জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য
সমরেশ মজুমদার
উজ্জ্বল উদ্ধৃতিগুলি যে
প্রতিভাকে চিনিয়ে দেয় :
১) "বিষয় সম্পত্তি মানুষকে নির্লজ্জ করে । বিশেষ করে আর্থিক দুরবস্থায় পড়লে এবং সামনে কোন নির্দিষ্ট উপায় না থাকলে সে অসহায় হয়ে পড়ে । তরুণ বয়সে যা সহনীয় হয় যৌবন পেরিয়ে তা হয়ে দাঁড়ায় পীড়াদায়ক। তখন ডুবন্ত মানুষের পায়ের মতো মানুষের মন কিলবিল করতে থাকে একটু শক্ত জমির জন্য। ন্যায়, নীতি, স্নেহ, ভালোবাসা ইত্যাদির ওপর নিজেকে স্তোক দেয়া পোশাক পড়িয়ে দিতে সে মোটেই দেরি করে না।"
২) "তুমি যদি জিততে চাও তাহলে তোমাকে নির্মম হতে হবে। অভিযানে বেরিয়ে দলের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে অভিযান বাতিল হয়না, অসুস্থকে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেই উপায় না থাকলে তাকে ফেলে রেখেই এগোতে হবে। এক্ষেত্রে দয়ামায়া ইত্যাদি ব্যাপারগুলো খবই প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। কোনও কোনও মানুষ জীবনের নির্দিষ্ট লক্ষে এগিয়ে যাওয়ার সময় এমনই কঠোর হন। তাদের নিষ্ঠুর বলা হয়। ইতিহাস ওইসব মানুষের জন্য শেষ পর্যন্ত জাযগা রাখে।"
৩) "ছেলেরা ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে যে কখন সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলে তারা তা নিজেও জানেনা। মেয়েরা সত্যিকার ভালোবাসতে বাসতে যে কখন অভিনয় শুরু করে তারা তা নিজেও জানেনা।"
৪) "পেতে হলে কিছু দিতে হয়। ত্যাগ করতে না চাইলে পাওয়ার আশা অর্থহীন। সুদিপ বলেছিল, বাঙ্গালী মল মুত্র এবং বীর্য ছাড়া কিছুই ত্যাগ করতে জানে না।"
৫) "একটি একা মেয়ে ইচ্ছে করলেই বাজার যেতে পারে, ডাক্তার এর সঙ্গে দেখা করে ওষুধ আনতে পারে। কিন্তু এসব করণীয় কাজ কেউ আন্তরিকতার সাথে করে দিলে একধরনের আরাম হয় । মনের আরাম।"
৬) "মেয়েরা প্রথমবার যার প্রেমে পড়ে তাকে ঘৃনা করলেও ভুলে যেতে পারে না। পরিষ্কার জল কাগজে পড়লে দেখবেন শুকিয়ে যাওয়ার পড়েও দাগ রেখে যায়।"
৭) "যে নিজের চোখের জল ফেলে না অথচ ভেতরে ভেতরে রক্তাক্ত হয় তার কষ্ট সবাই বুঝতে পারেনা।"
৮ ) "মানুষের পায়ের তলায় শেকড় আছে । পুরনো জায়গা থেকে শেকড় তুলে নিতে তার যেমন বেশি সময় লাগে না তেমনি নতুন জায়গায় সেই শেকড় বসে যেতেও দেরি হয় না।
৯)"মেয়েরা হল জমির মত । তাদের চারপাশে নদীর স্রোত । ভালো বাঁধ না দিলে সেই জমি নদী গ্রাস করে নেবেই । আর বাঁধ ভেঙে মেয়েদের পক্ষে নদীর সঙ্গে লড়াই করা কতটা সম্ভব তা সময় বিচার করবে।"
১০)"আকাঙ্ক্ষার জিনিস পাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে শিশুরা যেমন হেলায় ফেলে রাখে ঠিক তেমনি করে ভালবাসা ফেলে রাখতে নেই । কারণ ভালবাসা প্রতিমুহূর্তে প্রতিপালিত হতে চায় তাকে আগলে রাখতে হয়।"
তিনি জন্মগ্রহণ করেন বাংলা ১৩৪৮ সনের ২৬শে ফাল্গুন, ১০ই মার্চ ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে। তাঁর শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল থেকে। তিনি বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এবং স্নাতকোত্তর হন বাংলাতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সাথে যুক্ত ছিলেন। গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তাঁর প্রচণ্ড আসক্তি ছিলো। তাঁর প্রথম গল্প “অন্যমাত্রা” লেখাই হয়েছিলো মঞ্চনাটক হিসাবে, আর সেখান থেকেই তাঁর লেখকজীবনের শুরু। তাঁর লেখা অন্যমাত্রা ছাপা হয়েছিলো দেশ পত্রিকায় ১৯৬৭ সালে। সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস “দৌড়” ছাপা হয়েছিলো দেশে পত্রিকাতেই ১৯৭৬ সালে।।
রচনা কর্ম :
সত্যমেব জয়তে
আকাশ না পাতাল
তেরো পার্বন
সওয়ার
টাকাপয়সা
তীর্থযাত্রী
ভালোবাসা থেকে যায়
নিকট কথা
ডানায় রোদের গন্ধ
জলছবির সিংহ
মেয়েরা যেমন হয়
একশো পঞ্চাশ (গল্প সংকলন)
উত্তরাধিকার
কালবেলা
কালপুরুষ
গর্ভধারিনী
হৃদয় আছে যার
সর্বনাশের নেশায়
ছায়া পূর্বগামিনী
এখনও সময় আছে
স্বনামধন্য
কলিকাল
স্বপ্নের বাজার
কলকাতা
অনুরাগ
তিনসঙ্গী
ভিক্টোরিয়ার বাগান
সহজপুর কতদূর
অনি
সিনেমাওয়ালা
সূর্য ঢলে গেলে
আশ্চর্যকথা হয়ে গেছে
অগ্নিরথ
অনেকই একা
আট কুঠুরি নয় দরজা
আত্মীয়স্বজন
আবাস
আমাকে চাই
উজান গঙ্গা
কষ্ট কষ্ট সুখ
কুলকুন্ডলিনী
কেউ কেউ একা
জনযাজক
জলের নিচে প্রথম প্রেম
জ্যোৎস্নায় বর্ষার মেঘ
দায়বন্ধন
দিন যায় রাত যায়
দৌড়
বড় পাপ হে (গল্প)
বিনিসুতোয়
মনের মতো মন
মেঘ ছিল বৃষ্টিও
শরণাগত
শ্রদ্ধাঞ্জলি
সাতকাহন
সুধারানী ও নবীন সন্ন্যাসী
হরিনবাড়ি
কইতে কথা বাধে
মধ্যরাতের রাখাল
আকাশে হেলান দিয়ে
কালোচিতার ফটোগ্রাফ
আকাশকুসুম
স্বরভঙ্গ
ঐশ্বর্য
আকাশের আড়ালে আকাশ
কালাপাহাড়
অহংকার
শয়তানের চোখ
হৃদয়বতী
সন্ধেবেলার মানুষ
বুনোহাঁসের পালক
জালবন্দী
মোহিনী
সিংহবাহিনী
বন্দীনিবাস
শেষের খুব কাছে
জীবন যৌবন
আহরণ
বাসভূমি
এত রক্ত কেন
এই আমি রেণু
উনিশ বিশ
মৌষলকাল
পুরস্কার ও সম্মাননা :
১) ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার,
২) ১৯৮৪ সালে সত্য আকাদেমী পুরস্কার,
৩) বঙ্কিম পুরস্কার
৪)আইয়াইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন।
৫)চিত্রনাট্য লেখক হিসাবে জয় করেছেন বিএফজেএ, দিশারী
৬) চলচিত্র প্রসার সমিতির এওয়ার্ড।
প্রভৃতি।
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
Doinik sabder methopath
Vol -306. Dt -10.9.2021
২৫ ফাল্গুন, ১৪২৭. বুধবার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷||||||||||||||÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
No comments:
Post a Comment