Monday, 3 June 2024

শুভ জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার, বিশিষ্ট অধ্যাপক, গবেষক ও পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির ভূতপূর্ব সভাপতি। ৯ খণ্ডে প্রকাশিত তাঁর বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত গ্রন্থ হিমালয়-প্রতিম কীর্তিমান এবং গ্রন্থখানির জন্য তিনি সারস্বত সমাজে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে আছেন। । Dt -03.06.2024. Vol -898. The blogger post in literary e magazine

       

       অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
 (৩রা জুন, ১৯২০ – ২১শে মার্চ, ২০০৩) 




বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার, বিশিষ্ট অধ্যাপক, গবেষক ও পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির ভূতপূর্ব সভাপতি। ৯ খণ্ডে প্রকাশিত তাঁর বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত গ্রন্থ হিমালয়-প্রতিম কীর্তি এবং গ্রন্থখানির জন্য তিনি সারস্বত সমাজে শ্রদ্ধার বিশেষ আসন অধিকার করে আছেন।


জন্ম ৩রা জুন ১৯২০ সাল। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার নকফুলে মাতুলালয়ে। পিতা অক্ষয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মাতা চারুবালা দেবী। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে তারা হাওড়ায় বসবাস করতে থাকেন। ১৯৩৮ সালে হাওড়া জিলা স্কুল থেকে বাংলায় ৭৭% নম্বর সহ জেলায় এই বিষয়ে প্রথম হয়ে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর রিপন কলেজ (অধুনা সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে আইএ পরীক্ষায় বাংলা ও আসামের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে বিএ ও এমএ পরীক্ষায় (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে) প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন। কলেজ জীবনেই ১৯৪১-৪২ সালে সায়গণ থেকে প্রদত্ত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বক্তৃতাগুলো বঙ্গানুবাদ করে ফরোয়ার্ড পত্রিকায় ছাপতে থাকেন। ছাত্রাবস্থাতেই তার গল্প দেশ ও অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘নবশক্তি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৪৫ সালে এমএ পাশ করে সেই বছরেই নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরে রিপন কলেজে ও ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অধ্যাপক হয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন অসিতকুমার। ২০০২ সালে অন্নদাশঙ্কর রায়ের মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতির পদে বৃত হন ও আমৃত্যু সেই পদে বহাল থাকেন।



শ্রেষ্ঠ কীর্তি বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, ৯ খণ্ডে প্রকাশিত বাংলা সাহিত্যের বিস্তারিত ইতিহাসগ্রন্থ। এই গ্রন্থের দুটি সহজপাঠ্য সংস্করণ বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত ও বাংলা সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্তও তার রচনা। তার রচিত অন্যান্য গ্রন্থগুলি বাংলার নবজাগরণ বিষয়ে রচিত। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ ও বাংলা সাহিত্য, বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর, সাহিত্য জিজ্ঞাসায় রবীন্দ্রনাথ হাওড়া শহরের ইতিহাস(২ খণ্ড) ইত্যাদি। তার সম্পাদিত গ্রন্থগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ গল্প শ্রেষ্ঠ লেখক, জীবনের গল্প গল্পের জীবন, সত্যেন্দ্র রচনাবলী, বিদ্যাসাগর রচনাবলী, সঞ্জীব রচনাবলী উল্লেখযোগ্য। স্মৃতি বিস্মৃতির দর্পনে নামে তার একটি আত্মকথাও রয়েছে। এছাড়া ভারতীয় পণ্ডিত বেদ প্রকাশ উপাধ্যায় রচিত কল্কি অবতার ও মোহাম্মদ সাহেব বইটি গবেষণা পূর্বক হিন্দুধর্মগ্রন্থ বেদ ও পুরাণে মুহাম্মদ নামে অনুবাদ ও সম্প্রসারণ করেন তিনি।



পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতিত্ব করা ছাড়াও তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গবেষক ছিলেন। একাধিকবার সম্মেলন উপলক্ষ্যে ও অতিথি-অধ্যাপনার জন্য বিদেশেও গিয়েছেন। ১৯৮১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক বুদ্ধমহাভাব মহাসম্মেলনে যোগ দেন এবং ১৯৯৬ সালে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসাবে ভাষণ দেন। চিন্তাবিদ ও গবেষক হিসাবে একাধিক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন অসিতকুমার।

 তাঁর স্ত্রী হাওড়া গার্লস কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপিকা বিনীতা গঙ্গোপাধ্যায় (২৯/০১/১৯২৫ - ১৫/০৪/২০০৬) ঐতিহাসিক উপন্যাস,গল্প ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন সুকন্যা ছদ্মনামে ।


বাংলা সাহিত্যকে জানতে হলে অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইটির ওপর ভরসা করা ছাড়া উপায় নেই। অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অসামান্য গবেষণা কর্মের সবচেয়ে মৌলিক অংশটি পাওয়া যাবে অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় পর্ব থেকে ঊনিশ শতকের প্রথম পর্ব -- ভারতচন্দ্রের পর থেকে মাইকেলের আগে অবধি বাংলা সাহিত্যের তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত পর্বটি নিয়ে। মহা গ্রন্থের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ খণ্ডে প্রায় আড়াই হাজার পাতায় যে তথ্য বিশ্লেষণ ও সাহিত্য বিচারের নিদর্শন তিনি হাজির করেছেন, বাংলা সাহিত্যে তার তুলনা কমই আছে।


সারাজীবন হাওড়ার বাড়িতেই থেকেছেন তিনি। নিজেই জায়গা নিয়ে যেমন গর্ব ছিল ঠিক তেমনই কলকাতা, হাওড়ার দূষণ নিয়ে রসিকতা করতেও ছাড়তেন না। জীবনটাকে উপভোগ করেছেন প্রাণভরে। বাংলা ভাষাকে লালন করেছিলেন নিজের অন্তরে। তাঁর একমাত্র সম্পদ ছিল তাঁর অজস্র ছাত্রছাত্রীরাই। যারা সর্বক্ষণ আঁকড়ে থাকতেন তাঁদের প্রিয় অধ্যাপককে, তিনিও থাকতেন বইকি! বাঙালিদের এই যে শতবর্ষ উদযাপন নিয়ে এতো মাতামাতি, তা নিয়েও জনসমক্ষে ঠাট্টা করেছেন একাধিকবার। আর তাই বোধ হয় কোনোও এক অলিখিত কারণে তাঁর শতবর্ষ চলে গেল খানিক নীরবেই। আড়ম্বরহীনতা যে তাঁর প্রিয় ছিল, এ যেন তারই উদাহরণ হয়ে রইলো।


 ২০০৩ সালের ২১ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন বাংলা সাহিত্যের মাইলফলক হয়ে থাকা অধ্যাপক অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।‌














----------------------!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!-----------------------










No comments: