Wednesday, 3 February 2021

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
ক।
প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়
খ।
চিত্ত রঞ্জন মাইতি
==============∆∆∆∆∆∆∆==========
Doinik Sabder Methopath
Vol -271. Dt -03.02.2021
২০ মাঘ, ১৪২৭. বুধবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷∆∆∆∆÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন— “ছোট গল্প লেখায় পঞ্চ পাণ্ডবের মধ্যে তুমি যেন সব্যসাচী অর্জুন, তোমার গাণ্ডীব হইতে তীরগুলি ছোটে যেন সূর্যরশ্মির মত।”

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ৩ রা ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার ধাত্রীগ্রামে মাতুলালয়ে। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার গুরাপ গ্রামে।পিতা জয়গোপাল মুখোপাধ্যায় ।মাতা কাদম্বরী দেবী।

১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে প্রভাতকুমার জামালপুর হাই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং পাটনা কলেজ থেকে এফ.এ ও ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে বি.এ.পাশ করেন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে আইন পড়তে বিলেত যান এবং ব্যারিস্টারি পাশ করে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফেরেন। তখন থেকেই ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দার্জিলিং, রংপুর, গয়া প্রভৃতি স্থানে আইন ব্যবসায় নিযুক্ত থাকেন। নাটোরের রাজা জগদীন্দ্রনাথ রায়ের উৎসাহে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে মানসী ও মর্মবাণী পত্রিকার সম্পাদনা করতে শুরু করেন। পরে এই মহারাজেরই প্রচেষ্টায় তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজে শিক্ষকতায় নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু এখানে অধ্যাপনায় লিপ্ত থাকেন।         ছাত্রাবস্থায় 'ভারতী' পত্রিকায় কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে প্রভাতকুমারের সাহিত্য জীবনের শুরু। পরে গদ্য রচনায় হাত দেন। 'শ্রীমতী রাধামণি দেবী' ছদ্মনামে লিখে কুন্তলীনের প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। এক বার 'শ্রীজানোয়ারচন্দ্র শর্মা' ছদ্মনামে তাঁর রচিত নাটক 'সূক্ষ্মলোম পরিণয়' মর্মবাণী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রদীপ, প্রবাসী ও ভারতী পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। তাঁর রচিত ১৪ টি উপন্যাস ও মোট ১০৮ টি গল্প নিয়ে ১২ টি গল্প-সংকলনের সম্ভার আছে বাংলা সাহিত্যে। তাঁর প্রথম উপন্যাস 'রমাসুন্দরী' ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ধারাবাহিক ভাবে 'ভারতী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত 'রত্নদীপ'। এটি নাট্য ও চলচ্চিত্ররূপে জনপ্রিয় হয়েছে। সরল ও অনাবিল হাস্যরসের গল্পলেখক হিসাবে প্রভাতকুমার সমধিক প্রসিদ্ধ। সাধারণ আটপৌরে জীবনের লঘু ও দুর্বল দিকগুলো হাস্যরসে পরিবেশিত হয়েছে। বাঙালি জীবনের সুখ ও দুঃখের জীবন দোলার ছন্দে ছন্দময় হয়ে সার্থক হয়েছে। তাঁর লেখা গল্প পড়ে রবীন্দ্রনাথ অভিভূত হয়ে এক চিঠিতে তাঁকে লিখেছিলেন -"তোমার গল্পগুলি ভারি ভালো। হাসির হাওয়ায় কল্পনার ঝোঁকের পালের উপর পাল তুলিয়া একেবারে হু হু করিয়া ছুটিয়া চলিতেছে, কোথাও কিছুমাত্র ভার আছে বা বাধা আছে তাহা অনুভব করিবার জো নাই।"— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

                       প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ে ছোট হলেও দুজনেই সমকালীন সাহিত্যিক ছিলেন। মূলত তিনি গল্পকার হলেও বেশ কিছু উপন্যাসও লিখেছেন। এমনকি তার সময়ে তিনি গল্প লেখক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়েও জনপ্রিয় ছিলেন। তার জীবনও বেশ বৈচিত্র্যময় ছিল। বাবা ছিলেন রেলের একজন কর্মচারী, বরাবর পশ্চিমেই বড় হয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে কেরানীর চাকরি করতেন সিমলায়। সাহিত্যিক জীবন শুরু অল্পবয়সেই। প্রথম স্ত্রী বিয়োগের বেশ কয়েক বছর পর ঠাকুর বাড়ীর আত্মীয়া ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগ্নী) সরলা দেবীর সাথে বিয়ে হবার কথা ছিল। সেই সুবাদেই সরলা দেবীর মামা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আনুকূল্যে বিলেতে ব্যারিস্টারী পাস করে আসেন। কিন্তু মায়ের আপত্তিতে সেই বিয়ে আর হয় নি, আর বিয়েও করেন নি তিনি। রংপুর, গয়া প্রভৃতি জায়গায় আইন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়লেও বিশেষ সফলতা পান নি। এরপর "মানসী ও মর্মবাণী" পত্রিকায় সম্পাদনার জন্য চলে আসেন কলকাতায়। পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যাপনা ও করেছেন। এই বিপুল অভিজ্ঞতা তার লেখায় ফুটে উঠেছে। প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় মূলত হাস্যরসাত্মক গল্প লিখলেও সিরিয়াস টাইপের বা করুণ রসাত্মক গল্প যে লিখেন নি তা নয়, তবে মূলত তিনি তার হাস্যরসাত্মক গল্পগুলোর জন্যই খ্যাত। মাস্টার মহাশয়, বলবান জামাতা, রসময়ীর রসিকতা আজও পাঠকপ্রিয়। দেবীর মতো করুণ রসের দূর্দান্ত গল্প ও তিনি লিখেছেন, এই গল্পটির প্লট নাকি তাকে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং। কিছু অনুবাদ গল্প ও তিনি লিখেছেন যাদের মূল সম্ভবত ফারসী, এছাড়া বিলেত বাসের অভিজ্ঞতা থেকেও লিখেছেন বেশ কয়েকটি গল্প। শহর এবং গ্রাম, বাংলা ও বাংলার বাইরে তার গল্পের পটভূমি বৈচিত্র্যময় এবং ব্যাপক। তার লেখায় তাকে মুক্তমনা মানুষ বলেই মনে হয় তবে সমকালীন অনেক সংস্কারের উর্ধ্বে হয়তো তিনি যেতে পারেন নি। তার হাসির গল্পগুলোর কৌতুক ও ভাড়ামিপূর্ণ নয় বরং পরশুরাম বা প্রমথ চৌধুরীর গল্পের মতোই উইটি। প্রেমের গল্পও তিনি লিখেছেন বিস্তর। যদিও সে সময়ে বাংলায় প্রেমের গল্প মানেই বিয়ের পরে প্রেম, অথবা ঠিকুজি কুষ্ঠি মিলিয়ে প্রেম। এর অন্যথা হলেই সেই প্রেম পরিণতিহীন বা বিষময়। গল্পের নায়করাও তাই বড়জোর বিশ বাইশ থেকে তিরিশ বছরের আর নায়িকাদের বয়স চৌদ্দ থেকে কুড়ি। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তিনি দারুণ কিছু প্রেমের গল্পও লিখেছেন। আমার উপন্যাস গল্পটি তো আমার দিব্যি লেগেছে। সবমিলিয়ে হারানো দিনের উজ্জ্বল এক লেখকের দারুণ কিছু গল্প পড়াটা খুবই উপভোগ্য ছিল। 

*রচনা কর্ম : 

গল্প সংকলন :--১) 'নবকথা' (১৮৯৯)২) 'ষোড়শী' (১৯০৬)৩) 'দেশী ও বিলাতী'(১৯০৯)৪) 'গল্পাঞ্জলি' (১৯১৩)৫) 'গল্পবীথি' (১৯১৬)৬) 'পত্রপুষ্প'(১৯১৭)৭) 'গহনার বাক্স ও অন্যান্য গল্প'(১৯২১)৮) 'হতাশ প্রেমিক ও অন্যান্য গল্প' (১৯২৪)৯) 'বিলাসিনী ও অন্যান্য গল্প'(১৯২৬)১০) 'যুবকের প্রেম ও অন্যান্য গল্প'(১৯২৮)১১) 'নতুন বউ ও অন্যান্য গল্প'(১৯২৯)১২) 'জামাতা বাবাজী ও অন্যান্য গল্প'(১৯৩১)

উপন্যাস সমূহ :-

১) 'রমাসুন্দরী'(১৯০৮)২) 'নবীন সন্ন্যাসী'(১৯১২)৩) 'রত্নদীপ' (১৯১৫)৪)' জীবনের মূল্য'(১৯১৭)৫)'সিন্দুর কৌটা'(১৯১৯)৬) 'মনের মানুষ'(১৯২২)৭) 'আরতি' (১৯২৪)৮) 'সত্যবালা '(১৯২৫)৯) 'সুখের মিলন'(১৯২৭)১০)'সতীর পতি'(১৯২৮)১১)'প্রতিমা'(১৯২৯)১২) 'বিদায় বাণী'(১৯৩৩)১৩)'গরীব স্বামী'(১৯৩৮)১৪) 'নবদুর্গা'(১৯৩৮)অন্যান্য গ্রন্থ :-'অভিশাপ'(ব্যঙ্গকাব্য)

প্রভাতকুমার স্মৃতিকথায় বলেছেন, “কবিতার মা বাপ নাই, যা খুসী লিখিয়া যাই—কবিতা হয়। কিন্তু গদ্য লিখিতে হইলে যথেষ্ট পাণ্ডিত্যের প্রয়োজন; সে পাণ্ডিত্য আমার কই?” রবীন্দ্রনাথের উত্তর— “গদ্য-রচনার জন্য প্রধান জিনিস হইতেছে রস। রীতিমত আয়োজন না করিয়া, কোমর না বাঁধিয়া, সমালোচনা হউক, প্রবন্ধ হউক, একটা কিছু লিখিয়া ফেল দেখি।” ‘তিনি গভীর দর্শনের কথা শিখিয়ে-ভাবিয়ে যাননি, কিন্তু জগৎসংসারের হাল্কা-স্নিগ্ধ-সহজ কৌতুক এঁকে দিয়ে গিয়েছেন। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, সমসাময়িক ও সমানধর্মা অন্য সব গল্পকারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিলেন তিনি। চমৎকার প্রসাদগুণ মণ্ডিত ভাষায় লিখতেন, দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো উপাদানগুলোকে গল্পে পরিণত করতেন, এবং নিপুণ ‘ক্লাইম্যাক্স’ বানাতেন। গল্পের বুননে এমন সুবিন্যস্ত ‘সিচুয়েশন’ তৈরি হত যে, রোজকার লঘু হাসিকান্নাও পাঠকের মনে দাগ কেটে দিত। অথচ সেই সব অনুভূতি এমনিতে আমরা মনেও রাখি না।১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ এক চিঠিতে প্রভাতকুমারকে বলেছিলেন, “তোমার গল্পগুলি ভারি ভাল। হাসির হাওয়ায় কল্পনার ঝোঁকে পালের উপর পাল তুলিয়া একেবারে হুহু করিয়া ছুটিয়া চলিয়াছে। কোথাও যে বিন্দুমাত্র ভার আছে বা বাধা আছে তাহা অনুভব করিবার জো নাই।” গল্পের এমনই টান, যে কোনও কোনওটা দু’বার করে পড়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রতি বারই তা নতুন করে ভাবিয়েওছিল। এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ নিজেই সে কথা ব্যক্ত করেছেন।প্রভাতকুমারের সবচেয়ে সাফল্যের জায়গা ছিল সরস গল্প। সমসময়ে হাসির গল্প রচনায় তাঁর সমকক্ষ কেউই ছিলেন না। সরল, স্নিগ্ধ, মার্জিত, সজীব ভঙ্গিতে অনাবিল হাস্যরস তৈরি করতে পারতেন তিনি। কাহিনিসজ্জাও ছিল সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। এমনিতে বাংলা সাহিত্যে কৌতুক-ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের অভাব কোনও কালেই হয়নি। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, কালীপ্রসন্ন সিংহ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, পরশুরাম, শিবরাম চক্রবর্তী— তালিকা শেষ করা যাবে না। এক এক যুগে এক এক চেহারায় এই শাখা সমৃদ্ধ হয়েছে। এই সব রথী-মহারথীদের কথা মাথায় রেখেও বলতে হয়, হাসির গল্প রচনায় প্রভাতকুমারের স্বকীয়তা চোখে পড়বেই। রবীন্দ্রনাথের আক্ষেপ ছিল, বাঙালি জাতির হৃদয় নাকি মনের সঙ্গে আমোদ করতে জানে না। তাঁর রসের গল্পগুলোয় সেই অভাব পূরণ হয়েছিল। 

       "মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন আন্তরিক ও সহৃদয়। সাহিত্যিক প্রভাতকুমারকে ছাপিয়ে যে হেতু মানুষ প্রভাতকুমার কখনও প্রকাশ্যে আসেননি, তাই তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানার সুযোগও আমাদের তেমন হয়নি। তবে ব্রজেন্দ্রনাথ লিখেছেন, মানুষ হিসেবেও কোনও অংশে কম ছিলেন না সাহিত্যিক প্রভাতকুমার। তাঁর সমগ্র পরিচয়েই তা বোঝা যায়।

পুরস্কার     -   কুন্তলীন পুরস্কার। 

মৃত্যু - কথাসাহিত্যিক প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ৫ ই এপ্রিল, মাত্র ৫৯ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন ।

=================================খ। 

চিত্ত রঞ্জন মাইতি

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহকুমা অন্তর্গত কলাগাছিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে সন্তান তিনি। জন্মগ্রহণ করেছেন মাতুলালয় অযোধ্যাপুরে ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ২০ মাঘ। প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী জগদীশ চন্দ্র মাইতির পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা নলিনীজীবন ও মাতা নির্মলা দেবী, তিনিও স্বাধীনতা আন্দোলনে আইন ভঙ্গ সহ নানান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।১৯৪৪ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজ এ ভর্তি হন সেখান থেকে ১৯৪৮ সালে স্নাতক হয়ে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৫০ সালে বাংলায় এমএ ডিগ্রি লাভ করার পর সুরেন্দ্রনাথ ও আশুতোষ কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। প্রায় ৪০ বছর অধ্যাপক জীবন যাপনের পর সুরেন্দ্রনাথ মহিলা কলেজ থেকে বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক,  রিডার ও প্রফেসর ইনচার্জ এর দায়িত্ব পালন করে অবসর গ্রহণ করেন। সাহিত্য সাধনা শুরু করেছিলেন স্কুল জীবন থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র অবস্থায় রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণ। সেই সময় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটি কবিতা কলকাতার "কিশোর বাংলা " পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এটি লেখক এর প্রথম প্রকাশিত কবিতা।  স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র জীবনে শিশুমাসিক পত্রিকা  "শিশুসাথী" তে গল্প লিখেছেন। এছাড়া তিনি যুগান্তর আনন্দবাজার দেশ পত্রিকায় নিয়মিত লেখক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত "তরুণের স্বপ্ন" পত্রিকায় তাঁর ধারাবাহিক উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে.এমনই সুদীর্ঘ সাহিত্যিক জীবনে তিনি সান্নিধ্য ও প্রেরণা পেয়েছেন আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়,  ড.সুকুমার সেন, ড. নীহাররঞ্জন রায় ড. কালিদাস নাগ,  কথাসাহিত্যিক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় , তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়,  কবি জসীমউদ্দীন,  প্রেমেন্দ্র মিত্র,  প্রবোধকুমার সান্যাল মনোজ বসু প্রমুখদের।আরে নানান রচনা কর্ম বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ‌ চলচ্চিত্র ও হয়েছে। আলোচনা সমালোচনার উর্ধ একজন ব্যক্তি মানুষকে খুঁজে পাওয়া গেছে সময়ের বিবর্তনে মানবিক মূল্যবোধের জীবনযাত্রায় নতুন নতুন আঙ্গিকে। ‌ লেখার মধ্যে এত ব্যপ্তি গভীর জীবনবোধ সময় সমাজের ইতিহাস পাঠক কে শুধু মুগ্ধ করে তা নয় সমাজ সচেতক লেখক হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে।সাহিত্যকর্ম :সারা জীবন যা লিখেছেন, পরিসংখ্যায় তা ১৩০ এর বেশি। সেগুলির মধ্যে ১৬ ঐতিহাসিক উপন্যাস, ৩৭ রোমান্টিক উপন্যাস, ৪ পৌরাণিক উপন্যাস, ৮ সামাজিক উপন্যাস, ১২ ভ্রমণ কাহিনী, ৫ কাব্যনাট্য, ৮ জীবনচর্চা কাহিনী, ৭ ছড়ার বই প্রভৃতি।

উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল :

শৈলপুরী কুমায়ুন, কলাভূমি কলিঙ্গ, অগ্নিকন্যা , ভোরের রাগিনী,  কন্যা কাশ্মীর,  হিরণ্যগড়ের বধূ, বসন্ত বিলাপ, আঁধার পেরিয়ে,  বর্ষা বসন্ত ছুঁয়ে, রিসেপশনিস্ট, ফরেস্ট বাংলো ,নির্জনে খেলা, কালের কল্লোল, পরমা ,আর্য-অনার্য ,আপন ঘর, সাইক্লোন , মহাকালের বন্দর, ত্রিবেণী, বনপর্ব ,মেঘ ময়ূরী, নির্জন নির্ঝর, কালের রাখাল, জয়িতা, অনুরাগিণী ,অমৃত নিকেতন,  নীলাঞ্জনা , মনের মধ্যে মন ,সোনালী ডানার পাখি, তুমি রবে নীরবে,  আকাশ হারিয়ে যায়,  তিন্নির রোদ আর বৃষ্টি, অক্ষয় বটের কড়চা, বীর্যবতী বীরভোগ্যা, মৃগনয়নী মধুমাধবী অধরা মাধুরী প্রভৃতি ।পত্নী শ্রীমতি গীতা মাইতি, যোগমায়া দেবী কলেজ এর সংস্কৃত বিভাগের প্রধান ছিলেন। অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং দূরদর্শনে দীর্ঘকাল সঙ্গীত পরিবেশন করেন।এইচ এম ডি থেকে তার রেকর্ড ক্যাসেট প্রকাশিত হয়। ডি এল রায়ের প্রেমের গানের ক্যাসেট প্রকাশিত হয় সাউন্ড উইংস সংস্থা থেকে। কন্যা শ্রীমতি মৌসুমী বসু ইংরেজি সাহিত্যে পিএইচডি। বর্তমানে সরোজিনী নাইডু কলেজের সিনিয়র লেকচারার ও রিডার রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে। বিদেশি সাহিত্য অনুবাদকর্মের সঙ্গে তিনি যুক্ত। 

মৃত্যু - ১লা অক্টোবর , ২০১৩ সাল।


'খেজুরির মুখ' পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা.
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

No comments: