Friday, 21 June 2024

শুভ জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি। বিকাশ ভট্টাচার্য । একজন ভারতীয় চিত্রশিল্পী। তিনি তাঁর চিত্রকলার মাধ্যমে সাধারণ বাঙালি মধ্যবিত্তের জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা, কুসংস্কারাছন্নতা, ভণ্ডামি-দুর্নীতিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি তেল রং, অ্যাক্রিলিক , জল রং, কন্তে এবং কোলাজের কাজ করেছেন। ২০০৩ সালে ভারতের চারুকলা বিষয়ক রাষ্ট্রীয় ললিত কলা একাডেমী থেকে "ললিত কলা একাডেমী ফেলোশিপ" এ সম্মানিত হন। Dt - 21.06.2024. Vol - 915. The blogger post in literary e magazine



বিকাশ ভট্টাচার্য
 (২১ জুন ১৯৪০ - ১৮ ডিসেম্বর ২০০৬) 




একজন ভারতীয় চিত্রশিল্পী। তিনি তাঁর চিত্রকলার মাধ্যমে সাধারণ বাঙালি মধ্যবিত্তের জীবন, তথা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, কুসংস্কারাছন্নতা, ভণ্ডামি-দুর্নীতিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি তেল রং, অ্যাক্রিলিক , জল রং, কন্তে এবং কোলাজের কাজ করেছেন। ২০০৩ সালে ভারতের চারুকলা বিষয়ক রাষ্ট্রীয় ললিত কলা একাডেমী থেকে "ললিত কলা একাডেমী ফেলোশিপ" দ্বারা তিনি সম্মানিত হন।

1940 সালে 21 জুন কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। খুব অল্প বয়সেই তিনি তাঁর পিতাকে হারান। বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম তাকে গভীর নিরাপত্তাহীনতার সাথে সাথে সুবিধা থেকে বঞ্চিতদের প্রতি সহানুভূতি করে গড়ে তোলে । যারা প্রায়শই তাঁর কাজগুলিতে ফুটে ওঠে।

1963 সালে, তিনি ইন্ডিয়ান কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ড্রাফ্টসম্যানশিপ থেকে ফাইন আর্টসে ডিপ্লোমা নিয়ে স্নাতক হন।সারাজীবন কলকাতায় থাকতেন।1965 সালে কলকাতায় তাঁর প্রথম একক প্রদর্শনী হয়। তাঁর আঁকা ছবি ভারতের বাইরে প্রদর্শিত হয়েছিল; তিনি প্যারিসে 1969 সালে শো করেছিলেন; যুগোস্লাভিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, রোমানিয়া এবং হাঙ্গেরিতে 1970 থেকে 72 সালের মধ্যে; 1982 সালে লন্ডনে; এবং 1985 সালে নিউইয়র্কে।

তিনি 1960 এর দশকে তার পুতুল সিরিজের মাধ্যমে জীবনের প্রথম দিকে বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জন করেছিলেন, যা পরে দুর্গা সিরিজ দ্বারা অনুসরণ করা হয়েছিল। 1980-এর দশকে, ভট্টাচার্য অতীতের একজন মহান শিল্পী রাম কিঙ্কর বাইজের জীবনের উপর একটি উপন্যাসের জন্য চিত্র এঁকেছিলেন। বাঙালি ঔপন্যাসিক সমরেশ বসু রচিত উপন্যাসটি লেখকের মৃত্যুর কারণে কখনই সম্পূর্ণ হয়নি, তবে বইটির জন্য ভট্টাচার্যের কাজগুলি তার সেরা কিছু ছিল। ভট্টাচার্য প্রায়শই বাস্তববাদী শৈলীতে ছবি আঁকতেন। তিনি ঠাকুর, সত্যজিৎ রায় এবং সমরেশ বসু প্রতিকৃতি আঁকেন। ইন্দিরা গান্ধীর গুপ্তহত্যা গুপ্তহত্যা প্রতিকৃতি, একটি ঝাপসা এবং সাদা মুখের সাথে, তাকে হত্যার পরে আঁকা হয়েছিল। তিনি নকশাল আন্দোলন এবং পতিতাদের চিত্রকর্মের একটি সিরিজ তৈরি করেছিলেন।

বিকাশ বাংলার বাস্তববাদী চিত্রশিল্পী সঞ্জয় ভট্টাচার্য সহ ভারতের অনেক চিত্রশিল্পীকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।


ভট্টাচার্য 1968 থেকে 1972 সাল পর্যন্ত ইন্ডিয়ান কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ড্রাফ্টসম্যানশিপে অধ্যাপনা করেন। তিনি 1973 থেকে 1982 সাল পর্যন্ত কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্রাফটে অধ্যাপনা করেন। 1964 সালে, তিনি সোসাইটি অফ কনটেম্পরারি আর্টিস্টের সদস্য হন।
বিকাশ ভট্টাচার্যকে এমন এক সময়ে ভারতীয় শিল্পে বাস্তবতা ফিরিয়ে আনার কৃতিত্ব দেওয়া হয় যখন ভারতের শিল্পীরা চিত্রের বিকৃতি এবং বিমূর্ততার দিকে ঝুঁকছিলেন।

শহর এবং এর মানুষদের ছবি আঁকার পাশাপাশি যে তিনি খুব ভালভাবে জানতেন, ভট্টাচার্য ছিলেন একজন দক্ষ প্রতিকৃতি চিত্রশিল্পী। বাস্তববাদ ভট্টাচার্যের শক্তি ছিল; তার তৈলচিত্রগুলি ড্র্যাপারির সঠিক গুণ বা একজন মহিলার ত্বকের স্বর চিত্রিত করতে পারে। আলোর গুণাগুণ ক্যাপচারে তিনি দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।

ভট্টাচার্য তার চিত্রকর্মে একটি রহস্যময় গুণ অর্জন করেছিলেন যা দৃশ্য থেকে অবচেতন পর্যন্ত অনেক স্তরে কাজ করে। বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে নারীর রূপ, এবং সব বয়সের এবং পরিস্থিতির মানুষ-বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলা, শিশু, গৃহকর্মী। নাটকটিকে উচ্চতর করার জন্য চরিত্রগুলির পটভূমি হিসাবে একটি খাঁটি পরিবেশ তৈরি করার ক্ষমতা ছিল তার।

বিকাশ পরাবাস্তববাদীদের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে সালভাদর দালি তাঁর প্রিয় চিত্রশিল্পী।


2000 সালে, ভট্টাচার্য একটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্ট্রোকে আক্রান্ত হন যা তাকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে এবং ছবি আঁকাতে অক্ষম হয়ে পড়ে। দীর্ঘ অসুস্থতার পর 18 ডিসেম্বর 2006 তারিখে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে তিনি মারা যান। তিনি স্ত্রী পার্বতী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

তাঁর পেইন্টিংগুলি নিম্নলিখিত গ্যালারিতে পাওয়া যাবে: গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট নতুন দিল্লি ললিত কলা একাডেমি নয়াদিল্লি শিক্ষা মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লি চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয় যাদুঘর, চণ্ডীগড় ভারত ভবন, ভোপাল।


পুরস্কার ও সম্মাননা

একাডেমি অফ ফাইন আর্টস পুরস্কার, কলকাতা (1962) জাতীয় পুরস্কার, ললিত কলা একাডেমি, নয়াদিল্লি (1971) বিড়লা একাডেমি অফ আর্ট অ্যান্ড কালচার, কলকাতা, জাতীয় পুরস্কার, ললিত কলা একাডেমি, নয়াদিল্লি (1972) বঙ্গ রত্ন (1987) পদ্মশ্রী (1988) শিরোমণি পুরষ্কর (1989) নিবেদিতা পুরষ্কর, রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ আশ্রম (1990) [[ললিত কলা একাডেমি ফেলোশিপ]] (2003)।


ছোটবেলায় বাবা আমাকে পরির ডানা তৈরি করে দিয়েছিলেন। কোনও ‘যেমন খুশি সাজো’ প্রতিযোগিতা ছিল না, বাবার হঠাৎ ইচ্ছে হয়েছিল। কার্ডবোর্ডে তৈরি পরির ডানা বাবা নিজেই এঁকে দিয়েছিলেন।

আর ছিল রথ। আমাদের দুই ভাইবোনের রথ উনি নিজেই সাজিয়ে দিতেন। সেই রথ টানতে টানতে আমরা রাস্তায় বেরোতাম। তখন কলকাতা শহরটা অনেক বেশি বাঙালি ছিল, পাড়ায় বাচ্চারা অনেকেই রথ নিয়ে বেরোত। এখন তো রথ টানার ধুম কমে গিয়েছে!

বাবা ডল সিরিজ এঁকেছিলেন ঠিকই, কিন্তু আমাকে কোনও দিন পুতুল-টুতুল বানিয়ে দেননি। যদিও আশ্চর্যের কথা অন্যত্র। উনি যেন আমার মনের কথাটা কী ভাবে ঠিক বুঝে ফেলতেন! ছোটবেলায় এক বার একজনের বাড়ি গিয়েছি। সে বাড়িতে আমার সমবয়সি একটি বাচ্চা মেয়ে ছিল, তার সাজানো গোছানো সুন্দর একটি পুতুলের বাড়ি ছিল। পুতুলের ওই রকম ঘরবাড়ি তখন এখানে পাওয়া যেত না, মনে হয় ওঁরা বিদেশ থেকে জিনিসটা এনেছিলেন। আমি কোনও দিন বায়না ধরতাম না, কিন্তু বাবা অনেকক্ষণ লক্ষ করছিলেন, ওই বাড়িটা নিয়েই আমি সারাক্ষণ খেলছি। ওই রকম বিদেশি পুতুলের বাড়ি কিনে দেওয়ার সামর্থ্য তখন ওঁর ছিল না। কয়েক মাস পর আমি নিজেই হতভম্ব! ইমপোর্টেড পুতুলের বাড়ি নয়, কিন্তু বাবা কোত্থেকে যেন খুঁজে খুঁজে হুবহু ওই রকম একটা বাড়ি আমার জন্য নিয়ে এসেছেন!

আসলে, বাবা ছিলেন আমাদের পরম বন্ধু। অন্যদের বাবারা চাকরি করতেন। কিন্তু বাবা বাড়িতে বসে ছবি আঁকতেন বলে আমার আর ভাইয়ের দিকে সব সময় নজর থাকত। নজর মানে, আমরা পরীক্ষায় ফার্স্ট হলাম না সেকেন্ড হলাম, এ নিয়ে মা-বাবা কোনও দিনই চাপ দেননি। ‘পাশ করবি তো? সিক্সটি পার্সেন্ট থাকবে?’ ব্যস, তা হলেই বাবা খুশি। আমাদের বাড়িটা তখন এ ভাবেই আর পাঁচটা বাড়ির চেয়ে আলাদা।

আসলে নম্বর-টম্বরের চেয়েও বাবা যেটা বারংবার চাইতেন, আমাদের রুচিনির্মাণ! বাড়িতে বাবা খুব গান শুনতেন। আধুনিক সিনেমার হিন্দি গান চলত না। অখিলবন্ধু ঘোষ, ফিরোজা বেগম থেকে দেবব্রত বিশ্বাস, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এই সব। আর ছোট থেকে এ সব শুনতে শুনতে আমাদের রুচিও অন্য রকম হয়ে গিয়েছিল। পরে কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের থেকে ‘পাপা কহতে হ্যায়’ বা এই গোছের কিছু ক্যাসেট এনে লুকিয়ে শুনেছি, কিন্তু নিজেরই ভাল লাগেনি।

বাংলা গান, আর তার সঙ্গে বাংলায় কথা বলা। এখন তো সবাই হিন্দি-বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে কী একটা জগাখিচুড়ি ভাষায় কথা বলে, আমার নিজেরই অস্বস্তি হয়। বাবা বেঁচে থাকলে এ নিয়ে বোধ হয় খুব বিরক্ত হতেন। আমার মা পটনার মেয়ে, ভুল বাংলা বললে বাবা ওঁকে শুধরে দিয়েছেন।




শিল্পীর সঙ্গে সংসার

পার্বতীর কথা: ওঁর সঙ্গে আমার বিয়েটা কিন্তু আদতে লভ ম্যারেজ নয়। সেটা ১৯৭২ সালের অগস্ট মাসের কথা। তত দিনে ‘ডল সিরিজ’ আঁকা হয়ে গিয়েছে। ওঁর মা ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজছিলেন। তখন কলকাতায় আমার দাদার বিয়ে। দাদার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আবার ওঁদের পরিচিত।


তাঁরাই বলেছিলেন, ‘যে ছেলেটির সঙ্গে বিয়ে, তার বোনও আসবে। আপনারা দেখতে পারেন।’ উনি সেই বিয়েবাড়িতেই আমাকে দেখে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছিলেন, আমি জানতাম না। তার পর তো উনি আমাদের পটনার বাড়িতে এলেন, মা-বাবার সঙ্গে আলাপ করলেন।

আমার বাবা তখন বিহার গভর্নমেন্টের আন্ডার সেক্রেটারি। গানের সমঝদার, পটনায় আমাদের বাড়িতে রবিশঙ্কর, আলি আকবর থেকে নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকে এসেছেন। আমি নিজেও উস্তাদ বিনায়ক রাও পট্টবর্ধনের ছেলের কাছে ছোট ছোট খেয়াল, ধ্রুপদ শিখেছিলাম। ফলে বাবাকে অনেকে তখন ভয় দেখিয়েছিলেন, ‘সে কী, শিল্পীর সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন!’ বাবা কানে তোলেননি।

’৭৩ সালে বিয়ের পর কলকাতায় হাতিবাগানের বাড়িতে আসি। মা-ছেলের ছোট্ট সংসার। ৬ বছর বয়সে ওঁর বাবা মারা গিয়েছিলেন, তার পর মামাবাড়িতেই মানুষ। এক দেওরও ছিল। বিয়ের পরই বিকাশ গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজ ছেড়ে দিলেন। তখন ধর্মতলায় কেটি সাকলাতের স্টুডিয়োতে ওঁরা কাজ করেন। এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনা বলি। কেটির বোনঝি একদিন একটি ছেঁড়া পুতুল ওঁর কাছে নিয়ে এসে সারিয়ে দেওয়ার আবদার করে। ওই পুতুল হাতে নিয়েই বিকাশের মাথায় খেলে যায় ‘ডল সিরিজ’-এর ভাবনা। যাই হোক, বিয়ের পর আমাদের হনিমুন যাওয়া হয়নি, পরের মাসে ‘ইউ এস আই এস’-এ ওঁর ছবির সোলো এগজিবিশন।

আমি ছবির জগৎ তখনও জানি না, উনিই আমাকে আস্তে আস্তে হাতে ধরে সব শিখিয়েছেন। মাঝে মাঝেই হাতিবাগানের বাড়ির ছাদে সোসাইটি অব কনটেম্পোরারি আর্টিস্টস-এর আড্ডা বসত। গণেশ পাইন, রবীন মণ্ডল অনেকে আসতেন। ছাদে শতরঞ্চি বিছিয়ে তেলেভাজা, মুড়ি, চা আর আড্ডা। একটার পর একটা গান গেয়ে যেতেন অরুণিমা চৌধুরী। বিড়লা অ্যাকাডেমিতে সোসাইটির বার্ষিক প্রদর্শনী হত, সকাল থেকে সেখানে শিল্পীরা পড়ে থাকতেন, দুপুরে ভাত আর মাছের মাথা দিয়ে পুঁই শাকের চচ্চড়ি, যেটা ওঁর বিশেষ প্রিয় ছিল।


















======{========={{{{====}}}}======}==






























No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...