Sunday, 31 January 2021

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
শক্তিপদ রাজগুরু 
কৃষ্ণ ধর
=============///////////////============
    Doinik Sabder Methopath
     Vol -269. Dt -01.02.2021
       ১৯ মাঘ, ১৪২৭. সোমবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷||||||||||||||||÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
শক্তিপদ রাজগুরু
শক্তিপদ রাজগুরুর জন্ম ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯২২ সালে একজন বাঙালি কথাসাহিত্যিক হিসেবে। তিনি বাংলা জনপ্রিয় ধারার লেখক । পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ার গোপমারি গ্রামে। পিতা মণীন্দ্র নাথ ছিলেন মুর্শিদাবাদের একটি গ্রামের পোস্টমাস্টার।  তার স্কুল জীবন কেটেছে মুর্শিদাবাদের পাঁচথুপি টি এন ইন্সটিটিউশন স্কুলে। পরে বহরমপুর কৃষ্ণনগর কলেজ ও কলকাতা রিপন কলেজ পড়াশোনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পরিণত বয়সে কলকাতায় আবাস গড়েন। কলকাতার সিঁথিতে তার বাড়ির সামনের রাস্তার নাম রাখা হয়েছে শক্তিপদ রাজগুরু সরণি।ছোটো থেকেই অসাধারণ স্মরণশক্তি ছিল তাল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীর্ঘ কবিতাগুলিও মুখস্থ আবৃত্তি করতেন তিনি। পড়াশুনোর পাশাপাশি তিনি বেড়াতে ভালোবাসতেন। ছোটোনাগপুরের জঙ্গল, দণ্ডকারণ্যের বনানী তাকে গভীরভাবে আকর্ষণ করতো। অবসর পেলেই ভ্রমণে যেতেন এই জায়গাগুলিতেে।] উদ্বাস্তুদের নিয়ে লিখে তার জীবনে যশ আসে। কিন্তু তিনি উদ্বান্তু ছিলেন না। তিনি বলেছেন, “আমি উদ্বাস্তু নই, পশ্চিমবঙ্গের আদি বাসিন্দা৷ বাঁকুড়ায় আমাদের সাত পুরুষের ভিটে ছিল৷ কিন্ত্ত আমার বাবা চাকরি করতেন ‘পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফস’-এ৷ মুর্শিদাবাদ জেলার পাঁচথুপি গ্রামের পোস্ট মাস্টার ছিলেন৷ আমার বারো বছর বয়স অবধি সেখানে কেটেছে৷ তখন আমি ভাবতাম যে ওই জায়গাটা আমার জায়গা৷ কিন্ত্ত বারো বছর পর বাবা যখন ট্রান্সফার হয়ে গেলেন তখন আমি আবিষ্কার করলাম যে এই মাটির আমি কেউ নই৷ সরকারের এক কলমের খোঁচায় আমার পায়ের তলা থেকে মাটিটা সরে গেল৷ বন্ধুবান্ধব, বারো বছরের ইতিহাস, স্মৃতি সব কিছু ছেড়ে আমি উদ্বাস্তু হয়ে পথে নামলাম৷”

             তাঁর লেখালেখির সূচনা ১৯৪০ দশকের গোড়ার দিকে। ১৯৪২-এ দেশ পত্রিকায় প্রথম গল্প “আবর্তন” লিখে তিনি সকলের নজর কাড়েন। ১৯৪৫-এ প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস দিনগুলি মোর। আদ্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হয়ে ছিন্নমূল পূর্ববঙ্গীয়দের সুখ-দুঃখ-বেদনা-যন্ত্রণা উপলব্ধি করার জন্য ঘুরেছেন 'তবু বিহঙ্গ' উপন্যাসের প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য। গল্প-উপন্যাস ও বিবিধ রচনার সমগ্র সম্ভার প্রায় তিনশতাধিক । উল্টোরথ পত্রিকায় ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয় তার একটি বড়গল্প, যার নাম “চেনামুখ" । এ গল্পের আখ্যান ছিল উদ্বাত্তদের অসহনীয় জীবন সংগ্রাম। বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক এ গল্পের কাহিনী অবলম্বনে তৈরী করে একটি চলচ্চিত্র যার নাম “মেঘে ঢাকা তারা”। এ চলচ্চিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং শক্তিপদ রাজগুরুকে জনসাধারণ্যে পরিচিত করে তোলে। ঋত্বিক ঘটকের প্রশিক্ষণে এ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছিলেন শক্তিপদ নিজেই।

তার নয়া বসত” গল্পের কাহিনী অবলম্বনে থেকে শক্তি সামন্ত নির্মাণ তৈরি করেন “অমানুষ” ছবিটি যা ১৯৭৫ সালে মুক্তি লাভ করে এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৮১-তে শক্তি সামান্ত তার আরেকটি গল্প নিয়ে দ্বিতীয় একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যার নাম ছিল “অমানুষ”। বিখ্যাত হয়ে আছে উত্তম কুমারের অভিনয়ে। হিন্দিতে হয়েছে 'বরসাত কি এক রাত'। একই সঙ্গে ছবিটির বাংলা সংস্করণ বের হয় এবং তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।[৩] অন্যায় অবিচার শক্তিপদ রাজগুরুর উপন্যাস নিয়ে তৈরি আরেকটি চলচ্চিত্র।

ছোটদের জন্য তিনি অনেক উপন্যাস লিখেছেন। এ সবের কেন্দ্রীয় নায়ক “পটলা” বেশ খ্যাতি লাভ করেছিল।
রচনা কর্ম :

মেঘে ঢাকা তারা মনি বেগম অন্তরে অন্তরে জীবন কাহিনী অনুসন্ধান অমানুষ জনপদ অধিগ্রহণ স্বপ্নের শেষ নেই আজ-কাল-পরশূ মাশুল স্মৃতি টুকু থাক অচিন পাখি ভাঙাগড়ার পালা দিনের প্রথম আলো শেষ প্রহর গোঁসাইগঞ্জের পাঁচালী
নিঃসঙ্গ সৈনিক পরিক্রমা অনিকেত দূরের মানুষ
নবজন্ম গ্রামে গ্রামান্তরে দিন অবসান অধিকার
বাঘা বায়েন পটলা সমগ্র পথের বাউল প্রভৃতি।

       "মেঘে ঢাকা তারা" তাঁর জনপ্রিয়তম গ্রন্থ। দীর্ঘজীবি এই সাহিত্যিক তিন শতাধিক গ্রন্থের লেখক। তাঁর লেখালেখির সূচনা ১৯৪০ দশকের গোড়ার দিকে। ১৯৪২-এ দেশ পত্রিকায় প্রথম গল্প “আবর্তন” লিখে তিনি সকলের নজর কাড়েন। ১৯৪৫-এ প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস দিনগুলি মোর।বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। সারা জীবনে ১০০টির বেশি উপন্যাস লিখেছেন এই সাহিত্যিক। ১৯৪৫ সালে দেশভাগের প্রেক্ষাপটে উদ্বাস্তু জীবনের উপর ভিত্তি করে লেখা প্রথম উপন্যাস 'দিনগুলি মোর' প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাঠকমহলে জনপ্রিয়তা লাভ করেন শক্তিপদবাবু।
তাঁর একাধিক উপন্যাস ও গল্প অবলম্বন করে বেশ কিছু বাংলা এবং হিন্দি উল্লেখযোগ্য ছবি তৈরি হয়েছে। এমনকি মঞ্চ ও টেলিভিশনেও তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে তাঁর রচনা অবলম্বনে তৈরি নাটক ও টেলি সিরিয়াল। তিনি নিজেও চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে বিশেষ সমাদৃত হয়েছেন। এর মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য 'মেঘে ঢাকা তারা', 'মণি বেগম', 'অন্তরে অন্তরে', 'জীবন কাহিনি', 'অনুসন্ধান', 'অমানুষ', 'বাঘিনী' ও 'কুয়াশা যখন' উল্টোরথ পত্রিকায় ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর একটি বড়গল্প, যার নাম “চেনামুখ । এ গল্পের আখ্যান ছিল উদ্বাত্তদের অসহনীয় জীবন সংগ্রাম। বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক এ গল্পের কাহিনী অবলম্বনে তৈরী করে একটি চলচ্চিত্র যার নাম “মেঘে ঢাকা তারা”। এ চলচ্চিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং শক্তিপদ রাজগুরুকে জনসাধারণ্যে পরিচিত করে তোলে। ঋত্বিক ঘটকের প্রশিক্ষণে এ চলচ্চিতের চিত্রনাট্য লিখেছিলেন শক্তিপদ নিজেই। তাঁর নয়া বসত” গল্পের কাহিনী অবলম্বনে থেকে শক্তি সামন্ত নির্মাণ তৈরি করেন “অমানুষ” ছবিটি যা ১৯৭৫ সালে মুক্তি লাভ করে এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৮১-তে শক্তি সামান্ত তাঁর আরেকটি গল্প নিয়ে দ্বিতীয় একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যার নাম ছিল “অমানুষ”। এ ছবিটির হিন্দি সংস্করণের নাম রাখা হয় “বারসাত কি এক রাত” এবং তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। অন্যায় অবিচার শক্তিপদ রাজগুরুর উপন্যাস নিয়ে তৈরী আরেকটি চলচ্চিত্র। ছোটদের জন্য তিনি অনেক উপন্যাস লিখেছেন। এ সবের কেন্দ্রীয় নায়ক “পটলা” বেশ খ্যাতি লাভ করেছিল।
  তিনি নিজের রচিত উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছেন। মৌলিক নাটক কখনো লেখেননি। তাঁর রচিত নাটক 
 মেঘে ঢাকা তারা , মনি বেগম,  জীবন কাহিনী , প্রজাপতি,  কুমারী মন , প্যালারাম নিরুদ্দেশ প্রভৃতি বিশেষ সাড়া ফেলেছিল।  বিশেষ করে কিশোর নাটক ও মনি বেগম ছাড়া সবগুলি শতমিতা নাট্যগোষ্ঠী দীনের রায়ের নির্দেশনা ও প্রযোজনায় মঞ্চ সফল নাটক হয়ে উঠেছিল।

মৃত্যু -১২ জুন ২০১৪ 
-----------------------------------
কৃষ্ণ ধর
    
"একরাশ লোকের ভিড়ে গন্ধ শুঁকে শুঁকে পথ চলছি
মানুষের বাড়ি ফেরার গন্ধ আমি বিকেল হলেই টের পাই
তখন নদীর জল করুন হয়
তখন স্টিমারের ভো বাজে 
...................................
আমি মানুষের জন্মের কান্না শুনতে শুনতে
এই রক্তগোধূলিতে নদী পার হ‌ই একা একা।"
      
         স্বাধীনতা-উত্তর বামপন্থী ধারায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল কবিদের মধ্যে অন্যতম কৃষ্ণ ধর। যার সর্বাধিক পরিচিতি কাব্য নাটক রচনায় তিনি পেশায় সাংবাদিক হলেও তার অন্তর্নিহিত কবি মন্টি বারেবারে কবিতার যাপন চিত্রে মৌলিকতার চিহ্ন এঁকে গেছে শিল্পিত সুষমা নিয়ে। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "অঙ্গীকার "(১৯৪৮) প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি পাঠকমহলে পরিচিতি লাভ করেন।
১৯২৮ সালে ১ লা ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাংলার বৃহত্তম জেলা ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ মহকুমার কমলপুর গ্রামে কৃষ্ণ ধরের জন্ম। বাবার নাম উপেন্দ্রচন্দ্র ধর ও মায়ের নাম চিন্ময়ী দেবী। বাজিতপুর এইচ ই হাই স্কুল থেকে ১৯৪৩ সালে তিনি মেট্রিক পাশ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফেনী কলেজ থেকে ১৯৪৫ সালে আই এ পাশ করে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে এম এ পড়েন। এম এ পড়তে পড়তেই ১৯৪৮ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অঙ্গীকার’ প্রকাশিত হয়। তখনকার বিখ্যাত ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকায় এই কাব্যগ্রন্থের সমালোচনা করেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। ১৯৪৯ সালে কবি এম এ পাশ করেন।

তাঁর কর্মজীবনের শুরু কলকাতা দেশবন্ধু গার্লস কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে। অল্পদিন সেখানে পড়ানোর পরে তিনি ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি ‘যুগান্তর’-এর সম্পাদক হন। বিশিষ্ট সাংবাদিক কৃষ্ণ ধর বিভিন্ন সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, সুরেন্দ্রনাথ কলেজ ও ভারতীয় বিদ্যা ভবনের সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত তিনি ‘বসুমতী’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

বিভিন্ন সময়ে তিনি সাম্মানিক পদে থেকে বহুবিধ দায়িত্ব পালন করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির প্রথম কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাস মিডিয়া সেন্টারের সভাপতি। ছিলেন কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের রিনেমিং কমিটির সদস্য। এছাড়াও তিনি রবীন্দ্র সদনের উপাদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন।

কবি কৃষ্ণ ধর গত শতাব্দীর পাঁচের ও ছয়ের দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবিদের একজন। ওই সময়কালের মধ্যে তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি হল ‘প্রথম ধরেছে কলি’ (১৯৫৫), ‘এ জন্মের নায়ক’ (১৯৬২), ‘এক রাত্রির জন্য’ (১৯৬০), ‘আমার হাতে রক্ত’ (১৯৬৭), ‘কালের নিসর্গ দৃশ্য’ (১৯৬৮) ‘দুঃসময় কবিতার লেখকের কাছে’ (১৯৭০) প্রভৃতি। পরবর্তী কালে প্রকাশিত তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে আছে ‘কালের রাখাল তুমি ভিয়েতনাম’ (১৯৭২), ‘যে যেখানে আছো’ (১৯৭৬), ‘শব্দহীন শোভাযাত্রা’ (১৯৮১), ‘হে সময় হে সন্ধিক্ষণ’ (১৯৯১), ‘নির্বাচিত কবিতা’ (১৯৯৬), ‘প্রিয় বাক্ কথা রাখো’ (২০০১), ‘গাঙচিলের স্বপ্ন ও সাতরঙা রামধনু’ (২০০৫), ‘হাঁটব থামব না’ (২০০৮), ‘জোনাকপরি হোমাপাখি’ (২০০৮), ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ (সংকলনগ্রন্থ) (২০১৬), ‘কবিতা সংগ্রহ’ (২০১৯) প্রভৃতি।

কবিতার পাশাপাশি তিনি অনেক কাব্যনাটক রচনা করেছেন। তাঁর কাব্যনাটকগুলি হল ‘নির্বাচিত কাব্যনাটক’ (১৯৮৪), ‘বিরুদ্ধ বাতাস’ (১৯৮৯), ‘কাব্যনাটক সংগ্রহ’ (২০০৯) (‘ভোরের মানুষেরা’, ‘সিন্ধুপারের পাখি’, ‘আমি নচিকেতা’, ‘ডানা’, ‘অভিমন্যু’, ‘জেগে আছো বর্ণমালা’, ‘খড়কুটো’, ‘বিরুদ্ধ বাতাস’, ‘বিকেলের বারান্দা পেরিয়ে’, ‘পায়ের শব্দ শোনা যায়’, ‘প্রচ্ছদে লেগেছে ধুলো’, ‘কেয়া ফুলের গন্ধ’, ‘পদধ্বনি কার’, ‘যাই উৎসের দিকে’, ‘একটাই জীবন’, ‘নদীতেই প্রতীক’, ‘গোলাপের যুদ্ধ’, ‘ঘরে ফেরার দিন’, ‘যদিও সন্ধ্যা, ‘পাহাড় ডেকেছিল’, ‘হে সময় হে সন্ধিক্ষণ’, ‘নিহত গোধূলি’, ‘বধ্যভূমিতে বাসর’, ‘করুণ রঙীন পথ’, ‘অন্ধকারে জুঁই ফুলের গন্ধ’, ‘বনজ্যোৎস্না’, ‘সমবেত করতালি’, ‘বাতিঘর’, ‘পদধ্বনি পলাতক’)। অপ্রকাশিত কাব্যনাটক ‘ফুলওয়ালি’ ১৯৬৮/৬৯ সালে গন্ধর্ব নাট্যগোষ্ঠীর দ্বারা মঞ্চস্থ হয়ে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।

তাঁর লেখা দুটো অত্যন্ত সুখপাঠ্য ভ্রমণকাহিনী হল ‘মস্কো থেকে ফেরা’ (১৯৭৪), এবং ‘অন্য দেশ অন্য নগর’ (১৯৮১)। তাঁর স্মৃতিচারণামূলক বই ‘আট দশক সাত কাহন'(২০১৬)। গত বছর ‘ঝাঁকিদর্শন’ (২০১৯) শিরোনামে তাঁর আর একটা স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দুটোই বেশ সুখপাঠ্য।

সাহিত্য নিয়ে লেখা তাঁর বইয়ের মধ্যে আছে ‘আধুনিক কবিতার উৎস'(১৯৬৯) ও ‘সাহিত্যের সাজঘর'(২০১৫)।
তাঁর ইতিহাসমূলক লেখার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ’ (১৯৭১), ‘ভারতের মুক্তি সংগ্রামে বাংলা’ (১৯৯৭) ও ‘কলকাতা তিন শতক’ (প্রথম সংস্করণ ১৯৮৯, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৯৪)।

তাঁর লেখা জীবনীগুলি হল ‘দেশনায়ক সুভাষ’ (প্রথম সংস্করণ ১৯৯৭, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০০৭), এবং ‘সংগ্রামী সম্পাদক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়’ (২০০৭)।

সাংবাদিকতা নিয়ে লিখেছেন ‘সাংবাদিকতার দর্শন : আদর্শ ও বিচ্যুতি’ (প্রথম সংস্করণ ২০০৩, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০১৫)।

এ ছাড়াও অন্যান্য ধরনের তাঁর দুটো উল্লেখযোগ্য বই আছে। সেগুলো হল ‘বই পড়ুয়ার দেখা মানুষ’ (২০১৪) ও ‘পুরানো আখরগুলি’ (২০১৩)।

স্বনামে লেখার পাশাপাশি তিনি মল্লিনাথ, বিদুর ও অন্যদর্শী ছদ্মনামেও লিখেছেন।

সারাজীবনে তিনি অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুধা বসু পুরস্কার, পোয়েট্রি ইন্ডিয়া পুরস্কার, শিশির কুমার পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির নজরুল পুরস্কার, মুজফফর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার, অমৃত পুরস্কার, ত্রিবৃত্ত পুরস্কার, গৌরী ঘোষাল স্মৃতি পুরস্কার, সারঙ্গ সাহিত্য পত্রিকার সারঙ্গ অর্ঘ্য নিবেদন ও গ্রেট বেঙ্গল পুরস্কার।

তাঁর কবিতার ভাষা বড়ো মোলায়েম। ব্যক্তি জীবনের মতো কবিতাতেও তিনি মৃুদুভাষী। অনুচ্চ কণ্ঠে মৃদু পদক্ষেপে তাঁর কবিতা আমাদের অজান্তেই আমাদের নিয়ে চলে যায় তাঁর কবিতার নিজস্ব ভুবনে। কঠোর বাস্তবের লড়াই সংগ্রামের কথা বলার সময়েও কৃষ্ণদা বরাবর অনুত্তেজিত থেকেছেন। তাই তাঁর কবিতা পড়ে পাঠকেরাও অনুত্তেজিত চিত্তে সমকালে তাঁদের কৃত্যাকৃত্য নির্ধারণের দিশা খুঁজে পান। ‘হে সময় হে সন্ধিক্ষণ’ কাব্যগ্রন্থের নীচের কবিতাটি পড়লেই এটা বুঝতে পারা যাবে।
তাঁর কবিতায় শুধু প্রেম নয়,  উপাদান হিসেবে স্থান পেয়েছে দেশবিভাগ জনিত যন্ত্রণা মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্ববোধ।  মনুষ্যত্ববোধের প্রত্যয়, চীনের সংগ্রাম, সাম্রাজ্যবাদ, রাশিয়ায় স্ট্যালিনের সংস্কার প্রভৃতি। সমাজ সচেতন ও আঙ্গিক সচেতন তিনি যে ছিলেন তাঁর প্রমাণ কবিতায় আমরা প্রত্যক্ষ করি। অনুভব স্পন্দিত অভিনন্দিত উপলব্ধির স্বরূপ সন্ধানে মানুষের কথা বলেছেন, সারাজীবন ধরে ।তিনি মানুষের কবি মানুষের কান্নার প্রতি কান পেতে আছেন মানুষের জন্য একা একা পথ হেঁটেছেন মানুষের কাছে ,মানুষের সাথে ,মানুষ কে নিয়ে চলতে চেয়েছেন।

=================================




No comments: