Sunday, 21 March 2021


"আমার লেখার সঙ্গে যারা পরিচিত, তারা লক্ষ্য করে থাকবে, আমি রাজা, রানী, জমিদার, জোতদার, মধ্যবিত্ত, প্রলেটারিয়েট, লুম্পেন প্রলেটারিয়েট, কারো কথাই অবহেলা করিনি, গোটা সমাজের সকলের কথাই বলেছি, সমান সহানুভূতি দিয়ে সকলের সমস্যা বলতে চেষ্টা করেছি। এমনকি তাদের কথাও বলতে চেষ্টা করেছি যারা ভাষার অভাবে নিজেদের অনুভূতিগুলিকেও প্রকাশ করতে পারে না।


                অমিয়ভূষণ মজুমদার

”তিনি ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মার্চ কোচবিহারে তাঁর মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বাবু অনন্তভূষণ মজুমদার ছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার পাকশির জমিদার। তাদের পরিবারের আসল পদবি ছিল 'বাগচি' আর তারা ছিলেন জাতিতে বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ। অমিয়ভূষনের মাতা ছিলেন জ্যোতিরিন্দু দেবী আর তাঁর মাতামহী ছিলেন কোচবিহারের রানী সুনীতী দেবীর (কেশবচন্দ্র সেনের কন্যা) বান্ধবী। ফলে সনাতন ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মেও জ্যোতিরিন্দু দেবী ব্রাহ্মসমাজ আন্দোলনের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। অমিয়ভূষণরা ছিলেন পাঁচ ভাই আর দুই বোন। দুই বোন ছিলেন তাঁর থেকে বড়। আর ভাইদের মধ্যে অমিয়ভূষণ ছিলেন বড়।
অমিয়ভূষণ মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি ইংরেজি সাহিত্যের সাম্মানিক স্নাতক হলেও গণিত, ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল, সংস্কৃত এবং আইনশাস্ত্রে দক্ষ ছিলেন। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজি সাহিত্যের সাম্মানিকের ছাত্র হিসাবে কলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে কিছু মাসের মধ্যেই তিনি কোচবিহারে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এরপর তিনি কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজে (বর্তমানে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল কলেজ) ভর্তি হন। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে ডিগ্রি হাতে পাওয়ার পর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি প্রথাগত পড়াশোনা বন্ধ করে কোচবিহার মুখ্য ডাকঘরে গ্র্যাজুয়েট করণিক হিসাবে যোগ দেন পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার জন্য।
অমিয়ভূষণ মজুমদারের প্রথম প্রকাশিত রচনা হল 'দ্য গড অন মাউন্ট সিনাই' নামের একটি নাটক। এটি মন্দিরা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪০ এর দশকে। ১৯৪৫-এ তিনি প্রথম গল্প রচনা করেন যার নাম ছিল 'প্রমীলার বিয়ে'। তার প্রথম উপন্যাস 'গড় শ্রীখণ্ড'। এটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল সঞ্জয় ভট্টাচার্য সম্পাদিত পূর্বাশা পত্রিকায় ১৩৬০ বঙ্গাব্দের জৈষ্ঠ সংখ্যা থেকে। পরে উপন্যাসটি ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে বই আকারে প্রকাশিত হয়। ভারতের স্বাধীনতার আগে পরের সময়কালে পদ্মাপারের পটভূমিকায় রচিত হয়েছিল এই উপন্যাসটি। সমাজের উঁচু এবং নিচু কোনো শ্রেণিই বাদ পড়েনি এই উপন্যাসটি থেকে। তার দ্বিতীয় উপন্যাস 'নয়নতারা'। এটি ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে রচিত হয়েছিল। প্রথম সংস্করণে এটি 'নীলভূঁইয়া' নামে প্রকাশিত হয়েছিল। চতুরঙ্গ পত্রিকাতে প্রকাশের সময় এটির নাম ছিল নয়নতারা। নীলভূঁইয়া নামে ট্রিলজি লেখার পরিকল্পনায় প্রথম উপন্যাসটি ছিল নয়নতারা কিন্তু পরে ট্রিলজি লেখার পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়।গ্রন্থাকারে নয়নতারা প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৫৫ সালে। এরপর ক্রমান্বয়ে দুখিয়ার কুঠি (পত্রিকায় প্রকাশ ১৯৫৭, গ্রন্থাকারে ১৯৫৯), নির্বাস (গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯৫৯), মধু সাধুখাঁ (পত্রিকায় প্রকাশ ১৯৬৮, গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯৮৮), ফ্রাইডে আইল্যান্ড অথবা নরমাংস ভক্ষণ এবং তাহার পর (পত্রিকায় প্রকাশ ১৯৭০, গ্রন্থকারে প্রকাশ ১৯৮৮), রাজনগর (পত্রিকায় প্রকাশ ১৯৭২-১৯৭৪, গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯৮৩), বিলাস বিনয় বন্দনা (পত্রিকায় প্রকাশ ১৯৭৬, গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯৮১), মহিষকুড়ার উপকথা (পত্রিকায় প্রকাশ ১৯৭৮, গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯৮১), বিবিক্তা (পত্রিকায় প্রকাশ ১৯৭৮, গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯৮৯), চাঁদবেনে (গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯৯৩), বিশ্বমিত্তিরের পৃথিবী (পত্রিকায় প্রকাশ ১৯৮৪, গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯৯৭)।
অগ্রন্থিত
 দোম আন্তনিও (১৯৭২), তাসিলার মেয়র (১৯৭৩-৭৫), নিউ ক্যালকাটা (১৯৭৩), মতিঘোষ পার্ক (১৯৭৪), উত্তর পুরুষ (১৯৮৭), মাকচক হরিণ (১৯৯১), ট্রাজিডির সন্ধানে (১৯৯৪)। এছাড়া রয়েছে বিন্দনী যার পত্রিকার প্রকাশকাল বর্তমান লেখকের অজানা। এই অরণ্য এই নদী এই দেশ গ্রন্থটি দু’টি বড় গল্পের সমন্বিত রূপ যার একটি ‘সোঁদাল’ ১৯৮৭’র পুজাসংখ্যায় প্রতিক্ষণ-এ উপন্যাস অভিধায় ছাপা হয়েছিল। এ তথ্য এ জন্যেই যে ‘সোঁদাল’ উপন্যাস কি না তা বিচারের প্রশ্ন থাকছে। তা ছাড়া থাকছে ‘বিপ্লবের মৃত্যু’ যা ১৯৬১ সালে পত্রিকায় প্রকাশ পায়। এটি গ্রন্থকার ঢাকার ঘাস ফুল নদী প্রকাশনী থেকে ১৯৯৮ এ প্রকাশিত হয়েছে। এ উপন্যাসটি নিয়েও সমরূপ সমস্যা রয়েছে। কেননা, এবং মুশায়েরার উপর্যুক্ত সংখ্যাটি একে উপন্যাস তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেনি। অন্যদিকে উত্তরাধিকার অমিয়ভূষণ মজুমদার সংযোজন সংখ্যাটি (অক্টোবর-ডিসেম্বর ১৯৯৫) এটিকে অগ্রন্থিত গল্পতালিকায় সূচিবিন্ধ করেছে।
মোট উপন্যাস সংখ্যা বারো (গ্রন্থকার প্রকাশিত) + সাত (পত্রিকায় প্রকাশিত) + এক (উদ্বাস্তু) + দুই (সোঁদাল ও একটি বিপ্লবের মৃত্যু) = বাইশটি ।

সম্মাননা ও পুরস্কার

১৯৭২ সাল- ত্রিবৃত্ত পুরস্কার
১৯৮৪ সাল- উত্তরবঙ্গ সংবাদ সাহিত্য পুরস্কার
১৯৮৬ সাল- রাজনগর উপন্যাসের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্কিম পুরস্কার
১৯৮৬ সাল- রাজনগর উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার
১৯৯৭ সাল- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক শরৎ মেডেল সম্মান
২০০০ সাল- কাঞ্চনজঙ্ঘা পুরস্কার
২০০১ সাল- কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডিলিট
সাহিত্যে অবদানের জন্য উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মরণোত্তর সাম্মানিক ডিলিট

মৃত্যু - জুলাই ৮, ২০০১।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
     দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
Doinik Sabder Methopath
Vol - 318. Dt -22.03.2021
৮ চৈত্র, ১৪২৭. সোমবার
 ===========$$$$$==============
     

No comments:

শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি। অশোকবিজয় রাহা । একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। তিনি রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীতে দায়িত্ব পালন করেন। Dt -14.11.2024. Vol -1052. Thrusday. The blogger post in literary e magazine.

অশোকবিজয় রাহা  (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০)  সময়টা ছিল আঠারোশো উননব্বইয়ের অক্টোবর। গঁগ্যার সাথে বন্ধুত্বে তখন কেবল চাপ চাপ শূন্যতা আ...