Monday, 3 August 2020

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
             কবি পি.বি.শেলীর কাব্যাদর্শ
             (04.08.1792 - 08.07.1822)
==============!!!!!!!!!!!!============ Doinik Sabder Methopath
Vol -89.Dt- 04.08.2020
১৯ শেষ শ্রাবণ,১৪২৭.মঙ্গলবার
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆


                 Percy Bysshe Shelley

কবি শেলী (১৭৯২-১৮২২) তাঁর ' The Defence of Poetry' বা কাব্যের স্বপক্ষে প্রবন্ধটি(রচনা ১৮২১; প্রকাশ ১৮৪০) শেষ করেছেন একটি মহৎ উক্তি দিয়ে : "Poets are the unacknowledged legislators of the world ". শেলী ছিলেন গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর ভক্ত। প্লেটো কিন্তু তাঁর রিপাবলিক কবিদের নির্বাসন দিয়েছেন এই যুক্তিতে , যে রাষ্ট্র ক্ষেত্রে কবিদের কোন উপযোগিতা নেই- কেননা তারা অলস কল্পনাবিলাসী ও কর্মবিমুখ. এইভাবনাটি কিন্তু এখনও আমাদের সমাজে খুবই প্রচলিত.। শেলী উল্টো যুক্তি দিয়ে প্রতিপন্ন করলেন ,কবিরা তাঁদের সৃজনশীল কল্পনা দিয়েই মানবিক অনুভূতি গুলোর প্রকাশ ও প্রসার ঘটান এবং এই শক্তির জন্যই সুন্দর ও কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের জন্য কবিদের প্রয়োজন । তাঁরাই যথার্থভবে তাঁদের মঙ্গল দৃষ্টির সৌজন্যে জনগণভাগ্যনিয়ন্তা হতে পারেন। শেলীর বন্ধু টমাস লাভ পিকক্ তাঁর " The four ages of Poetry' তে (১৮২০)  কবিতার উপযোগিতা অস্বীকার করলে শেলী তাঁর  - The Defence of Poetry' প্রবন্ধটি বিরুদ্ধে যুক্তি খাড়া করে লেখেন  একথা ঠিক যে ওয়ার্ডসওয়ার্থের -" The Lyrical Ballads' বা কোলরিজের " Biographia Literaria ' র মত কাব্য বিষয়ক আলোচনার সূক্ষ্মতা -"The Defence of Poetry' তে পাওয়া যায় না‌ । তবে শেলী তাঁর রোমান্টিক কল্পনা দৃষ্টিতে সমাজের ওপর কাব্যের প্রভাব , কবির অনুপ্রেরণা ,নৈতিক উৎকর্ষবিধানে কবির দান,  সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের পটভূমিতে কবির ভূমিকা , ভবিষ্যৎ বক্তা হিসেবে কবির প্রজ্ঞা দৃষ্টি - এইসব নিয়ে তাঁর যুক্তিবাদী অনুশীলন করেছেন প্রবন্ধটিতে।  ফিলিপ সিডনির  " An Apology for Poetry ' র মতো তাঁর প্রবন্ধটির বিষয় মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে শেলীর প্রতিবাদী ও বিদ্রোহী চেতনা কাজ করেছে কবিতার স্বপক্ষে বলতে গিয়ে। তিনি বস্তুতপক্ষে স্টিফেন গসন্ এর " School of Abuse"(1579) এর কাব্য বিদ্বেষ বা মেকলের মিলটনের উপর লেখা প্রবন্ধে (১৮২৫) কবিতা সম্পর্কে ভুল ভাবনার ('As civilization advances, poetry almost necessarily diclines') যুক্তিগ্রাহ্য প্রতিবাদ করেছেন তাঁর প্রবন্ধে।
           শেলীর ' The Defence of Poetry' প্রবন্ধের মূল বিষয় হলো,  কবিদের সৃজনশীল কল্পনা শক্তির মহিমা প্রকাশ । কাব্যের সংজ্ঞা হিসেবে এক কথায় বললেন- "the expression of the imagination". রোমান্টিকতার মুখ্য লক্ষণ এটি।  ব্লেজ থেকে ওয়াটসওয়ার্থ কোলরিজ প্রমুখ সকল রোমান্টিক কবি ই বিশ্বাস করতেন। বিচার শক্তি মানুষকে শৃঙ্খলিত এবং সংকীর্ণ করে,  অপরদিকে কল্পনাশক্তি এনে দেয় মুক্তির আস্বাদ ।আমাদের উপনিষদ বলেছেন "নায়মাত্মা প্রবচনেন লভ্যো ন মেধয়া ন বহুনা শ্রুতেন' (কঠ ১/২/২৩) পরাতত্ত্ব যুক্তি , মেধা বা শাস্ত্রানুশীলনের দ্বারা লাভ হয় না । শেলী মনে করতেন কল্পনাই আমাদের সত্যের প্রকৃত স্বরূপের কাছাকাছি নিয়ে যেতে সক্ষম । প্লেটোর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শেলীর বিশ্বাস ছিল , কবির কল্পনা শক্তিই তাঁকে ঐশী শক্তির সংস্পর্শে নিয়ে আসতে পারে এবং এ জন্যই তিনি সাধারণের চেয়ে গভীরভাবে সত্যকে দেখতে অনুভব করতে পারেন।
                       শেলীর সকল অনুপ্রেরণার উৎস হল-"intellectual beauty ' বা আত্মিক সৌন্দর্য । তাঁর কাছে কাব্য হল সেই দর্পণ যা বিকৃতকেও সুন্দর করে। তাঁর কাব্যের স্বপক্ষে তো বলেছেন কাব্য পৃথিবীর উপর থেকে পরিচিতির পর্দা সরিয়ে রূপের অন্তরাত্মাকে উন্মোচিত করে। রবীন্দ্র ভাষ্যে " অরূপ বীণা রূপের আড়ালে লুকিয়ে বাজে' উপনিষদের ভাষায় " হিরণ্ময়েন পাত্রেণ সত্যস্যাপিহিত  সুখম্।  তত্ত্ব  পূষন্নপাবৃণু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে ।।' (ঈশ -১৫) এই রূপের জগতে যা কিছু সুন্দর ও শুভ সেই সব কাব্যের লক্ষ।  কাব্য আমাদের বিষয় ও সাংসারিক জগতের ঊর্ধ্বে  নিয়ে যায় এবং প্রেম প্রীতি নৈতিক আদর্শ স্বদেশপ্রীতি তে উন্নীত করে। তাঁর কথায়- a poem is the very image of life expressed in its eternal truth ' কাব্যের নৈতিকশক্তিতে ছিল শেলীর গভীর বিশ্বাস এবং সমস্ত নীতির মূলেই দেখেছেন প্রেমও মানবপ্রীতি। তাঁর "  The Revolt of Islam ' কাব্যের ভূমিকায় লিখেছেন - Love is   celebrated everywhere as the sole law which should govern the  moral world '  তিনি তাঁর কাব্যে নীতিপ্রচার করেন নি কিন্তু ভালোবাসা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর মূলমন্ত্র এবং সকল নীতির আধার।
                    শেলীর মুখ্য কবিতাগুলিতে তাঁকে আমরা মানবতার পূজারী ও সর্বতো  শৃংখল মোচনকারী স্বপ্নদ্রষ্টা রূপে দেখতে পাই । যেমন তাঁর "  Prometheus Unbound '  গীতিকাব্যধর্মী নাটকে স্বেচ্ছাচারী জুপিটারের পতন ও অগ্নি অপহরণকারী মানব বন্ধু প্রমিথিউসের বন্ধন মোচনের  মধ্য দিয়ে শুভ শক্তির বিজয় ঘোষিত হয়েছে : 
The loathsome marks has fallen,  the man remains sceptreless  free , uncircumstancesbed,  but man equal unclosed tribeless and mationless ....." ফরাসি বিপ্লবের লিবার্টি ইকুয়ালিটি ও ফ্রেটারনিটির আদর্শে শেলী গভীরভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস হারান নি : সুদিন ও রামরাজ্যের স্বপ্ন দেখেছেন তাঁর  দা রিভোল্ট অফ ইসলাম  দীর্ঘ কাহিনী কাব্যে বিপ্লবের নীতিতে অবিচল নিষ্ঠা প্রকাশ পেয়েছে । কোন ও বিধি-নিষেধ নয়,  নৈতিক জগতে ভালোবাসাই একমাত্র বিধান ঘোষিত হয়েছে। এই কাব্যের নায়ক নায়িকা লেওন ও সিথ্ না  আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে মানবের মঙ্গলের জন্য আত্মোৎসর্গ করেছে।  মাত্র 18 বছর বয়সে রচনা " কুইন ম্যব " কাব্যে তিনি শ্রেষ্ঠধর্ম , ব্যক্তিগত মালিকানা , বিবাহ ইত্যাদি বিষয়ে প্রচলিত প্রথা ও প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর গীতিকবিতা গুলির মাধ্যমে ও মানবিকতার আদর্শে অনুপ্রাণিত ভবিষ্যৎ দ্রষ্টারূপে তাঁকে দেখতে পাই। তাঁর Ode to the west wind কবিতায় ধ্বংসের  মধ্যেও নবসৃষ্টির আশাবাদ ধ্বনিত -"  If winter comes can spring be far behind ". 
                      শেলী ছিলেন তাঁর স্কাইলার্ক এর মতই নভোচারী ও স্বপ্নদ্রষ্টা। বিপ্লবে কখনোই বিশ্বাস হারান নি তিনি।
 তাাঁর নায়কেরা লেওন বা প্রমিথিউসের মত উদারচেতা,  স্বার্থহীন , মানবপ্রেমিক ও মানব কল্যাণে আত্মবিসর্জন প্রস্তুত। তাঁর নাস্তিকতা প্রচলিত ধর্মের বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি প্লেটোর মতই বিশ্বাস করতেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আনন্দময় সত্ত্বায়়।
আধুনিক কাব্য প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ যথার্থ লিখেছেন -" শেলীর ছিল প্লেটোনিক ভাবুকতা। তার সঙ্গে রাষ্ট্রগত ধর্মগত সকল প্রকার  স্থূল  বাধার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ" ।  নিজের‌ই ছায়াতে তিনি কবি ও কবিতার মর্যাদা দিয়েছেন। রাষ্ট্রব্যবস্থায় তাঁদের অবশ্যম্ভাবী প্রয়োজনের কথা বলেছেন। কবিরা ভাবুক হলেও সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিকল্পনায় তাঁরা অনন্য জ্ঞান ও স্বপ্নের অধিকারী।  তাঁদের সত্য দৃষ্টি ও মানব কল্যাণ সমাজের কাছে তাঁদের অপরিহার্য করে তুলেছে । তাই  Unacknowledged legislators of the world ' , স্বীকার করা হোক বা না হোক তাঁরা মানবপ্রেমিক ও মানবসেবক । 
==============০০==============
ব্যক্তিজীবন : 
 ইংল্যান্ডের সাসেক্স  নিকটবর্তী
ফিল্ড প্লেসে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা টিমোথি শেলি ছিলেন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত মানুষ। সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম হলেও পিতার ইচ্ছা অনুসারে তিনি বাল্যকাল অতিবাহিত করেন নি। পিতা চেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের অন্যতম গণ্যমান্য ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হবেন কিন্তু কবির অন্তরে লালন পালন করেছে কবিতার রহস্যময় জগৎ ।মাত্র 10 বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হলেও বেশি দিন স্কুলে থাকতে পারেননি শাস্তি ও  পড়াশোনার চাপ তাঁর কাছে নির্মম মনে হয়েছে নরক যন্ত্রণা তুল্য।  12 বছর বয়সে তিনি এখন বিদ্যালয়ে ভর্তি হন । মেড শেলী আখ্যা ঘোষিত হলেও ওখানকার অত্যাচার পরবর্তীতে বিদ্রোহী সত্তার জন্ম দিয়েছে। পরে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি তে পড়াশুনা ।ভৌত বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে আগ্রহ। হিউম দর্শন পড়ে বন্ধু ডিজে হক এর সঙ্গে প্রথম পত্রিকা প্রকাশ করেন । সে যুগে নাস্তিকতা প্রচার করা ভয়ানক অপরাধ তাই দুই বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। পড়াশোনার ইতি পড়ে।

            প্লেটোর প্রভাবে সমাজ বিপ্লবে যখন মগ্ন তখন পরিচিত হলো এক হোটেল মালিকের কন্যা হ্যারিয়েট ওয়েস্ট ব্রুক এর  সঙ্গে। পরে উনাকেই বিবাহ করেন। বিদেশ ভ্রমণ সেরে লন্ডনে ফিরে আসেন কন্যা আয়ানথ ও পুত্র চার্লস কে রেখে - বিবাহ বিচ্ছেদ। দ্বিতীয় পত্নী  গডউহনের  কন্যা মেরি। বসবাসের জন্য সুইজারল্যান্ড চলে যান পরে আবার লন্ডনে ফিরে আসেন- উইলিয়ামের জন্ম হয়. স্বাস্থ্যের অবনতি. গ্রীষ্মপ্রধান দেশে ইটালি যাত্রা, ওখানে ডন জুয়ান চড়ে সমুদ্রে ভ্রমণকালে সামুদ্রিক ঝড়ে বোট ডুবে যায় ।এক সপ্তাহ পরে মৃতদেহ পাওয়া যায় । ভায়ারেগিও তে সমাধিস্থ করা হয় এবং সমাধির উপরে লেখা থাকে - "Cor Cordium.".।

রচনা সমূহ : 
 * Queen Mob( 1812-1813)
* Alaster or the spirit of solitude -1816
(1810)         Zastrozzi

 prose 

  • "The Assassins, A Fragment of a Romance" (1814)
  • "The Coliseum, A Fragment" (1817)
  • "The Elysian Fields: A Lucianic Fragment" (1818)
  • "Una Favola (A Fable)" (1819, originally in Italian)

Essays

                       লেখক : 
 শ্রী রনজিত কুমার নায়েক
প্রাক্তন অধ্যাপক (ইংরেজি)
মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর মহাবিদ্যালয়
বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক  এবং গল্পকার।
££££££££££££££££££££££££££££££££

No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...