Saturday, 5 September 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                জন্মদিনে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন

   প্রজ্ঞাবানঋষি পণ্ডিতপ্রবর জ্যোতির্ময় নন্দ
                          এবং
         'পরবতবাবু' মানসকন্যা "বিদিশা'র    
   প্রাণপুরুষ অধ্যাপক প্রবোধ কুমার ভৌমিক

!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!@@@@@!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
               Doinik Sabder Methopath
                 Vol -122.Dt -06.09.2020
                 ২০  ভাদ্র,১৪২৭. রবিবার
============///////////////==============
     প্রজ্ঞাবান ঋষি পণ্ডিতপ্রবর জ্যোতির্ময় নন্দ 
            ( ০৬.০৯.১৯০৮ - ০৫.১১.১৯৯৬)
                  বিশিষ্ট কবি ও প্রাবন্ধিক অজিত জানা


       " ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়
                তোমারি হউক জয় "
জ্ঞান- কর্ম -ভক্তির সম্মিলিত বিগ্রহ হচ্ছেন, পন্ডিত প্রবর ,পরম বৈষ্ণব , পরম শাক্ত জ্যোতির্ময় নন্দ। তিনি কুশাগ্র বুদ্ধিসম্পন্ন শাস্ত্র পাণ্ডিত্যে সুমহান ছিলেন .শাস্ত্র জ্ঞানে তিনি ছিলেন পরম ধনী। তিনি ছিলেন অবিসংবাদিত পন্ডিত প্রকাণ্ড। ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক - বাহক ও বিশ্ব মানবতার পুজারি ছিলেন ।তিনি সার্থক ও পরম ভাগবত ছিলেন ।তিনি ছিলেন সর্বজনগ্রাহ্য সর্বজনমান্য প্রজ্ঞাবান 
বিজ্ঞবর । সাধু মহাত্মা ধর্মগুরু বিদগ্ধ পন্ডিত, মহাজন সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন ।চলার পথে মা তাঁর মহাপাথেয় ছিল ।তিনি ছিলেন চরিত্রবান আদর্শ পথের পথিক মনীষা নক্ষত্র। বহু প্রতিভায় 
চির সমুজ্জ্বল ক্ষণজন্মা শুক্ল সন্ন্যাসী ছিলেন।তিনি ছিলেন পরম শাস্ত্র নিষ্ঠ, মধুভাষী বাগ্মী ও ধর্মনিষ্ঠ লেখক।
       অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহাকুমার ভগবানপুর থানা (বর্তমান ভূপতিনগর )র সূয়াদিঘি গ্রামে ( বর্তমান গ্রাম্যদেবী মুগেশ্বরীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জনপদ মুগবেড়িয়া)র জমিদার নন্দ পরিবারে জ্যোতির্ময় নন্দের জন্ম হয় ৬ই সেপ্টেম্বর ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে। পিতা ছিলেন প্রবল পরাক্রান্ত হৃদয়বান স্বাধীনতাপ্রেমী বিরজা চরণ নন্দ ও মাতা ছিলেন মমতাময়ী ভক্তিমতী লক্ষীপ্রিয়া দেবী। প্রপিতামহ ভোলানাথ প্রতিষ্ঠিত গ্রাম্য চতুস্পাটিতে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। স্কুল শিক্ষা সম্পন্ন করেন গঙ্গাধর (ঠাকুরদা নামাঙ্কিত) হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। পরে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে আইএসসি প্রথম বিভাগ পাস করেন ১৯২৭ সালে। ১৯২৯ সালে সংস্কৃত কলেজ থেকে সংস্কৃত অনার্স বিএ পাস করেন প্রথম শ্রেণীতে।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এমএ তে ভর্তি হলেন এবং পাঠ সম্পন্ন করেন কিন্তু তাঁর পিতামহ গঙ্গাধর নন্দের মৃত্যুর (১৯৩০) কারণে ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়ে মুগবেড়িয়া ফিরতে হয়। এই সময়ে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ড: গৌরীনাথ শাস্ত্রী এবং ড: মহানাব্রত ব্রহ্মচারী. পরবর্তীকালে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাবিজ্ঞানে সিমলা, রোটক ন্যাশনাল হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ থেকে এম ডি এইচ এবং এম এস সি ডিগ্রী লাভ করেন।
                 জ্ঞানতাপস জ্যোতির্ময় নন্দের জ্ঞান আহরণের তৃষ্ণা ছিল প্রবল। তিনি সংস্কৃত সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করেছেন। তাঁর অর্জিত উপাধি -'বেদান্ততীর্থ ', 'স্মৃতিবিশারদ 'ও 'জ্যোতিষরত্ন' প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। জ্ঞান অর্জনসহ ছিল তাঁর তপস্যা ও ধ্যান। আধ্যাত্ম জ্ঞানে তিনি ছিলেন মহা পন্ডিত।গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনের তিনি ছিলেন 'ভক্তি চক্রবর্তী'. তিনি বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত ছিলেন. তাঁর পিতা পিতামহের উদ্যোগে গড়া মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর হাইস্কুল ,মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর কলেজ, বেলদা গঙ্গাধার অ্যাক্যাডেমি, ললাট গঙ্গাধর পাঠশালা (হাইস্কুল) ,ভোলানাথ সংস্কৃত মহাবিদ্যালয় প্রভৃতির সঙ্গে তিনি নিবিড় ভাবে যুক্ত ছিলেন।তিনি বহুবার রাজ্য সরকারের "বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদে'র সদস্য নির্বাচিত হন." নিখিল বঙ্গ সংস্কৃতি সেবি সমিতি'তে তিনি দীর্ঘ সময়ের সহ-সভাপতি ছিলেন .যেখানে সভাপতি ছিলেন ডঃ শ্রীজীব ন্যায়তীর্থ. বহু বছর তিনি তারকেশ্বর মন্দিরের দেবোত্তর ট্রাস্টের দায়িত্ব ও পালন করেন।
            তাঁর সাহিত্য সাধনা ও বিস্ময়কর। তিনি প্রায় সহস্রাধিক প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। তিনি বাংলা ও সংস্কৃতি অনেক কবিতা রচনা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত লেখাগুলি উজ্জীবন, জাহ্নবী, উদ্বোধন, প্রতিধ্বনি,আর্য্যশাস্ত্র , আর্য্যদর্পণ, প্রণব, শ্রীসুদর্শন প্রভৃতি পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় তাঁর পদচারণা আমাদের মুগ্ধ করে।
       কেবলমাত্র তিনি বিশুদ্ধ শাস্ত্র কথাই বলেননি , তার ব্যাখ্যাও বিশ্লেষণ করেছেন মানব কল্যাণের জন্য। তাঁর চরিত্রে বহুগুণ বিদ্যমান। তিনি অশন- বসনে অতিসাধারণ ছিলেন. তিনি আহারে- বিহারে এবং কথোপকথনে ভীষণ সংযত থাকতেন. তিনি -
" জিত সর্বং জিতে রসে " মেনে চলতেন। তিনি জাতি ধর্মের চেয়ে মনুষ্যত্বকে বড় করে দেখেছেন। ধর্মীয় অনুশাসন ও আচার এর চেয়ে তিনি বড় করে দেখেছেন জীবনযাপনের সুনীতিকে।
    বর্তমানকালে তাঁকে স্মরণ করতে হবে তাঁর আদর্শ বোধকে তুলে ধরার মাধ্যমে. জাতীয় সঙ্কট ও বিপর্যয়ের কালে তাঁর জীবনবর্তিকাই হবে আলোকশিখা , দীপশিখা। এই মহান মনীষীর মৃত্যু হয় ,০৫ নভেম্বর ১৯৯৬ সালে। (১৯ কার্তিক ১৪০৩)
********************!!!!!!!!!!!!*************

          মানসকন্যা  বিদিশা'র প্রাণপুরুষ
            অধ্যাপক প্রবোধকুমার ভৌমিক


            ১৯২৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম থানার আমদাবাদে গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা যোগেন্দ্রনাথ ও মাতা স্বর্ণময়ী দেবী। গ্রামের সম্ভ্রান্ত বনেদি একান্নবর্তী কৃষক পরিবারে তাঁর জন্ম। গ্রামীণ পরিমণ্ডলে ছোটবেলায় ধুলো মাটি মেখে বাল্য জীবন অতিবাহিত করেন। বিভিন্ন চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহী হন। জীবনের প্রথম পাঠ গ্রামীণ পাঠশালা। পরে খেজুরির জাতীয় বিদ্যালয় কলাগাছিয়া জগদীশ বিদ্যাপীঠ পড়াশোনা করেন। তিনি এই স্কুলের কৃতী শিক্ষক তথা স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী নিকুঞ্জ বিহারী মাইতি র ছাত্র। এছাড়া শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন পরেশ চন্দ্র মাইতি এবং গিরিশ চন্দ্র মাইতি । নবম শ্রেণীর ছাত্র, পড়াশোনার পাশাপাশি কাঁথি শহরের পিকেটিংয়ে যোগ দেন । ধরা পড়েন পুলিশের হাতে। ২৩ শে সেপ্টেম্বর কারাদণ্ড হয়। দেড় বছর কারাবাস করে আবার নবম শ্রেণীতে পড়াশোনা শুরু করেন। আজীবন জ্ঞান অন্বেষণের ব্রতী ছাত্রটি পরবর্তীতে পড়াশোনার জন্য বঙ্গবাসী কলেজ এ ভর্তি হন। ১৯৪৯ সালে ওই কলেজ থেকে নৃতত্ত্ব বিভাগে বিএসসি পাস করেন। ১৯৫১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এস সি পাশ করেন। পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে বঙ্গবাসী কলেজ এবং পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপনার কাজ করেন ।নৃতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ও পরে ডিন হন। অতিথি অধ্যাপনা করেছেন -কলকাতা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ,খড়গপুর আইআইটি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে। ভিজিটিং লেকচারার হিসেবে ঘুরেছেন- ইংল্যান্ড, ফ্রান্স . গবেষণার কাজে অন্ধ্রপ্রদেশ, মনিপুর, অসম , বাংলাদেশ, নেপালে নানা সময়ে গিয়েছেন। 
            পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার পশ্চিমাংশে বিস্তীর্ণ আদিবাসী অঞ্চল। ‌ সেই আদিবাসীদের মধ্যে একটি বিশেষ সম্প্রদায় লোধা এবং অন্ধপ্রদেশের চেঞ্চু জীবন ও সংস্কৃতি নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন।তখন তিনি বঙ্গবাসী কলেজের ছাত্র। প্রিয় শিক্ষক নির্মল কুমার বসুর সঙ্গে গবেষণার কাজে নারায়ণগড় এসেছেন সালটা ছিল ১৯৫২. ওখানকার জনজাতির জীবন চর্চা দেখে শিক্ষক ছাত্রকে বলেছিলেন -"
"প্রবোধ শুধু গবেষণা করলে হবে না, এদের কি হবে? এদের জন্য চেষ্টা করো " । শিক্ষকের পরম ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি লোধা সম্প্রদায়ের সামগ্রিক উন্নতি ও শিক্ষাদানের কাজ শুরু করলেন। লোধা গ্রাম ঘুরে তিনি মোট ৪০৮ পরিবারকে নিয়ে সমীক্ষা করেন। মোট ১০৪০ জন পুরুষ ও ৯৬৭ জন মহিলার ওপরেই সমীক্ষা। ঝাড়গ্রাম এর নয়াগ্রাম ,জামবনি ,সাঁকরাইল , মেদিনীপুরের সবং, দাঁতন, খড়গপুর ,কেশিয়াড়ি ও নারায়ণগড় থানার ৩১ টি গ্রাম ঘুরে সমীক্ষা চলে। ১৯৬১ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তাঁর - " দা লোধাস অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল "
গ্রন্থের জন্য ‌ । গবেষণা কর্মটি ১৯৬৩ সালে বই আকারে প্রকাশ পায়। শিক্ষক নির্মল কুমার বসু বলেন - " in many respects Dr P K Bhowmiks account of the Lodha each of great value Anthropologist. " 
১৯৬৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর এই ডিগ্রি ছিল এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নৃতত্ত্ব বিভাগের প্রথম । ক্ষেত্র সমীক্ষার খুঁটিনাটি শিখিছেন অধ্যাপক তারক চন্দ্র দাস মহোদয়ের সংস্পর্শে।

                আজীবন পড়াশোনায় মেধাবী ছাত্র গুরুর কথা কখনো ভুলেননি। তাই তিনি লোধাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সচেষ্ট থেকেছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ।১৯৫৫ সালে গড়ে তোলেন সমাজ সেবক সংঘ। ৫০-৬০ বিঘা জায়গা নিয়ে গড়ে তুললেন স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান " বিদিশা"। ১৯৫২ সালে মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় লোধাদের জীবন উন্নয়নের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প শুরু করেন দায়িত্ব পান প্রবোধ বাবু। সরকার তাঁকে ৩৩ হাজার টাকা অনুদান দেয়। তিনি মনে করেন লোধা জাতির ছেলেমেয়েদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে শিক্ষা দান করলে, তারা জীবনে পরিবর্তন আনতে পারবে। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৬৫ সালে ১১ এপ্রিল কাজ শুরু করেন উপজাতি কল্যাণ দপ্তর এর আর্থিক সাহায্য লোধা উপজাতি ছাত্রাবাসের উদ্বোধন হয় ১৯৬৬ সালে ৩০ জুন। নাম রাখা হয় " কালকেতু অঙ্গন ". ৩০ জন ছাত্র নিয়ে রাজ্যে প্রথম লোধা ছেলে নিয়ে এই আশ্রম গড়ে ওঠে ।বিনা খরচে থাকা খাওয়া ও লেখাপড়ার ব্যবস্থা হাতে-কলমে স্বনির্ভরতার পার্ট দেওয়া হয় ওদের। ১৯৬৮ সালে আরেকটি ছাত্রাবাস হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুদানে। ২০ কুড়িজন ছাত্র নিয়ে নাম রাখা হয় -"বিশ্ব বসু অঙ্গন". ১৯৭০ সালে ছাত্রীদের জন্য হয় " ফুল্লরা অঙ্গন".

              ডহরপুরে সমাজ সেবক সংঘের মৌলিক কাজকর্ম সবাইকে অবাক করে। এঁরা উদ্যোগ নিয়ে ধান চাষ, কেঁচো সার তৈরি ,মৌমাছি পালন , টেইলারিং প্রশিক্ষণ ,মাদুর শিল্প, সমবায় প্রথায় শস্য গোলা সহ আরো অনেক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন । আন্তর্জাতিক সেমিনার শুরু করেন ।দেশ-বিদেশের নৃতাত্ত্বিকেরা এখানে আসেন । বিদিশা  তো উনি সমাজবিদ্যার গবেষণার জন্য ১৯৭০ সালে গড়ে তোলান -" The lnstitute of Social Research and Applied Anthropology." বিভিন্ন গবেষণাপত্র প্রকাশ এর জন্য ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয় গবেষণাপত্র "Man and life journal" জীবনে একাধিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রবোধ বাবু পশ্চিমবঙ্গ শিশু কল্যাণ পরিষদের পত্রিকা শিশু কল্যাণ এর দীর্ঘদিন সম্পাদনা করেন। ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান পরিষদের সভাপতি।  মেদিনীপুর সংস্কৃতি পরিষদ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি ছিলেন। আজীবন সদস্য ছিলেন কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটি। ১৯৬৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি হয়ে দিল্লিতে ডি নোটিফাইড ট্রাইবেল কমিশনে যোগ দেন।
 মূলত তাঁরই প্রচেষ্টায় লোধা আদিম উপজাতি গোষ্ঠী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়। লোধা সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য তিনি গড়ে তোলেন,১৯৬৫ সালে শবরপল্লী নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়। পরে ১৯৬৮ সালে উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়। ২০০৭ সালে উচ্চ বিদ্যালয় পরিণত হয়। নাম হয় " অধ্যাপক প্রবোধকুমার ভৌমিক বিদ্যাভবন " । এছাড়া গড়ে তোলেন বিরাট গ্রন্থাগার স্থানীয়ভাবে প্রত্নসামগ্রী সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা।
       যতদিন গেছে বিদিশার ফলে ফুলে নিজের রূপ পরিবর্তন করেছে। গোশালা মৎস্য চাষ কৃষি কাজের পাশে হরিণ গিনিপিগ খরগোশ রাজহাঁস ঘোড়া পাখির পরিচর্যা ও তাদের সঙ্গে সময় কাটানোর ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে ।ছেলেদের আশ্রম হোস্টেলের সামনে মনোরম পুকুর। পুকুরের মাঝে কৃত্রিম দ্বীপ। জলে চলে বোট।এক কথায় বিদিশা রূপে-গুণে সেজে উঠেছে তার জীবনের ইতিহাস মেখে। তাই তিনি লোধাদের কাছে কখনো "জ্যাঠা বাবু" কখনো "মাস্টারমশাই" আবার কখনো 'পরবতবাবু' নামে পরিচিত. তাদের প্রাণের মানুষ. জীবন গড়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে যে মানুষ আজীবন তাঁদের সঙ্গে থেকে দিন কাটিয়েছেন, সেই মানুষের গবেষণা আন্তর্জাতিক 
খ্যাতিসম্পন্ন  শুধু  নয়, ভারতের ফলিত নৃতত্ত্বের পুরোধা হয়ে উঠেছেন। তিনি আমেরিকার অভিনন্দন পত্র পেয়েছেন, রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটনের কাছ থেকে। তাঁর পরম শ্রদ্ধেয় স্যার লিখেছেন -" ডক্টর ভৌমিক লোধাদের মধ্যে শুধুমাত্র একজন নৃতাত্ত্বিক হিসেবে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় করেননি একজন সমাজ সেবক হিসেবে তিনি বিশেষ আগ্রহ নিয়ে এদের শিক্ষা এবং আর্থিক পুনর্বাসনের মাধ্যমে কিভাবে উন্নতির সোপান এ তুলে আনা যায় সেই বিষয়ে অনুসন্ধান করেছেন। "
১৯৭৬ সালে তিনি হায়ার সেকেন্ডারি কাউন্সিল পরিষদের সদস্য হয়ে মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন ।মাধ্যমিক পর্ষদ এর প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্ব সামলেছেন। উচ্চ শিক্ষা সংসদের পরিদর্শক হয় প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষ্যে উদ্যোগী ছিলেন। একটি কারিগরি বিদ্যালয় গড়ে তোলার ইচ্ছে ছিল। জেলার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার বিষয় অধ্যাপকের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান হন। তাঁর নাম জুড়ে আছে পাঠানখালী কলেজ, নন্দীগ্রাম কলেজ ,বাজকুল কলেজ, বেলদা কলেজ প্রতিষ্ঠা- সংগঠক হিসেবে .গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করেছেন বহু ছাত্রছাত্রীকে. তাঁর তত্ত্বাবধানে ৬০/৬২ জন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী গবেষণা সম্পূর্ণ করে পিএইচডি/ ডিলিট উপাধি অর্জন করেন। 
          জীবন যে সরল রেখায় প্রবহমান এমনতো নয়, চলার পথে সময়ে-অসময়ে বহু বাধা তিনি পেয়েছেন। বাধার সম্মুখীন হয়েছেন ।বিশেষ করে তাঁর এই কাজে। মানসকন্যা বিদিশায় ১৯৮০ সালের হামলা। তীর বল্লম যুদ্ধ। আহত হন কয়েকজন ।তছনছ হয়ে যায় স্বপ্নের এই সুরম্য জায়গা। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি,  আবার নতুন করে সাজিয়েছেন তাঁর বিদিশাকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর নামে জালিয়াতির অভিযোগ মামলা করেছিল । তাঁর ডিএসসি ডিগ্রী কেড়ে নেওয়া হয়। তিনি লড়াইয়ে মামলা করে জেতেন ।ডিগ্রী ফিরে পান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। 
         ২০০২ সালে চলমান এই মানুষটির জীবনে ঘটে যায় বড় দুর্ঘটনা। কলকাতা বইমেলায় লোকসাহিত্য নিয়ে বক্তৃতার প্রস্তুতির জন্য বিশেষ কাজে কলেজস্ট্রিট গিয়েছিলেন। চলন্ত বাস থেকে নামার সময় ধাক্কাধাক্কি হয় ।রাস্তার ওপর পড়ে যান ।কোমরের হাড় টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে পড়ে ।অস্ত্রোপচার করা হয় ২০০৩ সালে। কয়েক সপ্তাহ পর ০৩ রা ফেব্রুয়ারি ২০০৩ সালে স্বপ্নের সবকিছু রেখে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান পরবতবাবু। তাঁর ইচ্ছা অনুসারে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিদিশায় ।শোকে-দুঃখে চোখের জলে লোধা অধ্যুষিত গ্রাম ভেঙে পড়েন। বিদিশার অঙ্গনেই দাহ করা হয় এবং স্মৃতি মঞ্চ সহ মর্মরমূর্তি  গড়ে তোলা হয়। বিদিশার প্রাণপুরুষ আজ নেই, দায়িত্ব সামলাচ্ছেন প্রথমে তাঁর ছেলে প্রদীপ কুমার ভৌমিক আর এখন দায়িত্ব নিয়েছেন বিদিশা বিদ্যাভবন এর প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন ভৌমিক। এদের মধ্য দিয়ে প্রবোধ বাবু এখনো বেঁচে আছেন ।জেগে আছেন ।লোধা জাতীয় সম্প্রদায়ের মানুষজনের মনে- প্রাণে। 
                                            সংগৃহীত 
                                    আনন্দবাজার পত্রিকা
                                          (২৩.৮.২০)
================================

এমন কীর্তিমান ও মহান মানুষদের জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে,  আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। 
              অমর জীবন কথা। অমর রহে।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...