জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
গিরিশচন্দ্র ঘোষ
=================================Doinik Sabder Methopath
Vol -296. Dt -28.02.2021
১৪ ফাল্গুন, ১৪২৭. রবিবার
÷÷÷÷÷×÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷×÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
১৮৪৪ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি, কলকাতার বাগবাজারে গিরিশচন্দ্রের জন্ম। তিনি ছিলেন তাঁর পিতামাতার অষ্টম সন্তান। প্রথমে হেয়ার স্কুল ও পরে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি বিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। পবর্তীকালে ইংরেজি ও হিন্দু পুরাণে জ্ঞান আর্জন করেন।
কর্মজীবন
১৮৬৭ সালে শর্মিষ্ঠা নাটকের গীতিকার হিসাবে নাট্যজগৎতে প্রথম যুক্ত। দু'বছর পরে সধবার একাদশিতে অভিনয় করে বেশ সুনাম অর্জন করে ছিলেন। কলকাতায় ন্যাশানাল থিয়েটার নামে তার একটি নাট্য কোম্পানি ছিল। ১৮৮৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর নটী বিনোদিনীকে নিয়ে তিনি স্টার থিয়েটার, কলকাতা চৈতন্যলীলা নাটকটি মঞ্চস্থ করেন। বিনোদিনীর ইচ্ছা ছিল যে নতুন থিয়েটার তৈরি হবে তা বিনোদিনীর নামে বি-থিয়েটার হবে । কিন্তু কিছু মানুষের প্রতারনার শিকার তিনি হন । যাঁদের মধ্যে তার নিজের অভিনয় গুরু গিরিশচন্দ্র ঘোষ ছিলেন । রামকৃষ্ণ পরমহংস এই নাটক দেখতে এসেছিলেন। এরপর উভয়েই তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
কথিত আছে গিরিশ ঘোষের মন প্রচণ্ড দ্রুতগতিতে এবং অদ্ভুত ভাবে চিন্তা করতে পারতো। তার চিন্তা কিংবা আইডিয়া বা শব্দাবলী তাৎক্ষনিক লিখে রাখার জন্য তিনি দেবেন্দ্রনাথ মজুমদারকে সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। দেবেন্দ্র সারাক্ষণ তার কাছে তিনটি পেন্সিল প্রস্তুত রাখতেন, দোয়াত কলম রাখতেন না। কারণ কলমে কালি ভরার মত সময়টুকুও নাকি তিনি পেতেন না। কোনও কথা বুঝতে না পারলে ফের জিজ্ঞেস করলে গিরীশবাবু রেগে যেতেন, কারণ তাতে তার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটতো। তাই কোন শব্দ বুঝতে না পারলে তার নির্দেশ অনুযায়ী দেবেন্দ্র সেখানে ডট বসিয়ে যেতেন, যাতে পরে তা জেনে নিতে পারেন।
চলচ্চিত্র
কাজী নজরুল ইসলাম গিরিশচন্দ্রের ভক্ত ধ্রুব উপন্যাসটি চলচ্চিত্রায়িত করেন। ১৯৫৬ সালে মধু বসুর পরিচালনায় গিরিশচন্দ্রের অবলম্বনে নির্মিত মহাকবি গিরিশচন্দ্র চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।
নাটকগুলো-
পৌরানিক নাটক
রাবণবধ (১৮৮১)
সীতার বনবাস
লক্ষ্ণণ বর্জন
সীতাহরণ
পান্ডবের অজ্ঞাতবাস
জনা (১৮৯৪)।
চরিত্র নাটক
চৈতন্যলীলা
বিল্বমঙ্গল ঠাকুর
শঙ্করাচার্য
রোমান্টিক নাটক
মুকুলমুঞ্জরা
আবু হোসেন
সামাজিক নাটক
প্রফুল্ল(১৮৮৯)
মায়াবসান
বলিদান
ঐতিহাসিক নাটক
সিরাজদ্দৌলা
মীর কাসিম
ছত্রপতি শিবাজী
উপাধি
১৮৭৭ সালে মেঘনাদবধ কাব্যে রামচন্দ্র ও মেঘনাদ উভয় ক্ষেত্রে অভিনয় জন্য সাধারণী পত্রিকার সম্পাদক অক্ষয়চন্দ্র সরকার তাকে 'বঙ্গের গ্যারিক' আখ্যায় ভূষিত করেন।
গিরিশচন্দ্র সম্পর্কে অভিযোগ ছিল মদ্যপ ও স্বেচ্ছাচারী। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম অন্তরঙ্গ শিষ্যে পরিণত হন। “শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত” গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে, কিভাবে শ্রীরামকৃষ্ণের সংস্পর্শে আসার পর গিরিশচন্দ্রের নৈতিক পরিবর্তন ঘটে এবং তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠতম শিষ্যদের একজন হয়ে ওঠেন৷।
মৃত্যু
১৯১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এই মহান অভিনেতা ও নাট্যকার কলকাতায় পরলোক গমন করেন।
বিশিষ্ট বঙ্গ সন্তান সংগীতস্রষ্টা, কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যপরিচালক ও নট। বাংলা থিয়েটারের স্বর্ণযুগ মূলত তাঁরই অবদান।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment