Saturday, 31 October 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

$$$$$$$$$$$$$$|||||||||||$$$$$$$$$$$$$$
             জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

                          
                         অনিল ঘড়াই
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆✓✓✓✓✓∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                Doinik Sabder Methopath
                Vol - 178.Dt -01.11.2020
                 ১৫ কার্তিক,১৪২৭. রবিবার
==========√√√√√√√√√==============
জাত কেউটের মতই জাত লেখক ছিলেন অনিল ঘড়াই (renowned novelist Anil gharai,)।

জাতে কিন্তু ছিলেন হাড়ি। অন্ত্যজ,ব্রাত্য,দলিত। অতি দলিত। কিন্তু দলিত জীবনের কোনো হীনমণ্যতা তাঁকে কোথাও স্পর্শ করতে পারেনি। অন্ত্যজ জীবনের সমাজবাস্তবকে তুলে ধরতে তিনি আমার মতে অনেক বড় বড় বাংলা লেখকের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন তাঁর প্রতিটি লেখায় বিশেষকরে ছোটগল্পে।

সাতের দশকের যে শক্তিমান লেখকদের কথা বাজারি লেখায় ছয়লাপ বাংলা সাহিত্যভুলে যেতে চলেছে, অভিজিত সেনগুপ্ত, শৈবাল মিত্র, অমর মিত্র, ভগীরথ মিশ্রদের সেই প্রজন্মের লেখদের সমকক্ষ ছিলেন অনিল ঘড়াই।



১৯৯৪ সালে দলিত সাহিত্যের জন্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পেয়েছিলেন সংস্কৃতি পুরস্কার।বাংলা দলিত সাহিত্য আন্দোলনও তাঁকে পুরস্কৃত করেছিল। 2002 সালে।কাঁথিতে সেই বাংলা দলিত সাহিত্য সম্মেলনে।

অনিল ঘড়াইয়ের জন্ম ১৯৫৭ সালে ১ লা নভেম্বর মেদিনীপুর জেলার এগরা থানার অম্তর্গত রুক্মিণীপুর গ্রামে৷‌ তাঁর শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের অনেকটা সময় কেটেছে নদীয়া জেলার কালীগঞ্জে৷‌

পিতা অভিমন্যু ঘড়াই ও মাতা তিলোত্তমা ঘড়াই।মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর৷‌
রেখে গেছেন দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে৷‌
নদিয়ার কালীগঞ্জের আদি বাড়িতে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

গত ৮ মাস ধরে কিডনি জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন এই সাহিত্যিক। তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু আর এক সাহিত্যিক নন্দদুলাল রায়চৌধুরী বলেন, “সাহিত্য-সংস্কৃতির বড় ক্ষতি হয়ে গেল।”

২৭ বছর বয়সে চক্রধরপুরে রেলের ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দেন তিনি। ১৯৮৫ সালে খড়্গপুর রেল বিভাগে বদলি হন। ১৯৯০ সালে তাঁর প্রথম ছোটগল্প প্রকাশ হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। নদিয়ার রাজোয়াড় বিদ্রোহ নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘অনন্ত দ্রাঘিমা’ ২০১০ সালে বঙ্কিম স্মৃতি পুরস্কার পায়। ১৯৯৪ সালে দলিত সাহিত্যের জন্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পেয়েছিলেন সংস্কৃতি পুরস্কার।

তাঁর নুনবাড়ি, আকাশ মাটির খেলা, কাক, পরিযান-সহ বহু লেখা সাহিত্যপ্রেমী মনে রেখেছেন। রেলশহরের কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে তিনি গড়েছিলেন ‘ঘরোয়া সাহিত্য বাসর’।

কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়েতে আধিকারিক হিসেবে চাকরি করতেন। চাকরিসূত্রে চক্রধরপুর ও পরে খড়্‌গপুরে বসবাস করতেন।

তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ কাক এবং প্রথম উপন্যাস নুনবাড়্থি। তার গল্প, উপন্যাস ও কবিতা মিলিয়ে গ্রন্থের সংখ্যা পঞ্চাশেরও বেশি। অনিল ঘড়াইয়ের সাহিত্যের মূল সম্পদ দলিত, নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের জীবনচর্যা। নদীয়া ও মেদিনীপুরের গ্রামীণ মানুষ ও তাদের কথ্যভাষা যেমন উঠে এসেছে তাঁর রচনায়, তেমনি চক্রধরপুরে বসবাস করার সুবাদে সিংভূম অঞ্চলের কথ্যভাষাসহ সেখানকার মানুষের জীবনের ছবি পাওয়া যায় তাঁর সাহিত্যে।

হিন্দী ও ইংরেজি ভাষাতেও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ।

দীর্ঘদিন থেকে কিডনির অসুখে ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু অসুস্থ অবস্থাতেও সমানে চালিয়ে গেছেন তাঁর সাহিত্যকর্ম, ‘তূর্য’ পত্রিকার সম্পাদনা ও অন্যান্য কাজ। মানুষের প্রতি আন্তরিক ব্যবহার ছিল তাঁর চরিত্রের একটি উজ্জ্বল দিক।

প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ‘নুনবাড়ি’ এবং গল্প-সঙ্কলন ‘কাক’ থেকেই তাঁর স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত সাহিত্য-পথের যাত্রাশুরু৷‌ যে যাত্রাপথে জীবনের বিস্তৃত পরিসর, মানসিক টানাপোড়েন, খুঁটিনাটি উঠে এসেছে বারবার৷‌ ষাটেরও বেশি বইয়ের রচয়িতা এই সাহিত্যিক তাঁর ‘অনম্ত দ্রাঘিমা’-র জন্য পেয়েছেন বঙ্কিম পুরস্কার৷‌ ঔপন্যাসিক ও গল্পকার পরিচয়ের আড়ালে প্রয়াত সাহিত্যিকের ছিল এক কবি-মন৷‌ কবিতা ছিল তাঁর প্রথম প্রেম৷‌ কবিতার জন্য পেয়েছেন ‘আকাশ সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ‘কবি নিত্যানন্দ পুরস্কার’৷‌ কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন সোমেন চন্দ পুরস্কার, তারাশঙ্কর পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার, তিস্তা-তোর্সা সম্মান-সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মান৷‌ তাঁর পরিচিত গল্প-উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘পরীযান ও অন্যান্য গল্প’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘কামকুঠিয়া’, ‘ফুলপরী’, ‘জন্মদাগ’, ‘নীল দুঃখের ছবি’, ‘সামনে সাগর’, ‘দৌড়বোগাড়ার উপাখ্যান’, ‘বনবাসী’, ‘জার্মানের মা’, ‘লোধগ্রামে সূর্যোদয়’ প্রভৃতি৷‌
গ্রন্থাবলী :

উপন্যাস -
নুনবাড়ি (১৯৮৯)
বনবাসী (১৯৯০)
মুকুলের গন্ধ (১৯৯৩)
তরঙ্গলতা (১৯৯৩)
বোবাযুদ্ধ (১৯৯৩)
বক্ররেখা (১৯৯৪)
পবন (১৯৯৪)
কাননে কুসুমকলি (১৯৯৪)
ধর্মের কল (১৯৯৫)
মেঘ জীবনের তৃষ্ণা (১৯৯৬)
কালের পুতুল (১৯৯৬)
দৌড়বোগাড়ার উপাখ্যান (১৯৯৭)
খেলাঘর (১৯৯৮)
জন্মদাগ (১৯৯৯)
বিপরীত যুদ্ধের মহড়া (২০০০)
নীল দুঃখের ছবি (২০০১)
পাতা ওড়ার দিন (২০০২)
সামনে সাগর (২০০৩)
অনন্ত দ্রাঘিমা (২০০৯)

গল্পগ্রন্থ-
কাক (১৯৮২)
পরীযান (১৯৮৫)
আগুন (১৯৮৭)
জ্ঞানবৃক্ষের ফল (১৯৮৮)
কটাশ (১৯৯০)
তিন ভুবনের গল্প (১৯৯০)
জার্মানের মা (১৯৯১)
ভারতবর্ষ (১৯৯২)
গর্ভ দাও (১৯৯৩)
কামকুঠিয়া (১৯৯৬)
আকাশ মাটির খেলা (১৯৯৭)
লু (১৯৯৭)
গোদানা (১৯৯৮)
স্বপ্নের খরাপাখি (১৯৯৮)
অক্ষরমালা (১৯৯৮)
শ্বেতপদ্ম (১৯৯৮)

পুরস্কার ও সম্মাননা-

সর্বভারতীয় সংস্কৃতি পুরস্কার (১৯৯৪)
মাইকেল মধুসূদন স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৪)
তারাশঙ্কর স্মৃতি পুরস্কার (২০০১)
সোমেন চন্দ স্মৃতি পুরস্কার (২০০২)
বঙ্কিম পুরস্কার (২০১০)

 মৃত্যু - ২৩ নভেম্বর ২০১৪ (বয়স ৫৭)
কলকাতা।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

No comments: