∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
==================================
কলমে -
অরবিন্দ সরকার অমিত কাশ্যপ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরুণ ভট্টাচার্য আজমিরা প্রামানিক আলোক মন্ডল উজ্জ্বল ঘোষ কাজী শামসুল আলম খুকু ভূঞ্যা গোবিন্দ মোদক গৌর চাঁদ পাত্র চন্দন মাইতি জয়দেব মাইতি জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় তপন কুমার গোস্বামী তৈমুর খান দীপক জানা দেবাশীষ চক্রবর্তী দেবাশিস মুখোপাধ্যায় নন্দিনী সরকার নীতা সরকার প্রেমেশ পন্ডা ফটিক চৌধুরী বিমল মন্ডল বিষ্ণুপদ জানা বিপ্লব চক্রবর্তী মতিলাল দাস মঞ্জীর বাগ মোনালিসা পাহাড়ি রজত দাস রাজীব ঘাঁটি রুপা কুন্ডু লক্ষীকান্ত মন্ডল শুভময় শ্রাবণী বসু শ্রীলিম সুচক্র সুবীর ঘোষ সুমিত্রা সাউ গিরি সুব্রত ভট্টাচার্য ও সুব্রত মাইতি।
_-----------------------------------------------
কাছের জন
অরবিন্দ সরকার
রবীন্দ্রনাথ বাঙালী জীবনে কতখানি তা নতুন করে বলার নয়। বিশ্ব সারস্বত মন্ডলে তাঁর অনুভূত শক্তি সর্বকালে গ্রহণ যোগ্যতা দাবী করে । তিনি সাধারণ্যে অনুপম। মাটির কাছাকাছি।
অহং বোধ তাঁকে কখনো কারো কাছ থেকে দূরে রাখেনি। যার জীবন সোঁদা মাটির গন্ধে মাতোয়ারা সেই জীবনের সন্ধানে তিনি আজীবন ব্যাপৃত ছিলেন । কলকাতার মতো মেট্রোপলিটন শহর থেকে দূরে বীরভূমের রাঙামাটির পথে পথে খোয়াইয়ের ধারে ধারে পল্লী জীবনের ধূলোর রেণু তাঁর জীবন পর্বে গেঁথে রয়েছে। সাঁওতাল জীবন সম্পর্কে তাঁর পরম আগ্রহ। যারা কাঠের কাজ করে যারা মাটির শিল্প কর্ম করে যারা প্রতিদিনের কর্ম শেষ করে গানের দোলায় সন্ধ্যা কালে কীর্তনে মজে থাকে, সেই জীবনের সন্ধানে তিনি ওঁত পেতে থাকতেন। তাঁর সংযোগ ছিল বহুধা বিস্তৃত। কিন্তু কখনো তিনি প্রলোভনে পরেননি। নিজস্ব সত্তা হারান নি। মৌন মুখর ঢেউয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অতুলান।
এক কথায় তিনি জন-মন-সঙযোগের কাজটি খুবই আজীবন সুন্দর ভাবে রপ্ত করেছিলেন। কিন্তু কখনো বেসুরে পা ফেলেন নি। তাঁর মধ্যে ছিল বিনয় সমন্বিত দৃঢ়তা।আর সর্বোপরি, তিনি ছিলেন সুরের কাঙাল। তাঁর গানে মানবজীবনের সমস্ত অনুভূতি চাওয়া পাওয়া, দুঃখ বেদনা, প্রতিবাদ, অভিমান, আনন্দ, জয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে নতুন ভোরের ইঙ্গিতময়তা----পূর্ণভাবের প্রকাশ ঘটেছে। সুদূর স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, পদ্মা পাড়ের শিলাইদহ জীবন গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে, বাউলের সুরে, ভাটিয়ালির গানে মেঠো বাঁশির সুরে তিনি রোমাঞ্চিত হয়েছেন। বিশ্ববীক্ষা তাঁর করতলগত । কিন্তু সেখানে অহং কে দূরে রেখে তিনি স্বক্ষেত্রে সম্রাট। তিনি ওই তলে থাকতে চেয়েছেন। কেন আমাকে মান দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখো। এইভাবে ' ছোট আমি' থেকে 'বড়আমি'র দিকে তাঁর অভিযাত্রা সহজাত। তিনি অন্যের মত কে মর্যাদা দিতেন। সুরসিক রবীন্দ্রনাথ মহৎ জীবন রসিকের সঙ্গে তার ছিল অন্তর পথে নিত্য বিচরণ। পরিশেষে বলি, ব্যক্তি জীবনে যখন ঘোরের মধ্যে থাকি--- সঙ্কোচে দ্বিধা বিভক্ত থাকি তখনই রবীন্দ্রনাথ আপনজনের মত অনাবিল হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নেন।
রবীন্দ্রনাথ ও আমি/৬
অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়
কেঁন্দুয়া শিবতলা প্রাঙ্গন
টিনের চাল দেওয়া ছোট পরিসর
তুমি এলে অনিবার্য ভাবে এসে দাঁড়াতেন
আমাদের পিনাকী কাকু
ভারী চশমার ভেতর এক গভীর দৃষ্টি
তোমাকে উনি ছাড়া কে এত বুঝতেন
শ্যামা, চণ্ডালিকা, চিত্রাঙ্গদার মধ্যে দিয়ে
তোমাকে নিয়ে আসতেন আমাদের ভেতর
আমরা বিষ্ময়ে তোমাকে দেখতাম
ধ্রুব তারার মতন উত্তর আকাশ জুড়ে.....
এখনও হৃদয় পথ ধরে তুমি ও পিনাকী কাকু
২৫ শে বৈশাখ বা ২২ শে শ্রাবণে
তবুও সময় তো বয়ে গেছে বহুদূর...
# এখন অনেক দূর থেকে এসরাজ বেজে যায়
আমি শূন্য পথে তাকিয়ে থাকি......
পঁচিশে বৈশাখে
ফটিক চৌধুরী
তুই হেন বোকা যেন আমাকে দিয়ে বলাস
শীতের পরে ফোটে কেন শিমুল ও পলাশ !
সেই কারণে বসন্তকে বলি কি ঋতুর রাজা ?
বছরখানি শেষ হলে সে থাকে না তো তাজা।
নামেই তবে ঋতুরাজ, বয় যে দখিন হাওয়া !
বছরখানি যাচ্ছে জানি যাওয়ার মত যাওয়া।
যাবার আগে চারিদিকে সাজিয়ে দিয়ে সাজ
সেই কারণেই হয়তো আমরা বলি ঋতুরাজ।
নিজের তালে গাছের ডালে কোকিল শুধু ডাকে
নতুন বছর নাড়িয়ে শহর জ্বলন্ত বৈশাখে।
শুকনো পুকুর অলস দুপুর ডাকে শুধু ঝিঁঝিঁ
উদাস মনে অলস ক্ষণে আঁকিস হিজিবিজি !
মনটা ফাঁকা চলছে আঁকা কি যে সব আঁকিস
অমল-সুধা-দইওয়ালার সঙ্গে একটু থাকিস।
এবার আর হবে না দেখা রবীন্দ্র সদন চত্বরে
বাড়িতে বরং কাটাস সময়, বই-খাতা-পত্তরে।
যাব না এবার জোড়াসাঁকো এমন জন্মদিনে
অতিমারি করেছে জারি, মৃত্যু নিচ্ছে কিনে।
নববর্ষ নেই হর্ষ শুধু হতাশা ছড়িয়ে রাখে
সবার প্রাণে বিষাদ আনে পঁচিশে বৈশাখে।
জ্যোৎস্না কাঁপে অন্তরে
লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল
আমার বিরুদ্ধে আমি যতবার দূরে যেতে চাই — ততবারই সদর দরজায় এক দরিদ্রের আশ । কার কাছে বলি অরুচির কথা । তারপরেও কখন সমস্ত পরিচর্যায় সাদা সাদা কাগজ ফুল আর জ্যৈষ্ঠের বিকালে ঘাম শুকানো বাতাস বইতে থাকে । আহা, বাতাসে বাতাস লাগে ; অমৃতের প্রবাহ ! জীবনের যাবতীয় পর্যায় । ধূপ জ্বলতেই থাকে — সেই গন্ধে নৌ সকাল সন্ধে — " ওগো শোনো কে বাজায় , / বনফুলের মালার গন্ধ বাঁশির তানে মিশে যায়। ”
কতজনের বুকে বাজে এ ক্ষত আপনি বলতে পারেন হে পৃথিবী । আপনি কি দেখেছেন সারি সারি সব ভালোবাসা প্রমিত আলোর প্রতিবিম্ব থেকেও অসত্য হতে হতে কেমন সম্পর্ক থেকে দূরে চলে যায় । নাভি থেকে বাস্তুহীন উদাসীন মায়াহীন সব পথভোলা । কেবল হাওয়ায় ভেসে যাওয়াটাই সত্যি । কিংবা অশ্রুতে ভেজাবো তোমার বুক — তুমি কাঁদতে থাকো , তুমি মুছতে থাকো পথের দাগ ।
এরই নাম কি আধুনিকতা?
