Monday, 23 November 2020

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
                 এ সময়ের কবিতা যাপন
                              ( পর্ব -১)
                 পাঁচে পঞ্চবান
         ( মেদিনীপুরের কাব্য ভাবনা)
==============!!!!!!!===============
        Doinik sabder methopath
         Vol -201. Dt -23.11.2020
          ৮ অগ্রহায়ণ,১৪২৭. মঙ্গলবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷!!!!!!!!!!÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
১.

ধূপগন্ধী 

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

ধূপ জ্বলনের নাম লিখতে চাইলাম  নিঃশব্দ  ।   কত পাখি উড়ে যায়  - ভেঙে যায়  শাখা প্রশাখা   - ঝরাপাতার সুর নিয়ে গােবিন্দদাদু ত্রিপদ হয়ে যান ।  
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা চড়াইয়ের  সামনে জমিন পেছনে জোৎস্না । পাখিদের বিঘ্নময় উড়াউড়ি নিয়ে মানুষেরা দৌড়ে এগিয়ে যায় -  রাত দিনের সঙ্গী ফুলপাতার দুর্দশা ; খসেপড়া পালক ভেসে যায় নােনা জলের দিকে - ডাক দেয় বাঁশের কাঠামো : আশ্রয়ের শিবচক -

খরাক্লান্ত বুকে তখনাে ধানি রঙের শাড়ি পরা বউ ; সাতভায়া পাখিরা নামে টলটলে জলমগ্ন অস্তিত্বের ঠিকানায়  -  এর কোনাে গােত্র নেই । ঘাম ঝরানো ধান আর ভাবীকালের রােদের জন্য মন কেমনের নির্ঝরতা - পিচ্ছিলে গােটা একটা পথ প্রস্তুত থাকলেও ঢেকে যায় নাম না জানা ঘাসের আদর -

 অন্ধকারের কোনাে পুব দিক নেই - থাকে না বলেই তৃতীয় নয়ন নিয়ে জ্বল জ্বল করে কপালের ভাঁজ-

পশ্চিমের ঢালুতে কাদা জলের দীর্ঘতা  ; ছায়ায় ঘর বাঁধা ক্লান্তিরা কেঁপে ওঠে নিজের বরফকাল নিয়ে - এমনই হয়েছে কত দিন - বৃষ্টি হয়নি , হাতের তালুতে অপেক্ষার ঝােপঝাড় ; ওপারে যাওয়ার শুকনাে হাঁটাপথ ক্ষতবিক্ষত  - জেগে ওঠেনি কোনো মৃতদাগ । শুধু পেরিয়ে গেছে  রােদের পৃথিবী - তারও দূরে প্রতিটি স্বপ্নের কচুরিপানা আটকে থাকে ভাঙা সাঁকোর নড়বড়ে পায়ায় ।
***************************************
২.

কবিতা বিভূতি

মনোতোষ আচার্য

সিঁদুরে আমের গন্ধে বিকেলগুচ্ছ খুঁজি স্মৃতিময় থানে
উদাসীন আলোছায়া গোধূলিবাতাসে
ঋতুমেঘ ফলে ওঠা গাভীন প্রহর ডেকে গেছে পাতায় পাতায়
কৈশোরক সোহাগের বাদে-প্রতিবাদে…

সূর্যডোবা লাল নাকি সবুজ চিকন ছল চাতুরীর পরম্পরা ধ্বনি
আগুনের দাহধর্ম কখনো ভুলিনি
প্রিয়তম সংলাপ মাঠে মাঠে সহস্র গলায় গেরস্থালি সাজিয়েছিল
উত্তেজক রোদে, আলোর পাঁচালি পড়ে জীবীশাখা, বিচূর্ণ নিয়তি

হাড়ে-মাসে-মজ্জায় কবিতা বিভূতি, নিষ্পেষিত আত্মার নিসর্গবিলাস
গোপন জ্বরের মতো গায়ে গায়ে আশ্চর্য স্পর্শের আবহ
রেখে যাই জলময় স্বচ্ছ গভীরে

অদূরে কান্নার স্বর দৈত্য নেমে এসেছে সভায়
প্রকাণ্ড প্রতিশ্রুতি রকমারি উজ্জীবনী পাঠ
তলে তলে ক্ষয়ে যাওয়া যাবতীয় হিসেব নিকেশ।

মৃত্যুবহ

সহনীয় তাপ, মাটি আর জলের জীবন ক্ষমা-ঘেন্না করে দেয় কালের বুদবুদ
মৃত্যুবহ অন্ধকার মাধুর্যের ইশারায় চাপা পড়ে
অর্ধসত্য কথার ফুলকি ওড়ে দিকবিদিকে
প্রেমহীন আদিখ্যেতা, মহনীয় বিচ্ছুরণ, নগ্ন-যশ, করুণা-ভিখিরি
হৃদয়ের পোড়োবাড়ি ঘাস আর আগাছায় ভরে উঠেছিল।

দৃষ্টির অন্তরে পাই নিরুদ্দিষ্ট প্রাচীন অক্ষর
শান্ত নদী বয়ে যায় পাহাড়ের ঢালে
লৌকিক ঘুড়ির দেশে প্রত্ন-রোদ তাপিত নৈশব্দ্য খুঁটে নেয়
প্রণয়টিলার ঘাসে বাষ্পজালে পূতবেদী অশ্রুত ধ্বনি…

কথা সব ভিড় করে উঠোনে, দুয়ারে
কথা সব করে ভিড় চেতনার ঘাসে, ক্ষুধাতুর গাছে
হা-অন্ন প্রহর জুড়ে বেজে ওঠা দাবি
কেনাবেচা উতরোল অনন্ত উদ্বায়ী
নিজেকে উপুড় করি আদিগন্ত জিজ্ঞাসার তীরে
নিমজ্জ আবহে…
***************************************
৩.
নবমীর বাঁশি


মঞ্জীর বাগ

স্বপ্নের ভিতর দিয়ে নৌকা বয়ে যাচ্ছে আধা ঘুম জাগরণের মাঝে। আমাদের নৌকা যাচ্ছে কাশ ফুলের ভিতর দিয়ে।নদী নয় খাল। তবুও তো জলস্রোত। জল মানেই জীবন স্রোত মানেই বয়ে যাওয়া। আমরা প্রতিবছর নৌকায় দেশের বাড়ি যেতাম।আমদের বাড়ির পুজো দুশ বছরের। যে বাড়িকে বছরের অন্য সময়ে চিনি পুজোয় তাদের রূপবদল। কেমন রহস্য ময় অচেনা। 
    আমাদের পুজোর সঙ্গে অনেক গল্প আছে। একটি খড়্গ পুকুর থেকে ওঠা।সেই থেকে দেবীর আদেশে পুজো। আমার কাছে পুজো মানে সুর, ঢাকের তাল। ভোররাতে শিশিরের হিমেল চাদরে অলসতাকে তছনচ করে জেগে ওঠে ঢাকের বাদ্যি। পাখির ডানায় নতুন ভোর। পাখিরাও ভোরের গানে উৎসবের ডাক দিয়ে যায় শিষে।
         সদর পুকুরের জলে অনেক রূপকথা। গভীর জলের দিকে তাকালে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাই তাহলে কি অতীত পুরীর রূপকথা। টুপকরে ডুব দিই। হাতের আজলায় উঠে আসে ব্রাহ্মণী পোনা ছোটছোট। আমি ডুব দিতে ভয় পেতাম।ঠাকুমা বুকে করে কত কিছু শিখিয়েছে। পেতলের বাসনের তোরঙ্গের ভেতর চন্দন বাক্সে রাখা ঠাকুমার বরের প্রেম মাখা চিঠি দেখিয়েছিল যবে তখন নাটমন্দিরে
পুজোর বাজনা। বাইশ বছরের বড় বর কি উষ্ণতায় কলম ধরেছিল।এতো পুজোর উপরি পাওনা।
     নাট মন্দিরে গান হতো। আমি পালা গানের সুরে ডুবতে ডুবতে শাঁখের শব্দে জেগে উঠি।আরতির সময় ধুনোয় আবছা হয়ে আশা পুজো মন্ডপে কত ধরনের শাঁখের তাল মিল। এটিকে বৃন্দগান বলা যায় না?আবছা ধোঁয়ায় যে নারীদের দেখছি ওরা কি পরী? না কি দুঃখ সুখের অতীত কোন দেবী। ঘন্টা ধ্বনি শেষ হলেই ওরা আবার আমার মা কাকীমা পিসি হয়ে যাবে। তখন ওদের মুখে জেগে উঠবে বেদনা বঞ্চনা পেমেটম প্রলেপ। আমি কেবল ওদের দেবী হওয়ার ক্ষণের অপেক্ষায়।
            বাবা বসতেন বাজীপটকার স্তূপ নিয়ে। বাড়ীর বাচ্চারা ছাড়াও যে সব বাচ্চারা আসত সবার ভাগেই বাজীপটকা লেখা থাকত।খুব মজা। বাবা এতো বড় পুজোর দ্বায়িত্বে।বাবার কোল ঘেসে আমি। বাবা চলে যাবার পর বুকের খাঁজে হা হা বোধ। কথা বলতে পারি না। নিজের কথা
      ঠাকুমা ও নেই। মাও
 এখন দক্ষিনের বারান্দা জুড়ে খালি খোলা হাওয়া
 এবারে যেতে পারলাম না দেশের বাড়ি। যাচ্ছি তো মনে মনে।সদর পুকুরে বসছি
বাবা আসছেন মাও। ঠাকুমা নাড়ু নিয়ে এল।পূর্ণকাকা। সবাই কেন বলে তোমরা চলে গেছো
     এসো না গল্প করি। এই আবছা আলোয়
চাঁদের আলো বেয়ে বাবা নেমে এলেই ঘুমিয়ে পড়বো।
      নবমী নিশি যেও না আর
*****************************************
৪.


শুভঙ্কর দাস

মুগ্ধতা

সারাদিন ভিক্ষে করে অন্ন জোগাড়
করতে পারিনি,করেছি মুগ্ধতা এক মুঠো!
নিজের কাছে রাখতে পারিনি বলে
কবিকে দিয়েছি, সেই মুগ্ধতা নিয়ে
যাতে অন্তত বানাতে পারে অফুরন্ত এক শস্যগোলা
ঘরের ভেতর ঘরে
আমার সব খিদে মিটে যেত
জন্ম-জন্মান্তরে…

পৃথিবী

মায়ের মৃত্যু-সংবাদ শোনার পরে
ডুকরে কেঁদে ওঠে শিশু
পরক্ষণেই বলে ওঠে,খিদে পেয়েছে , কিছু খেতে দাও…
তেমনই যেন পৃথিবীর অবস্থা!

মৃত্যুর রক্তচক্ষুর সামনে
এক পেট আয়ুক্ষুধা নিয়ে হাসিমুখে ঘুরে বেড়ায় সারাদিন…
**************************************
৫.
ধনতেরস


                        শুভ্রাশ্রী মাইতি

সোনালী ধানশিষ থেকে টুপটাপ ঝরে পড়া ঠান্ডা শিশিরজলে
মেঘবতী শাড়ীর শ্যামল পাড়খানি ভিজিয়ে নেবে বলে
হেমন্তের আলপথ ঘেঁষে বসে আছে যে রোদকুড়ুনি মেয়ে---
ধনত্রয়োদশীর সৌভাগ্যলক্ষ্মী একমুঠো শস্যসবুজ বীজধান 
স্নেহজলে ভিজিয়ে ঠিক রেখে দেন তার গিঁট বাঁধা ছেঁড়া আঁচলে।
 
 বিন্নি ধানের খই-আলপনার নকশাকাটা চিহ্ন এঁকে এঁকে 
নরম কাদামাটি দিয়ে লক্ষ্মীসরা গড়ে যে মাটিমাখা হাত---
তাতে সৃজন সৌন্দর্যের সোনার মোহর তুলে দেবে বলে
 কৃষ্ণা এয়োদশীর অন্ধকার মায়া ঘুম-ঘুম চোখে রাত জাগে
দীপান্বিতা প্রদীপের স্হির,নিষ্কম্প শিখার কাজলে।

ছলাৎছল ঢেউয়ে জীবনের ভরা গাঙে 
 নৌকা ভাসায় যে মাঝি জলকে ভালবেসে---
তার ঘাম-নুনে ভেজা ভাটিয়ালী সুরের বেদন ছুঁয়ে
 নৌকার খোল ভরে তিনি রেখে যান আশীর্বাদ আর বরাভয়ের রূপশালী জোছনা 
রূপালী শস্যের আশ্চর্য সম্ভারের আড়ালে। 

 রাত্রির অনন্ত অন্ধকার ছেনে অসীম মমতায় একটু একটু করে
 ধ্যানমগ্ন মহাকাল গড়ে তোলেন চৈতন্যময়ী মায়ের চিরন্তনী আলোমূর্তি---
সৃষ্টির অনাদি রহস্যের যবনিকা নক্ষত্রের আলোয় উন্মোচিত হলে
কুয়াশাভেজা ধনতেরসের অমল আশীর্বাদ বিমল অমোঘতায় ঝরে ঝরে পড়ে 
আনন্দী প্রকৃতির অমৃতস্য সন্তানের আদরমাখা করকমলে...
---------------------------------------------------------------
        " এ সময়ের কবিতা যাপন"

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ' পত্রিকার নতুন বিভাগ । কবিদের কবিতা এবং কবিতা বিষয়ে আলোচনা এই বিভাগে প্রকাশিত হবে। 
                          দৈনিক শব্দের মেঠোপথ 
                                      পরিবার
                                  ২৩.১১.২০২০
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆









No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...