( ৯ অক্টোবর, ১৯২২ - ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)
শান্তিনিকেতনের চীনা ভবনের অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত চিনাতত্ববিদ এবং কলকাতার ঠাকুর পরিবারের অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পৌত্র.
১৯২২ খ্রিস্টাব্দে র ৯ ই অক্টোবর কলকাতার ঠাকুর পরিবারের জন্ম অমিতেন্দ্রনাথের। পিতা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র অলোকেন্দ্রনাথ এবং মাতা দেবেন্দ্রনাথ- কন্যা সৌদামিনীর দৌহিত্রী পারুলদেবী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে জাপানিরা কলকাতায় (১৯৪২-৪৩) বোমা ফেললে নিরাপত্তার কারণে চলে আসেন শান্তিনিকেতনে। ততদিনে অবশ্য তিনি বি.কম পাশ করেছেন। শান্তিনিকেতনের চীনা ভবনে শুরু করলেন পড়াশোনা। শান্তিনিকেতনে পরিচিত হয়েছিলেন "বীরুদা" নামে। চীনা ভবনের স্নাতক স্তরের অধ্যয়ন শেষে, চিনা ভাষা ও সাহিত্যে উচ্চ শিক্ষা লাভে চীন যাত্রা করেন। চিনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এক বৎসর চীনা ভবনে অধ্যাপনার পর ভারত-চিন দ্বন্দ্বের সূত্রে চলে যান দেরাদুন ও পুণের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে চীনা ভাষা শিক্ষা দিতে। এখানে জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী তার ছাত্র ছিলেন। পরবর্তীতে পাঁচ বছর চীনা ভবনে কাটানোর পর ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে এরপর এক বছরের জন্য চলে যান আমেরিকায় । এক বছর পর ফিরে আসেন চীনা ভবনে। পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে রচিত প্রাচীনতম চিনা সাহিত্য, লাওৎসে-র লেখা ‘তাও-তে-চিং’ নিয়ে তার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে আবারও চলে যান আমেরিকায়। মিশিগানের ওকল্যাণ্ড বিশ্ববিদ্যালে দীর্ঘ তেইশ বছরে অধ্যাপনা শেষে ফিরে আসেন শান্তিনিকেতনে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে। অধ্যাপনা করে অবসর গ্রহণ করেন এখানেই। অবসর জীবনযাপনে কলকাতার সল্টলেকে নিজের বাসভবনে চলে আসেন পাকাপাকি ভাবে। শান্তিনিকেতনের তপোবন চরিত্রের অবলুপ্তি ও ধীরে ধীরে রাবীন্দ্রিক পরিবেশ হারিয়ে যাওয়া তাঁকে ব্যথিত করত। শান্তিনিকেতনের সেকাল ও একাল নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা তিনি 'শান্তিনিকেতনের স্মৃতি" প্রবন্ধ ব্যক্ত করেছেন। চিনা ভাষার চর্চা ছাড়া গল্ফ খেলতে ভালবাসতেন। তার আত্মজীবনী "অমিত কথা" মিতেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়ের অনুলিখন প্রকাশিত হয়েছে।
বার্ধক্যজনিত রোগে অমিতেন্দ্রনাথ ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ৭ ই ফেব্রুয়ারি ৯৯ বৎসর বয়সে কলকাতায় পরলোক গমন করেন।
চলে গেলেন অমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর। গোটা শান্তিনিকেতন জুড়ে যেন স্বজনহারার বেদনা। শান্তিনিকেতনের একান্ত আপন ‘বীরুদা’, বিশ্বভারতীর বিশিষ্ট প্রাক্তনী অমিতেন্দ্রনাথ ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পৌত্র। চিনা ভাষা চর্চার দিকপাল অমিতেন্দ্রনাথ বার্ধক্যজনিত কারণেই রবিবার কলকাতার সল্টলেকে নিজ বাসভবনে প্রয়াত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৯ বছর। এমনিতে সুস্থ সবল থাকলেও গত কয়েক মাস তিনি নিজে নিজে হাঁটতে পারছিলেন না বলে জানান তাঁর ভাইপো মিতেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়।
চীনা ভবনে’ তাঁর শিক্ষার শুরুর কথা বলতে গিয়ে মিতেন্দ্রবাবু বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন কলকাতায় জাপানিরা বোমা ফেললে, নিরাপত্তার খাতিরে শান্তিনিকেতনে চলে আসে বীরুকাকার পরিবার। ততদিনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বি কম পাশ করে গেছেন। একদিন মেলার মাঠে তিনি ক্রিকেট খেলতে গেলে মাঠের বাকিরা জানায় এখানকার পড়ুয়া না হলে তিনি খেলতে পারবেন না। এরপরই নব নির্মিত চীনা ভবনে পড়ুয়া হিসেবে তার অন্তর্ভুক্তি।”
অমিত কথা’ নামে তাঁর একটি আত্মজীবনীও প্রকাশিত হয়েছে, যার অনুলিখন করেছেন মিতেন্দ্রবাবু। ছেলেবেলা থেকে শুরু করে শান্তিনিকেতন এবং আমেরিকার বহু স্মৃতি লিপিবদ্ধ হয়েছে এই গ্রন্থে। এ ছাড়াও ‘এক সূত্রের সন্ধানে’ গ্রন্থে ‘শান্তিনিকেতনের স্মৃতি’ প্রবন্ধে অমিতেন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের সেকাল ও একাল নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন। শান্তিনিকেতন জুড়ে তপোবনের চরিত্রের অবলুপ্তি এবং রাবীন্দ্রিক আদর্শের অভাব যে তাঁকে ব্যথিত করত, তা এই প্রবন্ধে স্পষ্ট প্রতিভাত। চিনা ভাষা চর্চার পাশাপাশি গল্ফ খেলা নিয়েও তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল। আমেরিকা থেকে ফিরে এসেও তিনি নিয়মিত কলকাতায় গল্ফ খেলতেন। শান্তিনিকেতনের সকলেই জানাচ্ছেন, অমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণে শান্তিনিকেতন চিনা ভাষার এক প্রকৃত পণ্ডিত তথা বিশ্বভারতীর এক আপনজনকে হারাল।
=========∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆==========
No comments:
Post a Comment