— তোমাকে বাদ দিয়ে যে এক মুহূর্ত নেই আমাদের । তুমি কেন প্রাণের শ্বাস হলে রবি ঠাকুর ?
— ওই যে , কে জাগিবে , কে করিবে কাজ — করতে করতে আমরা খুঁজেই পাইনি কে জননী ? কার নাম জগৎ ? শুধুই গালভরা বুলি নিয়ে আকাশের উড়ালপথ আঁকতেই থাকি — বুঝতে পারি না মহাবিশ্ব কখনো অত্যাচার সইতেই চায় না । তার হৃদয়ে ঢুকিয়ে দিই অপঘাত। আমি তো প্রকৃতিকে ভালোবেসেছিলাম , ভয় পেয়ে ছিলাম অপঘাতকে । তবু কান্নার পাশে পাশে জ্যোৎস্না ধরতে পারিনি ।
আমি চাঁপা গাছের তলায় দাঁড়ালাম । এত সুবাস কোথায় থাকে? কোথায় থাকে এত শুভ্রতা ?
কী আশ্চর্য আমারই অন্তর থেকে ভেসে আসছে —
" আমায় বলো না গাহিতে বলো না ।
এ কি শুধু হাসি খেলা , প্রমোদের মেলা, মিছেকথা ছলনা? "
বিশ্বকবির কবির বিশ্ব
সুবীর ঘোষ
বাহাত্তরের শীতে যখন হাত পা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রেখে নিথর হয়ে থাকতে ভালবাসত এবং মেধাচেতনা সকল নিয়ে বসে থাকত সর্বনাশের আশায় যে আশার মধ্যে আশঙ্কা ছিল না, ছিল শুধুই আকাঙ্ক্ষা তেমন একটি সন্ধেতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে, আমার স্বপ্নে দেখা বলয়ের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে তিনি থামতে বলেছিলেন গুরুপল্লীর একটি বাড়ির কাছে ; গাছের ডালপালা দীর্ঘ বাহুর মতো অন্ধকারকে আলিঙ্গন করেছিল তখন ; সেই আলো ছায়ার মধ্যে আরো নির্জনতা এনে দিয়েছিল শব্দহীন সংসার । তিনি বললেন—‘এখানেই থাকে মোহর’ । মোহরের নাম শুনেছিলাম যত তারও বেশি শুনেছিলাম তাঁর গান যে গান শুনলে মনে হত---বাজে করুণ সুরে । অথবা আনন্দধারা বহিছে ভুবনে । তাহলে কী আনন্দ ও বিষাদ এই দ্বিপৃথিবীর অনুভূতিমালা গলায় তিনি ছিলেন সমস্বচ্ছন্দবিহারিণী ঠিক তাঁর গুরুর মতো ? স্বপ্নগুরুর গানের সেই কথাটি মনে এসে গেল----আমি মারের সাগর পাড়ি দেব গো । এই সুর তোমার আমার সবার ঘর-খামার জুড়ে ভরে উঠবে একদিন ছায়াবটের ছায়ে । বিশ্বকবির কবির বিশ্ব তখন ছড়িয়ে পড়তে পড়তে জগৎপারাবারের তীরে খেলা করা শিশুদের জলভেজা পায়ের ছবি তুলে আনতে চাইবে ।
পঁচিশে বৈশাখ
অমিত কাশ্যপ
আমরা এখনো যারা আছি, পাড়ার শৈলেনবাবুকে খুব মনে করি আজকের দিনে। সকাল সকাল পাটভাঙা সাদা ধুতি আর পাঞ্জাবি পরে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বেরতেন প্রভাতফেরিতে। কি উন্মাদনা। খোলা গাড়িতে খোল করতাল তবলা আর হারমোনিয়াম।
কি অনাড়ম্বর জীবন। বয়সকালে বাড়ি বাড়ি যেতেন গান শেখাতে, পরে আর পারতেন না। বাড়িতেই ক্লাশ করতেন। বাড়িতে গীতবিতান স্বরলিপি সাজানো। চোখ বুজে বলে দিতে পারতেন, কোন স্বরলিপিতে কোন গান।
'এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে জয় মা বলে ভাসা তরী' শৈলেনবাবু যেন গানে ভাসছেন, বৈশাখের খর প্রভাত, চোখ বুজে তন্ময় এক ঋষি যেন।
এই দুঃসময় : কবিগুরুর শিক্ষা ভাবনা
অরুণ ভট্টাচার্য
বড় দুঃসময় আজ। সারাবিশ্ব - দেশ - রাজ্যবাসী আমরা কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি। একদিকে মৃত্যু আর অন্যদিকে বাঁচার প্রাণপণ সংগ্রাম । বাকি সমস্ত বিষয় ভাবার অবকাশ নেই। শিক্ষা-সংস্কৃতি অনায়াসে জলাঞ্জলি দিয়েছি সব । আমরা ক্রমশ নির্ভরশীল হয়েছি কেবলমাত্র পুঁথিগত সামান্য শিক্ষা গ্রহণে যা দিয়ে ভালোভাবে পরীক্ষায় পাশ টুকু করা যায়। এমনকি পাশের জন্য সাজেশন নির্ভর শিক্ষাতেও । তাই শিক্ষিতদের একটা বড় অংশের মধ্যে শিক্ষাটুকু খুঁজে পাওয়া খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
এ সময় মনে পড়ে কবিগুরুর শিক্ষা ভাবনার কিছু কথা। তিনি মনে করতেন - দেশের শিক্ষার সঙ্গে দেশের সর্বাঙ্গীণ জীবনযাত্রার যোগ স্থাপন করা অত্যাবশ্যক। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয় শুধু ডিগ্রী নয় ছাত্রের মনের মনিকোঠায় তিনি গেঁথে দিতে চেয়েছিলেন বিশ্বজনীনতার বীজ। বিদ্যালয় - বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র একটি পরীক্ষার মাধ্যমে পাস করা সার্টিফিকেট দেওয়ার স্থান নয়, শিক্ষার প্রকৃত ক্ষেত্র সেখানে, যেখানে বিদ্যার উদ্ভাবন চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হলো বিদ্যার উৎপাদন , তার গৌণ কাজ-ই সেই বিদ্যা দান করা ।
এইভাবে আমরা আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের ধমনী ও শিরার মধ্যে যদি বিদ্যা উদ্ভাবনের প্রক্রিয়াটি শুরু করতে পারতাম তাহলে বোধহয় এই দুঃসময়ে একটি পাশ সার্টিফিকেটের আশায় দিন গুনতে হতো না।
রবিঠাকুর
নীতা সরকার
আজ পঁচিশে বৈশাখ,
হে মহা মানব--
তোমার চরণে শতকোটি প্রণাম।
তুমি আমার প্রাণের ঠাকুর রবিঠাকুর
তোমার চরণে অর্পণ করি পুষ্পাঞ্জলি।
কে বলে তুমি নেই
তুমি আছ প্রতিটি মানুষের রক্তে, মজ্জয়
হৃদয়-সিংহাসনে।
তোমার লেখনী অসংখ্য কবিতা, গান
আজও প্রতিটি মানুষের অন্তরে।
আমাদের জীবনে প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি পর্যায়ে তুমি।
তুমি আমাদেরই একজন।
তোমার গড়া স্বপ্নের শান্তিনিকেতন
একদিন হবে পৃথিবীর স্বর্গ।
তোমার গীতাঞ্জলি লেখা কাব্যগ্রন্থ
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী।
তাই তো তুমি আমাদের বিশ্বকবি।
হে মহান হও তুমি চির অমর।
রবি স্মরণে
তপনকুমার গোস্বামী
রবি ঠাকুর নামটি শুনেই
দোলা লাগে মনে।
নৃত্যে ছন্দে গদ্যে পদ্যে
মাতি সবার সনে।
লিখলে তুমি কয়েকশত
কাব্য নাটক ছড়া ।
ছাতিমতলায় পঠন পাঠন
তোমার ভাবনা ভরা।
তোমার লেখার ছত্রে ছত্রে
ভালোবাসার গানে।
আনে সাহস খুঁজে যে পাই
বেঁচে থাকার মানে।
মূল্যবোধের অবক্ষয়ে
বাতাস ওঠে ভরি।
পরশমণির খোঁজে আমরা
তোমায় স্মরণ করি।
নোবেল প্রাইজ পেলে তুমি
গীতাঞ্জলির জন্য।
সারা বিশ্ব চিনল তোমায়
আমরা হলাম ধন্য ।
আমার রবি
~ সুচক্র
আমার রবি পথের ধূলায়, গ্রামের বাঁকে বাঁকে,
আমার রবি পথভোলাদের পথ দেখাতে ডাকে।
রবি আমার স্নিগ্ধ-জীবন, বাঁচার অপার সুখ,
সেই সুখেতেই বিশ্ব নাচে, ভরে ওঠে সব বুক।
আমার রবি অরূপ রূপের সৌমশুচি মূর্তি,
যে রূপেতে বিশ্বমনের অমল-শ্যামল স্ফূর্তি।
আমরা দেখি রবির আলোয়, রবির তেজে জ্বলি,
রবির সুরে সুর বাঁধি, আর রবির কথাই বলি।
আমার রবি নামেই ঠাকুর, পুজো করি না তাকে,
মহাসাগরের ভালোবাসা জমা মোদের বুকে।
অচেনারে মোদের চেনায় রবি হৃদপুরাণের হাটে,
মোদের রবি সবখানেতে, মহাকালের বাটে।
চিঠি
নন্দিনী সরকার
রবি ঠাকুর লিখছি তোমায়
এই যে খোলা চিঠি,
কী যে হলো সোনার দেশে
নিচ্ছে সবাই ছুটি!
আসছে তোমার বোশেখ মাসে
কাছেই জন্মদিন,
তুমিই যে গো বাতাস মোদের
সুরের নিশিদিন।
এমন কিছু পারবে কি গো
ম্যাজিক কিম্বা জাদু?
আর যেনো না হারায় কেহ
শান্তি নামুক শুধু।
সবাই মাতে এই সময়ে
দেয় নতুনেরে ডাক,
কষ্টগুলো ভুলতে যে চাই
পঁচিশে বৈশাখ।
দেখছো তুমি ওপর থেকে
সন্ধ্যা তারা হয়ে-
তোমার দেশের এ দুর্দশা
কান্না গেছে ছেয়ে।
বিপদে যেন ভয় না করি
শিখিয়ে গেছো তুমি,
শক্তি দাও গো মোদের পিতা
প্রণাম পদ চুমি।।
রবীন্দ্রনাথ -- ৩
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
আমার দৈনন্দিন তোমার বাণীতে বাঁধা
সহজপাঠ বুকে তোমার গভীর উপলব্ধির তত্ত্বতালাশে
পথচলা ভাবনায় অবিরাম সংক্রমণ পথভ্রষ্ট হতে দাও না রবীন্দ্রনাথ।
তোমার হিমালয় কুয়াশার ভেতর দুর্লঙ্ঘ্য সবুজ টান চলমানতার প্রণোদনা
সমুদ্রের গভীর নীলে আর শুভ্র ফেনায় প্রাণের স্পন্দন -- বিশ্বভ্রমণ।
একটু বিশ্রাম তোমার ভুবনডাঙায় সবুজ প্রান্তরে ছায়াময়
কথা আর সুরে পার হই ঊষর ভূমি
আঘাতে ভাঙে না আশা দুর্নিবার জয়ে প্রবল প্রত্যয়।
সূর্যের মতো জীবনের ইঙ্গিত সীমিত পৃথিবীর রং জাগানিয়া কৃষ্ণচূড়ায়
শিরীষ শাখায় বা চাঁপাগন্ধে উতরোল দিনের দিশায় মানসযাত্রা
শিলং পাহাড় বা শিলাইদহে নীলগ্রহের দিকে দিকে জেগে ওঠা
প্রাণ আমার রবীন্দ্রনাথ।
রবি ঠাকুর
গোবিন্দ মোদক
এক যে ছিলেন রবি ঠাকুর, লেখনী তার সাথী,
ছড়া কবিতা গল্প উপন্যাস লেখেন দিবা-রাতি।
তাঁর কলমে ছোটো নদী এঁকে-বেঁকেই চলে,
নিঝুম দুপুর ঝিমোয় যে গ্রাম গ্রামের ছায়াতলে।
তিনটে শালিক ঝগড়া করে রান্না ঘরের চালে,
সহজ-পাঠে তাঁর লেখনী কতো কথাই বলে।
কলসি কাঁখে গ্রাম্য বধূ জল ভরতে যায়,
ফটিক কিংবা তারাপদ দু'চোখ মেলে চায়।
চিঠির অপেক্ষাতে অমল, দইওয়ালা যায় হেঁকে,
কতো কথাই বলে মিনি কাবুলিওয়ালা ডেকে।
ধারাগোলে যে গুপ্তধন ? হতাশ কি মৃত্যুঞ্জয় ?
কতো কিছুই তো লিখেছেন, সব কি পড়া হয় ?
নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছেন লিখে গীতাঞ্জলি,
বহুমুখী প্রতিভা যে তাঁর কতো আর বলি !
শেষের কবিতাতে তাঁর অমিত বা লাবণ্য,
রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়ে সবার জীবন ধন্য।।
চাষী প্রজা ও রবীন্দ্র ভাবনা
কাজী সামসুল আলম
নিজে জমিদার হয়েও জমিদারির নিষ্ঠুর ব্যবস্থা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ নিজে কী বলেছেন, আজও জানলে একদিকে যেমন অবাক হতে হয়, তেমনি মহর্ষি মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নীচু হয়ে থাকে | তাঁর লেখাতেই পড়ি....
"আমার এই দরিদ্র চাষি প্রজাগুলোকে দেখলে ভারী মায়া করে -- এরা যেন বিধাতার শিশু সন্তানের মতো নিরুপায়, তিনি এদের মুখে নিজের হাতে কিছু তুলে না দিলে এদের আর গতি নেই | পৃথিবীর স্তন যখন শুকিয়ে যায় তখন এরা কেবল কাঁদতে জানে ; কোনও মতে একটুখানি খিদে ভাঙলেই আবার তখনি সমস্ত ভুলে যায় | সোশিয়ালিস্টরা যে সমস্ত পৃথিবীময় ধন বিভাগ করে দেয় সেটা সম্ভব কি অসম্ভব ঠিক জানিনে -- যদি একেবারেই অসম্ভব হয় তাহলে বিধির বিধান বড়ো নিষ্ঠুর, মানুষ ভারী হতভাগ্য! কেন না, পৃথিবীতে যদি দুঃখ থাকে তো থাক, কিন্তু তার মধ্যে এতটুকু একটু ছিদ্র একটু সম্ভাবনা রেখে চেষ্টা করতে পারে, একটা আশা পোষণ করতে পারে | যারা বলে কোনও কালে পৃথিবীর সকল মানুষকে জীবনের কতকগুলি মূল আবশ্যকীয় জিনিস বন্টন করে দেওয়াও নিতান্ত অসম্ভব অমূলক কল্পনামাত্র কখনওই সকল মানুষ খেতে পরতে পারে না, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ চিরকালই অর্ধাশনে কাটাবেই এর কোনও পথ নেই -- তারা ভারী কঠিন কথা বলে |" *
* রবীন্দ্রনাথ --ছিন্নপত্রাবলী, পত্র সংখ্যা ১৫.
রবীন্দ্রনাথ বাঙালির ঈশ্বর
রাজীব ঘাঁটী
আমাদের প্রতিদিনের জীবনে রবীন্দ্রনাথ আছেন বিজ্ঞানের মতো, আমরা রোজ ই তাঁকে ব্যবহার করি অথচ দেখতে পাই না । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রায় যে ক্যানভাস এঁকে দিয়েছেন তা আমাদের আশ্রয়।
সামাজিক বৈষম্যের যে কথা তিনি একশো বছরের ও আগে ভেবেছেন তা আজ জ্বলজ্বল করছে। আজ ও প্রত্যেকটি অমল রাজার চিঠির অপেক্ষা করে অথচ রাজার চিঠি আসে না, গৃহবন্দী অমলরা তখন কল্পনার আশ্রয়ে খুঁজে নিতে থাকে একটা নিজস্ব জীবন।
এভাবেই ব্রাক্ষ্মণ্যবাদ থেকে মুক্ত হতে পারে না সমাজ, যেখানে নিশ্চিত যে প্রগতির চাকা ঘুরবে শ্রমিকের হাত ধরেই। ধর্ম বৈষম্যের ব্যবধানে সোজা মেরুদণ্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "গোরা" কে।
এই বাস্তবিকতায় আমাদের জীবন এগিয়ে চলে শুধু এই ভাবনায় যে কোন একটা সকাল আমার বা আমাদের হবে । একটা রবীন্দ্র সময়ের অপেক্ষা শুধুমাত্র।
"নিরুপমা" আজকেও সেই অবস্থানে সুখী হতে চায়। মধ্যবিত্ত তথা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের কন্যার পিতারা এখনো ভাবে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল ধনী পরিবারের গৃহবধূ হলেই তার মেয়ে সুখী হবে। নিঃস্ব হয়ে তাই একটি সুপাত্রের খোঁজ শুরু হয়। এখানেই একজন লেখক সার্থক, যখন সৃষ্টির শতবর্ষ পরেও তাঁর লেখনী প্রাসঙ্গিকতা বয়ে বেড়ায়। রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রতিদিনের আশ্রয়, আমাদের ঠিকানা। রবীন্দ্রনাথ হলেন এ সময়ের বাঙালির ঈশ্বর।
ডাক
তৈমুর খান
তোমার বসন্তে ফুটে উঠলাম
আমি আজ কী ফুল ? কী ফুল ?
গোলাপি রঙের পাঁপড়ি
মেঘে মেঘে সোনালি উত্তরীয়
পঁচিশে বৈশাখ এসে ডাক দিল
এত সংশয় ! অন্ধকারে ডুবে আছে পথ
প্রহরে প্রহরে জেগে ওঠে বিষণ্ণ কাক
তবু যুগ , যুগের পথিক
নিরালোকে খোঁজে সেই মুখ
তুমি ডাকো, ডেকে নাও
আমার সন্দিগ্ধ চেতনায়
হে পঁচিশে বৈশাখ !
তুমি আজি মোর মাঝে আমি হয়ে আছ
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
রাতজাগা তারারা যখন ঘরের মেঝেয় আগ্রহী শ্রোতা চাঁদকে গায়ে মেখে,তখন গীতবিতান চির - আলিঙ্গনে।"চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে"। লজ্জায় লাল চাঁদ। তারাদের খুনসুটি। ভোরের প্রতীক্ষায় জাগে রাত গানে গানে।লাল আবীরে নব বিহানের সূচনা:"মঙ্গল প্রভাতে/ মস্তক তুলিয়া দাও অনন্ত আকাশে/ উদার আলোক-মাঝে, উন্মুক্ত বাতাসে"।নিকোনো উঠোনে সদ্যস্নাতা মায়ের চুল থেকে ঝরে পড়া জলের আলপনারা ছন্দে বিভোর:" আনন্দলোকে মঙগলালোকে"। বাড়ি যেন পুণ্যতোয়া। সবুজের আন্দোলন ডালে ডালে। পাখিদের শিষে শঙ্খ ধ্বনি। প্রজাপতির ডানায় ভর করে প্রাঞ্জলি:"হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে , ময়ূরের মতো নাচেরে"।
রবীন্দ্রনাথ এভাবেইঅনুভবের আকর। পরঞ্জয় অক্ষরেরা ঝলা প্রাণের সৌমনস্যতায় :"আমি ঢালিব করুণাধারা/আমি ভাঙ্গিব পাষাণকারা"। "জীবনের পাশে মরণ দাঁড়ায়ে", তবুও বাঁচার অভিলাষ পেখম মেলে:"মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে/মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই"।বিপর্যাস সংরোহে তিনি প্রাণের দিয়াড়ি হাতে সতত :"পিছে পিছে তব চলিবে ঝরিয়া আমার আশিষ-ঝরণা"!জীবন-ঝর্ণায় পরম অবগাহনেই মুক্তির খোঁজে যোগী তিনি:"বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি,সে আমার নয়।/ অসংখ্য বন্ধন-মাঝে মহানন্দময় /লভিব মুক্তির স্বাদ"।
প্রাণের রবি ঠাকুর
মতিলাল দাস
তুমি এসেছিলে সেই কবে দেড়শ বছরের কিছু আগে। সেই জল পড়ে পাতা নড়ে!" দিয়ে শুরু তোমার,
কে বলে এখন তুমি নেই! তুমি আছো হৃদয়ে, তুমি আছো মননে। হে আমার প্রিয় কবি! তুমি এসেছিলে বলেই আমরা কবিতা লিখি। তুমি এসেছিলে বলেই প্রেমের কাব্য পড়ি, প্রেমিকের কাছে চিঠি লিখি!
তুমি এসেছিলে বলেই প্রেমের উপাখ্যান সৃষ্টি করি, প্রেম করি।
আমাদের জীবনের চারিপাশ ঘিরে আছো তুমি।
আমাদের চলার পথে কোথাও থেমে গেলে, ধার নিতে হয় তোমার কাছে। হে কবি আমার রবি ঠাকুর, সাহিত্যের যে শাখায় হাত বুলিয়েছো, সেখানেই
পত্র পল্লবে শোভিত হয়েছে! কি ছোট গল্প, কি কবিতা, কি গান, কি উপন্যাস, কি চিত্রকলা!
তোমার " আমাদের ছোটনদী " কালজয়ী হয়ে আছে। সবার মুখে, দূই বিঘা জমি, পুরাতন ভৃত্য, আরো কত কি! তোমার ছোট গল্প, পোস্ট মাষ্টার অন্যরকম প্রেম হয়ে মূর্ত হয়ে রয়েছে প্রতিটি মানব মানবীর কাছে।
তোমার উপন্যাস, চোখের বালি, নষ্টনীড়, মধ্যবর্তিনী, নিশীথিনী-র মত কেউ রচনা করতে পারেনি এ যাবত কালে। সবগুলির সারমর্ম ছিল, আবার নিজের পথে ফিরে আসা।
তোমার কয়েক হাজার গান, একটি আরেকটিকে ছাড়িয়ে যায়।
কেউ কারো চেয়ে কম না, কাকে আমি সেরা বলবো! আমারো পরানো যাহা চায় তুমি তাই, তুমি তাই গো.....
হে আমার রবীন্দ্রনাথ! তুমি সেসব যায়গায় পদচিহ্ন এঁকে দিয়ে গেছো, তার অনেক জায়গাই যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।
শান্তিনিকেতনে গিয়ে তোমার উপস্থিতি অনুভব করেছি প্রতিটি ক্ষনে। তোমার জন্মদিনে অনেক ভালবাসা, শ্রদ্ধাঞ্জলি ও নতজানু শতকোটি প্রণাম।
রবি কবির পরশ প্রার্থনা
শ্রাবণী বসু
'রাইচরণ'-এর স্নেহে বাঁধা
'খোকাবাবু'কে তো চিনি----
'রহমত'-এর কন্যা স্নেহে
বাঁধা হয়ে আছে মিনি।
'সুভাষিণী'-র বোবা স্নেহে
বাঁধা আছে দুটি গাই ---
পাঙ্গুলি আর সর্বশী----
আজও খুঁটি বাঁধা পাই।
শহুরে বাবু 'পোস্টমাস্টার'--
'রতন' কে মনে নেই ?
কচি হাতের রাঁধা ভাত,
মায়ের স্নেহ সেই !
গিরিবালার 'মানভঞ্জন'
ভূলুণ্ঠিত বিবেক,
গোপীনাথের চোখে আঙুল,
কোন পাঠকে ভুলিবেক!
কবিগুরুর 'গল্প গুচ্ছ'
আধুনিক সব কালে,
দিও তোমার পরশ কবি,
লোকে লোকে , কালে কালে।
মায়ের আদর্শ
বিমল মণ্ডল
—কি রে কাঁদছিস কেন?
— মায়ের জন্য।
—জানেন বাবু কতদিন আমার মা আমায় ছেড়ে চাঁদের দেশে চলে গেছে। সেই দিন থেকেই আমি একা।
— জানিস, এই যে গোটা পৃথিবী দেখছিস- তোর যে চোখের জল তার কেউ মূল্য দেবে না রে।আর তা ছাড়া মা কি কারোর চিরকাল বেঁচে থাকে? তাই চল তোকে বাড়ি রেখে আসি।
— না, আমি বাড়ি যাবো না। আমাকে বাড়িতে কেউই ভালো বাসে না।শুধু মায়ের আদর্শ নিয়ে একটুখানি বেঁচে থাকতে চাই।
— তুই কি করতে চাস বল আমায়। আমি তোর পাশে থাকার চেষ্টা করবো।
আসলে রামেশ্বরও বাবা ও মাকে হারিয়ে একা থাকে। একটা ঘরও বানিয়েছে।সংসারও করেনি।তাই মা হারা ছেলেটিকে দেখে তারমধ্যে যেন অপত্য স্নেহ জন্মলাভ করেছে। তাই ছেলেটিকে সন্তান হিসেবে মনে মনে স্বীকার করে নিয়েছে। তাই বারবার ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করতে থাকে—
— কি রে বল? তোকে সব রকমের সাহায্য করবো আমি।
— সত্যি বাবু? আমার পাশে থাকবে?
— বললাম তো! বল তুই কি চাস?
— আমি আর বাড়ি যাবো না বাবু। তোমার কাছেই থাকব। আমি শুধু মায়ের আদর্শে বড়ো হব।কি বাবু পারবে তো?
— মা তো মা-ই। মা-র মত কি তোকে মানুষ করতে পারব? তুই আজ থেকে আমার কাছে থাকবি।আজ থেকেই দুজনই মায়ের আদর্শে বড়ো হব। কি তাই তো?
ছেলেটি রামেশ্বর বাবুর বুকে মাথা রেখে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে। রামেশ্বরও ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে ভবিষ্যতে মায়ের আদর্শের এক স্বপ্ন দেখে।
"ভেঙে মোর ঘরের চাবি"
দীপক জানা
একতারায় ছুঁয়েছে কে হাত
অণুরননে সুর কম্পন
ঝড়।
একটা পাগল, খেয়ালি
ক্ষেপামোরও স্বরলিপি থাকে
আড়াল জানেনা
এঁকে নেয় আলো আলো কথা
কালোর দোসর
ছটায় তিলক আঁকে কেউ?
এভাবে
বলাকা পাখায় রোদ্দুর
সবুজ গল্পের মাঝে রূপোলী রেখা
ছাতিম,পলাশ, বকুল ইচ্ছেরা
পাখি চোখ সামাজিক নয় তবুও..
রাঙাপথ হৃদয়পুরে গেলে-
অচিন পাখি ডানা ঝাপটায়
এক পা মাটি আর একপা ঘাসে রেখে
দাঁড়,পাল হীন নৌকোয়-
ডুবে যায় চোখ।
"চিরনূতন তুমি"
রূপা কুণ্ডু
আমাদের চলমান সময়ের প্রেরণায় ,
তোমারই সুরের ধারা চিরপ্রবহমান।
প্রশান্তির অমৃতবানী ,
নীরবে ছায়া ফেলে মনপ্রান্তে।
আর ,জীর্ণতা-গ্লানি এসব কিছুই
তোমার ঔজ্জ্বল্যে ম্লান।
বৈশাখ মানেই প্রখর দাবদাহে
চিরশান্তি তুমিই,
বরিষধারা বর্ষনকারী রূপে
শত ক্লান্তিরএকমাত্র আশ্রয়
সেই তুমিই।
তবু ,এই একটাই দিন
তোমার জন্য যথেষ্ট তো নয়!
হৃদয়ে তোমার জন্মদিনের ক্ষণ,
তিলে তিলে নূতন হয়।
মহান সৃষ্টির যে সম্পদে
ভরিয়েছো এ পৃথিবী
আজও তাই দিয়েই ,
চিরনূতন হোক চিরন্তন রবি।
জন্মদিনে ll
------শুভময় ------
এবছর ক্যালেন্ডারেই তোমাকে ফোঁটা দিলামl
জানিনা পরের বছর তোমার স্মৃতি ছুঁতে পারবো কিনা!
এ মহামারী পেরিয়ে
তোমায় নিয়ে ভাববার অবসর নেই
অবসন্ন দেহ-মন অবসন্ন আরোও l
কি রংয়ের ফোঁটা দিই তোমায়- জন্মদিনে?
চন্দন?
নাকি সিন্দুর?
নাকি দইয়ের!
এসব ভাবতে ভাবতে খালি আঙুল দিয়েই
তোমার কপাল ছুঁয়ে বসলাম
ক্যালেন্ডারের পাতায় l
বেঁচে থাকলে পরের বৈশাখে দেখা হবে ঠাকুর
আমাদের রবি ঠাকুর ছবি ঠাকুর l
আমার দেবতা
জয়দেব মাইতি
কোনদিন ধূপ ধূনোয় সাজাইনি তোমার ঘর-
মালা গাঁথিনি গলায় পরাবো বলে -
অকল্পনীয় কল্পনায় চোখ বন্ধ করিনি,
ঠাকুর কে ডাকবো বলে-
কি এমন মায়াবী সুর!
কি এমন ভালোবাসার ছায়া !
কি এমন স্বপ্নিল চন্দ্রিমা!!
আজও আচ্ছন্ন রাখে আমায় ??
ঘরময় শুধু তুমি আর তুমি হয়ে --ভালোবাসা দাও।
আগল দিতে আমার ভুল হয় -
আমি, হৃদয় হারাতে হারাতে ভুলে যাই, তেত্রিশ কোটি মিছে কল্পনা।
আমার রবীন্দ্রনাথ
সুব্রত ভট্টাচার্য
তুমি আমার প্রিয় সখা তুমি আমার শিক্ষাগুরু
তোমার বাণীর পরশ পেয়েই জীবন পথে চলার শুরু।
মা আমাকে ঘুম পাড়াতেন তোমার ছড়া বলে বলে
কবিতা সব শুনেছিলাম ক্রমে ক্রমে বয়স হলে।
বাবার খালি গলায় গাওয়া প্রিয় তোমার কত যে গান
শুনে শুনে কান তৈরি, জুড়িয়ে যেত মন ও প্রাণ।
মামা এলে আরেক মজা, তোমারই সব জীবনকথা
শুনে হেসে গড়াগড়ি, কখনো পেতাম বিষম ব্যথা।
বয়স যত বাড়ে তত তোমায় আমি আঁকড়ে ধরি
প্রেমে শোকে প্রতিবাদে তোমাকেই তো স্মরণ করি।
ধর্ম নিয়ে মাতামাতি নানা প্রশ্ন জাগে মনে
মৃদু হেসে উত্তর দাও তুমি আমায় সঙ্গোপনে।
তোমার কাছেই শিখেছি যে সৌন্দর্যের ছলাকলা
হাতের লেখার ছিরিছাঁদ ও সবিনয়ে কথা বলা।
প্রকৃতিকে সাথে নিয়েই বাঁচতে হবে তুমি শেখাও
গ্রাম বাঁচলে দেশ বাঁচবে, লিখেছ তো এমন লেখাও।
যখন আমি একলা থাকি বাইরে কিংবা নিছক ঘরে
অকারণে থেকে থেকেই তোমায় খুবই মনে পড়ে।
তোমার গল্প কবিতা গানে খুঁজে ফিরি বাঁচার মানে
হতাশার অন্ধকারে প্রদীপ জ্বালাও আমার প্রাণে।
রবীন্দ্রনাথ
র জ ত দা স
প্রখর রোদে শুকিয়ে যায় বিধবা দিন
একরাশ বিরক্তি প্রকাশ করা শব্দ হচ্ছে
কালবৈশাখী ঝড়ে উড়ে গেল পুঁথি পাঠ
মেঘলা দিনের মধ্যে এক অংশ রবীন্দ্রনাথ।
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ
কোথায় তুমি লুকিয়ে থাকা কষ্ট করে
আক্রান্ত হচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত
বাঁচার স্বপ্ন দেখায় তাই ছোট্ট অভ্যাস
একসুরে গান গেয়ে শোনান ঐ রবীন্দ্রনাথ।
বিপ্লব বহমান নদীর পাড়ে গিয়ে খুব
তিক্ত স্বাদ নিতে পারে সাবলীল হাওয়া
ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে চাইলো আমাকে
একান্ত মুহূর্তে কখনোই আমি চাই না অমৃত
গীতবিতান খুলে দেখাও একটু আলো
মুখে খবর নেই আবার কোনো অংশে বর্ষা
অবশ্যই পোশাক পরে খুঁজে পাওয়া যায়
কোথায় থাকবেন সবসময় রবীন্দ্রনাথ।
আকাশ কবি
গৌরচাঁদ পাত্র
সব রকমের বেড়া ভাঙার গান
শুনিয়েছিলে তুমি আকাশ কবি।
দেশ বিদেশের সীমানাটা মুছে
এঁকেছিলে এক বিশ্ব- দেশের ছবি।
স্বাধীনতা শুধু বিদেশী শাসন মুক্তি
এই সত্য কখনো মানো নি যে তুমি
কাজে কথায় চিন্তায় চেতনায়
চেয়েছিলে মুক্ত করতে সকল ভূমি।
শিক্ষা - শিল্প মানুষকে করে স্বাধীন ।
তাই শান্তিনিকেতন আর শ্রীনিকেতন।
ভাঙতে জাত ধর্মের বিভেদ কল
করেছিলে একতাসূত্রে রাখীবন্ধন।
প্লেগ কলেরা গিলে খাচ্ছিল
আর বন্দী করছিল কত শত প্রাণ।
অবনী ঠাকুর ,তুমি ও নিবেদিতা
নামলে পথে করতে মুক্ত জীবনদান।
নতুন নতুন বেড়া মাথা তুলছে
ফিরাতে চাইছে পুরোনো ভয়।
অভয় মন্ত্রে দীক্ষা দাও আজ
আনতে স্বাধীনতা প্রকৃত জয়।
আমার রবীন্দ্রনাথ।
আলোক মন্ডল
আমার মনের আঙিনায় দুই জন রবীন্দ্রনাথের বাস। একজন, যাঁকে আমি চিনি, যাঁর সঙ্গে আমার প্রাত্যহিক যাপন- কথা আর একজন, যাকে এখনও চিনে উঠতে পারি নি।সেই অচেনা- অজানা রবিঠাকুর যাকে চিনিয়ে দেন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমার "নিভৃত প্রাণের দেবতা"- তিনিই "আমার রবীন্দ্রনাথ"। কথকথার সংলাপে, ছেদ -যতির বারান্দা- ব্যাকরণে তাঁকে পাই না।গানের ভিতর দিয়ে যখন তাঁকে দেখি তখনই তাঁকে চিনি,তাঁর স্পর্শ পাই! তখনই বলতে ইচ্ছে করে," আমার সুর গুলি পায় চরণ আমি পাই নে তোমারে / দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে..."
এক পশলা বৃষ্টির পর শালবনের সবুজ শ্যামলিমায় সোনা রোদের যে ঝিলিক তা বড় ক্ষণস্থায়ী তবু মন ভরিয়ে দেয়। তেমনই এক অনাবিল আনন্দে অনুভবে- অনুভবে তোমাকে যে পাই,হোক সে এক পলক,কিংবা এক ঝলক! সৃষ্টি হয় যাপনের প্রতিটি মুহূর্তে বৃষ্টি ধারার মতো সহস্র রবীন্দ্রনাথের। কিন্তু তা যে বড় ক্ষণিকের! হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো ক্ষণস্থায়ী ! তৃষিত-হৃদয় যে আরও চায়,আরও আরও, এই নয়নে প্রভু ঢালো!আবেগ মথিত আর্তিতে তাই গেয়ে উঠি , "শুধু তোমার বাণী নয় গো, হে বন্ধু,হে প্রিয়/মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিও।"
কেননা,ভারাক্রান্ত হৃদয় আমার, চায় যে দিতে, কেবল নিতে নয়! সারা দিনের ক্লান্তি, সমস্ত সঞ্চয় যে তাঁকেই দিতে চাই! পারি না, পারিনা দিতে সবটুকু তবু উজাড় করে! না-পারার এই অক্ষমতা, এই তৃষা কেমন করে মেটাই,তুমি পথ না দেখিয়ে দিলে রবীন্দ্রনাথ, কে খুঁজে দেবে পথের দিশা!
হাত খানি তাই বাড়িয়ে আনো,দাও গো আমার হাতে- ধরব তারে, রাখব তারে,রাখব আমার সাথে! একলা পথের চলা আমার করব রমনীয়।জানি,এই আঁধার পথ যে তোমাতেই পূর্ণ হে রবিঠাকুর -"আমার প্রাণের রবীন্দ্রনাথ"!
অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত যে আলো,মহা বিশ্বের যে মহা বিস্ময় - দ্বন্দ্ববিদুর জাগতিক বাস্তবতায় সে রহস্যের উদঘাটন তো একজনই করে দেন, গানে- কবিতায় নাট্য মহূর্তে, সেই তো আমার আলো, আমার জ্ঞানের তমসাবৃত্তে উজ্জ্বল দীপশিখা! আমার নিভৃত প্রাণের দেবতা ! তাঁকে আমি পাই কদাপি কখনও কোন এক ব্রাহ্ম মুহূর্তে, তখন উদ্ভাসিত হৃদয়ের স্পন্দিত আভায় মনে হয় আমিই রবীন্দ্রনাথ!
সীমাহীন
চন্দন মাইতি
জগৎ এক সর্বঞ্জ আকাশের আচ্ছাদনের তলে,
বাংলা সেই আকাশের রবি।
প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য
সর্বত্রই এই চাদর দেয়--
বেদনার মলম,আবেগের ভাষা,
ভালোবাসার অঞ্জলি,বিরহের শক্তি,
আর অন্তরের ভক্তি।
গ্রীষ্মের শীতল হাওয়া,
আর শীতের উষ্ণ চায়ের কাপ,
বসন্তের সবুজ কচি পাতা,
শরতের নীল আকাশের সাদা মেঘ,
বর্ষার কালো মেঘের চোখের জল ও
হেমন্তের গোধূলি।
ওই আকাশটাকে যেন আস্ত এক বট মনে হয় --
কচি-কাঁচারা তার ঝুরিতে ঝুলে আহ্লাদিত,
উদ্যাম ক্রিড়ারত যৌবনের ক্ষনিকের দৃঢ় আশ্রয়
আর বার্ধক্যের সুস্থ বিশুদ্ধ আবাসন।
বিস্তৃত আকাশ হোক বা আস্ত বট,
তা এক দৃষ্টে গোচর করা কল্পনাতীত।
রবির ধারা
উজ্জ্বল ঘোষ
কবির কথায় আমি রবি
নইকো আমি সুকান্ত।
লেখনি দিয়ে অর্জিয়াছি
গীতাঞ্জলী কাব্য।
সাহিত্য মোরে দেয়েছে নোবেল
দিয়েছে অমর খ্যাতি।
নাইট পেয়েও ফেলিয়া দিয়াছি
গড়িতে অমর কীর্ত্তি।
আমার হস্তে লালিত হয়েছে
বাঙালীর ভাবধারা।
বাঙলা শিক্ষা বাঙলা দীক্ষা
আমারই পূন্যে ভরা।
বাংলা নাটক লিখিয়াছি আমি
লিখিয়াছি উপন্যাস।
সুরের বিতানে মুক্ত করেছি
গীতবিতানের দ্বার।
আমার রবি
আজমীরা প্রামাণিক
আমি যখন হাসি, খেলি, আমি যখন ছুটি,
রবীন্দ্রনাথ আমার সাথে হেসেই কুটিকুটি।
আত্মহারা হয়ে যখন আকাশপথে ভাসি,
সে বিমান তো তুমিই রবি, তোমায় ভালোবাসি।
উড়িয়ে ধ্বজা চালাই যখন অভ্রভেদী রথ,
তুমি তখন দূতের মতোই দেখাও সঠিক পথ।
স্কুলের ক্লাসে পড়ুয়াদের যখন বোঝাই পড়া,
মুখের বানী তুমিই কবি গড়গড়ানি ছড়া।
বোশেখ মাসের তপ্ত রোদে তুমিই ঠান্ডা হাওয়া,
পঁচিশ তারিখ তোমায় কেবল নতুন করে পাওয়া।
তোমার কথায় মালা গেঁথে ভূষণ পরি অঙ্গে,
প্রতি মাসের প্রতি দিনই তোমায় রাখি সঙ্গে।
তোমার সাথে ঘুমোতে যাই, তোমার সাথে জাগি,
সমস্যাতে সমাধানও তোমার কাছেই মাগি।
শিশুকালে তোমার সাথে সহজ পাঠে ছিলাম,
কৈশরেতে তোমার কাছে কবিতা পাঠ নিলাম।
যৌবনেতে তোমার সূরে প্রেমেরই গান গেয়ে,
একাকিত্ব কাটিয়ে উঠি গল্প সিঁড়ি বেয়ে।
সুখে-দুখে-অভিমানে তোমার পরশ পাই,
তুমিই আমার রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বকবি তাই।
আমার রবীন্দ্রনাথ
সুমিত্রা সাউগিরি
যখন আমি কষ্টে কাতর
অনিদ্রায় মধ্যরাত
তখন যার ভাবনা আঁকড়ে ধরি
তিনিই আমার রবীন্দ্রনাথ।
যখন আমি ক্ষতবিক্ষত
হতাশা ব্যর্থতায়
তখন যার বাণী ক্ষত সারায়
তিনিই আমার রবীন্দ্রনাথ।
যখন আমি বিপথগামী
পথের মাঝে একা
তখন যিনি আলো দেখান
তিনিই আমার রবীন্দ্রনাথ।
যখন আমি একলা বড়
ক্লান্ত-শূন্য অসহায়
যার সুরে অশ্রু ঝরে
তিনিই আমার রবীন্দ্রনাথ।
যখন আমি চাইনা বাঁচতে
অবহেলায় অনাদরে
তখন যিনি মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্র দেন
তিনিই আমার রবীন্দ্রনাথ।।
আমার রবি ঠাকুর
কলমে - শ্রীলিম,
রচনা - ৫ জৈষ্ঠ্য ১৪২৮, ২০ মে ২০২১।
স্থান - বালিয়াপুর, আসানসোল।
*************************************
রবি ঠাকুর তোমাকে কতবার মনে করি আমি,
বিস্ময়ে হারিয়ে যাই আমি,
ছোটোবেলার কথা মনে পড়ে খুব!
ছোটো খোকার অ আ শেখা,
সেই কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি,
বনে থাকে বাঘ গাছে থাকে পাখি।
এইসব কতো শিখেছি তোমার কাছে,
এখনও কী ভুলতে পেরেছি আদৌও।
ভুলি নাই তো আজও,
তোমার সেই ছোট্ট নদী যার দুই পাড় উঁচু,
এখনও পর্যন্ত আঁকে বাঁকে বয়ে চলে,
বয়ে চলে মসীমাখা গাঁয়ের পাশে,
তার হাঁটু জলে বালি চিকচিক করে রোদের ছটায়,
গাঁয়ের বউরা আজও কাঁখে কলসি নিয়ে জল আনতে যায়,
লেজ গুটিয়ে গরুগুলি আজও পার হয়ে যায় নদী।
এবার বলি তোমাকে বর্তমান ভারতের কথা,
শোনো একবার মনটি দিয়ে।
না না, অমন করে হাসলে চলবে না মোটেও,
শোনোই না একবার, কী বলি আমি।
তোমার কালের মানুষের দুর্ভাগ্য আজও অমলিন,
এখনও সেই অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয় তাদের।
আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছি আমরা,
তবুও বর্বরতায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি।
হিংস্র বাঘেও বাঘের মাংস খায় না,
প্রতিনিয়ত আমরা নিজেদেরকে ধ্বংস করে যাচ্ছি,
দেশের জনগণ মরুক ঘূর্ণিঝড়ে, বন্যায়, মহামারীতে।
দেশে এখন চরম সংকট, মৃত্যুর মিছিলে অজস্র জীবন।
শুনলে তো সব, এবার পরিত্রাণের উপায় বাতলে যাও !
ওকি, আলতো করে হেসে দু'হাত পেছনে নিয়ে,
আমার দিকে পিঠ ফিরে হাঁটা দিলে আমার রবি ঠাকুর।
বাতাসে আমি শুনতে পেলুম,
দিকে দিকে নাগিনীরা ফেলছে বিষাক্ত নি:শ্বাস,
শান্তির ললিত বাণী শোনানো, এখন শুধু ব্যর্থ পরিহাস।
কবি প্রণাম
দেবাশিস চক্রবর্তী
ওগো - বিশ্বকবি, নাও প্রনাম ।
তোমার বিশ্ব আজ মিলন বিমুখ !
একাকি বদ্ধ আজ আপন আলয়ে, নিরব অন্ধকারে !
পরিক্রমা থেমে নেই, চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা
অহরহ ছুটে চলে আপন গতিতে ।
রাত্রি - দিন , সময়ের চলাচল
স্রোতস্বিনী সম !
স্তব্ধ শুধু জীবনের মহাপরিক্রমা !
স্তব্ধ শুধু প্রকৃতির সাথে মানবের অবাধ প্রেমালাপ,
কাছাকাছি আসা !
এ বড় যন্ত্রণাময়,এ বড় কষ্টের অনুভূতি ।
এ দিন অভিপ্রেত নয় মানুষের কাছে ।
প্রকৃতি বিশ্রাম চায়,
হয়তো তাই হয়েছে উপায় ,
হয়তো এছাড়া বিলুপ্ত হতো
সৃষ্টি - স্থিতি - লয় !
তাই গণ্ডির মাঝে আবদ্ধ সময় !
মনকে শান্তনা দিই - শান্ত হও মন ,
এমন চঞ্চলতা নয় শুভ লক্ষণ ।
কত উৎসবের দিন যায় চলে,
কত প্রেম থেমে আছে অপেক্ষায়
একটুকু ছোঁয়া পাবে বলে ।
সবাই মৌন আজ,
তোমার জন্ম শুভ ক্ষনে !
মাথা কুটে লাভ নেই
বাইরের বন্ধ দরজায় ,
তাইতো একাকি আজ ,হে প্রাণের কবি
তোমারে প্রণাম জানাই মনে মনে ।
বৃক্ষমন
সুব্রত মাইতি
"আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না"৷
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রাণের ঠাকুর,প্রাণের স্পন্দন রবীন্দ্রনাথ। সহজ পাঠের হাত ধরে ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ রক্ত প্রবাহে।তখনই পড়তে পড়তে চিত্রকল্পগুলো অবলীলায় চোখের সামনে ভেসে উঠত,আজও তার স্পর্শ গন্ধ গায়ে মাখা।প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫শে বৈশাখ কবিতা আবৃত্তি সমস্বরে দলগত গান।এ অনাবিল খুশি মনের মনিকোঠায় আজও সুসজ্জিত।
চলতে চলতে বাংলা বিভাগের ছাত্র হেতু মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন আলোচনা মন্ত্র মুগ্ধের মত শুনতাম।এ বড় সুখের কথা গুরুদেবকে নিয়ে কত শত মানুষ চর্চা করেছেন আর বার বার তাঁকে নতুন নতুন রূপে আমাদের কাছে উপস্থাপন করেছেন।
সত্যি বলতে এই মহা সমুদ্রে আমরা সামান্য কয়েকটি নুড়ি কাঁকর সংগ্রহের চেষ্টা করছি মাত্র। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি অবলীলায় বলে গেছেন -
" আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতুহল ভরে। (১৪০০সাল)
বাংলা সাহিত্যে আকাশে রবি একজন তিনি রবীন্দ্রনাথ। নিজে একজন অতি সামান্য মানুষ হিসেবে উপলব্ধি করি প্রতিদিন ২৫শে বৈশাখ,প্রতিদিন জন্মদিন।জীবনে বেঁচে থাকার মন্ত্র তিনি।তাঁর সমৃদ্ধ ভাষা বাংলা সাহিত্যের সম্পদ, শিল্প সুষমা সারা বিশ্বের সম্পদ,আর আকাশ তো রামধনু অন্তর। একজন যুক্তিনিষ্ঠ আধুনিক মানুষ। শেষে বলি গঙ্গা জলে গঙ্গাপূজা
"আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ ধূলার তলে।"
প্রদীপ হাতে আমার ঠাকুর
মোনালিসা পাহাড়ী
দুঃসহ যন্ত্রনায় যাঁর পায়ের কাছে এসে আশ্রয় নিই
তিনি আমার রবীন্দ্রনাথ...
ঝরাপাতার মতো টুপটাপ ঝরছে জীবন
চৈত্রের শেষবেলায় যেমন অশথের ডাল শূন্য, রিক্ত,
হাহাকারে মোড়া
তেমনি এক আশ্চর্য শূন্যতা ঘিরে ধরছে চারিদিকে।
মৃত্যুর রং চিরকাল বিবর্ণ ধুসর
অজস্র ধুসরতা মিশে এখন চাপ চাপ আঁধার
নিজেকে কখনো এতোটা ক্ষণভঙ্গুর মনে হয়নি
যেমন এখন হচ্ছে।
প্রতিটি অসহায়তার বাঁকে একটিমাত্র ঠাকুর বসে আছেন
নিভৃত প্রাণের দেবতা
যিনি প্রদীপ জ্বালাতে জানেন
সহস্র বেদনায়, শত রূপে,শত ভাবে।
জীবন ও মহাজীবন
খুকু ভূঞ্যা
কবরস্থানের পাশে ধানি জমি।তার পরেই আদিগন্ত মাঠ। আমার বেশ লাগে মাঠে যেতে। ধান কাটতে।খড় বাঁধতে। সেটা একটা আলাদা অনুভূতি। নিজের জমি চেনা।জমির পাশে সীতার মতো শুয়ে থাকা আল চেনা।আলের সীমান্তে বেনাঘাস মাঠকলমী অথবা স্থির দাঁড়িয়ে থাকা কাকতাড়ুয়া।
যখন বৌ হয়ে আসি আমার সীমানা ছিল উঠোন থেকে তুলসিতলা।শিরিষ গাছের ফাঁক দিয়ে রোদ দেখা। জোসনা দেখা।আর নিঃশব্দ অন্ধকার। কোথাও যেন কম পড়তো চোখের দৃশ্য।
গন্ডি ভাঙলাম। মাঠের সঙ্গে মাটির সঙ্গে ফসল শস্যের সঙ্গে আত্মীয়তা হবার পর শূন্যতা গুলো মুছে গেল।
কেউ কেউ জীবন ছাড়িয়ে মহাজীবনে যেতে চান।প্রাণ পেতে ব্রহ্মের অনাহত ধ্বনি শুনতে চান আসলে ওটা একটা ভান মাত্র। জীবন পেরিয়ে মহাজীবনে যাওয়া অত সহজ নয়। তাঁদের যদি প্রশ্ন করি কখনও কি ফুল ফোটার শব্দ শুনেছেন?বীজফাটার আওয়াজ?মাটির শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ?শিশির পাতের আওয়াজ? অথবা বৃক্ষের জেগে থাকার শব্দ বা নীড়ের ভেতর পাখির কান্না?
তাঁরা কি দেখেছেন কোনো কৃষকের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার লড়াই?দুশো টাকার বাজার গৃহিণীর হাতে ধরিয়ে বলে, এটা দিয়ে এক সপ্তাহ চালাতে হবে। গৃহিণী অংক জানে না।জানে না বীজগণিত পাটি গণিত। শুধু জানে আটপৌরে একটা হিসেব।আজ খেয়ে কালকের চিন্তা করা। সৎভাবে বাঁচা ও বাঁচিয়ে রাখা। সেই কৃষক দিনের শেষে অনন্ত ক্লান্তি নিয়ে কিষাণীর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে শুধু এককাঠা ধানি জমির স্বপ্ন দেখতে দেখতে।
এই কৃষকের ধর্ম কী আপনি জানেন?পথ কী? স্বপ্ন বাসনা ইচ্ছের নাম?
পাশাপাশি মাঠে যে কৃষক দম্পতি খড় বাঁধতে বাঁধতে পরস্পরের সঙ্গে খুনসুটি করছে। ঝগড়া করছে।আর তর্কে তর্কে জেনে নিচ্ছে তারা কী চায় একে অপরের কাছে। আপনি কি বলতে পারবেন এটা প্রেমের গল্প ? না জীবনের? না মহাজীবনের?
আমি চিরদিনই জীবনের মাঝে থাকতে চেয়েছি। থাকতে চাই।আগে জীবনের সঙ্গে চেনা জানা হোক। জীবনের শোক দুঃখ বিরহ যন্ত্রনা শূন্যতাকে জয় ইস্পাত বুকে। কঠিন সাহসে। তারপর জীবন পেরিয়ে যা রয়েছে তার দরজা আপনি খুলে যাবে।
আমি এক কৃষক বধূ। জীবনের কথাই লিখতে এসেছি। জীবনকে চেনা জানার পর যদি কিছু সময় বাঁচে তোমাকে লিখব হে মহাজীবন। ততদিনে আমার অশ্রু সহ্য করো,আর নিষ্পাপ অন্ধকার--
দরদী রবীন্দ্রনাথ
প্রে মে শ প ন্ডা
এক দিন এক বর্ষার দিনে,
পদ্মার বুকে আসলো জল,
জল শুধু নয়, ঝড় ও তুফানে
বহিছে পদ্মা টলোমল।
আকাশের পানে তাকায় মাঝি,
ভিড়ায়ে বোটেরে চরে,
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বসে,
বোটের একটি ঘরে।
চরে পড়ে থাকা মানুষ একটি
নয়নে এলো যে তাঁর,
কবির ব্যাথিত দরদী হৃদয়,
করে ওঠে হাহাকার।
দেখাগেল শেষে লোকটাকে তুলে,
তখন ও আছে যে প্রান,
খাওয়ালেন তিনি ঔষধ ও পথ্য
পরালেন পরিধান।
পরিচয় কালে লোকটি যে বলে
ত্রিবেণী নাম যে মোর,
অসহায় আমি পরিজনহীন
নেই কোনো মোর ঘর।
ছিলাম যে এক নৌকার মাঝি
হয়েছিল মোর কলেরা,
মৃত ভেবে মোরে ফেলেদিল চরে,
নৌকার যত বাবুরা,।
সেদিন হতে ত্রিবেণী হল
কবির বোটের মাঝি,
এমন ই দরদী ছিলেন তিনি যে
স্মরণীয় তাই আজি।।
।।আমার বিচার তুমি করো তব আপন করে।।
রবির আলোয়।।
মঞ্জীর বাগ।।
যেদিন ঝড়ে আমার ঘর ভেঙে গিয়েছে আমি তো তোমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম রবি ঠাকুর। জল ভেঙে ভেঙে ডাঙার খোঁজ করা একটা মানুষ গীতবিতান আঁকড়ে স্থল খুঁজছে।বিষাদ কি শুদ্ধ করে?প্রেম কে পূর্ণ করে? জানি না।জগতের অনন্য ধারায় বিষাদ এক ক্ষীণ তম সুর। অতীতে ও তার অবস্থান ছিল না বর্তমানে ও নেই। আহা কি আছে তবে?এক আনন্দের গান।বসো আমার পাশে আমি আনন্দধারায় বসে উৎযাপন করি জীবন
বহে নিরন্তর আনন্দধারা।।
বাজে অসীম নভোমাঝে অনাদি রব,
জাগে অগণ্য রবি চন্দ্র তারা।
প্রতিরাতে স্মৃতি এসে দোলায়,ঘুমপাড়ায়। মার শরীরের মৃদু চন্দনের গন্ধও রবি ঠাকুরের গান।আমার কানে ঠোট ঠেকিয়ে গেয়ে যায়
সীমার মাঝে র্অসীম তুমি বাজাও আপন সুর
সীমাবদ্ধতা নয় রবীন্দ্র নাথের গানে অসীমেই আমাদের মুক্তি। না জন্মানো সন্তান বারবার আঘাত করছে। আমি তাকে স্পর্শের ভিতর এই আশ্বাস দিচ্ছি
আজ যেমন করে গাইছে আকাশ তেমন করে গাও গো
অংশটুকুকে আমার কাছে গচ্ছিত রেখে যে চলে গেল সে তো কোনোদিন আমার ছিল না। আমি তার সুর টুকু রেখে ভাসিয়ে দিলাম জলে।
ব্রাহ্ম পরিমণ্ডলে আমার বড় হওয়া।আমরা জীবনের প্রতি মুহুর্তে রবীন্দ্র নাথের গান কে বেজে উঠতে দেখেছি।আমার মাসির বিয়ের মন্ডপ জুঁই আর পদ্মে সাজানো। নবদম্পতিকে ঘিরে স্তোত্রপাঠ ও গান। মনে আছে
হৃদয় আমার প্রকাশ হল অনন্ত আকাশে
আমার সেই জ্যোৎস্নার রাতটি বারবার মনে পড়ে। ছাদে চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে।বাবা এসরাজে বাজাচ্ছেন।
তুমি খুশী থাকো আমার পানে
চেয়ে চেয়ে খুশী থাকো
খুশী থাকো
J
জীবন আমাদের শিক্ষক।সুখ আছে। দুঃখ আছে। জীবন মরণ সীমানা ছাড়িয়ে রবীন্দ্রনাথে আমাদের মুক্তি
শেষ পারানির কড়ি কন্ঠে নিলেম
রবীন্দ্রনাথ/
বিপ্লব চক্রবর্তী
_______________________
আজ বোশেখে পুঁই মাচাতে
সাতসকালে উঠোনজুড়ে
আলপনা হই রবীর আলো মেখে।
খেয়ালপড়ে ছেলেবেলার
শরীরজুড়ে একটি শিশু
ডিগবাজি আর লাফাতো আল্হাদে।
ধুলোয় ধুলোয় আছাড় খেত
বনবাদাড়ে ছুটত খেলত
কাটাছেঁড়ায় শরীরটা বরবাত
দিনের আলোএলে নিভে
বসত চাটাই হ্যারিকেনে
সহজপাঠ আর রবীন্দ্রনাথ।
শান্তমুখে প্রশান্তচোখ একটি মাথা
আর কিছু নয় লম্বা দাড়ি
ব্ল্যাকবোর্ডেতে থাকত আঁকা আগে।
পুজো পুজো গন্ধ পেতাম
গান কবিতা কথায় কথায়
সেদিন ছিল কে কার আগে জাগে।
সেই সকালের জীবন থেকে
কুড়িয়েছিলাম একটি আলো
হৃদয়জুড়ে সে ছিল আল্হাদ।
দেহমনে জড়িয়ে আজও
সেই শিশুই জেগে আছি
গর্ব করি সবার রবীন্দ্রনাথ।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment