Saturday, 31 October 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

$$$$$$$$$$$$$$|||||||||||$$$$$$$$$$$$$$
             জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

                          
                         অনিল ঘড়াই
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆✓✓✓✓✓∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                Doinik Sabder Methopath
                Vol - 178.Dt -01.11.2020
                 ১৫ কার্তিক,১৪২৭. রবিবার
==========√√√√√√√√√==============
জাত কেউটের মতই জাত লেখক ছিলেন অনিল ঘড়াই (renowned novelist Anil gharai,)।

জাতে কিন্তু ছিলেন হাড়ি। অন্ত্যজ,ব্রাত্য,দলিত। অতি দলিত। কিন্তু দলিত জীবনের কোনো হীনমণ্যতা তাঁকে কোথাও স্পর্শ করতে পারেনি। অন্ত্যজ জীবনের সমাজবাস্তবকে তুলে ধরতে তিনি আমার মতে অনেক বড় বড় বাংলা লেখকের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন তাঁর প্রতিটি লেখায় বিশেষকরে ছোটগল্পে।

সাতের দশকের যে শক্তিমান লেখকদের কথা বাজারি লেখায় ছয়লাপ বাংলা সাহিত্যভুলে যেতে চলেছে, অভিজিত সেনগুপ্ত, শৈবাল মিত্র, অমর মিত্র, ভগীরথ মিশ্রদের সেই প্রজন্মের লেখদের সমকক্ষ ছিলেন অনিল ঘড়াই।



১৯৯৪ সালে দলিত সাহিত্যের জন্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পেয়েছিলেন সংস্কৃতি পুরস্কার।বাংলা দলিত সাহিত্য আন্দোলনও তাঁকে পুরস্কৃত করেছিল। 2002 সালে।কাঁথিতে সেই বাংলা দলিত সাহিত্য সম্মেলনে।

অনিল ঘড়াইয়ের জন্ম ১৯৫৭ সালে ১ লা নভেম্বর মেদিনীপুর জেলার এগরা থানার অম্তর্গত রুক্মিণীপুর গ্রামে৷‌ তাঁর শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের অনেকটা সময় কেটেছে নদীয়া জেলার কালীগঞ্জে৷‌

পিতা অভিমন্যু ঘড়াই ও মাতা তিলোত্তমা ঘড়াই।মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর৷‌
রেখে গেছেন দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে৷‌
নদিয়ার কালীগঞ্জের আদি বাড়িতে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

গত ৮ মাস ধরে কিডনি জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন এই সাহিত্যিক। তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু আর এক সাহিত্যিক নন্দদুলাল রায়চৌধুরী বলেন, “সাহিত্য-সংস্কৃতির বড় ক্ষতি হয়ে গেল।”

২৭ বছর বয়সে চক্রধরপুরে রেলের ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দেন তিনি। ১৯৮৫ সালে খড়্গপুর রেল বিভাগে বদলি হন। ১৯৯০ সালে তাঁর প্রথম ছোটগল্প প্রকাশ হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। নদিয়ার রাজোয়াড় বিদ্রোহ নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘অনন্ত দ্রাঘিমা’ ২০১০ সালে বঙ্কিম স্মৃতি পুরস্কার পায়। ১৯৯৪ সালে দলিত সাহিত্যের জন্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পেয়েছিলেন সংস্কৃতি পুরস্কার।

তাঁর নুনবাড়ি, আকাশ মাটির খেলা, কাক, পরিযান-সহ বহু লেখা সাহিত্যপ্রেমী মনে রেখেছেন। রেলশহরের কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে তিনি গড়েছিলেন ‘ঘরোয়া সাহিত্য বাসর’।

কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়েতে আধিকারিক হিসেবে চাকরি করতেন। চাকরিসূত্রে চক্রধরপুর ও পরে খড়্‌গপুরে বসবাস করতেন।

তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ কাক এবং প্রথম উপন্যাস নুনবাড়্থি। তার গল্প, উপন্যাস ও কবিতা মিলিয়ে গ্রন্থের সংখ্যা পঞ্চাশেরও বেশি। অনিল ঘড়াইয়ের সাহিত্যের মূল সম্পদ দলিত, নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের জীবনচর্যা। নদীয়া ও মেদিনীপুরের গ্রামীণ মানুষ ও তাদের কথ্যভাষা যেমন উঠে এসেছে তাঁর রচনায়, তেমনি চক্রধরপুরে বসবাস করার সুবাদে সিংভূম অঞ্চলের কথ্যভাষাসহ সেখানকার মানুষের জীবনের ছবি পাওয়া যায় তাঁর সাহিত্যে।

হিন্দী ও ইংরেজি ভাষাতেও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ।

দীর্ঘদিন থেকে কিডনির অসুখে ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু অসুস্থ অবস্থাতেও সমানে চালিয়ে গেছেন তাঁর সাহিত্যকর্ম, ‘তূর্য’ পত্রিকার সম্পাদনা ও অন্যান্য কাজ। মানুষের প্রতি আন্তরিক ব্যবহার ছিল তাঁর চরিত্রের একটি উজ্জ্বল দিক।

প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ‘নুনবাড়ি’ এবং গল্প-সঙ্কলন ‘কাক’ থেকেই তাঁর স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত সাহিত্য-পথের যাত্রাশুরু৷‌ যে যাত্রাপথে জীবনের বিস্তৃত পরিসর, মানসিক টানাপোড়েন, খুঁটিনাটি উঠে এসেছে বারবার৷‌ ষাটেরও বেশি বইয়ের রচয়িতা এই সাহিত্যিক তাঁর ‘অনম্ত দ্রাঘিমা’-র জন্য পেয়েছেন বঙ্কিম পুরস্কার৷‌ ঔপন্যাসিক ও গল্পকার পরিচয়ের আড়ালে প্রয়াত সাহিত্যিকের ছিল এক কবি-মন৷‌ কবিতা ছিল তাঁর প্রথম প্রেম৷‌ কবিতার জন্য পেয়েছেন ‘আকাশ সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ‘কবি নিত্যানন্দ পুরস্কার’৷‌ কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন সোমেন চন্দ পুরস্কার, তারাশঙ্কর পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার, তিস্তা-তোর্সা সম্মান-সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মান৷‌ তাঁর পরিচিত গল্প-উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘পরীযান ও অন্যান্য গল্প’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘কামকুঠিয়া’, ‘ফুলপরী’, ‘জন্মদাগ’, ‘নীল দুঃখের ছবি’, ‘সামনে সাগর’, ‘দৌড়বোগাড়ার উপাখ্যান’, ‘বনবাসী’, ‘জার্মানের মা’, ‘লোধগ্রামে সূর্যোদয়’ প্রভৃতি৷‌
গ্রন্থাবলী :

উপন্যাস -
নুনবাড়ি (১৯৮৯)
বনবাসী (১৯৯০)
মুকুলের গন্ধ (১৯৯৩)
তরঙ্গলতা (১৯৯৩)
বোবাযুদ্ধ (১৯৯৩)
বক্ররেখা (১৯৯৪)
পবন (১৯৯৪)
কাননে কুসুমকলি (১৯৯৪)
ধর্মের কল (১৯৯৫)
মেঘ জীবনের তৃষ্ণা (১৯৯৬)
কালের পুতুল (১৯৯৬)
দৌড়বোগাড়ার উপাখ্যান (১৯৯৭)
খেলাঘর (১৯৯৮)
জন্মদাগ (১৯৯৯)
বিপরীত যুদ্ধের মহড়া (২০০০)
নীল দুঃখের ছবি (২০০১)
পাতা ওড়ার দিন (২০০২)
সামনে সাগর (২০০৩)
অনন্ত দ্রাঘিমা (২০০৯)

গল্পগ্রন্থ-
কাক (১৯৮২)
পরীযান (১৯৮৫)
আগুন (১৯৮৭)
জ্ঞানবৃক্ষের ফল (১৯৮৮)
কটাশ (১৯৯০)
তিন ভুবনের গল্প (১৯৯০)
জার্মানের মা (১৯৯১)
ভারতবর্ষ (১৯৯২)
গর্ভ দাও (১৯৯৩)
কামকুঠিয়া (১৯৯৬)
আকাশ মাটির খেলা (১৯৯৭)
লু (১৯৯৭)
গোদানা (১৯৯৮)
স্বপ্নের খরাপাখি (১৯৯৮)
অক্ষরমালা (১৯৯৮)
শ্বেতপদ্ম (১৯৯৮)

পুরস্কার ও সম্মাননা-

সর্বভারতীয় সংস্কৃতি পুরস্কার (১৯৯৪)
মাইকেল মধুসূদন স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৪)
তারাশঙ্কর স্মৃতি পুরস্কার (২০০১)
সোমেন চন্দ স্মৃতি পুরস্কার (২০০২)
বঙ্কিম পুরস্কার (২০১০)

 মৃত্যু - ২৩ নভেম্বর ২০১৪ (বয়স ৫৭)
কলকাতা।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

Friday, 30 October 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

           জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

জন কীটস্

=================================

Doinik Sabder Methopath

Vol -177. Dt- 31.10.2020

১৫ কার্তিক,১৪২৭.শনিবার

÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷


"Beauty is truth, truth beauty,-that is all

Ye know on earth, and all ye need to know."

কীটসেরর জন্ম লন্ডনে, ১৭৯৫ সালের ৩১ অক্টোবর। পিতা টমাস কীটস ছিলেন ভাড়াটে ঘোড়ার আস্তাবলের কর্মচারী, পরে সেই আস্তাবলের মালিকের কন্যা ফ্রান্সিস জেনিংসকে বিয়ে করে সেই ব্যবসার মালিক হয়ে যান। কীটস’রা ছিলেন চার ভাই, এক বোন। তার এক ভাই ছোট বেলাতেই মারা যায়। কীটসের বাবার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিলো না। তিনি এনফিল্ডের একটি নামকরা স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করান। সেখানে প্রধান শিক্ষকের ছেলে চার্লস ক্লার্কের সাথে কীটসের সাথে ঘনিষ্ঠতা হয়। ক্লার্ক ছিলেন একজন পন্ডিত ব্যক্তি ও সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি কীটসকে কল্পনা ও কাব্যের জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ছোটবেলায় কীটসের অবশ্য পড়াশুনায় মন ছিলো না। তিনি ছিলেন চঞ্চল প্রকৃতির আর মারকুটে স্বভাবের। তবে স্কুলে এসে ক্লার্কের সান্নিধ্যে তিনি এলিজাবেথিয়ান কবি স্পেন্সার ও শেক্সপিয়ারের কাব্য ও নাটকের সাথে পরিচয় লাভ করেন। চ্যাপম্যান অনুদিত হোমারের ইলিয়াড-এর সঙ্গেও তার পরিচয় ঘটে। এডমন্ড স্পেন্সার-এর ‘দ্যা ফেইরী কুইন’ পড়ে প্রথম তার মনে কাব্যসৃষ্টির অনুপ্রেরণা জাগে।

১৮০৪ সালের এপ্রিলে, কীটস আর তার ছোটভাই জর্জকে স্কুলে রেখে ফেরার পথে তাদের বাবা ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে মাথার খুলিতে আঘাত পান। এই আঘাতই তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কীটসের বয়স তখন মাত্র ৮ বছর। এর দু’মাস পর তার মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু এ বিয়ে সুখের না হওয়ায় তিনি ফিরে আসেন ও চার সন্তানকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে চলে যান। ১৮১০ সালের মার্চে কীটসের মা যক্ষ্ণা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তখন কীটসের বয়স ১৪। রোগশয্যায় কীটসের সেবা ছিলো তুলনাহীন। এভাবেই ক্রমে নিঃসঙ্গ হতে থাকে কীটসের বেড়ে ওঠার দিনগুলো। দিদিমা কীটসকে স্কুল ছাড়িয়ে হ্যামন্ড নামক একজন চিকিৎসকের অধীনে শিক্ষানবিশ নিযুক্ত করেন। কিছুদিন পরেই কীটস ডাক্তার হ্যামন্ডের সাথে ঝগড়া করে শিক্ষানবিশী ছেড়ে দিয়ে লন্ডন ফিরে আসেন। এখানে সেন্ট টমাস হাসপাতালে বেশ কিছুদিন ধরে হাতে-কলমে ডাক্তারি শিখেন। কিন্তু এসব কীটসের জন্যে ছিলো না। তার ভাবুক মন কাব্যের মায়াময় জগতে ছুটেই চলতে থাকে অবিরত। ১৮১৪ সাল থেকে তার কাব্য রচনার শুরু।

১৮১৭ সালে ডাক্তারি ছেড়ে পুরোপুরি কাব্যের জগতে নিমগ্ন হন কবি। এ সময় কবি জন হ্যামিল্টন রেনল্ড, চিত্রশিল্পী সেভার্ণ, সমালোচক হ্যাজলিট, কোলরীজ, ল্যাম্ব, শেলীসহ প্রমুখ গুণী ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেন কীটস। খ্যাতিমান ব্যক্তিদের নিয়ে একটা সুন্দর বন্ধুচক্র গড়ে ওঠে তার। লন্ডনের দিনগুলি তার ভালো কাটছিলো না। ভাই জর্জ আর টমকে নিয়ে কীটস হ্যাম্পস্টেডে চলে আসেন। তার এই নতুন আবাস থেকে কবি লে হান্ট, কোলরীজ ও তার বন্ধুদের অন্যান্যদের বাড়ি কাছাকাছিই ছিলো। এ সময় কীটসের ছোট ভাই টম যক্ষ্ণায় পড়েন। কীটস আর জর্জ দুই ভাই মিলে দিনরাত সেবা করতে থাকেন ছোট ভাইয়ের। এই সংস্পর্শকালীন সময়েই কীটসের ভেতর সংক্রমিত হয় রাজরোগ যক্ষ্ণার বীজ। সেই দিনগুলোতে যক্ষা ছিলো দুরারোগ্য। পরবর্তী শতাব্দীতে এসে যক্ষ্ণার প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়। ১৮১৮ সালের ১ ডিসেম্বর টম কীটস মারা যান।


https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/XZL-147691.jpg


ভাইয়ের মৃত্যুর পর কীটস তার পুরোনো আবাস ছেড়ে একই এলাকায় বন্ধু চার্লস ব্রাউনের নতুন তৈরি বাড়ি ‘ওয়েন্টওয়ার্থ প্লেস”-এ চলে আসেন। এখানেই কীটস রচনা করেন তার ৫/৬টি বিখ্যাত ‘ওড’ (Ode)। ‘Ode to a Nightingale’, ‘Ode on a Grecian Urn’, ‘Ode on Melancholy’ প্রভৃতি তার সুবিখ্যাত Ode। কীটসের প্রতিভার সম্যক স্ফুরণ ঘটেছে তার Ode-গুলোর মধ্যে। কীটস যদি শুধু Ode-গুলোই রচনা করতেন, তবু ও ইংরেজি সাহিত্যের মর্যাদাসম্পন্ন একজন কবি বলে পরিগণিত হতেন। তার সমস্ত হৃদয়-মন ছিলো সৌন্দর্যের নন্দলোকে আবদ্ধ। তার সকল সৃষ্টিকর্মে তিনি সৌন্দর্য ও মাধুর্যের পূজারী ছিলেন। তবে তার বিশেষত্ব শুধু সৌন্দর্যের বর্ণনায় ছিলো না, ছিলো প্রকৃত সৌন্দর্য খুঁজে বের করার সক্ষমতার মধ্যে। আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ বস্তুগুলোর মধ্যে তিনি পেয়েছেন সৌন্দর্য, বিষণ্নতাকে বলেছেন সৌন্দর্যের পরিপূরক। তার কাছে প্রকৃতির মাঝে লুক্কায়িত এই নিগূঢ় সৌন্দর্যের অস্তিত্ব ছিলো মহান সত্য। আর তাই তিনি বলেছেন, “Beauty is truth, truth beauty”। সৌন্দর্যের মধ্যে একটা সুগভীর শান্তির ভাবও আছে। এই শান্তভাবের মধ্যেও রয়েছে বিষণ্ণতা। এই বিষণ্ণতা এসেছে কবিমনে স্বল্পায়ু জীবনের নশ্বরতার চিন্তা থেকে, মানব নিয়তির নিস্ফলতা বোধ থেকে। তবুও পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়ে যে সৌন্দর্যের যে রূপ-মাধুরী তিনি সম্ভোগ করেছেন, তাকেই চিরন্তন করে রেখে গেছেন তার Ode-গুলোর মধ্যে দিয়ে।

কীটস অনেকগুলো সনেটও লিখেছেন। সনেটগুলোর মাঝে কবি মনের ছোট ছোট ভাবগুলো মুক্তোর মতো ঝলমল করে উঠেছে। এখানেও রয়েছে সেই আদিম সুকুমার কল্পনার বিস্ময়করতা, নির্জন প্রকৃতির আসঙ্গ লিপ্সার আর্তি, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতি আর গ্রীক সৌন্দর্যপ্রিয়তার ছোঁয়া।

১৮১৯ সালে ফ্যানি ব্রাউনির সাথে কীটসের পরিচয় হয়। ফ্যানি তার বিধবা মায়ের সাথে ওয়েন্টওয়ার্থ প্লেসের অপর অংশে এসে ওঠে। ফ্যানির নামের সাথে কীটসের বোন ও মায়ের ডাকনামের মিল ছিলো। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠতে থাকে। কীটস ফ্যানিকে বই ধার দিতেন। প্রায়ই তারা একসাথে পড়তেনও। শান্তশিষ্ট মেয়েটির মাঝে নিজের নিঃসঙ্গ অংশটির পরিপূর্ণতা খুঁজে পান কবি। অনিবার্যভাবে ফ্যানির প্রেমে পড়ে যান কীটস। নিজের লেখা অসম্পূর্ণ সনেট ‘ব্রাইট স্টার’ তিন ফ্যানিকে দেন। আমৃত্যু কীটস ফ্যানির বাগদত্তা ছিলেন। তাদের বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। ১৮২০ সালেই কীটসের মধ্যে যক্ষ্ণার সমূহ লক্ষণ সাংঘাতিকভাবে ফুটে উঠতে থাকে। যক্ষ্ণায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে ফ্যানির সাথে তার শারীরিক স্পর্শের সুযোগও বন্ধ হয়ে যায় তার। তারা কাঁচের জানলার দু’পার থেকে একে অপরের সাথে কথা বলতেন, পত্র আদান-প্রদান করতেন।


https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/XZL-147691.jpg

ফ্যানি ব্রাউনি : kinodv.ru

ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে কীটসের অবস্থা খারাপ হতে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে তিনি ইটালীতে বন্ধু জোসেফ সেভার্ণের কাছে চলে যান। সেখানে রোমে একটি বাসা নেন তিনি। কিন্তু হাওয়া বদল করেও তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। ঘন ঘন রক্তবমি হতে থাকে। একদিন রক্তবমি করার পরে তিনি বলেন, “এই রক্ত আমি চিনি, এ উঠে এসেছে সোজা আমার ধমনী থেকে। এই রঙ আমাকে ধোঁকা দিতে পারে না।” বেঁচে থাকাটা তার জন্য একসময় দুঃসহ হয়ে ওঠে। একটা সময় বারবার তিনি বলতে থাকেন, “আমার এই মৃত অস্তিত্ব আর কতদিন চলবে?


https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/XZL-147691.jpg

রোমে যে বাড়িতে কীটস থাকতেন, বর্তমানে কীটস-শেলী মিউজিয়াম : twitter.com

১৮২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এক জীবনকাল সমান নিঃসঙ্গতার দিনপঞ্জী, অপূর্ণ প্রেমকে পূর্ণ করার আমৃত্যু বাসনা আর এক মাত্রাহীন শারীরিক কষ্ট নিয়ে চিরসুন্দরের এই কবি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। রোমের প্রোটেস্ট্যান্ট সিমেট্রিতে কবিকে দাফন করা হয়। তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তার সমাধি ফলকে কোনো নাম বা তারিখ লিখা হয়নি। শুধু লিখা হয়েছে, “এখানে এমন একজন শায়িত, যার নাম লিখা হয়েছিলো জলের ধারায়।” ('Here lies One Whose Name was writ in Water.') নিজের ক্ষণস্থায়ী জীবনকে এভাবেই বর্ণনা করে গেছেন কীটস।


https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/XZL-147691.jpg

কীটসের সমাধি : espinterest.com

কীটস ছিলেন রোমান্টিক যুগের সর্বকনিষ্ঠ কবি। তার সমসাময়িকরা সকলে শিক্ষা-দীক্ষায় অনেক বেশি উচ্চে ছিলেন। কীটস স্কুলের গন্ডীটাও ঠিকমতো পার হতে পারেন নি। কিন্তু যা পড়তেন, যার সংস্পর্শে আসতেন, তাকে আত্মসাৎ করে নেওয়ার অসীম ক্ষমতা ছিলো তার। আর তাই স্পেন্সার, চ্যাপম্যান, মিল্টন, শেক্সপিয়ার, লে-হান্ট কারও প্রভাব থেকেই তিনি মুক্ত নন। মাত্র ৬ বছরের কাব্যজীবনে যে ফসল তিনি ঘরে তুলেছেন তা মোটেও নগন্য নয়। সমসাময়িক সকলের থেকে গৃহীত বৈচিত্র্যময় সব উপাদান নিয়ে গঠিত এক অপূর্ব রূপমূর্তি ছিলো তার সৃষ্টির।


https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/XZL-147691.jpg

ফ্যানিকে লেখা কীটসের অনেক চিঠির একটি : 365lettersblog.blogspot.com

১৮২০-এর ফেব্রুয়ারিতে ফ্যানিকে কীটস লিখেছিলেন, “আমি এমন কোনো মহান কর্ম পেছনে ফেলে যাচ্ছিনা যা আমার বন্ধুদের গর্বিত করবে, আমি শুধু প্রতিটি জিনিসের ভেতরের সৌন্দর্য্যের উৎসকে ভালোবেসেছি। সময় পেলে নিজেকে স্মরণীয় করে যেতাম।” সত্য, সৌন্দর্য আর প্রেমের পিয়াসী এই কবি তার পরেও স্মরণীয় হয়ে আছেন তার অনবদ্য সৃষ্টিকর্ম দিয়ে, মানুষের মাঝে সৌন্দর্যতত্ত্বের বীজ বুনে দিয়ে। এক বসন্ত যায়, আরেক বসন্ত আসে। বাসন্তী হাওয়ায় ভেসে বসন্তের দূতের মতো চিরকাল কাব্যপ্রেমীদের হৃদয় ছুঁয়ে যান জন কীটস। চিরবসন্তের দুনিয়ায় চিরসুখী থাকুন চিরসুন্দরের কবি

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

Thursday, 29 October 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
            জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

সুকুমার রায় 

সুধীন্দ্রনাথ দত্ত 


অরুণ কুমার সরকার 

এজরা পাউন্ড
==========®®®®®®===============
       Doinik Sabder Methopath
          Vol -176.Dt - 30.10.2020
           ১৩ কার্তিক,১৪২৭. শুক্রবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷©©©©©©÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
বাংলা সাহিত্যে সুকুমার রায় হলেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যার লেখা অসাধারণ কিছু সাহিত্যকর্ম আজও প্রত্যেক বাঙালীর মনে অমর হয়ে আছে | বিংশ শতাব্দীর ভারত তথা বাংলা সাহিত্য জগতে তিনি হয়ে ওঠেন এক নবদিগন্তের পথিক | কবি, গল্পকার ও সাহিত্যিক সুকুমার রায় ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম সার্থকভাবে; অদ্ভুত এক সাহিত্য রীতির প্রবর্তন করেন যা প্রত্যেক বয়সের পাঠকদের মন কাড়তে সমানভাবে সক্ষম হয় |



সুকুমার রায়ের জন্ম হয় ১৮৮৭ সালের ৩০শে অক্টোবর, কোলকাতার এক ব্রাহ্ম পরিবারে | তাঁর বাবার নাম ছিলো উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, যিনি কিনা বাংলার একজন বিখ্যাত শিশুসাহিত্যক ছিলেন আর মা বিধুমুখী দেবী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের প্রধান সংস্কারক দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে |

তাঁর আদি বাড়ি ছিলো বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার মসূয়া গ্রামে | তাঁর মোট ২জন ভাই ও ৩জন বোন ছিলো, যাদের নাম যথাক্রমে- সুবিনয়, সুবিমল, সুখলতা, পুণ্যলতা ও শান্তিলতা ছিলো |

সুকুমার রায়ের, মহান সাহিত্যিক হয়ে ওঠার পিছনে তাঁর পরিবারের কিন্তু অবদান ছিলো প্রচুর | কারণ তাঁর পারিবারিক পরিবেশ ছিলো একদম সাহিত্য অনুরাগী, যার সুবাদে তাঁর মধ্যকার সাহিত্যিক প্রতিভার বিকাশ ঘটে |

সুকুমার রায়ের জীবনী 
তিনি  ছোটবেলা থেকেই মুখে মুখে নানা ধরণের ছড়া তৈরি করে ফেলতেন অনায়াসেই | এমনকি গান গাইতেন, নাটক করতেন আর কবিতাও লিখতেন | এক কথায় যদি বলতে হয় তাহলে সেইসময় থেকেই তিনি একধরনের মজাদার গোছের মানুষ ছিলেন এবং সবাইকে নেতৃত্ব দিতে খুব ভালোবাসতেন |
তাঁর বোন পুণ্যলতা তাঁর সম্পর্কে একসময় বলেছিলেন- “দাদা যেমন আমাদের খেলাধুলা ও সব কিছুরই পাণ্ডা ছিলো, তেমনি বন্ধুবান্ধব ও সহপাঠীদের মধ্যেও সে সর্দার ছিলো । তার মধ্যে এমন কিছু বিশেষত্ব ছিল যারজন্য সবাই তাকে বেশ মানতো । এমনকি বড়রাও তার কথার বেশ মূল্য দিত ".

সাহিত্যিক সুকুমার রায়, কলকাতার সিটি স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন এবং তারপর কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় অনার্স লাভের পর, তিনি মুদ্রণবিদ্যা সম্পর্কে উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য ১৯১১ সালে বিদেশে যান |

সেখানে যাওয়ার পর তিনি ফটোগ্রাফি এবং মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন |

সুকুমার যখন ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করছিলেন, সেইসময় অন্যদিকে তাঁর বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী জমি কিনে একটা উন্নত-মানের রঙিন হাফটোন ব্লক তৈরি করেন এবং সেইসাথে নিজস্ব ছাপাখানাও স্থাপন করেন |

এইসবই তিনি তৈরী করেছিলেন ছোটদের জন্য একটা মাসিক পত্রিকা “সন্দেশের”, প্রকাশনার উদ্দেশ্যেই | কিন্তু ১৯১৩ সালে ইংল্যান্ড থেকে পড়াশোনা শেষ করে সুকুমার রায় যখন কোলকাতায় ফিরে আসেন, তার ঠিক অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর বাবা উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু হয় |

বাবার মৃত্যুর পর একজন দায়িত্ববান ছেলে হিসাবে এরপর তিনিই সন্দেশ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন এবং সেই পত্রিকাতেই নিজের অভূতপূর্ব সাহিত্যকর্ম গুলো একে একে প্রকাশ করতে থাকেন |

দেখতে দেখতে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সুকুমার রায়, অল্পবয়সী পাঠকদের মাঝে এক প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন এবং সেইসাথে প্রচুর মধ্যবয়সী পাঠকদের কাছেও সমান জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হন|

বাবার মৃত্যুর পর আট বছর ধরে তিনি এই সন্দেশ পত্রিকার ও পারিবারিক ছাপাখানা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন | তারপর সেইসবের দায়িত্ব তিনি আসতে আসতে তাঁর ছোটভাইকেই সম্পূর্ণরূপে দিয়ে দেন |

সুকুমার রায়ের কর্মজীবন সম্পর্কে বলার আগে এই তথ্য সম্পর্কে তোমার অবশ্যই জেনে রাখা দরকার | প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময়ই তিনি কিন্তু গড়ে তুলেছিলেন, “ননসেন্স ক্লাব” | এই ক্লাবের মুখপত্র ছিল হাতে লেখা কাগজ-“সাড়ে বত্রিশ ভাজা” |
সাড়ে বত্রিশ ভাজার পাতাতেই নাকি সুকুমার রায় জীবনের সর্বপ্রথম নিজের রচিত হাস্যরসযুক্ত কিছু লেখা প্রকাশ করেন | আর এই ক্লাবের জন্য তিনি দুটো নাটকও রচনা করেছিলেন, যেগুলোর নাম যথাক্রমে ছিলো- “ঝালাপালা” ও “লক্ষণের শক্তিশেল” |

ক্লাবের সদ্যসের নিয়েই তিনি, এই দুটো নাটককে সবার মাঝে পরিবেশন করেন | আর তুমি হয়তো বললে এটা বিশ্বাস করবেনা, ননসেন্স ক্লাবের প্রতিটা নাটক দেখার জন্য, সেইসময়কার প্রচুর ছেলে ও বুড়োরা ভীষন ভিড় জমাতো এবং তাদের সবারই পছন্দের নাট্যকার ছিলেন সুকুমার রায় |

তাঁর বোন পুণ্যলতা এই নাটক সম্পর্কে একদা লিখেছিলেন –

“বাঁধা স্টেজ নেই, সীন নেই, সাজসজ্জা ও মেকআপ বিশেষ কিছুই নেই, শুধু কথা,সুরে,ভাবে, ভঙ্গিতেই তাদের অভিনয়ের বাহাদুরি ফুটে উঠতো, দাদা নাটক লিখতো, অভিনয় শেখাতো । হাঁদারামের অভিনয় করতে দাদার জুড়ি কেউ ছিল না । অভিনয় করতে ওরা নিজেরা যেমন আনন্দ পেতো, তেমনি সবাইকে আমোদে মাতিয়ে তুলতো । চারিদিকে উচ্ছ্বসিত হাসির স্রোত বইয়ে দিতো । ননসেন্স ক্লাবের অভিনয় দেখার জন্য সবাই উৎসুকও হয়ে থাকতোও”

এইসব নাটক করা ছাড়াও, সন্দেশের সম্পাদক থাকাকালীন তাঁর লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ সবারই ভীষন পছন্দের ছিলো, যা আমি আগেই তোমাকে বলেছি | আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে তাঁর রচিত সব সাহিত্যকর্মই মাইলফলক হয়ে আছে আর ভবিষ্যতেও একই থাকবে |প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অনার্স করার পর ইংল্যান্ডে পড়তে যান |
এরপর সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি আবারও “মনডে ক্লাব” নামে ননসেন্স ক্লাবেরই মতো একই ধরণের আরেকটা ক্লাব খুলেছিলেন | এই ক্লাবের সাপ্তাহিক সমাবেশে, সদস্যরা সব বিষয় সম্পর্কেই আলোচনা করতেন ।

সুকুমার রায় এই সাপ্তাহিক সভার কয়েকটি আমন্ত্রণপত্র মজার ছড়ার আকারে তৈরীও করেছিলেন | সেগুলোর বিষয়বস্তু ছিল মূলত উপস্থিতির অনুরোধ এবং বিশেষ সভার ঘোষণা ইত্যাদি .

সাংস্কৃতিক কাজকর্ম ছাড়াও সুকুমার কিন্তু ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের সংস্কারপন্থী গোষ্ঠীর এক তরুণ নেতা | এই ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে তৎকালীন সময়ে সবাই বলতো যে, এই সংগঠনের সদস্যরা মূলত একেশ্বরবাদী ও অদ্বৈতবাদী হিন্দু পুরান ও উপনিষদের মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন |

সুকুমার রায়, ব্রাহ্ম সমাজের ইতিহাসকে সরল ভাষায় প্রত্যেকের মাঝে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে “অতীতের কথা” নামক একটা কাব্য রচনা করেন | এছাড়াও তিনি ছোটদের মধ্যে ব্রাহ্ম সমাজের মতাদর্শের উপস্থপনা করার লক্ষে সেই কাব্যকে বইয়ের আকারে প্রকাশও করেছিলেন |


ইংল্যান্ডে থেকে নিজের পড়াশোনা শেষ করার পর, দুই মাসের মধ্যেই সুকুমারের বিয়ে হয় জগৎচন্দ্র দাশের মেজ মেয়ে সুপ্রভা দেবীর সঙ্গে | তাঁর ডাক নাম ছিল টুলু | সুকুমার রায়ের বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিয়েতে উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন । কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তাঁকে চিঠি দিয়ে জানান, শিলাইদহে জমিদারীর কাজে ব্যস্ত থাকার দরুন তিনি হয়তো তাঁর ছেলের বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না । কিন্তু অবশেষে শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ, সুকুমার রায়ের বিয়েতে এসেছিলেন ।

এরপর বিয়ের ঠিক ৮ বছর পর অর্থ্যাৎ ১৯২১ সালের ২রা মে তারিখে সুপ্রভা দেবী তাঁর একমাত্র পুত্রসন্তানের জন্ম দেন | যার নাম দেওয়া হয়েছিলো সত্যজিৎ | যিনি পরবর্তীকালে বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমা জগতের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হয়ে ওঠেন।
রচনাবলী :
আবোল তাবোল (১৯২৩)
পাগলা দাশু (১৯৪০)
হেশোরাম হুশিয়ারের ডায়েরি
খাই-খাই (১৯৫০)

হ য ব র ল (১৯২৮)
শব্দ কল্প দ্রুম
চলচ্চিত্রচঞ্চরী

অবাক জলপান
লক্ষণের শক্তিশেল
ঝালাপালা

বহুরুপী (১৯৪৪)
ভাষার অত্যাচার

সত্যজিৎ রায় জন্মগ্রহণ করার কিছু মাস পর থেকেই সুকুমার রায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়া শুরু হয় | পরে চিকিৎসা শুরু করার পর জানা যায়, তিনি কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেটাকে ঠিক করা একদম অসম্ভব | কারণ তখন সেইযুগে কালাজ্বরের উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধের আবিষ্কার হয়ে ওঠেনি |

কিন্তু মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত জেনেও তিনি শেষসময়ে অসাধারণ মানসিক স্থৈর্যের পরিচয় দিয়েছিলেন | কারণ এত বড় একটা রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও তিনি নিজের কাজকে একটা দিনের জন্যও বন্ধ করেননি বরং আরো উদ্যমের সাথে সেটাকে করে গেছিলেন |  

এই সম্পর্কে অবশ্য জানা যায়, সত্যজিৎ রায়ের একটা লেখায় | যেখানে তিনি তাঁর বাবার শেষের দিনগুলো সম্পর্কে লিখেছিলেন এই কথাগুলো:  

“রুগ্ন অবস্থাতেও বাবার কাজের পরিমাণ ও উৎকর্ষ দেখলে অবাক হতাম । শুধু লেখা বা আঁকার কাজেই নয়, ছাপার কাজেও যে তিনি অসুখের মধ্যে অনেক চিন্তা ব্যয় করেছেন তারও প্রমাণ রয়েছে। একটি নোটবুকে তাঁর আবিষ্কৃত কয়েকটা মুদ্রণ পদ্ধতির তালিকা রয়েছে । এইগুলো পেটেন্ট নেবার পরিকল্পনা তাঁর মনে ছিলো, কিন্তু কাজে হয়ে ওঠেনি”

অবশেষে ১৯২৩ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর, সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ১০০নং গড়পার রোডের বাড়িতে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে সাহিত্যিক সুকুমার রায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন | তিনি যদিও মাত্র অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন ঠিকই কিন্তু তিনি আজও তাঁর মহান সব সাহিত্যকর্ম গুলোর মধ্য দিয়ে প্রত্যেক বাঙালীর মনে অমর হয়ে আছেন সমানভাবে | সাহিত্য শিল্পে তাঁর অবদানকে সত্যিই কেউ কোনোদিনই ভুলতে পারবেনা | তিনি সর্বদা আমাদের মতো প্রত্যেক বাঙালী পাঠকদের কাছে চিরদিনই আদর্শ হয়েই থাকবেন |

==================================
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত 
৩০ অক্টোবর ১৯০১  বাংলা ভাষার একজন প্রধান আধুনিক কবি। বিংশ শতকের ত্রিশ দশকের যে পাঁচ জন কবি বাংলা কবিতায় রবীন্দ্র প্রভাব কাটিয়ে আধুনিকতার সূচনা ঘটান তাদের মধ্যে সুধীন্দ্রনাথ অন্যতম। তাকে বাংলা কবিতায় “ধ্রুপদী রীতির প্রবর্তক” বলা হয়।
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত.jpg
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ১৯০১ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতা শহরের হাতিবাগানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, মায়ের নাম ইন্দুমতি বসুমল্লিক। সুধীন দত্তের বাল্যকাল কেটেছে কাশীতে। ১৯১৪ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত কাশীর থিয়সফিক্যাল হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন। পরে কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯২২ সালে স্নাতক হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য ও আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত যথারীতি পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও কোনো বিষয়েই পরীক্ষা দেন নি।

১৯২৪ সালে ছবি বসুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, কিন্তু এক বছরের ভিতরেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ১৯৪৩ সালের ২৯ মে প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী রাজেশ্বরী বসুর সঙ্গে দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৬০ সালের ২৫ জুন কবি নিঃসন্তান অবস্থায় পরলোকগমন করেন।কর্মজীবন

পিতার আইন ফার্মে কিছুদিন শিক্ষানবিস হিসেবে থাকার পর সুধীন্দ্রনাথ দত্ত চাকরিজীবন শুরু করেন লাইট অব এশিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে। ১৯২৯ সালের ফেব্রুয়ারি-ডিসেম্বর মাসে রবীন্দ্রনাথের এবং সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। ১৯৩১ সালে পরিচয় পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১২ বছর ধরে সম্পাদকের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। স্টেটসম্যান ও শরৎ বসুর লিটারারি কাগজে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৯ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।[২] শিল্পকলাবিৎ শাহেদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন তার বন্ধু।

সাহিত্যিক জীবন

জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত আধুনিক বাংলা কাব্যের সবচেয়ে বেশি নিরাশাকরোজ্জ্বল চেতনা। সর্বব্যাপী নাস্তিকতা, দার্শনিক চিন্তা, সামাজিক হতাশা এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধিবাদ তার কবিতার ভিত্তিভূমি। ত্রিশের অনান্য কবিরা অবিশ্বাসী হলেও সুধীন্দ্রনাথ দত্তই ঈশ্বরকে সরাসরি প্রত্যাখান করেছেন বলে হুমায়ুন আজাদ মনে করেন।[৩] আবদুল মান্নান সৈয়দ সুধীন্দ্রনাথের কবিতা সম্পর্কে বলেছেন,

প্রসঙ্গ, প্রকরণ ও বিন্যাস-যার কথাই ভাবি না কেন, নব নব গন্তব্যে পৌঁছুনোর উচ্চাশা কবির নেই। নেই রাবীন্দ্রিক শতবিচিত্রতা, একই কথা প্রায় একই ভঙ্গিতে তিনি বিভিন্ন কাব্যকোরাসে বলেছেন। একই কথা, কিন্তু দ্বিতীয় রহিত। অর্থাৎ সহজীবি কবিদের থেকে একেবারে আলাদা। তাঁর প্রকাশরীতি ও অভিজ্ঞতার পরিধি ছোট, ছোট কিন্তু গভীর, আর নিখুঁত নিটোল, নিজস্ব ও সমস্ত সুন্দর।

সাহিত্যচিন্তা

পরিচয় পত্রিকা সম্পদনা

সুধীন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থ ছয়টি :

এছাড়াও তার দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ আছে :

মৃত্যু : ২৫ জুন,১৯৬০ ।

=================================
অরুণ কুমার সরকার

=================================

এজরা ওয়েস্টন লুমিস পাউন্ড
 Ezra Weston Loomis Pound)
 একজন কালজয়ী মার্কিন কবি ও সমালোচক। তিনি আধুনিক মার্কিন সাহিত্যের অন্যকম পথিকৃৎ। পিতা হোমার লুইস পাউন্ড এবং মাতা ইসায়েল ওয়েস্টনের সন্তান এজরা পাউন্ডের জন্ম হয়েছিল ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ অক্টোবর, আইডাহো রাজ্যের হেইলিতে। তার প্রাথমিক লেখাপড়া একটি ডেম স্কুলে। "ইমাজিসম" ধারার প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। তার কাব্যসঙ্কলন রিপোস্টেস, কবিতা "হিউ সেলউইন মোবারলে" এবং অসমাপ্ত মহাকাব্য দ্য ক্যান্টোস চিরায়ত বিশ্বসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে লন্ডনে বেশ কিছুকাল মার্কিন সাহিত্য সাময়িকীর সম্পাদক হিসেবে কাজ করার সময় পাউন্ড সমসাময়িক সাহিত্সযিক টি. এ. এলিয়টরবার্ট ফ্রস্টজেমস জয়েস এবং আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সৃষ্টিকর্ম নতুন করে মূল্যায়ন করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাণহানিতে মর্মাহত হয়ে তিনি ইংল্যান্ডের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। এ যুদ্ধের জন্য তিনি পুঁজিবাদ ও সুদবিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থাকে দোষারোপ করেন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন সেনাবাহিনী রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে তাকে ইতালিতে গ্রেফতার করে। প্রথমে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাক্যাম্পে কয়েদ রাখা হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর কারাদণ্ড ভোগ করেন তিনি। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ এপ্রিল তিনি মুক্তি লাভ করেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর তাাঁর মৃত্যু হয়।

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