Tuesday, 29 September 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆ ২০০ ∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
            দ্বিশত জন্মবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে
           বিদ্যাসাগর মহাশয়ের চরণ কমলে
                           নিবেদিত

                     "কবিতা সংকলন"
============== ২০০ =============
               Doinik Sabder Methopath
                 Vol -145. Dt-29.9.2020
                   ১২ আশ্বিন,১৪২৭. মঙ্গলবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷!!!!!!!২০০!!!!!!!÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
সম্পাদকীয় কলমে -
        আজ ১২ ই আশ্বিন, মঙ্গলবার। দ্বিপ্রহর। বঙ্গাব্দ ১৪২৭ ।
     জীবনটা ভাঙতে ভাঙতে সাগরের কিনারে এসে দাঁড়ায়। আধুনিক যান্ত্রিক জীবনের ঘেরাটোপ নয়, সাংসারিক অভাব-অনটন নয় , মনের বিকার ও নয়, কোন এক আদর্শের অনাদর্শ কাজকর্ম কিংবা ব্যক্তিত্বের টানাপোড়ন, সত্যের বিকৃতি, কথায় ও কাজের অসংগতি - আমরা যে ভাবেই ধরি না কেন ! কঠোর জীবন সাধনার অনাড়ম্বর দেহাতি ধুতি-পাঞ্জাবি পরা, বাংলা ভাষা ও বাঙালির জীবন বর্ণপরিচয় পরিচিত মুখ, জলের মত সরল কোমলমতি বিদ্যাসাগর মহাশয় দ্বিশত জন্মবর্ষে পূর্তি উপলক্ষ্যে নিবেদিত কবিতা সংকলন গুনমুগ্ধ অনেকের লেখায় সমৃদ্ধ। দৈনিক শব্দের মেঠোপথ পত্রিকা সেই সংখ্যা প্রকাশ করে আনন্দিত ও গর্বিত। লেখকদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।
               ড. বিষ্ণুপদ জানা
                 সম্পাদক
     দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
                বিশেষ সংখ্যা
        ১২ ই আশ্বিন, ১৪২৭। ১২.০৫ মি.
             ২০১ তম জন্মদিন।

=============== ২০০ ==============
বিদ্যাসাগর নাম
      লায়েক আলি খান


বর্ণমালার ঘর পেরিয়ে
উঁকি দিলেম যেই
জল পড়ে আর পাতা নড়ে
শুনতে পেলাম যেই
সত্তা জুড়ে ছড়িয়ে গেল
বর্ষাদিনের গান
তার‌ই সাথে জড়িয়ে গেল
বিদ্যাসাগর নাম।

*************************
বিদ্যাসাগরকে নিবেদিত
সঞ্জয় সোম

আপনাকে লেখা কোথা থেকে শুরু করবো!!

ঠাকুরের সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ
সাক্ষী মহেন্দ্র স্যার, মনে পড়লো ইতিহাস
কতবছর আগে ঠাকুর আপনাকে চিনেছেন
আমাদের চিনিয়েছেন
তখন তাকে সবাই পাগল বলে

নরেনের পিতৃ বিয়োগ হয়েছে
সংসারে তীব্র অভাব অনটন
নরেনের জন্য কিছু একটা করতে
ঠাকুর আপনার কাছে অনুরোধ পাঠালেন

আপনার পরিচয় আপনার কর্মজীবন
দলীয় রাজনীতি বারবার
আপনার মূর্তি ভেঙেছে
আপনাকে লিখে শেষ করা যায়?
আপনি মূর্ত থেকে বিমূর্ত
বিমূর্ত থেকে মূর্ত

আপনি বিদ্যাসাগর দয়ার সাগর
আপনার কর্মজীবন আমাদের আত্মপরিচয়

আমি শিরদাঁড়া সোজা রাখা
          আপনার কাছে শিখেছি.

=============≠==========


বিদ্যাসাগর
অরবিন্দ সরকার

ইস্পাতের মত মানসিক দৃঢ়তা
ভারতীয় বঙ্গ সংস্কৃতির প্রতি অপ্রতিরোধ্য টান
সংকল্প রূপায়নে হিমালয় কঠিন প্রতিজ্ঞা
পড়াশুনার প্রতি সহজিয়া ভাব, স্মৃতিধর
দারিদ্র্য এসেছে ,কিন্তু তার মনকে কখনো কাবু করতে পারেনি ।
সময় জ্ঞান তুখর, প্রতিবাদী কণ্ঠ
নারী শিক্ষায় নারীদের মর্যাদা রক্ষায় অমোঘ ।
অন্তর মুখী উচ্চারণ,বাংলা ভাষার মানোন্নয়নে স্থির প্রতিজ্ঞ
সাধারণ মানুষের প্রতি মায়ের মত দরদ
দু:খে ক্লিষ্টে তাদের পাশে সকল সময় ।
আকাশের মত উদারতা
গাছেদের মত ধৈর্য শীল ।

বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর আমাদের মর্ত্যলোকে র
আনন্দধ্বনি,অবিচলিত প্রবহমানতা ।

============≠=======
    
একটি আলো মৃত্যুহীন 
  অশোককুমার লাটুয়া 

জাগ্রত হৃদয়ের 
প্রাণময় প্রতিজ্ঞার শ্রদ্ধাশীল সার্বভৌম আলো 
পায়ে পায়ে হেঁটেছে 
পর্দানসিন নারীপৃথিবীর অব্যক্ত অন্তরমহলে। 
পুতুলখেলা বয়সের বালিকা বিয়ে 
বিধবা বিয়ে আর বহু বিয়ে 
সবকিছুর উপর নজর রেখে 
একটি মৃত্যুহীন আলো অন্ধবিশ্বাসের অন্ধকারের চোখে আঙুল দিয়ে 
রক্ষণশীল মাতব্বরি সমাজের 
— ধূর্ত শকুন-শেয়ালের   
 দেয়াল ভেঙে দিয়ে 
গড়েছে মানবিক শতাব্দীর আধুনিক সংস্কারের ইমারত। 

একটি আলো 
সমব্যথী আলো 
হয়ে উঠেছে ঈশ্বরের চেয়েও মহত্তম ঐশ্বরিক আলো। 
সে আলো 
বর্ণপরিচয়ের, বোধোদয়ের অভ্রান্ত আলো। 
এমন আলোর কাছে অপরিশোধ্য নতজানু ঋণ রেখে 
হেঁটে চলেছি আজও আমরা আলোর যাত্রী। 
*******************"*

সবার বিদ্যাসাগর
রাজীব ঘাঁটী

আমার ঈশ্বর বিদ্যাসাগর
মহামানবের মুখ
তাঁরই সঙ্গে সব বাঙালির
এগিয়ে চলার সুখ।

জীবন পথে চলতে গিয়েও
তাঁরই কথাই বলি
শিক্ষাগুরু ও দয়ারসাগর
তাঁরই পথেতে চলি।

সংস্কারে শুদ্ধ হয়ে সমাজ
গড়ে তুললেন যিনি
তাঁকেই আমরা আপোষহীন
মহাসাগর ই মানি।

মায়ের জন্য শ্রদ্ধা ছিল যাঁর
মন ছিল একাকার
তিনি সেই এক আর একক
সবার বিদ্যাসাগর।

=====================
বিদ্যা সাগর
মঞ্জীর বাগ

সেই জলের ফোঁটা এত অমূল্য ছিল
বোঝে নি কেউ; বুঝেছিল সেই বাল বিধবা
মেয়েটি। প্রতি একাদশীতে যাকে ফোঁটা জীবনের জন্য জিভ পেতে বসে থাকতে হোতো

আর বুঝে ছিলে তুমি বিদ্যাসাগর
প্রতি সাদা থান জড়ানো জীবন্ত লাশের 
ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু বিন্দুতে তুমি
করুণার সাগর হয়ে গেলে
যে সাগরে লোনা নেই,  কেবল এক অমৃত আশ্রয়

পড়বে বলে যে মেয়ে উনুনের পোড়া কয়লা লুকিয়ে
রাখে;সেও তো তোমার বালিকা বিদ্যালয়ে
 তোমাকে  প্রনাম করে
তুমি মুক্ত বাতাসের মতো।। সেইদিন নারী নামের
জীবন্ত লাশের  মুখে ভাষা দিলে অক্ষর দিলে

অক্ষর মালা তোমায় প্রনতি জানায়
বর্ণমালা গান হয়ে বাজে বর্ণ পরিচয়ের পাতায়

আসলে সেই বর্ষণ  রাতে তুমি দামোদরই সাঁতরাও নি কেবল।। সাঁতরেছ ঘন ব্ষার প্রবল ঢেউয়ের মতো কুসংস্কার  অন্ধকার 

 তুমি আলো থেকে আলোময় হতে হতে
এক অনন্ত আলোর সাগর হয়ে যাও
এইঅমিয় সাগরের তীরে প্রতি বাংলা অক্ষর
অমরতার গান গায়।প্রণাম জানায়

=========================
অ  ক্ষর  অথবা
খুকু ভূঞ্যা

জন্ম কান্নায় লেখা আছে অ
ক্ষর তো প্রশ্বাসের ক্ষুধা।

জীবনের চালচিত্রে যে বর্ণমালা সাজানো
আপনার চিন্তা আঁকা নানান রঙে।

সেদিন প্রথম খড়ি স্লেট
ধান সেদ্ধ করতে করতে মা লিখে দিল শুরু
বর্ণ মন্দিরে প্রবেশ করে চোখ ধুয়ে গেল আলোয়
হাসতে শিখলাম, ভাসতে শিখলাম
পিঠ সোজা হোলো হঠাৎ

মেঘ আসে ,মেঘ যায়
ঝড় আসে,বান আসে
অশনিফুলে ভরে যায় গাছ
আশ্চর্য আনন্দ বাজে স্নিগ্ধ জোসনায়
সসম্মানে বেঁচে আছি
প্রাণের মাঝে ধান দূর্বার আলো, আশির্বাদ--

=======================
  নীরব চাওয়া  
   পার্থ সারথি চক্রবর্তী 


যতবার চেয়েছি একফালি জীবন আঁকতে
                          হয়ে যায় পাখি
               উড়ে যায় কোন সুদূরে 

যতবার একচিলতে রোদ্দুর পেতে চেয়েছি
                     ধরা দিয়েছে অন্ধকার
               ঢেকে গিয়েছে চারদিক

আর যতবার একমুঠো বালি হাতে তুলেছি 
                      অজান্তে বেড়িয়ে যায় 
                কিছু বোঝার আগেই 

তাই এবার হলুদ সকাল চাইনি 
বা ভোরের আলো চাইনি

শুধু আলোর সূক্ষ্ণগতি চেয়েছি 
বালির মসৃণ নিষ্ক্রমণ চেয়েছি

অনুশীলনে যাতে রপ্ত করে নিই
                       -  নীরব  প্রস্থান

=================
শিরোনাম - "ঈশ্বরের প্রতি"
কলমে - শ্রীলিম 
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
তোমার সাথেই পাঠশালায় প্রবেশ আর বর্ণপরিচয়,
যত বাঙালির ভিত গড়ে তুমি হ‌ও নি তো ক্ষয়। 
নিজের যা কিছু অর্জিত সহাস্যে করেছিলে দান, 
তবুও পাও নি বেলাশেষের বিদায়ী সম্মান। 
স্বদেশ আর স্বদেশীয়দের সংস্রব ছেড়ে, 
মিশে গিয়েছিলে শাল পলাশ মহুয়ার ভীড়ে। 

যাদের তুমি শেখালে জীবনের সাথে লড়াই, 
বাঁচালে প্রাণ অজস্র কন্যার আর বিধবার, 
যাদের জন্য কেঁদে উঠেছিল প্রাণ অন্তরে অন্তরে,
সেইসব অঙ্কুরেরা আজকে বটবৃক্ষ প্রায়, 
কুটিল সমাজের শতবাধা পেরিয়ে বহুবার, 
তোমার শিক্ষা ভুলে ভাবের ঘরে চুরি করে। 

এখন তো হাতেখড়ি শাসকের চাটুকারিতায়, 
মাতৃভাষার বর্ণমালাকে আর থোড়াই কেয়ার করে, 
"বাংলাটা ঠিক আসে না" এই বুলি আউড়ে, 
ঝটপট আর পটাপট উত্তর দেয় বিমাতার ভাষায়।

তুমি সহ্য কর নি কারোর চোখ রাঙানি, 
অকুতোভয়ে চপ্পল দেখিয়ে জবাব দিয়েছিলে। 
আজকে যত‌ই দেখি আশেপাশে আর চারিদিকে, 
সব নতমস্তকে স্বীকার করে জড়ো করে হাত দুখানি। 

কাপুরুষেরা তোমার মূর্তি ভাঙে কালিমালিপ্ত করে, 
তারপর বিমুগ্ধ অজ্ঞ জনতার চোখে মায়াকাজল লেপে,
মিডিয়াকে সাথে নিয়ে চলে প্রতিবাদ মিছিল।
তোমার দেওয়া জ্ঞান আর শিক্ষা আলোকিত করে, 
সেইসবকে পাথেয় করে যত‌ই এসেছি এগিয়ে,
ক্রমশ ভুলতে বসেছি বাড়াতে পারি নি এক তিল!

জীবনে কঠিন পরীক্ষার সময়েও নিজেকে দৃঢ় রেখে,
নিডরভাবে মোকাবিলা করতে হবে এও তোমার‌ই শিক্ষা।
আজ শাসকের বিমাতৃসুলভ আচরণে হাহাকার ঘরে ঘরে, 
তোমার পথের পথিকেরা সম্মান চেয়েছে চায় না তো কখন‌ও ভিক্ষা!

======================
ভুবনের গল্প
শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ

স্কুল থেকে ফিরে ভুবন বলল, মাসী কোথা, মাসী কই ?
মাসী কাছে এলে, আবার বলল,মাসী এই দেখো বই।
মাসী বলে, বা বা, সুন্দর বই, এ বইটা পেলি কোথা ?
বন্ধুর বুঝি, তা বেশ তা বেশ, তোর কাছে রাখ ওটা।
এমন করেই ভুবন আনতো প্রতিদিন এটা সেটা,
তা দেখে মাসিমা বলতো, তুই এক সত্যি বাপের বেটা।
মা - বাপ না থাক আমি মাসী আছি,যদি কেউ আসে তেড়ে,
চোর বলে তোকে, আমি লাঠি দিয়ে তাকেই ফেলব মেরে।
এভাবে ভুবন যত বড়ো হলো – হলো তত বড়ো চোর,
যেদিন পুলিশ ধরল সেদিন মাসির কাটল ঘোর।
বিচারক দিল ফাঁসি ভুবনকে , ভুবন বলল, মাসী
তোমারই জন্যে আজকে আমার সুবিচারে হলো ফাঁসি।
চুরির প্রথম দিবসেই যদি ধরাতে আমার ভুল,
তাহলে আজকে আমি হতাম না সবার চক্ষুশূল।
এ বলে ভুবন হঠাৎ মাসির হাত ধরে দিল টান,
কানে কানে কথা বলার ছলেতে কেটে নিল তার কান।
বলো তো ছেলেরা বলো তো মেয়েরা, এ গল্প লেখা কার ?
এ বছর যাঁর দ্বিশত বছর এ গল্প লেখা তাঁর।
তাঁর নাম হলো ঈশ্বর আর পদবী বিদ্যাসাগর,
শুনে ছোটদের সকলের চোখ বিস্ময়ে হলো ডাগর।

===================
ঈশ্বরের ছাতা
শ্যামাপ্রসাদ লাহা


আদর্শ আহবানে এসে দেখি-
শিক্ষার শরীর জুড়ে এখন শুধুই মেকি।
সিলেবাসে বোধোদয় আসুক
দয়া পড়ুক ঝরে;
তবেই তো আসবে জ্ঞান
সবাকার হৃদ মাঝারে।
তোতা পাখি উড়ে যাক
প্রদীপ জ্বলুক জ্ঞানের
নম্বরগুলো নিপাত যাক
মূল্যায়ন হোক শুধু মানের।
নারী শিক্ষায় আসুক জোয়ার
বিদ্যাসাগর নামে-ki
সংস্কারের আসবে চিঠি
কথামালার খামে।
পরিচয় হোক বর্ণে আবার
বাঙালি তুলুক মাথা-
প্রখর রোদে ও ভয় কি আর
মাথায় যখন ঈশ্বরের ছাতা।

========================
তোমার মুখে আমার মুখে
   মনোতোষ আচার্য

তোমার মুখে আমার মুখে 
শুধুই একটি নাম
চলার পথে সাহস জোগায়
বীরসিংহ গ্রাম।

সিংহশিশু বিদ্যাসাগর
পরান জয়টিকা
আলোর পথে পা বাড়ালেন
ভারতমাতৃকা। 

বজ্রদৃঢ় বুকের পাটা
 করুণ কোমল মন
মানুষের সাথে মানুষের পাশে
আছেন সর্বক্ষণ। 

ভীষণ ঝড়ের গহন রাতে
আঁধার পাতালপুরে
মায়ের কান্না উঠলো ভরে
বঙ্গ আকাশ জুড়ে ;

ঠিক তখনই বুক পেতেছেন
পৌরুষেরই বিভা
আশায় ভাষায় মুক্তপ্রাণ
সাগর প্রতিভা।

দু'শো বছর পেরিয়ে গেল
পূরল নাকো অভাব
আমরা আজও সেই পরাধীন
কতকটা যে স্বভাব।

বিদ্যাসাগর অদ্বিতীয়
ধূলায় ধূসর চটি
তফাত শুধু মেরুদণ্ডে
মানুষ বড়ই খাঁটি। 

আমরা যারা পথ হেঁটেছি
তাঁর ছায়াতে ঋণী
মানুষ খুঁজি তাঁরই মতো
মহাত্মা মেদিনী। 

তোমার মুখে আমার মুখে  
মৃত্যু বিজয় নাম
হাজার বাধা লক্ষ বিবাদ
কাটবে মধ্য-যাম।       

====================≠==
প্রনমী তোমায় বিদ্যাসাগর
      দেবাশিস চক্রবর্ত্তী

মেদিনীপুরের পূণ্যভূমি
 বীরসিংহ গ্রামে,
জন্মেছিলেন সিংহ শিশু
বিদ্যাসাগর নামে ।

ঠাকুরদাস আর ভগবতীর
আদুরে সন্তান ,
বাড়িয়েছিলেন ঞ্জানের তেজে
বঙ্গভূমির মান ।

তখন হাজার বঞ্চনাতে 
জর্জরিত নারী,
বিদ্যাসাগর মুক্তির পথ
দেখালো তাদেরই ।

শিক্ষা এলো, আইন হলো
বিধবাদের জন্য ,
বুঝলো সবাই এই ভারতে
নয়কো নারী পণ্য ।

মানবতার মূর্ত প্রতীক
দয়ায় ভরা হৃদয়,
দু - শ বছর জন্মদিনে
প্রনমী তোমায় ।

======================
বিদ্যাসাগর-দয়ার সাগর।
প্রেমেশ পন্ডা 

বিদ্যাসাগর বুদ্ধি প্রখর 
মেধাতে ভরপুর।
পড়াশুনায় সবার সেরা
ছিলেন ভীষন চতুর। 

মর্যাদাবোধ সহজাত 
মেরুদণ্ড সোজা,
ন্যায় অন্যায় সচেতনে
ছিলেন না চোখবোজা। 

মা যে তাঁর ভীষন আপন,
মা'ই তো ভগবান,
মায়ের ডাকে বাড়ি আসতে 
দামোদর সাঁতরান। 

ভগবতী মা দয়ালু ছিলেন
ছিলেন ভাগ্যবতী,
নারী শিক্ষা, বিধবা বিয়ে
ছিল তার সম্মতি। 

বিদ্যাসাগর বেঁটে খাটো
বজ্রকঠিন স্বভাব।
জাতিবোধে,জাতিয়তায়
ছিল না কোন অভাব। 

ইংরেজদের রক্তচক্ষু 
মানতে না তিনি
তোষামুদি নয় প্রতিবাদে
সমুজ্জ্বল ইনি।

নারী অশিক্ষা বহুবিবাহের
চরম বিরোধিতায়, 
বিধবা বিয়ে আইন করলেন
ইঃরাজ সহায়তায়।

সমাজগঠনে উন্নয়নে 
তিনি সজাগ ছিলেন।
শিক্ষাহোক সবার জন্য
এটাই চেয়েছিলন। 

সংস্কৃততে তাবড় ছিলেন,
ইরাজি ও জানতেন,
গদ্যরূপে বাংলাকে তিনি
নতুন রূপ দিলেন। 

নারী অশিক্ষা কুসংস্কার
সমাজ দূষন করে,
তাই তো তিনি স্কুল খুললেন
গ্রাম -গঞ্জে শহরে। 

বিদ্যাসাগর, দয়ার সাগর
হৃদয় উদার ছিলেন,
দানধ্যান আর মানবতায়
হৃদয় জিতে নিলেন। 

দয়ার যে তার নেই তুলনা,
পরোপকারী ছিলেন,
মধুসূদনের বিপদকালে 
সব সামলে নিলেন। 

বিদেশ থেকে দেশে আনলেন 
সব ঋন শোধ দিয়ে,
কেবা আজ ও এত মহৎ
মহৎ হৃদয় নিয়ে!!

বর্ণপরিচয়,কথামালা
ব্যাকরণ কৌমুদি,
বোধদয় আর শকুন্তলা 
তিনি হলেন আদি। 

সারা জীবন শিক্ষাব্রতী 
সমাজ সংস্কারক,
এমন মানুষ ক্ষনজন্মা
ভীষন বিবেচক। 

যা ভেবেছেন তাই করেছেন
এমনি জেদী ছিলেন,
বীরসিংহের সিংহ শিশু 
জগৎখ্যাত হলেন।

*************************
অক্ষয় মনুষ্যত্বের পূজারী বিদ্যাসাগর
             নব কুমার মাইতি

কুসংস্কার ও অজ্ঞতার কাল স্রোতে মানুষ দিশেহারা
প্রশাসনিক সুবিধাবাদের চোরাবালিতে ভূলুণ্ঠিত নারীর
 সম্ভ্রম, শুভ চেতনা, মানবতা সৌভ্রাতৃত্ব
হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, সাইক্লোন, সুনামী
তুমি এসেছিলে অক্ষয় মনুষ্যত্ব নিয়ে
দয়া , জ্ঞান ও মানবিকতার ত্রিবেণী সঙ্গমে গড়া
তোমার জীবনবেদ‌। একদিন ঋষি অন্যদিকে মানবসেবায়
নিবেদিত প্রাণ রাজা, কল্যাণকামী ঋত্বিক, মাটির ঈশ্বর
 আজ একবিংশের সমাজে শরীরে ক্যান্সার 
ক্যান্সার দেহে-মনে, মানবিক মূল্যবোধ 
ধর্ম আজ অধীর কম্পমান, বিপন্ন বসুধা 
ধ্বংস সৃষ্টির দোলাচলে এ সভ্যতা মৃত -বৎসা উত্তরাধিকারহীন
 ভালোবাসা তোমার ধর্ম - বাল্যবিধবা বিবাহ কুসংস্কার ছিন্ন করে 
তোমার রচিত বহু গ্রন্থ মানব মুক্তির পথ দেখিয়েছে -
 জীবনের কাল যেন শেষ হয়
 এই গ্রহের জীব পালাবে কোথায় ?
 আমাদের অকরুণ পাপ, ধ্বংসময় প্রবৃত্তিহীনতা
 ওগো জ্ঞানতাপস, জাগ্রত ধ্যান, নবোদিত কল্যাণ
 তোমার গভীর মেধা, অনমনীয় প্রত্যয়
 সকরুণ ক্ষমা নিয়ে এসো
 অমারাত্রির অবসান হোক, জন্ম হোক সত্যদ্রষ্টা দেবশিশুর !

=======================
ঈশ্বর কে মনে রেখে 
সুতপা দেবনাথ


ঘরে ফেরার রাস্তা বলে দিতে পার কেউ? 
আমি বাড়ি যেতে চাই 
কুয়াশা ঘেরা বাতাস
শীতের আমেজে জড়িয়ে রাখা বাতাস 
আমার কানে কানে বলে যাচ্ছে 
ওদিকে নয় ও'দিকে নয় 
আমি দিশাহারা 

তুমি চিনিয়ে দিতে চেয়েছিলে 
আদর্শ লিপি থেকে বর্ণপরিচয় হাতে ধরিয়ে 
ইস্কুলের পথ দেখিয়ে তুমি চিনিয়ে দিতে চেয়েছিলে 
তোমার দেখানো পথে আমি বাড়ি যেতে চাই।

======================
বিদ্যাধর
মনীষা কর বাগচী

বিদ্যার সাগর তুমি ওহে বিদ্যাধর
নারীর পরিত্রাতা তুমি, তুমি দয়ার সাগর।

ওহে প্রকৃত বন্ধু অনন্ত তোমার দয়া
জ্বলন্ত চিতায় জ্বলছিল সতী জ্বলছিল তোমার হিয়া।

মায়ের আজ্ঞা পালন করা, মাকে ভালোবাসা
শিখিয়েছ তুমি মায়ের জন্য উত্তাল তরঙ্গেও যায় ভাসা। 

আরও শিখিয়েছ দেশের জন্য দশের জন্য কেমন করে বাঁচতে হয়
বুঝিয়েছ মা-ই শিশুর প্রথম গুরু তাই মেয়েকে শিক্ষা দিতে হয়। 

মায়ের জাত বিধবা হয়ে একটু একটু করে মরছিল
তাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে তোমার‌ অশ্রু ঝরছিল।

উঁচু নিচুর ভেদ ভুলে সকলকে দিয়েছ ভালোবাসা
বিধবা বিবাহ প্রবর্তন করে নারী মনে জাগিয়েছ আশা।

বর্ণমালার বর্ণ তুমি, তুমি শিক্ষা গুরু,
দয়া করুণা রক্তে মিশেছিল তোমার,
বাংলা গদ্যের তুমিই করেছিলে শুরু।

সমাজের কূপ্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলে, হৃদয়ে ছিলনা ভয়
শ্রদ্ধা, সততা, ধৈর্য্য, বীরতা, প্রতিজ্ঞায় অটল থাকা তোমার কাছেই শিখতে হয়।

হে দানবীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি সন্তান
 তোমার রাতুল চরণে জানাই শতকোটি প্রণাম।

বাংলার বুকে আবার বিদ্যাসাগরের জন্ম হোক
জগৎসভায় বাঙালির মুখ সগৌরবে জ্বলজ্বল করে উঠুক।

=======================
দরদী বিদ‍্যাসাগর"
কুমার আশীস রায়


কত নদী নালা আজ‌ও বহমান এই উপমহাদেশে
নানা সম্পদে ভূষিত জলধি "ঈশ্বর" নরবেশে ।

বহু যাতনা লাঞ্ছনে ভরা সম্মুখে প্রতিকূল
শত বিরোধেও টলেনি যাহার , মতামত একচুল ।

আজন্ম বীর মৃগেন্দ্র সে নরমাঝে বিক্রমে
সমাজের তরে সংস্কারেই , প্রাণপাত করে শ্রমে ।

সধবা হলেন বিধবারা পুনঃ --- বিধানের প্রণয়নে
সক্ষম তাঁরা নবগৃহ বাঁধি , দুঃখের বিমোচনে ।

বিদেশীর রাজে তিনি বঙ্গের বিদ‍্যার চূড়ামণি
রমণীকুলের শিক্ষার তরে তোলেন জয়ধ্বনি ।

দলিত , অনাথ , আদিবাসী হতদরিদ্র দীনজনে
অকাতরে দান প্রাপ্ত ফিরেছে সকলেই খুশী মনে ।

মহৎ কর্মসাধনে প্রাপ্তি ---- পাদুকা, গালি ও পাথর
শক্ত কঠিন ছিল সে মানব , হয়নি তবুও কাতর ।

বাঙালীর ঘরে বর্ণমালার যারা পরিচয় পান
দিবারাত খেটে বিদ‍্যাসাগর করেছেন সমাধান ।

কুরীতি কুপ্রথা পালিত অযথা সমাজে আঘাত হানে
সারারাত জেগে শাস্ত্র বিচারে, সত‍্য জাগালো প্রাণে ।

আজ‌ও কি তাঁকে বুঝেছি সঠিক আছি অজানায় ঘিরে
করজোড়ে বসে চলেছে প্রয়াস , বিদ‍্যাসাগর তীরে .

======================
অলরাউন্ডার
     গৌর চাঁদ পাত্র

ক্রিকেট খেলার জগতে এখন
অলরাউন্ডারের বড়ো কদর।
ব্যাটিং বোলিং ফিল্ডিং এ
সবেতেই হতে হবে সমান দড়।
১৮২০ র ২৬ শে সেপ্টেম্বর
বীরসিংহের ড্রেসিংরুম থেকে নির্ভীক নির্ভয়।
বেরিয়ে এলেন এক অলরাউন্ডার
খেলার প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু জয় আর জয়।
দারিদ্র্য ধর্মান্ধতার স্পিন বলে
ব্যাটিং করেছেন অকম্প দৃঢ়তায়।
বাল ও বহুবিবাহ রোধে, বিধবাবিবাহ প্রচলনে
ইতিহাস আজ , বিরাট কোহলি- দক্ষতায়।
অশিক্ষার কালো বাউন্ডারির মাঝে-
কুশিক্ষা কুসংস্কারের ছুটন্ত বল।
স্কুল গড়ার ক্যাচ ধরতে ধরতে
অর্থাভাব- ঘুর্ণীবায়ে ও উদ্যম অটল।
গদ্যসাহিত্য রীতির বোলিং টেকনিকে
অচলায়তন উইকেট ভাঙলেন বলে।
বঙ্গসাহিত্যের প্রথম ফাস্ট বোলার
টিমকে জেতালেন সাহিত্যে অবহেলে।
১৮৯১ র ২৯ শে জুলাই
মাঠ থেকে নিলেন বিদায়।
আজও আমাদের অলরাউন্ডার কোচ
জীবন- ক্রিকেটে জেতার সহায়।

=======================
একাত্ম হও
  কৃপাণ মৈত্র

দুর্বল মাথা ঝুুঁকাও ,দৃৃৃঢ় মেরুদন্ড কাকে বলে 
দেখে নাও ।
হাতজোড়় করে ভিক্ষা নয় ,নয় মাথা নত 
 মাথা তোল অধিকার চাও
 ধর্মব্যবসায়ীর স্বার্থ চুলায় যাক,শক্ত হও
  মনের শাসনকে সানাও
  শিক্ষা শুধু পুরুষের ! পুরুষতন্ত্রের অবসান হোক।
কলকাকলিতে প্রাঙ্গণ ভরে যাক।
 অনেক শয়েছো ,পড়ে় পড়ে মার খেয়েছো
 এবার তো শির ওঠাও।
 তোমার সামনে এত বড় মহীরুহ শাখা প্রশাখায় আকাশ
 প্রাণ ভরে শ্বাস নাও।
 তোমার ভীরুতা কাপুরুষতার বিসর্জন দিয়ে
  সত‍্যের গান গাও ।
তুমি জাগো, জাগরণের বার্তা দেশে দেশে
 জনে জনে পাঠাও ।
শুধু ছবি বা মূর্তিতে নয়,মালায় বা ধূপে নয়,
প্রাণের শ্বসবায়ুতে আত্তি করে নাও।
তোমার আরামে তিনি আছেন, ঘামেও তিনি।
তুমি একাত্ম হয়ে যাও।

==========================
ঈশ্বর তুমি বিদ্যার সাগর 
সুব্রত ঘোষ / দিল্লি  

প্রণাম আমার নিও ঈশ্বর তুমি বিদ্যাসাগর 
লিখতে বসেছি তোমাকে নিয়ে একটি কবিতা 
জানি তোমার নখের যোগ্য কোনোমতে আমি
                                                                 নই
বলি করজোড়ে তাই ক্ষমা করো আমার ধৃষ্টতা ।
কোন্ নক্ষত্র হতে কোন্ শুভক্ষণে এসেছিলে 
                                               ভগবতীকোলে
কতো দারিদ্র্যে কাটিয়েছিলে তুমি তোমার
                                                 বাল্যাবস্থায় 
লেখাপড়া তুমি করেছিলে রাতে ল্যাম্প পোস্টের আলোতে রাস্তায় 
একদিন শেষে বিদ্যার আশে কলিকাতা গেছিলে চলে
ব্যাকরণ, বেদান্ত, কাব্য, ন্যায় জ্যোতিষে 
                     করেছিলে পান্ডিত্য অর্জন 
প্রশংসাপত্র ছাড়াও তুমি পেয়েছিলে উপাধি 
                                           ' বিদ্যাসাগর '
সুধীজনে সবে বুঝেছে তখন করেছে গুণের
                                                    কদর
 কায়মনোবাক্যে তুমি চেয়েছিলে যদিও জাতির চরিত্র গঠন ।
বহু দোষত্রুটি দেখেছিলে তদানীন্তন বাঙালি 
                                                    সমাজে
নামে ঈশ্বর মানোনি ঈশ্বরে তুমি ভালো-
                                       বেসেছিলে মানুষে
ছিলে অনন্ত দয়ার সাগর অসহিষ্ণু ধর্মের 
                                                 গোঁড়ামিতে
বহুবিবাহ রুখে বিধবার বিবাহ দিতে 
                               হেনেছিলে কঠোর কুঠার
উপেক্ষা করেছিলে ব্যাধিগ্রস্ত সমাজের 
                                  বিভৎস হুঙ্কার ।
সিংহের মতো করে গেছ কাজ তোমার 
                                      জীবদ্দশায় 
কতো গ্রন্থের সঙ্গে রচেছো উপক্রমণিকা
                                   ব্যাকরণ কৌমুদী
তবুও বাংলায় 'বর্ণপরিচয় ' রবে শিশুদের 
                                     বুনিয়াদী শিক্ষায় ।

=============================
ঈশ্বর বিহীন
    অনিমেষ মন্ডল


একটা সকাল কাঁচা সোনা রোদ, শিউলি শিশির
আর মুক্তোর মতো কুচি কুচি বর্ণের শৈশব পরিচয়
পাখিদের কিচিমিচি, দুব্বার ঘ্রাণ লাগা পাঠশালা রব
রাখালিয়া বাঁশি,সুবোধ বালক নীতিমালা এঁকে দেয়।


অভাবী মানুষের দুর্বার স্বপ্নে প্রেরণার হাওয়া লাগে
অজেয় পৌরুষের দীপ্ত চেতনায় জেগে ওঠে বিস্তীর্ণ জাতি
সাগরের তীর থেকে ভেসে আসে করুণার স্পর্শ দুঃখিনী দুয়ারে
আর্ত পিড়ীতের দীর্ঘ আকুলতায় মরমী ব্যথা জাগে।


হৃদয়ের অতল পরিধি থেকে শুদ্রের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়
অথচ আজো অবজ্ঞার ঘৃণ্য পাহাড় বিদ্ধ করে অন্ত্যজ কুটির
বিদ্যাধৌত জলে স্নিগ্ধ নারী দিকে দিকে বিজয়িনী
তবু তো বাসনের স্তুপে কেটে যায় অসহায় নারী জনম।


সত্ত্বায় চেতনায় কতটুকু ধারণ করে এ ন্যুব্জ শরীর
ক্রমশ আঁধারের আড়ালে সান্ত্বনা খুঁজে চলি
এভাবে শতকের পর শতক পেরিয়ে যায় অমরত্ব নিয়ে
ছুঁতে পারিনা ও পদপ্রান্ত ক্ষুদ্র জীবন ঈশ্বর বিহীন।

,***************************

মানুষ ঈশ্বর 
শিশিরকুমার বাগ 

কালের দূরত্ব একটি মানুষকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যায় 

আমাদের বিস্ময়ও সেই উচ্চতাকে স্পর্শ করতে পারে না 

বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে 

কোটি কোটি ঈশ্বর আল্লার বাস

তপস্যা করলে দেবতা হয়তো বা দেখা দেন

কিন্তু মানুষের দেখা পাওয়া বড়োই দুষ্কর

মানুষের মতো মানুষ 

ঈশ্বরের মতো মানুষ।

============================
অনির্বান আলো 
জয়দেব মাইতি 

আলো হাতে, যে মানুষ সভ্যতার আলপথে -আজও নিরন্তর হাঁটেন-
তিনি কি কখনো বিশ্বাসঘাতক হতে পারেন? কিংবা স্বার্থপর? কখনো কি সন্ধান দেন অন্ধকারের?

