( ১২ জুলাই ১৮৪৫ - ১২ জুন ১৯০৪ )
ঊনবিংশ শতকের ভারতীয় বাঙালি সংস্কৃত পণ্ডিত, চিন্তাবিদ, সাংবাদিক ও জনপ্রিয় জীবনীগ্রন্থের প্রণেতা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিশেষ প্রিয়পাত্র ছিলেন তিনি। তাঁর সংগ্রামী জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার জন্য স্বামী বিবেকানন্দ ও শ্রী অরবিন্দ দ্বারা প্রশংসিত ব্যক্তিত্ব.
জন্ম ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুলাই বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাট মহকুমার সিমহাট গ্রামে তার মাতুলালয়ে। পৈতৃক বাড়ি ছিল নদীয়া জেলারই সুবর্ণপুর গ্রামে। গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারের পিতা উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা সোনামণি দেবীর জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন তিনি। তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা মহেন্দ্রনাথ ছিলেন লণ্ডনের প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক। গ্রামের বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে প্রথমে বরিশালের জেলা স্কুলে তারপর বারাসতের স্কুল হয়ে কলকাতার রেভারেন্ড লং স্কুলে স্কলারশিপ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। তের বৎসর বয়সে সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। এখানে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে পান। আর সহপাঠী হিসাবে পান বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ও শিবনাথ শাস্ত্রীকে। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃতে এম.এ পাশের পর তিনি ও শিবনাথ .
এম.এ পাশের পর কিছুকাল এক স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং পরে ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজে অধ্যাপনা করেন। আট বৎসরের অধ্যাপনার পর ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে ডেপুটি ম্যাজিসেট্রট ও ডেপুটি কালেক্টর নিযুক্ত হয়ে বিভিন্ন জেলায় কাজ করেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের "বঙ্গদর্শন" এর অনুকরণে ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে (১২৮১ বঙ্গাব্দের বৈশাখে) যোগেন্দ্রনাথ ইতিহাস, বিজ্ঞান ও দর্শন - বিষয় নিয়ে "আর্যদর্শন" নামে এক পত্রিকার সম্পাদনা করতে থাকেন। সরকারি পদে কর্মরত থাকার কারণে তিনি রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিতে পারেন নি। তবে এগারো বৎসরের প্রকাশকালে তার এই পত্রিকাটি জনসাধারণকে বিশেষভাবে জাতীয়তাবোধ অনুপ্রাণিত করত। পাশ্চাত্য রাজনৈতিক ইতিহাস ও দর্শনে তার গভীর জ্ঞান ছিল। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য তৎকালীন "হিন্দু মেলা"র নাম পরিবর্তন করে 'ভারত মেলা'করার প্রস্তাব দেন তিনি। আগামী ভারতের সামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যায় তিনি বিশেষ ভাবে চিন্তিত ছিলেন। স্ত্রীপুরুষ সবার জন্য উদার শিক্ষা এবং সমাজে নারীদের সমমর্যাদার পক্ষে মত পোষণ করতেন। জাতীয় ভাষার প্রশ্নটি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেছিলেন তিনি। তার মত ছিল - হিন্দি ভারতের রাষ্ট্রভাষা হওয়ার উপযুক্ত এবং এই মত খুব সম্ভবত ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশ করেন। তবে বাংলা ভাষার প্রতি আন্তরিক আগ্রহ ছিল। সেই সময় শিক্ষিত সমাজে ইংরাজীতে লেখার প্রচলন থাকলেও তিনি প্রবন্ধাদি বাংলাতেই লিখতেন। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে (১৩০৬ বঙ্গাব্দে) তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন।
রচনাবলি :
জন্ ষ্টুয়ার্ট মিলের জীবন-বৃত্ত (১৮৭৮)
জোসেফ ম্যাটসিনি ও নব্য ইতালী (১৮৮০)
গ্যারিবল্ডি (১৮৯০)
শান্তি পাগল
মদনমোহন তর্কালঙ্কার
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
কেশবচন্দ্র সেন
কীর্তিমন্দির
প্রাণোচ্ছ্বাস
আত্মোৎসর্গ
সমালোচনমালা.
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য বিপ্লবী দল গঠনে যোগেন্দ্রনাথেরও ভূমিকা ছিল। তার উপস্থিতিতে কলকাতার বাসায় ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে বাঘা যতীন ও শ্রী অরবিন্দের যে বৈঠক হয় সেটিই ছিল বাংলার গুপ্ত বিপ্লবী দল 'যুগান্তর' গঠনের সূচনালগ্নের বৈঠক। যোগেন্দ্রনাথের রচিত জীবনীগ্রন্থ গুপ্ত বিপ্লবী দলের সদস্যদের অবশ্য পাঠ্য ছিল। 'যুগান্তর' দলের অন্যতম সদস্য যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন - পরাধীন দেশবাসীকে মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসার শিক্ষা দিয়েছিলেন যে তিনজন তারা হলেন - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, স্বামী বিবেকানন্দ এবং যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ।
যোগেন্দ্রনাথ সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহায়ক ছিলেন। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ প্রথা অনুসারে এক বিধবা 'মহালক্ষ্মী'কে বিবাহ করেন। কিন্তু ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে কলেরা মহামারীতে তার মৃত্যু হলে তিনি পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কারের বিধবা কন্যা মালতীমালা কে বিবাহ করেন এবং এজন্য তিনি আত্মীয়স্বজন দ্বারা উৎপীড়িত হয়েছিলেন। এঁদের তিন পুত্র ও তিন কন্যা ছিল। যদিও তর্কালঙ্কারের মৃত্যুর পর তাঁর রচিত শিশুশিক্ষা বই এর কপিরাইটের টাকা বিদ্যাসাগর আত্মসাত করেছিলেন, এই অভিযোগ তোলেন যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ।
যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণের জীবনাবসান ঘটে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই জুন তারিখে।
¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
No comments:
Post a Comment