Thursday, 29 April 2021


 চৈতন্যদেব : বাংলা সমাজ ও সাহিত্য
 
  
  বাঙালি সংস্কৃতির দু’টি ধারার যে মিলন ঘটেছিল, এখানে তা কোমল ও ললিত ভাবধারায় সঞ্জীবিত হয়। প্রেম ও ভক্তির ভাবরসপ্রবাহে বাঙালি নিজের মুক্তিমন্ত্র শুনতে পায়। অন্যদিকে, রাজশক্তি হারিয়ে বাঙালি যে হীনমন্যতায় ভুগছিল, সে অবস্থার মৌলিক পরিবর্তন না ঘটলেও, ভাবের দিক থেকে চৈতন্য মহাপ্রভু বাঙালিকে উদ্ধার করেন।

 মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের আগমন ছিল বাংলা সাহিত্যের তথা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সেই সময়কার অত্যাচারিত, অপমানিত বাঙালি জাতিকে সঙ্ঘবদ্ধ করারকারণে তিনি আজ ও বাঙালি জাতির কাছে পূজনীয়। তৎকালীন সময়ে বাঙালি সমাজ ও জাতির উপর চৈতন্যদেবের প্রভাব পড়েছিল তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে এখানে আমরা বাংলা সমাজ ও সাহিত্যে চৈতন্যদেবের প্রভাব তা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করলাম।

পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষার্ধে (১৪৮৬ খ্রীষ্টাব্দ) বাংলাদেশে মহাপ্রভুর শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব ঐতিহাসিক তাৎপর্যমণ্ডিত এক যুগান্তকারী ঘটনা। মধযুগের এক ক্রান্তিলগ্নে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব। দেশের সমকালীন রাজনৈতিক অশান্তি ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে তিনি উদারনৈতিক যে কৃষ্ণপ্রেমকথা প্রচার করেন তা তথাকথিত Religion। শুধু হিন্দু ধর্ম নয়, সর্ব ধর্মের সংকীর্ণতার উর্দ্ধে তিনি সর্বমানবিক প্রেমধর্ম প্রচার করেন। জীবে দয়া, ঈশ্বরে ভক্তি এবং ভক্তি উদ্দীপনের জন্য নামসংকীর্তন – মূলত এই ত্রিবিধ আদর্শের উপর চৈতন্যধর্ম সুপ্রতিষ্ঠিত।
       তিনিই প্রথম মানুষকে স্বধর্মে গৌরবান্বিত করতে সচেষ্ট হন। ফলে তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রভাবে বাঙালী জাতীর তিমির বিদার উদার অভ্যুদয় ঘটে। চৈতন্যদেবই মানুষের শিল্প সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিকাশ ও দার্শনিকতার ভিত্তি নির্মাণ করে মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসকে নতুন গতিতে আলোক তীর্থের অভিমুখে প্রেরণ করেন।এই দেবোপম মানুষটি বাংলাদেশে রাষ্ট্রিক ও সামাজিক সংকটের মধ্যে দাঁড়িয়ে একদিকে যেমন প্রতিক্রিয়াশীল ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধাচারণ করেছেন। অন্যদিকে তেমন সমাজের তৃণমূল স্তরে নিজেকে মিশিতে দিয়ে সমগ্র সমাজকে ভক্তিধর্মে পরিপ্লাবিত করেছেন। এইভাবে জীবন্ত মানবতার পূজারী চৈতন্যদেব জাতীয় সংহতির পথ প্রস্তুত করেন। তাই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন –
             “আমাদের বাঙালীর মধ্য হইতেই তো চৈতন্য জন্মিয়াছিলেন। তিনি তো বিঘা কাঠার মধ্যে বাস করিতেন না। তিনি তো সমস্ত মানবকে আপনার করিয়াছিলেন। তিনি বিস্তৃত মানবপ্রেমে বঙ্গভূমিকে জ্যোতির্ময়ী করিয়া তুলিয়াছিলেন।”
      
        বাংলা সাহিত্যে তাঁর এই প্রভাবের ঐতিহাসিক ফলশ্রুতি সুদূর প্রসারিত। প্রাক-চৈতন্যযুগের সাহিত্যে যে স্থূলতা, কদর্যতা ও গ্রাম্যতা ছিল, তা চৈতন্যপ্রভাবে রুচিসম্মত ও শ্লীল হয়েছে। প্রাক-চৈতন্য পর্বে দেবতার মহিমাকীর্তনই ছিল সাহিত্যের উদ্দেশ্য ও পরিধি। চৈতন্যপ্রভাবে তা ‘দেবতাকে প্রিয় করি প্রিয়রে দেবতা’ হয়েছে। প্রাক-চৈতন্য পর্বের ভক্তিভাবের তুলনায় ঐশ্বর্যভাবের প্রাধান্য ছিল। চৈতন্যপ্রভাবে ভক্তিরস বাংলা সাহিত্যকে আপ্লুত করেছে। প্রকৃতপক্ষে চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রভাবেই বাংলা সাহিত্যে মানবতাবাদের জয় ঘোষিত হয়েছে। চৈতন্যপ্রভাবিত অধ্যাত্মভাব ও জীবনাবেগ সৃষ্টির জন্যই বৈষ্ণব কবিদের হাতে বাংলা ভাষা সূক্ষ্ম অনুভূতি ও বিচিত্রভাব প্রকাশের যোগ্য হয়ে ওঠে।

১৪৮৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৭ শে ফেব্রুয়ারি নবদ্বীপে শ্রীচৈতন্যের জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম জগন্নাথ মিশ্র, মাতার নাম শচীদেবী। তাঁর বাল্যনাম ছিল নিমাই। ১৬ -১৭ বছর বয়সে তিনি বল্লভ আচার্যের কন্যা লক্ষ্মীদেবীকে বিবাহ করেন। লক্ষ্মীদেবীর মৃত্যু হলে তিনি বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীকে বিবাহ করেন।
এরপর গয়ায় পিতৃ পিণ্ডদানের জন্য গিয়ে বিষ্ণুপাদপদ্ম দর্শন করেন। তাঁর চিত্ত এখানেই বৈরাগ্যে ভরে যায়। ছাব্বিশ বছর বয়সে তিনি বৈষ্ণবাচার্য কেশবভারতীর কাছে দীক্ষা নেন। এখান থেকেই তাঁর নাম হয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য – সংক্ষেপে শ্রীচৈতন্য। ১৫৩৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি অমৃতলোকে পাড়ি দেন। চৈতন্যের তিরোধান নিয়ে অনেক মত প্রচলিত আছে – সে রহস্য এখনো উন্মোচিত হয়নি।

সমাজ জীবনে:

বাঙালীর সমাজজীবন ও সাহিত্য শ্রীচৈতন্যদেবের প্রভাব খুবই ব্যাপক ও সূদূরপ্রসারী। তাঁর আবির্ভাবে বাঙালী জাতির চিত্ত জড়ত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে স্বচ্ছ ও বেগবতী ধারায় সমাজ জীবনকে নানা দিক থেকে বিচিত্রমুখী বিকাশের দিকে নিয়ে যায়। শ্রীচৈতন্যের আগমনের পূর্বে বাংলাদেশ প্রায় আড়ইশো বছরের মুসলিম শাসনে বিপর্যস্ত ও বিশৃঙ্খল ছিল। ব্রাহ্মণ সমাজে আদর্শনিষ্ঠা লুপ্ত হয়েছিল, অবৈষ্ণব সম্প্রদায়রা তান্ত্রিক ক্রিয়াধর্ম নিয়ে ব্যাভিচারে লিপ্ত ছিল।
                       মুসলমান শাসকদের নিষ্ঠুরতা ও হিন্দুসমাজের অন্তর্গত বর্ণবিভেদ, সম্প্রদায়ভেদ ও উচ্চনীচ জাতিভেদে পীড়িত হয়েছিল মানবাত্মা, বাঙালী জীবন বহুধা বিচ্ছিন্ন ঐক্যভ্রষ্ট ও একান্ত পঙ্গু হয়ে পড়েছিল। ইতিমধ্যে হিন্দুসমাজ আত্মরক্ষার জন্য লৌকিক ও পৌরাণিক ধর্মবিশ্বাস ও সংস্কৃতির মধ্যে চেষ্টা করলেও এ সামাজিকতা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সামাজিক নিষ্পেষণে হতমান নিম্নশ্রেণীভুক্ত হিন্দুরা ইসলামের শ্রেণীহীন সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা আত্মরক্ষার আশ্র খুঁজে পায়।
      গোটা হিন্দু সমাজটাকে ইসলামধর্ম গ্রাস করতে থাকে। সমগ্র হিন্দু জাতির এই মরণাপন্ন অবস্থায় চৈতন্যদেব ভক্তির ভাবাবেগে গানে গানে অচলায়তন ভাঙতে চাইলেন। জ্ঞানবৃদ্ধতা তারুণ্যের দ্বারা স্পন্দিত হল। তিনি প্রচার করলেন বিশুদ্ধ উদার মানবিকতার বাণী।
          তিনি প্রচার করলেন প্রতি মানুষের হৃদয় দ্বারে প্রেমের কাঙালরূপে ঈশ্বর নিত্য বিরাজমান, দ্বার খুললেই মিলন ঘটবে। তিনি ঘোষণা করলেন – ‘চণ্ডালোহপি দ্বিজশ্রেষ্ঠ হরিভক্তিপরায়ণঃ’ – ‘মুচি হয়ে শুচি হয় যদি হরি ভজে।’ তাই যবন হরিদাস থেকে গুণ্ডা জগাই-মাধাই সকলকেই তিনি আপন বক্ষে স্থান দিলেন। নৃপতি হুসেন শাহ পর্যন্ত ঘোষণা করলেন –
“যেখানে তাঁহার ইচ্ছা থাকুন সেখানে।
আপনার শাস্ত্রমত করুন বিধানে।।

কাজি বা কোটাল কিবা হউ কোন জন।
কিছু বলিলেই তার লইব জীবন।।”

                           এইভাবে চৈতন্যদেব মানবিক মূল্যবোধের নতুন মন্ত্রে জাতি –বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষকে একাসনে বসার সুযোগ করে দিয়ে এক বিরাট সাম্য সংস্থাপনের আদর্শে বাংলা তথা ভারতবর্ষকে দীক্ষিত করলেন। আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন ঠিকই বলেছিলেন –
          “প্রেম পৃথিবীতে একবার মাত্র রূপ গ্রহণ        করিয়াছিল, তাহা বাংলাদেশে।”
                এইভাবে তিনি সত্য ও প্রেমের করুণ-কোমল বিশ্বপ্লাবি অরুণোদয় ঘটিয়ে, সর্বসাধারণের মধ্যে শিক্ষা, উন্নত রুচি, ত্যাগ, বিনয়, দয়া, ভক্তি, সরলতা ও সহিষ্ণুতা প্রভৃতি সদ্‌গুণগুলির প্রকাশে নতুন বলিষ্ঠ সমাজ তৈরীর মঞ্চ প্রস্তুত করে দিলেন।

সাহিত্যে :

চৈতন্যের আবির্ভাবে শুধু সমাজ জীবনে নয় বাংলা সাহিত্যেও ঋতু পরিবর্তন হল, নতুন ফসলে সমৃদ্ধ হল সাহিত্য। যদিও তিনি নিজে একটি গ্রন্থও রচনা করেননি। তাঁর প্রভাবে মধ্যযুগের দেবমুখী সাহিত্যে মানবতন্ত্রী মনোভাব প্রাধান্য পেল।
       চৈতন্য-পূর্ব বৈষ্ণবপদাবলী সাহিত্যে লৌকিক প্রেমানুভূতিই ছিল প্রধান। চৈতন্যজীবনের আলোকপাতে তা আধ্যাত্মিক স্তরে উন্নীত হল। রাধা-কৃষ্ণ জীবাত্মা –পরমাত্মার প্রতীকে পরিণত হল। ফলে চৈতন্য পরবর্তীকালে গোবিন্দদাস, জ্ঞানদাস, বলরাম দাস, নরহরি চক্রবর্তী, নরোত্তম দাস প্রমুখ কবিরা পদাবলী সাহিত্যে মানবরস ও ভক্তিভাবুকতার যক্তবেণী রচনা করলেন।
             আসলে শ্রীচৈতন্যদেব নিজের জীবন চর্চা ও ধর্মসাধনার মধ্য দিয়ে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলার তাৎপর্যকে পরিস্ফুট করেন। তিনি ছিলেন রাধাকৃষ্ণের যুগলবিগ্রহ – অন্তরঙ্গে কৃষ্ণ, বহিরঙ্গে রাধা। তিনিই প্রথম রাধাভাবের রাধানুগা ভক্তির দ্বারা পদাবলী সাহিত্যকে অনুপ্রাণিত করেন। পদকর্তা নরহরি সরকার লিখেছেন –
     "গৌরাঙ্গ নহিত কি মেনে হইত
      কেমনে ধরিত দে।
রাধার মহিমা প্রেমরসসীমা
জগতে জানাত কে।"

তাঁকে নিয়ে পদাবলী সাহিত্যে ‘গৌরচন্দ্রিকা’ বিষয়ক পৃথক রসপর্যায়ের সৃষ্টি হয়।

       চৈতন্যদেবের প্রভাবে বাংলা সাহিত্যে প্রথম জীবনী সাহিত্যের সূত্রপাত ঘটে। মুরারী গুপ্তের কড়চা স্বরূপ দামোদরের কড়চা, বৃন্দাবন দাসের ‘চৈতনভাগবত’, জয়ানন্দ ও লোচন দাসের ‘চৈতন্যমঙ্গল’, কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ উৎকৃষ্ট চৈতন্যজীবনী কাব্য ‘ লক্ষণীয় তখনও বক্তিস্বাতন্ত্র্যের যুগ আসেনি।


চৈতন্যের প্রভাবে মঙ্গলকাব্যের কবিরাও বিশুদ্ধ পদ রচনা করেছেন। অন্যদিকে বৈষ্ণবপদাবলীর আদর্শে স্বতন্ত্র গীতিকাব্য শাক্ত পদাবলীর উদ্ভব ঘটল। বাউল সঙ্গীতেও বৈষ্ণবভাব অল্পাধিক প্রবেশ করল।

অনুবাদ সাহিত্যেও চৈতন্যদেবের প্রভাব কম নয়। রামায়ণ ও ভাগবত পরিবেশ, চরিত্র ও কাব্যরসের উপর চৈতন্যের প্রভাব যথেষ্ট। কাশীরাম দাস বৈষ্ণব ভক্ত ছিলেন।

শাক্ত পদাবলি

চৈতন্য মহাপ্রভুর সার্বভৌম প্রভাব ও তাঁর প্রবল ভাবের জোয়ারে শাক্তসাহিত্য তার স্বাতন্ত্র্য সম্পূর্ণ রক্ষা করতে পারেনি। কোনো কোনো সমালোচক মনে করেন, শাক্ত পদাবলির বাৎসল্য রসের পদগুলিতে ও উমাসংগীতে (আগমনী ও বিজয়া গান) চৈতন্য-প্রভাবিত বৈষ্ণব গীতিকবিতার কোমল স্নিগ্ধতা অনুভূত হয়।

লোকসাহিত্য

বাংলার সুদূর গ্রামাঞ্চলের লোকসংগীতেও চৈতন্য মহাপ্রভুর ভাববিহ্বল দেবোপম জীবনের প্রভাব সুস্পষ্ট। মৈমনসিংহ গীতিকার বিষয়বস্তুতে চৈতন্যদেবের সমন্বয়বাদ ফুটে উঠেছে। শুধু তাই নয়, বাউলের গানে যে ‘মনের মানুষ’-এর অনুসন্ধান রয়েছে, তার মূলেও চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রভাব অস্বীকার করা যায় না।
এমনকি ঊনবিংশ শতাব্দীতে কবি মধুসূদন ও রবীন্দ্রনাথ বৈষ্ণবভাবাবেগে অনুপ্রাণিত হয়ে যথাক্রমে ‘ব্রজাঙ্গনা’ ও ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী রচনা করেছেন। এই ভাবে তিনি সমগ্র বাংলা সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাই লিখেছেন-
            “বর্ষাঋতুর মতো মানুষের সমাজে এমন একটা সময় আসে যখন হাওয়ার মধ্যে ভাবের বাষ্প প্রচুর পরিমানে বিচরণ করিতে থাকে। চৈতন্যের পর বাংলাদেশের সেই অবস্থা আসিয়াছিল। তখন সমস্ত আকাশ মেঘের রসে আর্দ্র ছিল। তাই দেশে সে সময় যেখানে যত কবির মন মাথা তুলিয়া দাঁড়াইয়াছিল সকলেই সেই রসের বাষ্পকে ঘন করিয়া কত অপূর্ব ভাষা এবং নতুন ছন্দে, কত প্রাচুর্যে এবং প্রবলতায় তাহাকে দিকে দিকে বর্ষণ করিয়াছিল।

∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
দৈনিক শব্দের মেঠোপথ
Doinik sabder methopath
Vol -358. Dt -30.4.2021
১৬ বৈশাখ, ১৪২৮. শুক্রবার
========={{{=========={{{{{=========





No comments: