∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
ক.
জসীমউদ্দীন
খ।
অদ্বৈত মল্লবর্মণ
=================================
Doinik sabder methopath
Vol -239.Dt -01.01.2021
১৫ ই পৌষ,১৪২৭. শুক্রবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
ক।
জসীমউদ্দীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মোহাম্মাদ জসীমউদ্দীন মোল্লা তার পূর্ণ নাম হলেও তিনি জসীম উদ্দীন নামেই পরিচিত। তার বাবার বাড়ি ছিল একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। বাবার নাম আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মা আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট।
জসীম উদ্দীন ফরিদপুর ওয়েলফেয়ার স্কুল ও পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলা স্কুলে (বর্তমানে ফরিদপুর জিলা স্কুল) পড়ালেখা করেন। এখান থেকে তিনি তার প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১৯২১ সনে উত্তীর্ণ হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিষয় থেকে বি. এ. এবং এম. এ. শেষ করেন যথাক্রমে ১৯২৯ এবং ১৯৩১ সনে।
১৯৩১ থেকে ১৯৩৭ পর্যন্ত, দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে লোক সাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে জসীম উদ্দীন কাজ করেন। তিনি পূর্ব বঙ্গ গীতিকার একজন সংগ্রাহকও। তিনি ১০,০০০ এরও বেশি লোক সংগীত সংগ্রহ করেছেন, যার কিছু অংশ তার সংগীত সংকলন জারি গান এবং মুর্শিদা গান এ স্থান পেয়েছে। তিনি বাংলা লোক সাহিত্যের বিশদ ব্যাখ্যা এবং দর্শন খণ্ড আকারেও লিখে গেছেন।
১৯৩৩ সনে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী পদে যোগ দেন। এরপর ১৯৩৮ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে এবং তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করে গেছেন। তিনি গুরু মৃত্যুন জয় সিলের কাছে গুণগ্রাহী ছিলেন।[৪] ১৯৬৯ সনে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করেন।
“ নকশী কাঁথার মাঠ
– জসীম উদ্দীন
সখী দীন দুঃখীর যারে ছাড়া কেহ নাই
সেই আল্লার হাতে আজি আমি তোমারে সঁপিয়া যাই।
মাকড়ের আঁশে হস্তী যে বাঁধে, পাথর ভাসায় জলে
তোমারে আজিকে সঁপিয়া গেলাম তাঁহার চরণতলে। "
পরমাপত্নী মমতাজ জসীমউদ্দীন। পরিবার
হাসনা জসীমউদ্দীন, আসমা ইলাহি ও বেগম হাসনা।
কাব্যগ্রন্থ
রাখালী (১৯২৭)
নকশী কাঁথার মাঠ (১৯২৯)
বালুচর (১৯৩০)
ধানখেত (১৯৩৩)
সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৪)
হাসু (১৯৩৮)
রুপবতি (১৯৪৬)
মাটির কান্না (১৯৫১)
এক পয়সার বাঁশী (১৯৫৬)
সখিনা (১৯৫৯)
সুচয়নী (১৯৬১)
ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে (১৯৬২)
মা যে জননী কান্দে (১৯৬৩)
হলুদ বরণী (১৯৬৬)
জলে লেখন (১৯৬৯)
পদ্মা নদীর দেশে (১৯৬৯)
কাফনের মিছিল (১৯৭৮)
মহরম
দুমুখো চাঁদ পাহাড়ি (১৯৮৭)
নাটক -
পদ্মাপার (১৯৫০)
বেদের মেয়ে (১৯৫১)
মধুমালা (১৯৫১)
পল্লীবধূ (১৯৫৬)
গ্রামের মেয়ে (১৯৫৯)
ওগো পুস্পধনু (১৯৬৮)
আসমান সিংহ (১৯৮৬)
আত্মকথা-
যাদের দেখেছি ((১৯৫১)
ঠাকুর বাড়ির আঙ্গিনায় (১৯৬১)
জীবন কথা ( ১৯৬৪)
স্মৃতিপট (১৯৬৪)
স্মরণের সরণী বাহি (১৯৭৮)
উপন্যাস -
বোবা কাহিনী (১৯৬৪)
ভ্রমণ কাহিনী -
চলে মুসাফির (১৯৫২)
হলদে পরির দেশে ( ১৯৬৭)
যে দেশে মানুষ বড় (১৯৬৮)
জার্মানীর শহরে বন্দরে (১৯৭৫)
সম্মাননা -
প্রেসিডেন্টস এওয়ার্ড ফর প্রাইড অফ পারফরম্যান্স, পাকিস্তান (১৯৫৮)
রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট ডিগ্রি, ভারত (১৯৬৯)
১৯৭৪ সনে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন
একুশে পদক, বাংলাদেশ (১৯৭৬)
স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ১৯৭৮ (মরণোত্তর)
১৪ মার্চ ১৯৭৬ সনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুসারে তাকে ফরিদপুর জেলার আম্বিকাপুর গ্রামে তার দাদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়।[৭] গোবিন্দপুরে প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে তার জন্মদিনকে স্মরণ করে জসীম মেলা নামে একটি পাক্ষিক উৎসব উদযাপন করা হয়।[৮] তার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়েছে।
=================================খ।
তৎকালীন কুমিল্লা জেলার অধীনে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া মহকুমার গোকর্ণঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
এক দরিদ্র ধীবর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ। তার পিতার নাম ছিল অধরচন্দ্র।শৈশবেই পিতৃ-মাতৃহীন হন তিনি। গ্রামের মালোদের চাঁদার টাকায় তার লেখাপড়ার খরচ নির্বাহ হতো।
১৯৩৩ সালে বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা সদরে অবস্থিত অন্নদা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ১ম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর কুমিল্লা জেলার ভিক্টোরিয়া কলেজে কিছুদিন আই,এ ক্লাসে অধ্যয়ন করেন। কিন্তু মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক সঙ্কটের কারণে তার পড়াশোনা শেষ হয়ে যায়।
১৯৩৪ সালে কলেজের পড়া ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন ও জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে কলকাতা গমন করেন। সেখানে মাসিক 'ত্রিপুরা' পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে শুরু করেন কর্মজীবন। এরপর ১৯৩৬ সালে ক্যাপ্টেন নরেন দত্ত পরিচালিত 'নবশক্তি' পত্রিকায় যোগ দেন তিনি।পত্রিকাটির সম্পাদক কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের সহকারী হিসেবে সহ-সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। নবশক্তি'র প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেলে তিনি মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ'র "মাসিক মোহাম্মদী" পত্রিকার সম্পাদকের সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। তিন বছর একাদিক্রমে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন অদ্বৈত। এ সময়ে একই সঙ্গে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছিলেন তিনি।
এছাড়াও, নবযুগ, কৃষক ও যুগান্তর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আমৃত্যু তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। আয় বৃদ্ধির জন্য বিশ্বভারতীর প্রকাশনা শাখায় খণ্ডকালীন চাকরিও গ্রহণ করেন তিনি।
চল্লিশের দশকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমূখের পাশাপাশি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত 'এক পয়সায় একটি' গ্রন্থ সিরিজ আকারে লিখে তিনি বিশেষভাবে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিতাস একটি নদীর নাম তাঁর স্মরণীয় উপন্যাস।
তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহ হচ্ছে -
তিতাস একটি নদীর নাম (উপন্যাস)
এক পয়সায় একটি (গ্রন্থ)
সাদা হাওয়া (উপন্যাস)
সাগরতীর্থে
নাটকীয় কাহিনী
দল বেঁধে (গল্পগ্রন্থ)
রাঙামাটি
জীবনতৃষ্ণা (অনুবাদঃ লাস্ট ফর লাইফ, ইংরেজ ঔপন্যাসিক আরভিংস্টোন)
অদ্বৈতর সব রচনাই ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। তাঁর মৃত্যুর পর তিতাস একটি নদীর নাম এবং অন্য দুটি ছোট্ট উপন্যাস (রাঙামাটি ও সাদা হাওয়া), ৫টি গল্প, ১৪টি কবিতা, ১৩টি প্রবন্ধ–নিবন্ধ–ভূমিকা-টীকা ও নবশক্তির কয়েকটি সস্পাদকীয় প্রভৃতি নিয়ে হাজার পৃষ্ঠার রচনাবলি প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু এসব রচনার বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্য ব্যতিরেকে কেবল তাঁর তিতাস একটি নদীর নাম–এর লেখকসত্তাই সুপরিচিত।
অদ্বৈত মল্লবর্মণের সমগ্র সাহিত্যিক জীবনে 'তিতাস একটি নদীর নাম' উপন্যাসটি অমর কীর্তি । প্রতিকূল সংঘাতে ক্রমশ মুছে-আসা মৎস্যজীবী যে মানুষদের কাহিনী এই উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে তিনি সেই 'মালো' সম্প্রদায়েরই লোক ছিলেন। তিনি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও সুগভীর অন্তঃদৃষ্টির কারণেই উপন্যাসটিতে ধীবর সমাজের নিষ্ঠুর জীবনসংগ্রামের সাধারণ কাহিনীকে দিয়েছেন অবিনশ্বর ও অসাধারণ।
উপন্যাসটির ভূমিকাংশে তিনি লিখেছেন-
"তিতাস একটি নদীর নাম। তার কূলজোড়া জল, বুকভরা ঢেউ, প্রাণভরা উচ্ছ্বাস। স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়। ভোরের হাওয়ায় তার তন্দ্রা ভাঙ্গে, দিনের সূর্য তাকে তাতায়; রাতে চাঁদ ও তাঁরারা তাকে নিয়া ঘুম পাড়াইতে বসে, কিন্তু পারে না।"
তিতাস নদী ও তার দু'কূলের মানুষের জীবনযাত্রাকে ঘিরে রচিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম' উপন্যাসে কিশোর, সুবল, অনন্ত, বনমালী প্রমুখ চরিত্রগুলো স্থান পেয়েছে। উপন্যাসটির সামগ্রিক মূল্যায়ন ও বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন অদ্বৈত মল্লবর্মণের জীবনীকার অধ্যাপক শান্তনু কায়সার।
তাঁর মতে-
‘তিতাস জীবনের শেকড় প্রাকৃত জীবনের গভীরে প্রোথিত। এই প্রাকৃত জীবনকে বাইরে থেকে যতই সরল দেখাক এর ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে, তা বহু ভঙ্গিমা ও বৈচিত্র্যের অধিকারী।"
তাঁর এ বিখ্যাত উপন্যাসটি প্রথমে মাসিক পত্রিকা মোহাম্মদীতে প্রকাশিত হয়েছিল। কয়েকটি অধ্যায় মোহাম্মদীতে মুদ্রিত হবার পর উপন্যাসটির মূল পাণ্ডুলিপি রাস্তায় হারিয়ে যায়। বন্ধু-বান্ধব ও অতি আগ্রহী পাঠকদের আন্তরিক অণুরোধে তিনি পুণরায় কাহিনীটি লেখেন। কাঁচড়াপাড়া যক্ষ্মা হাসপাতালে যাবার আগে এই গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি বন্ধু-বান্ধবকে দিয়ে যান।
অদ্বৈত মল্লবর্মণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘মানিকের পদ্মা নদীর মাঝির পর জেলেদের নিয়ে উপন্যাস লিখতে গেলেন কেন?’ বিচক্ষণ অদ্বৈত উত্তর দিয়েছিলেন, ‘মানিক তো বাওনেরা পোলা, আমি জাউলার পোলা।’ আমাকেও কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেন, ‘জেলেজীবন নিয়ে এত উপন্যাসের পর জলপুত্র, দহনকাল লিখতে গেলেন কেন?’ আমি স্বগত উত্তর দিই, ‘আগেরগুলো নদীপাড়ের জেলেদের নিয়ে, জলপুত্র, দহনকাল সমুদ্রপাড়ের জেলেদের নিয়ে।’ স্পষ্ট করে বলি, ‘জেলেদের নিয়ে আমি আর লিখব না, যদি ওদের জীবনবৃত্তান্ত লিখবার জন্য বাংলাদেশে অন্তত দুজন ঔপন্যাসিক কলম ধরেন।’
মাত্র ৩৭ বছর বয়সে ১৬ এপ্রিল, ১৯৫১ সালে
যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার নারকেলডাঙ্গার ষষ্ঠীপাড়ার নিজ বাড়িতে অদ্বৈত মল্লবর্মণ মৃত্যুবরণ করেন।
অদ্বৈত মল্লবর্মণের পৈতৃক বাড়িতে আবক্ষ মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে এবং জেলা পরিষদের অর্থায়নে এটি নির্মিত হয়েছে।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment