জন্ম ৩০ জুন ১৯৫৩। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের রাজারামপুর গ্রামে, ছােটো। ক্ষয়ে-আসা বিকেলের মতাে এক। ক্ষয়িষ্ণু কৃষক পরিবারে।। তার কৈশােরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। মায়ের রাঙা সিঁথির মতাে হলদি নদী আর উর্বশীর মতাে এক গ্রাম প্রকৃতি। বাংলা সাহিত্য নিয়ে স্নাতকোত্তর । পড়াশােনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে সাংবাদিক হিসেবে। কর্মজীবন শুরু। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে। আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত।। এখন আনন্দমেলা পত্রিকার সহসম্পাদক।
কর্মজীবনের শেষে এখনও সৃজনশীল সাহিত্যের অঙ্গনে সমানভাবে সক্রিয় রয়েছেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পঞ্চাশ। বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে দশটি কিশোর গ্রন্থ।বাংলাদেশ থেকে কিশোর গল্পের ইংরেজি অনুবাদের বইও বেরিয়েছে একটি।
রচনা কর্ম :
১) জরিপ নামা
২) ধান ফুল
প্রভৃতিি
ছড়া
১) পালকি চলে
২) ফুল কড়ানি নদী
প্রভৃতি
২০১৪ সালে পেয়েছেন শিশুসাহিত্যের জন্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী পুরস্কার, ওই বছরই দ্য এশিয়াটিক সোসাইটি ও পারুল প্রকাশনীর যৌথ উদ্যোগে শিশুসাহিত্য পুরস্কার।
কবিতা -
১.
সিয়াচেনের মেঘ
সিয়াচেনের মেঘ, তুমি দিনরাত বন্ধুর বেশে
পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম গ্লেসিয়ারের গায়ে
সৈন্যদের মৌন পোশাক টাঙিয়ে রাখো।
অত উঁচু থেকে নেমে এসে তোমার কি কোনোদিন
মাটির পৃথিবীর অশীতি রমণীকে ‘মা’ বলে ডেকে উঠতে ইচ্ছে করে না?
থলকলমির বেড়ার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বান্ধবীর
আগুনরঙা ঠোঁটের কথা ভুলে যাও তুমি সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে?
তুমি রোজ বিকেলবেলা ঘরেফেরা মেঘের ছেলেমেয়েদের
কেন পড়তে দাও উদাসীন জীবনের পাঠ?
আকাশপারের দৌবারিক,
তুমি এক আকাশ উঁচুতে দাঁড়িয়ে সীমান্ত পাহারা দাও।
তোমার জন্মনক্ষত্র কবে মুখ লুকিয়েছে এই কুচুটেপনায়,
বুঝতে পারো না?
তোমার অনেকটা নীচে যে মানুষগুলো দেশের জন্যে লড়াই করছে
পররাষ্ট্রনীতির জিরাফ এসে রোজ বিকেলবেলা
তাদের সামনে মুখ তুলে দাঁড়ায়।
তার গ্রীবাদেশের নীচে কনে-দেখা আলোর মুখশ্রী নিয়ে
যে মানুষগুলোর বাড়ি যাওয়ার ছুটি বারেবারেই বাতিল হয়ে যায়,
তাদের মুখ লুকনো বিষণ্ণতায় তুমি আড়াল রচনা করো!
তুমি জেনে রাখো, মাইনাস পঁয়শট্টি ডিগ্রি ঠান্ডায়
তাদের চোখের জল কখনো বরফ হতে শেখেনি।
তাদের খাকি রঙের বুকপকেট থেকে লুকিয়ে
সন্তানের হ্যাপি বার্থ ডে’র ছবি কেড়ে নাও কেন?
বান্ধবীর সঙ্গে একটা সূর্যাস্ত বুকের মধ্যে লুকিয়ে
যে লোকটা শত্রুপক্ষের মিসাইলকে বুক পেতে ফিরিয়ে দেয়,
পূর্ব কারাকোরাম রেঞ্জের অবিনাশী মেঘ,
তাকে তুমি উদয়াস্ত বৈরাগ্যের ছবি আঁকা শেখাবে?
কুড়ি হাজার ফুট উপরে পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্রের মাথায়
একবার তুমি ভালোবাসার মেঘ ছড়িয়ে দিতে পারো না?
অনেক দূরে একটা গঞ্জের বাঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অধোবদন সংসারকে,
পায়সান্ন-রাঁধা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা
ঘোমটা খসে পড়া মেদুর মায়ের কাছে
ছেলের ঘরে ফেরার খবর পৌঁছে দিতে পারো না তুমি?
এই তো সেদিন হিমানীসম্পাতে মেশিনগান আঁকড়ে মারা গেল যারা
ওরা যে দেশেরই হোক, মনে রেখো, ওরাও মানুষ!
সত্তর ফুট বরফের নীচ থেকে তাদের শরীর তুলে এনে
বিধবার পোশাক পরা তাদের স্ত্রীর পিঠে হাত রেখে আর বলতে যেও না,
“চলে যাওয়া মানুষের জন্যে অমন করে মাতম করতে নেই!”
মানুষের বাধানো যুদ্ধে ভেঙে পড়ছে গ্লেসিয়ারের হীমশীতল পাঁজর।
এদিক থেকে পল্টুর ভাই গেছে, ওদিক থেকে এসেছে ইয়াসিনের ভাতিজা,
আজ সকালে সূর্য মুখ তোলার আগে পল্টুর ভাইয়ের ছেলে হয়েছে
অকৃতদার ইয়াসিন চোখ বোজার সময় ভাতিজাকে খুঁজেছিল।
সিয়াচেনের মেঘ, তুমি আর কবে যুদ্ধবিরতির সংবাদ শোনাবে?
মানুষের লড়াই তুমি আজ যদি থামাতে না পারো,
তবে কোথায় দাঁড়াবে গর্ভধারিণী স্নো লেপার্ড?
কলকাতা মেট্রোরেলের কম্পার্টমেন্টে লজ্জাহীন যুবকযুবতীকে দেখে
চোখ নামিয়ে নিয়ে যেমন করে ক্ষমা করে দিচ্ছ প্রতিদিন
তেমন ক্ষমাভিক্ষার দরকার নেই শরমী ব্রাউন বিয়ারদের,
তাদের তুমি এক অঞ্জলি নির্জনতা দাও।
ক্ষয়িষ্ণু মানবিকতার মতো ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে
তাপে দগ্ধ কালশিটে পড়া সিয়াচেন গ্লেসিয়ার,
ওর গায়ের মিসাইল আর গ্রেনেডের ক্ষতচিহ্ন মুছে যাক,
ওকে শান্তিতে শুয়ে থাকতে দাও বরফের নিশ্চিন্ত বিছানায়।
পৃথিবী জুড়ে মানুষ এবার ভুলে যাক সার্বভৌমত্বের মায়াজাল
এবার শপথ নিতে জেগে উঠুক নতুন এক মানব সভ্যতা।
ব্লাউজের ভিতর থেকে ছোট ছেলের ছবিটা বের করে
প্রসাদ উজিয়ে ঠাকুরের সামনে রেখে
ভাতের মাড় শুকিয়ে যাওয়া হাতে
মা ফের ভাত রাঁধতে তিনপাখা উনুন জ্বালুক।
জন্মান্ধ বাবার কোল আলো করে শুয়ে থাকুক
যুদ্ধে যাওয়া তার একমাত্র ছেলে।
যুদ্ধে যাওয়া দাদার জন্যে এবার থেকে ভাইফোঁটায়
বোনকে আর দেওয়ালে ফোঁটা দিতে হবে না!
এবার যুদ্ধফেরা সৈনিকের নিরহঙ্কারী স্ত্রীকে উপহার দাও
একটা গোটা রাতের একটানা অগ্নিকাণ্ড!
তা না হলে নতুন পৃথিবী তোমাকে কোনোদিন ক্ষমা করবে না।
ভিন গ্রহের প্রাণীরাও তোমার দিকে আঙুল তুলে বলবে,
“সিয়াচেনের মেঘ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী তুমি একটা মিথ্যুক!
তুমি এক হিংস্র রূপকথার ভুল পররাষ্ট্রনীতি।”
২.
নতুন পাঠ্যক্রম
বাঘের মেয়েকে আমি হিংসা পড়ানোর দায়িত্ব পেয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এই পাঠ্যক্রমে
তাকে ভরতি করতে চায় তার বাবা-মা।
হাতে-পায়ে তার এত বাঘনখ
দাঁতে তার টুঁটি কামড়ে ধরার আহ্লাদ
চোখে জঙ্গলের ব্যাকরণ।
আমি তাকে নতুন কী হাংসা পড়াব?
তবু তাকে হিসা-কবিতা, হিংসা-অঙ্ক,
হিংসা-কুইজ ও হিংসা-ব্যাকরণ পড়াই।
দেখি, এ সম্পর্কে তার জ্ঞান বড় কম!
বাঘের মেয়ে, এখনও ঠিকমতো হিংসা বানান লিখতে শেখেনি।
আমি তার বাবা-মাকে ডেকে বলি,
‘আপনার মেয়ে এই হুঙ্কার শিখছে তো
এই ভুলে যাচ্ছে থাবার কৌশল,
এই দাঁতের তীক্ষ্ণতা রপ্ত করছে তো
এই ভুলে যাচ্ছে হুঙ্কার।
ওকে এক বছর হিংসাপুরের হস্টেলে রেখে আসুন।’
আজ এক বছর পরে দেখি,
দূর মাঠ ভেঙে বাঘ আসছে মেয়েকে নিয়ে
মানুষের কাছে হিংসা পড়াতে।
সাহিত্য সাধনার মধ্যে রোমান্টিকতা এসেছে বারে বারে বিশ শতকের 70 দশকের কবি ও ছড়াকার বেশ কিছু রচনা সমাজ সচেতনতার কে লক্ষ রেখে করেছেন তাই মানুষ স্বদেশ তাঁর রচনায় বারে বারে দায়বদ্ধ থেকেছে আনন্দমেলা পত্রিকা সম্পাদনায় কিশোর বিভাগ পর্বে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন তারাগুলি আপনি উচ্চারিত হয় মধুময় আহ্লাদ এনে দেয় ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে গুনগুন মন গেয়ে ওঠে শিশুদের অন্তর বেদনা বিশেষ করে তার চিত্র নাটকীয়তা প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী চিত্রকল্পের অভিনবত্ব খুবই প্রশংসনীয়।
∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
No comments:
Post a Comment