Saturday, 28 September 2024

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। নলিনীকান্ত সরকার।‌ একাধারে সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি, গায়ক,সাহিত্যবোদ্ধা ও ছন্দশ্রী ছিলেন। তবে হাসির গানের রচয়িতা ও গায়ক হিসাবেই তার বিশেষ খ্যাতি। তিনি কাজী নজরুল ইসলামের চিরসুহৃদ। তিনি নজরুলের স্বরলিপির সংকলন সুরমুকুর এর স্বরলিপিকার। নলিনীকান্ত সাংবাদিকতার হাতেখড়ি শরৎচন্দ্র পণ্ডিত বা দাদাঠাকুরের 'জঙ্গীপুর সংবাদ' পত্রিকায়। শরৎচন্দ্রের পণ্ডিতের জীবিত থাকার অবস্থাতেই তার লেখা 'দাদাঠাকুর'বইটি চলচ্চিত্রায়িত হয়েছিল। ছবি বিশ্বাস দাদাঠাকুরের ভূমিকায় অভিনয় করেন। Dt -28.09.2024. Vol -1012. Saturday. The blogger post in literary e magazine.



নলিনীকান্ত সরকার
( ২৮ শে সেপ্টেম্বর ১৮৮৯  -  ১৮ ই মে ১৯৮৪)  




একাধারে সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি, গায়ক,সাহিত্যবোদ্ধা ও ছন্দশ্রী ছিলেন। তবে হাসির গানের রচয়িতা ও গায়ক হিসাবেই তার বিশেষ খ্যাতি। তিনি কাজী নজরুল ইসলামের চিরসুহৃদ। তিনি নজরুলের স্বরলিপির সংকলন সুরমুকুর এর স্বরলিপিকার। নলিনীকান্ত সাংবাদিকতার হাতেখড়ি শরৎচন্দ্র পণ্ডিত বা দাদাঠাকুরের 'জঙ্গীপুর সংবাদ' পত্রিকায়। শরৎচন্দ্রের পণ্ডিতের জীবিত থাকার অবস্থাতেই তার লেখা 'দাদাঠাকুর'বইটি চলচ্চিত্রায়িত হয়েছিল। ছবি বিশ্বাস দাদাঠাকুরের ভূমিকায় অভিনয় করেন.


পিতা ছিলেন মালদহ জেলার কালিয়াচকের নিকুঞ্জবিহারী সরকার। নলিনীকান্তর শৈশব ও কৈশোর কাটে পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার নিমতিতা এলাকার জগতাই গ্রামে। বিপ্লবী দলের সাথে জড়িত ছিলেন। বরদাচরণ মজুমদারের অধীনে তিনি কিছুদিন লালগোলা রাজাদের গ্রন্থাগারে কাজ করেন।

তিনি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বেশ কিছু গান বেতার ও গ্রামোফোনে গেয়েছেন। নজরুলের প্রথম স্বরলিপির সংকলন সুরমুকুর এর স্বরলিপি তার করা। এতে নজরুলের ২৭টি গানের স্বরলিপি রয়েছে। বইটি ডি এম লাইব্রেরি থেকে ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত হয়। মূলত তারই আগ্রহে নজরুল রেকর্ডিংয়ের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন. এছাড়া কৌতুক অভিনেতা শরৎ পণ্ডিতের জীবদ্দশায় তার জীবনীগ্রন্থ দাদাঠাকুর রচনা করেন নলিনীকান্ত সরকার।

ভক্ত ও বৈষ্ণব পরিবারের সন্তান তিনি শৈশব থেকেই আধ্যাত্মিকতার দিকে আকৃষ্ট ছিলেন। পরবর্তীকালে বহু সাধু মহাপুরুষের সান্নিধ্যে আসেন। গৃহীযোগী বরদাচরণ মজুমদার, যোগীর কালীপদ গুহরায় প্রভৃতির প্রিয়পাত্র ছিলেন। ১৯২১ খ্রি. পণ্ডিচেরিতে তিনি প্রথম শ্রীঅরবিন্দকে দর্শন করে যোগ সাধনা গ্রহণের সুযোগ পান। পরে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে সপরিবারে পণ্ডিচেরি আশ্রমবাসী হন। সেখানেই ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ই মে প্রয়াত হন।

গ্রন্থাবলি : 


সুরমুকুর (১৯৩৪)
শ্রদ্ধাস্পদেষু
দাদাঠাকুর[৪]
কান্তপদলিপি
হাসির অন্তরালে
আসা যাওয়ার মাঝখানে.


তার কৈশোরের প্রথম রচনা একটি আধ্যাত্মিক কবিতা ‘শ্ৰীশ্ৰী বিষ্ণুপ্রিয়া’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় প্রকাশিত (আষাঢ় ১৩২৬ বঙ্গাব্দ) ‘নিবিড়ানন্দ নকলনবীশ’ ছদ্মনামে তার ‘সাহিত্য সংস্কার’ রচনাটি যথেষ্ট সমাদার লাভ করে। তিনি ১৯২০–২৫ খ্রী. বিপ্লবী বারীন্দ্ৰকুমার ঘোষের বিজলী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৩০/৩১–৪৪ খ্রী. ‘বেতার জগৎ’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। বিচিত্ৰা’, ‘ভারতী’ ও ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকা-গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যুগান্তর পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। যুগান্তরের ‘রোজ নামতা’ চালু হলে পণ্ডিচেরি থেকে ছড়া লিখে পাঠান। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে এক সাহিত্য বাসরে তাকে প্রথম ‘হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হয়। তার প্রথম বই মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত ‘কাঞ্চনতলার কাপ’ ১৯১৬ খ্রী. প্রকাশিত হয়-এটি একটি ফুটবল কাপ প্রতিযোগিতার বিবরণ। তিনি যে একজন সত্যিকারের শক্তিশালী সাহিত্যিক ছিলেন সেই পরিচয় চাপা পড়েছিল তার সাঙ্গীতিক আর সাংবাদিক পরিচয়ের তলায়। সুদীর্ঘকাল তিনি তৎকালীন বাংলাদেশের সকল বয়সের সাহিত্যিকদের অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ এবং ভারতবর্ষ সম্পাদক জলধর সেনের তিনি ছিলেন বিশেষ স্নেহভাজন। নজরুল ছিলেন তার ছোট ভাই-এর মত। বিপদে আপদে নজরুল ইসলাম তার উপর একান্ত নির্ভর করতেন। তার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি শরৎচন্দ্ৰ পণ্ডিত বা দাদাঠাকুরের ‘জঙ্গীপুর সংবাদ’ পত্রিকায়। শরৎপণ্ডিতের জীবিত থাকা অবস্থাতেই নলিনীকান্তর লেখা ‘দাদাঠাকুর’ বইখানির চিত্ররূপ প্ৰকাশিত হয়ে চলচ্চিত্র জগতেও সাড়া জাগিয়েছিল। তাঁর অন্য দুখানি বই ‘শ্রদ্ধাস্পদেষু’ এবং ‘হাসির অন্তরালে’। সারা জীবন বহু বিখ্যাত সাহিত্যিক ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তির যে স্নেহ পেয়েছিলেন, তার অতি অন্তরঙ্গ চিত্র ‘শ্রদ্ধাস্পদেষু’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে। আর ‘হাসির অন্তরালে’ যে অশ্রুর সমাবেশ, তার লেখনীর যাদুস্পর্শে তা প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। তার অসমাপ্ত রচনা ‘আসা যাওয়ার মাঝখানে’ (প্ৰথম খণ্ড) গ্ৰন্থাকারে প্রকাশিত। দ্বিতীয় খণ্ড ধারাবাহিকভাবে ‘কথা সাহিত্য’ মাসিক পত্রিকায় প্ৰকাশিত হচ্ছিল। এটিকে তার দীর্ঘজীবনের প্রত্যক্ষদশীর বর্ণনা বলা চলে। তাঁর ‘সুরমুকুর’ ও ‘কান্তপদলিপি’ যথাক্রমে নজরুল ও রজনীকান্তের গানের স্বরলিপি। বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। তার গাওয়া ‘মরি হায় রে কলকাতা কেবল ভুলে ভরা’ গানটি এককালে খুব জনপ্রিয় ছিল। হাসির গান গেয়ে ‘রসরাজ’ আখ্যায় ভূষিত হলেও অর্থের অভাবে অনেক সময়ই যথেষ্ট কষ্ট পেয়েছেন। এক সময়ে ধ্রুপদ, খেয়াল, টপ্পা, কীর্তন, বাউল ছাড়া রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত, নীলকণ্ঠ, গিরিশচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত প্রমুখের গানও গাইতেন। গ্রামোফোন কোম্পানীর সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটে ১৯১৩ খ্রী. যখন তিনি বন্যার্তদের জন্য কাপড় মেলে দলবল নিয়ে স্বরচিত গান গেয়ে চাঁদা তুলে বেড়াচ্ছিলেন। সে সময়ে ৬খানা রেকর্ড হয়েছিল। ১৯২৭ খ্ৰী. কলিকাতা বেতারকেন্দ্ৰ প্ৰতিষ্ঠার শুরু থেকেই তিনি সেখানে প্ৰথমে গায়ক হিসাবে যোগ দেন। ভক্ত ও বৈষ্ণব পরিবারের সন্তান তিনি শৈশব থেকেই আধ্যাত্মিকতার দিকে আকৃষ্ট ছিলেন।











======[[[[[[[[[{{{{[{{[{[[{{[[{===============



No comments: