∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
মহাপ্রভু চৈতন্য দেব
==========================≠==
Doinik Sabder Methopath
Vol -285. Dt -18.02.2021
৮ ফাল্গুন,১৪২৭. বৃহস্পতিবার
########$#########₹###№#₹₹###₹₹₹
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
চণ্ডালোঽপি দ্বিজশ্রেষ্ঠঃ হরিভক্তিপরায়ণঃ"
বঙ্গানুবাদ:- যে চণ্ডাল হরিভক্তি পরায়ণ, সে দ্বিজজাতি (ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য) থেকেও শ্রেষ্ঠ হয়।
"মুচি যদি ভক্তিসহ ডাকে কৃষ্ণধনে।
কোটী নমস্কার করি তাহার চরণে।।" ('গোবিন্দদাসের কড়চা'য় উল্লিখিত)
"তৃণাদপি সুনিচেন তরোরিব সহিষ্ণুনা।
অমানিনা মানদেন কীর্ত্তনীয়া সদা হরিঃ।
গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু চৈতন্যদেব
চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থের বর্ণনা ও বঙ্গীয় সনাতন ধর্মালম্বীদের অনুযায়ী, ১৪০৭ শকাব্দের বা ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে চৈতন্য মহাপ্রভু ফাল্গুনী পূর্ণিমার (দোল যাত্রা উৎসব) সন্ধ্যাকালে সিংহলগ্নে চন্দ্রগ্রহণের সময় নদিয়ার নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।] তাঁর পিতামাতা ছিলেন প্রাচীন গৌড়বঙ্গে নদিয়া অন্তর্গত নবদ্বীপের অধিবাসী জগন্নাথ মিশ্র ও শচী দেবী।] চৈতন্যদেবের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন পূর্ববঙ্গের শ্রীহট্টের (অধুনা সিলেট, বাংলাদেশ) আদি নিবাসী। তার পিতা জগন্নাথ মিশ্র শ্রীহট্ট থেকে দক্ষিণবঙ্গের নবদ্বীপে বেদাধ্যয়ন ও সংস্কৃত শাস্ত্রচর্চার জন্য এসে বসতি স্থাপন করেন।
পূর্বের সেন রাজবংশ-এর সময় নবদ্বীপ ছিল বাংলার অন্যতম রাজধানী।]:৩১–৩২ ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথমে বক্তিয়ার খিলজি এই নবদ্বীপ জয় করেই বাংলা জয়ের সূচনা করেন। নবদ্বীপের সমৃদ্ধি বহুকালের , গঙ্গাতীরে নবদ্বীপ তখন ছিল বাংলাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধ স্থান । বাণিজ্য ও বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র হিসাবে খ্যাতিলাভ করায় বাংলাদেশের নানা অঞ্চল থেকে গুণীজ্ঞানী ব্রাহ্মণপণ্ডিত ও জীবিকাপ্রার্থীদের আগমনে নবদ্বীপ খুবই বড় হয়ে উঠতে থাকে।
শ্রীচৈতন্যের জন্মের সমকালে দেশের মধ্যে রাজনৈতিক অশান্তি তেমন ছিল না। ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসন অধিকার করে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ দেশের শান্তি অক্ষুন্ন রাখেন।
হিন্দুদের মধ্যে উচ্চবর্ণের শিক্ষিতরা সরকারি চাকরি ইত্যাদি করে অভিজাত শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু অন্য-দিকে আবার দেখা যায় অনুন্নত সমাজের মানুষেরা অবহেলিত হচ্ছিল। ঐশ্বর্যের সঙ্গে দারিদ্র সহাবস্থান করছিল। উচ্চশ্রেণীর জীবনযাপনে “ম্লেচ্ছাচার” প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছিল। বৃন্দাবন দাসের বর্ণনা অনুসারে জানতে পারি, তখন মানুষ অত্যন্ত ধর্মবিমুখ হয়ে পড়েছিল। ধর্মকর্মের মধ্যে ছিল সারারাত জেগে “মঙ্গলচণ্ডীর গীত” শোনা, মদমাংস দিয়ে “যক্ষপূজা”, ধূমধাম করে বিষহরির পূজা আর পুত্রকন্যার বিয়েতে অর্থের অপচয় করা। এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে সে সময়ে সমাজের মধ্যে মূঢ়তা ও উদ্দেশ্যহীনতার মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছিল, যা একদল চিন্তাশীল ও ভাবুককে বিচলিত করে তুলেছিল। রামানন্দ বসু, রূপ-সনাতনের মত প্রতিষ্ঠিত, ধনী ও অভিজাত উচ্চ বংশের শিক্ষিত হিন্দুরা উদ্দেশ্যহীন ঐশ্বর্য প্রতিষ্ঠার অসারতা অনুভব করছিলেন।
চৈতন্যদেবের মাতামহ ও পিতৃ প্রদত্ত নাম ছিল শ্রীবিশ্বম্ভর মিশ্র। কিশোরাবস্থায় তাঁর পিতৃবিয়োগ ঘটে। প্রথম যৌবনে তিনি ছিলেন স্বনামধন্য পণ্ডিত। তাঁর প্রধান আগ্রহের বিষয় ছিল সংস্কৃত গ্রন্থাদি পাঠ ও জ্ঞানার্জন। ব্যাকরণশাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জনের পর মাত্র কুড়ি বছর বয়সে তিনি ছাত্রদের অধ্যয়নের জন্য একটি টোল স্থাপন করেন।তর্কশাস্ত্রে নবদ্বীপের নিমাই পণ্ডিতের খ্যাতি ছিল অবিসংবাদিত। দ্বিগ্বিজয়-কেশবকাশ্মীর নামক এক দিগ্বিজয়ী পণ্ডিতকে তরুণ নিমাই তর্ক-যুদ্ধে পরাস্ত করেন। জপ ও শ্রী হরির নাম কীর্তনের প্রতি তার আকর্ষণ যে ছেলেবেলা থেকেই বজায় ছিল, তা জানা যায় তার জীবনের নানা কাহিনি থেকে] তার প্রথম ধর্মপত্নী লক্ষ্মীপ্রিয়াদেবী কে বিয়ের পর একবার আদিনিবাস শ্রীহট্ট গিয়েছিলেন তিনি। পূর্ববঙ্গে পর্যটনকালে লক্ষ্মীপ্রিয়াদেবীর সর্পদংশনে মৃত্যু ঘটলে তিনি মায়ের অনুরোধে বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর সাথে পাণিগ্রহণ করেন।
এরপর গয়ায় পিতার পিণ্ডদান করতে গিয়ে পিতা ও প্রথম স্ত্রীর বিয়োগ কাতর নিমাই তার মন্ত্রদাতাগুরু স্বামী ঈশ্বর পুরীর সাক্ষাৎ পান। ঈশ্বর পুরীর নিকট তিনিশ্রীশ্রীগোপাল অষ্টাদশাক্ষর মহামন্ত্রেরাজে দীক্ষিত হন। এই ঘটনা নিমাইয়ের পরবর্তী জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।বাংলায় প্রত্যাবর্তন করার পর শিক্ষাভিমানী পণ্ডিত থেকে কৃষ্ণভাবময় ভক্ত রূপে তার অপ্রত্যাশিত মন পরিবর্তন দেখে অদ্বৈত আচার্যের নেতৃত্বাধীন স্থানীয় বৈষ্ণব সমাজ আশ্চর্য হয়ে যান। অনতিবিলম্বে নিমাই নদিয়ার বৈষ্ণব সমাজের এক অগ্রণী নেতায় পরিণত হন। হিন্দুধর্মের জাতিভেদ উপেক্ষা করে তিনি সমাজের নিম্নবর্গীয় মানুষদের বুকে জড়িয়ে ধরে “হরি বল” ধ্বনি বিতরণ করতেন এবং হরিনাম প্রচারে মৃদঙ্গ (শ্রীখোল)-করতাল সহযোগে অনুগামীদের নিয়ে নবদ্বীপের রাজপথে ‘নগর সংকীর্তন’-এ বের হতেন। অত্যাচারী জগাই ও মাধাইকে তিনি ভক্তেরূপে পরিণত করেন। তার প্রভাবে মুসলমান ‘যবন’ (হরিদাস ঠাকুর) সনাতন ধর্ম ও বৈষ্ণব মত গ্রহণ করেন এবং নবদ্বীপের শাসক চাঁদকাজী তার আনুগত্য স্বীকার করেন। চৈতন্যভাগবত-এ আছে, জাতিভেদের অসারতা দেখানোর জন্য তিনি শূদ্র রামরায়কে দিয়ে শাস্ত্র ব্যাখ্যা করিয়েছিলেন।
মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে কাঞ্চন নগরে স্বামী কেশব ভারতীর নিকট সন্ন্যাসাশ্রমে দীক্ষিত হওয়ার পর নিমাই পণ্ডিত শ্রীমন্ কৃষ্ণচৈতন্যদেব ভারতী নাম গ্রহণ করেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পর তিনি জন্মভূমি গৌড়বঙ্গ ও নদিয়া ত্যাগ করে কয়েক বছর ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থান যথা: নীলাচল, দাক্ষিণাত্য, পণ্ডরপুর, বৃন্দাবন আদিতে তীর্থাটন করেন। পথে সত্যবাই, লক্ষ্মীবাই নামে বারাঙ্গনাদ্বয় এবং ভীলপন্থ, নারেজী প্রভৃতি দস্যুগণ তার শরণ গ্রহণ করে। এইসব স্থানে ভ্রমণের সময় তিনি এতদাঞ্চলের ভাষা (যথা: ওড়িয়া, তেলুগু, মালয়ালম প্রভৃতি) বিশেষভাবে শিক্ষা করেন। এই সময় তিনি অশ্রুসজল নয়নে অবিরত কৃষ্ণনাম জপ ও কঠোর বৈরাগ্য সাধন (আহার-নিদ্রা ত্যাগ করে কৌপীনসার হয়ে) করতেন। জীবনের শেষ চব্বিশ বছরের অধিকাংশ সময় তিনি অতিবাহিত করেন জগন্নাথধাম পুরীতে।] ওড়িশার সূর্যবংশীয় সনাতনধর্মীয় সম্রাট গজপতি মহারাজা প্রতাপ রুদ্রদেব চৈতন্য মহাপ্রভুকে কৃষ্ণের সাক্ষাৎ অবতার মনে করতেন। মহারাজা প্রতাপরুদ্র চৈতন্যদেব ও তার সংকীর্তন দলের পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হয়েছিলেন। ভক্তদের মতে, জীবনের শেষপর্বে চৈতন্যদেব ভক্তিরসে আপ্লুত হয়ে হরিনাম সংকীর্তন করতেন এবং অধিকাংশ সময়েই ভাবসমাধিস্থ থাকতেন। ১৫৩৩ খ্রীষ্টাব্দে আষাঢ় মাসের শুক্লা সপ্তমী তিথিতে রবিবারে পুরীধামে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে তার লীলাবসান ঘটে তত।
চৈতন্য মহাপ্রভু (ডানে) ও নিত্যানন্দের (বামে) মূর্তি, ইসকন মন্দির, দিল্লি
গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের মতে, চৈতন্য মহাপ্রভু ঈশ্বরের তিনটি পৃথক পৃথক রূপের আধার: প্রথমত, তিনি কৃষ্ণের ভক্ত; দ্বিতীয়ত, তিনি কৃষ্ণভক্তির প্রবক্তা; এবং তৃতীয়ত, তিনি রাধিকার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ কৃষ্ণের স্বরূপ।ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত চৈতন্য জীবনীগ্রন্থগুলির বর্ণনা অনুসারে, তিনি একাধিকবার অদ্বৈত আচার্য ও নিত্যানন্দ প্রভুকে কৃষ্ণের মতো বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেন
্য
চৈতন্যদবের দেহকান্তি ও স্বভাব সম্পর্কিত একটি পদ নিম্নরূপ:
“ প্রকান্ড শরীর শুদ্ধ কাঞ্চন বরণ
আজানুলম্বিত ভুজ কমল লোচন।
বাহু তুলি হরি বলি প্রেমদৃষ্ট্যে চায়
করিয়া কল্মষ নাশ প্রেমেতে ভাসায়। ”
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অবতার গ্রহণের বিষয়ে তিনটি মত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তা হল:
নিয়মে অবতার গ্রহণ
যুগধর্ম প্রবর্তন
অতৃপ্ত প্রেমরস আস্বাদন।
জীবনী কাব্যগুলোতে মূলত এই তিনটি কারণের কথাই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। (তন্ময় মণ্ডল) [৩১]
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য ছিলেন শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় উল্লিখিত দর্শনের ভিত্তিতে ভক্তিযোগ ভাগবত দর্শনের একজন বিশিষ্ট প্রবক্তা ও প্রচারক।[৪] তিনি বিশেষত রাধা ও কৃষ্ণের রূপে পরম সত্ত্বার উপাসনা প্রচার করেন এবং জাতিবর্ণ নির্বিশেষে ব্রাহ্মণ থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পর্যন্ত শ্রীহরি নাম ও ভক্তি এবং হরেকৃষ্ণ হরেরাম মহামন্ত্র যাহা শ্রীকলিসন্তরন উপনিষদের ও শ্রীপদ্মপুরাণের হরপার্বতী সংবাদে উল্লেখিত মহামন্ত্রটি জনপ্রিয় করে তোলেন।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment