিত্বকে গ্রহণ করতে পারেননি। এ নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে ঘরোয়া বিতর্কও তৈরি হয়। যারা বেসান্তের বিপক্ষে ছিলেন, তাঁরা ‘অভ্যর্থনা সমিতি’র সভাপতি করেন বৈকুণ্ঠনাথ সেনকে। যারা বেসান্তের পক্ষে ছিলেন, তাঁরা ওই পদে ভেবেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্রনাথ রামানন্দকে নিজের পক্ষে আনতে বহু চেষ্টা করেছিলেন। যদিও রামানন্দ নিজের মতে অটল ছিলেন। পরে দেখা যায়, যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে মাতামাতি করছিলেন, তারাই শেষ পর্যন্ত তাঁকে রাখতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন এবং সে আসনে বসেন বৈকুণ্ঠনাথই। আসলে রামানন্দ জানতেন, রবীন্দ্রনাথের জায়গা দলাদলির রাজনীতিতে নয়, তাঁর আসন অনেক উপরে। তাই বারে বারেই রবীন্দ্রনাথকে সচেতন করতেন এ সব বিষয়ে। রবীন্দ্রনাথও সে কথা মেনে নিতেন নির্দ্বিধায়।

বয়সে বড় হয়েও রবীন্দ্রনাথ রামানন্দের ভাবনাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন। আসলে পথ যেখানে সত্য, সেখানেই রবীন্দ্রনাথের চিন্তার মিল। তাই কখনও কখনও অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে গেলেও শুধরে দিয়েছেন বন্ধু রামানন্দ। উদার মনে তা মেনেও নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।


অন্যান্য মনীষীদের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের বহু লেখা ও গান প্রবাসী ও মডার্ন রিভিউ-তে প্রকাশিত হয়েছে। প্রবাসীতে প্রকাশিত ‘ভারতবর্ষীয় বিবাহ’ শীর্ষনামক প্রবন্ধে কবিগুরু লিখেছেন, “…স্বামী তার (স্ত্রীর) পক্ষে আইডিয়া। ব্যক্তির কাছে পাশববলে সে নত হয় না, আইডিয়ার কাছে ধর্মবলে সে আত্মসমর্পণ করে। …এই আইডিয়াল প্রেম হচ্ছে যথার্থ মুক্ত প্রেম। …এতদিন ভারতীয় সমাজের যে আধারের উপর তার বিবাহ প্রথা প্রতিষ্ঠিত ছিল সেই আধারের বিকৃতি হওয়ায় বিবাহের মূলগত ভাব ও তার ব্যবহার সব কিছুর সঙ্গে ঠিকমতো খাপ খাচ্ছে না।… এইজন্যে স্হিতির মধ্যে যে সম্পদ নারী তারই সাধনা করলে সার্থকতা লাভ করে।”


সমাজের সেবার কাজেও রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের অনেক অবদান রয়েছে। ১৮৯৬ সালে উত্তর-পশ্চিম রাজ্যে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, তার ত্রাণকার্যের জন্য রামানন্দ অন্যদের সঙ্গে নিয়ে একটি সেবাশ্রম চালু করেন। এলাহাবাদে প্লেগ ছড়িয়ে পড়লে, অনেকের নিষেধ সত্বেও রামানন্দ সেবাকার্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯০০ সালে এবং ১৯০৬ সালে যথাক্রমে অর্ধকুম্ভমেলা ও পূর্ণ কুম্ভমেলায় দুর্গত শিবির স্হাপন করেন। শান্তিনিকেতনে একটি নৈশ বিদ্যালয় স্হাপনের জন্য রামানন্দ অর্থ দান করেন। শান্তিনিকেতনে একটি স্কুল ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়লে, রামানন্দ রবীন্দ্রনাথকে অর্থসংকট থেকে উদ্ধার করেন।

১৯৪৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কলকাতায় এই মহামনীষী ও কর্মযোগীর মৃত্যু ঘটে









*""""""""""'''''''""""""########₹₹₹₹₹₹₹######





























No comments: