¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥¥
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
স্যার আইজ্যাক নিউটন
+++++++×××××××--------÷÷÷÷÷÷÷÷++++++
Doinik Sabder Methopath
Vol -241 . Dt -04.01.2020
১৯ পৌষ,১৪২৭. সোমবার
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
আইজাক নিউটন আধুনিক বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা জানুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান লিংকনশায়ারের উল্সথর্প ম্যানরে। ম্যানর অঞ্চলটি উল্সথর্প-বাই-কোল্স্টারওয়ার্থের মধ্যে অবস্থিত। নিউটনের যখন জন্ম হয় তখনও ইংল্যান্ডে সমসাময়িককালের আধুনিকতম প্যাপাল বর্ষপঞ্জির ব্যবহার শুরু হয়নি। তাই তার জন্মের তারিখ নিবন্ধন করা হয়েছিল ১৬৪২ সনের ক্রিস্মাস দিবস হিসেবে। তিনি তার পিতা আইজাকের মৃত্যুর তিন মাস পর জন্ম নেন। তার বাবা গ্রামের একজন সাধারণ কৃষক ছিলেন। জন্মের সময় নিউটনের আকার-আকৃতি ছিল খুবই ছোট। তার মা হানাহ্ এইসকফ প্রায়ই বলতেন ছোট্টবেলার সেই নিউটনকে অনায়াসে একটি কোয়ার্ট মগের ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়া যেত। তিন বছর বয়সে তার মা আরেকটি বিয়ে করেন এবং নতুন স্বামী রেভারেন্ড বার্নাবাউস স্মিথের সাথে বসবাস করতে থাকেন। এসময় নিউটন তার মায়ের সাথে ছিলেন না। নানী মার্জারি এইসকফের তত্ত্বাবধানে তার দিন কাটতে থাকে। নিউটন তার সৎ বাবাকে পছন্দ করতে পারেন নি। তার মা এই লোককে বিয়ে করেছে বলে মায়ের প্রতি তার কিছুটা ক্ষোভও ছিল। নিউটন তার ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত করা পাপ কাজগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছিলেন। সেই তালিকা থেকে মায়ের প্রতি তার এই ক্ষোভের প্রমাণ পাওয়া যায়। তালিকায় লিখা ছিল : "আমার বাবা ও মা-কে এই বলে ভয় দেখানো যে আমি তাদের থাকবার ঘর জ্বালিয়ে দেবো"। নিউটনের মায়ের দ্বিতীয় বিবাহের ফলে তিন সন্তান জন্ম নেয়।
নিউটনের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় বাড়ির পাশের এক ক্ষুদ্রায়তন স্কুলে। ১২ বছর বয়সে তাকে গ্রান্থামের ব্যাকরণ স্কুলে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে তিনি এক ঔষধ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতার বাড়িতে থাকতেন। এই স্কুলে নিউটন ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্ব্বি যা থেকে তার মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। প্রথমদিকে তার সাথে কেউ না পারলেও এক সময় আরেকটি ছেলে তার সাথে ভালো প্রতিযোগিতা করতে সমর্থ হয়েছিল। স্কুল জীবনের প্রথম থেকেই নিউটনের সবচেয়ে বেশি ঝোঁক ছিল বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র তৈরির প্রতি। সেই বয়সেই তিনি বায়ুকল, জল-ঘড়ি, ঘুড়ি এবং সান-ডায়াল তৈরি করেছিলেন। এছাড়া তার গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ ছিল একটি চার চাকার বাহন যা আরোহী নিজেই টেনে চালাতে পারতেন। ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে নিউটনের সৎ বাবা মারা যান। এরপর তার মা উল্সথর্পে ফিরে এসে তাকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। উদ্দেশ্য ছিল বাড়িতে ক্ষেত-খামারের কাজ শিখিয়ে ভবিষ্যতের বন্দোবস্ত করে দেওয়া। কিন্তু সত্বরই তিনি বুঝতে পারেন যে, খামারের কাজের দিকে নিউটনের কোনো ঝোঁক নেই। নিউটনের কাকা ছিলেন বার্টন কগলিসের রেক্টর। এই চাচার উপদেশ শুনেই পরিবার থেকে তাকে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়।
নিউটন ট্রিনিটি কলেজ থেকে ১৬৬১ খ্রিস্টাব্দে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি তার পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য কলেজের বিভিন্ন স্থানে ভৃত্যের কাজ করতেন। ছাত্র হিসেবে বড় কোন কিছু তিনি করেছেন বলে ট্রিনিটি কলেজের কোন দলিলপত্র লেখা নেই। তবে জানা যায় তিনি মূলত গণিত ও বলবিজ্ঞান বিষয়ে অধিক পড়াশোনা করেছিলেন। ট্রিনিটি কলেজে প্রথমে তিনি কেপলারের আলোকবিজ্ঞান বিষয়ক সূত্রের উপর অধ্যয়ন করেন। এরপর অবশ্য তিনি ইউক্লিডের জ্যামিতির প্রতি মনোনিবেশ করেন। কারণ মেলা থেকে কেনা জ্যোতিষ শাস্ত্রের একটি বইয়ে উল্লেখিত বেশ কিছু রেখাচিত্র তিনি বুঝতে পারছিলেন না। এগুলো বোঝার জন্য ইউক্লিডের জ্যামিতি জানা থাকাটা আবশ্যিক ছিল। তা সত্ত্বেও নিউটন বইটির কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এটি অকিঞ্চিৎকর বই হিসেবে সরিয়ে রাখেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার শিক্ষক আইজাক ব্যারো তাকে বইটি আবার পড়তে বলেন। বইটি লেখা হয়েছিল দেকার্তের জ্যামিতিক গবেষণা ও কর্মের উপর।
স্নাতক শিক্ষা গ্রহণকালে নিউটন একটি ছোট বইয়ের তাক বা এ ধরনের কোন স্থানে তার সব বই সাজিয়ে রাখতেন। সেই তাক থেকে নিউটনের সে সময়ে লেখা বেশ কিছু নিবন্ধ পাওয়া গেছে। এই লেখাগুলোর বিষয়ের মধ্যে রয়েছে: কৌণিক বিভাজন, বক্রসমূহের বর্গকরণ, সঙ্গীতের অনন্য সুর সম্বন্ধে কিছু গাণিতিক হিসাব, ভিয়েটা এবং ভ্যান স্কুটেনের জ্যামিতিক সমস্যা, ওয়ালিস রচিত এরিথমেটিক অফ ইনফিনিটিস বইয়ের উপর কিছু মন্তব্য, গোলীয় আলোক গ্লাসের ঘর্ষণের ফলাফল, লেন্সের ত্রুটি এবং সকল ধরনের মূল বের করার সূত্র। ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রি লাভের প্রাক্কালেই নিউটন তার বিখ্যাত দ্বিপদী উপপাদ্য বিষয়ক সূত্র প্রমাণ করেন এবং একইসাথে ফ্লাক্সিয়নের পদ্ধতি (method of fluxion) আবিষ্কার বিষয়ক প্রথম তত্ত্ব প্রদান করেন। ট্রিনিটি কলেজের এই দিনগুলো তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে কেমব্রিজ এবং লন্ডনে প্লেগ রোগ মহামারী আকার ধারণ করে। এর ফলে কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। নিউটন লিংকনশায়ারে তাদের খামর বাড়িতে ফিরে যান।
উল্সথর্প ফিরে এসেও নিউটন থেমে থাকেননি। সেখানেমূলত রসায়ন এবং আলোকবিজ্ঞান বিষয়ের উপর বিভিন্ন পরীক্ষণ চালিয়ে যেতে থাকেন এবং একইসাথে চলতে থাকে তার গাণিতিক অনূধ্যানের প্রকল্পসমূহ। নিউটন তার মহাকর্ষ তত্ত্ব আবিষ্কার বিষয়ক দিনপঞ্জির সূচনা চিহ্নিত করেছিলেন এই ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দকে, যে বছর তাকে ট্রিনিটি কলেজ ছেড়ে যেতে হয়েছিল। এ সম্বন্ধে তিনি বলেছেন:
“ | একই সালে আমি চাঁদের কক্ষপথে বিস্তৃত অভিকর্ষ নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করি,... চাঁদকে তার নিজ কক্ষপথে ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় বল এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠতলে বিরাজমান অভিকর্ষ বলের মধ্যে তুলনা করি এবং এই দুটি বলের মান প্রায় সমান বলে চিহ্নিত করতে সক্ষম হই। | ” |
একই সময়ে তিনি আলোকবিজ্ঞান বিষয়ে তার একটি মৌলিক পরীক্ষণের কাজ সম্পন্ন করেন। এই পরীক্ষণের মাধ্যমে তিনি সাদা আলোর গাঠনিক অংশসমূহ আবিষ্কারে সক্ষম হন। আলোকবিজ্ঞান বিষয়ে তার প্রাথমিক এই কাজ সম্বন্ধে নিউটন নিজেই মন্তব্য করেছেন:
“ | এই সব কিছু আমি করেছিলাম মাত্র দুই বছর তথা ১৬৬৫ এবং ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে, কারণ আমার জীবনের যেকোন সময়ের তুলনায় ওই সময়ে আমি বিশেষ উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে ছিলাম যে পর্যায়ে উদ্ভাবন এবং মনকেন্দ্রিক গণিত ও দর্শন চিন্তার বিকাশ ঘটে | |
১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে নিউটন মহাকর্ষ সম্বন্ধে তার গবেষণাকর্মগুলো প্রকাশের তেমন কোন তাগিদ অনুভব করেননি। এর মধ্যে হুক,
এডমান্ড হ্যালি এবং স্যার
ক্রিস্টোফার রেন মহাকর্ষ সম্বন্ধে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু তত্ত্ব বা তথ্য আবিষ্কার করেছিলেন যদিও তারা কেউই গ্রহের কক্ষপথ সম্বন্ধে কোন সুনির্দিষ্ট তত্ত্ব প্রদানে সক্ষম হননি। ঐ বছর বিজ্ঞানী এডমুন্ড হ্যালি এ বিষয়টি সম্বন্ধে নিউটনের সাথে কথা বলেন এবং এই দেখে অবাক হন যে নিউটন বিষয়টি এতোদিনে সমাধান করে ফেলেছেন। নিউটন হ্যালির কাছে চারটি উপপাদ্য এবং সাতটি সমস্যা প্রস্তাব করেন যেগুলো তার গবেষণা কাজের মূল অংশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। ১৬৮৫ এবং ১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় সতের-আঠার মাস জুড়ে তার লেখা সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ তথা
ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা রচনা করেন যার ইংরেজি নাম দেয়া হয় Mathematical Principles of Natural Philosophy। এই গ্রন্থের তিনটি অংশ আছে। নিউটন তৃতীয় অংশটিকে সংক্ষিপ্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হ্যালি তাকে তৃতীয় অংশটি বিস্তারিত লেখার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। রয়্যাল সোসাইটি গ্রন্থটি প্রকাশের অর্থ সংকুলানে অপারগতা প্রকাশ করে। এবারও হ্যালিই এগিয়ে আসেন। তিনি বইটি প্রকাশের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করেন এবং এর ফলে ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় এই বইটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর সমগ্র ইউরোপ জুড়ে এটি বিপুল সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তখনকার সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাত
ক্রিশ্চিয়ান হাইগেন্স ১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দে নিউটনের সাথে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করার জন্য ইংল্যান্ডে যান।
জনৈকা মিস স্টোরির সাথে নিউটনের বাগদান হয়, কিন্তু পড়াশোনা ও গবেষণায় খুব বেশি নিমগ্ন থাকার কারণে নিউটন বিয়ে করেন নি।
জীবনের শেষ ৩০ বছর নিউটন গাণিতিক মূলনীতিসমূহের উপর খুব কমই মৌলিক অবদান রাখতে পেরেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে তার উৎসাহ এবং দক্ষতার কোন অভাব তখনও ছিল না। ১৬৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি এক রাতে একটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে ফেলেন। এই সমস্যাটি বার্নোলি একটি প্রতিযোগিতায় প্রস্তাব করেছিলেন এবং এর সমাধানের সময় বরাদ্দ ছিল ৬ মাস। আবার ১৭১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাত্র কয়েক ঘণ্টায় একটি সমস্যার সমাধান করে ফেলেন। বিজ্ঞানী লাইবনিৎস এই সমস্যাটিকে ইংরেজ বিশেষজ্ঞদের জন্য রোমহর্ষক এবং দুঃসাধ্য বলে উল্লেখ করেছিলেন। এ সময় দুইটি বিষয়ে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। একটি হল তার কিছু জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার জ্যোতির্বিজ্ঞানী রয়েলের পর্যবেক্ষণের সাথে খাপ খায়নি। এ নিয়ে একটি বিতর্ক ছিল। অন্যটি হল ক্যালকুলাস আবিষ্কার নিয়ে লাইবনিৎসের সাথে বিতর্ক ও বিরোধ। তিনি প্রিন্সিপিয়া গ্রন্থটিকে পুনরায় সংশোধন করে ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দে এর নতুন সংস্করণ প্রকাশ করেন।১৭২৫ খ্রিস্টাব্দের পর নিউটনের স্বাস্থ্যের ব্যাপক অবনতি ঘটে। এর ফলে একজন ডেপুটি মিন্টে তার কাজ মওকুফ করার ব্যবস্থা করে দেন। ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি শেষবারের মত রয়েল সোসাইটির সভাপতি হিসেবে কার্য পরিচালনা করেন। ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দ থেকেই তিনি এই সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ই মার্চ ৮৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবি-তে সমাধিস্থ করা হয়।
বর্তমানকালের গণিতজ্ঞ ও ইতিহাসবিদদের মতে নিউটন এবং লাইবনিৎস প্রায় একই সাথে গণিতের একটি নতুন শাখার উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন যা ক্যালকুলাস নামে পরিচিতি লাভ করে। এটি গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি বিপ্লবের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছিল। অবশ্য ক্যালকুলাসের প্রকৃত উদ্ভাবক কে তা নিয়ে অনেক সংশয় ও বিরোধ রয়েছে। বিজ্ঞানী স্টিভেন হকিং তার কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (A Brief History of Time) গ্রন্থে নিউটনকে ধুরন্ধর ও মিথ্যাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে একটি প্রবল বিতর্কের জন্ম হয়েছিল যা নিউটন বনাম লাইবনিৎস ক্যালকুলাস বিতর্ক নামে বহুল পরিচিত। এ নিয়ে সমালোচনা অনুচ্ছেদে বিস্তারিত লেখা হয়েছে।
নিউটন দ্বিপদী উপপাদ্যের একটি সাধারণ রুপ উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত। এই রুপটি যেকোন ঘাতের জন্য প্রযোজ্য হয়। এছাড়াও নিউটন আবিষ্কার করেন: নিউটনের আইডেনটিটি, নিউটনের পদ্ধতি, শ্রেণীবিন্যাসকৃত ঘনতলীয় বক্র (দ্বিচলবিশিষ্ট তিন মাত্রার বহুপদী)। তিনি সসীম পার্থক্যের তত্ত্বের উপর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, প্রথম ব্যক্তি হিসেবে fractional indice ব্যবহার করেন এবং দিওফান্তিন সমীকরণ প্রমাণ করার জন্য স্থানাংক জ্যামিতি প্রয়োগ করেন। নিউটন লগারিদমের মাধ্যমে হারমোনিক ধারার আংশিক সমষ্টির আনুমানিক মান নির্ণয় করেন যা অয়লারের যোগফল সূত্রের পূর্বসূরী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। তিনিই প্রথম আত্মবিশ্বাসের সাথে পাওয়ার সিরিজ ব্যবহার করেন এবং একে রিভার্ট করেন। এছাড়া পাই-এর জন্য একটি নতুন সূত্র আবিষ্কার করেন।
তার এ সকল গবেষণা কর্ম থেকে তিনি মন্তব্য করেন, যে কোন প্রতিসরণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র আলোর বিভিন্ন বর্ণে বিশ্লিষ্ট হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগবে। এ সমস্যাকে অতিক্রম করার জন্য তিনি একটি প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্র নির্মাণ করেন যা বর্তমানে নিউটনীয় দূরবীক্ষণ যন্ত্র নামে পরিচিত। নিউটনের বলয় ব্যবহার করে নিজের দূরবীনে ব্যবহৃত দর্পণে শান দেয়ার মাধ্যমে তিনি তার দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির আলোকীয় কর্মক্ষমতার মান সম্বন্ধে ধারণা লাভে সক্ষম হয়েছিলেন। এভাবে তিনি প্রতিসরণ দূরবীনের চেয়ে কর্মক্ষম ও উঁচু দরের দূরবীন তৈরি করেন যাতে দর্পণের ব্যাস ছিল আগের চেয়ে বেশী। ১৬৭১ খ্রিস্টাব্দে রয়্যাল সোসাইটি তার প্রতিসরণ দূরবীনের একটি প্রদর্শনী দেয়ার আহ্বান জানায়। এদের উৎসাহেই তিনি তার আলোক বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা "অন কালার" নামক একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন যা পরবর্তীতে তার বিখ্যাত গ্রন্থ অপটিক্স-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। রবার্ট হুক নিউটনের কিছু চিন্তাধারা সমালোচনা করায় নিউটন সকল ধরনের গণ বিতর্ক থেকে ইস্তফা দেন। হুকের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তারা পরস্পরের শত্রু ছিলেন।
আলো কণা দিয়ে তৈরি এবং ঘনতর মাধ্যমে ত্বরণ সহকারে চলার সময় আলোর প্রতিসরণ ঘটে, এ ধারণা নিউটন প্রথমটায় বিশ্বাস করতেন না। অবশ্য পরে তিনি আলোকে তরঙ্গ এবং কণা উভয়টি দ্বারা গঠিত হিসেবে কল্পনা করে আলোর অপবর্তন ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে পদার্থবিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, আলোকে একেবারে বিশুদ্ধ তরঙ্গ হিসেবে ধরে না নিলে এর অপবর্তণ কোনভাবেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। বর্তমানকালের কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান, ফোটন এবং তরঙ্গ-কলা দ্বিত্ব নিউটন আলোকে যেভাবে বুঝেছিলেন তারই এক ক্ষুদ্র সাদৃশ্যমাত্র।
১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ই জুলাই তিনি তার ফিলসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা নামক বিখ্যাত গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। সাহস এবং অর্থের যোগান দেয়ার আধ্যমে এই বইয়ের প্রকাশনায় যিনি সবচেয়ে বেশী অবদান রেখেছেন তিনি হলেন বিজ্ঞানী এডমন্ড হ্যালি। এই বইয়েই নিউটন গতির তিনটি মৌলিক সূত্রের উল্লেখ করেন। তিনি বস্তুসমূহের মধ্যবর্তী বলকে প্রকাশ করার জন্য লাতিন ভাষায় গ্রাভিটাস শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন; এই শব্দটিই পরবর্তীকালে মহাকর্ষ বল নামে পরিচিত হয়। এটি প্রকৃতির অন্যতম একটি মৌলিক বল। নিউটন এ বিষয়ের উপর একটি তত্ত্বের অবতারণা করেন যা নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র নামে পরিচিত। একই গ্রন্থে নিউটন বাতাসে শব্দের বেগের প্রথম বিশ্লেষণমূলক নির্ণয় প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন। বয়েলের সূত্রের উপর ভিত্তি করে তিনি এই ব্যাখ্যা প্রদান করেছিলেন। প্রিন্সিপিয়া গ্রন্থের মাধ্যমে নিউটন আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। তার একটি প্রশংসাকারী মহল সৃষ্টি হয় যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন সুইজারল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী গণিতবিদ নিকোলাস ফাটিও দ্য ডুইলিয়ার। এই গণিতবিদের সাথে নিউটন বিশেষ বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন যা ১৬৯৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিরাজমান ছিল। এই বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়ার পর নিউটন মুষড়ে পড়েছিলেন।
নিউটন ঈশ্বরকে এমন একজন মহান স্রষ্টা হিসেবে দেখেছেন, সমগ্র সৃষ্টিজগতের এই বিশালতার মুখেও যার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু অদূরদর্শী ধর্মতাত্ত্বিক গবেষণার শেষে এখন ঈশ্বরকে বিশ্ব পরিচালনার ক্রিয়াকর্ম থেকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে; অন্তত নিউটনের নীতি বিষয়ে বলতে গিয়ে লাইবনিজ এ বিষয়টির দিকেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কারণ ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্ব পরিচালনায় মধ্যস্থতার ধারণা মেনে নিলে ঈশ্বরের সৃষ্টির মধ্যেই একটি ত্রুটির ধারণা প্রকট হয়ে উঠে; একজন মহাপরাক্রমশালী ও সব দিক দিয়ে সঠিক স্রষ্টার পক্ষে যা সৃষ্টি করা সম্ভব হতে পারেনা। এই কারণ দর্শানোর মাধ্যমে সব কিছু করা হলো, অথচ নিউটন নিজে কখনই এই কারণের দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি। লাইবনিজের ব্যাখ্যার মাধ্যমে নিজের সৃষ্ট জগৎ থেকে স্রষ্টার ধারণাকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলা হয়েছে। ঈশ্বরবিহীন এই মহাবিশ্বে তাই এখন কেবল মানুষের রাজত্ব। মানুষই এর সৃষ্টি ও পরিচালনা প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার দাবীদার এবং সে-ই জগৎের সব অনিষ্ট অপসারণের ক্ষমতার অধিকারী। অপরদিকে, ল্যাটিচুডিনারিয়ান এবং নিউটনীয় ধারণাকে আত্মস্থ করার মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে ধর্মের আরেকটি নতুন দল যারা মিলেনারিয়ান নামে পরিচিত। এরা যান্ত্রিক মহাবিশ্বের ধারণা বিশ্বাসী। কিন্তু এই বিশ্বাস নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েও মিলেনারিয়ানরা সেই প্রাচীন এনথুসিয়াজ্ম এবং রহস্যময়তার সম্মুখীন হয়েছেন যার মুলোৎপাটন করার জন্য এনলাইটেনমেন্টের যুগে অনেক প্রচেষ্টাই করা হয়েছে।
নিউটনের গতির তিনটি বিখ্যাত সূত্র হচ্ছে:
স্থির বস্তু আজীবন স্থির থাকতে চায় এবং গতিশীল বস্তু আজীবন সমগতিতে গতিশীল থাকতে চায় যতক্ষণ না তার উপর কোন বহিঃস্থ নেট শক্তি প্রয়োগ করা হয়। (এটি জড়তার সূত্র নামেও পরিচিত)
প্রযুক্ত বল বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হারের সমানুপাতিক। গাণিতিকভাবে একে এভাবে লিখা হয়:{\displaystyle {\vec {F}}={\frac {d{\vec {p}}}{dt}}\,=\,{\frac {d}{dt}}(m{\vec {v}})\,=\,{\vec {v}}\,{\frac {dm}{dt}}+m\,{\frac {d{\vec {v}}}{dt}}\,.}{\displaystyle {\vec {F}}={\frac {d{\vec {p}}}{dt}}\,=\,{\frac {d}{dt}}(m{\vec {v}})\,=\,{\vec {v}}\,{\frac {dm}{dt}}+m\,{\frac {d{\vec {v}}}{dt}}\,.}ভর ধ্রুবক ধরলে প্রথম টার্মটি চলে যায়। ত্বরণকে {\displaystyle {\vec {a}}\ =\ d{\vec {v}}/dt}{\displaystyle {\vec {a}}\ =\ d{\vec {v}}/dt} হিসবে চিহ্নিত করলে সেই বিথ্যাত সমীকরণটি পাওয়া যায়:{\displaystyle {\vec {F}}=m\,{\vec {a}}\,,}{\displaystyle {\vec {F}}=m\,{\vec {a}}\,,} যা থেকে আমরা জানতে পারি, "কোন বস্তুর ত্বরণ এর উপর প্রযুক্ত মোট বলের মানের সমানুপাতিক এবং এর ভরের ব্যস্তানুপাতিক।"
প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
নিউটনের আপেল
নিউটনের আপেল গাছটির একটি বিখ্যাত বংশধর। কেমব্রিজের বোটানিক্যাল গার্ডেনে এটি পাওয়া গেছে।
“ When Newton saw an apple fall, he found, in that slight startle from his contemplation, it's said, a mode of proving that the earth turn’d round in a most natural whirl, called gravitation; and this is the sole mortal who could grapple, since Adam, with a fall, or with an apple
গাছ থেকে একটি আপেলতে পড়তে দেখে নিউটন প্রথম সর্বজনীন মহাকর্ষ বলের সূত্র নিয়ে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন বলে একটি বিখ্যাত গল্প প্রচলিত রয়েছে। কার্টুনের মাধ্যমে আরও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে, আপেলটি আসলে নিউটনের মাথায় আঘাত করেছিল এবং এ কারণেই মহাকর্ষের বুদ্ধিটি তার মাথায় খেলে যায়। নিউটনের ভাইয়ের মেয়ের স্বামী এবং রয়েল মিন্টে তার সহকারী জন কন্ডুইট নিউটনের জীবনী লিখতে গিয়ে এই ঘটনাটির বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে:
১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে নিউটন কেমব্রিজ ছেড়ে লিংকনশায়ারে তার মা'র কাছে চলে আসেন। সেখানকার বাগানে বসে একদিন তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। এমন সময় তার মাথায় আসে অভিকর্ষ শক্তি (যা একটি আপেলকে গাছ থেকে মাটিতে নামিয়ে নিয়ে আসে) পৃথিবী থেকে কেবল একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারেনা। সাধারণত যেমনটা চিন্তা করা হয় এই শক্তি নিশ্চয়ই তার থেকে অনেক দূরত্ব পর্যন্ত তার শক্তি বজায় রাখে। নিজের মনে তিনি বলে যেতে থাকেন, এই বলটি কেনইবা চাঁদ পর্যন্ত প্রসারিত হবেনা। আর সেক্ষেত্রে এটি চাঁদের গতিকে প্রভাবান্বিত করে এবং সম্ভবত তাকে কক্ষপথে স্থান করে দেয়ে। এর উপর ভিত্তি করেই তিনি হিসাব করতে বসে যান যে, এই ধারণার ফলাফল কি হতে পারে।
প্রশ্ন এটি ছিলনা যে, অভিকর্ষ বল আদৌ আছে কি-না। বরং প্রশ্ন ছিল এই বলটি এতো দূরত্ব পর্যন্ত আপন প্রভাব প্রসারিত করতে পারে কি-না যাতে এমনকি চন্দ্রের উপরও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায়। নিউটন দেখান যে, এই বলটি যদি দূরত্বের বিপরীত বর্গীয় সূত্রানুসারে কমতে থাকে তাহলে চাঁদের কক্ষীয় পর্যায়ের যে মান পাওয়া যায় তা সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি ধারণা করেন এই একই বল অন্যান্য সকল কক্ষীয় গতির জন্য দায়ী। আর তাই এর নাম দেন "সর্বজনীন মহাকর্ষ"।
রচনাসমূহ
মেথড অব ফ্লাক্সনস (১৬৭১)
Of Natures Obvious Laws & Processes in Vegetation (১৬৭১ - ৭৫) আলকেমি বিষয়ে অপ্রকাশিত রচনা[১৫]
De Motu Corporum in Gyrum (১৬৮৪)
Philosophiae Naturalis Principia Mathematica (১৬৮৭)
অপটিক্স (১৭০৪)
Reports as Master of the Mint (১৭০১ - ২৫)
অ্যারিথমেটিকা ইউনিভার্সালিস (১৭০৭)
Short Chronicle, The System of the World, Optical Lectures, The Chronology of Ancient Kingdoms, Amended এবং De mundi systemate মৃত্যুর পর ১৭২৮ সালে প্রকাশিত হয়।
An Historical Account of Two Notable Corruptions of Scripture (১৭৫৪)
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment