কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
(৩১ মে,১৮৩৪ - ১৩ জানুয়ারি,১৯০৭)
কৈশোরে কৃষ্ণচন্দ্র এক সময় কুসংসর্গে পতিত হন। তখন বন্ধুদের পরামর্শে তিনি একবার কলকাতার কালীঘাটে পলায়ন করেন, কিন্তু ধৃত হয়ে সেখান থেকে গৃহে প্রেরিত হন। পরে তাঁর মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে। জমিদার-পুত্রের সঙ্গে তিনি ঢাকা আসেন এবং তাঁর এক জ্ঞাতি ঢাকা জজকোর্টের উকিল গৌরবচন্দ্র দাসের আশ্রয়ে থেকে ঢাকার নর্মাল স্কুলে শিক্ষালাভ করেন। এখানে তিনি সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন। এ সময় থেকেই তাঁর কাব্যচর্চা শুরু হয়। ঈশ্বর গুপ্তের উৎসাহে সংবাদ সাধুরঞ্জন ও সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। কৃষ্ণচন্দ্র এক সময় স্বধর্ম ও ঈশ্বরের বিরোধিতা শুরু করেছিলেন; পরে আবার শাক্ত, বৈষ্ণব ও ব্রাহ্মধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন।
কৃষ্ণচন্দ্র ১৮৫৪ সালে বরিশালের কীর্তিপাশা বাংলা বিদ্যালয়ের প্রধান পন্ডিতপদে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি ঢাকার নর্মাল স্কুলে যোগদান করেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় চাকরি ছেড়ে তিনি মডেল স্কুলে (১৮৬০) যোগ দেন। এভাবে তিনি বিভিন্ন স্কুলে দীর্ঘ উনিশ বছর শিক্ষকতা করেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনে তিনি ছিলেন খুবই নিষ্ঠাবান। অনেক কীর্তিমান ব্যক্তি তাঁর ছাত্র ছিলেন। মাঝখানে কিছুদিন তাঁর স্মৃতিবিভ্রম ঘটে; পরে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।
তিনি একজন স্বনামধন্য বাঙালি কবি ও পত্রিকা সম্পাদক। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার পক্ষে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। মূলত কীর্তিপাশার জমিদারের অর্থানুকূল্যে তিনি জীবনযাপন করেন। কবির স্মৃতির উদ্দেশ্যে দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি গ্রামে ১৯১৪ সালে কবি কৃষ্ণ চন্দ্র ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটিতে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাণিক্যচন্দ্র মজুমদার। পিতৃহীন হয়ে ঢাকায় অপরের আশ্রয়ে প্রতাপাদিত্যের হন এবং ফরাসি ভাষা শিক্ষা করেন। কৃষ্ণচন্দ্র ১৮৫৪ সালে বরিশালের কীর্তিপাশা বাংলা বিদ্যালয়ের প্রধান পন্ডিতপদে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি ঢাকার নর্মাল স্কুলে যোগদান করেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় চাকরি ছেড়ে তিনি মডেল স্কুলে (১৮৬০) যোগ দেন। এভাবে তিনি বিভিন্ন স্কুলে দীর্ঘ উনিশ বছর শিক্ষকতা করেন। সবশেষে যশোর জেলা স্কুলে প্রধান পণ্ডিতের কাজ করে অবসর নেন। শেষ জীবনে কৃষ্ণচন্দ্র সেনহাটিতে বসবাস করেন এবং বিভিন্ন সঙ্গীত রচনা করে অবসর জীবন কাটান। ১৯০৭ সালের ১৩ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়।
তার প্রথম ও শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ "সদ্ভাব শতক" (ঢাকা, ১৮৬১)| এই বইটির অধিকাংশ কবিতা নীতিমূলক, যা সুফী এবং হাফিজের ফার্সি কবিতার অনুসরণে রচিত।
ছেলেবেলা তার ছদ্মনাম ছিল রামচন্দ্র দাস, সংক্ষেপে রাম। তাই পরিণত বয়সে তিনি রামের ইতিবৃত্ত (১৮৬৮) নামে একটি আত্মচরিত রচনা করেন। মহাভারতের ‘বাসব-নহুষ-সংবাদ’ অবলম্বনে রচিত তার আরেকটি গ্রন্থ হলো মোহভোগ (১৮৭১)। কৈবল্যতত্ত্ব (১৮৮৩) নামে তিনি একটি দর্শনবিষয়ক গ্রন্থ লেখেন। নাটক রাবণবধ মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়। তার অপ্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা পনেরো। তার রচনা প্রসাদগুণসম্পন্ন এবং তার কবিতার অনেক পঙ্ক্তি প্রবাদবাক্যস্বরূপ, যেমন: ‘চিরসুখী জন ভ্রমে কি কখন ব্যথিত বেদন বুঝিতে পারে’ ইত্যাদি। এ পঙ্ক্তিধারী কবিতাটি এক সময় স্কুলপাঠ্য বইয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
১৮৬০ সালে মাসিক মনোরঞ্জিকা ও কবিতাকুসুমাবলী নামক পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৮৬১ সালে ঢাকা প্রকাশ প্রকাশিত হলে তিনি তার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর মালিকের সঙ্গে মতানৈক্য হলে তিনি পদত্যাগ করেন এবং ১৮৬৫ সালে বিজ্ঞাপনী নামক পত্রিকার সম্পাদক হন। দেড় বছর পর তিনি আবার ঢাকা প্রকাশ পত্রিকার সম্পাদক পদে প্রত্যাবর্তন করেন। অসুস্থতার কারণে সাংবাদিকতা ছেড়ে তিনি কিছুদিন শিক্ষকতা করেন।
১৮৮৬ সালে যশোর থেকে তিনি সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় দ্বৈভাষিকী নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। কবিতাকুসুমাবলী ছিল পদ্যবহুল মাসিক পত্রিকা। তার সদ্ভাবশতক কাব্যের অধিকাংশ কবিতাই এ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
################################
No comments:
Post a Comment