Tuesday, 9 February 2021

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

    জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য


নবীনচন্দ্র সেন

=============√√√√√√√=============

    Doinik Sabder Methopath

     Vol -278. Dt -10.02.2021

      ২৫ মাঘ, ১৪২৭. বুধবার

================∆∆∆∆============

সমালোচক শশীভূষণ দাশগুপ্ত উনবিংশ শতাব্দীর প্রতিভা মূল্যায়ন যে কথা বলেছেন -
"একটা পার্বত্য পাগলাঝোরার ধারার ন্যায় অনিয়ন্ত্রিত কল্পনা এবং হৃদয়াবেগের প্রাচুর্য লইয়া বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হইয়াছিল কবি নবীনচন্দ্রের। "

গীতিকবি সুলভ রোমান্টিকতায় কবি বলেছেন-

"নিবুক নিবুক প্রিয়া দাও তারে নিবিবারে
আশার প্রদীপ।
এইতো নিবিতেছিল কেন তারে  উজলিলে
নিবুক সে আলো, আমি
ডুবি এই পারাবারে।"


                   ১৮৭৪ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার অন্তর্গত পশ্চিম গুজরার (নোয়াপাড়া) সুপ্রসিদ্ধ প্রাচীন জমিদার পরিবারে তাাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম গোপীমোহন রায় এবং মাতার নাম রাজরাজেশ্বরী।পাঁচবছর বয়সে তিনি লেখাপড়া শুরু করেন। ১৮৬৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম স্কুল (বর্তমানে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল) থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথমশ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতা যান। ১৮৬৫ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ (বর্তমান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এফএ এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইন্সটিটিউশন (স্কটিশচার্চ কলেজ) থেকে ১৮৬৯ সালে বিএ পাশ করেন। বি.এ. পাশ করার পরে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ সাট্ক্লিফ এর সুপারিশে নবীনচন্দ্র কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুলে তৃতীয় শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। কিছুদিন পরে বেকার হয়ে পড়েন। পরে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন। মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হন। প্রথমে ১৭ জুলাই ১৮৬৮ বেঙ্গল সেক্রেটারীয়েটের এসিষ্ট্যাণ্ট পদে যোগ দেন। ২৪ জুলাই ১৮৬৯ যশোরে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদে তাকে পদায়ন করা হয়। কর্মজীবনে তিনি বাংলা, বিহার, ত্রিপুরার অনেকস্থানে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দুই দফায় মোট প্রায় আটবছর ফেনীতে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এসময় তিনি অনন্য কর্মদক্ষতায় একটি জঙ্গলাকীর্ণ স্থানকে মনোরম শহরে পরিণত করেন। ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ফেনী হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে ফেনী সরকারি পাইলট হাই স্কুল। প্রায় ছত্রিশ বছর সরকারি চাকুরি করার পরে ১ জুলাই ১৯০৪ অবসর গ্রহণ করেন।

                      নবীনচন্দ্রের প্রথম কবিতা কোন এক বিধবা কামিনীর প্রতি প্রকাশিত হয় তৎকালীন অন্যতম খ্যাতনামা পত্রিকা এডুকেশন গেজেট-এ, যখন তিনি এফ.এ (বর্তমান উচ্চ মাধ্যমিক) শ্রেণীর ছাত্র। তার প্রথম বই "অবকাশরঞ্জিনী"র প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় ১২৭৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ এবং এর দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয় ২৯ জানুয়ারি, ১৮৭৮এ।

 শেষের কাব্য তিনটি( রৈবতক,কুরুক্ষেত্র,প্রভাস) আসলে একটি বিরাট কাব্যের তিনটি স্বতন্ত্র অংশ। এই কাব্য তিনটিতে কৃষ্ণচরিত্রকে কবি বিচিত্র কল্পণায় নতুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। কবির মতে আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির সংঘর্ষের ফলে কুরুক্ষেত্রযুদ্ধ হয়েছিল। এবং আর্য অনার্য দুই সম্প্রদায়কে মিলিত করে শ্রীকৃষ্ণ প্রেমরাজ্য স্থাপন করেছিলেন। নবীনচন্দ্র ভগবতগীতা এবং মার্কণ্ডেয়-চণ্ডীরও পদ্যানুবাদ করেছিলেন। নবীনচন্দ্রের কবিত্ব জায়গায় জায়গায় চমৎকার কিন্তু কবি এই চমৎকারিত্ব সব জায়গায় বজায় রাখতে পারেন নি। এই কারণে এবং কাব্য বাঁধুনি না থাকায় নবীনচন্দ্রের কবিত্বের ঠিকমত বিচার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নবীনচন্দ্র কিছু গদ্যরচনাও করেছিলেন। তার আত্মকথা আমার জীবন একটি উপন্যাসের মত সুখপাঠ্য গ্রন্থ। তিনি ভানুমতী নামে একটি উপন্যাসও রচনা করেছিলেন।

রচনা কর্ম :

  • পলাশির যুদ্ধ (১৮৭৫) 
  • ত্রয়ী কাব্য -
  •     রৈবতক (২রা ফেব্রুয়ারি ১৮৮৭) কুরুক্ষেত্র ( ১৮ই জুলাই ১৮৯৩) প্রভাস (১৮৯৭)
পৌরাণিক কাহিনী আশ্রিত রোমান্টিক প্রণয় ও গার্হস্থ্য রসের নতুন এক কাব্য - 'ত্রয়ী'.
    এই প্রসঙ্গে অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন
-" আসলে তিনি ছিলেন রোমান্টিক ও লিরিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী ; এই তিনখানি কাব্যের কোন কোন অংশে রোমান্টিক‌ ও লিরিক বৈশিষ্ট্য বেশ চমৎকার ফুটে উঠেছে, কিন্তু মহাকাব্যের বিশাল রস ও বিস্ময় তাঁর কবি চরিত্র‌ও ছিল না , কাব্যেও তার প্রমাণ নেই ।"
    শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন -
" এই কাব্য ত্রয়ীকে মহাকাব্য লক্ষণান্বিত ও মহাকাব্যের আদর্শে  বিচারনীয় বলিয়া কোন মতে মনে করা যায় না "
  •  ক্লিওপেট্রা (১৮৭৭)অমিতাভ (১৮৯৫) অমৃতাভ ,রঙ্গমতী (১৫ই জুলাই ১৮৮০) এবং খ্রীস্ট (১৮৯০) ( যীশুর জীবন অবলম্বনে ), অমিতাভ ( বুদ্ধদেবের জীবন অবলম্বনে), অমৃতাভ ( শ্রী চৈতন্যের জীবন অবলম্বনে).
  •  ভগবতগীতা এবং মার্কণ্ডেয় চণ্ডীরও কাব্যনুবাদ করেছিলেন।
  •  নবীনচন্দ্র কিছু গদ্যরচনাও লিখেছিলেন । তাঁর আত্মকথা 'আমার জীবন'।
  •  তিনি ভানুমতী নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন।
নবীনচন্দ্রের প্রথম কবিতা ‘কোন এক বিধবা কামিনীর প্রতি’ প্রকাশিত হয় ‘এডুকেশন গেজেট’ পত্রিকায়। তখন তিনি এফএ শ্রেণির ছাত্র। তাঁর প্রথম বই ‘অবকাশরঞ্জনী’র প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১২৭৮ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখ এবং দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৭৮ সালের ২৯ জানুয়ারি।
১৮৭৫ সালে ‘পলাশীর যুদ্ধ’ মহাকাব্য প্রকাশিত হলে নবীনচন্দ্র ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়েন। 

তিনি ভগবতগীতা ও চন্ডি’র কাব্যানুবাদ করেন। স্বজাতিবোধ ও স্বদেশানুরাগ তাঁর কাব্যের মৌলিক অবদান। বস্তুত একজন দরদী স্বভাবকবি ছিলেন নবীন চন্দ্র। ১২৭৮ সালে তাঁর ‘অবকাশরঞ্জিনী’ প্রকাশিত হয়। কবি সুকৌশলে আপন-জীবনের দুঃখের কাহিনী বয়ান করেন এই কাব্যে। পলাশীর যুদ্ধ কাব্য প্রকাশিত হলে তিনি যে একজন প্রতিষ্ঠিত সফল লেখক, তা সবাই বুঝতে পারেন। অতঃপর কবি নবীনচন্দ্র সেন ক্রমান্বয়ে রঙ্গমতী, রৈবতক, কুরুক্ষেত্র, প্রভাস, অমিতাভ, অমৃতাভ প্রভৃতি কাব্য প্রণয়ন করেন। এ কাব্যগুলো সাধারণ পাঠক মনে যথেষ্ট প্রতিষ্ঠা লাভ করে। 

কর্মজীবনে মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হন নবীনচন্দ্র সেন। সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত থাকাকালে বহুস্থানে বহু জনহিতকর ও সংস্কারকর্মে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন কবি।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের অনুসারী মহাকবি হিসেবে অধিক পরিচিত হলেও নবীন চন্দ্র সেন অনেক উল্লেখযোগ্য গীতি কবিতা ও আখ্যান কাব্যও রচনা করেছেন। স্বজাত্যবোধ ও স্বদেশানুরাগ তাঁর কাব্যের মৌলিক আবেদন। 

১৯০৯ সালের ২৩ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয়।

বাঙালির মধ্যে জাতীয়তাবোধের সঞ্চারে "পলাশীর যুদ্ধ" কাব্যগ্রন্থের ভূমিকায় তিনি বলেছেন-
"পাণিপথে যেই রবি গেলা অস্তাচলে
ভারতে উদয় নাহি হইল আবার
পঞ্চশতবর্ষ পরে দুর নীলাচলে
ঈষদে হাসিতে ছিল কটাক্ষ তাহার।"

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...