টমাস হার্ডি( Thomas Hardy,)
( ২ জুন ১৮৪০ - ১১ জানুয়ারি ১৯২৮)
টমাস হার্ডি ১৮৪০ সালে পূর্ব ডচেষ্টারশায়ারের হায়ার বকহ্যাম্পটন নামে একটি পল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা টমাস (১৮১১-১৮৯২) ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রী। হার্ডির মা জেমিমা হার্ডি (১৮১৩-১৯০৪ যার বিবাহপূর্ব নাম ছিল জেমিমা হ্যান্ড) একজন বিদূষী মহিলা ছিলেন এবং হার্ডির বয়স আট বছর হওয়া পর্যন্ত তিনি তাকে বাড়িতে শিক্ষা দেন। এরপর হার্ডিকে বকহ্যাম্পটনের স্কুলে ভর্তি করা হয়। হার্ডির পরিবার খুব সচ্ছল ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় মাত্র ষোল বছর বয়সে তাকে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে হয়। এরপর তিনি জেমস হিক্স নামের স্থানীয় এক স্থপতির কাছে শিক্ষানবীশি হিসাবে কাজ শুরু করেন।১৯৬২ সালে হার্ডি লন্ডনের কিংস কলেজে ভর্তি হন। ইতমধ্যে তিনি একজন স্থপতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। রয়্যাল ইন্সটিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস এবং আর্কিটেক্টারাল এ্যাসোসিয়েশন থেকে তিনি পুরস্কার লাভ করনে। ১৮৭০ সালে কর্নওয়ালের একটি প্রাচীন গীর্জার স্থাপত্য নিয়ে কাজ করার সময় এমা লাভিনিয়া গিফোর্ড এর সাথে তার পরিচয় হয়। ১৮৭৪ সালে তারা বিয়ে করেন।
টমাস হার্ডির লেখা প্রথম উপন্যাসের নাম ’দ্যা পুওর ম্যান এন্ড দ্যা লেডি’। এটি লেখা শেষ হয় ১৮৬৭ সালে। লেখাটি প্রকাশ করার জন্য কোন প্রকাশক আগ্রহী হননি। তার এক বন্ধু, কবি ও ঔপন্যাসিক জন মেরেডিথ এর পরামর্শে তিনি পরে আর এই লেখা প্রকাশের চেষ্টা করেননি। মেরডিথের মতে লেখাটির মধ্যে অনেক বিতর্কিত রাজনৈতিক বিষয় ছিল যা ছাপা হলে হার্ডিকে পরবর্তিতে সমস্যায় ফেলত। হার্ডি এই উপন্যাসের পান্ডুলিপিটি নষ্ট করে ফেলেছেন।
দাম্পত্যসঙ্গী | এনা লাভিনিয়া গিফর্ড |
---|---|
টমাস হার্ডির গদ্য সাহিত্যকর্মের তালিকা,
- The Poor Man and the Lady
- Under the Greenwood Tree
- Far from the Madding Crowd
- The Return of the Native
- The Mayor of Casterbridge
- The Woodlanders
- Wessex Tales
- Tess of the d'Urbervilles
- Life's Little Ironies
- Jude the Obscure
- A Pair of Blue Eyes
- The Trumpet-Major
- Two on a Tower
- A Group of Noble Dames
- The Well-Beloved
- Desperate Remedies
- The Hand of Ethelberta
- A Laodicean
এরপর টমাস হার্ডি লেখেন ডেসপাটে রেমেডিস (১৮৭১) ও আন্ডার দ্যা গ্রিন উড ট্রিজ (১৮৭২), এই দুটি লেখাই বেনামে প্রকাশিত হয়। ১৮৭৩ সালে প্রকাশিত হয় এ পেয়ার অব ব্লু আইজ। ১৮৭৪ সালে প্রকাশিত হয় ফার ফ্রম দ্যা ম্যাডিং ক্রাউড।
টমাস হার্ডি ১৯২৮ সালে মারা যান। তার মৃতদেহ দাহ করা হয়। তার দেহাবশেষ ওয়েষ্ট মিনিস্টার এ্যাবের পোয়েটস কর্ণারে রাখা হয়েছে। দাহ করার আগে তার মৃতদেহ থেকে হৃদপিন্ডটি স্টিনসফোর্ড গীর্জার সমাধিক্ষেত্রে তার পূর্ব পুরুষদের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
একজন ইংরেজ সাহিত্যিক হলেও রোমান্টিসিজম ঘরানার এই কবি ও ঔপন্যাসিক উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও চার্লস ডিকেন্স এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ডিকেন্সের মতো তার লেখাও ভিক্টোরিয়ান সোসাইটিতে সমালোচিত হয়েছিল। যদিও হার্ডি তার লেখায় তৎকালিন ক্ষয়িষ্ণু গ্রাম্য সমাজের দিকে বেশি আলোকপাত করেছিলেন। টমাস হার্ডি প্রথম দিকে নিজেকে একজন কবি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পরে অবশ্য একজন ঔপন্যাসিক হিসাবেও তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান।
তার লেখালেখির শুরুটা খুব অল্প বয়সে হলেও ১৮৭০ সালের পূর্বে তার কোন লেখা প্রকাশিত হয়নি। টেস অব দ্যা ড’আরবারভিলস (১৮৯১), ফার ফ্রম দ্যা ম্যডিং ক্রাউড (১৮৭৪), দ্যা মেয়র অব কাস্টারব্রিজ (১৯৮৬), জুড দ্যা অবসকিউর (১৮৯৫) তার জনপ্রিয় উপন্যাস।
হার্ডির উপন্যাসে ইংলিশ কান্ট্রিসাইড বা গ্রামাঞ্চলের ভূ-দৃশ্য সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি নিজে বেড়ে উঠেছেন ডরচেস্টারে। এর আশেপাশের জায়গাগুলো হার্ডির অধিকাংশ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট হিসেবে গৃহীত হয়েছে। যেমন টেস অব ডি’আরবারভিলেস উপন্যাসে স্টোনহেঞ্জ নামক ঐতিহাসিক স্থানটির বিশেষ গুরুত্ব আছে।
তৎকালীন ব্রিটিশ সমাজে বিয়ে এবং ডিভোর্সের জন্য কট্টর আইন চালু ছিল। হার্ডি কঠোরভাবে তার সমালোচনা করেন। তিনি ১৯১২ সালে একটি স্থানীয় পত্রিকায় লেখেন, “The English marriage laws are…the gratuitous cause of at least half of the misery of the community” ও “Jude the Obscure” উপন্যাসে তিনি প্রচলিত সেকেলে বিবাহ আইনের নেতিবাচক প্রভাবটা তুলে ধরেছেন। হার্ডি নিজেও ব্যক্তিজীবনে দু’বার বিয়ে করেন, দু’বারই দাম্পত্য জীবনে সুখ পান নি। তখন ইংল্যান্ডের আইন অনুযায়ী বিয়ের আগে সব সম্পত্তির উপর মেয়েদের সমান অধিকার থাকতো। কিন্তু বিয়ের পর সেই সম্পত্তির উপর সব ধরনের অধিকার চলে যেত স্বামীর উপর। আইন অনুযায়ী কারণ দেখিয়ে স্ত্রীদের মারধর করতে পারতেন স্বামীরা। ডিভোর্সের ক্ষেত্রে ছিল কড়াকড়ি আইন। স্ত্রীর এডাল্টারি বা পরকীয়া প্রেম প্রমাণ করতে হতো। সেটাও একটা জটিল ও ব্যয়বহুল আইনি প্রক্রিয়া। বরং সহজ ও ঝামেলামুক্ত ছিল বউ বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়টি। হার্ডি “দ্য মেয়র অফ ক্যাস্টারব্রিজ” উপন্যাসে সেটিই দেখিয়েছেন। উপন্যাসে মাইকেল হেনচার্ড তার বউকে নিলামে বিক্রি করে দেয়। হার্ডির জীবদ্দশাতেই ১৯১৩ সালে এই প্রথা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
হার্ডির কাছে আধুনিক ইংলিশ সাহিত্য নানাভাবে ঋণী। ভার্জিনিয়া উলফ, ডিএইচ লরেন্স, রবার্ট গ্রেবস-এর মতো খ্যাতনামা কথাশিল্পীরা তার গল্প-উপন্যাস দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। অনুরূপভাবে রবার্ট ফ্রস্ট, এজরা পাউন্ড, ডিলান টমাসের মতো অনেক প্রখ্যাত কবি তার কবিতা দ্বারা প্রভাবিত হন। কবি হার্ডি সম্পর্কে ডিলান টমাসের বক্তব্য হলো “one could never write a poem dominated by time as Hardy could”। ১৮৯৮ থেকে ১৯২৮ সালের মধ্যে হার্ডি প্রায় ৯০০ কবিতা প্রকাশ করেন। এই বিপুল সংখ্যক কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি কবি হিসেবেও বিশ্বসাহিত্যে অনন্য উচ্চতায় আসীন আছেন।
এ পর্যায়ে আমরা হার্ডির একটি উপন্যাস ধরে তার সাহিত্যিক প্রবণতা ও সমকালীন সমাজ-বাস্তবতা সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞাত হতে পারি। এক্ষেত্রে তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি টেস অব ডি’আরবারভিলেস (১৮৯১) উপন্যাসটিকে আমরা বেছে নিতে পারি। উপন্যাসটি অবলম্বনে ‘টেস’ নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক রোমান পলোনস্কি, ১৯৭৯ সালে। ছবিটি ৬টি বিভাগে অস্কার মনোনয়ন পেয়ে ৩টি বিভাগে জয়লাভ করে।
টেস নামক একজন নারীর সংগ্রামী জীবন এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় বিষয়। অতি সাধারণ ঘরের মেয়ে টেস, যদিও তার পরিবারের পদবি ডারবেফিল্ড শুনে এক গ্রাম্য পাদ্রী কাম ইতিহাসবিদ জানান, তারা বিখ্যাত বংশ ডারবারভিলেসের বংশোদ্ভূত। এ কথা শুনে মাতাল কৃষক তার বড় মেয়ে টেসকে আত্মীয়তার সূত্র তৈরি করে এক ডি’আরবারভিলেস পরিবারে কাজের জন্য পাঠিয়ে দেয়। সেখানে এলেক ডি’আরবারভিলেস কর্তৃক ধর্ষিত হয় টেস। টেস অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসে। শিশুটি জন্মগ্রহণ করেই মারা যায়। এরপর টেস একটি ডেইরিফার্মে মিল্কম্যানের কাজ জুটিয়ে বাড়ি ছাড়ে। এখানে সত্যিকারের প্রেমিক অ্যাঞ্জেল ক্লারের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ও প্রণয় ঘটে। আঞ্জেল সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। কৃষিকাজ তার প্যাশন। টেস তার জীবনে ঘটে যাওয়া পূর্বের ঘটনাগুলো অ্যাঞ্জেলকে জানাবে জানাবে করে জানানোর সুযোগ পায় না। বিয়ের রাতে সে অ্যাঞ্জেলকে সব খুলে বলে। আঞ্জেল সব শুনে টেসকে প্রত্যাখ্যান করে। প্রত্যাখ্যাত টেস বাড়ি ফিরে আসে। ততদিনে তাদের পরিবারের অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়েছে। বাবা মারা গেছে। পরিবারের দায়িত্ব তখন টেসের উপর। বাধ্য হয়ে টেস ফিরে যায় ধর্ষক এলেকের কাছে। বাধ্য হয়ে তাকে বিয়েও করে সে। এরই ভেতর স্বেচ্ছায় সন্ন্যাসজীবন থেকে ফিরে আসে অ্যাঞ্জেল। টেসের প্রতি যে অন্যায় করেছে, সেটা বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয় সে। ফিরে আসে টেসের কাছে। বিবাহিত টেসের সঙ্গে দেখা করে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। পরিবর্তিত অ্যাঞ্জেলের সাক্ষাৎ পেয়ে টেস বুঝতে পারে, তাকে সুখী হতে হলে তার সত্যিকারের প্রেমিক অ্যাঞ্জেলের কাছে ফিরে যেতে হবে। এজন্যে সে এলেককে খুন করে অ্যাঞ্জেলের কাছে পালিয়ে আসে। তারা দুজনে এক পোড়ো বাড়িতে আশ্রয় নেয়। দুদিন স্বামী-স্ত্রীর মতো বাস করে। তৃতীয় দিন পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় টেসকে। টেসের ফাঁসি হয়ে যায় খুনের অপরাধে। টেসের কথা মতো তার ছোটবোনকে বিয়ে করে অ্যাঞ্জেল টেসের পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
সমস্ত উপন্যাসজুড়ে উপস্থাপিত হয়েছে নিরপরাধ অসহায় টেসের ভোগান্তি। তার এই করুন পরিণতির জন্যে সে নিজে দায়ী নয়। এলেক তাকে ধর্ষণ করে। আর সেই অপরাধ গিয়ে পড়ে টেসের ওপর। যে-কারণে টেসকে ভুল বোঝে অ্যাঞ্জেল। অথচ অ্যাঞ্জেলের বিবাহপূর্ব জীবনেও একজন নারী এসেছিল। অ্যাঞ্জেলের সেই জীবন টেস মেনে নিতে পারলেও টেসের জীবন মানতে পারেনি তার কথিত প্রেমিক পুরুষ। টেস বারবার সমাজ-সংসার থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তবু সে দায়িত্বশীল থেকেছে সংসারের প্রতি। পরিবারের কথা ভেবে নিজেকে পুনরায় সপে দিয়েছে তার ধর্ষক পুরুষের কাছে। টেসকে ধর্ষণ করার জন্যে এলেকের কোনো শাস্তি হয়নি। কিন্তু এলেকের হত্যার অপরাধে টেসের ফাঁসি হয়েছে। এইভাবে ভিক্টোরিয়ান সমাজে একজন নারীর জীবনসংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেছেন হার্ডি। গল্পটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেদনার। প্রটাগনিস্ট টেসকে আমরা সার্থক ট্রাজিক নায়িকা বলতে পারি। পুরো সমাজকাঠামোটাই যেখানে এন্টাগনিস্ট হিসেবে কাজ করছে।
**************************!!!!!!!!!!!!!!!!!*******
No comments:
Post a Comment