":দিনে রাতে চাঁদে অন্ধকারে আমার এই সুন্দর দেশ ভারতবর্ষের সুন্দরতর গরিব বঞ্চিত মানুষদের অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছি। তাদের সুখ-দুঃখ আশা-আকাঙ্ক্ষা হতাশা ব্যর্থতাকে মনের আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়েছি আর অসহায় নিষ্ফল ক্রোধে ক্ষোভে চোখ ভিজে উঠেছে । তাদের উদ্ধার করতে পারিনি উন্নত করতে পারিনি কিন্তু আবিষ্কার যে করেছি সমব্যথী যে হয়েছি এটুকুই আমার মস্ত লাভ ।"
তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপরিচিত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশুনা করেন।
তিনি পেশাগত জীবন শুরু হয়েছিল চাটার্ড অ্যাকাউন্টার হয়ে। তিনি ছিলেন একজন নামী চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গের আয়কর বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য নিযুক্ত করেছিল। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের অডিশন বোর্ডের সদস্য হয়েছিলেন তিনি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। একদা বামফ্রন্ট আমলে তাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনবিভাগের বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা বোর্ড পশ্চিমবঙ্গ বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ড এবং নন্দন উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য করা হয়েছিল। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনে পরিচালন সমিতির সদস্যও নিযুক্ত হয়েছিলেন। বুদ্ধদেব গুহ খুব সুন্দর ছবিও আঁকেন। নিজের লেখা একাধিক বইয়ের প্রচ্ছদ তিনি নিজেই এঁকেছেন। গায়ক হিসেবেও তিনি বহুজনের প্রিয়।
'জঙ্গলমহল' তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। তারপর বহু উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি লেখক হিসেবে খুবই অল্প সময়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তার বিতর্কিত উপন্যাস 'মাধুকরী' দীর্ঘদিন ধরে বেস্টসেলার। ছোটদের জন্য তার প্রথম বই- 'ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে'। ঋজুদা তাঁর সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় অভিযাত্রিক গোয়েন্দা চরিত্র। আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৭৭ সালে। প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ঋতু গুহ তার স্ত্রী। সুকণ্ঠ বুদ্ধদেব গুহ নিজেও একদা রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। পুরাতনী টপ্পা গানে তিনি অতি পারঙ্গম। টিভি এবং চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে তার একাধিক গল্প উপন্যাস।
উপন্যাস
- কোজাগর
- আয়নার সামনে
- অভিল্বাহিক
- অববাহিকা
- অবরোহী
- অদ্ভুত লোক
- আলোকঝারি
- অনবেষ
- বাবলি
- বাজে চন্দনপুরের কড়চা
- বাংরিপোসির দু রাত্রির
- বাসনাকুসুম
- বাতি ঘর
- চবুতরা
- চান ঘরে গান
- চারকন্যা
- চারুমতি
- ছৌ
- কুমুদিনী
- পাখসাট
- পরিযায়ী
- বাসানাকুসুম
- একটু উষ্ণতার জন্য
- গুঞ্জা ফুলের মালা
- হলুদ বসন্ত
- জগমগি
- যাওয়া-আসা
- ঝাঁকিদর্শন
- পলাশতলির পড়শি
- জঙ্গল মহল
- বনোবাসার
- লবঙ্গীর জঙ্গলে
- খেলা ঘর
- কোয়েলের কাছে
- মান্ডুর রুপমতী
- মহরা
- নগ্ন নির্জন
- ওয়াইকিকি
- কাঁকড়িকিরা
- পামরি
- জলছবি
- পারিধি
- রাগমালা
- কুর্চিবনে গান
- রিয়া
- সুখের কাছে
- এক ঘরের দুই রাত
বুদ্ধদেব গুহ 'হলুদ বসন্ত' উপন্যাসের জন্য আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৭৭ সালে।
ছোটগল্প:
টাটা, প্রবেশ, মুন্নির বন্ধুদের জন্য ,প্রন্টি, সাগর রাজা, শারদপ্রাতে, দ্বীপান্তর,বীজতালিকা,
টিটিচিকোরি, শেষ বিকেলের পেসেঞ্জার, শিকার, মুখাবয়ব, চরিত খেকো এন্ড কোঙ, গোসাঘর প্রাইভেট লিমিটেড, বোদাদা প্রভৃতি।
সমাজ সময় সচেতন শিল্পী বুদ্ধদেব গুহ তার কথাসাহিত্যে প্রতিবাদী চেতনার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তিনি জানতেন মানুষের জীবনে নিত্য কত ঘটনা ঘটতে থাকে এবং তাও আবার কালের করাল গ্রাসে তলিয়ে যায়, থেকে যায় অনুভূতির আনন্দ-বেদনা যা চিরন্তন। তিনি এই আনন্দ-বেদনার শিল্পী যিনি সময়ে সমাজের সাক্ষী হয়ে শাশ্বত অনুভূতিকে পাঠকের দরবারে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন। এখানেই বাংলা সাহিত্যে কৃতিত্বের অধিকারী সার্থক শিল্পী তিনি।
ইংল্যান্ড, ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশ, কানাডা, আমেরিকা, হাওয়াই, জাপান, থাইল্যান্ড ও পূর্বআফ্রিকা তার দেখা। পূর্বভারতের বন-জঙ্গল, পশুপাখি ও বনের মানুষের সঙ্গেও তার সুদীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরংগ পরিচয়। সাহিত্য-রচনায় মস্তিষ্কের তুলনায় হৃদয়ের ভূমিকা বড়- এই মতে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন আজীবন।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment