১৫ অক্টোবর, ১৯৪৮ ― ৩১ অক্টোবর, ২০০২
রচনাবলী
গণিত ও ধাঁধা
'অঙ্ক আতঙ্ক নয়' (১৯৭৬)
'মজার খেলা অঙ্ক' (১৯৭৮)
'নিয়ম ভেঙ্গে অঙ্ক' (১৯৭৮)
'যুক্তি বুদ্ধি আই কিউ'(১৯৭৯)
'অঙ্কের ম্যাজিক খেলার লজিক'(১৯৮৩)
'লুইস ক্যারলের ধাঁধা, স্যাম লয়েডের অঙ্কের ধাঁধা' (১৯৮৩)
'যত অঙ্ক তত মজা' (২০০২)
সায়েন্স ফিকশন -
'গ্যাবনে বিস্ফোরণ' (১৯৮০)
'অসম্ভবের গল্প' (১৯৮৩)
'ই টি রহস্য' (১৯৮৯)
'চাঁদের মাঠে ওয়ান ডে' (১৯৯২)
'তৃতীয় নয়ন' (১৯৮৪)
ছোটগল্প সংগ্রহ-
'কলকাতা নীলকণ্ঠ' (১৯৮১)
উপন্যাস -
'গোল রহস্য' (১৯৮০)
'ঝন্টু মামার কাণ্ড'(১৯৮৪)
'অনুসন্ধানী ঝন্টুমামা' (১৯৮৬)
'কম্পিউটার চৌর্যবৃত্তি' (১৯৮৬)
'ভেরেশাগিনের ছবি' (১৯৮৮)
'লাভলক প্লেসে লাঠালাঠি' (২০০২)
'মহাকাশে বাঁধ'
কারিগরি বিদ্যা-
'কারিগরি কল্পনা ও বাঙালি উদ্যোগ' (১৯৮৯)
'কলের শহর কলকাতা' (১৯৯১)
ফোটোগ্রাফি -
' ছবি তোলা - বাঙালির ফোটোগ্রাফি চর্চা' (১৯৮৯)
সঙ্গীত -
'রেকর্ডে রবীন্দ্র সংগীত' (১৯৮৯)
গণবিজ্ঞান -
'সূর্য থেকে শক্তি'
'প্রতিবেশী সূর্যের রক্তাক্ত দিনগুলি'
'কু ঝিক ঝিক রেলগাড়ি' (১৯৭৭) - রমা ভট্টাচার্যের সঙ্গে
'ছবিতে মহাকাশ অভিযান' (১৯৯১) - সমীর সাহার সঙ্গে
'Strengthen your IQ
ক্রিকেট -
'ক্রিকেট, মজার ক্রিকেট' ( ১৯৯৯) - প্রসাদ রায়ের সঙ্গে
'ক্রিকেট এল বাংলায়' (২০০২) প্রবন্ধ সংকলন
জীবনী -
'ছবিতে সুকুমার' (১৯৯০) - সন্দীপ রায়ে সাথে
'Rajandralal Mitra (2002) .
জন্ম কলকাতা শহরে। পিতা অরুণ কুমার ঘোষ ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার। আর মাতা রেবা ঘোষ ছিলেন সাহিত্যানুরাগী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ পিতা ও সাহিত্য অনুরাগী মাতার কারণে ছোট অমিতাভ বাংলা সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞান বা বিজ্ঞানভিত্তিক রচনায় বড় সিদ্ধার্থ হয়ে উঠলেন। অমিতাভ বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। তার ছোটবেলা কেটেছে ভবানীপুরে মামার বাড়িতে। এখানে বন্ধুদের সাথে মিলে হাতে লিখে দেওয়াল পত্রিকা বের করতেন স্কুলে পড়ার সময়েই। তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন। একাদশ শ্রেণীতে তিনি অলরাউন্ডার পারফরম্যান্স পুরস্কার লাভ করেন। বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। কিন্তু সত্তরের দশকের নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে একটা বৎসর নষ্ট করেন। অবশ্য ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। ইতিমধ্যে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার সময়ে রাজনৈতিক সাহিত্য প্রকাশনার ভার নিয়ে সামাজিক আন্দোলন নিয়ে লেখালেখি চালিয়েছেন। ছোটবেলা থেকে লেখালেখিতে অভ্যাস থাকলেও,"রামধনু"পত্রিকার সম্পাদক বঙ্গীয় শিশু সাহিত্য পরিষদের ক্ষিতিন্দ্রমোহন ভট্টাচার্যের অনুপ্রেরণা লাভ করেন।
কলেজ থেকে বেরিয়ে প্রথমে তিনি 'বিড়লা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম'- এ যোগদান করেন। এই সময়ে অর্থাৎ সত্তরের দশকের শুরুতে তিনি "সিদ্ধার্থ ঘোষ" ছদ্মনামে লেখা শুরু করেন এবং তা' প্রকাশ হতে থাকে কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান, আনন্দমেলা, সন্দেশ, এক্ষণ, দেশ ইত্যাদি পত্র-পত্রিকায়। পরে যোগ দেন 'ন্যাশনাল ইন্সট্রুমেন্টস এবং সেন্ট্রাল গ্লাস অ্যান্ড সেরামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট'-এ রক্ষনাবেক্ষন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। নব্বইয়ের দশকে কাজ করেছেন 'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স টেকনোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ'- এর বিজ্ঞানী হিসাবে। বছর দুয়েক যুক্ত ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটিতে আর শেষ চার বৎসর ছিলেন কলকাতার 'সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্স'-এ। কিন্তু ইতিমধ্যে কল্পবিজ্ঞান ও রহস্য গল্প-উপন্যাস লিখে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভূত, গোয়েন্দা, বিজ্ঞান, কারিগরির রসদদার হিসাবে যেমন বড়দের জন্য কলম ধরতেন, তেমন ছোটদের মনোরঞ্জন করতেন।'কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান' ও 'আনন্দমেলা'র নিয়মিত লেখক ছিলেন তিনি। কলকাতার রায়বাড়ির প্রতি তার প্রবল আকর্ষণ ছিল। উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার সত্যজিতের কাজে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে ওঠেন। এঁদের তিনি বিজ্ঞানীর মর্যাদা দিয়েছিলেন। তাঁদের কাজের প্রতিটি বিষয়ের তথ্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেছেন নিজের প্রবন্ধ সমূহে। সুকুমার রায় শীর্ষক গুচ্ছের পাঁচটি লেখায় প্রাবন্ধিক হিসাবে তার সে বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট। বিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্যের উপর নির্ভর করে বিজ্ঞানভিত্তিক কাহিনী যেমন উপহার দিয়েছেন, তেমনি বাংলায় বিজ্ঞানচর্চাকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে অনেক অঙ্ক ও ধাঁধার বই। কল্পবিজ্ঞানে তার সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্র দুটি হল 'ঝন্টুমামা' আর 'যন্ত্রমানব যুধিষ্ঠির'। মার্কিনি কল্পবিজ্ঞান লেখকআইজাক আসিমভ ছিলেন তার প্রিয় লেখক। "তৃতীয় নয়ন" নামে তার কল্পবিজ্ঞানের বই সিদ্ধার্থ সম্পাদনা করেন আর নিজে লেখেন চারটি কল্পবিজ্ঞানের বই। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে স্টকহলমে সায়েন্স ফিকশনের অনুষ্ঠানে "ফ্যান্টাসটিকা-৯২" আমন্ত্রিত হয়ে প্রথম বিদেশে যান। ওই বছরই আপসালায় তিনি স্বদেশী স্টিম ইঞ্জিনের সম্বন্ধে তার পত্রিকা উপস্থিত করেন। বাংলায় সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনি প্রেমেন্দ্র মিত্র সৃষ্ট চরিত্র ঘনাদার নামে "ঘনাদা ক্লাব" প্রতিষ্ঠার জন্য 'কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান' পত্রিকার সম্পাদকের কাছে আবেদন করেন এবং শুরুও করেছিলেন। তিনি পঞ্চাশটির বেশি বই লিখেছেন এবং বেশিরভাগ বাংলাতেই। কিছু বিখ্যাত বইয়ের অনুবাদ ও করেছেন তিনি.
বাংলা কল্পবিজ্ঞান জগতে অত্যন্ত জনপ্রিয় এক নাম। পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার হয়েও বহুমুখী প্রতিভার গুণে সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সংগ্রাহক ও গবেষক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। বহুধাবিস্তৃত সৃজনশীলতায় সিনেমা, চিত্রকলা, ফোটোগ্রাফি, সঙ্গীত, মুদ্রণ শিল্পে, পুরোনো কলকাতা, কারিগরি বিদ্যার ইতিহাসে অসামান্য কাজ রেখে গেছেন.
ব্যক্তিগত জীবন সিদ্ধার্থের সুখের ছিল না। শেষের দিকে এক দুর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে প্রায় দেড় বছর শয্যাশায়ী ছিলেন। অবশেষে আকস্মিক ভাবে ২০০২ খ্রিস্টাব্দের ৩১ শে অক্টোবর মাত্র ৫৪ বৎসর বয়সেই কলকাতায় প্রয়াত হন।
========∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆==========
No comments:
Post a Comment