Friday, 26 March 2021

                     মল্লিকা সেনগুপ্ত
১.
" হাজার বছর ধ’রে কেন তুমি সূর্য দেখতে দাওনি
যে মাটিতে তুমি দাঁড়িয়ে রয়েছ তাঁর অপমান ক’রো না
পুরুষ আমি তো কখনো তোমার বিরুদ্ধে হাত তুলিনি।”
২ ।
"মেয়েটির কাছ থেকে একদিন তোমরা
কেড়ে নিয়েছিলে বেদ পড়বার সুযোগও
তোমরা বললে মেয়েরা শুধুই ঘরণী
মেয়েদের ভাষা, শূদ্রের ভাষা আলাদা".
৩.
"কখনো বিপ্লব হ’লে
পৃথিবীতে স্বর্গরাজ্য হবে
শ্রেণীহীন রাষ্ট্রহীন আলোপৃথিবীর সেই দেশে
আপনি বলুন মার্কস, মেয়েরা কি বিপ্লবের সেবাদাসী হবে ? "
৪.
"পুরুষের দেহে এক বাড়তি প্রত্যঙ্গ
দিয়েছে শ্বাশত শক্তি, পৃথিবীর মালিকানা তাকে
ফ্রয়েড বাবুর মতে ওটি নেই বলে নারী হীনমন্য থাকে
পায়ের তলায় থেকে ঈর্ষা করে পৌরুষের প্রতি।”
৫.
" সুপুরুষ এসেছিল, আসেনি নারীরা
আমি সিন্ধুর মেয়ে, যোদ্ধা ও মানুষ
কালো মেয়েদের পায়ে তামার গগন
এত দীপ্যমান চোখে ঘোড়সওয়ারেরা
গর্ভে অগ্নি ঢেলে দিল, জন্মাল কার্তিক …”
৬.
"গণিকালয়, মীনবাজার তৈরী করে কারা ?
প্রতিযুগেই ইন্দ্র কেন উর্বশীর অধীশ্বর হন ?”

                       "শুধু মেয়েদের জন্যই কবিতা লিখেছেন মল্লিকা৷ তাঁর কবিতায় বার বার কথা বলেছে হাঘরে আর দেবদাসীরা৷ যদিও মল্লিকা সেনগুপ্তর কবিতা সম্পর্কে একটি লাইনও লেখা হলে মেয়েদের কথাই আগে চলে আসে কারণ যখন কবিতা লিখতে এসেছিলেন মল্লিকা তখন হাঘরেদের নিয়ে কবিতা লেখার কলমের অভাব ছিল না, কম পড়েছিল মেয়েদের কথা বলতে পারে এমন কলম।"

*** মধুর কবিতার বিরুদ্ধে, কৃত্তিবাস, জানুয়ারি, ১৯৯৯ , তিনি বলেছেন -

" চিনি বনাম নুন, অতিমধুর বনাম অনতিমধুরের চিরাচরিত দ্বন্দ্ব আজও মরে যায়নি। শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে বাংলা কবিতা যেন এক প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড়িয়েছে, যেন শিবির বিভাজনের উত্তাপ ভেসে আসছে হাওয়ায় – মধুর কবিতা না রক্তমাংসে নোনা কবিতা- আসলে এভাবে কোনও বিভাজন হয় না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেই ঠিক করে নিতে হবে বাংলা কবিতাকে তারা গুড়ের নাগরি বানাবে না রক্তমাংসে গড়া প্রাণের সন্তান।”


জন্ম ২৭ মার্চ ১৯৬০ কৃষ্ণনগর, নদীয়া।

তাঁর কবি জীবন শুরু ১৯৮১ সালে এবং সেই থেকে তিনি ১১টি কবিতার বই, দুটি উপন্যাস এবং বিভিন্ন প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যা কেন্দ্রে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। 
৯০ এর দশকে তিনি অপর্ণা সেন সম্পাদিত 'সানন্দা' পত্রিকার কবিতা বিভাগের সম্পাদনা করতেন। 
       দাম্পত্য সম্পর্ক প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক , বাংলা কবিতা একাডেমির সম্মানিত সভাপতি সুবোধ সরকার 'এর সঙ্গে।

                 নারীজীবনকে, তার যন্ত্রণা, লড়াই ও মহিমাকে তিনি আগেই কবিতায় ধরেছিলেন পঞ্চাশ, ষাট আর সত্তর দশকের বেশ কয়েকজন মহিলা কবি৷ কিন্তু তাঁরা কেউই বিষয় ও ভাষায় তার মতো অতখানি স্পষ্ট ছিলেন না৷ আর্থসামাজিক কারণেই তাঁরা অতখানি স্পষ্ট হতে পারেননি৷ প্রথাগত ভাবে কবিতা বলতে বাঙালি যা বোঝে সেই শুদ্ধ কবিতা রচনার দায়ও অনেক সময়েই তাঁদের প্রতিবাদের পায়ে পরিয়েছিল বেড়ি, তাঁদের রাগকে করে তুলেছিল সাংকেতিক৷ এই দায় তিনি বহন করেননি৷ অবশ্য একেবারেই করেননি বললে ভুল বলা হবে৷ ‘চল্লিশ চাঁদের আয়ু’কে তো বটেই এমনকী ‘আমি সিন্ধুর মেয়ে’কেও গত শতাব্দীর পঞ্চাশ বা ষাট দশকের মহিলা কবিদের কবিতার অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে৷ নতুন মল্লিকার দেখা মিলল যে বইটিতে সে বইটির নাম ‘অর্ধেক পৃথিবী’৷ ‘কবিতা সমগ্র’-এর ভূমিকায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যথার্থই লিখেছেন, ‘১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয় মল্লিকার ‘অর্ধেক পৃথিবী’৷ এই গ্রন্থে তার কিছু কিছু কবিতা অন্যদিকে মোড় নিয়েছে৷’ ‘অর্ধেক পৃথিবী’তে তিনি আর শুদ্ধ কবিতার ঘরানায়  তাঁর কবিতাকে পঙ্গু করে রাখেননি, বর্শাফলকের মতো তাঁর কাব্যভাষা ছিন্ন করেছে সাংকেতিক কুয়াশা, আলো ফেলেছে এমন কিছু কিছু বিষয়ের উপর, যে বিষয়গুলি তাঁর আগে আর অন্য কোনও কবির কলমে ঠাঁই পায়নি৷  কিন্তু এতখানি স্পষ্ট ভাষার গতি  ? কবিতাগুলির ধারাবাহিক পাঠ থেকে এটা বেশ বোঝা যায় যে দিন যত গিয়েছে কবি ততই চেয়েছেন লড়াইয়ের ময়দানে তাঁর কবিতা কেবল একটি মেয়ের বন্ধুই নয়, হয়ে উঠুক তার হাতিয়ারও, আর কে না জানে হাতিয়ার যতই ধারালো , ‘ততই কার্যকরী!’ একথা মানতেই হবে যে আজকের তরুণী কবিরা যে ভাষায় কবিতা রচনা করেন সেই ভাষাটির নির্মাণে মল্লিকা সেনগুপ্তর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷তাই কবি সংযুক্তা দাসগুপ্তের ভাষায় "তার কবিতায় নারীস্বত্বা কেবলমাত্র অন্তর্ভূতি সচেতনতা হিসেবেই থেকে যায় না, সেটা প্রস্ফুটিত হয় সমস্ত প্রান্তিক নারীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক স্বতস্ফুর্ত প্রতিবাদ।" 

পুরস্কার ও সম্মাননা :
১৯৯৮ ভারত সরকারের জুনিয়র রাইটার ফেলোশিপ।
১৯৯৮ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সুকান্ত পুরস্কার।
২০০৪ পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি অনীতা-সুনীল বসু পুরস্কার।

মৃত্যু : ২৮ মে ২০১১ কলকাতা।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
Doinik Sabder Methopath
Vol -323. Dt -27.03.2021
১৩ চৈত্র, ১৪২৭. শনিবার
===============$$$$$$============


   

No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ।‌ একজন বাঙালি ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ। Dt -26.11.2024. Vol -1059. Tuesday. The blogger post in literary e magazine.

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়   (২৬ নভেম্বর ১৮৯০ — ২৯ মে ১৯৭৭)  একজন বাঙালি ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ.  মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্...