শিক্ষক দিবস
৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০
ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ
(০৫.০৯.১৮৮৮ - ১৭.০৪.১৯৭৫)
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
Doinik Sabder Methopath
Vol - 121. Dt - 05.09.2920
১৯ ভাদ্র, ১৪২৭. শনিবার
*******************!!!!!!!!!!!****************
শিক্ষক দিবস ও ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ
ড. প্রবালকান্তি হাজরা
বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্র গবেষক
সারাবিশ্বে বৃত্তি হিসেবে শিক্ষকতা বৃত্তিকে শ্রেষ্ঠ কাজ বলে গণ্য করা হয়। কারন একটি জাতির ভবিষ্যৎ নাগরিক গঠনে এই শিক্ষকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই শিক্ষকদের বৃত্তিকে মর্যাদা ও সম্মান জানাতে শিক্ষক দিবসে প্রত্যেক শিক্ষককে শ্রদ্ধা জানানোর দিন শিক্ষক দিবস। ভারতবর্ষে ৫ ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হলেও বিশ্বে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপিত হয় ৫ ই অক্টোবর।ভারতবর্ষে 5 ই সেপ্টেম্বর কারণ ওই দিন কৃতি অধ্যাপক ও বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এর জন্মদিন। কৃতি অধ্যাপক রাধাকৃষ্ণাণ জীবনভর অধ্যাপনা তথা শিক্ষাদানের কাজের রত ছিলেন। তাঁর মানসিকতার উত্তরাধিকারে সমৃদ্ধ অজস্র ছাত্র-ছাত্রী। সেই ছাত্রছাত্রীরা তাঁর জন্মদিন পালনের আবদার ধরলে তিনি দিনটিকে শিক্ষক দিবস হিসেবে উদযাপনের কথা বলেন। বলা যায় তাঁরই অনুরোধ সূত্রে দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে ১৯৬২ সাল থেকে প্রতিবছর। শিক্ষক বললে আমরা স্কুলের শিক্ষক মহাশয়দের বুঝি । আর কলেজে যারা পরান তাঁরা অধ্যাপক। রাধাকৃষ্ণন কোনদিন স্কুলে পড়ান নি। ৪০ বছরের কর্ম জীবন কেটেছে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা য়। ১৯৪৯ সালে তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন। কাজেই স্কুল স্তরের শিক্ষা ও শিক্ষক নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বিষয়ে প্রশ্ন জাগে। এখনো শিক্ষক বললে স্কুলশিক্ষকদের বোঝানো হয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় যারা পড়ান সব সময় তাদের নামের আগে অধ্যাপক শব্দটি জোড়া থাকে কখনোই শিক্ষক নয়।তবু সম্ভবত রাধাকৃষ্ণণ দীর্ঘদিন শিক্ষা ক্ষেত্রে যুক্ত ছিলেন বলেই হয়তো তাঁর জন্মদিনটিকে শিক্ষক দিবসের তকমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি শিক্ষক দিবস হিসেবে যদি শ্রদ্ধা জানাতে হয় তবে সব অর্থে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় এর জন্মদিন, ১২ আশ্বিন- ২৯ শে সেপ্টেম্বর হওয়া উচিত শিক্ষক দিবস।
জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষিত দিনটিতে আমরা সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই । শুধু বর্তমান শিক্ষকমন্ডলী নয়, অতীতের শিক্ষকমন্ডলী সহ যাদের পায়ের তলায় বসে আমরা জীবনের মানবিক অনুভবের, দেশাত্মবোধ ও জাতীয় একাত্মবোধের শিক্ষা নিয়েছি তাঁদের সকলকে এদিন শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ মাদ্রাজের একটি ছোট্ট শহর তিরুতাঞ্জির এক গোঁড়া তেলেগু ব্রাহ্মণ পরিবারে ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৫ ই সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বীর সাম্য ছিলেন স্থানীয় তহশিলদার ও পুরোহিত। মা ছিলেন ধর্মভীরু।বালক রাধাকৃষ্ণণ এর উপর এই প্রভাব পড়ে তিনি খ্রিষ্টান মিশনারি স্কুল পড়ে ক্রিশ্চান কলেজে পড়াশোনা করেন ।দর্শনশাস্ত্র নিয়ে অনার্স পড়ার কালে বিবেকানন্দের নানা ভাষণে হিন্দুধর্মের জয়গান পড়ে মুগ্ধ হন ।বিশেষত স্বামীজীর দেশ ভক্তি, ধর্মের শিক্ষা , মানবতা বাদী মানুষ তৈরীর ভাবনা তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় এম এ পড়াকালে স্বকীয় ভাবনায় লেখেন "বেদান্তে নীতি ধর্মের স্থান". পরীক্ষক এটি পড়ে বিশেষভাবে প্রীত হন। এরপর অধ্যাপনা কালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজ মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অন্ধ বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য হন । তিনি ছিলেন প্রখর স্মৃতি শক্তির অধিকারী তাই অন্যের লেখা পড়ে হুবহু মনে রাখতেন আর কোন প্রবন্ধ লেখা কালে সেই সব কথা নিজের লেখার সঙ্গে বেরিয়ে আসত। ফলে অন্যের রচনা নিজের বলে চালানোর দায়ে মামলাও হয়েছে কিন্তু ব্যাপারটি তাঁর প্রখর স্মৃতির বিড়ম্বনা ছিল। ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথের রচনা পাঠিয়ে উদ্দীপ্ত হন ।যোগাযোগ ঘটে কবি ও দার্শনিক ।উভয়ের লেখেন ৩৬ টি পত্র। গান্ধীর সঙ্গেও যোগাযোগ ঘটে। ১৯০৯ -১৯৪৯, দীর্ঘ ৪০ বছর অধ্যাপনার জীবন। ১৯৪৮ সালে তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন। ১৯৪৯ সালে মস্কোতে ভারতের রাষ্ট্রদূত হয়ে যান। ১৯৫২ সালে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি। ১৯৬২ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে কার্যভার নেন। তিন কন্যা ও এক পুত্রের ( ড. এস গোপাল) জনক রাধাকৃষ্ণণ ১৯৭৫ সালে টেম্পলটন পুরস্কার লাভ করেন ওই বছর ১৭ এপ্রিল তিনি প্রয়াত হন।
দর্শন শাস্ত্রে পান্ডিত্যের জন্য তাঁর খ্যাতি সারা বিশ্বে । এই দর্শন শাস্ত্রের সঙ্গে ইতিহাস, সাহিত্য ,শিল্প ,বিজ্ঞান, ধর্ম ,রাজনীতি ,সমাজনীতি প্রভৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর ভাবনায় বরাবর সুস্থ পরিবেশ, সুস্থ মানবিক বোধের প্রকাশ ঘটেছে । এর প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর রচিত নানা গ্রন্থে। তিনি গীতা বাইবেল কে সমান শ্রদ্ধায় দেখে বলেন -" জগতের সব প্রধান ধর্ম কেই আমি আমার নিজের ধর্মের মত সত্য মনে করি মানুষ মাত্র কে ভালোবাসা কর্তব্য শেপ মানুষ পৌত্তলিক তুর্কি ইহুদি যাই হোক সকল মানুষের হৃদয়ে করুণা প্রেম এবং দরদ আছে বলেই মানুষের হৃদয়ে ভগবান বাস করেন।" মস্কোতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে থাকার কালে ১৯৫১ সালের একদিন সেকালের দুর্ধর্ষ নেতা স্ট্যালিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকার ঘটে। স্ট্যালিন তাঁর কাছে ভারতের কথা শুনতে চেয়েছিল নানা কথা শেষে ওঠার সময় রাধাকৃষ্ণণ সহজে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে স্ট্যালিনের পিঠে হাত রেখে বলেন -" Marshall take care of yourself , God bless you. " আমরা জানি পিঠে হাত রেখে সৌহার্দ্য জানানো রাধাকৃষ্ণনের স্বভাব সে ধরনের একাকিত্বের মধ্যে স্ট্যালিনের জীবন কাটছিল। তাতে হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে মৈত্রীর স্পর্শ তাকে বিচলিত করায় তাঁর চোখের জল এসে গিয়েছিলো ।ৎপরে রাষ্ট্রপতি থাকাকালে রাধাকৃষ্ণণ এর বেতন ছিল দশ হাজার টাকা ।মাত্র 2 হাজার টাকা বাকি টাকা দেশের কাজে ব্যয়ের নির্দেশ ছিল ।গরমকালে সিমলায় বড়লাট দের জন্য বিপুল আরামের ব্যবস্থা ছিল তিনি সেসব উঠিয়ে দিয়ে ওই শৈলবাস কে করেন " Indian institute of advanced studies " স্বশাসিত আবাসিক সংস্থা। যা পরে শিল্প সাহিত্য ধর্ম ইতিহাস দর্শন সমাজবিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞান প্রভৃতির উচ্চতম গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে । গোঁড়ামি ও কুসংস্কার মুক্ত মানুষ হিসেবে সব সময় জাতিভেদ প্রথা অস্পৃশ্যতা ও হরিজনদের প্রতি বঞ্চনা ও বৈষম্যের প্রতিবাদ করেছেন ।আজীবন লেখাপড়া জ্ঞানচর্চায় ছিল তার প্রধান সঙ্গী ভারতবর্ষের সরকার তাকে ভারতরত্ন 'এর সম্মানে ভূষিত করেন।
"My search for truth "গ্রন্থ তিনি লিখেছেন তিনি অনেক দুঃখ কষ্ট অশান্তি পেয়েছেন জীবনে তা সত্বেও বহু মানুষের আশীর্বাদ ভালোবাসা শুভেচ্ছা ও পেয়েছেন. বুদ্ধদেব যিশুখ্রিস্ট ধর্ম জগতের মনীষী নিজেদের ত্রুটি দোষ সত্বেও মানুষকে ভালোবাসা , দুস্থ মানুষের সেবার কথা বলেছেন ।আমাদের সেই প্রয়াসে সচেষ্ট হতে হবে ।
তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে কয়েকটি হলো -
The philosophy of Rabindranath Tagore (1918), Macmillan, London, 294 pages
Indian Philosophy (1923) Vol.1, 738 pages. (1927) Vol 2, 807 pages. Oxford University Press.
The Hindu View of Life (1926), 92 pages
An Idealist View of Life (1929), 351 pages
Eastern Religions and Western Thought (1939), Oxford University Press, 396 pages
Religion and Society (1947), George Allen and Unwin Ltd., London, 242 pages
The Bhagavadgītā: with an introductory essay, Sanskrit text, English translation and notes (1948), 388 pages
The Dhammapada (1950), 194 pages, Oxford University Press
The Principal Upanishads (1953), 958 pages,
HarperCollins Publishers Limited
Recovery of Faith (1956), 205 pages
A Source Book in Indian Philosophy (1957), 683 pages,
Princeton University Press, with Charles A. Moore as co-editor.
The Brahma Sutra: The Philosophy of Spiritual Life. London: George Allen & Unwin Ltd., 1959, 606 pages.
Religion, Science & Culture (1968), 121 pages
সম্মাননা :
Sarvepalli on a 1989 stamp of India
A portrait of Sarvepalli Radhakrishnan adorns the Chamber of the Rajya Sabha.
1931: appointed a Knight Bachelor in, [web 5] although he ceased to use the title "Sir" after India attained independence.
1933-37: Nominated five times for the Nobel Prize in Literature.
1938: elected Fellow of the British Academy.
1954: The Bharat Ratna, the highest civilian award in India.
1954: Sash First Class (Banda de Primera clase) of the Orden Mexicana del Águila Azteca
1954: Order Pour le Mérite for Arts and Sciences (Germany)
1961: the Peace Prize of the German Book Trade.
1962: Institution of Teacher's Day in India, yearly celebrated at 5 September, Sarvepalli's birthday, in honour of Sarvepalli's belief that "teachers should be the best minds in the country".
1963: the British Order of Merit.
1968: Sahitya Akademi fellowship, The highest honour conferred by the Sahitya Akademi on a writer (he is the first person to get this award)
1975: the Templeton Prize in 1975, a few months before his death, for advocating non-aggression and conveying "a universal reality of God that embraced love and wisdom for all people."
He donated the entire amount of the Templeton Prize to Oxford University.
1989: institution of the Radhakrishnan Scholarships by Oxford University in the memory of Sarvepalli. The scholarships were later renamed the "Radhakrishnan Chevening Scholarships".
He was nominated sixteen times for the Nobel prize in literature, and eleven times for the Nobel Peace prize.
শিক্ষা মানে শুধু প্রথাগত শিক্ষা নয় রাধাকৃষ্ণণ জীবনের বাইরে মানুষের নৈতিক শিক্ষা, ধর্মশিক্ষা, দেশাত্মবোধের শিক্ষা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নানা শিক্ষার কথা বলেছেন- লিখেছেন। ১৯০৯ -১৯৭৫ দীর্ঘ প্রায় ৬৬ বছর এইসব নিয়ে ভেবেছিলেন। এইসব বিষয়ে মানুষকে অবহিত করেছেন ।তাই তাাঁর জন্মদিনটি সরকারিভাবে "জাতীয় শিক্ষক " হিসেবে সূচিত হয়েছে । প্রণাম ।এই দার্শনিককে।।
অমর বাণী :
"It is not God that is worshipped but the authority that claims to speak in His name. Sin becomes disobedience to authority not violation of integrity."
"Reading a book gives us the habit of solitary reflection and true enjoyment."
"When we think we know, we cease to learn."
"A literary genius, it is said, resembles all, though no one resembles him."
"There is nothing wonderful in my saying that Jainism was in existence long before the Vedas were composed."
"A life of joy and happiness is possible only on the basis of knowledge.
"If he does not fight, it is not because he rejects all fighting as futile, but because he has finished his fights. He has overcome all dissensions between himself and the world and is now at rest... We shall have wars and soldiers so long as the brute in us is untamed."
===========!!!!!!!!!!¡!!!!!!!!=============
No comments:
Post a Comment