আজন্ম,সত্য আর বিশ্বাসের ঝুলি নিয়ে ঐ একজন মানুষের দোরে দোরে ভাষায় আলো দেন-
আলো দেন সংস্কৃতির-
অনির্বাণ আলোকবর্তিকা নিয়ে জাগিয়ে রাখেন তাদের সভ্যতা-
শিক্ষার বিপ্লব তা তিনিই এনে দেন-

চটি পায়ে - ধূতি পরা মানুষটি আজও হাঁটেন-
সভ্যতার আলপথে ।  
হাতে অনির্বান আলো -

যে আলো অবিশ্বাসী নয়- দুঃখ ঘোচায়- আমাদের মানুষ করে --

============================{
বিদ্যাসাগর স্মরণী
র জ ত দা স

বীরসিংহ থেকে যে স্ফুলিঙ্গ কলকাতা পৌঁছালো
বাতি স্তম্ভের নীচে প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব সেই ঈশ্বর
শিশুর মস্তিষ্কের জন্য তোমার পরিচিত বর্ণরা
শক্তহাতে আঁকড়ে ধরে ব্যাকরণ।
নতুন শৃঙ্খলিত গদ্যের কাঠামো
মগজের মেঝেতে শুয়ে বিচিত্র বোধদয়।
অবিশ্রান্ত তুমি শতাব্দী থেকে শতাব্দী
যে জীবন চলমান প্রথম ভাগ হয়ে দ্বিতীয় ভাগে
অক্ষর নির্মাণ হয়েছে কলম কাগজে।
হাঁটা পথ রুদ্ধ হয় পিচ্ছিল স্মরণী
মাইলফলক স্পর্শ করে পুণ্যি,
মানুষের মতো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে দামোদর
নিরক্ষর মানুষের আক্ষেপ নিয়ে
কার্মাটাঁরে মিশেছে দয়া ও বিদ্যার সাগর।

=========================
স্ট্যাচু।
শুভ্রাশ্রী মাইতি।

ধুতি-চাদর-চটির একটা বিবর্ণ স্ট্যাচু
ঠায় দাঁড়িয়ে আছে গলির মুখে
হাজার বছরের অন্ধকারকে শাসন করার অনমনীয় দৃঢ়তায়।
এইমাত্র রাবেয়ার বই-খাতা কেড়ে বিয়ের কলমা পড়ালো কাজী।
উড়ে আসা একটা বড় পাথরে স্ট্যাচুর বুকের বামপাশে একটা বড় চিড়ফাট।

কিছুক্ষণ আগে কয়েকশো বিদ্রূপের আঙুল উঠেছে 
বিধবা মিনতির লাল চেলী পরা শরীরটার দিকে।
কটা বাঁকা চোখের চটচটে চাউনি কালি লেপেছে হরিমতীর সাদা শাড়িতে।
লোহার রডটা সজোরে চিরে দিল স্ট্যাচুর উন্নত,প্রশস্ত ললাট।
এইমাত্র দশ বছরের ফুলমণি বিক্রি হয়ে গেল বিশ হাজার টাকায়
শরীর আর মনের খিদে মেটানোর অন্ধকার তাগিদে।
স্ট্যাচুটা টুকরো হয়ে ছড়িয়ে গেল চারপাশে।

পশ্চিমের আকাশের ঘন অন্ধকার জাঁকিয়ে বসেছে পুবের আসনে।
ভাঙা টুকরোগুলোর ভেতরেও তিনি বুক বাঁধেন আকুল বিশ্বাসে।
পুবের লাল আলোটা ফুটলেই,ঠিক ছুটে আসবে নবীন শিশুর দল
নরম হাতের মুঠোয় ধরা সেই চিরন্তনী গোলাপী বই।
হাতে হাতে কুড়িয়ে নেবে ভেঙে যাওয়া সবকটি টুকরো।
ভালোবাসার আশ্চর্য আঠায় জুড়ে আবার মাথা তুলে দাঁড়াবেন তিনি বিশ্বাসে
ঠিক যেভাবে দাঁড়িয়ে আছেন আজ দুশোটি বছর ধরে।

=======================÷÷

মেদিনীপুরের সিংহ-শিশু
                       গোবিন্দ মোদক  

মেদিনীপুরের সিংহশিশু ইশ্বরচন্দ্র নাম ,
পদবিটা বন্দ্যোপাধ্যায়, বীরসিংহ ধাম ! 
ঠাকুরদাস আর ভগবতীর পন্ডিত সেই ছেলে, 
সব বিষয়ই ফেলেন শিখে দারুণ অবহেলে ! 
ছাব্বিশে সেপ্টেম্বর জন্ম, আঠারোশো কুড়ি, 
পাণ্ডিত্যে তাঁর মতো মেলে নাকো জুড়ি ! 
শিক্ষা-দীক্ষা, পড়াশোনায় দারুণ মেধাবী, 
একুশ বছর বয়সে পেলেন বিদ্যাসাগর উপাধি !
অধ্যাপনার কাজ নিলেন কলকাতার কলেজে, 
যোগ্যতাটা দেখালেন স্কুল-পরিদর্শকের কাজে !
দান-ধ্যান ও পুণ্য কাজে ব্রতী হলেন তিনি,
দয়ার সাগর, বিদ্যাসাগর, করুণাসাগর যিনি ! 
মেয়েদের শিক্ষিত করতে গড়লেন ইস্কুল, 
পরোপকার, ন্যায়নীতিতে হয় নাকো তাঁর ভুল !
বাংলা গদ্যের জনক তিনি লিখলেন বই কতো,  
বর্ণপরিচয়, কথামালা, বোধোদয়ের মতো ! 
বাংলা সাহিত্যে গেলেন তিনি অবদানটা রেখে, 
বিধবাবিবাহ চালু করলেন নীতিতে অটল থেকে !
বিদ্যাসাগরের মতো মহান ভূ-ভারতে নাই, 
জন্মের দ্বি-শতবর্ষে তাঁকে প্রণাম জানাই !!

========================
আলোর পথিক 
কাজী সামসুল আলম 

শস্যের বীজ থেকে প্রস্ফুটিত হয়ে মাটিকে আলোকিত করে দিয়ে গোটা মাঠ ফসলে উদ্বেলিত 
প্রতিটি শস্য দানায় বিদ্যাসাগরের ছবি আঁকা 
আলোর তলায় দাঁড়িয়ে পড়তে পড়তে নিজেই সারা শহরের সমস্ত আলোকস্তম্ভ হয়েছেন, বিদ্যাসাগরের আলোয় সারা শহর আলোকিত 
অন্তর থেকে হৃদয় বের করে বিলিয়ে দিয়ে সবার হৃদয়ে নিজের নাম খোদাই করে প্রতিটি বাড়িতে একটা করে বিদ্যাসাগর গড়ে তোলা এক অবাক বিস্ময় স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্রই করতে পারেন 
সিঁথিতে সিঁদুর দিতে গিয়ে বিধবাবধূ ঈশ্বরচন্দ্রর চন্দ্র বাদ দিয়ে দুই হাতে তাঁকেই প্রণাম করেন রোজ, তাঁদের ভগবানকে 
অক্ষরের খোদাই করে দিয়ে সারা বাঙালির মুখ খুলে দিয়ে যাওয়া বিদ্যার সাগর শূন্য দিগন্তে আজীবন বিদ্যমান, 
তাঁর পথে পথিকের অভাবে আগাছায় পরিপূর্ণ, তাঁর হেঁটে যাওয়া পথে আর কোনো পথিকের দেখা নেই... দেখা নেই... দেখা নেই 

**********************





নারীর কথা
নন্দিনী সরকার

নারীর জন্য এমন করে কাঁদে নি কেউ আগে,
নারীর জন্য তেমন করে
ভাবে নি গো আগে।
জীবন জুড়ে দুঃখ নিয়ে
কাটত নারীর কাল ,
সমাজ সেবক ভাবত নিয়ম 
এইতো নারীর হাল ।
ছোট্ট মেয়ে বিধবা যে 
করে একাদশী,
জল স্পর্শ করতে মানা !
কাঁদে রবি শশী ।
দৃষ্টি পড়লে দুষ্টু লোকের
বাল বিধবাই দোষী ,
প্রায়শিত্ত করতে গিয়ে
লড়ত দিবা নিশি।
 ভগ্নী কন্যা জায়া মাতা 
ধারন করে জীবন,
নারীর প্রতি ভালোবাসায়
ভরা তাঁহার ভুবন।
বিধবাকে বিবাহ দিয়ে
দিলেন নতুন ঘর,
শিক্ষা দিলেন, মান দিলেন
তিনিই বিদ্যাসাগর।

