Wednesday, 24 February 2021

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
          আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চা 
                  পর্ব -২
খেজুরির লৌকিক দেব দেবী
       ( খেজুরি২ ব্লক এলাকা)

=================================
      Doinik Sabder Methopath
      Vol -292. Dt -24.02.2021
        ১১ ফাল্গুন, ১৪২৭. বুধবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
প্রায় পাঁচশো বছর আগে খেজুরির ভূস্তর বসবাসযোগ্য হলে হুগলি নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে প্রথমে বসতি স্থাপন করে জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ । মাছ ধরে জীবনধারণ যাদের উদ্দেশ্য ছিল ।পরবর্তী সময়ে আসে চাষী সম্প্রদায়ের মানুষ। চাষ করে যারা জীবিকা নির্বাহ করত। সাধারণভাবে জেলে কৈবর্ত ও হেলে কৈবর্ত সহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নানান মানুষ ধীরে ধীরে এই বন্দর এলাকায় বসবাস শুরু করেন।  হিজলি ও খেজুরি দুটি বন্দর গড়ে ওঠে সময়ের বিবর্তনে। মানুষজনের বিশ্বাস ও আশা ভরসা কে সামনে রেখে গড়ে ওঠে ধর্মভাবনা।  এই ধর্ম ভাবনার বিষয় জুড়ে হিন্দু মুসলমান খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরা গড়ে তোলেন তাদের লৌকিক দেব দেবীর নানান ইতিহাস। যাদেরকে ঘিরে সারা বছর নানান অনুষ্ঠান পূজো পার্বণ লেগেই থাকে খেজুরি প্রত্যন্ত অঞ্চলে। মানুষের মধ্যে জাত পাত ভুলে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়। মিলনের পর্ব গড়ে ওঠে । নানান জীবিকার মানুষ অংশ নেয় এইসব উৎসব অনুষ্ঠানে। তাদের জীব-বৈচিত্র, আর্থসামাজিক পরিমণ্ডল ও ভালোলাগার বিষয়গুলিকে সামনে রেখে।
   পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহাকুমার অধীনে খেজুরি থানা. হুগলি নদীর মোহনার সামান্য উত্তর দিকের পশ্চিম তটবর্তী অঞ্চল খেজুরি।এই থানার দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে বয়ে চলেছে রসুলপুর নদী, ওপারে কাঁথি দু'নম্বর ব্লক। ওই থানার উত্তর দিকে নন্দীগ্রাম থানা ও পশ্চিম ভূপতি নগর থানা। পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে যাচ্ছে হুগলি নদীর স্রোতধারা চারিদিকের সীমা বন্দি এই বিভাগটি হুগলি মোহনার জলরাশির মধ্য থেকে উত্থিত একটি ভূমি ভাগ। এই ভূখণ্ডটির জন্ম প্রায় 400 বছর আগে ।বসবাসযোগ্য হওয়ার পর এখানে মুসলমান রাজত্ব চলে কয়েক দশক ব্যবসা সূত্রে ওলন্দাজ পর্তুগিজ ইংরেজ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে শত বৎসর চালান স্বাধীনতা আন্দোলন থানা বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। স্বাধীনতা পরবর্তী এলাকাটি তপশিলি এলাকা হিসেবে পরিচিত হয় ।১৯৮১ সালে খেজুরি থানা দুটি ব্লকে বিভক্ত হয়- খেজুরি ১ ও খেজুরি ২ ব্লক.
    মূলত হিন্দু মুসলমান ধর্মের মানুষজনের বসবাস থাকলেও দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে আচার-আচরণ ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে কিছু ভাগ আছে মুসলমানদের মধ্যে শিয়া-সুন্নি বিভাজন যেমন আছে তেমনি হিন্দুদের মধ্যে ব্রাহ্মণ বৈষ্ণব কৈবর্ত কায়স্থ পৌন্ড্রক্ষত্রিয় ধোপা নাপিত হাড়ি মাহিষ্য করণ ভট্টাচার্য সম্প্রদায়ও রয়েছে এসব কে কেন্দ্র করে জাতিদের দ্বন্দ্ব একসময় তীব্র ছিল ।এর প্রভাব ধর্মচর্চায় পড়েছে।  মুসলমানদের মধ্যে রয়ে গেছে দুটি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যার প্রভাব মসজিদে আমরা লক্ষ্য করি। প্রথম শনিবার এক মুসলমান সম্প্রদায় ওখানে গিয়ে ধর্ম পালন করে অন্য সম্প্রদায় তৃতীয় শনিবার গিয়ে ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করেন। হিন্দুদের ক্ষেত্রে জাত পাতের ভেদাভেদ কে কেন্দ্র করে উচ্চবর্ণ নিম্নবর্ণের ভেদাভেদ সৃষ্টি হওয়ায় মন্দির গড়া নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ ছোট-বড় এসব এখনো রয়ে গেছে তবুও মানুষের মধ্যে ধর্ম ভাবনার প্রবল প্রকাশ লক্ষ্য করি নানান ধর্মীয় উৎসবের মধ্য দিয়ে,লোক উৎসবের মধ্য দিয়ে।
      প্রাচীন খেজুরির ধর্মভাবনা থেকে আধুনিক খেজুরির জনগণ কিভাবে নিজেদেরকে প্রাণিত করেছে,  উদ্বুদ্ধ করেছে তার একটি ইতিহাস রচনার প্রয়োজন। সেই কথা মাথায় রেখে খেজুরি 2 ব্লক এলাকার 5 টি অঞ্চলে পূজিত লৌকিক দেব দেবীর একটি তালিকা প্রকাশ করা হলো।

আগামী দিনে এইসব দেবদেবীর উদ্ভব, মহিমা পুজোর পদ্ধতি, বিশ্বাস ও সংস্কার, ভক্তদের অভিব্যক্তি সহ নানান বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে। 


No comments: