∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
গ্রন্থালোচনা
"মা"
ম্যাক্সিম গোর্কি
======{========{========{========{=
Doinik Sabder Methopath
Vol -239. Dt -02.01.2020
১৭ পৌষ ১৪২৭। শনিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
ম্যাক্সিম গোর্কি। তিনি হলেন রুশ কবি ও সাহিত্যিক। তিনি তাঁর কালজয়ী উপন্যাস ‘মা’ এর জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন।
ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯০৬-৭ সালে। সেভিয়েত ইউনিয়নের অক্টোবর বিপ্লবের পূর্বেকার অর্থাৎ যখন জার সরকারের পুজিবাদী নীতিতে রাশিয়ার শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণী একরকম দাসে পরিণত হয়েছিল সেই অবস্থাই ‘মা’ উপন্যাসের পটভূমি।
“মা উপন্যাসের মূল চরিত্র হলো পাভেল ভ্লাসভ ও তার মা পিওতর নিলভনা। পাভেল ভ্লাসভের বাবা একজন কলকারখানার শ্রমিক। সপ্তাহের ছয়দিন কারখানায় হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর রবিবার মদ খেয়ে বাড়ি আসে এবং বউকে পেটায়।
বাবার মৃত্যুর পর পাভেল কারখানায় কাজ নেয়। তবে রবিবার পাভেল মাতাল না হয়ে বাড়িতে বই নিয়ে আসে। বই পড়ে পাভেল মাকে বোঝায় বাবা কেন তাকে মারত।পাভেল যে সত্যকে জেনেছে তা বলে শোনায় মাকে। অবশেষে মা জানতে পেরে অস্থির হয়ে পড়ে। ছেলেকে নিষেধও করতে পারেনা। মাঝে মাঝে নিজের ভয়ের কথা ছেলেকে ব্যক্ত করে কিন্তু ছেলে দৃঢ় কিন্তু কোমল কন্ঠে মাকে বুঝায়- তারা ন্যায়ের পথে লড়ছে। এ সংগ্রাম তাদের হাত ধরেই এগুবে। শোষকশ্রেণীর হাত থেকে দুনিয়াকে নামাতে হবে শ্রমিকদের হাতে। দুনিয়াটা হবে মানবতার, ন্যায়ের।মায়ের মনে অজানা আনন্দ ঢেউ দেয়। প্রথম প্রথম মায়ের ভয় হলেও কিছুদিন পর আর ভয় হয় না। মা বুঝতে পারে তার ছেলে বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ হয়ে উঠছে তার চোখের সামনে।শত অত্যাচারেও মা ওদের বলছে - " মূর্খের দল। দিনদিন নিজেদের বোঝা নিজেরাই বাড়িয়ে চলেছিস। একদিন সে ভারে তোরা নিজেরাই নুয়ে পড়বি।"কেউ একজন মায়ের গলা টিপে ধরে অস্ফুট স্বরে মা বলে ওঠে " হায়রে, হতভাগার দল ...."
পাভেল কারখানার শ্রমিকদের সচেতন করার চেষ্টা করে তাদের অধিকার সম্পর্কে। পহেলা মে পাভেল মিছিল বের করলে তখন তাকে পুলিশ ধরে ফেলে। পাভেল জেলে যাওয়ার পর পাভেলের অসম্পূর্ণ কাজের বোঝা মা তার কাধে তুলে নেন। তিনি কলকারখানায় ছদ্মবেশে কাগজ বিলি করেন। নানান ছদ্মবেশে গ্রামে গিয়ে মা বই দিয়ে আসেন।মাইলের পর মাইল হেটে মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেন।
সময়ের প্রয়জনে মা শুধু পাভেলের মা হয়ে থাকেননি। তিনি সকল বিদ্রোহীদের মা হয়ে ওঠেন। সকলের জন্য চিন্তা করেন। বিচারকরা পাভেলকে সাইবেরিয়ায় নির্বাসন দিলে মা পাভেলের সাথে না যেয়ে বলেন তারতো এখানে অনেক কাজ। বিচারকদের সামনে পাভেলের দেওয়া জবানবন্দীর কপি মানুষের মাঝে পৌছে দিতে যেয়ে মা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। বিচারে মাকেও সাইবেরিয়ায় নির্বাসন দেওয়া হয়।এর কিছু বছর পরেই রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়। ”
উপন্যাসটি পড়লে বুঝতে পারবেন বিপ্লবীরা কিভাবে নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করে মানুষের জন্য কাজ করেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিতেও তারা পিছপা হোন না।তাই মা উপন্যাসের নায়ক পাভেল ভ্লাসভ আদর্শ হয়ে থাকবেন যুগের পর যুগ।
বইটি লেখক যে বাস্তব দুটি চরিত্রের অবলম্বনে লিখেছেন সে চরিত্র দুটি হলো “পিওতর জালমোভ” এবং তাঁর মা “আন্না কিরিলোভনা” জালোমভ অনেক কষ্টের মধ্যে থেকেও এ আন্দোলন থামায় নি। সে তার এক চিঠিতে লিখেছিলেন -" আমি চাই গোলাম যেন না থাকে। গোলামদের আমি ভালোবাসি না। ভালোবাসি যোদ্ধাদের। যাদের মধ্যে স্বাধীন মানুষের পৌরুষ, ভালোবাসি সেই সব মানুষকে।"এমনই ভাবে পহেলা মে' কে সার্থক বানাতে এগিয়ে এসেছিল বিপ্লবের এক সাধারণ সৈনিক. তিনি যেমন মুগ্ধ করেছেন তেমনি তার নৈতিক শুচিতাও ছিল।
আর উপন্যাসে এ চরিত্র দুটি হলো পাভেল ও তার মা।
মহামতি লেনিন এই বই সম্পর্কে বলেছিলেন – "সব মজুর এতদিন আন্দোলনে যোগ দিত আবেগতাড়িত হয়ে, কিন্তু ওরা এই বই পড়ে একাত্ববোধ হয়ে আন্দোলন করবে।"
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment