∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
রমাপদ চৌধুরী
=================================
Doinik Sabder Methopath
Vol -235 . Dt -28.12.2020
১১ পৌষ,১৪২৭। সোমবার
+++++++++++++++++++++++++++-+++++++
রমাপদ চৌধুরী ২৮ ডিসেম্বর, ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমমেদিনীপুর জেলার খড়গপুরে জন্ম গ্রহণ করেন।পিতা মহেশচন্দ্র চৌধুরী ও মাতা দুর্গাসুন্দরী। তিনি খড়গপুরে তার প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে, কলকাতায় উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকেই তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। সহধর্মিনী সুষমা চৌধুরী।
কর্মজীবন ও সাহিত্যকীর্তি :
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি লেখা লেখি শুরু করলেও, বন্ধুদের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে মাত্র ২৫ বছর বয়সে প্রথম ছোটগল্প রচনা করেন। তার জীবনের প্রথম গল্প 'উদয়াস্ত' প্রকাশিত হয়েছিল যুগান্তর পত্রিকায়। এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এম.এ পাস করে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগ দেন। কর্মজীবনে কালক্রমে তিনি ওই পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং পত্রিকার রবিবারের ক্রোড়পত্র 'রবিবাসরীয়' বিভাগের সম্পাদক হন। পাশাপাশি চলতে থাকে তার নিজস্ব সাহিত্য চর্চা। ১৯৫৪ সালে প্রথম উপন্যাস 'প্রথম প্রহর' প্রকাশ পায়।[৪] ষাটের দশকে দেশ পত্রিকায় তার উপন্যাস 'বনপলাশীর পদাবলী' পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হয়, যার ফলে তিনি পাঠক সমাজে পরিচিত মুখ হয়ে পড়েন।
তিনি ১৯৬৩ সালে আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭১ সালে 'এখনই' উপন্যাসের জন্য রমাপদ চৌধুরীকে রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। 'বাড়ি বদলে যায়' উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৮৮ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে তিনি পঞ্চাশটির উপরে উপন্যাস রচনা করেন। এছাড়া দেশ পত্রিকার গল্প সংকলনও দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদনা করেন। ২০১১ সালে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্মারক আন্তর্জাতিক পুরস্কার চালু করলে প্রথম বছর 'বনপলাশী পদাবলী' উপন্যাসের জন্য রমাপদ চৌধুরীকে ওই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
রমাপদ চৌধুরীর জীবনের উপর একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছে সাহিত্য অকাদেমি। ছবিটির পরিচালক রাজা মিত্র।
রচনাবলী
তাঁর অনন্য সাহিত্যকীর্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সাহিত্য প্রতিভা :-
প্রথম প্রহর (১৯৫৪)
দ্বীপের নাম টিয়ারং
বনপলাশীর পদাবলী (১৯৬০)
যে যেখানে দাঁড়িয়ে
এখনই (১৯৬৯)
খারিজ
বাড়ি বদলে যায় (১৯৮৮)
অভিমন্যু (১৯৮২)
বীজ
দরবারী
লালবাড়ি
হারানো খাতা
লালবাঈ
পিকনিক
বাহিরি
ছাদ
শেষের সীমানা
আকাশপ্রদীপ
রমাপদ চৌধুরীর সাহিত্যকীর্তি অবলম্বনে চলচ্চিত্র সম্পাদনা
তার বহু উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়নও হয়েছে যেগুলি চলচ্চিত্র হিসেবেও দারুণ সাফল্য পায়। যেমন:
দ্বীপের নাম টিয়ারং (১৯৬৩) , পরিচালনায় গুরুদাস বাগচী
এখনই (১৯৭০), পরিচালনায় তপন সিংহ
পিকনিক (১৯৭২), পরিচালনায় ইন্দ্র সেন
বনপলাশীর পদাবলী (১৯৭২), পরিচালনায় উত্তমকুমার
যে যেখানে দাঁড়িয়ে (১৯৭৪), পরিচালনায় অগ্রমী
খারিজ (১৯৮২),পরিচালনায় মৃণাল সেন
এক দিন আচানাক (১৯৮৯), পরিচালনায় মৃণাল সেন (বীজ কাহিনি অবলম্বনে)
এক ডক্টর কি মওত (১৯৯২), পরিচালনায় তপন সিংহ ('অভিমন্যু' উপন্যাস অবলম্বনে )
সুন্দরী (১৯৯৯), পরিচালনায় গুল বাহার সিংহ ('আহ্লাদী' কাহিনি অবলম্বনে)
পুরস্কার ও স্মারক :
্সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার] ১৯৮৮। রবীন্দ্র পুরস্কার ১৯৭১। আনন্দ পুরস্কার ১৯৬৩ র রবীন্দ্রনাথঠাকুর স্মারক আন্তর্জাতিক পুরস্কার ২০১১
মৃত্যু : ২৯ জুলাই ২০১৮ (বয়স ৯৫)।
কলকাতা
মূল্যায়ন
রমাপদ চৌধুরী বাংলা কথাসাহিত্যের সেই বিরল লেখকদের একজন, যিনি লেখার শুরুটাকে যেমন চিনতেন তেমনি জানতেন থামাটাও। তাঁর একটি উপন্যাসের নাম ‘অভিমুন্য’, যে ব্যুহে প্রবেশের কৌশল জানে, কিন্তু জানে না কী ভাবে বেরিয়ে আসতে হয়। সেই অজানা দুর্গম পথের পর্যটক প্রায় সব বাঙালি লেখক, কেউই আর সহজে ফেরেন না; রমাপদ কিন্তু উল্টো পথেই হেঁটেছেন।একটি গল্প ‘ভারতবর্ষ’ লেখক রমাপদকে চিনিয়ে দিয়েছিল একেবারে শুরুর দিনে। সেই অনেক বছর আগে; খড়্গপুর রেল কলোনিতে বেড়ে ওঠা রমাপদর কাছেই আমাদের জানা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কথা, এই কলকাতা শহর, সেই রেল কলোনি, মার্কিন সোলজার, নিষ্প্রদীপ রাত্রির কথা। অনুদান, সাহায্য যে কী ভাবে একটি জনজাতি একটি দেশের মেরুদণ্ডকে বাঁকিয়ে দেয়, ভিখারি করে দেয়, সেই গল্পই ‘ভারতবর্ষ’। সেই গল্পই বহুকাল ধরে বড় বেদনার মতো বাজে যে গল্প সময় থেকে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েও প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে। রমাপদ চৌধুরীর ‘ভারতবর্ষ’ তেমনই একটি গল্প। সে গল্পের নানা মাত্রা। দেশটা সেই যে আন্ডা হল্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকল হাত বাড়িয়ে, সে হাত আজও তো নামেনি। উচ্ছিষ্টের লোভে মানুষ তো হাত বাড়িয়েই আছে। ‘ভারতবর্ষ’ শুধু এই ভারতবর্ষের গল্প নয়, গোটা তৃতীয় বিশ্বের।রমাপদ চৌধুরীর গল্প, উপন্যাস, মানুষের ভিতরের হাড়-কঙ্কাল বের করে ফেলে। সত্য উন্মোচনে রমাপদ লেখক মানুষটি অতি নির্মম। ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে যে মাহাতো বুড়ো ভিক্ষা প্রত্যাখ্যান করতে করতে মাথা উঁচু রেখেছিল, সেই বুড়োই শেষ পযর্ন্ত, বকশিস বকশিস বলে চিৎকার করে ওঠে। যে মাহাতো বুড়োকে নিয়ে ভারতবর্ষ তার মাথা উঁচু করে রেখেছিল, সেই মাহাতো বুড়োই গোটা দেশটাকে একদিন ভিখিরি বানিয়ে দেয়।
‘পোস্ট মর্টেম’ গল্পে গলায় দড়ি দিয়ে মরা ধনঞ্জয়বাবুর বাড়ির সামনে যাঁরা সক্কাল বেলায় এসে দাঁড়ায় এবং নানা মন্তব্য করে, তারা যে আসলে নিরাপত্তার বৃত্তে থাকা মধ্যবৃত্ত মানুষ, একটু একটু করে তারা খোলস ছেড়ে বের হয়। তাদের ওই মৃত্যুর কারণ খোঁজা আসলে এক ধরনের তৃপ্তি যে তারা বেঁচে আছে আর একটি লোক আত্মহত্যা করেছে। আসলে এই আখ্যান মৃত ব্যক্তির পোস্টমর্টেম নয়, ময়নাতদন্ত চলতে থাকে জীবিত মানুষেরও।
প্রেসিডেন্সি কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র লিখলেন পূর্বাশা, চতুরঙ্গ, দেশ ও আনন্দবাজার পত্রিকায়। প্রথম গল্প ‘ট্র্যাজেডি’। প্রথম প্রকাশিত বই গল্পগ্রন্থ ‘ দরবারী’। বছর ঘুরতে সে বইয়ের সংস্করণ। প্রথম উপন্যাস ‘প্রথম প্রহর’। উপন্যাস লিখেছেন ৫০টি। বেশির ভাগই আয়তনে ছোট। নিজেও ছিলেন স্বল্পবাক, উপন্যাসেও সে রীতি মেনেছেন। কাহিনিগদ্য নিয়ে ছিল স্বতন্ত্র ভাবনা, লেখার কৌশল নিয়ে ছিল খুঁতখুঁতানি। নিজেই বলেছেন, ‘প্রথম জীবনে তো ভাষা, আঙ্গিক ইত্যাদি নিয়ে কত কারিকুরি করেছি, পরে একেবারে সহজ-সরল। সহজ হওয়া যে কত কঠিন, জানি’।ছিঁড়েছেন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। এমনকি আস্ত উপন্যাসও ফেলে দিয়েছেন ঝুড়িতে। একটি দীর্ঘ আত্মজীবনী লেখার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও তা লেখেননি। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় অন্তত ৩০ বছর আগের লেখা আত্মজৈবনিক স্মৃতিকথা ‘হারানো খাতা’। সেই লেখা উদ্ধার হয় বাতিল কাগজপত্রের গাদাগুচ্ছ থেকে। ছাপার যোগ্য মনে হয়নি, তাই ফেলে রেখেছিলেন। খড়্গপুরে কাটানো তাঁর শৈশব-কৈশোর আর কলকাতা জীবনের প্রথম দিকের টুকরো টুকরো ছবি পাওয়া যায় সেখানে। এমনকি খড়্গপুর রেলস্টেশনে রবীন্দ্রনাথকে দেখার স্মৃতিও।তবে ঔপন্যাসিক রমাপদ চৌধুরী ঠিক এমনটা নন। অন্তত খারিজ-এর পর থেকে, ‘প্রথম জীবনে বৈচিত্র্যের প্রতি মোহ ছিল, একই বিষয় নিয়ে দু’বার লিখিনি। কিন্তু খারিজ-এর পর থেকে তিরিশ বছর ধরে একই বিষয়ের মধ্যে বৈচিত্র্য খুঁজে পেয়েছি। মধ্যবিত্ত জীবনের আত্মসমালোচনা, তা পাঠকের কাছে অস্বস্তিকর লেগেছে, কখনও মনে হয়েছে নির্মম। কিন্তু যা বলার তা না বলে পারিনি। কাহিনির বাইরেও তো এসব উপন্যাসে আমার কিছু বলার কথাও থাকে’।
তাঁর উপন্যাস রচনার দ্বিতীয় পর্বের ক্ষেত্রে এ কথা মেনে নেওয়া যায়। কেননা, প্রথম পর্বে ‘কাহিনির বাইরে ভিতরের তল’ বিষয়টা তেমন ছিল না। ‘প্রথম প্রহর’, ‘লালবাঈ’, ‘বনপলাশির পদাবলি’ কিংবা ‘দ্বীপের নাম টিয়ারং’ তাঁর বিস্তার দ্বিতীয় পর্ব থেকে আলাদা। ইতিহাসের পটভূমিতে লেখা ‘লালাবাঈ’তে কাহিনির বাইরে সেই অন্তর্জগতের খোঁজ দেওয়া যায় না। আবার গ্রামজীবনের অভিজ্ঞতা তাঁর একদমই ছিল না। তাই ‘বনপলাশি’ কিংবা ‘দ্বীপের নাম টিয়ারং’ লেখা হয় অর্ধেক-দেখাকে নিজস্ব কল্পনার মিশেল দিয়ে।খারিজ-এর পরে তিনি আঙ্গিকে অনেকখানি আলাদা। ‘বীজ’, ‘বাহিরি’, ‘ছাদ’, ‘পাওয়া’, ‘অহঙ্কার’, ‘জৈব’, ‘স্বার্থ’ লিখেছেন খুব অল্প দিনের ব্যবধানে। যদিও তিনি মনে করতেন, ‘আসলে সব উপন্যাসই হয়তো আমরা সারা জীবন ধরে লিখি’। এই সময় তার উপন্যাসের আয়তন ছোট হয়ে আসে। পটভূমিও হয়ে পড়ে ছোট আর স্থির।
কলকাতা শহরের পাড়াগুলিও খুব আলাদা করা যায় না। ওদিকে চরিত্রেরা একেবারে নিকটজন। প্রতিদিনের দেখা মানুষ। তারা মধ্যবিত্ত জীবনের প্রতিমুহূর্তের সংকটে অবিচ্ছিন্ন জড়িয়ে। সেখানে শঠতা, অজ্ঞতা, ক্রূরতা, গ্লানি, বিদ্বেষ ও ক্ষয়ের ভেতরেও যে মহত্ত্ব ও বন্ধুতা লেপে আছে, তা লেখক চিহ্নিত করেন খুব সহজেই। এতটাই সহজ যেন কাহিনিটাই পড়ছি অথচ মানবিক সংকট ভীষণভাবে ধরা পড়ছে।সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পাওয়া তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘বাড়ি বদলে যায়’তেও চলে যাওয়ার পরে ধ্রুব আর অবিনাশ দু’জনেরই অনুশোচনা হলো। এ ভাবে সুনন্দকে আঘাত দেওয়া ঠিক নয়। অথচ আঘাত তো দিল। কিন্তু কেন? ঈর্ষা? সুনন্দর একটা বাড়ি আছে বলে কি ওদের মনে কোনো ঈর্ষা আছে?সুনন্দর সঙ্গে এত দিনের বন্ধুত্ব, পাশাপাশি টেবিলে বসে কাজ করে, একজনের বিপদে আরেকজন এসে দাঁড়িয়েছে কত দিন, অথচ তাকেই ওরা ভাবল বিপরীত দিকের মানুষ। কী আশ্চর্য, একজন অজ্ঞাতকুলশীল, কেমন ধরনের লোক কে জানে, ধ্রুব তাকে কোনেও দিন দেখেওনি, চেনে না, জানে না, সেই লোকটাই ওদের সমবেদনা পেল। মনে হলো আপনজন, আত্মীয়! শুধু সেও একজন ভাড়াটে বলেই?কাহিনির ভেতরে থাকা এই দ্বিতীয় স্তরের কথা নিজেই বলেছেন তিনি। এখানে একটি স্তরে থাকে শুধুই কাহিনি। আর দ্বিতীয় স্তরে থাকে সেই ব্যঞ্জনা, যা জীবনের গভীরতম স্তরকে চেনায়। প্রচলিত মূল্যবোধের আপাত অন্ধকার দিকটা খুঁচিয়ে দেখানোতে রমাপদ যে দারুন সফল, সেটা বুঝতে কোনও অসুবিধা হয় না। কাহিনি-গদ্যকার হিসেবে প্রকাশ্য একই সঙ্গে অপ্রকাশ্য জীবন চিনিয়ে দিতে পারাই রমাপদ চৌধুরীর প্রধান কৃতিত্ব। বাংলা কথাসাহিত্যে সরাসরি লক্ষ্যে পৌঁছানো গদ্য তিনি ব্যবহার করছেন অনায়াস কৌশলে এটাও রমাপদর আরেক বড় সাফল্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বেড়ে ওঠা চল্লিশের লেখকেরা শেষ পর্যন্ত যে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে ধ্বস্ত স্বদেশকেই খুঁজে ফিরেছেন সারাটা জীবন, সেখানে সাহিত্যিক হিসেবেই রমাপদ চৌধুরী নামটি উচ্চারণ করতেই হয়।তিনিই একসময়ে নতুন উপন্যাস লেখার আগে কিনতেন নতুন একটি ঝর্না কলম। সেই লেখকই একদিন জানিয়ে দিলেন, বলা ভাল ঘোষণা করেই নিজের লেখা থামিয়ে দিলেন। তিনি কোনও সভায় যেতেন না। টেলিভিশনে তাঁর মুখ কেউ দেখেছেন বলেও শুনিনি কখনও। বিদেশ ভ্রমণের আমন্ত্রণ পেয়েছেন বহুবার, কিন্তু সযত্নে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তরুণ লেখকদের পছন্দ করতেন খুব। তাঁদের সঙ্গেই মেলামেশা করতেন বেশি।
উপন্যাসের চাইতে ছোটগল্পের ওপর তাঁর দরদ ছিল বেশি। তাই তো তিনি ‘আনন্দ’ থেকে প্রকাশিত নিজের ‘গল্প-সমগ্র’র ভূমিকায় লিখেছিলেন, “ রণক্ষেত্রের দামামা বেজে উঠলো। লক্ষ লক্ষ সিপাহী, সান্ত্রী, অশ্বারোহী সৈনিক ছুটে এলো উন্মত্ত আক্রোশে। বিপরীত দিক থেকেও ঝাঁপিয়ে পড়লো লক্ষ লক্ষ যোদ্ধা। এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের যুদ্ধ, এক জাতির সঙ্গে আর এক জাতির। ঔপন্যাসিক তখন কোনো মিনারের চূড়ায় উঠে নোটবুকে টুকে নেবেন সমস্ত দৃশ্যটা। রাজার অঙ্গে লাল মখমলের পরিচ্ছদ, মাথার মুকুটে মণিমুক্তাহীরের জ্যোতি, সেনাপতির দুঃসাহসিক অভিযান, সৈন্যদের চিৎকার, এসবের একটা কথাও বাদ দেবেন না ঔপন্যাসিক। লিখে নেবেন কতগুলো হাতি, কত ঘোড়া … । খুঁটিনাটি প্রত্যেকটি কথা, প্রত্যেকটি বর্ণনা ইনিয়ে বিনিয়ে লিখে নেবেন তিনি। যুদ্ধ জয়ের পর সৈন্যদল দেশে ফিরবে যখন, তখনও পিছনে পিছনে ফিরবেন ঔপন্যাসিক। শঙ্খধ্বনি আর সমারোহের আনন্দ ছিটিয়ে আহ্বান জানাবে গ্রামীণা আর নগরকন্যার দল। তাও লিখবেন ঔপন্যাসিক, বর্ণনা দেবেন তাদের, যারা উলুধ্বনির আড়ালে কলরব করে উঠলো।
===============≠===============≠
No comments:
Post a Comment