∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
=================================
Doinik Sabder Methopath
Vol -291. Dt -23.02.2021
১১ ফাল্গুন, ১৪২৭. মঙ্গলবার
++++++++++++++++++++++++++++++++++
কালিপ্রসন্ন ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৪০ সালে উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত "সিংহ" পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন নন্দলাল সিংহ। তার পিতামহ জয়কৃষ্ণ সিংহ ছিলেন হিন্দু কলেজের একজন পরিচালক। কালীপ্রসন্নের মাত্র ছয় বছর বয়সে তার পিতা মারা যান। বাবু হরচন্দ্র ঘোষ, যিনি নিম্ন আদালতের বিচারক ছিলেন, পিতার মৃত্যুর পর তার অভিভাবক হিসাবে নিযুক্ত হন।
শিক্ষাজীবন
বর্তমানে প্রেসিডেন্সি কলেজ হিসাবে পরিচিত, তত্কালীন হিন্দু কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন কালীপ্রসন্ন সিংহ । ১৮৫৭ সালে তিনি কলেজ ত্যাগ করেন। তিনি বাড়িতেই তার ইংরেজি, বাংলা ও সংস্কৃত শিক্ষা অব্যাহত রেখেছিলেন। তিনি মিস্টার ক্রিকপ্যাট্রিক (ইংরেজি: Mr.Kirkpatrick) নামক একজন ইউরোপীয় শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে তার ইংরেজির জ্ঞান উন্নত করেছিলেন। পরবর্তী জীবনে তিনি একজন লেখক, সম্পাদক, প্রকাশক, একজন লোকহিতৈষী, একজন সামাজিক কর্মী, এবং শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির একজন মহান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অবদান রেখে গেছেন।
তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনকালে, কালীপ্রসন্ন অবিশ্বাস্য বহুমুখী গুণাবলির একজন মানুষ ছিলেন। খুব অল্প বয়স থেকে তিনি অদ্ভুত স্মরণশক্তির অধিকারী ছিলেন, মাত্র একবার দেখলে কিংবা শুনলেই তিনি তা মনে রাখতে পারতেন। মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তার বাংলাভাষা চর্চার জন্য বিদ্যোৎসাহিনী সভা প্রতিষ্ঠা এই ক্ষমতার অদ্ভুত ক্ষমতার একটি সাক্ষ্য বহন করে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই তরুণের অনেক বৃদ্ধ সহযোগীদের সঙ্গে একাত্মতা এবং এই ধরনের বিনোদনমূলক থিয়েটারের সংগঠন হিসাবে তাদের এই কাজে ব্রতী করতে পারা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। হুতোম প্যাঁচার নক্শা হল তার সেই অমর সৃষ্টি যেখানে ঊনবিংশ শতকের কলকাতার বাবু সম্প্রদায়ের একটি পরিষ্কার চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তার উপন্যাস সেই সময় (Those Days) লেখার সময়, প্রতীকী হিসাবে কালীপ্রসন্ন চরিত্রের পুনঃনির্মাণ করে নবীনকুমার নামে সমকালিক চরিত্রের অন্তর্ভুক্তি ঘটিয়েছেন।
কালীপ্রসন্ন ১৮৫৪ সালে বাগবাজারের লোকনাথ বসুর কন্যার সঙ্গে বিবাহ করেন, কিন্তু কয়েক বছর পর তার স্ত্রী বিয়োগ হয়। কিছুদিন পরে, কালীপ্রসন্ন রাজা প্রসন্ননারায়ণ দেবের পৌত্রী এবং চন্দ্রনাথ বসুর কন্যা শরত্কুমারী দেবীকে বিবাহ করেন।
রচনা কর্ম :
বাবুনাটক (১৮৫৪)
বিক্রমোর্বশী নাটক (১৮৫৭)
সাবিত্রী-সত্যবান নাটক (১৮৫৮)
মালতী-মাধব নাটক (১৮৫৯)
হিন্দু পেট্রিয়ট সম্পাদক মৃত হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের স্মরণার্থ কোনো বিশেষ চিহ্ন স্থাপন জন্য বঙ্গবাসিবর্গের প্রতি নিবেদন (১৮৬১)
হুতোম প্যাঁচার নকশা (১৮৬১)
পুরাণ সংগ্রহ বা কালীসিংহের মহাভারত (মহাভারত অনুবাদ, ১৮৫৮-৬৬)
বঙ্গেশ বিজয় (১৮৬৮)
শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতা (১৯০২)
কালীপ্রসন্ন বিদ্যোৎসাহিনী পত্রিকা, পরিদর্শক,সারবত্ত্বা প্রকাশিকা ও বিভিধার্থ সংগ্রহ প্রভৃতি পত্রিকার মত পত্রিকাগুলির সম্পাদনা অথবা প্রকাশনা করেছিলেন। পরিদর্শক পত্রিকাটি ছিল একটি বাংলা দৈনিক যেটা শুরু করেছিলেন জগন্মোহন তর্কালঙ্কার এবং মদনগোপাল গোস্বামী। সংবাদপত্রটির উন্নতির জন্য, কালীপ্রসন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন। সংবাদপত্রটির মান সেই সময় এগিয়ে ছিল, এবং কৃষ্ণদাস পাল লিখেছিলেন, "তিনি একটি প্রথম শ্রেণীর স্বদেশীয় দৈনিক সংবাদপত্রও শুরু করলেন, যার মত আমরা এখনো দেখিনি"। সুপরিচিত স্থানীয় ভদ্রলোক বাবু রাজেন্দ্রলালের দ্বারা বিভিধার্থ সংগ্রহ প্রথম সম্পাদিত হয়েছিল। তার পরে পত্রিকাটি কালীপ্রসন্ন সিংহের তত্ত্বাবধানে পুনর্জাগরিত হয়েছিল। ১৮৬২ সালে তার সবচেয়ে প্রশংসিত রচনা হুতোম প্যাঁচার নক্শা প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি এই বইয়ে হুতোম প্যাঁচা ছদ্মনামে এক রসাত্মক পদ্ধতিতে তত্কালীন মধ্যবিত্ত সমাজের কার্যকলাপের সমালোচনা করেছিলেন। তৎকালীন কলকাতার আচার ব্যবহার, পালা-পার্বণ, সভা-সমিতি প্রভৃতি সামাজিক উৎসব এবং নানা ঘটনা হুতোম প্যাঁচার নক্শায় সরসভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। হুতোম প্যাঁচার নক্শা ছিল কথ্য ভাষায় লেখা প্রথম বাংলা বই। এই বইতে কোন কোন মান্য ব্যক্তির প্রতি কটাক্ষ করা হয়েছিল তাই এর প্রতিবাদে এইরকমের দু-একটি বইও লেখা হয়েছিল। তিনি তত্তবোধিনী পত্রিকা, সম্প্রকাশ, মুখার্জ্জীস ম্যাগাজিন, বেঙ্গলি এবং হিন্দু প্যাট্রিয়ট -এর মত পত্রিকাগুলিকেও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিলেন।
এছাড়াও ১৮৬৩ সালে কালীপ্রসন্ন সিংহকে অবৈতনিক শাসক (ইংরেজি: Honorary Magistrate) ও ন্যায়পাল (ইংরেজি: Justice of Peace) হিসাবে নিয়োগ করা হয়। তিনি একদা কিছু সময়ের জন্য কলকাতার মুখ্য পুরশাসক (ইংরেজি: Chief Presidency Magistrate) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কলকাতার পুরাধ্যক্ষ (ইংরেজি: Municipal Commissioner) নির্বাচিত হন। তাঁর ব্যয়ের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ ছিলনা এবং তাঁর দানেরও কোন শেষ ছিলনা, যার ফলে কালীপ্রসন্ন তার জীবনের শেষ কয়েক দিন সময় বিপুল আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে কাটিয়েছিলেন।
মৃত্যু
তিনি তাঁর বিশাল অবদান পিছনে ফেলে রেখে, মাত্র ২৯ বছর বয়সে ২৪শে জুলাই ১৮৭০ ইহলোকের মায়া কাটিয়ে পরলোক গমন করেন।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment