∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
=============√√√√√√==============Doinik Sabder Methopath
Vol -280 .Dt -12.02.2021
২৯ মাঘ, ১৪২৭. শুক্রবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷√√√√√√√÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
"বাংলা ভেঙে দু-টুকরো হয়ে গেছে
কিন্তু বাঙালির মন পুরোপুরি
দু-টুকরো হতে পারেনি।
বাঙালির মনকেও ভেঙে
দু-টুকরো করার জন্য আকাশে
পতাকা তোলা হচ্ছে।
ভয়াবহ সব ধর্মপতাকা।"
বা
"তোমায় বলি, ‘সামনে দূরে কেন
আমায় নিচ্ছ টেনে?
এখন এই গোধূলি-ঘেরা বেলা
নশ্বরতায় মেনে
নিয়েছি এক নিথর কৌতুকে –
আর তো কিছু নয়’
বলেই ভাবি সামনে আছে কিছু
অগ্রন্থিত ভয়।
ভয়ের দিকে আরও অনেক পথ
তোমার থেকে দূরে
পেরিয়ে যাব। রাত্রি। বহুতারা
গগনতল জুড়ে। "
( কৌতুক )
১.
এই মধ্যরাত্রে আমি মানবিকভাবে এই মাথা রাখি নীল বিছানায়। পাশে জল, মৃত্যুবোধ, ঘড়ি... – (গীতিকবিতার পাশে / একবছরের সামান্য কবিতা)
২.
স্মৃতিফলকের পাশে যে স্তব্ধতা রয়েছে, যে স্থবিরতা, যে
অবলুপ্ত সময়
তার কাছে যেতে হবে আমাকে।
( গ্রীষ্মের দুপুর /হস্টেল থেকে লেখা কবিতা,
প্র. ১৯৮৪)
৩.
ব্যক্তির অন্ধকার এসে বারবার ছুঁয়ে দেয় এই মাটি, ঘাস।
( দৈত্যের পোশাক /হে নিদ্রাহীন, প্র. ১৯৮৮)
৪.
এ জীবন নক্ষত্রের/ অতি স্থির পথে যেতে গিয়ে কালো হয়ে/ ফেরে;
(অসুখ / পিতামহ, খোয়াইয়ে এসেছি, প্র. ১৯৯০)
৫.
তিমির রচিত হয় বিশুদ্ধ ব্যক্তির;/ প্রেত-তাড়িতের মতো সে জাগে ধোঁয়ার মধ্যে অবশেষে, একা
(তোমার প্রবাহ, চৈত্রমাস, প্র. ১৯৯১)
৬.
প্রতিটি যাওয়ার আছে অবসাদ, ঘুম, বিচ্ছিন্নতা (পলাশ / অন্ধত্বের প্রশ্নে জড়িত, প্র. ১৯৯১)
এছাড়া -
তোমাকে দিইনি কিছু –
তবুও আগুন জ্বেলে
রেখেছিলে তুমি নিজে;
আজ এই কথা বলি।
কাকে বলি এই কথা?
স্মৃতিহীনতার দিকে
তাকিয়ে থেকেছি শুধু –
যেন শূন্যতা আঁকা!
শ্রোতা পাইনি তো খুঁজে
নিজেকেই বলেছি তা
আলো জ্বেলেছিলে তুমি
নিদ্রাহীনের শীতে।
ঝাউ-দেবদারু ঘেরা
গহন তোমার বাসা
তোমাকে গ্রহণ করি
পুরোনো কাব্যভাষায়।
( নিদ্রাহীনের শীত )
কবি কালীকৃষ্ণ গুহ অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুর জেলায় 1944 সালের 12ই ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। ষাটের দশকের সমাজ সচেতন এই কবি প্রকৃতি প্রীতি ও রোমান্টিকতায় ব্যাপ্ত, স্বাতন্ত্র্য কবিতা রচনায় ধারা নির্মাণ করে চলেছেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ গুলি হল :
"রক্তাক্ত বেদীর পাশে, নির্বাসন নাম ডাকনাম , হোস্টেল থেকে লেখা কবিতা, এক বছরের সামান্য কবিতা, হে নিদ্রাহীন, অন্ধত্বের প্রশ্নে জড়িত , পিতামহ খোয়াইয়ে এসেছি, খদিত সেই সূর্যোদয় , ক্লান্তির ভিতরে এই বর্ষশেষ , স্মৃতিহীনতার মাঠ ,নিস্তব্ধপুরাণ, গতজন্মের গ্রীষ্মকাল" প্রভৃতি।
তিনি বাংলা কবিতার পটভূমিতে স্বয়ং একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি চান কবিতার ভাষা হবে গদ্যের ভাষা। কবিতা তাঁর কাছে নিষিদ্ধ মায়াময়, নিগূঢ় কোন শিল্পকলা নয়,কোন মাথা ফাটাফাটি ব্যপার নয়,গর্বিত হওয়ার মতো কোন পুণ্যার্থ নয়।তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা ষাটের দশকের " শতভিষা"
বেশিরভাগ কবিতাই গদ্যে লেখা।কিছু কবিতা স্বরবৃত্তে (পূর্ণিপুকুর),আবার মন্ত্রপাঠ কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত টানা দশমাত্রায় গদ্যের ঢঙে লেখা। বেশ কিছু কবিতা কনফেশনাল বা নিজস্ব স্বীকারোক্তি মূলক। অনেক কবিতা আমাদের স্তব্ধ করে দেয়, যখন কবি বলছেেন -
"জুয়োখেলে বড়লোক হওয়া যায় এই প্রশ্ন নিয়ে ফুটপাথের আলোচনা সভা"...........
."আমিও কি ওই সভায় অংশগ্রহণ করিনি?
আমিও কি ওদের একজন নই!"
যেন এই হাহাকার আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয় এক অদ্ভুত বিপন্নতায়।
** সোফোক্লিস
"একজন আরেকজনকে বলছে
'আপনি এত মহত্ যে,আপনার আর কবিতা লেখা উচিত নয় ।'......শেষ লাইনে" সোফোক্লিসের কথাটা ভাবতে ভাবতে চারিদিক/অন্ধকার হয়ে এল......"(এল ,এলো নয় এখানে)।
বইটি পড়ার পর প্রশ্ন জাগে রচয়িতা মূলত দার্শনিক না কবি।
শেষ লাইনগুলিতে কবি পাঠকের ওপর বিনির্মাণের দায়িত্ব সঁপেছেন।
কবি,ভাষাবিদ ও প্রকাশক সেলিম মল্লিককে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি বই অতি যত্ন সহকারে প্রকাশ করার জন্য। প্রচ্ছদ যথাযথ আমাদের এই সামাজিক অস্থিরতা ও দ্বন্দ্বের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে।
প্রকৃত পাঠক সমৃদ্ধ হবেন বইটি পড়লে।বার বার পড়ার মতো "বাড়িটা অন্ধকার হয়ে আছে "।
শুধু প্রতীক নয় প্রত্যক্ষের সত্য তার কবিতায় অপ্রত্যক্ষ নয়।
"একটি মাত্র কবিতার দিকে চলে যায় আমার প্রতিটি অন্ধকার পান্ডুলিপি নারীর মুখ যায়, তার অনিশ্চিতভাবে মেলে দেওয়া চুল ও নিঃসঙ্গতা যায় -প্রতিটি অন্ধকার পান্ডুলিপির ভেতর থেকে একটি মাত্র কবিতার দিকে চলে যায় হেমন্তের বিষাদ , শিতরাত্রির মূঢ় কাক, এপিটাফ ।"
কবি অরুণ মিত্র বলেছেন -
"কালীকৃষ্ণ এখনো তাঁর স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর নিয়ে আমার মত কবিতা পাঠকের মনে সমানই সাড়া জাগিয়ে চলেছেন। তাঁর কবিতা থেকেই বুঝতে পারি একজন উত্তরসূরি কিভাবে বিষ্ণুদে এবং আলোক সরকারের মত সম্পুর্ন ভিন্ন মেজাজের দুইকবিকে উপলব্ধির কোন যুক্তিতে গেঁথে নিতে পারছেন, তাঁর নিজস্ব উচ্চারণের প্রশান্তিও স্বাভাবিকতায়."
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment