∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
স্বভাবকবি গোবিন্দ চন্দ্র দাস
≠================================
Doinik Sabder Methopath
Vol -253. Dt -16.01.2021
২ পৌষ, ১৪২৭. শনিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
জন্মভূমি
গোবিন্দ চন্দ্র দাস
জননী গো জন্মভূমি তোমারি পবন
দিতেছে জীবন মোরে নিশ্বাসে নিশ্বাসে!
সুন্দর শশাঙ্কমুখ, উজ্জ্বল তপন,
হেরেছি প্রথমে আমি তোমারি আকাশে।
ত্যাজিয়ে মায়ের কোল, তোমারি কোলেতে
শিখিয়াছি ধূলি‐খেলা, তোমারি ধূলিতে।
তোমারি শ্যামল ক্ষেত্র অন্ন করি দান
শৈশবের দেহ মোর করেছে বর্ধিত।
তোমারি তড়াগ মোর রাখিয়াছে প্রাণ,
দিয়ে বারি, জননীর স্তন্যের সহিত।
জননীর করাঙ্গুলি করিয়া ধারণ,
শিখেছি তোমারি বক্ষে বাড়াতে চরণ।
তোমারি তরুর তলে কুড়ায়েছি ফল,
তোমারি লতার ফুলে গাঁথিয়াছি মালা।
সঙ্গীদের সঙ্গে সুখে করি কোলাহল,
তোমারি প্রান্তরে আসি করিয়াছি খেলা।
তোমারি মাটিতে ধরি জনকের কর,
শিখেছি লিখিতে আমি প্রথম অক্ষর।
ত্যাজিয়া তোমার কোল যৌবনে এখন,
হেরিলাম কত দেশ কত সৌধমালা।
কিন্তু তৃপ্ত না হইল এ দগ্ধ নয়ন,
ফিরিয়া দেখিতে চাহে তব পর্ণশালা।
তোমার প্রান্তর নদী, পথ, সরোবর,
অন্তরে উদিয়া মোর জুড়ায় অন্তর।
তোমাতে আমার পিতা পিতামহগণ,
জন্মেছিল একদিন আমারই মতন।
তোমারি এ বায়ু তাপে তাঁহাদের দেহ
পুষেছিলে, পুষিতেছ আমায় যেমন।
জন্মভূমি জননী আমার যথা তুমি,
তাঁহাদেরও সেইরূপ তুমি—মাতৃভূমি।
তোমারি ক্রোড়েতে মোর পিতামহগণ
নিদ্রিত আছেন সুখে জীবলীলা‐শেষে
তাঁদের শোণিত, অস্থি সকলি এখন
তোমার দেহের সঙ্গে গিয়েছে মা মিশে।
তোমার ধূলিতে গড়া এ দেহ আমার
তোমার ধূলিতে কালে মিশাবে আবার।
বাংলার স্বভাবকবি গোবিন্দ দাস নামে খ্যাত গোবিন্দচন্দ্র দাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমকালে সম্পূর্ণ অরাবীন্দ্রিক এক কাব্যজগৎ সৃষ্টি করেছিলেন। অথচ রবীন্দ্রনাথের মতো লিরিক কবিতাতেই তাঁর স্ফূর্তি ছিল। স্বভাবকবি, পূর্ববঙ্গের কবি—এসব উপাধিতে আটকে ফেলা হয়েছিল গোবিন্দচন্দ্র দাসকে। কবি হিসেবে গোবিন্দ দাসের আবির্ভাব ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে।
এ বঙ্গের কবি গোবিন্দ চন্দ্র দাসের জন্ম হয়েছিল ১৬ জানুয়ারি ১৮৫৫ সালে গাজীপুরের ধীরাশ্রমে। পিতা রামনাথ দাস। আর মায়ের নাম আনন্দময়ী দেবী। ভাওয়ালরাজ প্রতিষ্ঠিত জয়দেবপুর মাইনর স্কুলে পড়ার পরে তিনি ঢাকা নর্মাল স্কুলে ভর্তি হন। [৩] এক বছর পর ঢাকা মেডিক্যাল স্কুলে পড়েন। ভাওয়ালরাজ কালীনারায়ণ তার শিক্ষার ব্যয়নির্বাহ করতেন। তবে অব্যবস্থিত চিত্তের জন্য তিনি সারা জীবন দুঃখভোগ করেছেন।
গোবিন্দ বিভিন্ন স্থানে ও বিভিন্ন ব্যক্তির স্নেহচ্ছায়ায় কাজ করেছেন, আবার ছেড়েও দিয়েছেন। শেষজীবনে মুক্তাগাছার জমিদার জগৎকিশোর আচার্য চৌধুরীর বৃত্তিমাত্র সম্বল ছিল।
ভাওয়াল রাজপরিবারের আশ্রয়ে থাকাকালীন রাজপরিবারের প্রধান কর্মচারী কালীপ্রসন্ন ঘোষের সঙ্গে বিরাধিতার ফলে তিনি ভাওয়াল থেকে নির্বাসিত হয়েছিলেন। সেই বেদনা ও অপমান তাঁর কাব্যের প্রধান সুর। তাঁর আন্তরিকতা ও স্পষ্টতার জন্য তিনি ‘স্বভাব কবি’আখ্যা পেয়েছেন। যদিও তাঁর রচিত কবিতাবলি ছিল কিন্ত্তে অমার্জিত। পূর্ববঙ্গের প্রকৃতির বর্ণনা, গভীর বাস্তববোধ ও প্রগাঢ পত্নীপ্রেম তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট্য। কবিতার মাধ্যমে তিনি প্রথমা পত্নীকে অমর করেছেন। অ্যালেন হিউম রচিত ‘অ্যায়োএক’ কবিতা অনুবাদের জন্য তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। ‘স্বদেশ’ কবিতায় শিক্ষিত বিলেতফেরত সমাজকে তীব্র কশাঘাত করেন। কলকাতায় ‘বিভা’পত্রিকার প্রকাশক এবং শেরপুরে ‘চারুবার্তা’ কাগজের অধ্যক্ষ ছিলেন। শেষের দিকে অসুস্থতার জন্য দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তাঁর চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করেন। তিনি ১০খানি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। কিছু কবিতা আজও অপ্রকাশিত। গীতার কাব্যানুবাদ তিনি করেছিলেন।
রচনাবলী
কাব্য
প্রসূন (১৮৭০)
প্রেম ও ফুল (১২৯৪ বঙ্গাব্দ),
কুঙ্কুম (১২৯৮ বঙ্গাব্দ)
কস্ত্তরী (১৩০২ বঙ্গাব্দ)
চন্দন (১৩০৩ বঙ্গাব্দ)
ফুলরেণু (১৩০৩ বঙ্গাব্দ)
মগের মুল্লুক (তার লেখা একটি ব্যঙ্গ কাব্য )।
কোনো কোনো গ্রন্থে গোবিন্দ দাসের মৃত্যু তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ১৯১৮ লেখা রয়েছে। তবে স্বভাব কবি গোবিন্দ দাস গ্রন্থে কবির মৃত্যু সাল, তারিখ, বার ও স্থান সুনির্দিষ্টভাবে দেওয়া আছে।কবি গোবিন্দ চন্দ্র দাস ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯১৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment