মৃত্যু - ২০ জানুয়ারী ১৯৮১, কলকাতায় মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে মারা যান।
==========\\\\\\\=======
চারুচন্দ্র চক্রবর্তী
"কাঁচা আর পাকার মধ্যে ব্যাবধানটা কালগত। কাল পূর্ণ হলেই কাঁচা লঙ্কায় পাক ধরে, কাঁচা মাথা পাকা চুলে ভরে যায়। সংসারে একটি বস্তু আছে যার বেলায় এ নিয়ম চলে না। তার নাম চাকরি। সেখানেও কাঁচা পাকে; কিন্তু কালধর্মে নয়, তৈলধর্মে। সরকারী, আধা-সরকারী কিংবা সওদাগরি অফিসে গিয়ে দেখুন, পক্ক কেশ সিনিয়র যখন কাঁচা রাস্তায় হোঁচট খাচ্ছেন, তৈল সম্পদে বলীয়ান কোন ভাগ্যবান জুনিয়র তখন অনায়েসে পাড়ি দিচ্ছেন কনফার্মেশনের পাকা সড়ক। গিরীনদা বলতেন, চাকরি হচ্ছে পাশার ঘুটি। পাকবে কি পচবে, নির্ভর করছে তোমার চালের উপর। মূল্যবান কথা। চাল অবশ্যই চাই। কিন্তু তার সঙ্গে চাই প্রচুর তেল।"
তিনিই জরাসন্ধ বা চারুচন্দ্র চক্রবর্তী। ৩ মার্চ ১৯০২ সালে জন্মগ্রহণ করেন।ব্রাহ্মণডাঙ্গা, ফরিদপুর বাংলাদেশে। পিতার নাম অম্বিকাচরণ চক্রবর্তী। প্রাথমিক স্কুলের পাঠ শেষে, ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে সপ্তম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিক ও প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে এম. এ পাশ করেন । সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে দার্জিলিংয়ে ডেপুটি জেলার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর দীর্ঘ তিরিশ বছর নানা জেলে বিভিন্নন্ পদে সুনাম ও কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের সুপারিনটেন্ডন্ট হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন।
দীর্ঘ কর্মজীবনে জেলের লৌহকপাটের মধ্যে যে মানুষ গুলিকে দেখেছেন তাদের কথা ও কাহিনী তাঁর উপন্যাসে মূর্ত হয়ে উঠেছে। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ১ লা মে 'লৌহকপাট' এর প্রথম পর্ব গ্রন্থের আকারে প্রকাশিত হয়। এরপর একে একে মোট চারটি পর্বে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর কুড়ি একুশ খানি উপন্যাসের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল -
'তামসী' (১৯৫৮)' 'পাড়ি'','মসীরেখা'','ন্যায়দণ্ড' ১৯৬১)','পরশমণি'','উত্তরাধিকার'','ছায়া'(১৯৭২)','নিশানা'(১৯৭৭)','তৃতীয়নয়ন'(১৯৭৯)','হীরাচুনি পান্না' (১৯৮৩)','আশ্রয়' , একুশ বছর'','আবরণ'','এবাড়ি ও বাড়ি' প্রভৃতি।
তাঁর আত্মজীবনীমূলক রচনা হল, দুটি খণ্ডে 'নিঃসঙ্গ পথিক'। প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে। ছোট গল্প সংকলনও আছে ছ-খানা। এছাড়া ছোটদের জন্য কিছু লেখা আছে 'রঙচঙ', 'রবিবার' যমরাজের বিপদ' প্রভৃতি গ্রন্থে। তাঁর বহু রচনা দেশবিদেশের অন্তত ছয়টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর উপন্যাস 'তামসী' অবলম্বনে হিন্দিতে 'বন্দিনী' নামে চলচ্চিত্রায়িত করেন প্রখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক বিমল রায় এবং সেরা সম্মান লাভ করে।
ছদ্মনাম - জরাসন্ধ
সাহিত্যকীর্তির জন্য তিনি 'শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার' ও 'মতিলাল পুরস্কার' লাভ করেন।
মৃত্যু : ২৫ মে ১৯৮১ (বয়স ৭৯)কলকাতা।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
Doinik Sabder Methopath
Vol -319. Dt -23.03.2021
১০ চৈত্র,১৪২৭. মঙ্গলবার
========={{{{{{{{==========
No comments:
Post a Comment