∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
পূর্ণেন্দু পত্রী
=================================
Doinik Sabder Methopath
Vol -270. Dt -02.02.2021
২১ মাঘ,১৪২৭. মঙ্গলবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷××××××××÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
""নীল নদীতট থেকে সিন্ধু উপত্যকা,
সুমের,আক্কাড আর গাঢ় পীত হোয়াংহোর তীরে।
বারবার নানা শতাব্দীর আকাশ উঠেছে জ্বলে
ঝলসিত যাদের উষ্ঞীষে,
সেইসব সেনাদের চিনি, আমি চিনি।
–সূর্যসেনা তারা;
রাত্রির সাম্রাজ্যে আজও সন্তর্পণে ফিরিছে ফেরারি।
মাঝরাতে একদিন বিছানায় জেগে উঠে বসে
সচকিত হয়ে তারা শুনেছে কোথায় শিঙা বাজে।
–””সাজো, সাজো”” ডাকে কোন অলঙঘ্য আদেশ।
জনে জনে যুগে যুগে বার হয়ে এসেছে উঠানে;
আগামী দিনের সূর্য দেখেছে আঁধারে
গুঁড়ো গুঁড়ো করে সারা আকাশে ছড়ানো।
সহসা জেনেছে তারা-
এইসব সূর্যকণা তিল তিল করে বয়ে নিয়ে যেতে হবে কালের প্রান্তরে, রাত্রির শাসনভাঙা ভয়ংকর চক্রান্তের গুপ্তচর রূপে।
একএকটি সূর্যকণা তুলে নিয়ে বুকে
দুরাশার তুরঙ্গে সওয়ার,
দুর্গম দুরন্তমরু পার হবে বলে
তারা সব হয়েছে বাহির।
সুদূর সীমান্ত হায় তারপর সরে গেছে প্রতি পায়ে পায়ে।
গাঢ় কুজ্ঝটিকা এসে মুছে দিয়ে গেছে সব পথ।
ভয়ের তুফানতোলা রাত্রির ভ্রূকুটি হেনেছে হিংসার বজ্র,
দিগ্বিদিক ভুলানো আঁধারে
কে কোথায় গিয়েছে হারিয়ে,
রাত্রির সাম্রাজ্য তাই এখনো অটুট।
ছড়ানো সূর্যের কণা জড়ো করে নিয়ে
যারা জ্বালাবে নুতন দিন,
তারা আজও পলাতক, দলছাড়া, ঘোরেফেরে দেশে আর কালে।
তবু সূর্যকণা বুঝি হারাবার নয়,
কত ম্লান শতাব্দীর প্রহর ধাঁধিয়ে
থেকে থেকে ঝলসিত
কোথা কোন লুকানো কৃপাণে,
ফেরারি সেনার।
এখনো ফেরারি কেন?
ফেরো সব পলাতক সেনা,
সাতসাগরের পারে ফৌজদার হেঁকে যায় শোনো।
— আনো সব সূর্যকণা রাত্রিমোছা চক্রান্তের প্রকাশ্য প্রান্তরে।
এবার অজ্ঞাতবাস শেষ হল ফেরারি ফৌজের।।"
তেমনই এক নিদারুণ অক্লাত শিল্পী সাহিত্য
স্রষ্টার জন্মদিন আজ।
তিনি পূর্ণেন্দু পত্রী। জন্ম ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩১।
পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার নাকোলে। পিতা পুলিনবিহারী পত্রী, মা নির্মলা দেবী। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পারিবারিক কলহের কারণে পৈতৃক ভিটা ছেড়ে চলে আসেন কলকাতায়। ১৯৪৯ সালে ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে ভর্তি হন বাণিজ্যিক শিল্পকলা বা কমার্শিয়াল আর্টের ছাত্র হিসেবে। যদিও নানা কারণে এই পাঠক্রম শেষ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ছেলেবেলায় বাগনানের বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেতা অমল গাঙ্গুলির সংস্পর্শে এসে কমিউনিস্ট পার্টির নানান সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কলকাতায় অভিভাবক কাকা নিকুঞ্জবিহারী পত্রীর চলচ্চিত্র পত্রিকা 'চিত্রিতা' ও সাহিত্যপত্র দীপালি-তে তার আঁকা ও লেখার সূচনা হয়। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হয়ে পড়লে রাজনীতি ও সাহিত্যচর্চা উভয়েই একসঙ্গে চালাতে থাকেন।
১৯৫১ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একমুঠো রোদ প্রকাশিত হয়। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস দাঁড়ের ময়না মানিক পুরস্কার লাভ করে। তার অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল শব্দের ঠিকানা (১৯৭৫), সূর্যোদয় তুমি এলে (১৯৭৬) আমাদের তুমুল হৈ-হল্লা (১৯৮০) ও গভীর রাতের ট্রাঙ্ককল (১৯৮১), আমিই কচ আমিই দেবযানী ইত্যাদি। সাহিত্য গবেষক শিশির কুমার দাশ তার কাব্য সম্পর্কে মন্তব্য করেন, ছন্দের কৌশল, প্রতিমা গঠনের স্পষ্টতা এবং কথনভঙ্গির ঘরোয়া চাল তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। পূর্ণেন্দু পত্রীর অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভোমরাগুড়ি, মালতীমঙ্গল ইত্যাদি। রূপসী বাংলার দুই কবি তার একটি বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ। পূর্ণেন্দু পত্রী কলকাতা সম্বন্ধে প্রায় এক ডজন গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহর কলকাতার আদি পর্ব, বঙ্গভঙ্গ, কি করে কলকাতা হল, ছড়ায় মোড়া কলকাতা, কলকাতার রাজকাহিনী, এক যে ছিল কলকাতা ইত্যাদি। জীবনের শেষপর্বে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে এক বিশাল গবেষণার কাজ শুরু করেছিলেন। মৃত্যুর পূর্বে ১৯৯৬ সালে তার প্রথম খণ্ড বঙ্কিম যুগ প্রকাশিত হয়। শিশুসাহিত্যেও তিনি ছিলেন এক জনপ্রিয় লেখক। ছোটোদের জন্য লিখেছেন আলটুং ফালটুং, ম্যাকের বাবা খ্যাঁক, ইল্লীবিল্লী, দুষ্টুর রামায়ণ, জুনিয়র ব্যোমকেশ, জাম্বো দি জিনিয়াস, প্রভৃতি হাসির বই। আমার ছেলেবেলা নামে তার একটি স্মৃতিকথাও রয়েছে। সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে বিদ্যাসাগর পুরস্কারে ভূষিত করেন।
১৯৬৫ সালে প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্প অবলম্বনে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র স্বপ্ন নিয়ে মুক্তি পায়। এর পর রবীন্দ্রনাথের কাহিনি অবলম্বনে স্ত্রীর পত্র ও মালঞ্চ সহ পাঁচটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন তিনি। এছাড়াও নির্মাণ করেন সাতটি তথ্যচিত্র। স্ত্রীর পত্র চলচ্চিত্রটির জন্য তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চিত্রনির্মাতা ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে সমরেশ বসুর কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত তাঁর ছেঁড়া তমসুক চলচ্চিত্রটিও একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছিল।
১৯৯৬ সালে তার প্রথম খণ্ড বঙ্কিম যুগ প্রকাশিত হয়। শিশুসাহিত্যেও তিনি ছিলেন এক জনপ্রিয় লেখক। ছোটোদের জন্য লিখেছেন আলটুং ফালটুং, ম্যাকের বাবা খ্যাঁক, ইল্লীবিল্লী, দুষ্টুর রামায়ণ, জুনিয়র ব্যোমকেশ, জাম্বো দি জিনিয়াস, প্রভৃতি হাসির বই। আমার ছেলেবেলা নামে তাঁর একটি স্মৃতিকথাও রয়েছে। সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে বিদ্যাসাগর পুরস্কারে ভূষিত করেন।
১৯৯৭ সালের ১৯ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment