Thursday, 26 September 2024

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। সতীনাথ ভাদুড়ী । একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় সমকালীন রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত জাগরী উপন্যাস তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়। এই গ্রন্থটির জন্য ১৯৫০ সালে তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। Dt -27.09.2024. Vol -1012. Friday. The blogger post in literary e magazine.




সতীনাথ ভাদুড়ী
 
(২৭ সেপ্টেম্বর ১৯০৬ – ৩০ মার্চ ১৯৬৫)


  একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় সমকালীন রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত জাগরী উপন্যাস তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়। এই গ্রন্থটির জন্য ১৯৫০ সালে তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন.

১৯০৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর (১১ আশ্বিন, ১৩১৩ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার) বিজয়াদশমীর দিন সন্ধ্যায় তদনীন্তন বাংলা প্রদেশের পূর্ণিয়ার (অধুনা ভারতের বিহার রাজ্যের অন্তর্গত) ভট্টাবাজারে সতীনাথ ভাদুড়ী জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ইন্দুভূষণ ভাদুড়ী (১৮৬৯-১৯৪৪) ও রাজবালা দেবীর ষষ্ঠ সন্তান। সতীনাথেরা ছিলেন তিন ভাই ও পাঁচ বোন; ভাইদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। সতীনাথ তাঁর জ্যেষ্ঠভ্রাতা ভূতনাথ ভাদুড়ীর বিশেষ স্নেহভাজন ছিলেন।

সতীনাথের পিতা ইন্দুভূষণ ভাদুড়ীর আদি নিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার অন্তর্গত কৃষ্ণনগরে। এঁদের পূর্বপুরুষ সুধাময় খাঁ লাহিড়ী ছিলেন কৃষ্ণনগরের সম্পন্ন শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব। ইন্দুভূষণের মাতা মুক্তাকেশী দেবী ছিলেন রামতনু লাহিড়ীর ভ্রাতুষ্পুত্রী এবং একজন সংস্কৃতি-মনস্কা মহিলা।ইন্দুভূষণ ১৮৯০ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর কিছুকাল দুই ভাই চন্দ্রভূষণ ও জ্যোতিভূষণের সঙ্গে একযোগে অধ্যাপনাও করেন। পরে আইন পাস করে আত্মীয় ভুবনমোহন সান্যালের পরামর্শক্রমে ১৮৯৬ সালে পূর্ণিয়া চলে আসেন এবং সেখানকার আদালতে ওকালতি শুরু করেন। নিজের চেষ্টায় অল্পদিনের মধ্যেই সে ব্যবসায়ে সাফল্যও অর্জন করেন। ১৯৪০ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ণিয়া আদালতে ওকালতি করেছিলেন। এর মধ্যে ১৯৩২ থেকে ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুত্র সতীনাথও তাঁকে ওকালতি ব্যবসায়ে সহায়তা করতেন। বিশিষ্ট হিন্দি কথাসাহিত্যিক ফণীশ্বরনাথ রেণু ছিলেন সতীনাথের বাল্যবন্ধু। সতীনাথ ও ফণীশ্বরনাথের পিতারা ছিলেন কর্মসূত্রে একে অপরের বিশেষ পরিচিত। সতীনাথের মা রাজবালা দেবী ছিলেন হরিমোহন লাহিড়ীর কন্যা। বাবার চেয়ে মায়ের সঙ্গেই সতীনাথ ও তাঁর ভাইবোনেদের বেশি ঘনিষ্ঠতা ছিল। শৈশবে সতীনাথ বেশি অসুখবিসুখে ভুগেছিলেন। দু’বার নিউমোনিয়া ও প্রায়শই জ্বরে আক্রান্ত হতেন বলে দুর্বল সন্তানের প্রতি রাজবালা দেবীর মনোযোগও ছিল অধিক।

সতীনাথের বিদ্যালয় শিক্ষার সূত্রপাত পূর্ণিয়া জেলা স্কুলে। ১৯২৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি পাটনার সায়েন্স কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন এবং ১৯২৮ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক হন। এই বছরই তাঁর মা রাজবালা দেবীর মৃত্যু ঘটে। এরপর ১৯৩০ সালে সতীনাথ অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং পরের বছর পাটনা ল কলেজ থেকে বিএল পাস করেন।


১৯৩২ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত সতীনাথ বাবার সহকর্মী রূপে পূর্ণিয়া আদালতে ওকালতি করেন। এই সময় তিনি বলিপ্রথা রদ ও মদের দোকানে পিকেটিং আন্দোলনের মতো বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজেও জড়িয়ে পড়েছিলেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বই সংগ্রহ করে পূর্ণিয়া গ্রন্থাগার স্থাপনেও অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন সতীনাথ। পরবর্তীকালে এই গ্রন্থাগারটির নাম সতীনাথের পিতার নামানুসারে রাখা হয় ইন্দুভূষণ সাধারণ গ্রন্থাগার। প্রায় একক উদ্যোগেই তিনি পূর্ণিয়ায় বাংলা পত্রিকা ক্লাব গঠন করেন এবং সাহিত্য পাঠ, স্মরণশক্তি প্রতিযোগিতা, সাহিত্যিকদের আড্ডা প্রভৃতির প্রচলন ঘটান। এই সূত্রেই তিনি বিশিষ্ট সাহিত্যিক কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সান্নিধ্য লাভ করেন। ইতিমধ্যে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সক্রিয়ভাবে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন। এই সময় পুলিশের চোখ এড়িয়ে গভীর রাতে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দিতেন। ১৯৪০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথমবারের জন্য কারারুদ্ধ হন সতীনাথ। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় দ্বিতীয়বার কারাবাসকালে তিনি জেল ভেঙে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাই তাঁকে ভাগলপুরের সেন্ট্রাল জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। এই সময়টিই ছিল তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস জাগরী রচনার প্রস্তুতিকাল। ১৯৪৪ সালে তৃতীয় কারাবাসকালে তাঁর সঙ্গী ছিলেন ফণীশ্বরনাথ রেণু, অনাথবন্ধু বসু, ফণীগোপাল সেন, জয়প্রকাশ নারায়ণ, শ্রীকৃষ্ণ সিংহ, অনুগ্রহ নারায়ণ সিংহ প্রমুখেরা। এরপর ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত হয় জাগরী।

সতীনাথ পূর্ণিয়ায় কিশোর ও যুবকদের জন্য ব্যায়ামাগার গঠন করেন এবং শনিবারের সাহিত্যবাসর পরিচালনা করতে থাকেন। ১৯৪৯ সালে তিনি প্যারিসে যান; কিন্তু ছাড়পত্রের অভাবে স্পেন ও সোভিয়েত রাশিয়ায় যেতে পারেননি। বিদেশে থাকাকালীনই ১৯৫০ সালে তিনি জাগরী উপন্যাসের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপ্তির সংবাদ পান। তিনি এবং নীহাররঞ্জন রায় ছিলেন এই পুরস্কারের প্রথম প্রাপক। সেই বছরই দেশে ফিরে আসেন সতীনাথ। তাঁর সত্যি ভ্রমণকাহিনী বইটি এই সময় রচিত হয়। বিশিষ্ট হিন্দি সাহিত্যিক ফণীশ্বরনাথ রেণু তাঁর জীবনীমূলক স্মৃতিকথা ভাদুড়ীজী রচনা করেন, যা হিন্দি সাহিত্যে একটি বিশিষ্ট গ্রন্থ।
১৯৬৫ সালের ৩০ মার্চ মাত্র আটান্ন বছর বয়সে পূর্ণিয়াতেই সতীনাথ ভাদুড়ীর মৃত্যু ঘটে।

সতীনাথ ভাদুড়ী প্রসঙ্গে অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
…সাম্প্রতিক বাংলা উপন্যাসের আলোচনা সতীনাথ ভাদুড়ীকে বাদ দিয়ে অসম্পূর্ণ থেকে যায়, সে বিষয়ে আমাদের কোনো সংশয় থাকা উচিত নয়। সতীনাথ ভাদুড়ী আসলে লেখকদের লেখক। তাঁর লেখা পাঠক সাধারণ না পড়লেও বাঙালি কথাসাহিত্যিক মাত্রেরই পড়া উচিত। সতীনাথ ভাদুড়ীর গল্প-উপন্যাস যতই পড়ি ততই এই ধারণা আমার মনে বদ্ধমূল হয় যে, বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা উপন্যাসে সতীনাথ ভাদুড়ী একটি অপরিহার্য নাম।

সতীনাথ ভাদুড়ী বহুপ্রসূ লেখক ছিলেন না। তাঁর উপন্যাস, গল্প-সংকলন ও অন্যান্য রচনা সংকলনের সংখ্যা মাত্র চোদ্দো। নিছক জনপ্রিয় কথাসাহিত্য রচনাও তাঁর লক্ষ্য ছিল না। অরুণকুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, "সতীনাথ ভাদুড়ীর জন্য বস্তুত পাঠকসমাজ প্রস্তুত ছিলেন না, ‘জাগরী’ উপন্যাস কয়েকজন প্রখ্যাত প্রকাশকের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরে প্রায়-অপরিচিত প্রকাশকের দ্বারা প্রকাশিত হয়। প্রথম রবীন্দ্র পুরস্কারে (১৯৫০) সম্মানিত হওয়ার পরেই পাঠকসমাজের দৃষ্টি পড়ে ‘জাগরী’র লেখকের প্রতি এবং আজ পর্যন্ত অনেকেই ‘জাগরী’ ছাড়া সতীনাথ ভাদুড়ীর অন্যান্য রচনার বিশেষ খোঁজ রাখেন না।" এই প্রসঙ্গে অরুণকুমার দেখিয়েছেন যে, জাগরী (একাদশ মুদ্রণ) ও সত্যি ভ্রমণকাহিনী (তৃতীয় মুদ্রণ) ছাড়া সতীনাথের কোনও বইই দ্বিতীয় মুদ্রণের মুখ দেখেনি। নিজের লেখা নিয়েও আত্মতুষ্ট হতে পারতেন না তিনি। লেখা নিয়ে নিরন্তর পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যান।


উপন্যাস 

জাগরী
মূল নিবন্ধ: জাগরী
জাগরী (১৯৪৫) সতীনাথ ভাদুড়ীর প্রথম উপন্যাস। গঠনকৌশল, চরিত্র-সৃষ্টি ও বিষয়বস্তুর সকল দিক থেকেই এটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। উপন্যাসটির উপজীব্য বিষয় হল রাজনীতির আবর্তে এক পরিবারের বাবা, মা ও দুই পুত্রের কথা। এক পুত্রের সাক্ষ্যের ফলে আরেক পুত্রের মৃত্যুদণ্ডের আগের রাতের ঘটনা চারটি চরিত্রের স্বগতোক্তির মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে।

ঢোঁড়াই চরিত মানস
মূল নিবন্ধ: ঢোঁড়াই চরিত মানস
দুই খণ্ডে প্রকাশিত ঢোঁড়াই চরিত মানস (১৯৪৯-৫১) উপন্যাসের পটভূমি বিহারের জিরনিয়া শহরের অদূরে তাৎমাটুলি। জাতে তাঁতি এই তাৎমাদের বৃত্তি ঘরামি ও কুয়োর বালি ছাঁকা। পাশের ধাঙ্গড়টুলিতে বড়ো হওয়া পরিত্যক্ত অনাথ বালক ঢোঁড়াই এই উপন্যাসের নায়ক। স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ পর্বের প্রেক্ষাপটে রচিত এই উপন্যাসে লেখক নায়ক ঢোঁড়াইকে করে তুলেছেন রামচন্দ্রের আধুনিক সংস্করণ। রাজনৈতিক চেতনা সমাজের নিচুতলায় প্রবেশ করে কীভাবে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয় এবং ঢোঁড়াইকে "রামায়ণজী"-তে পরিণত করে, তা-ই এই উপন্যাসের উপজীব্য। শিশিরকুমার দাশের মতে, "এই কাহিনীতে অন্তর্লীন হয়ে আছে তুলসীদাসের রামচরিতমানস। রাজনীতি ও সমাজ পরিবর্তন ও সমাজের অন্ত্যজ মানুষের বিশ্বস্ত রূপায়ণ এবং রামচরিতমানসের সঙ্গে আধুনিক কাহিনীর অন্তর্বয়ন এই তিনদিক থেকে এই আখ্যান বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলির অন্যতম।"
উক্ত তিন চরিত্রের পারস্পরিক সম্পর্কের বিশ্লেষণে।  সংকট উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিশ্বাসজীর উপর সতীনাথ ভাদুড়ীর নিজের চরিত্রের ছায়া পড়েছে। উপন্যাসটির উপজীব্য একদা রাজনৈতিক কর্মী বিশ্বাসজীর আত্মানুসন্ধান। অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে এই আত্মানুসন্ধানের মধ্যে পাশ্চাত্য উপন্যাসের নায়কের আত্মানুসন্ধানের মিল পাওয়া যায়। দিগভ্রান্ত উপন্যাসটি আধুনিক মানুষের বিচ্ছিন্নতাবোধ ও নিঃসঙ্গতা এবং বিষাদ ও নৈরাশ্য থেকে সঙ্গলাভ ও আশায় উত্তরণের কাহিনি। ডাক্তার সুবোধ মুখোপাধ্যায়, তাঁর স্ত্রী অতসীবালা ও দুই ছেলেমেয়ে মণি ও সুশীলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই উপন্যাসে আপাতদৃষ্টিতে আখ্যানভাগ নির্মাণে লেখকের মনোযোগ ধরা পড়েছে। আধুনিক সমাজে মানুষ পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে কতটা দিগভ্রান্ত তারই অনুপূঙ্খ বিশ্লেষণ পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
ছোটোগল্প-সংকলন
গণনায়ক (১৯৪৮): বেঙ্গল পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়। এই সংকলনের অন্তর্গত গল্পগুলি হল: "গণনায়ক", "বন্যা", "আন্টাবাংলা", "পঙ্কতিলক" ও "ভূত"।
অপরিচিতা (সেপ্টেম্বর, ১৯৫৪): বেঙ্গল পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়। এই সংকলনের অন্তর্গত গল্পগুলি হল: "অপরিচিতা", "পরিচিতা", "ফেরবার পথ", "রথের তলে", "ষড়যন্ত্র", "মামলার রায়", "অত্যাবশ্যক" ও "ঈর্ষা"।
চকাচকী (অগস্ট, ১৯৫৬): প্রকাশভবন থেকে প্রকাশিত হয়। এই সংকলনের অন্তর্গত গল্পগুলি হল: "চকাচকী", "বৈয়াকরণ", "ডাকাতের মা", "বিবেকের গণ্ডী", "মুষ্টিযোগ", "রাজকবি", "মুনাফা ঠাকরুণ" ও "তবে কি"।
পত্রলেখার বাবা (মার্চ, ১৯৫৯): প্রকাশভবন থেকে প্রকাশিত হয়। এই সংকলনের অন্তর্গত গল্পগুলি হল: "পত্রলেখার বাবা", "কম্যান্ডার ইন চিফ", "বাহাত্তুরে", "কণ্ঠকণ্ডুত্তি", "সাঁঝের শীতল", "একটি কিংবদন্তীর জন্ম", "পূতিগন্ধ", "অভিজ্ঞতা" ও "ধস"।
জলভ্রমি (এপ্রিল, ১৯৬২): বাকসাহিত্য থেকে প্রকাশিত হয়। এই সংকলনের অন্তর্গত গল্পগুলি হল: "মহিলা ইনচার্জ", "কৃষ্ণকলি", "জলভ্রমি", "স্বর্গের স্বাদ", "চরণদাস এম.এল.এ.", "দাম্পত্য সীমান্তে", "দুই অপরাধী", "পদাঙ্ক" ও "হিসাবনিকাশ"।
আলোকদৃষ্টি (মার্চ, ১৯৬৪): বাকসাহিত্য থেকে প্রকাশিত হয়। এই সংকলনের অন্তর্গত গল্পগুলি হল: "আলোকদৃষ্টি", "জাদুগণ্ডি", "ব্যর্থতপস্যা", "পরকীয়া সন-ইন-ল", "তিলোত্তমা সংস্কৃতি সংঘ", "জোড়কলম", "বায়োকেমি", "শেষ সংখ্যান", "গোঁজ" ও "সরমা"।
জার্নাল
সত্যি ভ্রমণকাহিনী (সেপ্টেম্বর, ১৯৫১): বেঙ্গল পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত।
অনূদিত গ্রন্থ
জাগরী (হিন্দি অনুবাদ: নারায়ণপ্রসাদ বর্মা; জুলাই, ১৯৪৮): বিহার সাহিত্য ভবন থেকে প্রকাশিত। বইটির ভূমিকা লিখে দেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।
দ্য ভিজিল, (ইংরেজি অনুবাদ: লীলা রায়; মার্চ, ১৯৬৫): জাগরী উপন্যাসের অনুবাদ। ইউনেস্কোর উদ্যোগে এশিয়া পাবলিশিং হাউস থেকে প্রকাশিত হয়।
ঢোঁড়াই চরিত মানস (হিন্দি অনুবাদ: গঙ্গাধর মধুকর; ১৯৭৪)

রচনা-সংকলন
সতীনাথ বিচিত্রা (কার্তিক, ১৩৭২): প্রকাশভবন থেকে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থের অন্তর্গত রচনাগুলি হল: গল্প - "দিগভ্রান্ত", "মা আম্রফলেষু", "বমিকপালিয়া", "তলানির স্বাদ", "অজাগড়", "রোগী", "ব্লাডপ্রেশার", "একচক্ষু", "একঘণ্টার রাজা", "করদাতা সংঘ জিন্দাবাদ", "রহস্য", "জামাইবাবু", "ওয়ারকোয়ালিটি" ও "আন্তর্জাতিক"; কবিতা - "গোপাল জাগো জাগো", "দিনপঞ্জি", "মোচের লড়াই" ও "মোহনপুরের ছবি"; "মুনাফা ঠাকরুণ" গল্পের নাট্যরূপ "পারবে না ওদের সঙ্গে"; রম্যরচনা ও প্রবন্ধ - "ঢোঁড়াই", "দুইটি খেলা", "সসংকোচ", "আমি কালিদাস", "অনুসন্ধানী", "প্যারিস ও লন্ডন", "ম্যাকরোনির স্মৃতি", "পড়ুয়ার নোট থেকে", "মধুসূচন ও লা ফঁতেন" ও "ইংলণ্ডে গান্ধীজি"।

অন্য কিছুর খোঁজেই শুরু হয়ে গিয়েছে ‘অন্য’ জীবনের প্রস্তুতি পর্ব। তাই দিনভর আদালতের কাজ সেরে রাতে লণ্ঠন হাতে সতীনাথ ঘুরে বেড়ান বই সংগ্রহের জন্য। আর সকলের সঙ্গে মিশে তৈরি করলেন পূর্ণিয়া পাবলিক লাইব্রেরি। পরে যার নাম ইন্দুভূষণ লাইব্রেরি। পূর্ণিয়ায় মহিলা সমিতি সংগঠন ও মন্দির তৈরি, পশুবলির বিরুদ্ধে জনমত সংগঠন— সব ভূমিকাতেই দেখা যেতে লাগল সতীনাথকে।

সবই হচ্ছে। কিন্তু ওই একলাপনার অভ্যেস যেন গা ছাড়া হয় না! আর তাই রাতে কাজ সেরে ব্যঙ্গ করেন নিজেকেই, ‘বাড়ি এসে নিজেরই হাসি আসে এসব তুচ্ছ ব্যাপারে মাথা ঘামানোর জন্য’।

আসলে সময়টাই ‘মাথা ঘামানোর’। মহাত্মা গাঁধী যে তত দিনে প্রান্তিক মানুষের ‘গানহী বাওয়া’ হয়ে উঠেছেন। ডাক দিয়েছেন অধীনতা থেকে মুক্তির।

গতানুগতিক জীবন আর পোষাল না। তেত্রিশ বছর বয়সে বাড়ি ছাড়লেন সতীনাথ। যোগ দিলেন পূর্ণিয়া থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরে কংগ্রেস নেতা বিদ্যানাথ চৌধুরীর টিকাপট্টি আশ্রমে। গায়ে উঠল খাদির ধুতি, চাদর, পাঞ্জাবি। শীতে গলাবন্ধ কোট, পায়ে চপ্পল। স্বাধীনতার খোঁজে সতীনাথ ছুটলেন গ্রাম থেকে গ্রামে। ‘অখ্যাত, অজ্ঞাত, অবজ্ঞাত গ্রামের লোক’দের গানহী বাওয়ার কথা বোঝাতে এবং ওই ‘বন্ধু’দের বুঝতে।

বাবা ইন্দুভূষণ সবই হয়তো দেখছিলেন, দূরে দাঁড়িয়েই। কিন্তু আর পারলেন না। প্রিয় সতু যাতে বাড়ি ফেরে, তার জন্য ছেলে ভূতনাথকে কলকাতায় টেলিগ্রাম করলেন বাবা।

সতুর দুই বন্ধু দ্বারিক সুর ও কমলদেও নারায়ণ সিংহের সঙ্গে দাদা ভূতনাথ গেলেন ভাইকে ফেরত আনতে। কিন্তু ভূতনাথের নিজেরই কথায়, ‘সে আমাকে ফিরিয়ে দিল’। ভূতনাথ দেখলেন, ভাইয়ের ফেরার পথ আপাতত বন্ধ। বিস্মিত হলেও স্বাগত জানালেন দাদামশাই। বুঝলেন, ‘সাধারণে যা করে তাতে মন সায় দেয় না’ যে ও ছেলের! মন সায় দেয় না আদর্শকে ফেলে আসতে। আর তাই আশ্রমিক পর্বে বাড়ি এলে সঙ্গী হয় দাঁতোয়ান। টুথপেস্ট-ব্রাশ... ও সব বিলিতি অভ্যেস যে! পাতে পড়ে দই, কাঁচকলা সিদ্ধ, আলু সিদ্ধ। আর বিলাসিতা এক চামচ মাখন!





















============∆∆∆∆∆∆∆∆∆==========








No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...