Tuesday, 17 September 2024

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। জগদানন্দ রায় । ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন বাঙালি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক। তিনি শুক্র ভ্রমণ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এই বিজ্ঞান কল্পকাহিনীমূলক গ্রন্থ রচনার জন্যই মূলত তাঁকে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান কল্পকাহিনীমূলক সাহিত্য চর্চার অগ্রদূত হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। তাঁর এই বইটি ভাষাতাত্ত্বিক ইতিহাসবিদদের জন্য বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি করতে পারে। Dt - 18.09.2024. Vol - 1002. Wednesday. The blogger post in literary e magazine

জগদানন্দ রায়
 (১৮ই সেপ্টেম্বর ১৮৬৯ - ২৫শে জুন ১৯৩৩)

ভিনগ্রহের প্রাণীদের নিয়ে বাংলায় ছোটগল্প লিখেছিলেন জগদানন্দ রায়। সহজ সরল ভাষায় নানান পত্রপত্রিকায় লিখেছেন অজস্র বিজ্ঞান প্রবন্ধ, এ ছাড়া বই, পাঠ্যপুস্তকও। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে এসেছিলেন শিক্ষক হিসেবে। নীরবে পেরিয়ে গেল তাঁর জন্মের সার্ধশতবর্ষ।


 ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন বাঙালি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক। তিনি শুক্র ভ্রমণ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এই বিজ্ঞান কল্পকাহিনীমূলক গ্রন্থ রচনার জন্যই মূলত তাঁকে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান কল্পকাহিনীমূলক সাহিত্য চর্চার অগ্রদূত হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। তাঁর এই বইটি ভাষাতাত্ত্বিক ইতিহাসবিদদের জন্য বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি করতে পারে. 

জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান ভারতের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের একটি অভিজাত ও অবস্থাপন্ন পরিবারে। তার পড়াশোনা শুরু হয় একটি স্থানীয় মিশনারি স্কুলে। তখন থেকেই তার মধ্যে বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন মজার বিষয়ে লেখার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। এই আগ্রহের কারণে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশেষ দৃষ্টিতে পড়ে যান। রবীন্দ্রনাথ তখন সন্ধ্যা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার লেখায় বিশেষ আগ্রহ বোধ করেন। জগদানন্দ যখন নিদারুণ ক্লেশের মধ্যে দিনাতিপাত করছিলেন তখন রবীন্দ্রনাথ তাকে নিজের ভূ-সম্পত্তিতে একটি চাকরি জোগাড় করে দেন।

রবীন্দ্রনাথ জানতেন যে চাকরিটি জগদানন্দের যোগ্যতাকে খাটো করে দেখা বই অন্য কিছু নয়। এ কারণে তিনি রায়কে নিজের ছেলেমেয়ের পড়াশোনার ভার দিয়েছিলেন। পরবর্তিতে যখন ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন তখন তিনি জগদানন্দকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন একজন শিক্ষক হিসেবে। তিনি সেই স্কুলের প্রথম সর্বাধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৩২ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক হিসেবে কাজ করে গেছেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে গণিত শিক্ষাদান শুরু করে জীবন কাটেন।

বিজ্ঞান জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে তিনি বেশ কিছু বই লিখেছিলেন। বৈজ্ঞানিক সত্যকে সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার তাগিদেই তিনি লেখা শুরু করেন আর লেখার আদল ছিল অনেকটা রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর মত। এছাড়া বিজ্ঞান কল্পকাহিনী রচনাও শুরু করেন। তার শুক্র ভ্রমণ নামক গ্রন্থের বিষয় ছিল অন্য গ্রহে মানুষের ভ্রমণ কাহিনী। মানুষ অন্য গ্রহে যাতায়াতের মাধ্যমে ইউরেনাস গ্রহে ভিনগ্রহী জীবের সাক্ষাৎ লাভ করে। সেই ভিনগ্রহী জীবের বিবর্তনের সাথে আধুনিক বিবর্তনবাদী তত্ত্বের আশ্চর্য মিল লক্ষ্য করা যায়। ভিনগ্রহী জীবের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি যেসব বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন তা হল: তারা অনেকটা আমাদের পূর্বপুরুষ বানরদের প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের শরীর ঘন কালো পশমে ঢাকা, শরীরের তুলনায় মাথা অস্বাভাবিক রকমের মোটা, লম্বা লম্বা নখ রয়েছে এবং তারা সম্পূর্ণ নগ্ন। তার এই বর্ণনা প্রকাশিত হয় এইচ জি ওয়েল্‌সের বিখ্যাত বিজ্ঞান কল্পকাহিনী দ্য ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস প্রকাশিত হওয়ারও আগে। এই বইয়েও এইচ জি ওয়েল্‌স মঙ্গল গ্রহে ভিনগ্রহী জীবের বর্ণনা দিয়েছিলেন।

রচনাবলী

প্রকৃতি পরিচয় (১৩১৮ )
আচার্য জগদীশচন্দ্রের আবিষ্কার (১৩১৯)
বৈজ্ঞানিকী (১৩২০ )
প্রাকৃতিকী ( ১৩২১ )
জ্ঞানসোপান (১৩২১)
গ্রহণক্ষত্র ( ১৩২২ )
বিচিত্র সন্দর্ভ( ১৩২৪ )
সাহিত্য সন্দর্ভ ( ১৩২৪ )
সুকুমার পাঠ (১৩২৫ )
কনক পাঠ ( ১৩২৫ )
চয়ন (১৩২৬ )
পোকামাকড় (১৩২৬)
বিজ্ঞানের গল্প (১৩২৭)
গাছপালা (১৩২৮)
সাহিত্য সোপান (১৩২৯)
আদর্শ স্বাস্থ্যপাঠ (১৩৩০)
আদর্শ কাহিনী ( ১৩৩০)
মাছ,ব্যঙ,সাপ (১৩৩০)
বাংলার পাখী (১৩৩১)
শব্দ (১৩৩১)
পাখী (১৩৩১ )
বিজ্ঞান-প্রবেশ (১৩৩২)
বিজ্ঞান-পরিচয় (১৩৩২)
আলো (১৩৩৩)
গদ্য ও পদ্য (১৩৩৩)
সাহিত্য সৌরভ (১৩৩৩)
সঞ্চয়ন (১৩৩৩)
বিজ্ঞান-প্রকাশ (১৩৩৩ )
স্থির বিদ্যুৎ (১৩৩৫)
চুম্বক (১৩৩৫)
তাপ (এলাহাবাদ, ১৩৩৫)
চল বিদ্যুৎ (১৩৩৬)
পর্যবেক্ষণ শিক্ষা (১৩৩৮)
নক্ষত্র চেনা ( ১৯৩১)

মৃত্যু - ২৫শে জুন ১৯৩৩ সাল। 


বনমানুষের মতো দেখতে প্রাণীটাকে। ‘যেন এক বৃহৎ কৃষ্ণবর্ণ পদার্থ’। সর্বাঙ্গ লোমাবৃত। শরীরের থেকে মাথাটা অন্তত কয়েক গুণ বড়। তেমনি বড় হাত-পায়ের নখগুলিও। উলঙ্গদেহ প্রাণীটিকে এক ঝলক দেখে বিস্ময় আর ভয় মেশানো অনুভূতি হয়। বিশেষ করে তার স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর যে কোনও মানুষের কাছে বিকট চিৎকার বলে মনে হবে। তার চিৎকারে ‘চিরসুপ্ত স্তব্ধ প্রান্তরও যেন ভীষণ কোলাহলে কম্পিত হইতে লাগিল’। 


চিরসুপ্ত স্তব্ধ প্রান্তর’টি আসলে শুক্র গ্রহ। সেখানে উপস্থিত বিজ্ঞানে উৎসাহী এক উনিশ শতকীয় বাঙালি যুবক। এই মুহূর্তে তার মুখোমুখি সেই গ্রহের অদ্ভুতদর্শন প্রাণীটি। কী করবে বুঝতে পারছে না। সে যদি আক্রমণ করে বসে! আক্রমণের বদলে সেই প্রাণী কিছু একটা ইশারা করল। যেন বাঙালি যুবককে সে বলছে তাকে অনুসরণ করতে। সেটাই বুদ্ধিমানের কাজ, ‘তবে তাহার সাধারণ পদক্ষেপ এতই দীর্ঘ যে মানবপদক্ষেপণের দশগুণও ইহার সহিত সমান হয় না।’

কিছুটা পথ পদব্রজের পর নক্ষত্রের আলোয় দেখা গেল এক রকমের মৃত্তিকা-স্তূপ। পথপ্রদর্শক প্রাণীটির ডাকাডাকিতে স্তূপ থেকে বেরিয়ে এল একই রকমের আরও কয়েকটা প্রাণী। তাদের এক জনের হাতে ‘অদ্ভুত-দীপ’। তাতেই চারপাশ আলোকিত। ‘শুক্রের জীবগণ এক প্রকার।

নিকৃষ্ট প্রাণীর বাসা সংগ্রহ করিয়া অগ্নি উৎপন্ন করে।’ এরা শাকাহারী। এখানে সূর্যতাপ পৌঁছায় না বলে মাটির অনেক নীচে বিশেষ উপায়ে ফসল ফলায়, ‘শুক্রের আভ্যন্তরীণ তাপ দ্বারা সূর্য্যতাপের কার্য্য সাধিত হয়’।

কল্পবিজ্ঞানের এই ছোটগল্পটির নাম ‘শুক্র ভ্রমণ’। লেখক জগদানন্দ রায়। ১২৪ বছর আগে ‘ভারতী’ পত্রিকার কার্তিক ও অগ্রহায়ণ সংখ্যায় দুই কিস্তিতে প্রকাশিত হয়েছিল এটি। বাংলা ভাষায় কল্পবিজ্ঞানের প্রথম গল্প হেমলাল দত্তের ‘রহস্য’ ছাপা হয়েছিল তার তেরো বছর আগে, ‘বিজ্ঞান দর্পণ’ পত্রিকায়। তবে বাংলা ছোটগল্পে ভিন্নগ্রহের প্রাণীর প্রথম আবির্ভাব এই ‘শুক্র ভ্রমণ’-এই। সত্যজিতের ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’ অ্যাং দেখা দেবে এর ঠিক সাড়ে ছয় দশক পরে।


এই কাজ জগদানন্দের মতো কারো জন্য উপযুক্ত নয় জেনে তিনিও তাঁকে তাঁর সন্তানদের পড়াতে বলেন। ব্রহ্মচর্যশ্রম প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি জগদানন্দকে শান্তিনিকেতনে শিক্ষক হিসেবে নিয়ে আসেন। তিনি ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রথম সর্বাধ্যক্ষ । একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, তিনি 1932 সালে অবসর নেওয়া পর্যন্ত অবিচ্ছিন্নভাবে পড়ান, তারপরে তিনি স্বেচ্ছায় গণিতের ক্লাস নিতে থাকেন।

তিনি জনপ্রিয় বিজ্ঞানের উপর বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, তার লক্ষ্য হল রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর আদলে সহজ বাংলায় বৈজ্ঞানিক সত্য প্রচার করা। গ্রহ-নক্ষত্র, প্রকৃতিকি, বৈজ্ঞানিকী, জগদীশচন্দ্রের আবিষ্কর, বাংলার পাখি ছিল তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ।


















=========∆∆∆∆∆∆∆∆∆============








No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। পশুপতি ভট্টাচার্য । খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। Dt -15.11.2024. Vol -1053. Friday. The blogger post in literary e magazine

পশুপতি ভট্টাচার্য  ১৫ নভেম্বর ১৮৯১ -  ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৮   একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক। জন্ম  বিহার রাজ্যে পিতার কর্মস্থল আরায়। তাদ...