¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
কবি দিনেশ দাস
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
Doinik Sabder Methopath
Vol - 130. Dt -16.9.2020
৩০ ভাদ্র,১৪২৭. বুধবার
=================================
আদিগঙ্গার তীরে আলিপুরের চেতলা অঞ্চলে মামাবাড়ীতে (৬৫ এফ জয়নুদ্দি মিস্ত্রি লেন, কলিকাতা - ৭০০ ০২৭) দিনেশ দাসের জন্ম ১৯১৩ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর। বাবার নাম হৃষিকেশ দাস, মা কাত্যায়নী দেবী। ওনারা তিন ভাই ও এক বোন। সপ্তম শ্রেণীতে পড়বার সময়ে, বারো বছর বয়স থেকে দিনেশ দাস ছড়া লিখতে শুরু করেন। নবম শ্রেণীতে পড়বার সময়ে ১৫ বছর বয়সে উনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পাশাপাশি ১৯৩০ সালে দিনেশ দাস ম্যাট্রিক ও ১৯৩২ সালে আই-এ পাস করেন। এরপর ১৯৩৩-৩৪ সালে উনি স্কটিশ চার্চ কলেজে বি এ ক্লাসে ভর্তি হন। যদিও বিপ্লবী সমিতির কাজ ও কাব্যসাহিত্য চর্চার চাপে বি এ পরীক্ষা দেওয়া হয় না ওনার। পরে নতুন করে কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৩৮ সালে উনি বি এ পাস করেন।
১৯৩৪ সালে দীনেশ দাসের প্রথম কবিতা ‘শ্রাবণে’ দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৩৫ সালে উনি কার্শিয়াং-এর খয়াবাড়ি চা বাগানে চাকরিতে যোগ দেন। এক বছরের মাথায় ১৯৩৬ সালে উনি কলকাতা ফিরে আসেন। কলকাতায় ফিরে উনি ‘প্রথমবৃষ্টির ফোঁটা’, ‘মৌমাছি’, ‘নখ’, ‘হাই’, ‘চায়ের কাপে’ সহ একেএকে নানা কবিতা লিখতে থাকেন। তখনও তাঁর কোন কবিতা সংকলন প্রকাশিত না হওয়া সত্বেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ওনার ‘বাংলা কাব্য পরিচয়’ সংকলন গ্রন্থে ‘মৌমাছি’ কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করেন।
ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র শ্রমিক, কৃষক ও সকল মেহনতী জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ জয়ী হতে পারে এই বিশ্বাস থেকে ১৯৩৭ সালে দিনেশ দাস রচনা করেন ‘কাস্তে’ কবিতাটি। এই কবিতাটি আধুনিক বাংলা কবিতার এক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায় এবং তিনি প্রায় রাতারাতি মেহনতী মানুষের জীবন-যন্ত্রণা প্রকাশের মুখপাত্র হয়ে ওঠেন। ‘কাস্তে’ কবিতায় শুক্লপক্ষের পঞ্চমীর বাঁকা চাঁদটাকে তিনি শ্রমজীবী কৃষকের ফসল-কাটার ক্ষুরধার অস্ত্র কাস্তের সঙ্গে তুলনা করেন। যে চাঁদ এতকাল কাব্যজগতে প্রেম ও সৌন্দর্যের লাবণ্যময় প্রতীক ছিল তাঁকে তিনি খেটে-খাওয়া মানুষের সংগ্রামের হাতিয়ার করে তুললেন। এমন একটি বৈপ্লবিক চিন্তার তিনিই পথিকৃৎ ।ব্রিটিশ সরকারকে ধোঁকা দিতে পরিকল্পিতভাবে হাতুড়ি শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও সরকারের ভয়ে এক বছর ‘কাস্তে’ ছাপার মুখ দেখেনি। ১৯৩৮ সালে কবিবন্ধু অরুণ মিত্রের সৌজন্যে তা আনন্দবাজার শারদীয়ায় প্রকাশিত হয়। পরে পুলিস তার বাসস্থান তল্লাশি করে এবং তাকে লর্ড সিন্হা রোডে আটকে রাখা হয়।
১৯৩৯ সালে উনি ক্যালকাটা ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে (পরে নাম হয় এল আই সি) যোগ দেন। সাত বছর চাকরির পর ১৯৪৬ সালে কর্মস্থলে ইউনিয়ন গড়তে গিয়ে বাধা পেয়ে উনি কাজে ইস্তফা দেন। এই সময় উনি দৈনিক কৃষক ও মাতৃভূমি কাগজে কিছুদিন কাজ করেন। চলচিত্রে গীতিকার ও সহ পরিচালকের কাজেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৮ সালে হাওড়া জেলার দেউলপুর বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কাজ নেন উনি। এক বছর পর কলকাতায় ফিরে এসে স্থায়ীভাবে চেতলা বয়েজ স্কুলে বাংলার শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন।
দিনেশ দাসের প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল ---
ভুখা মিছিল; কাচের মানুষ; রাম গেছে বনে; কাস্তে প্রভৃতি। দিনেশ দাসের ‘কাস্তে’ কবিতাটি এক সময়ে পথেঘাটে কফি হাউসের চত্বরে যুবক যুবতীদের মুখে মুখে ফিরত। কলকাতার ক্লাইভ স্ট্রিট তাঁর কবিতার কল্যাণে সাহিত্যে চিরস্মরণীয় হয়ে গেছে। আর দিনেশ দাস পরিচিতি লাভ করেন ‘কাস্তেকবি’ হিসাবে।
১৯৬১ ও ১৯৭৪ সালে দিল্লিতে জাতীয় কবি সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি কবি রূপে আমন্ত্রিত হন উনি। ১৯৬১-এ উনি আর্থারাইটিস রোগে আক্রান্ত হন।
১৯৮৫ সালের ১৩ই মার্চ কবি দীনেশ দাস গোপালনগরের পিতৃগৃহে (৪/১ আফতাব মস্ক লেন) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯৫৯ সালে প্রকাশিত দীনেশ দাসের প্রথম শ্রেষ্ঠ কবিতা সংকলন ‘উল্টোরথ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়। ১৯৮০ সালে ওনাকে নজরুল আকাদেমি থেকে প্রথম নজরুল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ওনার শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘রাম গেছে বনবাসে’র জন্য দীনেশ দাস ১৯৮২ সালে রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত হন।
দীনেশ দাস ১৯৩৯ সালে ঢাকার উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী যামিনী বিশ্বাসের তৃতীয়া কন্যা শ্রীমতি মণিকা বিশ্বাসকে বিয়ে করেন। ওনাদের দুই পুত্র শান্তনু ও ভারবী এবং এক কন্যা জোনাকি।
+++++++++++++!!!!¡!!!!!¡!!+++++++++++++++
No comments:
Post a Comment