*************************



তুমি ফিরে এসো
 সুকান্ত আচার্য্য

চারিদিকে শুধু চোখ ঝলসানো কৃত্রিমতা,
আধুনিকতার উগ্রতায় শৈশব বড় অসহায়,
'অ, আ, ক, খ' ভুলে 'এ, বি, সি, ডি' তে মজেছে ছেলেমেয়ে,
সরল 'শিশুকবিতা' হারিয়ে যাচ্ছে 'রাইমে'র ভিড়ে,
বিদ্যাসাগর, তুমি ফিরে এসো 'বর্ণপরিচয়' হয়ে।

দু মুঠো ভাতের লড়াই আজও জারি আছে,
আজও পথশিশু চেয়ে থাকে আস্তাকুঁড়ের দিকে,
'দানের বিজ্ঞাপনে' হারিয়ে যাচ্ছে 'প্রকৃত দান',
প্রদীপের তলায় অন্ধকার আজও আছে,
বিদ্যাসাগর, তুমি ফিরে এসো 'দয়ার সাগর' হয়ে।

'বইমুখী শিক্ষায়' মজেছে গোটা দেশ,
'মনুষত্ব' হারিয়ে যাচ্ছে 'উচ্চাকাঙ্ক্ষা'র চোখ রাঙানিতে,
তোমার মূর্তিও আজ কালিমালিপ্ত হয়,
অন্ধ এ সমাজকে 'জ্ঞানচক্ষু' দিতে,
বিদ্যাসাগর, তুমি ফিরে এসো 'জ্ঞানের সাগর' হয়ে।

***********************



এক যে আছেন বিদ্যাসাগর 
 জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় 

এক যে ছিলেন বিদ্যাসাগর ভীষণ রকম গোঁয়ার
ধাক্কা দিয়েই ভেঙেছিলেন অন্ধকারের খোঁয়াড়।

এক যে ছিলেন বিদ্যাসাগর বিদ্যাঠাসা মাথায়
বই লিখেছেন অনেকগুলো দিস্তে দিস্তে পাতায়।

হাতে দিলেন বঙ্গজনার বর্ণপরিচয় 
শিক্ষা শুরুর প্রথম সিঁড়ি সবারই প্রত্যয়।

বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তোমার এমন মন 
স্কুল করেছো জেলায় জেলায় আলোর প্রবহন।

এক যে ছিলেন বিদ্যাসাগর জ্ঞানের সাগর তিনি
তার জ্যোতিতে জ্বলে ওঠেন দেশমা গরবিনি।

এমন যে তার উদারতা পকেট উজাড় করে
দুঃখীজনা তাকিয়েছিল কেবল তোমার দোরে।

এক যে আছেন বিদ্যাসাগর মনের কোঠায় জেগে
লেখাপড়ায় আজও আলো তোমার আদর লাগে।

********************



   অগ্নিপুরুষ
অমৃতা খেটো

সমাজের মাথারা বসে বসে পরমান্ন  
খাচ্ছিলেন
তিনি এসে ভোগের থালা দিলেন সরিয়ে
খেরোর খাতা দিলেন ছিঁড়ে...
ওই খাতায় শত শত নারীর
দুর্ভাগ্যের কাহিনী লেখা ছিল,
নারীরা সমাজের যুপকাষ্ঠে বলিপ্রদত্ত
এই কন্সেপ্টটা টুকরো টুকরো করে ভাঙলেন
বন্ধ করলেন বিবাহ নামের পুতুলখেলা।


অনেক সংঘর্ষ, আত্মত্যাগ আর অর্থনষ্টের পর
বন্ধ হল বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহের মত কুপ্রথা,
বিধবারা পুনর্বিবাহের ছাড়পত্র পেলেন....

অক্ষর-বল্লম দিয়ে সমাজের ঘা দিলেন খুঁচিয়ে, একরোখা, জেদী বামুনটির অস্ত্র বলতে অগাধ পান্ডিত্য আর অনমনীয় মনোভাব..

তিনি না থাকলে কে আমাদের চোখে
বর্নপরিচয়ের অক্ষরপ্রদীপ জ্বালাতেন?
তাঁর দয়ায় নারীরা মানুষ হল
স্কুলে ভর্তি হল, স্বাধীন হল–
তিনি আমাদের প্রাণের মানুষ বিদ্যা সাগর....

***************************


ভারতভূমির বিদ্যাসাগর 
ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় 

জন্ম দিয়েছে এক ক্ষনজন্মা, বীরসিংহের মাটি 
সে মাটি বোঝালো, আগুন ঝরালো তীর্থভূমি খাঁটি।। 
রত্নগর্ভা ভগবতীর কোল আলো করে সেদিন জন্ম নিলো-
বাংলার বুকে হলো নবজাগরণ, বিদ্যাসাগর এলো। 

মানুষ তো হয় একটাই প্রানে, সেখানে নারী- পুরুষে ভেদ! 
সমাজপতির এমন বিধানে, ঈশ্বরের জন্মেছিল খেদ। 
পান্ডিত্যের যুক্তির তীরে ছিন্ন করে সে শিকল 
সংস্কারহীন মুক্ত সমাজ গড়তে শপথ নিল।। 

 বৃটিশ শাসকের চোখে রেখে চোখ বোঝালেন তাঁর দিশা -
নারীশিক্ষার দীপ জ্বেলে সেই বিদ্যাসাগর, কাটালেন অমানিশা ।
বর্ণপরিচয় দিল পরিচয় বঙ্গজাতির, শিক্ষা সোপানে মননে উত্তরন -
দুর্বল মানব, অবলা, বিধবা নারী পেয়েছিল, তাঁর হাতেই "নবজীবন"।। 

দুরন্ত ঐ দামোদর নত, হয়েছে সে মনিষীর মাতৃভক্তির টানে -
স্থবির, ভঙ্গুর সমাজের বুকে জ্বেলেছেন আলো, বিষম পদাঘাতে হেনে।
মাইকেল কবি, শ্রীরামকৃষ্ণ অনুভবে স্মরে, দয়ার সাগর তিনি -
ভারতভূমির সমাজ, শিক্ষা, মানবতার পাঠ সব বিদ্যাসাগরে ঋনী।।
 
***********************

তপস্যা শেষে

ভগীরথ সর্দার


এইখানে তিনি চরণচিহ্ন রেখে গেছেন ৷
এইখানে তাঁর কীর্তি পড়ে আছে ৷
ধূরোমাখা পথে ৷ ফুটপাতে ৷
অক্ষর সাজাতে সাজাতে ল্যাম্পপোস্টের নিচে
কখন যেন ঘুম পেয়ে যায় ৷

অভাবের সংসার
তাঁকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় কঠিন তপস্যায় 
তিনি সিদ্ধি লাভের পর দেখেন
চোখের উপর ভেসে উঠেছে
সদ্য শেখা মাইল ফলকের নম্বরগুলো ৷

*************************

পবিত্র তারা
মোনালিসা পাহাড়ী

শিক্ষকের চেয়ে বড় শিক্ষক
ছিলেন ধরাধামে,
জানো কি তোমরা সবাই তাঁকে
চিনতো কোন নামে?

দুহাত দিয়ে উপড়ে ছিলেন
কুসংস্কারের চারা,
মানুষ তো নয়,আগুন তিনি
পবিত্র এক তারা।

তাঁর পরশে ধন‍্য হলো
বাংলা মায়ের কোল,
তাঁর দয়াতেই বলতে পারি
বাংলা ভাষার বোল।

তাঁর হৃদয়ে লালিত হতো
নারীর জন্য মান,
নারীশিক্ষা, বিধবা বিবাহ
তাঁরই দয়ার দান।

আজও তো তাই,আমরা সবাই
তাঁর চরণে ঋণী,
দয়ার সাগর, বিদ‍্যাসাগর
নামেই তাঁকে চিনি।

**********************



আলো গল্পের সহজ সমীকরণে 
  দীপক জানা 


আলোর কথা বললে সূর্য পুজোয় দিন নামে 
অবাঞ্ছিত মেঘগল্পে ঢুকে পড়ে -
মধ্যযুগীয় অন্ধকার 
শেয়াল চোখের ভেতর গভীর সুড়ঙ্গ 

এ পথ ধরেই পুজো নিয়ে হাঁটছে অভিযাত্রী জোনাকি 
একে নাহয় জোনাকিগ্রাম বলা যেতেই পারে 
নদী পেরোলে ধুলোমাটি ইচ্ছে 
সবুজ সরল উদ্ভিদ জীবন 

বাঁশগাছ, এঁদোডোবা, খালবিল, জমি 
যদিও পাড়া ষড়যন্ত্রে ধোঁড়া, বোড়া 
ন্যায়রত্ন, তর্করত্ন বিধান পেরিয়ে 
সাদা শাড়িতে হলুদ লাগলে 
আঁচল খুঁটের সোহাগ সিঁদুরে রোদ ওঠে 
নক্ষত্র জেগে থাকে সময় পাহারায়। 
**************************


  বিদ্যাসাগর
নীতা সরকার

বীরসিংহের সিংহ তুমি বিদ্যাসাগর। 
এক দরিদ্র বাহ্মণ পরিবারে জন্ম তোমার। 

অজ্ঞাত তোমার পান্ডিত্য, জ্ঞানেরসাগর তুমি। 

দারিদ্রকে উপেক্ষা করে, বিদ্যাকে করেছ সঙ্গী। 

তেলের অভাবে পথের পাশে

গ্যাসের আলোতে বিদ্যা চর্চা করতে। 

সৌমমূর্ত্তি তেজ, অদম্য ধৈয্য তোমার। 

মনের জোরে মেদিনীপুর থেকে কলকাতায়

মাইলস্টোন গুনতে গুনতে পায়ে হেঁটে এসেছিলে। 

মাতৃ আদেশ পালনের জন্য, চাকরি ছেড়ে

দামোদর নদী সাঁতরে বাড়ি ফিরেছিলে। 

তোমার বর্ণ পরিচয় দিয়ে, প্রথম অক্ষর শেখা। 

দীনের বন্ধু তুমি, দয়ার অবতার তুমি। 

হিন্দু ল কমেটির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে

"বিদ্যাসাগর" উপাধিতে ভূষিত হও। 

বাংলা গদ্যের জনক তুমি, নারীশিক্ষার সৃষ্টিকর্তাও তুমি। 

তুমি ছিলে সমাজ সংস্কারক। 

মেয়েদের দুঃখে কাতর হয়ে বিধবা বিবাহ আইন প্রচলিত করো। 

তোমার জীবন রক্ষার জন্য শান্তিপুরের তাঁতিরা বলেছিলেন---

"বেঁচে থাক বিদ্যাসাগর চিরজীবী হয়ে"।
*************************

বিদ্যাসাগর
প্রদীপ কুমার গোল


বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর

বীরসিংহে ঘর,

দয়ারসাগর, দানেরসাগর

নয়তো আপন পর।


বেঁটে খাটো লোক হলেও

জ্ঞান শানিত অস্ত্র,

পন্ডিতদের চোখ খুলালে

দেখিয়ে ধর্মশাস্ত্র।


নীতি শিক্ষার গল্প পড়ি

পড়ি বোধদয়,

অ আ ক খ বর্নপরিচয়

নারী শিক্ষার উদয়।


তুমিই কেবল বুঝেছিলে

বিধবাদের দুঃখ,

সমাজধংসী, ষড়যন্ত্রী

তোমার উপর রুক্ষ।


তুমিই নাকি বিধর্মী

ইংরেজের দালাল,

হেঁড়ে মাথার জশুরে কই

কতই না দিল গাল।


আজ জন্মের দু শ বছর

প্রণতি ,হে মহামানব,

ভগবতী সুত বঙ্গ সন্তান

তুমিই মোদের গরব।

********************************
এক ঈশ্বর 
সুবীর ঘোষ 

শিশুগাছের নামে শৈশব থাকলেও
দৈর্ঘ্যে সে আশি ফুট যেতে পারে। 
বিদ্যাসাগর খর্বকায় হয়েও
বাঙালির উচ্চতায় গেঁথেছিলেন গর্ব। 

সে সময় কয়েকজন
বিদ্যাসাগর থাকলেও
বাঙালির বিদ্যাসাগর
একমাত্র ঈশ্বরচন্দ্রই
বিদ্যা মমতা সাহস ও সংস্কারকে একসূত্রে বেঁধেছিলেন। 

মুণ্ডচ্ছেদ করে জীবনীশক্তি
কমানো যায় না। 
কুষাণরাজ কণিষ্ক সেই দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে এখনও বেঁচে আছেন। 
বিদ্যাসাগরও থাকবেন। 

পাষন্ডেরা এসব মাথামুন্ডু না জেনে শুধু মুন্ডুই ভেঙে দেয়। জল
বিদ্যাসাগর নামক শিশুগাছটির মাথার কাছে পৌঁছতে পারে না। 
************************



সাগরের বুকে
বিমল মণ্ডল

সারাটা জীবন শিক্ষার আলোতে
নিজস্ব ছায়ায় হেঁটে যাওয়া  
চন্দ্রলোকের দ্যুতি
কত সামাজিকতা লাল আকাশ জুড়ে
হাজার হাজার বর্ণ- বৈষম্য ভেদে
নিজেকে সাজিয়েছেন সাগরের বুকে

যেখান থেকে রোজ ভেসে আসে
গভীর-শ্যামল ভাবনার সুস্থির

আজকের মতোই 
শত-শত বছরের পরেও
জন্ম ও মৃত্যুতে ভেসে আসবে
তেজভরা শিক্ষার ঢেউ

যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম
হৃদয়ে থেকে হৃদয়ে 
এঁকে যাবে অক্ষর সাগর।
************************


এক আলোকিত সত্তা
 দুর্গাদাস মিদ্যা

 তখনো ভোরের আলো ফোটেনি
 ছাতার মতো মাথা নিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে চলেছেন এক খর্বকায় মানুষ
 পায়ে তালতলার চটি ফটফটিয়ে। 
কোথায় যেন অসহায় কান্নার রোল উঠেছে। দয়ার সাগর তিনি প্রতিবাদে মুখর। 
গৌরিদান বাল্যবিধবা এসব একেবারে একেবারে পছন্দ নয় তাঁর। 
অশিক্ষা আর কুশিক্ষায় ভরে যাওয়া দেশে 
তিনি একমাত্র মানুষ 
যিনি মানবচেতনায় দাঁড়িয়েছেন এই সমস্ত অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে । 
ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত তিনি যেমন  
তেমনি তিনি সমস্ত শাস্ত্রীয় জ্ঞান অঞ্জলিভরে পান করেছেন অদ্ভুত বিদগ্ধ প্রজ্ঞায়।
মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠেছেন আপনার
 ক্রিয়াগুণে।। তিনি ঈশ্বরের পুত্র ঈশ্বর চন্দ্র চন্দ্র ঈশ্বর চন্দ্র চন্দ্র পুত্র ঈশ্বর চন্দ্র চন্দ্র ঈশ্বর চন্দ্র চন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁকে প্রণাম।
**************************


আনত শির
ফটিক চৌধুরী

স্ট্রিট দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
শিখেছিলে ইংরেজি সংখ্যা
স্ট্রিট লাইটে পড়তে পড়তে
বাজিয়ে দিলে জয়ডঙ্কা।
সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছ
পর্বত চূড়ার শীর্ষে
তুমি সবার বিদ্যাসাগর
বীরসিংহের বীর সে।
উপাধিটি হয়েছে নাম
ঈশ্বরচন্দ্র আর ক'জন জানে
দয়ার সাগর করুণা সাগর
কর্মাটাঁড়ের মানুষও মানে।
জানে মাইকেল জানে সবাই
জানে প্রতিটি ঘরে
জানে বালিকা বিধবা, মায়ের জন্য
পার হও ভরা দামোদরে।
দুইশত বছর অতিক্রান্ত বীরসিংহের বীর
শ্রদ্ধা জানাই তোমাকে আনত করি শির।
*************************


বিদ্যাসাগর
জন্মেঞ্জয় সাহু

সমাজ যখন নিমজ্জিত ঘন তমিস্রাতে 
বিদ্যাসাগর এসেছিলেন চেতন-প্রদীপ হাতে। 
ধর্মীয় গোঁড়ামি আর অন্ধ কুসংস্কার
সঙ্গী ছিল জাতিভেদ ও তীব্র অশিক্ষার। 
সরিয়ে দিতে সব জঞ্জাল সমস্ত ক্লেদ , গ্লানি  জীবনটাকে বাজি রেখে এগিয়ে এলেন তিনি। অজস্র লাঞ্ছনা আর অপমানও সয়ে 
 একলা পথিক পথ হাঁটলেন উন্নতশির হয়ে। অশিক্ষারূপ অভিশাপটা তুলতে সমাজ থেকে 
কত কত বিদ্যালয় যে গড়েন একে একে! 
আবিভূর্ত হয়ে তিনি নারী-ত্রাতার বেশে 
বিধবাবিবাহ চালু করেন অবশেষে। 
বালিকাবিবাহ এবং কৌলীন্য প্রথার 
 অবসানে লড়াইটাও জারি ছিল তাঁর। বাংলাসাহিত্য আর বাংলাভাষার 
 বিদ্যাসাগরই হন নবরূপকার। 
বিদ্যার সাগর যেমন, করুণারও সিন্ধু 
দুঃখীর চিরসাথী তিনি দীনবন্ধু। 
 দ্বিশতবর্ষের এই শুভ জন্মক্ষণে 
 প্রণাম জানাই আমি ঈশ্বর-চরণে।
***************************
মহৎসাগর
বীথিকা পড়ুয়া মহাপাত্র

সাগর দেখিনি তেমন একটিও
এক সে সাগর দ্যাখা!
জ্ঞানের সাগর,কথার সাগর
তাঁরই কাছে শেখা।

                  সাগর কতো গভীর হয়?
                  এ সাগর ততোধিক,
                  করুনারই সাগর তিনি
                  ঈশ্বর নির্ভিক!

সাগরের বুকে মুক্তো দেখিনি
জেনেছি বিদ্যাসাগর,
হৃদয়টা তার ভীষণ গভীর 
ভাঙে না বুকের চাঙড়!
               

               সাগরের জল কি আর স্বচ্ছ?
               ঈশ্বর নির্মল!
               পর দুঃখে হতেন কাতর
               চোখ ফেটে আসে জল!

সাগরের পলি কতো উর্বর?
করেছে মানব চড়া!
মহৎসাগর বিদ্যাসাগর
তাঁরই কাছে লেখাপড়া!
*************************


ঈশ্বরের আলো

সোনালী মিত্র 

সাগর যেখানে ছুঁয়ে চলে গভীর মননে
সেখানেই ঈশ্বরের আলো আমার ভিতরে।
যে আলো জ্বেলেছিলে হৃদয়ের মাঝে 
সেই আলোর কথা লিখে রেখে গিয়েছ সমাজের খাতার পাতাতে।
অক্ষরে অক্ষরে ভালবাসার কথা লুকিয়ে রেখে গেছো আগুনের মতো। 
পার হয়ে গেছে অনেকটা পথ
অধিকারের শব্দের ফুল নারীর শরীরে ।
ঈশ্বরের আলো কুসংস্কারের অন্ধকার দূর করতে
নতুন পথ দেখাতে। 
আজ, ঈশ্বর আমার খাতায় কলমে, 
প্রথম যেদিন বর্ণপরিচয়ের আলো দুহাত ভরে পেলাম সেদিন থেকে আমার ঈশ্বর আমার সাথে।
***************************


হে বিদ্যাসাগর
সমরেশ সুবোধ পড়িয়া


জাতপাত, সতীদাহ, নারীশিক্ষা বিমুখ - 
চারিদিকে যখন কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ,
অখন্ড মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে জন্ম - 
ভগবতীর কোল আলো করে আজ!

দুরন্ত, সাহসী, দৃঢ়চেতা, তেজস্বী, বুদ্ধিমত্তায় - 
প্রজ্ঞায়, বাগ্মিতায়, শত প্রতিভায়, তুমি প্রণম্য,
জাতপাত ভেঙে আজ আলোকিত সমাজ -
একত্রিত হতে পেরেছি - শুধু তোমারই জন্য৷

বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার;
তুমি, প্রথম বাংলা লিপি সংস্কারক,
স্ত্রীশিক্ষার প্রসার আর বিধবা বিবাহ প্রচলনে
তুমি অশরীরী আত্মার শুদ্ধিকার, 
নারীমুক্তির আসল পথ প্রদর্শক!

তুমি শুধু - লেখক, দার্শনিক, পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, অনুবাদক, প্রকাশক, সংস্কারক, মানবহিতৈষী নও -
তুমি, বাংলার মহাতীর্থ, মহাজাগরণ, আদর্শ মহামানব, বাংলার গৌরবও৷

তোমার লেখা - বর্ণপরিচয়, কথামালা, বোধোদয়, আখ্যানমঞ্জরী, ব্যাকরণ কৌমুদী, 
পাই কত লেখা মালা - নিয়ে বিধবা বিবাহ,
কত সুন্দর; শকুন্তলা ও বেতাল পঞ্চবিংশতি৷

তুমি, দয়ার সাগর’; দরিদ্র, আর্ত ও পীড়িত - দুয়ার হতে শূন্য হাতে না কখনো ফিরে যেত, 
তুমি খাঁটি রত্ন - শত পরীক্ষায় পরীক্ষিত - পবিত্র,
বাংলার প্রবাদ - তোমার বজ্রকঠিন চরিত্র৷

হে মেদিনীপুত্র, দীনময়ীর স্বামী -
ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়;
তুমি পুণ্যতীর্থ, মহাতীর্থ, মহাপুণ্যবান, 
দ্বিশত বার্ষিকী জন্মতিথিতে - 
লহ মোর দ্বিশত কোটি হৃদয়ের প্রণাম৷
**********************


জীবনদেবতা
 বিশ্বজিৎ রায়

অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে যখন কিছু লিখতে বসি/
মনে পড়ে আপনার কথা,/
হাইওয়ে দিয়ে যেতে যেতে মাইলফলকগুলি দেখে /মনে পড়ে আপনার গ্রাম থেকে শহরে আসার চিত্রকথা ---/
বস্তির ছেলেমেয়েগুলো কেউ যখন ল্যাম্পপোস্টের নিচে বই খুলে পড়ে/
মনেহয়, ওদের মধ্যে বসে আছেন এক ঈশ্বর, /
খাটো ধুতি পরা কোনো স্বল্পকেশ মানুষকে কলেজস্ট্রীটের রাস্তায়/ আজও হেঁটে যেতে দেখলে ভাবি, তিনিই বিদ্যাসাগর ..../

জীবনকে কাঁধে নিয়ে চলতে চলতে কখনো-
 সখনো/
শিরদাঁড়াটা ঝুঁকে পড়ে কোনো বিপন্ন মুহূর্তে---/ঠিক সে'সময়, আপনার কথা মনে করে/
শিরদাঁড়াটা সোজা করে নিতে পারি চকিতে---/
চরম অর্থকষ্ট, কুতসা, অপবাদের মুখোমুখি হলে /আপনার জীবন-জোছনা থেকে শক্তি পাই, জেগে উঠি পুনরায়, মস্তিষ্কে ---

সেই হাতেখড়ির দিন থেকে আজ অবধি/
আপনি আমার জীবনদেবতা, শিক্ষক, ছায়াসঙ্গী,/
নষ্টলোকে বেঁচে থাকার মহৌষধি ....
***********************

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
শ্রাবণী বসু

আমরা যখন নগরীর করতলে বসে 
পৃথিবী তোলপাড় করছি 
একটি বৃক্ষ আশা করছি,

আমরা যখন যন্ত্রনায় ডুবতে ডুবতে
খুঁজে চলেছি তাঁকে- যিনি অমৃতের পুত্র
 তিনি এলেন।মানুষের পাশে দাঁড়ালেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - একটি মানববৃক্ষ,
 বজ্রকঠিন অথচ কুসুমকোমল ।

শত সহস্র হাঁ মুখ থেকে তিনি-
বার করে আনলেন বিধবা বালিকাদের,
অপরিণত মুঠোয় ধরালেন সাতরঙা বর্ণালী।


জঘন্য সমাজ ব্যবস্থার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে-
 বিধবার জমাট অশ্রু কুচিয়ে ফেলে 
 পা রাখার জায়গাটুকু করে দিলেন ।

সময় যতই পেছনে সরে যাক,
তিনি সময়ের সাথে সাথে
সমভাবে গমন করছেন
কেননা তিনি মানবহিতৈষী ।

 মানবকল্যাণের জন্য যাঁরা কর্ম করেন 
তাঁরা মানুষ নয়, সত্যিই তাঁরা ঈশ্বর ।
*********************


' বিস্ময় প্রতিভা '
  লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য 

শৈশবের সঙ্গী ছিল বর্ণপরিচয়, 
বাল্য বিবাহ রোধ তুমি করলে কৈশোরে। 
বিধবার বিবাহ আইন সিদ্ধ হয়
ঋণী এ যৌবন তোমায় স্মরণ করে। 
কাঁদে প্রাণ, নারীদের দুঃখ-যন্ত্রণায়
অসামান্য মাতৃভক্তি, প্রণমি তোমারে।
সাম্প্রদায়িকতা নয়, জাতিভেদ নয়
দৃঢ়নিষ্ঠ জীবন ঐ মানুষের তরে। 
ভেঙে কুসংস্কারের অচলায়তন 
বাঙালিকে আনো এক জ্যোতিষ্ক আলোতে.....
দারিদ্র দিয়েছে তোমায় তেজস্বী মন 
জয়ী হলে প্রতিকূল পরিবেশ হতে। 
বাংলা গদ্য সাজালে এক ছন্দ-স্রোতে
এনে দিলে বঙ্গদেশে নবজাগরণ।।

***************************
আলো জ্বেলে দাও
বিষ্ণু পদ জানা



আলো জ্বেলে দাও
আ আ ক খ 
বর্ণপরিচয়ের
জল পড়ে পাতা নড়ে
ঐক্য বাক্য মাণিক্য
জ্ঞানের আলো
বোধ- বুদ্ধির আলো
সময়ের আলো
সমাজের আলো
আলোকময় পথে হাঁটতে হাঁটতে যে শিশু
 ইংরেজীতে সংখ্যামান শেখে 
পথের আলোয় জীবন -পাঠ 
বাবার সাথে ঘরকন্নার কাজ 
পাণ্ডিত্যে বিদ্যাসাগর
সমাজ সংস্কারের আলো
নারী শিক্ষার প্রসার
বহুবিবাহ রহিত
বিধবাদের জীবনে আলো
মাতৃভক্তিতে অটুট
কথায় ও কাজে এক আলো
দ্বিশত বছর ধরে
আলোর আলোকে দীপ্যমান
বাংলা ভাষা ও বাঙালির জীবন আলোকে
'অজেয় পৌরুষ এবং অক্ষয় মনুষ্যত্ব' 
সভ্যতার আলো ইতিহাসে
লহ শতকোটি প্রণাম।

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆





































No comments: