∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত==========∆∆∆∆∆================
Doinik Sabder methopath
Vol -278. Dt -11.02.2021
২৬ মাঘ, ১৪২৭. বৃহস্পতিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷∆∆∆∆∆∆÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
রবীন্দ্র – প্রতিভার প্রদীপ্ত মধ্যাহ্ন – প্রহরে রবি রশ্মিতে রশ্মিমান হয়ে আপন ছন্দে রবীন্দ্ৰবলয়ে অবস্থান করেছিলেন পাঁচজন কবি। তারা হলেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, যতীন্দ্রমােহন বাগচী এবং কালিদাস রায়।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জন্ম ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নিকটবর্তী নিমতা গ্রামে। তাাঁর পৈতৃক নিবাস বর্ধমান এর চুপী গ্রামে। পিতা রজনীনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং মাতা মহামায়া দেবী। পিতামহ অক্ষয় কুমারদত্ত ছিলেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক। সত্যেন্দ্রনাথের কবিতায় নানা ভাষার শব্দ নিপুণ ছন্দে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদকর্মও করেছেন।
বিদ্যায়তনিক পড়াশুনাে বন্ধ হলেও অধ্যয়ন যাঁর আবালাের নেশা তার পড়াশােনার জগৎ থাকে চিরকালই অবারিত। নানা বিষয়ের বই হয়ে উঠল তার নিত্যসঙ্গী। এভাবেই দিনে দিনে সমৃদ্ধ হল সত্যেন্দ্রনাথের জ্ঞানভান্ডার। সংগৃহীত হল তার নিরবচ্ছিন্ন কাব্য সাধনার বহুবর্ণ উপচার।
এই প্রসঙ্গে একস্থানে মোহিতলাল বলেছিলেন, “…তাই প্রকৃতি চিত্রশালা এবং পাণ্ডিত্যের পুঁথিশালা দুইই ছিল তাহার সমান আশ্রয়। এই যে জানিবার ক্ষুধা এবং জানার আনন্দ – প্রধানতঃ এই দুইয়ের তাগিদে তিনি সরস্বতীর আরাধনা করিয়াছিলেন।”
সত্যেন্দ্রনাথের পিতা রজনীনাথের ইচ্ছা ছিল তার পুত্র হােমিওপ্যাথিতে বড় চিকিৎসক হবেন। কিন্তু পিতার আকাঙ্ক্ষা তার জীবনে পূর্ণ হয়নি। মামার উৎসাহে সত্যেন্দ্রনাথ (Satyendranath Dutta) আমদানি – রপ্তানির ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু সাহিত্যানুরাগ যাঁর ধমনীতে প্রবাহিত বাণিজ্য লক্ষ্মীর সাধনায় তার তৃপ্তি আসবে কেন ? অচিরেইস্বক্ষেত্রে ফিরে আসতে হল তাকে নিজেকে পুরােপুরিভাবে সাহিত্য সাধনার কাজে নিয়ােজিত করলেন।
সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯৯) এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে এফএ (১৯০১) পাস করেন। কিন্তু পরে বিএ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন।কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করার আগে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পিতার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতী পত্রিকাগোষ্ঠীর অন্যতম কবি। প্রথম জীবনে তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, অক্ষয় কুমার বড়াল প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত হন। পরে রবীন্দ্র অনুসারী হলেও তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফার্সি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই। অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান। নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর প্রভৃতি ছদ্মনামে তিনি কবিতা লিখতেন। দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি তার কবিতার বিষয়বস্তু। ১৯১৮ সালে ভারতী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ছন্দ সম্পর্কিত তার প্রসিদ্ধ রচনা ‘ছন্দ-সরস্বতী’ প্রকাশিত হয়। তার অপর কৃতিত্ব বিদেশী কবিতার সফল অনুবাদ। আরবি-ফার্সি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে বাংলাসাহিত্যের বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি সাধন করেন। মেথরদের মতো অস্পৃশ্য ও অবহেলিত সাধারণ মানুষ নিয়েও তিনি কবিতা লিখেছেন। তিনি একাধিক ছদ্মনামে কবিতা চর্চা করতেন।কবিতায় ছন্দের সমৃদ্ধতার জন্য তিনি ছন্দের রাজা ও ছন্দের যাদুকর বলে পরিচিত।
তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলি হলো:
সবিতা (১৯০০), সন্ধিক্ষণ (১৯০৫), বেণু ও বীণা (১৯০৬), হোম শিখা (১৯০৭), ফুলের ফসল (১৯১১), কুহু ও কেকা (১৯১২), তুলির লিখন (১৯১৪), অভ্র-আবীর (১৯১৬), হসন্তিকা (১৯১৯), বেলা শেষের গান (১৯২৩), বিদায়-আরতি (১৯২৪), কাব্যসঞ্চয়ন (১৯৩০), শিশু-কবিতা (১৯৪৫) ইত্যাদি। তাঁর অনুবাদ কাব্যগুলি হলো: তীর্থরেণু (১৯১০), তীর্থ-সলিল (১৯১৮), মণিমঞ্জুষা (১৯১৫) এবং গদ্যরচনা জন্মদুঃখী (উপন্যাস, ১৯১২), চীনের ধূপ (প্রবন্ধ, ১৯১২), ছন্দ-সরস্বতী (প্রবন্ধ, ১৯১৯), রঙ্গমল্লী (নাট্যানুবাদ, ১৯১৩) ইত্যাদি।
মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে তিনি পরলোকগমন করেন।
------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment