Wednesday, 3 February 2021

দৈনিক শব্দের মেঠোপথ

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
       জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
========∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆=========
      Doinik Sabder Methopath
      Vol -271. Dt -04.02.2021
       ২১ মাঘ, ১৪২৭. বৃহস্পতিবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷∆∆∆∆∆∆∆÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

বাংলা সাহিত্যে চল্লিশের দশকের প্রগতিশীল সাহিত্যধারার বিচিত্র প্রতিভাধর কথাসাহিত্যিক ,নাট্যকার, সমালোচক, সাংবাদিক , কিশোর
সাহিত্যিক হলেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। মনে করা হয় তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের পরে তিনি ই যোগ্য উত্তরসূরি । শনিবারের চিঠিতে নিয়মিত লেখক।  আসল নাম তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়।ছদ্মনাম 'সুনন্দ'। কিশোর সাহিত্যে সৃষ্ট তাঁর কাল্পনিক চরিত্র "টেনিদা" অসামান্য কীর্তি স্থাপন করেছে। আজ তাঁর শুভ জন্মদিন।
             ১৯১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর জেলার বালিয়াডিঙ্গিতে তাঁর জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বরিশাল জেলার বাসুদেবপুরের নলচিরায়। পিতা প্রমথনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন দারোগা।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৩ সালে দিনাজপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। তারপর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হলেও রাজনৈতিক কারণে ১৯৩৫ সালের ১ মে তাঁকে ফরিদপুর ত্যাগ করতে হয় এবং রিভোলিউশনারি সাসপেক্ট হিসেবে অন্তরীণ থাকার কারণে তিনি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারেননি। পরে তিনি বরিশালের বিএম কলেজে দ্বিতীয় বার্ষিক শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং নন-কলেজিয়েট ছাত্র হিসেবে আইএ পাস করেন (১৯৩৬)। একই কলেজ থেকে তিনি ডিস্টিংকশনসহ বিএ (১৯৩৮) পাস করেন। তারপর ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফল অর্জন করায় তিনি ‘ব্রহ্মময়ী স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৬০ সালে তিনি ডিফিল ডিগ্রি অর্জন করেন।

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় আনন্দচন্দ্র কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর জলপাইগুড়ি (১৯৪২-৪৫) ও সিটি কলেজে (১৯৪৫-১৯৫৫) অধ্যাপনা করার পর ১৯৫৬ সাল থেকে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ছেলেবেলা থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। তার প্রথম লেখা ছাপা হয় মাস পয়লা শিশু মাসিকে। সন্দেশ, মুকুল, পাঠশালা, শুকতারা প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখেছেন। সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় সুনন্দর জার্নাল লিখে সুখ্যাতি অর্জন করেন। বাঙালির জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, রোজকার সমস্যা ও রাজনীতি নিয়ে লেখা নিয়মিত এই জার্নাল অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল বাঙালি পাঠকের কাছে। এ সময় তিনি বড়দের জন্য আনন্দবাজার, বিচিত্রা, শনিবারের চিঠি ও চতুরঙ্গে লেখালেখি করেন। তার সাহিত্য জীবন শুরু হয় কাব্যচর্চা দিয়ে। পরে তিনি গল্প-উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। বড়দের জন্য রচিত প্রথম প্রকাশিত ‘উপনিবেশ’ ছাপা হয় মাসিক ভারতবর্ষে। ওটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে। তার উপন্যাস-গল্প রচনার অনুপ্রেরণা যোগান উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, সুধাংশুকুমার রায় চৌধুরী, বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়, মন্মথ সান্যাল, সজনীকান্ত দাস ও ফনীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।

তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হলো: 
উপন্যাস :
উপনিবেশ (৩ খন্ড, ১৯৪৪-৪৭), তিমির তীর্থ। স্বর্ণ সীতা। সম্রাট ও শ্রেষ্ঠী (১৯৪৪), মন্দ্রমুখর (১৯৪৫), সূর্যসারথি। বৈতালিক। বিদিশা। শিলালিপি (১৯৪৯), পদসঞ্চার, লালমাটি (১৯৫১), মহানন্দা, কৃষ্ণপক্ষ (১৯৫১),, অসিধারা (১৯৫৭), মেঘ রাগ, বিদূষক, নিশিযাপন ,অমাবস্যার গান, সন্ধ্যার সুর পাতালকন্যা, নির্জন শিখর, তৃতীয় নয়ন, কাচের দরজা, আলোকপর্ণা প্রভৃতি।

ছোট গল্প :
    'ছোটগল্পের সীমারেখা' তে তিনি লিখেছেন-
            " ছোট গল্প গড়ে উঠেছে দুটি জিনিসের মিশ্রণে লেখক এর নিজস্ব একটি জগত জীবন আছেই - profound হোক আর নাই হোক তাই হল তাঁর দর্শন।আর জীবন থেকে নিজস্ব প্রবণতা অনুযায়ী যে সব উপকরণ তিনি আহরণ করে নিচ্ছেন তারা সেই দর্শনের দ্বারা বিরঞ্জিত হয়ে শিল্প হয়ে উঠেছে তাই একালের ভালো গল্প কেবল কৌতুক সৃষ্টির জন্য ঘটনা নির্মাণ করছে না কোনো বিশেষ বক্তব্য প্রচার এর জন্য গল্পকে বহন করছে না( বক্তব্য তো লেখক এর জীবন দৃষ্টি থেকে স্বয়ং প্রকৃত হবে) আসলে তার একটি মাত্রই প্রবণতা. বস্তু নির্ভর হয়েও বাস্তবতা দুরাচারী তা প্রতীকী।"

                      গল্পগুলি:
" বীতংস, জন্মান্তর, ভাঙ্গাবন্দর, দুঃশাসন, ভাটিয়ালী (১৯৫৭), একজিবিশন (১৯৬১), ছায়াতরী, ঘূর্ণি, আলেয়ার রাত, ভাঙ্গা বন্দর, ভোগবতী, কালাবদর,
চারমূর্তি ,সাপের মাথার মণি ,রাতের মুকুল ,বনজ্যোৎস্না, অষ্টাদশী" প্রভৃতি
কিশোর গল্প:
   সপ্তকাণ্ড , ছুটির আকাশ, খুশির হাওয়া, গল্প বলি গল্প শোনাও, রাঘবের জয়যাত্রা, কম্বল নিরুদ্দেশ, পঞ্চাননের টেনিদার,  পটলডাঙ্গার টেনিদা, টেনিদা দি গ্রেট , টেনিদা ও ভুতুড়ে কামরা, ক্রিকেটার টেনিদা, টেনিদার কাণ্ডকারখানা প্রভৃতি

প্রবন্ধগ্রন্থ সাহিত্য ও সাহিত্যিক (১৯৫৬), সাহিত্যে ছোটগল্প (১৯৫৬), কথাকোবিদ রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৫), ছোটগল্পের সীমারেখা (১৯৬৯); 
রম্যরচনা :
সুনন্দর জার্নাল (১৯৬৬); কিশোরগ্রন্থ সপ্তকান্ড, অন্ধকারের আগন্তুক, ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৫২), ছুটির আকাশ, খুশির হাওয়া, ঝাউ বাংলোর রহস্য, পঞ্চাননের হাতি, পটলডাঙ্গার টেনিদা, গল্প বলি গল্প শোন, অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ, টেনিদার অভিযান (১৯৪১) ইত্যাদি।
 তাঁর রচিত নাটক ভাড়াটে চাই এবং আগন্তুক সে সময় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও রচনা করেন। তাঁর রচিত বহু গান, চলচ্চিত্র ও রেকর্ডে গৃহীত হয়েছে।

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় শনিবারের চিঠির নিয়মিত লেখক ছিলেন। জীবনের শেষ সময়ে তিনি সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় ‘সুনন্দ’ ছদ্মনামে লিখতেন। ইতিহাসবোধ ও স্বাদেশিকতা তাঁর রচনার উপজীব্য। বাংলার নিসর্গ ও নদনদীর তরঙ্গমালা, বাঙালির আদিম ও আরণ্যক জীবন তাঁর উপন্যাসে রোম্যান্টিকতার নিরিখে মনোজ্ঞভাবে চিত্রিত হয়েছে। তাঁর ছোটগল্পগুলি নাটকীয় ব্যঞ্জনায় সমৃদ্ধ

বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে আনন্দ পুরস্কার (১৯৪৬) ও সাপ্তাহিক বসুমতীর পক্ষ থেকে সম্বর্ধনা (১৯৬৮) জ্ঞাপন করা হয়।

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ৬ই নভেম্বর ৫৩ বছর বয়সে মারা যান।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆

No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...