@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
প্রকৃতি বিষয়ক কবিতা সংখ্যা
Vol - 75. Dt - 21.7.2020
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
পূর্ব মেদিনীপুর খেজুরি থেকে প্রকাশিত
কৃষ্ণনগর: খেজুরি :কাঁথি :পূর্ব মেদিনীপুর
পিন - ৭২১৪৩০. মোঃ. ৯৬৭৯৪৫০২৪৫.
*****************************************
পর্ব - ১.
=======≠==============≠==≠===≠===
সূচিপত্র
=======!!!!!!!========!!!!!!!=======!!!!!!!=
হাঁটতে শিখব : সঞ্জয় সোম
এ আমার জলের শরীর: জিললুর রহমান
বাদলা দিনে তুমি বিনে : বাসুদেব নাথ
উপকূল : তপন বাগচী
পালক: দেবাশিষ ভট্টাচার্য্য
নীল সমুদ্র ভালোবাসা : ফিরদৌসী কুঈন
অরণ্য সংবাদ: রঞ্জন চক্রবর্তী
প্রত্যাশা : বিশ্বজিৎ রায়
চোখ: ফটিক চৌধুরী
যাই চলো : অরবিন্দ সরকার
এখন বিপ্রতীপে: বিপ্লব মজুমদার
চেতনা: লক্ষ্মীকান্ত মন্ডল
এক ভুবনের সন্ধান : শুভঙ্কর দাস
ক্ষণ এবং নদী : মঞ্জির বাগ
আবার এসেছি ফিরে : ড. অসীম মন্ডল.
++++++++++++++++++++++++++++++++++
হাঁটতে শিখব
সঞ্জয় সোম
তোমার মুখ দেখলে মনে হয়
বৃষ্টি পড়া দেখেছি
চোখ দেখলে বুঝি
বৃষ্টির দুটো ফোঁটা দেখলাম
চোখ বুঝে পেলাম তোমার বড় বড় দুটো চোখ তুমি ছুঁয়ে দাও চোখ খুলবো
আমি আবার হাঁটতে শিখবো।
-----------------------------------------
এ আমার জলের শরীর
জিললুর রহমান
এ আমার জলের শরীর
- তিন ভাগ জল
এক ভাগ নীরেট ভূমি সারাক্ষণ জল থৈ থৈ
তরলের যেমন স্বভাব
সব পাত্রে সব রূপে সব ধর্মে লীন
এ জলেই বেঁচে থাকা বটে
- এ জলেরই চরিত্র বিলীন
সফেন সাগর বুঝি
বুকের গভীরে জাগা ঢেউ
আমার শরীর ধরি
তরলের অধিভৌত কেউ
-- মাটির মমতায় মেখে গায়ে
এ আমার জলের শরীর
- তিন ভাগ জল
ঢলে পড়া স্বভাবে নিবির
শীতলতা কিছু পাই
বাতাসের পরম দ্যোতনা মেখে মেখে
- বনস্পতির ছায়ায়
এ আমার জলের শরীর
- তিন ভাগ জল
উত্তাপ ছড়ায় ওই
- সে কেবল তোমার উত্তাপে।
-------------------------
বাদলা দিনে তুমি বিনে
বাসুদেব নাথ
আজ বাদল মুখর দিনে
তুমি বিনে
কাটে নিঃসঙ্গতায় বাদলের চিত্রে তোমার ছবি সাজে
বৃষ্টির ফোঁটা গলোতোমার নামের সুরে বাজে ।যেন এক ছন্দ তুমি তোমার অবয়বের সাথে তাল মিলাচ্ছে সবাই
আর আমার শাণিত হৃদয়কে জমিয়ে দিচ্ছে তোমার স্মরণে।
হৃদয় তো দাহ্য রেশের মতো সামান্য স্পর্শ পেলেই তোমার আহুতি হয়।
-----------------------------
উপকূল
তপন বাগচী
প্রতিবছর হারিয়ে তারা আবার দাঁড়ায় রুখে
কষ্ট করে সবাই তারা বাঁচতে চাই সুখে ।
উপকূলে ঝুঁকি বেশি সবাই সেটি জানে
তাইতো তারা কাটায় জীবন অতীব সাবধানে ।
ঘূর্ণিঝড়ের আভাস পেলে আশ্রয় কেন্দ্রে যায়
সেথায় গিয়ে সবাই নিজের প্রাণ বাঁচাতে চায় ।
ঝড়ের দিনে নারী-শিশু পড়ে দুর্বিপাকে
সবার যেন তাদের প্রতি বিশেষ যত্ন থাকে।
সবাই মিলে সময় মত আশ্রয় কেন্দ্রে গেলে বিপদ থেকে বাঁচার পথ খুব সহজেই মেলে ।
ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণের মৃত্যু বাড়ুক না আর, তাই -
আরো অনেক আশ্রয় কেন্দ্র উপকূলে চাই।
---------------------------------
পালক
দেবাশিষ ভট্টাচার্য
বৃষ্টি এলেই জুবুথুবু অন্ধকার নেমে আসে রোজ দুরন্ত পাখিগুলো , গাছের আড়ালে পাতার ফাঁকে থিরথির করে কাঁপে...... বাতাস কাঁপানো পালক ঝরে পড়ে... ওদের কোনো বর্ষাতি নেই ....
বন্ধুগুলো তাদের কাছে মণি-মুক্তার মত ...
অন্ধকারেও তাদের চিনতে পারে ...
শত রোদ -বৃষ্টিতে তারাই আগলে রাখে একে অপরকে.....।
------------------------------------
নীল সমুদ্র ভালোবাসা
ফিরদৌসী কুঈন
নিমন্ত্রণকে অতিক্রম করে ভুলগুলো মুগ্ধ করে রেণু -রেণু ভালোলাগায় ভরে যায় মাঠের দূরত্ব খা- খা রোদে টুকরো টুকরো মুহূর্ত হয় বৃষ্টির রূপালী ধারা
অসম্ভব ভালো লাগাতো যদি গাওয়া যেতো শেকল ভাঙার গান
ঝড়জলে সর্পিল উষ্ণতায় ভেঙে পড়তো গভীর গুহা
ভেবো না বিনিময়শূন্যতায় রুগ্ন হবে চোখের সবুজ দ্বীপ
বাইরের নয়, ভেতরের উজ্জ্বল দীপাবলিই যে প্রোথিত
ভালোবাসা যে আরাধ্য তাই সমুদ্রের নীল তার বুকে।
------------------------------
অরণ্য সংবাদ
রঞ্জন চক্রবর্তী
এইভাবে অনেকেই এসে পড়ে পর্ণমোচী গাছের বনে পথ চিনে অথবা পথ ভুল করে
ঝরা পাতার স্তূপে তাদের পথ ঢেকে যায়,
অথচ বীজ থেকে মহীরুহ হয়ে ওঠার ইতিহাস বিস্মৃত অতীতের মতো তারা ভুলে যেতে থাকে কিছুটা স্বেচ্ছায় এবং কিছুটা যুগের নিয়মে,
চিরকাল এরকমই হয়
তবুও অতীত জেগে থাকে - তবু অরণ্য কথা বলে।
--------------------------------
প্রত্যাশা
বিশ্বজিৎ রায়
পাঁচিল ঘেরা পৃথিবীতে জেগে উঠছে ঘাসরঙ
ডাকছে, লাবণ্যময় ভালোবাসা,
একগুচ্ছ মেরুনমেঘ উড়ে যাচ্ছে আকাশের বুক চিরে
এতদিন রঙহীন ছিল যারা, তারা হৃদয়ে আঁকলো নতুন প্রত্যাশা......
রানওয়েতে দাঁড়িয়ে খুনসুটি করে পাখিদের দল
একঝাঁক হাওয়া মল্লার বাজাতে আসে বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায়
তেপান্তরে যাওয়ার কথা যারা স্বপ্নেও ভাবেনি কোনদিন
ককপিটে বসে তারা মেসেজ পাঠায় -- ঝাঁপ দেব এবার রঙের বন্যায়....
সুতোকাটা ঘুড়িগুলো উড়ে চলে যায় দিগন্ত পেরিয়ে
পাহাড় বেয়ে নেমে আসা রাত্রি নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে চরাচর জুড়ে---
আর ফিরবেনা বলে যারা ঢুকে পড়েছিল ঘন চন্দন বনে
তাদের খুঁজতে অচেনা কিছু পাখি ডানা মেলে পাড়ি দিল রোদ্দুরে.....
------------------------------
চোখ
ফটিক চৌধুরী
আমি দেখতে পাই কিভাবে বদলে যাচ্ছে চোখ যা ছিল স্বচ্ছ দিঘি
রাত্রি ঘনিয়ে এলে দেখি
ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসে স্বচ্ছ সেই দুটি চোখ
চোখে এই বুঝি নেমে এলো অপ্রত্যাশিত শোক।
------------------------------
যাই চলো
অরবিন্দ সরকার
আরও দূরে চলো যাই
সরল বর্গীয় গাছেদের ভিড়ে
যেখানে দিগন্তে আকাশ চুমু খায়
সাদা মেঘের সারি বেঁধে বেঁধে
এগিয়ে যাওয়া
পাকদন্ডি পথে চলো যাই
তুমি আছ পাশে
তাই জয়ের তুর্যে চলো
এসো এই টিলার উপরে বসি
দেখ কীভাবে প্রকৃতি তার
রূপ মাধুরী বিছিয়ে দিয়েছে
সূর্যরশ্মি তে বরফ কুচি
যেন হিরেদ্যুতি ফুল ।
এসো নিবিড় ও মগ্ন থাকি
গাছেদের সহনশীলতায় ।
--------------------------------
এখন বিপ্রতীপে
বিপ্লব মজুমদার
যে মুহুর্তে সুনিশ্চিত সরে গেলে তুমি
বুঝলাম এবার হাঁটতে হবে একা,
যে মুহূর্তে সরে গেল বিশুদ্ধ আলোক
বুঝলাম শুরু হল অন্ধকার দ্যাখা।
করমর্দনের জন্য বাড়ানো হাতটি
যেই ভরে গেল এক-বুক শূন্যতায়
বুঝেছি যতই সদিচ্ছা থাক এপাড়ে
ওপাড় বদলে গ্যাছে নষ্ট শত্রুতায় ।
নিচে , কখনও বা তুমি আছ মাথায়
ঢেউগুলো রাত্রি- দিন তোমাকে নাচায় ,
বিপ্রতীপে এখনো তাই সাগ্রহে ব'সে
চটুল স্তব্ধতা দেখি ধীর অপেক্ষায়।
---------------------------
চেতনা
লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল
ভরাট দুপুর এলেই সকলেই উঠতে চায় মাটি থেকে
শূন্যে , চেতনা চুঁইয়ে নামে সান্দ্রতা ; কত আঁধার রাতে
দীর্ঘ পঙ্ ক্তির সব মৌমাছি একে একে উড়িয়ে আনে
হলুদ হাওয়া - একেক ঝলকে মনে আসে আয়ুক্ষয়ের
কথা ; কেবল কদম গাছের নিচে বেচারা নিম বাতাস
সমস্ত মৌলিক জ্ঞান বুকে নিয়ে প্রতিবিম্ব খোঁজে পুকুরের
জলে , খুঁজতে থাকে বামদিক আর ডানদিক - তখনও
জলতলের উপরে মাকড়সা জাল বুনতে থাকে - এ শূন্যতায়
কোনো ইশারা নেই , নেই কোন অবলম্বন - কেবল একটা
সরলরেখায় আলোর বিন্দুগুলি জমাট বাঁধতে বাঁধতে
দৃষ্টিহীন হয়ে যায় --
--------------------------
এক ভুবনের সন্ধানে
শুভঙ্কর দাস
যে মূহুর্তে মাটি ছুঁয়েছিলে,মৃত্যু কোনো একটা ছেদ-যতির ভেতর নিঃশব্দে ঢুকে পড়ে সেই সময়,তুমি শিরোনামহীন,পরিচয়হীন, একা এবং এতটাই পরনির্ভরশীল, যে হাতে নীরব রেখা,পায়ে কয়েকটি সর্ষেফুল আর বুকের ভেতর জন্মঘড়ির ধুকপুকানি
কী করে জানবে কোথায় পথ শেষ,কোথায় আগুন অপেক্ষায় আর কোথায় ছাই উড়ছে তোমারই অবয়বে!
কে জানে কবে জন্মের জয় হবে?
শুধু জন্মে গেছ,আর কি প্রাপ্তি আছে,শস্য,সাহস, প্রেম বা ঈশ্বরের কাছে?
শেষ শ্বাসটুকু পৃথিবী,এই পৃথিবীর প্রাণ!
মরবে তো নিশ্চিত, তার আগে অনন্ত একজনের কাছে যদি গোটা ভুবন হয়ে উঠতে পারো, তবে তা সহস্র জন্মের সমান!
-------------//------------------------
ক্ষণ এবং নদী
মঞ্জির বাগ
ফুল জিজ্ঞাসা করে।
জিজ্ঞাসা করা হয়নি
কত বয়স?
বহু নদী তীর্থ ঘুরে একান্ন পীঠ
জন্ম ছায়ার নদী জল ছুঁয়ে জীবন বয়ে যাওয়া....
কত বয়স তোমার.,.
আমার মাও জানতেন না ; ঠিক কবে
কোন এক ভাদ্রের জোছনায় চাঁদ আঁচলে
মুড়ে কাটিয়েছিলেন ; জন্ম ঘর আঁতুড়
ভিটের পাশে একটা গাছ শুনেছি ; সেও সেদিন
মাথা তুলে বীজ।দাঁড়িয়ে
আকাশ নদীর মতো ভেসে যাওয়া মেঘ টুকরো
তাকে বলি ;সোদর কত বয়স আমাদের
মনে নেই, বয়স আসলে হিসাব.,....
পৃথিবী থামতে জানে না
সময় কে বয়ে যাওয়া বলি যদি; স্রোতের অবসর নেই
জন্মমৃত্যুর রেখায় দোতারা বাজায় বৈরাগ্য বাউল
আপত্যের দিকে ; হৃদয়ের দিকে দেখি
অতীত জলসিঁড়ি ভবিষ্যত বর্তমান ছুঁয়ে
খেলা করে চৌখুপী বল.,...
চৌরাসিয়া বাঁশি বাজাতে বাজতে ছুঁয়ে ফেলে
দুলন্ত চুলের বিটেলস্.,,,.
সব সুরই এক। সাম গানে মিশে যায় আফ্রিকার
বনজ সুর। ড্রাম....
এই নীল পৃথিবী সবুজ ছিল আগে;ধূসর লাগে
পান্ডুলিপির পৃথিবী।
মহাকাশে সুন্দরবন নিবিড়তাহীন মানুষজনের কিলবিলে গ্রাম
চলন্ত পৃথিবীর আদামসুমারীখাতা হারিয়ে যায় .,.,
পৃথিবী ঘুরছে সময় পাতে।সময় যেন ঝরে পড়ছে
চিকমিকে জোনাক মুহুর্তে
সাইকেলের চাকাটা ছুটছে অবিরাম। অন্ধকারের মধ্যেই তাকে যেতে হবে।বেল বাজছে। ক্রীং......
----------------------------++
আবার এসেছি ফিরে
ড. অসীম মন্ডল
আবার এসেছি ফিরে
সেই লালরঙা পথ বেয়ে
কোন এক পড়ন্ত বিকেলে
মৃদু আলো আর নরম হাওয়া মেখে
আবারও সেই বাবলার তলে।
আমার আমিকে, কিশোরকে খুঁজি। ফেলে আসা বিকেল আর বুক শিরশিরানি মন কেমন ।একটা হলুদ পাতা উড়ে যাবে মুড়িগঙ্গার দিকে ।একটা কাক একটানা ডেকে যাবে অশথের সাখে।
একটি দুর্বার শিকড়ে লীন হয়ে যাবো। পাখিদের বাসায় রব পড়ে। কত কাল কে জানে!
গাছের শিকড় থেকে নীড়। নীড়ের শিকড় থেকে প্রাণ । জোয়ারের তরে ভাটির টানে
বৈঠা বয়ে চলে যায় ।
আন্দোলিত দাগ রয়ে যায় নদীর বুকে।
হালের ঢেউয়ের।
তবুও বাবলার হলুদ ফুল
হলুদ আগুনের মত মনে আসে
কাঠামোয় গভীর হলুদ ফুল
সবুজ পাতার ফাঁকে।
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
পর্ব -২
=================================
সূচিপত্র
রাইমাটি : বনশ্রী রায় দাস
রামধনু : শুভ্রাশ্রী মাইতি
বটবৃক্ষ : বিপ্লব গোস্বামী
ফুল আগাছা : খুকু ভূঞ্যা
পরাগ মাকে প্রকৃতি পুরুষ : বিকাশ চন্দ
খিদে কথা : রাজীব ঘাঁটি
প্রিয় ছবি : জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
ভাবনা : নীলোৎপল গোস্বামী
সেই একই ছবি : শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ
গাছের চারার জন্য জরিমানা : কাজী শামসুল আলম
তোমার কথা : অঞ্জন কুমার দাস
সবুজ গল্পের জন্যে : অশোক কুমার লাটুয়া
প্রাকৃতিক : তৈমুর খান
গন্ধরাজ : অরুণ ভট্টাচার্য
অরন্যের গল্প : সোনালী মিত্র
***************************************
রাইমাটি
বনশ্রী রায় দাস
নীলজরি আশনাই মেখে মেঘডম্বরু
কখনো সখনো নিজেকেই আশমান ভাবে।
মনসিজীয় মোহনায় সঙ্গমরত কাঁচাহলুদ নদী
ফিরতে চায় না আর গর্ভশূন্য খাঁ খাঁ বালুচরে।
পশ্চিমী ফোঁটা ফোঁটা ঋতু পালক শিরশির
বিলি কাটে আমার সেমন্তী এলো চুলে ।
মরু জোনাকি রঙধনু সুহানায়
রাখালের বাঁশি সুর খুঁজে পায় প্রাণ-বেহাগী।
বৃক্ষ বৃক্ষিনীর সহজপাঠে পাতার করতালি
শিকড়ে ফুরফুর ফুলেল পিযুষ।
জলপিপি পাখি হেঁটে যায় যমুনা ত্বকে ,
সখিতাশাখে নূপুর-শ্বাসে রাইমাটি
কদমকেশর ছুঁয়ে উষ্ণীষে ময়ূরপঙ্খি ,
নিধুবন মধুবনী ঘোমটা সবুজ ঘাগরা চোলি
আহ্লাদিত প্রকৃতিরাধে সবুজাভে
খঞ্জনি সুর তুলেছে আমি কৃষ্ণ তুমি রাধে ।
---------------------------------------
রামধনু
শুভ্রাশ্রী মাইতি
ছেলের আঁকার খাতার সাদা পাতাটায়
নীল জলরঙে কয়েকটা ঢেউ আঁকতেই
ছলছলিয়ে বইতে শুরু করল একটা আস্ত নদী।
নদীর বুকে একটা ছইঢাকা নৌকা।
পাটাতনে হাল ধরে বসে আছে সুজন মাঝি।
নদীর জলে ভাটিয়ালী সুরের ঢেউ।
সাদা রঙে তুলিটা ডোবাতে না ডোবাতেই পেঁজা তুলোর মেঘ পাখির মতো উড়ে গেল নীল আকাশে।
বুকে তার সাত রঙা রামধনুর লুকানো বিভা।
সবুজ রঙের শিশিটা খাতার খোলাপাতায় ছড়িয়ে যেতেই
মাথা তুলে দাঁড়িয়ে গেল বেশ কিছু বড় বড় সবুজ গাছ
আর ঘাসে ঢাকা একটা সবুজ মাঠ।
কালো তুলির সিল্যুয়েটে আঁকা হল মেটে বাড়ীর কাঠামো
আর কিছু কেলেকুলো খেটে খাওয়া মাটির মানুষ।
হলুদ রঙের শিশিটাতে বুকভরা পাকা ধানের গন্ধ।
আঁকার খাতাটা এখন রঙে রঙে রঙীন।
আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠে আমার ছেলে।
শেষ পাতায় দেখি,আমি বসে আছি রান্নাঘরে, উনুনের পাশে
মার কোল ঘেঁষে--ঠিক যেমন বসে আছে আমার ছেলে।
হাঁড়িতে গরম ভাতের টগবগে গন্ধ।
ছেলের জন্য বাড়া সাদা ভাতের ওপর আমি একটু ঘি ছড়িয়ে দেব রামধনুর রঙের।
ঠিক যেমনটা মা দিতেন।
মা বলতেন,নদী,গাছ আর মাটিকে আপন ভাবলে
বুকের গভীরে এমনই ঘিয়ের গন্ধ ওঠে ভালবেসে।
--------------------------------------------
বট বৃক্ষ
বিপ্লব গোস্বামী
বট বৃক্ষ তুমি উঁচু করি শির
কালও ছিলে আজো আছো
আর কত থাকিবে স্থির।
তুমি কি অমর ? বৃক্ষ পতি,
তোমার দেখে সাধু সবে
জোড় হাতে করে স্তুতি।
চির যৌবনা ষোড়শীর ছলে
আছো তুমি শতক হতে
কোনসে মহা মায়া বলে।
বট বৃক্ষ বলে : কবি ,,
তোমার জানা আছে সবই।
আমার যা কর্ম,,,,,
পরোপকারই পরম ধর্ম।
মম ছায়া তলে,তরু দলে দলে
হাসিয়া টাটায় তারা দিন।
আসিলে ঝড়,কাঁদে তরু দল
আমি বলি থাকো সুখে।
পর হিতে মোর দুঃখ কেবল
তবু আছি মহা সুখে।
---------------+-----------+--
ফুল আগাছা
খুকু ভূঞ্যা
ফুলগাছ আঁকড়ে ধরলে আগাছার চোখে জল দেখি।
একটা বেমানান ভালোবাসার সুখে সে ছুঁতে চায় হৃদয়ের কিছু গোপন।
নরম ঠোঁটের পরশ পেতে
কোমলতার দিকে বিছিয়ে দিই মন--
ফুল ফোটার আওয়াজ অথবা বীজ ফাটার শব্দে
কী যে আনন্দ,,
রন্ধ্রে রন্ধ্রে দৈব শিহরণ--
নিভৃতের ভাব জানে,আর বিশুদ্ধ অনুভব।
তবুও ফিরতে হয় ঘাসপাড়ায়
যখন সন্ধ্যা বাজে বুকে বিরহ নূপুরের মতো
ফাটল ধরে মনে,
দীপ দেখানোর ছলে তার পায়েই রেখে আসি আলোর ভার
সহসা পাতা রঙ বদলায়, শাখা ভরে ওঠে, আগাছা চরে প্রজাপতি উৎসব
ফুল আগাছা পাশাপাশি---
--------------+--+-----------
পরাগ মাখে প্রকৃতি পুরুষ
বিকাশ চন্দ
কখনো কি খুলেছো মনের সবুজ দুয়ার, দেখেছো কি---
অহেতুক ধ্বংস লীলা গাছ পাখি ফুলেদের ঘরে,
মহাকাশের নীলে এক ঢাল জীবন্ত ভালোবাসা---
ফিরেও দেখেনি কেউ ইচ্ছে ধ্বংস লালসা লীলা।
#
অঝোরে ধুয়ে যায় বৃষ্টি ধারায় চলন কালের ত্রিযামা
তবু এতো সংহার সময় ভেসে যায় অনন্তের পথে,
অগণিত মৃত মানুষের সারি অফুরন্ত জীবনের শেষে
চলন কালের প্রকৃতির রোষ জানে মানুষের ছলা কলা।
#
রাতের অন্ধকারে ঘাস ডোবা বৃষ্টিপাতেও ডাকে না ব্যাঙ---
নীরব অতি মারি জানে শুধু দৃষ্টি হীন মৃত্যু উড়ান,
কেবল প্রশান্তি গলায় সুর তোলে দোয়েল পাপিয়া শ্যামা
আর আর পাখিরা চলেছে নির্দ্বিধায় আশ্চর্য প্রজননে।
#
মুখ ফেরানো মৌন মানুষ কোথায় যাবে উর্ধশ্বাসে--
অরণ্য ধ্বংসের অভিযোগ থমকে বাতানুকুল ঘরে,
শ্বাসকষ্ট বোঝে এখন উল্লসিত প্রকৃতি ভেঙেছে বন্ধ্যা দশা
এখন বন কুসুমের অঙ্গ রাগে পরাগ মাখে প্রকৃতি পুরুষ।
____________________________
খিদে কথা
রাজীব ঘাঁটী
একটা ক্ষুধার্ত রাত নিদ্রাহীণ হয়ে খুঁজে নেয়
আলোকিত সকাল , ক্ষতবিক্ষত শ্বাস প্রশ্বাস
ভোরের বাতাস মাখে । প্রজাপতি হতে গিয়ে
মন হারায় মরীচিকার গোপন অন্ধকারে।
ক্ষুধা বোধহয় সব উত্তর জানে,জানে দুর্ভিক্ষের বিভীষিকা সবটুকু উজাড় করে দেয়
অজানা তথ্যগুলো আগলে রাখতে চায়
আমার অজানা আশঙ্কা ,সময় বদলাবেই
আগুন আর খিদে পুড়িয়ে দেয় ভালো ইচ্ছেগুলোকে , ছাপোষা আমাদের এইটুকু জীবন নিয়েই স্বপ্ন দেখতে হয় । রাত থেকে সকাল সবটুকু খিদে মাখতে মাখতে চলে।
একদিন সুখ আসবে ,আসবে আলোমাখা সকাল সেদিন সব খিদে নেভাবে আগুন.
---------+---------------+---------
প্রিয় ছবি
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
মানুষের ভিড়ে দমবন্ধ কোলাহল বিষবায়ু তাপ
ইঁটের দেয়াল থেকে ছুটে আসে মায়াহীন শ্বাস
নির্জন খুঁজে ফিরে এধার সেধার জাগে পরিতাপ
জড়ের মিছিল ঠেলে জেগে নেই এক চিলতে ঘাস।
আমাদের গ্রামে গ্রামে সবুজের হাতছানি প্রতিদিন
আম জাম বকুলের জমাট ছায়া ফুলের সুগন্ধ মাখা
বিশুদ্ধ বাতাস খেলে গ্রামীণ উঠোন মাঠে কী রঙিন
পাখির কূজনে প্রাণ জাগে রাত্রি চাঁদের আলো মাখা।
গাছেরা অমৃতময় জানি না তারা ছাড়া কোন স্বর্গ হয়
আসুন শপথ রাখি সবাই ফল ও ফুলের চারা পুঁতে দেবো
পথের দুধার ফাঁকা পেলে এবং পতিত জমি,যত্ন নেবো
পৃথিবী স্বর্গ হয় সবুজের সাহচর্য পেলে রাখি প্রত্যয়।
------------------------------------
ভাবনা
নীলোৎপল গোস্বামী
আমরা যদি বৃক্ষ হতাম
এবং শাখা প্রশাখা হতো;
বাড়িয়ে দিতাম ঐগুলো সব
ফুলে ফলে অবিরত।
স্বার্থপরের শয়তানি সব
মাথায় আমাদের রইতোনা,
থাকতোনা সেই মাথাখানাই
গন্ডগোলের কারখানা।
একের সাথে আরেক জনা
থাকতে আমরা পারি কই?
গাছ হলে 'ত সে ভাবনাটি
যেতই উড়ে; উবে যেতই।
আশ্রিত হতো প্রজাপতি
পাখি, পশু নানান ভাবে,
মানুষ হয়ে কেবল ভাবি
কা'র আশ্রয়টি কাড়া যাবে!
গাছের মতো ধৈর্যে স্হির
মাটি আঁকড়ে থাকা যত,
দেশছাড়া কে হতো বলো
মানুষ হওয়ার দুঃখ কত।
গাছের মতো হবো ভেবে
সকালে যেই চোখটি খুলি
প্রভাতরবি ফেলছে আলো
খুলছে মনের বাধনগুলি।
মানুষ যেমন ইচ্ছে হলে
বটবৃক্ষ হতেই পারে।
বৃক্ষ লতা গাছ বা রসাল
মানুষ কিন্তু হতে নারে।।
-----------------------------+----------------
সেই একই ছবি
শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ
এখানে প্রকৃতি পেতে রেখেছিল সবুজ গালিচা,
সে কোন সময় ঠিক মনে নেই বুঝি কৈশোর।
ভোর চুরি করে দোর খুলে যেই বাইরে গেলাম --
দেখি কোথা থেকে মনের মধ্যে এসে গেছে জোর।
আজ আবার ফিরে পুরনো দিনের গন্ধ পেলাম।
দূর দিগন্তে উঠব উঠব করছে সূর্য,
মাঠে ফসলের শত্রু তাড়ায় বান্ধব হাওয়া।
নদী উঁকি দিয়ে দেখে নেয় মাঠে জল আছে কিনা
মাঝির মেয়েটা নিকিয়ে নিচ্ছে ছোট এক দাওয়া।
কোত্থাও কোনো অসুন্দরের ছোঁয়া পাচ্ছিনা।
নীলাকাশে মেঘ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আঁকে আলপনা,
গাছে গাছে ফুল কখন ফুটেছে কেউ জানে না তো,
প্রথম পাখিটা ডেকেই হঠাৎ চুপ করে গেল,
কে যেন বলল -- সেই একই ছবি দিই হাত পাতো।
যেই হাত পাতি সে আবার বলে -- চোখ দুটি মেলো।
-----------------------+--------------------
গাছের চারার জন্য জরিমানা
কাজী সামসুল আলম
কবিতা লেখা অধিগমনের অনেক আগেই গাছ লাগাতে শিখেছি,
সরকারি নার্সারীতে জনা পিছু দশটি চারা ফ্রিতে দিচ্ছিলো,
দশ মাইল দূরের নার্সারীর সেই চারার তৃষ্ণা নিয়ে চড়েছিলাম ট্রেনে, বিনা টিকিটে,
বাড়ির প্রাঙ্গনে আজও টিকে আছে জারুল, শিশু, রাধাচূড়া গাছটি,
ঝড়ে নিপাতিত সুবাবুল গাছের কড়ি রান্না ঘরের চালে,
উসুল হয়ে গেছে চেকারের কাছে ধরা পড়ে প্রদত্ত দশ টাকার জরিমানা,
গাছের মায়া চেকারকে স্পর্শ করে নি, ষোলো বছরের কিশোরকে যা স্পর্শ করেছিল,
হাজতের ভয়ে নয়, গাছ লাগাবার লিপ্সায়- আনন্দমেলা কেনার লুকানো টাকা জরিমানা দিয়েছিলাম,
বন উৎসবেই শুধু গাছ লাগাই না, লাগাই যখনই সময় পাই-জায়গা পাই, কবিতা লেখার ফাঁকে ফাঁকে,
------------------+-----------+-----
তোমার কথা
অঞ্জন কুমার দাস
কখনো তুমি রূপসী ,আবার কখনো রুদ্র রূপা। কখনো তোমার খিল খিল হাসি কখনো উগ্র তপা । তোমার কোলেতে জনম আবার তোমাতেই মিশে যাওয়া। তোমার মাঝেই আশ্রয় পাই, তুমি প্রশয় দাত্রী অথচ তোমাকে আঘাত করে আমরা আনন্দে মাতি,সর্বংসহা জননী গো তুমি , তুমি ই জগৎধাত্রী।
-----------------------+-------------
সবুজ গল্পের জন্যে
অশোককুমার লাটুয়া
সবুজ বিশ্বাসে সবুজ অনুরোধ — একটার পর একটা ঝড়ে আমরা হারিয়ে ফেলেছি অনুভবের অজস্র শিকড়।
খুঁজে পেতে হবে সেই শিকড়ের বারোমাস্যা
আটপৌরে জীবনের গল্পটাকে।
কি ভীষণ বিভীষণ আজ পৃথিবী
ধূ- ধূ তেপান্তর। শুনছি পৃথিবীর প্রতিদিনের নাভিশ্বাস।
মন্তব্য নয়, বক্তব্য নয়
কলমের আঁতুড়ঘর ছেড়ে
মাটি মেখে দু 'হাতে
সবুজ কাজে দিতে হবে সময়।
সবুজ শুভেচ্ছায় পৃথিবীকে দিতে হবে সবুজ প্রতিশ্রুতি।
সবুজ পৃথিবী হোক সবুজ ইচ্ছেমতী।
এ পৃথিবী আমার তোমার আমাদের।
বুঝে নিয়ে সবুজের মানে
সবুজের স্নানে সবুজের গানে
সবুজের শুভেচ্ছায়
আজ এইবেলা সাজাতে হবে জরুরী জীবন সবুজ কথায়।
সবুজের প্রচ্ছদে
পৃথিবী সাজানোর আর এক নাম সবুজ ভালোবাসা।
এসো প্রিয় মানুষের দল
আজ থেকে হতে হবে
সবুজের স্তবে
ক্লান্তিহীন সবুজ দধীচি।
------------+-------------------------
প্রাকৃতিক
তৈমুর খান
পৃথিবীর সব প্রেম ডুবে গেছে আজ
মানুষের হাহাকার উঠে আসে,
রোদ্দুরের বেশ্যামেয়ে খুলেছে সাজ
তার মাটির স্তন ঢাকে মরা ঘাসে।
-----------------------+-------------
গন্ধরাজ
অরুণ ভট্টাচার্য
রাত্রি ভেদ করে একগাছ গন্ধরাজ
আমার পৃথিবীতে নিয়ে আসে সুগন্ধি সকাল।
পবিত্র আলোর চোখে নতুন জগৎ দেখা
ফুরিয়ে যাক্ কে চায় বলো তো !
তবু দিন বাড়ে - কথা বাড়ে
যুদ্ধ চলে অন্তহীন..।
গোধূলির হাতছানি - অনন্ত জিজ্ঞাসা..।
মৃত্যুপথযাত্রী ফুলগুলি এসময় বিনম্র প্রার্থনায় একাত্ম সবাই
হে ঈশ্বর !
হেরে গেলাম দানবের কাছে সুগন্ধ বাঁচিয়ে রাখো
সুন্দর আগামীর জন্য।
------------------+-------------------
অরণ্যর গল্প
সোনালী মিত্র
একদিন অরণ্য জেগে উঠবে
সহস্র পাখির কলরবে আকাশ নেমে আসবে কাছে।
পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের ভালবাসার
নদীর বুকে খেলা করবে ঝিলমিল ছায়া
পাখিদের ঠোঁটে ঠোঁটে নতুন আলো।
মাটির উঞ্চবুকে প্রাণের সঞ্চার
সারারাত বৃষ্টির গানে ভরিয়েছে সুদ্ধ আকাশ।
তুমি বলবে ছবি আঁকো চোখের পল্লবে।
উদ্ভ্রান্ত মেঠোপথে বৃষ্টি যেন দূরন্ত বাতাস তোমার দৃষ্টি ছোঁয়া শাল-সেগুনের অবিমিশ্র পাতায় ডুলুং এর রোমাঞ্চ প্রপাত।
শ্রাবণের ভালবাসায় ভিজে ওঠা আমার হৃদয়ে অরণ্য খেলা করে তোমারই মেঘ মল্লার।
রাতভোর গল্পের শেষে___
কৃপায় মেঘ তুমি আঁকো একটি বৃষ্টির কথা আমাদের ঠোঁটে.
¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
পর্ব - ৩
¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
সূচিপত্র :-
শিলাবতী : শ্যামসুন্দর মন্ডল
সবুজ অবুজ : ড. নির্মল বর্মন
শ্রাবণ : তন্ময় বিশ্বাস
নিরাশ্রয় : লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য
পাখির বাসা : যুথিকা দাস অধিকারী
প্রকৃতিকে ভালোবেসে: শ্যামলী সরকার
মৃত্যু উপত্যকা : কৃষ্ণ প্রসাদ মাজী
ভালোবাসার ঘর : জয়দেব মাইতি
সবুজ প্রাণ : সুপর্ণা বসু দে
রক্ষণাবেক্ষণ : মতিলাল দাস
রাত উপহার : বকুল জানা
বিশুদ্ধ ঘ্রাণ : রজত দাস
সবাইকে নিয়ে বিন্দাস থাকুন : সমরেশ সুবোধ পড়িয়া
তফাৎ একটাই : ভগীরথ সর্দার
যাবোই ফাগুনের বাড়িতে : দীপক জানা
*****************************************
শিলাবতী
শ্যামসুন্দর মন্ডল
আজ শিলাবতী ভরা যৌবনা।
সুডৌল বুক উন্নত গ্রীবায়
কানায় কানায় পূর্ণ শ্রাবণ ধারায়।
বুক থেকে চুঁইয়ে পড়া পরিমিত রস
অপরিমিত হলে
শিলাবতী ভেসে যায় দারুন যন্ত্রণায় -
সদ্যস্নাত নগ্নিকার মতো।
ভেসে যাওয়া শেষ হলে,
শিলাবতী বোবা হয় শিলায়।
তবুও যন্ত্রণা, অন্তঃসলিলা হয়।
শ্রাবণ অতীত হলে
পরিযায়ীরা আসে দলে দলে।
রেখে যায় শকুনি পায়ের ছাপ।
মুখে নয় কিংবা বুকেও নয়,
তারও আরো, আরো গভীরে, গভীর ক্ষত করে।
না, শিলাবতী কোনো নদী নয়,
আবার কোন মেয়েও নয়।
শিলাবতী, উভয়ই।
--------------------------------
সবুজ অবুজ
ড. নির্মল বর্মন
বসন্তের হাওয়ায় ডালে ডালে পাতা ঝরছে
গাছগাছালির ডালপালাতে নতুন সংস্করণ
প্রকৃতি বদলের কথাই বলছে
ঘন্টা বাজছে ফ্রান্সে ইতালি আমেরিকায়
ব্রাজিল লন্ডন রাঢ়বাংলায়
সবুজ অবুজের নিশান হাতে
কাছে দূরের মানুষজন
একপাশে পাতার আগুন ওপাশে বান
তবুও মানুষ কেমন স্বপ্নিলে চমকান।
________________________
শ্রাবণ
তন্ময় বিশ্বাস
শ্রাবণ আমার বড্ড প্রিয় ! এই রোদমাখা বৃষ্টি,
নিম গাছ বেয়ে নেমে আসে ফোঁটা ফোঁটা জল
জলের উপর কান্নার -কণা, আঙিনায় শিশুর কোলাহল!
এই শ্রাবণে পথে হাটি একা, ভিজে যাওয়া বাঁশ গাছ-
জুঁইফুল চাঁপা ফুল তুলে কাটে অপুর মাস।
কত মরুপথ ভিজে যায়, হেসে ওঠে শণবনের পাখি -
পাটের আঁশের সিকায় নানি খুঁজে পায় -
বছরের ছায়াছবি।
এই তো শ্রবণ, দুলে ওঠে মন, ভাটিয়ালি গায় মাঝি -
চন্ডীদাসের কৃষ্ণ তখন বাজায় মোহন বাঁশি।
আমার শ্রাবণ নকশিকাঁথা, ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ পানকৌড়ির ডুব - সাঁতারে কিশোরীরা আখ্যান।
________________________________
নিরাশ্রয়
লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য
পথের ধারে অহংকারে মত্ত বৃক্ষরাজি
আকাশ চুমে খেলত বেজায় রংবেরঙে সাজি
রক্তরঙা যেমন শিমূল পলাশ কৃষ্ণচূড়া
ছিল ছাতিম বট অশ্বত্থ এবং রাধাচূড়া।
সেদিন এল প্রবল ঝঞ্ঝা ভীত কানন রানী
বৃক্ষ ছায়ায় ছিল যত কীটপতঙ্গ প্রাণী,
ভীষণ লড়েও ব্যর্থ গাছ পারল না ভূমি আঁকড়ে
ছিল যত তরু সকল পড়ল ভেঙে ঝড়ে
নীড় বিহনে বিহঙ্গকূলের আকূল দীর্ঘশ্বাস
ধ্বনিরেখা দীর্ণ করে স্তব্ধ নগরাকাশ
প্যাঁচার বুলি আর কাঠবিড়ালির ঠকর -ঠাঁই -ঠকর
যাবে না শোনা কিচির মিচির পক্ষীকূলের আর
যাবে না দেখা জোনাক আলো সন্ধ্যে নামার পর
আশার আলো দেখতে চেয়ে গুল্মলতা হাত বাড়ায়
শিয়ালকাঁটার ঝোপ পেরিয়ে জোনাকিরা নেয় বিদায়।
_____________________
পাখির বাসা
যূথিকা দাস অধিকারী
যে পাখিটি ঘর বাঁধার স্বপ্ন
বাসা বানিয়েছিলো-
সাথী তার ঝড়ে হারিয়েছে ।
যে পাখিটি মা হবে বলে
তা দিয়ে জাগচ্ছিল -
ঝড়ে তার ডিমসহ বাসা ভেঙেছে।
যে পাখিটি দানার খোঁজে
ডানা মিলেছিল -
সে পাখিটি পথ হারিয়েছে।
যে পাখিটি ঘুম ভাঙাতে কিচমিচ করে
সে পাখিটি নিরুদ্দেশ-
ফেরেনি ঘরে।
যে গাছগুলি পাখিদের ভালোবেসে
ভূমি দিয়েছিল-
শিকড়সহ উপড়ে গিয়েছে ঝড়ে।
________________________
প্রকৃতিকে ভালোবেসে
শ্যামলী সরকার
আমি অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়ে,
স্নাত করবো বসুন্ধরাকে।
আমি নদী হয়ে এঁকে বেঁকে,
দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়িয়ে
পৃথিবীকে করবো শস্য-শ্যামলা।
পাহাড়ে পর্বতে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত,
জীব আমি আশ্রয় নেব গুহার ভেতরে।
সূর্য হয়ে আলো দেবো আমি,
সমগ্র জীবজগতকে।
একটা গাছ মরে গেলে,
জন্ম নেব হাজার গাছ হয়ে।
লোভ-লালসা হীন পাখি হয়ে,
আকাশ, আমি তোমাকে ছোঁব !
কিন্তু মানুষ হয়ে চাইবো না কখনো,
বাণিজ্য করতে, এই পৃথিবীকে নিয়ে।
_____________________________
মৃত্যু উপত্যকা
কৃষ্ণ প্রসাদ মাজী
গাঢ় অন্ধকারে দিশেহারা পথ
হৃৎপিণ্ড ছিঁড়ে ফেলে প্রাণপন আকূতি ধরি হাত
চারিদিক অবরুদ্ধ, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ
আবেগ জড়ো করে থমকে দাঁড়ায়
কুকুরে শুয়োরে মানুষে দীর্ঘ লাইন
আবাল বৃদ্ধ বনিতার মুখ ভেসে আসে দূরদেশ
দীর্ঘ লাইন ক্ষুধা কঙ্কালের মিছিল
শুধু স্থবির হত্ বাক দু ফোঁটা চোখের জল
রাষ্ট্র সমাজ প্রিয়জন সকলেই চুপ
কেউ কেউ ফন্দি কষে, মৃত্যু উপত্যকায়-
ফিরে এসে আবার হবে রাজা
কৌপিন পরে বসে আছে শৃগালের চোখে।
--------------------------------
ভালোবাসার ঘর
জয়দেব মাইতি
যে আকাশ গাইতে পারে
আঁকতে পারে গান
ভালোবাসার অনুরাগে
সরাও অভিমান।
জি আকাশ সবুজ করে
উদার করে আলো
এমনি করে হাজার তারা
চায় যে সবার ভালো।
মুক্ত হওয়া সবুজ বন্ধু
ভালোবাসার গান
হাত লাগাই সফল করি
সবুজের অভিযান।
_____________________________
সবুজ প্রাণ
সুপর্ণা বসু দে
মা নেই ,বাপ নেই, স্বামীর ঘর ছাড়া
অভিভাবক হয়ে দাঁড়িয়েছিল
উঠানের কোণে, বিশাল আমগাছটা।
পরম স্নেহে সন্তানহীনা লক্ষ্মী
প্রসব করেছে চারাটা
জল দিত, কথাও বলতো
বুঝতোও সবুজ প্রাণটা।
সাবালক হয়ে ,রোজগার করত
পাতা নেড়ে ,আশ্বাস দিত নির্ভরতার।
______________________________
রক্ষণাবেক্ষণ
মতিলাল দাস
ভুল করে যদি, বৃক্ষরোপণ করেই ফেলো ভুল
জায়গাতে
তাতে ক্ষতি নেই , তবে রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা করবে না
পাখিরা আশ্রয় নেবে, পথিক পাবে ছায়া।
ভুল মানুষকে ভুল করেও ভালোবেসো না
অনেক পথ হেঁটে ও তার মনের নাগাল পাবে না
অবহেলায় বৃক্ষ কিংবা ভালোবাসা বেড়ে ওঠে না।
---------------------------
রাত উপহার
বকুল জানা
ছায়া গাছের শ্বাস স্থির হয়ে আছে নিস্তব্ধ চারদিক
ঝিঁঝিঁ র গানকে হার মানাতে দূরে ড্রাম বাজাচ্ছে মেঘ
স্নিগ্ধ অন্ধকার মাঝে মাঝে চিরে যাচ্ছে একচিলতে বিদ্যুৎ
এত সুন্দর মায়াময় রাত দেখিনি
হাসনাহানার বিভোর গন্ধে জোনাকিও স্থির পলক
ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমির রহস্য প্রেম ডাক ছেয়ে যায়
গন্ধরাজের আধো কুড়ি পরতে পরতে
আমার ঘুম কেড়েছিল যে বেদনাজাগা রাত পাখি
এত সৌন্দর্য উপহার দেবে ভাবি নি।
-----------------------------------
বিশুদ্ধ ঘ্রাণ
রজত দাস
প্রকৃতি মুগ্ধতা প্রশান্ত ইঙ্গিত
ছায়াময় নিবিড় ডালপালা স্পর্শ
উদাত্ত হাত বাড়িয়ে আক্রান্ত আকাশ
বেঁচে থাকতে নিশ্চয়তা দেয়
ধূসর ধোঁয়া শুষে নীলকন্ঠ দাঁড়িয়ে
একাকিত্ব যন্ত্রণা উগরে রঙ বাহারে
সালোকসংশ্লেষণ উপমায় অরণ্য
বিশুদ্ধ ঘ্রাণ বাঁচার প্ররোচনা ঠিক করে।
যত্নে পুঁতি বীজমন্ত্র শাখা-প্রশাখা শরীর
প্রয়োজন গৃহস্থালি পণ্য যৌবন ধর্মে
বর্ষা অবহেলা শস্য উষ্ণতা দুফোঁটা
মানুষের দাবানল লোভ সন্ন্যাসী হোক
বাতাসে ভালোবাসা তৃপ্ত প্রাকৃতিক মর্মে।
---------------------------------
সবাইকে নিয়ে বিন্দাস থাকুন
সমরেশ সুবোধ পড়িয়া
আকাশ আলো জল বায়ু ছাড়া
যেমন প্রকৃতির জীব বাঁচে না
মানুষ পশু-পাখি কীট-পতঙ্গ ছাড়া
সাগর নদী পাহাড় কে প্রকৃতি বলে না।
মানুষেরই কঠিন পরিশ্রমের ফলে
সভ্যতা-সংস্কৃতির সৃষ্টি লক্ষ বছরে
গাছকেটে আর পশু পাখি মেরে
মানুষই জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে।
কীটাণু জীবাণু থেকে কুমির বাঘের
সকলের আছে বাঁচার অধিকার
প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট ধ্বংস করে
মানুষেরাই করছে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
প্রতিবেশী না থাকলে আনন্দ কিসের !
তাই ,প্রকৃতির সবাইকে বাঁচিয়ে রাখুন,
শত্রু মিত্র নিয়েইতো বৈচিত্র্যময় জীবন
সবাইকে নিয়ে বিন্দাস থাকুন।
-------------------------
তফাৎ একটাই
ভগীরথ সর্দার
একটা পুকুর একজন বন্ধুর মতো
আপনি তার স্থির আয়না জলে
মুখ দেখে নিতে পারেন।
আপনি দু'দণ্ড সুখ কিংবা দুঃখের কথাও
ভাগ করে নিতে পারেন।
কিন্তু দু'জনের তফাৎ একটাই
আপনার কান্না দেখা যায়
কিন্তু পুকুরের কান্না দেখা যায় না
তার অশ্রু জলে মিশে থাকে।
-------------------------------------
যাবি ফাগুনের বাড়িতে
দীপক জানা
রোদ্দুর প্রেমিকা হলে সোনার হরিণী হয়,
উধাও মাঠ
কাউকে ধরে রাখা যায় না,
যৌবন ও
ইচ্ছে বাগান ফুল শেষে হেমন্ত হয়
পাখি শরীরে খসে যায় পালক সুখ
তবু উপস্থিতি আকাশে চাঁদ উঠলে
মন বনে ফুল ফোটে
কলকাকলিতে প্রহর গড়িয়ে
বেন্দাবন বুক বাঁশিতে পোড়ে
অভিসারে যায় না কি কেউ ?
তবে তো জমুনাই রিক্ত হবে
আয়ু কদমের ডালে বসবে না কি সুখ সারি দুটো ?
-----------------+------------------------------
*****"****"*""***""************************
পর্ব - ৪
==================================
নিষ্প্রাণ পৃথিবী : দুর্গাদাস মিদ্যা
পথের পাশে চিত্রপট : চন্দনা ঘাঁটি
মা বৃষ্টি : দেবব্রত ভট্টাচার্য্য
বৃষ্টি চেয়েছিলাম : অজন্তা রায় আচার্য্য
পুরুলিয়া : সোমা প্রধান
রেশম পথ ও মিথ্যে : পবিত্র পাত্র
লাল কাঁকড়ার দেশে : অনিমেষ মন্ডল
গাছ : প্রদীপ কুমার গোল
দিনটা নয় তো মন্দ : বীথিকা পড়ুয়া মহাপাত্র
এসো হে বরষা : সত্যব্রত মিশ্র
চল রে খোকা গাছ লাগাই : সুজাতা বেরা
মুখোমুখি : পার্থপ্রতীম মিশ্র
সুস্থ পৃথিবীর আশ্বাসে : শ্রীলিম
ছেঁড়া পাতা : পার্থিব মাইতি
গাছ : অন্বেষা ভৌমিক
======≠===≠=======================
নিষ্প্রাণ পৃথিবী
দুর্গাদাস মিদ্যা
এই দুঃসহ সময়ের কাছে রেখে গেলাম প্রণাম ।
যে বা যারা
অথবা যাদের ভুলে
এই পরিণাম
তাদের এই অকাজের কথা
যদি ভুলে যাই সহজে
তবে বুঝি কোনো একদিন
মাথা তুলে বলব আবার
এ জীবন অনিশ্চয় !
তবু ভয় নয়
নয় পরাজয়
শক্ত হাতে যুদ্ধে নামতে হবে
হারাতে হবে তাকে
যে অমানুষ হয়ে সাধের পৃথিবীকে
ভয় দেখিয়েছে একদিন ।
প্রথম পক্ষ দ্বিতীয় পক্ষ সে তোলা থাক
প্রাণবন্ত পৃথিবী কেন নিষ্প্রাণ হল ?
সে কথাই ভাবা যাক।
+++++++++++++++++++++++±++++++++
পথের পাশে চিত্রপট
চন্দনা ঘাঁটি
থরে বিথরে আম্রবৃক্ষের ডালে পাতায়
কোলাকুলি
সবুজ খুশি ছিটিয়ে কোজাগরী রাতকে
আহ্বান
আলোক মালায় সজ্জিত পাড়া প্রান্তর
মাঠে ঘরে বাইরে
উতরোল মাতামাতি উল্লাস, মা আসবে এই ধরায়
আনন্দ ভরা সংসার নিয়ে পরনে লাল নীল বেগুনী শাড়ী
কন্ঠে জড়োয়া মুক্তোমালা পাড়া ঘর
কাঁপিয়ে উঁকি মারবে।
তা না হয়ে বাহন ভূতোম কালবেলার ডাক
দেয়
রাজদূত বাজাজ টাটা সুমো থেঁতলে
অসহায় চিত্ত
ঘোলাজলে সাফ করছে ধোপানী - যতসব বাবুর নোংরামি
পথের পাশে মজাহাজা নয়ানজুলি
হোগলা বনে ছেয়েছে
শীর্ণ উদোম দল শালুক তুলতে কাড়াকাড়ি লোফালুফি
কেউ বা প্রতিপক্ষকে জাঁকিয়ে মারছে
জলে
ঠেলে দেয় ঘন হোগলার বনে উপুড়ঝুপুড় আকড়া আকড়ি
ঐ সব দুর্বল দৃশ্যে সন্দেহের ছায়া ঘনায়
মা , সত্যিকারের আসবে তো? ওদের কথা ভাববে কি?
ওরা তো হোগলার ছৈ বেচে শালুক বেচে রোজগার করে
পুজোর সাজ কিনবে এই আশাতেই কষ্ট পোহায়
অতিমারীর সংকটে বিমর্ষ প্রকৃতি ভাবাচ্ছন্ন পর্বত ডিঙিয়ে বন-জঙ্গল মাড়িয়ে
মা এসে কি দেখবে ?
না কি মাও থাকবে , চৌদ্দ দিন
কোয়ারান্টাইনে ?
+++++++++++++++++++++++++++
মা বৃষ্টি
দেবব্রত ভট্টাচার্য্য
না, আমি কিছুতেই মেনে নেবো না
বৃষ্টির ফোঁটায় যন্ত্রণা আছে
হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির যন্ত্রণা-
আমি মানি না .কখনও না ।
আজও পাতায় নেচে ওঠে ধারাপাতে
দাঁড় কাক ঠায় ভেজে বাঁশের খুঁটিতে
জলে জল পড়ে বুদবুদ ভেসে যায়-
মন ভেজে, সূর জাগে দোতারার তারে।
আজও জেগে থাকি স্বপ্ন বুকে নিয়ে
বৃষ্টি ভেজা স্বপ্ন । বাঁশী জেগে থাকে
নুপূরের সুর বুকে নিয়ে । কদম্বের ফুলে
বৃষ্টির ফোঁটা ঝরে, বিরহের কাব্য লেখা হয়।
বৃষ্টি তবু নতুনের উচ্ছলতা বয়
একই প্রেম কথা বলে বাতাসের কানে
যন্ত্রণার স্মৃতি সে কি? মানি না সে কথা
বিরহী শ্রাবণ আনে মিলনের স্মৃতি।
+++++++++++++++++++++++++++++
বৃষ্টি চেয়েছিলাম
অজন্তা রায় আচার্য্য
সেই কবে তুমি বৃষ্টি হয়ে এসেছিলে
সেদিন ছুঁয়েছি তোমায় একটু ভেজার ছলে ।
এখনতো নদীর বুকে টইটুম্বুর বৃষ্টির প্রেম
না জানি কত কত পথ তোমায় খুঁজে এলেম
কদম্ব কেশরের বুকে পূর্ণ গর্ভবাস
রাধাচূড়ার চোখে লজ্জা মাথায় বৃষ্টি মাস
তুমি বুঝি ভেসে গেছ আজ অনেক দূরে
অন্য কোনো খানেথেমেছ নোঙর করে
এই চোখের কোলে এখন মেঘ জমেছে অনেক
দুগাল বেয়ে বইছে উষ্ণ নোনা জলের রে খ
শূন্য আমার ভিতর ঘরে এক তৃষ্ণার চাতক
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শুকনো ফুল কতক
আমি জানি আমি বুঝি ওরা বোঝে না
পিয়াস নদীর ঘাটে শুধু হাহাকার কান্না
অনিকেত ঠিকানায় উড়িয়ে দিলাম চিঠি
বাষ্পের পর বাষ্প জমে আবছা কখন দিঠি
তুমি অভিমানের ভেলা বেয়ে কান্না হয়ে এলে
আমিতো চেয়েছিলাম বৃষ্টি একটু ভিজবো বলে।
+++++++++++++++++++++++++++++
পুরুলিয়া
সোমা প্রধান
অযোধ্যা পাহাড়ের গা বেয়ে গড়িয়ে এল বিকেল রংয়ের ঢেউ
তিনটি যুবক এসে দাঁড়ায়, আদর মাখে।
নাম না জানা ফুলের দল হেসে ওঠে
লাল মাটি ....মেঠো সুর, গেঁও বউ।
মহুলের গন্ধ মোড়া শহুরে পোশাকে
লকডাউন , রংরুট ক্রস কানেকশন
মাদলে বোল তোলে কৃষ্ণকলি
বৃষ্টি ভেজা পথ'' কবি' বলে ডাকে।
++++++++++++++++++++++++++++
রেশম পথ ও মিথ্যে
পবিত্র পাত্র
মিথ্যে নদীর মনের ভেতর একটা রেশমপথ রয়েছে
যেখানে যাতাযাত হাঁটে
শোনা যায় বিশ্রামের গান
জাহাজের তৃষ্ণা বেড়ে গেলে তুলসী পাতার মতো নরম
হয় জলের কবর
যার চিৎকারে ঘুম ভাঙে ধুলোবালির ।
সেই পথ
ঈশ্বরের আংটির মত
পরশ শেখায়
জাগতিক রশ্মিদের মত সইতে শেখায়
চোখ বুজে আলো দেখা সহজাত হলেও
সংযম কে
সহজাত করা কঠিন-
সেই পথ তাই তপস্যার মত কঠিন
আলোর মতো প্রতারক
আর জোছনার মত ক্ষীণ
ঠিকানা ভাসিও সেইখানে সন্দেহ ঘনিষ্ঠ হলে সম্ভাবনার মাস্তুল খুঁজে দেবে আবিষ্কারের পথ এভাবেই রেশম পথ বদলে যাবে
কষ্টি কপাটে
যেখানে পেতে পারো
ঈশ্বরের চোখ বা বৈদূর্যমণি
অনাহত চক্রব্যূহ নিয়তির সূর্য প্রস্থান মেখে রেখে মিথ্যে
নদীর মনের ভেতর !
তুমি যাবে না পথিক ?
উৎকণ্ঠা মেপে নিতে ?
+++++++++++++++++++++++++
লাল কাঁকড়ার দেশ
অনিমেষ মন্ডল
কিছুটা বালি আর কিছুটা হৃদয়ের পললভূমি জুড়ে
আলপনা এঁকে দিতো অনাবিল জাদু পথে লাল লাল পাল তুলে
ঠিক যেন তরঙ্গের মতো সমুদ্র কাননে রঙিন ঢেউ ওঠে
কোজাগরী রঙ্গলি তে ভরা সে আঙিনা জ্যোৎস্না মায়াবী....
স্মৃতিময় ঝাউগাছ মৃত বালিয়াড়ি ক্ষয়ে গেছে লোভের ঢেউয়ে
গ্রহণ লেগেছে তাতে শুধু ধূ ধূ চড়া শূন্যতা ছড়ায়
ইতিউতি কেয়া গাছ কাঁটায় কাঁটায় পুরানো ইতিকথা
কোথাও ঠেস মূল ছুঁয়ে নৌকা ভেসে যায় দূর সমুদ্রের ডাকে
এসব ভীষণ টানে তাই ছুটে আসে দিনদিন পরিযায়ী ডানা
পাড়ে পাড়ে কোলাহল সেলফির হিড়িক ওঠে সিগারেট ধোঁয়া
কোথাও ফ্রেমবন্দি অদূরে সোহাগ ফেসবুক পোস্ট লাইকি হিসেব
এত মাতামাতি দাপাদাপি গুগুলে কদর বাড়ে লাল কাঁকড়ার দেশ
তটভূমি জুড়ে ঝিনুকের খোল বিয়ার বোতল এঁটোপাতা পড়ে
মাঝে মাঝে নিরালার খোঁজে তারা দ্রুত পায়ে হাঁটে নকশা দিয়ে
মরা বালি ধূসর ঝাউয়ের মতো মুখ গুঁজে বিলুপ্ত সময়ের স্রোতে।
+++++++++++++++++++++++++
গাছ
প্রদীপ কুমার গোল
গাছের মত আপন জন
আর কে আছে ভাইরে
এসো মোরা সবাই মিলে
গাছ লাগিয়ে যাই রে
গাছ মোদের জীবন বায়ু
অক্সিজেন দেয়
বাতাসের দূষিত কার্বন
শুষে শুষে নেয়
বৃষ্টি ছাড়া ফলমূল দেয়
পাখির কলতান
খরা ক্ষয় ঝড়ের থেকে
আমাদের বাঁচান
মায়ের মতো লালন করে
পালন করে মোদের
শিশুর মত যত্ন করে
রক্ষা করবো ওদের
বাঁচলে গাছ রক্ষা পাবে
সমগ্র জীবকুল
অপরিণত গাছ কেটে
করবো না কো ভুল।
++++++++++++++++++++++++
দিনটা নয় তো মন্দ
বীথিকা পড়ুয়া মহাপাত্র
আলপনা দেয় পুকুর জলে
টিপ টাপ টুপ বৃষ্টি
দিল দরিয়া পানসি ভাসাই
কৃষ্টি ভরা দৃষ্টি
ঝিলের বুকে রিমঝিম ঝিম
টুবডুবানো মন
খুশির চামর দোলায় তরু
সবুজ সবুজ বন
শিশুর দল ভিজছে জলে
চলছে ছুটি তাই
বৃষ্টিভেজা মনটা ওদের
খুশির সীমা নাই
বিপদ বারণ সব ধুয়ে যাক
বৃষ্টি তোড়ে ভেসে
সুদিন ফিরে আসুক সবাই
উছলে উঠুক হেসে
কার বাড়িতে রান্না চাপে
ইলিশ মাছের গন্ধ
টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ে
দিনটা নয়তো মন্দ।
++++++++++++++++++++++++++
এসো হে বরষা
সত্যব্রত মিশ্র
একটা মেঘ উড়ে উড়ে গেল চলে
বৈশালী থেকে সুদূর অরুণাচলে।
বৃষ্টির শীতল ধারায় প্রকৃতি হলো যে হারা
সোঁদা গন্ধে বিপুলা পৃথিবী পাগলপারা
চাষির দল যায় চলে মাঠে মাঠে
হাতে হাত ধরে তারা খুশিতে নাচে
ঘাম ঝরিয়ে মাটির বুকে কাটে রেখাচিত্র
আঁকে কত সবকিছু লাগে যে বিচিত্র
ফসলের তরে তারা করে কত আয়োজন জীবনের তরে এ ফসল সকলের প্রয়োজন কতশত সুপ্ত শস্যের বুক চিরে
সম্ভাবনার অঙ্কুর আসে সব বেরিয়ে
ফসল ফলবে কত সব চাষী জানে মনে
চাষী বউয়ের বায়না টা হয় কিন্তু সংগোপনে ।
হঠাৎ আকাশ নীল তপ্ত চারিধার
চাষিদের স্বপ্ন সব ভেঙ্গে হয় চুরমার
আকালের কাল এই যে বৃষ্টির নাই দেখা
সব মেঘ উড়ে উড়ে গেল যে কোথা ?
আগে কখনো ঘটেনি তো এমন ধারা
ভাবে চাষী না পায় কূল হয় দিশাহারা
হেথা বর্ষার দেখা নাই চারিদিকে হাহাকার এসো হে বরষা ,এসো এসো, প্রার্থনা সবাকার।
+++++++++++++++++++++++++++
চলরে খোকা গাছ লাগাই
সুজাতা বেরা
ওই যে দূরে যাচ্ছে দেখা সবুজ জামার গাছগুলো -
একটা পাতা ছিড়িস যদি খাবিই তোরা কানমুলো।
দেখ রে খোকা কেমন ওরা দুহাত তুলে দাঁড়িয়ে আছে
এই জগতের আর কটা লোক বলরে পাবি এত্তো কাছের ?
ফল দিয়ে দেয় ,ফুল দিয়ে দেয়, সব দিয়ে দেয় শরীর থেকে
কিসের রাগে কষ্ট দিবি এমন ভালো বন্ধুটাকে ?
ইস্কুলে যাস ,বেঞ্চে পড়িস, রাতে ঘুমাস পালঙ্ক খাটে
আমার কেবল মাথার ভেতর বন্ধু নামের বৃক্ষ হাঁটে
চলরে সোনা নিয়ম মেনে গাছ লাগাই আর গাছ বাঁচাই
সুস্থ জীবন গড়তে হলে গাছের সাথে সখ্যতা চাই।
++++++++++++++++++++++++++++++
মুখোমুখি
পার্থ প্রতীম মিশ্র
এই দুপুর বয়স মোছে কাঁচপোকা রং -আদর আহ্লাদ -মগ্ন
ভাতঘুম ...
মন্দাক্রান্তা ছন্দে দুপুরের পায়ে পা রেখে চলে আসি
ভাঙাচোরা পুকুর ঘাটে
পিঠে পিঠে, পা ছড়িয়ে সুখ দুঃখ কথা কই কাটাকুটি খেলি....
চৈ চৈ ডাক জলকেলি - ডুব সাঁতার খেলা শেখায়।
শিরীষ গাছে ঠোকরানো কাঠের শব্দ মন টানে ।অদৃশ্য
পোকাদের প্রকাশ্যে আনার সম্মোহন মন্ত্র শিখে নি ই
কাঠঠোকরার কাছে......
এদিকে বাবলা তলায় রামধনু রং ছড়িয়ে নেশা ধরিয়ে দিব্যি
জল কাঁচে মুখ দ্যাখে মাছরাঙা, না না
অর্জুন পাখি। জলের
নিচের চলাচল মনঃসংযোগ, গতিবেগের অংক ওর জলবৎ -
এইসব কুড়োতে কুড়োতে সূর্য গেল পাটে। ছেড়ে যাবে ও ।
আমিও ফিরবো ঘরে ...
চিন্তা নেই আর । অন্ধকার যতই গাঢ় হোক , কুড়োনো রসদ
দিয়েই জ্বালবো পান্ডুলিপি .......
±+++++++++++++++++++++++++
সুস্থ পৃথিবীর আশ্বাসে
শ্রীলিম
হঠাৎ আকাশে ঘন কালো মেঘ এলো ভেসে চারিদিকে নিস্তব্ধতা ও অজানা আশঙ্কায়
বিষন্ন আর ক্লান্ত বুকে জমে থাকা ব্যথা ও উঠল বুঝি ভেসে আঁখির আকাশে
কি দিন ই বা ছিল অতীতে কাটানো দিন প্রিয়জনের অম্লান স্মৃতি ছবিতে বিভোর
এই বর্ষায় অবিরল ঔদাসীন্যে থাকা হৃদয় অতীতে যা গেছে তা ছিল সবকিছুই রঙিন
আজকের মেঘলা আকাশের নিচে
জোড়া শালিকের পাখায় জলের ধারা
হাতছানি দেয় পুরনো দিনের স্মৃতি
আমরাও ছিলুম আশা ভরসায় বেঁচে
এই দুঃসময়ে মহামারী করোনার ত্রাসে -
বিস্তর ব্যবধানে দুই হৃদয় দুই পৃথিবীতে বাঁচে আর জমানো হাজার স্মৃতির জাবর কাটে আবার সুস্থ হবে পৃথিবী তাদের এই আশ্বাসে।
++++++++++++++++++++++++++++++++
ছেঁড়া পাতা
পার্থিব মাইতি ( দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র)
চারিদিকে চেয়ে দেখি
গাছেদের হাহাকার
নিরীহ সজীব তারা
বলছে বন্ধ করো এ অত্যাচার।
হে মহান মানব জতি
তোমরা কি ধ্বংস করছো মোদের ?
নাকি নিজেদের !
আমোদ প্রমোদের নেশায় তোমরা
অম্লান বদনে মৃত্যু কোলে ঢলে পড়ছো ।
একদিন তোমরা ছিলে ছোট
প্রকৃতির মায়ের কোলে
খেলেই বড় হয়েছো
আর আজ !
উন্মত্ত তোমরা , তারই ধ্বংসলীলায় !
বন্ধ করো তোমাদের এই ধ্বংসলীলা
মনে রেখো
এই ধ্বংস লীলা তোমাদের সৃষ্টি
তোমরাই ধ্বংস হবে এতে ।
বাঁচতে আর বাঁচাতে যদি চাও
বৃক্ষ ছেদন রোধ করো
নচেৎ থাকবে শুধু
কিছু ছেঁড পাতা !
++++++±++++++++++++++++++
গাছ
অন্বেষা ভৌমিক (দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী)
ধোঁয়ার পৃথিবীতে শ্বাস নেয়
অসুস্থ সমাজ
ঘন কালো ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন
পৃথিবীর বুকে
নিদ্রিত মৃতপ্রায় সভ্যতায়
জেগে থাকে কেবল
বিধ্বস্ত গাছের সারি
সবুজের সমারোহে
মুমূর্ষু মানুষ খোঁজে
আশ্রয়
বিষাক্ত বাতাস ভেসে আসে
ক্লান্ত মানুষের বিলাপ
আর মৃতপ্রায় পাখির অসহায় অভিশাপ
ধোঁয়া ধূলি আর
উত্তপ্ত পৃথিবীর বুকে
দাঁড়িয়ে থাকে
সবুজ ফ্যাকাশে গাছ
সে শুষে নেয়
সভ্যতার সমস্ত অভিশাপ
সে আশ্রয় দেয়
সমস্ত জীব কে
সবুজ পাতা ঢেকে যায়
ধুলো ধোঁয়ায়
অক্ষম বৃদ্ধ
মানুষের সমাজের পাশে
সে দাঁড়ায়
বিবর্ণ বিদীর্ণ পাতাগুলো
আশ্রয় দেয় মানুষকে
সবুজ নরম কাণ্ডে
বাসা বাঁধে পাখির দল
মৌমাছির দল উড়ে বেড়ায়
সমস্ত বন জুড়ে
উদাসীন মানুষ ভিড় করে
কুঠার হাতে
নির্বাক সবুজ গাছগুলো
যখন তাকিয়ে থাকে
তার প্রথম ফসলের দিকে
খরার বীভৎসতায় যখন কঙ্কালের দল
পায়ে পায়ে পথ চলে
প্রকৃতির উপহাসে
সবুজ জাগে
সে মেটায় পৃথিবীর ক্ষুধা
আর অপেক্ষা করে
নিজের আহুতির ।
*************************""***************----------------------------------------
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ পক্ষে -
সভাপতি - সর্বশ্রী অঞ্জন কুমার দাস।
যুগ্ম সম্পাদক - বিভাস জানা ও
বিনীতা জানা
পরিকল্পনাও প্রকাশনায়- ড. বিষ্ণুপদ জানা.
কৃতজ্ঞতা স্বীকার - শ্রীমতি নীলিমা জানা।
কৃষ্ণনগর, খেজুরী, পূর্ব মেদিনীপুর,
পিন -৭২১৪৩২. মোঃ ৯৬৭৯৪৫০২৪৫
মেল --janabishnupada99@gmail.com.
Whatsapp - 9679450245.
¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
No comments:
Post a Comment