∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
জর্জ গর্ডন বায়রন
=================================
Doinik Sabder Methopath
Vol -259. Dt -22.01.2021
৮ পৌষ, ১৪২৭. শুক্রবার
=================================
" বায়রনের বাড়ি মানেই দশটি ঘোড়া, আটটি বিশালদেহী কুকুর, তিনটি বানর, পাঁচটি বিড়াল, একটা ঈগল পাখি, একটা কাক এবং একটি বাজপাখি…এখানেই শেষ নয়, সুবিশাল সিঁড়িতে দেখা হয়ে যায় পাঁচ পাঁচটি ময়ূর, দুটি গিনি মুরগি ও একটা মিসরীয় সারসের সঙ্গে।’ রোমান্টিক কবি শেলি একবার বায়রনের বাসস্থান বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন।
দুঃসাহসিক জীবনযাত্রা , জটিল মনস্তত্ত্ব , মানুষের প্রতি অবিশ্বাস, না পাওয়ার বেদনায় আচ্ছন্ন চৈতন্য, মগ্ন চৈতন্যে ক্রোধ হিংসা ঘৃণা ও প্রেমের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষতবিক্ষত যে ব্যক্তিসত্তা , প্রতিনিয়ত কালাপাহাড়ের মতো শুধু ভাঙতেই চেয়েছেন, কোন কিছুর সৃজনশীল ধৈর্য যার ছিল না, তিনি আবার নীলকন্ঠ হয়ে জীবনে অমৃত ও গরল যুগপৎ পান করেছেন একইসঙ্গে - তিনি জর্জ গর্ডন লর্ড বায়রন।
১৭৮৮ সালের ২২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ক্যাপ্টেন ম্যাড জ্যাক বায়রন ও মাতা ক্যাথেরিন। উভয়ই আভিজাত্য ঘরানায় সংসারী হলেও মা ছিলেন অত্যন্ত কোপন স্বভাব মহিলা আর পিতা ছিলেন ততোধিক বেপরোয়া এবং উচ্ছৃঙ্খল। বাবা-মায়ের এসমস্ত গুণের উত্তরাধিকারী যেন তিনি ছিলেন । অল্প বয়সেই পিতা মারা যাওয়ার পর মায়ের সঙ্গে তিনি চলে আসেন আবারডিনশায়ার। বায়রনের নাম সারা জীবন পরিবর্তন হয়েছে। তিনি ক্যাপ্টেন জন ম্যাড জ্যাক বায়রন এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী, সাবেক ক্যাথরিন গর্ডন (মৃত্যু ১৮১১), কার্ডিনাল বিটনের বংশধর এবং স্কটল্যান্ডের অ্যাবার্ডিনসায়ারের গাইট এস্টেটের উত্তরাধিকারিণী এর ছেলে। বায়রনের বাবা পূর্বে কারমার্থেন নামক এক বিবাহিত মহিলাকে ভ্রষ্ট করে। পরে কারমার্থেন তার স্বামীকে তালাক দিয়ে বায়রনের বাবা জন ম্যাড জ্যাক বায়রনকে বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর প্রতি তার আচরণকে বর্বর ও বিদ্বেষপূর্ণ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কার্মারথেন দুই কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার পর মারা যান, যার মধ্যে একজন বেঁচে ছিলোঃ বায়রনের সৎ বোন অগাস্টা লেই।
বায়রনের দাদা ছিলেন ভাইস অ্যাডমিরাল জন ফাউলউইদার জ্যাক বায়রন এবং দাদি ছিলেন সোফিয়া ট্রিভেনিয়ন।
ভাইস অ্যাডমিরাল জন বায়রন জলযানে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছিলেন, এবং তার ছোট ভাই ছিল পঞ্চম ব্যারন বায়রন, যে দুষ্ট লর্ড নামে পরিচিত।
তাকে খ্রিস্টধর্ম মতে সেন্ট ম্যারিলেবন প্যারিশ চার্চে তার নানা গাইটের জর্জ গর্ডনের নামানুসারে জর্জ গর্ডন বায়রন নাম দেয়া হয়। তার নানা স্কটল্যান্ডের জেমস I এর বংশধর যে ১৭৭৯ সালে আত্মহত্যা করেছিল।
বায়রনের বাবা স্কটল্যান্ডে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর এস্টেট পাওয়ার উদ্দেশ্যে তার নামের শেষে গর্ডন যুক্ত করেন এবং তার নাম হয় জন বায়রন গর্ডন। সে মাঝে মধ্যে জৌলুস করে গাইটের জন বায়রন গর্ডন ব্যবহার করতো। জর্জ বায়রনও কিছু সময়ের জন্য এই বংশনাম ব্যবহার করে এবং সে এবার্ডিনে স্কুলে জর্জ বায়রন গর্ডন নামে নিবন্ধিত হয়েছিল। দশ বছর বয়সে সে ইংরেজ Barony of Byron of Rochdale এর উত্তরাধিকার পান এবং তিনি হন লর্ড বায়রন। এর ফলে তিনি তার দুইটি বংশনাম বাদ দেন (যদিও এইখানে তার বংশনাম peerage এ গৌণ ছিল)
১৮২২ সালে যখন বায়রনের শ্বাশুরি জুডিথ নোয়েল মারা যান তখন তার উইলে বায়রনের বংশনাম নোয়েল এ পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় তার শ্বাশুরির অর্ধেক এস্টেটের উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য। তাকে মাঝেমধ্যে লর্ড নোয়েল বায়রন হিসাবে উল্লেখ করা হতো যেন নোয়েল তার টাইটেলের অংশ এবং একই ভাবে লর্ড বায়রনের স্ত্রীকেও মাঝে মধ্যে লেডি নোয়েল বায়রন নামে ডাকা হতো। লেডি বায়রন অবশেষে Barony of Wentworth এর উত্তরাধিকারিণী হন এবং তিনি হন লেডি ওয়েন্টওয়ার্থ।
বায়রনের ডানপায়ে জন্মগত সমস্যা ছিলো। তিনি খুড়িয়ে হাটতেন। কিন্তু তিনি শৈশব থেকে এ ব্যাপারে সচেতন ছিলেন তাই বিশেষভাবে নির্মিত জুতা পরিধান করতেন।বায়রনের উচ্চতা ছিলো ৫ ফুট ৮.৫ ইঞ্চিএবং তিনি ব্যক্তিত্বময় চেহারার অধিকারী ছিলেন।
রচনা কর্ম।
Hours of Idleness -1807
Childe Harold's Pilgrimage -1812
The Giaour -1813
The Birde of Abydos -1814
The Corsair -1814
Lara -1814
The Siege of Corinth -1816
The Prisoner of Chillon -1816
Manfred -1817
Cain -1817
Beppo -1817
Mazeppa -1819
Don-Juan - 1819-1824
Vision of Judgement
Hebrew Melodies
Sardanapalas
Tha two Foscari
Etc
প্রতিভার মূল্যায়ন -
১) জাত রোমান্টিক হলেও বাস্তববাদী ভঙ্গিতে ব্যঙ্গাত্মক ছিলেন।
২) অতিমাত্রিক আত্মসচেতনতা বোধ সর্বদা পরিলক্ষিত।
৩) বিদেশি মনোভাবাপন্ন হলেও দেশপ্রেমে গভীর শ্রদ্ধাবোধ ।
৪) সামগ্রিক রচনায় আন্তর্জাতিকতা বোধ পরিলক্ষিত।
৫) সৌন্দর্য প্রেমে প্রকৃতি প্রীতি একান্ত অনুভূত।
৬) নিওক্লাসিসিজম তাঁর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর প্রভাব পরিলক্ষিত
মাইকেল মধুসূদন দত্ত, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীনচন্দ্র সেন, বিহারীলাল চক্রবর্তী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ পরবর্তী লেখকদের রচনায়।
বায়রন বিপ্লবী এবং শেলীর সমগোত্রীয়। ম্যাথু আর্নল্ড তার প্রতিভার মূল্যায়ন এ বলেছেন -
"The passionate and dauntless soldier of a forlorn hope who , ignorant of the future and unconsoled by its promises neverthelesss waged against the convervatism of the old impossible world a firey bettle ."
কিন্তু পরে আদর্শ ও পথভ্রষ্ট। সুরা ও সাকীতে লীন বায়রন ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনার উপর নবজীবনের অভিষেক ঘটাতে পারেন নি । জীবন যার আঘাতে জীর্ণ ক্রোধ ও ঘৃণা তাঁর পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। তাই বায়রন হয়ে উঠলেন উনবিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ কবি। পোপ কে তিনি আদর্শ মেনে রোমান্টিসিজমের বিরোধিতা করেছিলেন ।নিওক্লাসিসিজমের পুনরাবর্তন তাঁর কাব্য কবিতায়। ক্লাসিক ধরা যায় না। কারণ তিনি আদর্শবাদ ও বাস্তববাদকে ধ্রুপদ সাহিত্য ধারার সঙ্গে রোমান্টিক প্রবাহকে মিশিয়ে ফেলেছিলেন। জীবনের বৈপরীত্য তাঁর কাব্য কবিতাতেও ক্রিয়াশীল।" বায়রন টেকনিক"। মা তার অহংবোধের ছত্রতলে লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে । ম্যাজিনি সে কারণেই বলেছেন -
" He gave a European role to English poetry. He led the genius of England on a pilgrimage through Europe ".
ভালোবাসার দেশ গ্রীস দেশ, স্বাধীনতার প্রধান অন্তরায় অন্তর্দ্বন্দ্ব। যা মেটানোর প্রধান উদ্যোগী হয়েও প্রতিকূল পরিবেশে অসুস্থ হয়ে ১৮২৪ সালের ১৯ এপ্রিল মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা যান, নিজ জন্মভূমি থেকে বহুদূরে গ্রিসের অ্যাটোলিয়ায়। অন্য একটি দেশের স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুর নিদর্শন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
তিনি গ্রিসের বীরযোদ্ধার মত মৃত্যুবরণ করেন।
রোমান্টিক কবি হয়েও বীর যোদ্ধা।
No comments:
Post a Comment