Tuesday, 31 August 2021

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য। অমৃতা প্রীতম । ৩১.০৮.২০২১. Vol -481. The blogger in literature e-magazine.


অমৃতা প্রীতম।                                                     " ১৯৬৩ সালে লিখেছিলাম 'জলের দাগ'। পরের বছর যখন তা দিনের আলো দেখল , জোর গুজব .. পঞ্জাব সরকার নাকি এই লেখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেবে। কিছুই তেমন হল না কিন্তু। বরং ১৯৬৫ তে হিন্দিতে অনুবাদ হল, ১৯৬৬ তে উর্দুতে। তখন মনে মনে ভাবনা চিন্তা করছি, ছায়াছবির সম্ভাবনা কতটা।কিন্তু কিছুই হল না, কারণ রেবতী শরণ শর্মা খুব স্পষ্ট আর অকপট উপদেশ দিয়েছিলেন, 'না! এই উপন্যাসিকা সময়ের চেয়ে এগিয়ে আছে অন্তত এক শতক। আমাদের মন , ভারতবাসীর মন এখনো সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়নি। 'বিংশ শতাব্দীর এই কবি ভারত-পাকিস্তানের সীমান্তের উভয় দিকের মানুষেরই প্রিয়পাত্র ছিলেন। ছয় দশকের দীর্ঘ সময় ধরে তিনি কবিতা, কল্পকাহিনী, জীবনী, প্রবন্ধ, লোক সঙ্গীত প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় দুইশোটি গ্রন্থ রচনা করেন, যা বিভিন্ন ভারতীয় ও বিদেশী ভাষায় অনূদিত হয়।অমৃতা কউর ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে  ৩১ আগষ্ট পাঞ্জাবের গুজরানওয়ালা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর পিতা কর্তার সিং হিতকরি ব্রজ ভাষার একজন পণ্ডিত, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিখ ধর্মের একজন প্রচারক ছিলেন। অমৃতার বয়স যখন এগারো বছর বয়স, তখন তারা মাতার মৃত্যু হয়। এরপরেই তিনি ও তার পিতা লাহোর শহরে বসবাস শুরু করেন। মাতার মৃত্যুর পরে একাকীত্বের কারণে তিনি লিখতে শুরু করেন। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ অমৃত লেহরেঁ প্রকাশিত হয়। এই বছর তিনি প্রীতম সিং নামক একজন সম্পাদককে বিবাহ করেন ও স্বামীর নামে নিজের নাম পরিবর্তন করে অমৃতা প্রীতম রাখেন।

একজন রোমান্টিক কবি হিসেবে লেখা শুরু করলেও শীঘ্রই তিনি অঞ্জুমন তরক্কি পসন্দ মুসান্নাফিন-এ-হিন্দ নামক প্রগতিশীল লেখক সংঘে যোগ দেনযার ফলশ্রুতিতে ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তার লোক পীড় নামক বিখ্যাত গ্রন্থটি রচিত হয়, যেখানে পঞ্চাশের মন্বন্তরের পরে যুদ্ধ বিধ্স্ত অর্থনীতিকে সরাসরি সমালোচনা করা হয়। ভারতের স্বাধীনতার পরে তিনি লাহোর থেকে ভারতে চলে আসেন। স্বাধীনতার পরে দিল্লি শহরে গুরু রাধা কিষণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রথম জনতা গ্রন্থাগার নির্মাণে তিনি সহায়তা করেন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এই সময় কবি সাহির লুধিয়ানভির সঙ্গে তার প্রণয় ঘটে,কিন্তু পরে কণ্ঠশিল্পী সুধা মালহোত্রার সঙ্গে সাহিরের প্রেম গড়ে উঠলে অমৃতা লেখক ইমরোজের সান্নিধ্যে জীবনের শেষ চল্লিশ বছর অতিবাহিত করেন।


তিনি অজ্জ আখাঁ ওয়ারিস শাহ নূ নামক একটি বিষাদধর্মী কবিতা রচনা করেন, যেখানে ভারতের বিভক্তির সময়কার বিপর্যয়ের প্রতি তার ক্ষোভ ও রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ঔপন্যাসিক হিসেবে তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হল পিঞ্জর নামক একটি বিখ্যাত উপন্যাস, যেখানে তিনি পারো নামক একটি স্মরণীয় চরিত্র সৃষ্টি করেন, যাকে তিনি নারীদের বিরুদ্ধে অত্যাচার, মানবতা লঙ্ঘন এবং অস্তিত্ববাদের প্রতি সমর্পণের বিরুদ্ধে একটি মূর্ত প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলেন। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে এই উপন্যাস থেকে পিঞ্জর নামক একটি হিন্দি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।



১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তার রচিত সুনেহে নামক দীর্ঘ কবিতার জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তার কাগজ তে ক্যানভাস নামক উপন্যাসের জন্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কার জয় করেন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পদ্মশ্রী, ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মবিভূষণ ও সাহিত্য অকাদেমি ফেলোশিপ লাভ করেন।

দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে ডিসেম্বর, ছিয়াশি বছর বয়সে নতুন দিল্লি শহরে অমৃতার মৃত্যু ঘটে।


কবিতা পাঠ।


 স্মৃতি  

সূর্য’র বরং আজ অস্বস্তিতে ছিল

তারপর বন্ধ করেছে মেঘের জানালা

তারপর সিঁড়ি বেয়ে অন্ধকারে নেমে গেছে।

আকাশের ভ্রূ-তে

ঘামের বিন্দু পুঁতির মতো ঝুলে আছে

তারার বোতাম খুলে দিয়েছে

তুলে নিয়েছে চাঁদের শার্ট।

আমি নগ্ন হয়ে এক কোনে বসেছিলাম

তোমার স্মৃতি আমার কাছে এলো

ভেজা কাঠের

ভারি ও তিতকুটে ধোঁয়ার মতো।

শত শত চিন্তা ভিড় জমালো

শুকনো কাঠের

আগুনের লাল দীর্ঘশ্বাসের মতো

আমি দুটো কাঠের তৃষ্ণা মেটাই।

পুরোনো যুগের কয়লা ছড়ানো চারদিক

কোনোটা তৃপ্ত করি। কোনোটা নয়

সময় যখন তাদের মুছে নিতে চায়

আঙ্গুলের ডগা পুড়ে যায়।

রান্না হাঁড়ি তোমার হাত থেকে পড়ে যায়

এবং ভেঙ্গে যায়

আমরা ইতিহাসকে ভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছি

ক্ষুধার্ত থেকেই তিনি চলে গেছেন।

একটি গল্প

খাঁটি দুধের মতো আমার ভালোবাস,

বহু বছরের পুরোনো চালের মতো ভালোবাস

হৃদয়ের মাটির পাত্রে কচলানো এবং ধুয়ে রাখা।

পৃথিবী পুরাতন সিক্ত খড়ির মতো

সবকিছু ধোঁয়াতে অনুজ্জ্বল

রাতটা পেতলের পাত্রের মতো

চাঁদের রূপোর পোশাক ছেঁড়া ফাড়া

কল্পনা মলিন হয়ে এসেছে

স্বপ্ন পচা দুর্গন্ধময়

ঘুম হয়ে গেছে তিতকুটে।

জীবনের আঙ্গুলে

ঝামেলার আংটির মতো স্মৃতিগুলো চেপে ধরে আছে

যেন সময়ের স্বর্ণকারের হাত থেকে

স্বর্ণরেণু ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছে।

ভালোবাসার শরীর সঙ্কুচিত হচ্ছে

সঙ্গীতের জামা আমি কেমন করে সেলাই করব?

আমার কল্পনার সুতোতে জট লেগে গেছে

আমার কলমের নিব ভেঙ্গে গেছে

আর সমস্ত গল্পটা হারিয়ে গেছে।


প্রতিশ্রুতি


যন্ত্রণার রেখা খোদাই করা

আমার করতল একটি প্রতিশ্রুতি দেয়,

বিশ্বাসের রেখা

বয়সের রেখাকে ছাপিয়ে যায়।

তোমার জানতে ইচ্ছে করে

আমার ভালোবাসা কতোদিন টিকে থাকবে

অভ্যাসবশত বক্তৃতার ভালোবাসার কথা শেখাবে না

কেমন করে শুনতে হয় এখনো তা যে শিখেনি।

শব্দের ঐশ্বর্য ছাড়াই ভালোবাসার সমৃদ্ধি ঘটে।

আমার শরীরের দয়ার উপর আমার নিঃশ্বাস

যে কোনো সময় তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে

কিন্তু সময়ের বক্ষদেশে

আমাদের ভালোবাসার লিখন

কখনো মোছা যাবে না।

হির তো লায়লার নকল কেউ নয়

কিংবা মজনুও নয় রানঝার মডেল

প্রেম তার কাহিনীর পুনরাবৃত্তি করে না

প্রতিটি পৃষ্ঠাই তাজা এবং তুলনাহীন।


যন্ত্রণার তীর


আমার করতল ও আঙ্গুলের ডগায় বিদ্ধ হয়

কিন্তু জখম হওয়া আঙ্গুলে কোথাও না কোথাও

একটি আশা জীবনকে জাগিয়ে তুলছে।

(পাঞ্জাবের হির ও রানঝা কাহিনী লাইলি মজনুর সমান্তরাল মনে করা হয়)

 সুন্দরী ও মেধাবী অমৃতার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অমৃত লেহরান’ (অমর ঢেউ) যখন প্রকাশিত হয় তার বয়স মাত্র ১৬ বছর। তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। অমৃতা হিন্দি ও পাঞ্জাবি দু’ভাষাতেই লিখেছেন। তাঁর প্রকাশিত উপন্যাস ২৪টি, কাব্যগ্রন্থ ২৩, গল্প সংকলন ১৫, তিনি ভারতের সর্বাধিক অনূদিত সাহিত্যিকদের একজন। জ্ঞানপীঠ, পদ্মবিভূষণ, আকাদেমিসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। 


আমার ঠিকানা

আজ আমি আমার বাড়ির নম্বর
মুছে ফেলেছি
আমার রাস্তার কপালের যে চিহ্ন দিয়ে
সনাক্ত করা হয় আমি মুছে ফেলেছি
আর আমি সব রাস্তার দিক নির্দেশক
তুলে ফেলেছি
তুমি যদি সত্যিই আমার সাথে
দেখা করতে চাও
তাহলে সব দেশের সব শহরের
সব রাস্তার সব দরোজায় টোকা দিও
যেখানে স্বাধীন আত্মার এক ঝলক
দেখতে পাবে
সেটাই হবে আমার বাড়ি।

নেড়ে কুকুর

ব্যাপারটা অতীত থেকে আনা
যখন কোনো খেদ ছাড়াই
তুমি আর আমি ছাড়াছাড়ি করছিলাম
মাত্র একটা ব্যাপার তখন ঠিক বুঝতে পারিনি...

আমরা যখন পরস্পরের কাছ থেকে
বিদায় নিচ্ছিলাম
বাড়িটাও বেচে দিতে তৈরি
শূন্য পাত্র বাসন কোসন আঙিনায় ছড়িয়ে ছিল
সম্ভবত ওরা আমাদের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল
যেগুলো উপুড় হয়ে পড়েছিল
সম্ভবত আমাদের কাছ থেকে মুখ লুকোচ্ছিল।

দরজার ওপর একটি মলিন আঙ্গুরলতা
হয়তো আমাদের কিছু বলতে চেয়েছে সঙ্গোপনে
কিংবা মেজাজ খারাপ করেছে পানির নলের ওপর

এ ধরনের কোনো কিছু
আমার মনে আসেনি
কেবল একটা কিছু বারবার মনে পড়েছে

একটি নেড়ে কুকুর ঘ্রাণ পেয়ে
কেমন করে শূন্য কক্ষে ঢুকে পড়ল
তার পেছনে তালা পড়ল।

তিনদিন পর
যখন বাড়ি হাতবদল হলো
নগদ টাকার জন্য আমরা চাবি তুলে দিই
নতুন মালিকের কাছে আমাদের প্রত্যেকের তালার
তাকে দেখাই একটার পর একটা কক্ষ
একটি কক্ষের ঠিক মাঝখানে পাই
সেই কুকুরের গলিত শব...
একবারও তাকে ঘেউ ঘেউ করতে শুনিনি।

আমি কেবল তার দুর্গন্ধটা পেয়েছি
এবং এখনো হঠাৎ সেই দুর্গন্ধ শুঁকি
বিভিন্ন জিনিস থেকে গন্ধটা আমার কাছে উঠে আসে।

হস্তপাঠ

বিশ্বস্ততার রেখা
কেমন করে পাঠ করতে হয় কেউ জানে না
আমি জানি আমার হাতে
বিশ্বস্ততার একটি রেখা আছে
বিশ্বস্ততার রেখা।

আমি জানি না কেমন করে এর সংজ্ঞা দেব
কেমন করে বলব
এর সীমাবদ্ধতা কী
চিন্তা কতদূর স্বাধীন হবে, বেপথু হবে
এবং কোথায় বিপদ লুকিয়ে আছে।

অন্যের ঠোঁটের কতটা কাছাকাছি
কথাবার্তার আন্তরিকতার কতটুকু
বিশ্বস্ততার ধারণার সাথে যায়,
বিশ্বস্ততার রেখা।

কেমন করে একে গভীর করে
এবং শক্তিশালী
যখন কারো ওষ্ঠ থেকে
এত প্রতিশ্রুতি বেরোয়
যেন শব্দ তাকে মাপতে পারে।

আমি জানি বিশ্বস্ততার রেখা আছে
আমার হাতে
এটা অদৃশ্য হতে পারে
কিন্তু আমি রেখাটা দেখি
সবচেয়ে লম্বা ও সবচেয়ে গভীর রেখাটাই
আমার ছোট্ট হাতে ওপর।

আর এই হচ্ছে পাঁচ আঙুল
পাঁচটি অনুভূতি
পাঁচটি ঈশ্বর
সাক্ষ্য দেয়
বিশ্বস্ততার রেখার।

মিলন ও বিচ্ছেদ

সাদা পাথুর উপত্যাকার ওপর দিয়ে
আমাদের চোখ থেকে অশ্রুর ঝর্ণা বয়ে যায়

এই উপত্যকায় কোনো কিছু জন্ম নেয় না।

সকল প্রেমিক অভিশপ্ত
কোনো সৌন্দর্য বিজয়ী হয় না
সকল রাত সাক্ষী থাকে
অপেক্ষমান চোখ, তারাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।

এই নাটকের অভিনেতা বদলায়
নতুন করে বলা নাটক মঞ্চে নিয়ে আসে।
গল্প কিন্তু একই
অতীতের ট্র্যাজিক কাহিনী।

এটা আমি জানি তবুও আমি চাই
অজীবন টিকে থাকুক তোমার প্রেম
ভাগ্যক্রমে পেয়ে যাক কিছু ঐশ্বর্য
পাছে তোমার শব্দ হারিয়ে যায়।

কাউকে এমন সেবা দেওয়া হয়নি
এমন কারো সাথে দেখা হয়নি, মনে হয়
মিলন ও বিচ্ছেদ... দুটো একসাথে
অশ্রু আলিঙ্গন করে অশ্রুকে।

আজকে আমি আমার বাসার নাম্বার মুইছা ফেললাম,
আমি গলির মোড়ে যে রাস্তার নামটা লেখা ছিল, সেইটাও মুইছা ফেললাম।
কিন্তু যদি তুমি আমারে সত্যি সত্যি খুঁইজা পাইতে চাও
তাইলে নক কইরো
সব দেশের, সব শহরের
সব রাস্তার সব দরজায়।

এইটা একটা অভিশাপ, একটা আর্শীবাদও

আর যেইখানে তুমি দেখবা
ফ্রি স্পিরিটের একটা কণা
-জানবা, অইটা আমার ঘর।

 

তুমি আসলা না

বসন্ত জাইগা উঠলো আর ছড়ায়া দিলো তার হাত
ফুলগুলা বুনতে থাকলো অদের নরোম পাঁপড়িগুলা
রংয়ের উৎসবের লাইগা।
তুমি আসলা না।

বিকালগুলা দীর্ঘ হয়া উঠলো
লাল রং ছুঁইয়া গেলো আঙুরগুলারে
কাস্তেগুলা চুমা খাইলো গমের ক্ষেতে।
তুমি আসলা না।

মেঘগুলা জমতে লাগলো।
জমিন তার হাত খুইলা দিলো
ড্রিংক করার লাইগা আকাশের উদারতা।
তুমি আসলা না।

ঋতুগুলা পইরা নিলো অদের সৌন্দর্য্য।
রাত তার কপালে রাখলো
একটা চান্দের রাজমুকুট।
তুমি আসলা না।

তারাগুলা আবার কইলো আমারে
যে, আমার শরীরের ঘরে
সৌন্দর্য্যের একটা মোমবাতি এখনো জ্বলতেছে।
তুমি আসলা না।

সূর্যের সবগুলা রশ্মি সেজদা দেয়
সেই রশ্মি এখনো জাইগা আছে
রাতের মরণ ঘুমের ভিতরে।
তুমি আসলা না।



==={{{{{{{{{{{{∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆}}}}}}}}}}}}}}==



Monday, 30 August 2021

বিশেষ প্রতিবেদন। জন্মাষ্টমী তিথিতে। কৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী গীতা ও হিন্দুধর্ম । ৩০.০৮.২০২১. Vol -480 The blogger in literature e-magazine


কৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী গীতা ও হিন্দুধর্ম ।  



হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হল গীতা। মহাভারতের যুদ্ধ শুরুর সময় অর্জুনকে গীতার বাণী শুনিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। কিন্তু অর্জুন প্রথম নন, তার আগেও গীতার জ্ঞান তিনি অন্য কাউকে দান করেছিলেন। কে তিনি?অর্জুন ছাড়া প্রত্যক্ষভাবে কৃষ্ণের মুখ থেকে গীতা শুনেছিলেন সঞ্জয় (তিনি যুদ্ধের ঘটনা ধৃতরাষ্ট্রের কাছে বর্ণনা করার জন্য বেদব্যাসের কাছ থেকে দিব্য দৃষ্টি লাভ করেছিলেন), হনুমান (তিনি অর্জুনের রথের চূড়ায় বসে ছিলেন) ও ঘটোৎকচের পুত্র বর্বরিক যিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সব ঘটনা দেখেছিলেন -
  
 *** 
  • হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে যখন এই জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল, তখন একাদশী তিথি ছিল।
  • দিনটি ছিল সম্ভবত রবিবার।
  • প্রায় ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এই জ্ঞান দিয়েছিলেন তিনি।
  • গীতায় কৃষ্ণ ৫৭৪, অর্জুন ৮৫, সঞ্জয় ৪০ ও ধৃতরাষ্ট্র ১টি শ্লোক বলেছিলেন।
কেউ মরে না, আর কেউ কাউকে মারে না, সকলেই নিমিত্ত মাত্র…সমস্ত প্রাণী জন্মের পূর্বে শরীর ছাড়া ছিল। মৃত্যু পর শরীর ছাড়াই থাকবে। এর মধ্যবর্তী পর্যায়ে এঁদের শরীর থাকে, তা হলে কেন এঁদের জন্য শোক করা হয়। -- কৃষ্ণ. 
            গীতা-কে গীতোপনিষদ বলা হয়। অর্থাৎ, গীতা উপনিষদ্‌ বা বৈদান্তিক সাহিত্যের অন্তর্গত। "উপনিষদ্‌" নামধারী ধর্মগ্রন্থগুলি শ্রুতিশাস্ত্রের অন্তর্গত হলেও, মহাভারত-এর অংশ বলে গীতা স্মৃতিশাস্ত্রের অন্তর্গত।আবার উপনিষদের শিক্ষার সারবস্তু গীতা-য় সংকলিত হয়েছে বলে একে বলা হয় "উপনিষদ্‌সমূহের উপনিষদ্‌"।গীতা-কে মোক্ষশাস্ত্র নামেও অভিহিত করা হয়।
ঐতিহাসিকেরা এই গ্রন্থের রচনাকাল হিসেবে খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত যে কোন সময়ের মধ্যে হতে পারে বলে অনুমান করেছেন। অধ্যাপক জিনিন ফাউলারের মতে এই গ্রন্থের রচনাকাল খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী বলে মনে করলেও ] গীতা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ কাশীনাথ উপাধ্যায় মহাভারত, ব্রহ্ম সূত্র ও অন্যান্য গ্রন্থ পর্যালোচনা করে প্রমাণ যে, গীতা খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যে রচিত হয়েছিল।

শ্রীমদ্ভগবত গীতায় এমনই উক্তি করেছেন বাসুদেব কৃষ্ণ। হিন্দু ধর্মের একমাত্র গ্রন্থ বেদ। ঋগ, যজু, সাম ও অথর্ব— এই চারটি বেদ রয়েছে। বেদের সারমর্মকে বেদান্ত বা উপনিষদ বলা হয়। উপনিষদের সার রয়েছে গীতার মধ্যে। গীতা সম্পর্কে একাধিক চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে—


১. কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনকে গীতার জ্ঞান দিয়েছিলেন কৃষ্ণ। এটি শ্রীকৃষ্ণ-অর্জুন সংবাদ নামে বিখ্যাত।
২. গীতা কৃষ্ণ ও অর্জুনের কথোপকথন। কিন্তু কৃষ্ণের মাধ্যমে বিশ্বকে গীতার জ্ঞান দিয়েছিলেন পরমেশ্বর। কৃষ্ণ সে সময় যোগারূঢ় ছিলেন।

৩. গীতার চতুর্থ অধ্যায় কৃষ্ণ জানান, পূর্বে এই যোগ তিনি বিবস্বানকে জানিয়েছিলেন। বিবস্বান মনুকে জানান। মনু ইক্ষ্বাকুকে বলেন। এ ভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পরম্পরাগত ভাবে এই জ্ঞান অর্জন করে আসছেন রাজর্ষিরা। কিন্তু কালান্তরে এই যোগ লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। সেই পুরনো যোগই অর্জুনকে পুনরায় জানাচ্ছেন। পরম্পরাগত ভাবে সবার আগে বিবস্বান (সূর্য) এই জ্ঞান পেয়েছিলেন। তাঁর পুত্র ছিলেন বৈবস্বত মনু।

৪. কৃষ্ণের গুরু ছিলেন ঘোর অঙ্গিরস। ঘোর অঙ্গিরস কৃষ্ণকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন, সেই একই উপদেশ অর্জুনকে দেন কৃষ্ণ। ছান্দোগ্য উপনিষদে উল্লেখ পাওয়া যায় যে, কৃষ্ণ ঘোর অঙ্গিরসের শিষ্য ছিলেন। তার কাছ থেকে কৃষ্ণ এমন জ্ঞান অর্জন করেন, যার পর অন্য কিছু জ্ঞাতব্য থাকে না। দ্বাপর যুগে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনকে গীতার জ্ঞান দিলেও, এর প্রাসঙ্গিকতা এখনও বর্তমান।

৫. গীতায় ভক্তি, জ্ঞান ও কর্মের পথের আলোচনা করা হয়েছে। তাত যম-নিয়ম ও ধর্ম-কর্মের বিষয় জানানো রয়েছে। গীতা মতে ব্রহ্ম (ঈশ্বর) একটি। বার বার গীতা পড়লে এর জ্ঞানের রহস্য উন্মোচিত হবে। গীতার মাধ্যমে সৃষ্টি উৎপত্তি, জীব বিকাসক্রম, হিন্দু সন্দেবাহক ক্রম, মানব উৎপত্তি, যোগ, ধর্ম, কর্ম, ঈশ্বর, ভগবান, দেবী, দেবতা, উপাসনা, প্রার্থনা, যম, নিয়ম, রাজনীতি, যুদ্ধ, মোক্ষ, অন্তরিক্ষ, আকাশ, পৃথিবী, সংস্কার, বংশ, কুল, নীতি, অর্থ, পূর্বজন্ম, জীবনযাপন, রাষ্ট্র নির্মাণ, আত্মা, কর্মসিদ্ধান্ত, ত্রিগুণ সংকল্পনা, সমস্ত প্রাণীদের মধ্যে মৈত্রী ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়।


৬. গীতা যোগশ্বর কৃষ্ণের বাণী। এর প্রতিটি শ্লোকে জ্ঞানের প্রকাশ রয়েছে। যা প্রস্ফুটিত হলেই অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর হয়। জ্ঞান, ভক্তি, কর্ম যোগ মার্গের বিস্তৃত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এখানে। এই পথে চললে ব্যক্তি নিশ্চিত ভাবেই পরমপদের অধিকারী হতে পারবে।

৭. ৩১১২ খ্রীষ্টপূর্বে কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। কলিযুগ শুরু হয়েছিল শক সম্বৎ ৩১৭৭ বছর আগের চৈত্র শুক্লের প্রতিপদায়। আর্যভট্টের মতে, ৩১৩৭ খ্রীষ্টপূর্বে মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধের ৩৫ বছর পর দেহত্যাগ করেন কৃষ্ণ। তখন থেকেই কলিযুগের সূচনা মনে করা হয়। মৃত্যুকালে কৃষ্ণের বয়স ছিল ১১৯ বছর। আর্যভট্টের গণনা অনুযায়ী ৫১৫৪ বছর আগে অর্জুনকে গীতার জ্ঞান দিয়েছিলেন কৃষ্ণ।

৮. হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে যখন এই জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল, তখন একাদশী তিথি ছিল। দিনটি ছিল সম্ভবত রবিবার। প্রায় ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এই জ্ঞান দিয়েছিলেন তিনি। গীতায় কৃষ্ণ ৫৭৪, অর্জুন ৮৫, সঞ্জয় ৪০ ও ধৃতরাষ্ট্র ১টি শ্লোক বলেছিলেন।

৯. উপনিষদে গীতার গণনা করা হয়। তাই একে গীতোপনিষদও বলা হয়। এটি মহাভারতের ভীষ্ম পর্বের অংশ। মহাভারতের কিছু স্থানে হরিগীতা নামে এর উল্লেখ পাওয়া যায়।


১০. অর্জুন যখন কর্তব্য বিমুখ হয়ে সন্যাসী ও বৈরাগীর মতো আচরণ করে যুদ্ধ ত্যাগ করতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন, তখন তাঁকে গীতার জ্ঞান দেন কৃষ্ণ। অর্জুন ছাড়া সঞ্জয় গীতার জ্ঞান শোনেন এবং ধৃতরাষ্ট্রকে শোনান।
১১. গীতা এমন একটি গ্রন্থ, যার অনুবাদ, ব্যাখ্যা, টিপ্পণী, গবেষণাপত্র নানান ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। আদি শঙ্করাচার্য, রামানুজ, রামানুজাচার্য, মধ্বাচার্য, নিম্বার্ক, ভাস্কর, বল্লভ, শ্রীধর স্বামী, আনন্দ গিরি, মধুসূদন সরস্বতি, সন্ত জ্ঞানেশ্বর, বালগঙ্গাধর তিলক, পরমহংস যোগানন্দ, মহাত্মা গান্ধী, মহর্ষি অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখ ব্যক্তি গীতার ওপর প্রবচন দিয়েছেন।

কে বা কারা, কখন মহাভারত থেকে গীতাকে পৃথক করে স্বতন্ত্র গ্রন্থ রুপে প্রকাশিত করেছে, তার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না।


====={{{{{{{{{{{∆∆∆∆∆∆∆∆}}}}}}}}}}}}}====



Saturday, 28 August 2021

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য। মোরিস পোলিদর মারি বের্নার মাতরলাঁক (Maurice Polydore Marie Bernard Maeterlinck) . ২৯.০৮.২০২১. Vol - 479. The blogger in literature e-magazine

মোরিস পোলিদর মারি বের্নার মাতরলাঁক (Maurice Polydore Marie Bernard Maeterlinck)


"The famous author had paid me the left-handed compliment of cribbing the most important part of my work ... He clearly desired his readers to infer that he had arrived at certain of my theories (the result of ten years of hard labour in the veld) by his own unaided reason, although he admits that he never saw a termite in his life. You must understand that it was not merely plagiarism of the spirit of a thing, so to speak. He has copied page after page verbally."

মাতরলাঁক বেলজিয়ামের গঁ শহরের এক সম্ভ্রান্ত ফরাসিভাষী পরিবারে ২৯ আগষ্ট, ১৮৬২ তে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতা মাতিল্ড কোলেত ফ্রঁসোয়া (প্রদত্ত নাম: ভাঁ দঁ বশ) একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাঁর পিতা পলিদোর একজন দলিলপত্র সম্পাদক ছিলেন, যিনি তাদের সম্পত্তির ভান্ডার তত্ত্বাবধান করতেন।

১৮৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে সাঁ-বার্বের জেসুই কলেজে প্রেরণ করা হয়, যেখানে ফরাসি রোমান্টিক রচনাকে অবজ্ঞা করা হতো এবং সেখানে শুধু ধর্মসম্বন্ধীয় নাটক অনুমোদিত ছিল । এই বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা ক্যাথলিক মন্ডলী এবং সেখানে সংগঠিত ধর্মের প্রতি তাঁর বিমুখতাকে প্রভাবিত করে। 
১৯০১ সালে মাতরলাঁক
তিনি ছাত্রাবস্থায় কবিতা এবং ছোট গল্প রচনা করতেন । কিন্তু তার পিতা চাইতেন তাকে আইনজীবী বানাতে । ১৮৮৫ সালে গঁ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ক পড়া শেষ করার পর, তিনি কিছু মাস ফ্রান্স এর প্যারিস এ অতিবাহিত করেন । তাঁর সেখানে নতুন প্রতীকীবাদ আন্দোলনের কিছু সদস্যদের সাথে সাক্ষাত হয়, যাদের মধ্যে ভিলিয়ার্স দে এল'ইসলে অ্যাডাম ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, যিনি মাতরলাঁকের পরবর্তী রচনাসমূহ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন ।
মাতরলাঁকের প্রথম নাটক, প্রিন্সেস মালেইন, ওক্টাভ মিরবোর কাছ থেকে এক উদ্যমী প্রশংসা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি একজন বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হন; ল্য ফিগারো-এর সাহিত্য সমালোচক, আগস্ট, ১৮৯০ । পরবর্তী বছরসমূহে, তিনি অদৃষ্টবাদ এবং অতীন্দ্রি়বাদ দ্বারা চিহ্নিত প্রতীকীবাদী নাটক এর ক্রমধারা রচনা করেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইন্ট্রুডার (১৮৯০), দ্য ব্লাইন্ড (১৮৯০) এবং পেলিসেট মেলিসান্ড (১৮৯২)

১৮৯৫ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত শিল্পী ও অভিনেত্রী জর্জেট লেবলাঙ্ক এর সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্কে জড়িত ছিলেন । পরবর্তী দুই দশক মাতরলাঁকের কাজ লেবলাঙ্ককে প্রভাবিত করে। অ্যাগলাভ্যাইন এট সেলাইসেট নাটকের মধ্য দিয়ে মাতরলাঁক চরিত্র, বিশেষ করে নারী চরিত্র তৈরি করতে শুরু করেন, বেশির ভাগই তাদের ভাগ্যের উপর নিয়ন্ত্রিত ছিল । লেবলাঙ্ক মঞ্চে এইসব নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন । যদিও অতীন্দ্রি়বাদ ও দর্শনশাস্ত্র তার কর্মজীবনে তার কাজকে প্রভাবিত করেছিল, তবুও সে ধীরে ধীরে তার প্রতীকীবাদকে আরও বেশি অস্তিত্ব-সম্বন্ধীয় রচনাশৈলী দিয়ে আগের বিষয়ে ফিরে আসেন ।

১৮৯৫ সালে তার পিতা-মাতা তার এই খোলামেলা সম্পর্ককে অসমর্থন করলে, মাতরলাঁক ও ল্যব্লঁ প্যারিস এর পাসি জেলায় চলে যান। ক্যাথলিক চার্চ তাকে তার স্পেনীয় স্বামীর থেকে তার বিবাহবিচ্ছেদে অনুমোদন দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন । তারা প্রায়ই অতিথিদের (যেমন-মিরবো, জিন লরেইন ও পল ফোর্ট) আপ্যায়ন করতেন। তারা তাদের গ্রীষ্মের দিনগুলো নরম্যান্ড এ অতিবাহিত করতেন । এই সময়ের মধ্যে মাতরলাঁক তার "টুয়েলভ সংস" (১৮৯৬), "দ্য ট্রেজার অব দ্য হাম্বল" (১৮৯৬), "দ্য লাইফ অব দ্য বি" (১৯০১) এবং "অ্যারিয়ান এন্ড ব্লুবিয়ার্ড" (১৯০২) প্রকাশ করেন।

১৯০৩ সালে মাতরলাঁক নাটকীয় সাহিত্যের জন্য বেলজিয়াম সরকারের নিকট থেকে ত্রিবার্ষিক পুরস্কার পান ।এই সময়ে এবং মহাযুদ্ধের শুরুতে, তিনি একজন মহাজ্ঞানী ও সেই সময়ের উচ্চ ধ্যান-ধারণার মূর্তপ্রতীক হিসেবে সমগ্র ইউরোপে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন ।

১৯০৬ সালে মাতরলাঁক ও ল্যব্লঁ গ্র্যাস এর একটি বাগানবাড়িতে চলে আসেন । তিনি তার সময়গুলো হাঁটতে ও চিন্তার মধ্যে অতিবাহিত করতেন । যখন তিনি লেবলাঙ্কের থেকে দূরে সরে যাওয়ার টান অনুভব করতেন, তখন তিনি বিষণ্ণতায় ভোগতেন । তিনি তার অস্থিরতা বুঝতে পেরে নরম্যান্ডের সেইন্ট ভ্যান্ড্রিলেইনের বেনেডিক্টিন মঠকে খাজনা দেন তাকে এই অস্থিরতা থেকে আরাম দেওয়ার জন্য । মঠকে খাজনা দেওয়ার মাধ্যমে একটি রাসায়নিক কারখানাকে বিক্রি হওয়ার অপব্যবহার থেকে রক্ষা করেন এবং এভাবেই তিনি পোপের কাছ থেকে আশীর্বাদ পান । লেবলাঙ্ক প্রায়শই একজন মঠধারিণীর পোশাকে ঘুরে বেড়াতেন; তিনি রোলার স্কেইট পরিধান করে ঘরের আশপাশে ঘুরে বেড়াতেন । এই সময়, তিনি তার প্রবন্ধ "ফুলের বুদ্ধিমত্তা" (১৯০৬) রচনা করেন, যার মধ্যে তিনি সমাজতান্ত্রিক মনোভাবের সাথে সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি শ্রমিকদের বিভিন্ন সংস্থাকে এবং সমাজতান্ত্রিক দলকে অর্থ দান করেন । এই সময়, তিনি তার সর্বশ্রেষ্ঠ সাফল্যের জন্ম দিয়েছেন: রূপকথার নাটক, নীল পাখি(১৯০৮, তবে মূলত ১৯০৬ সালে লেখা হয়েছিল) । "ফুলের বুদ্ধিমত্তা" লেখার পর, তিনি অস্থিরতা ও লেখার প্রতিবন্ধকতায় ভোগেন । যদিও তিনি পরবর্তী এক বা দুই বছরে এই অসুখ থেকে সুস্থতা লাভ করেন, তবুও তিনি আগের উদ্ভাবনাগুলোর মতো আর কখনোই লেখতে পারেননি । তার পরবর্তী নাটকগুলি, যেমন মেরি-ভিক্টোয়ার (১৯০৭) ও মেরি ম্যাগডালেন (১৯১০), লেবলাঙ্কের জন্য নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রেখেছিল, লক্ষ্যণীয়ভাবে ইহা তার পূর্বসূরিদের থেকে নিম্নতর ছিল এবং কখনও কখনও কেবল তার পূর্বের ফর্মুলা পুনরাবৃত্তি করত। যদিও সেইন্ট ভ্যান্ডারিলে তার কিছু নাটক উন্মুক্তভাবে মঞ্চস্থ করা হয় এবং তা সফল হয়, তবুও মাতরলাঁক মনে করেছিলেন যে তিনি তার গোপনীয়তা হারাচ্ছেন । ১৯১০ সালের ১১ জুন, তার মায়ের মৃত্যু তাকে আবারও অস্থিরতায় ফেলে ।
১৯১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে মাতরলাঁক ডাহনকে বিয়ে করেন । তিনি আমেরিকার আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করেন । স্যামুয়েল গোল্ডউইন তার চলচ্চিত্রের জন্য তাকে কিছু চিত্রনাট্য রচনা করার অনুরোধ করেন । মাতরলাঁকের নতির শুধুমাত্র দুটি এখনও বিদ্যমান আছে; গোল্ডউইন সেগুলো ব্যবহার করেননি । মাতরলাঁক সেগুলো "মৌমাছির জীবনের" উপর ভিত্তি করে বানিয়েছিলেন । ইহার প্রথম কয়েক পাতা পড়ার পর গোল্ডউইন তার অফিসে বিস্ফারিত কন্ঠে চিৎকার করে বললেন, "ওহ্ ঈশ্বর, নাটকের নায়ক একটা মৌমাছি!"

রচনা কর্ম :

কাব্য 

  • সেরেস কডস (১৮৮৯)
  • ডিওয চেনসন্স (১৮৯৬)
  • কুইঞ্জ চেন্সন (ডিওয চেন্সন এর সম্প্রসারিত সংস্করণ:১৯০০)

নাটক 

  • লা প্রিন্সেস মালেইন (প্রিন্সেস মালেইন) (প্রকাশকাল ১৮৮৯)
  • এল'ইন্ট্রাস (ইন্ট্রুডার) (প্রকাশকাল ১৮৯০; প্রথম মঞ্চস্থ ২১ মে ১৮৯১)
  • লেস এভিউগলস (দ্য ব্লাইন্ড) (প্রকাশকাল ১৮৯০; প্রথম মঞ্চস্থ ৭ ডিসেম্বর ১৮৯১)
  • লেস সেপ্ট প্রিন্সেসেস (দ্য সেভেন প্রিন্সেসেস) (প্রকাশকাল ১৮৯১)
  • পেলিস এন্ড মেলিসান্ড (প্রকাশকাল ১৮৯২; প্রথম মঞ্চস্থ ১৭ মে ১৮৯৩)
  • আলাদিন এট পেলোমাইডস (প্রকাশকাল ১৮৯৪)
  • ইন্টেরিয়ার (ইন্টিরিয়র) (প্রকাশকাল ১৮৯৪; প্রথম মঞ্চস্থ ১৫ মার্চ ১৮৯৫)
  • লা মোর্ট দে টিনটাগালস (দ্য ডেথ অব টিনটাগালস) (প্রকাশকাল ১৮৯৪)
  • অ্যাগলাভ্যাইন এট সেলাইসেট (প্রথম মঞ্চস্থ ডিসেম্বর ১৮৯৬)
  • অ্যারিয়ান এট বার্ব-ব্লিউ (অ্যারিয়ান এন্ড ব্লুবিয়ার্ড) (প্রথম প্রকাশ জার্মান অনুবাদে ১৮৯৯)
  • সয়ার বিয়াটরাইস (সিস্টার বিটরাইস) (প্রকাশকাল ১৯০১)
  • মন্না ভান্না (প্রথম মঞ্চস্থ মে ১৯০২; প্রকাশকাল ১৯০২)
  • জয়যাল (প্রথম মঞ্চস্থ ২০ মে ১৯০৩; প্রকাশকাল ১৯০৩)
  • লে মিরাকল দে সেইন্ট আনটয়েন (দ্য মিরাকল অব সেইন্ট এন্টনি) (প্রথম মঞ্চস্থ জার্মান অনুবাদে ১৯০৪)
  • এল'ওইজিউ ব্লিউ (দ্য ব্লু বার্ড) (প্রথম মঞ্চস্থ ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯০৮)
  • মেরি-ম্যাগডালাইন (মেরি ম্যাগডালেন) (প্রথম মঞ্চস্থ জার্মান অনুবাদে ১৯১০; ফ্রান্সে প্রকাশকাল ১৯১৩)
  • লে বর্গমিস্ট্রে দে স্টিলমান্ড (প্রথম মঞ্চস্থ বুয়েনোস আইরেসে ১৯১৮; প্রকাশকাল ১৯১৯)
  • লেস ফিয়ানকেইলস (প্রকাশকাল ১৯২২)
  • দ্য ক্লাউড দ্যাট লিফ্টেড (প্রকাশকাল ১৯২৩)
  • লে মালহিয়ার পাসে (প্রকাশকাল ১৯২৫)
  • লা পুইসেন্স দেস মোর্টস (প্রকাশকাল ১৯২৬)
  • বার্নিকুয়েল (প্রকাশকাল ১৯২৬)
  • মেরি-ভিক্টোয়ার (প্রকাশকাল ১৯২৭)
  • জুডাস দে কেরিওথ (প্রকাশকাল ১৯২৯)
  • লা প্রিন্সেস ইসাবেল (প্রকাশকাল ১৯৩৫)
  • জিন ডি'আর্ক (জোয়ান অব আর্ক) (প্রকাশকাল ১৯৪৮)

প্রবন্ধ 

  • "আওয়ার ফ্রেন্ড দ্য ডগ" ডড,মিড এন্ড কোম্পানি (পুনর্মুদ্রণ: সাইমন ও সাস্টার,১৯৪৩)
  • লে ট্রেজর দেস হাম্বলেস (দ্য ট্রেজার অব দ্য হাম্বল):১৮৯৬
  • লা সাগেস এট লা ডেস্টিনি (অভিজ্ঞতা ও ভাগ্য):১৮৯৮
  • লা ভায় দেস এবায়েলস (মৌমাছির জীবন):১৯০১
  • লে টেম্পল এনসেভেলি (প্রোথিত মন্দির):১৯০২
  • লে ডাবল জার্ডিন (দ্বিভাগবিশিষ্ট বাগান):১৯০৪
  • এল'ইনটেলিজেন্স দেস ফ্লেয়ার্স (ফুলের বুদ্ধিমত্তা):১৯০৭
  • লা মোর্ট (আমাদের মৃত্যুর পরের জীবন, প্রথমে ইহার অসম্পূর্ণ সংস্করণ মৃত্যু শিরোনামে ১৯১১ সালে ইংরেজিতে প্রকাশ পায়;তারপর ১৯১৩ সালে ইহার সম্পূর্ণ সংস্করণ ফ্রেঞ্চে প্রকাশ পায়)
  • এল'হোট ইনকনু (প্রথম প্রকাশ ইংরেজি অনুবাদে ১৯১৪;মুল সংস্করণ ফ্রেঞ্চে ১৯১৭)
  • লেস ডেব্রিস দে লা গিউয়ার:১৯১৬
  • লে গ্রান্ড সিক্রেট:১৯২১ (দ্য গ্রেট সিক্রেট:১৯২২)
  • লা ভায় দেস টারমাইটস (উইপোকার জীবন):১৯২৬
  • লা ভায় দে এল'এস্পেস (মহাশূন্যের জীবন):১৯২৮
  • লা গ্রান্ড ফীরি:১৯২৯
  • লা ভায় দেস ফোরমিস (পিঁপড়ার জীবন):১৯৩০
  • এল'আরাইগনি দে ভিরি:১৯৩২
  • আভান্ট লে গ্রান্ড সাইলেন্স (মহানীরবতার আগে):১৯৩৪
  • এল'ওমব্রে দেস আইলস (পাখার ছায়া):১৯৩৬
  • ডিভান্ট ডিউ:১৯৩৭
  • এল'অটরে মান্ড ওঁ লে ক্যাডরেন স্টেলাইয়ার (অন্য দুনিয়া, অথবা নক্ষত্র প্রণালী):১৯৪১

স্মৃতিকথা 

  • বুলস ব্লুজ:১৯৪৮

অনুবাদ 

  • লে লিভ্রে দেস xii বিগুইন্স এন্ড এল'ওরনেমেন্ট দেস নোসেজ স্পিরিচুয়ালস(ফ্লেমিশ "রুজব্রোক" থেকে ফ্রেঞ্চে অনুবাদ করেন):১৮৮৫
  • এল'ওরনেমেন্ট দেস নোসেজ স্পিরিচুয়ালস দে রুয়াইজব্রোক এল'এডমিরেবল:১৮৯১
  • এনাবেলা, এন এডাপশন অব জন ফোর্ড'স 'টিস পিটি শি'স অ্যা হুর(মঞ্চস্থ ১৮৯৪)
  • শেক্সপিয়রের "ম্যাকবেথ" অনুবাদ করে ১৯০৯ সালে মঞ্চস্থ করেন


সম্মাননা :

১৯২০: Order of Leopold[২৮] এর গ্রান্ড কর্ডন লাভ ।
১৯৩২: রাজা আলবার্ট এক রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে মরিসকে কোঁত উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু মরিস নিবন্ধীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ফরম পূরণে অবহেলা করায় তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।
 ১৯১১ :  সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, "তার বহুমুখী সাহিত্যকর্মের সমাদরের জন্যে এবং বিশেষ করে তার নাটকীয় কাজের জন্যে, যা তার কল্পনার প্রাচুর্যতা এবং ছন্দোময় কল্পনাশক্তির মাধ্যমে বিশিষ্টতা অর্জন করেছে, যা তার রূপকথার ছলের মধ্যে মাঝে মাঝে প্রকাশ করে এক গভীর উদ্দীপনা যখন তা এক রহস্যময়তার মধ্যে পাঠকদের অনুভূতি ও অন্তর স্পর্শ করে এবং তাদের কল্পনাকে উদ্দীপিত করে।" 




১৯৩০ সালে তিনি একটা জমিদার বাড়ি কিনেন এবং এর নাম দেন ওরলামন্ড, যা তার রচিত কুইঞ্জ চ্যান্সন্সে দেখা যায় ।

১৯৩২ সালে বেলজিয়ামের রাজা প্রথম আলবার্ট তাকে কাম্ট উপাধি দেন ।

১৯৪০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস এর একটি শিরোনাম অনুসারে, তিনি লিসবন থেকে গ্রিক লাইনার নিয়া হেলাসে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছান । তিনি বেলজিয়াম এবং ফ্রান্সে নাৎসি বাহিনীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে লিসবন চলে আসেন । দ্য টাইমসকে তিনি বলেছেন, "আমি জানতাম যে যদি জার্মানরা আমাকে ধরতে পারতো, তাহলে আমাকে এক গুলিতে হত্যা করত । কারণ, আমাকে তারা আমার নাটকের ("স্টিলমান্ডের মেয়র" ১৯১৮ সালে বেলজিয়ামে জার্মানদের ব্যবসায় প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছিল) জন্য জার্মানির শত্রু হিসেবে গণ্য করতো ।" আমেরিকায় তার আগে থেকেই যাতায়াত থাকায়, সে তখনও তার সুনামের জন্য আমেরিকানদের নৈমিত্তিক, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ফ্রান্সের প্রতি প্রচন্ড রকম মমত্ববোধ সম্পন্ন হিসেবে খুঁজে পান ।
যুদ্ধ শেষে ১৯৪৭ সালের ১০ আগস্ট তিনি নাইসে ফিরে আসেন । তিনি ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত বিশ্ব লেখক সমিতি পেন ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি ছিলেন । ১৯৪৮ সালে, ফরাসি একাডেমি তাকে ফরাসি ভাষার জন্য পদক প্রদান করে । ৬ মে, ১৯৪৯ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান 

মৃত্যু -  ৬ মে ১৯৪৯।
==========∆∆∆∆∆∆∆∆=============

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য। ইয়োহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে (Johann Wolfgang von Goethe) ২৮.০৮.২০২১. Vol - 478/1. The blogger in literature e-magazine.


  ইয়োহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে। (Johann Wolfgang von Goethe,)


গ্যোটের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় -প্রেম. প্রেমিকা তার চেয়ে বয়সে বেশ বড়। নাম আনা ক্যাথারিনা শোনোকোপফ।গ্যোটে তার প্রেমে রীতিমত হাবুডুবু খেতে লাগলেন। এ যেন কাব্যের মোক্ষম উপাদান! শত শত কবিতা আর চিঠি লিখতে থাকলেন আনা ক্যাথারিনাকে নিয়ে। ধীরে ধীরে সেই প্রেমকাহিনী এক মহাকাব্যে পরিণত হলো। গ্যোটের অমর সৃষ্টি 'ফাউস্ট' কাব্যগ্রন্থটির প্রধান উপজীব্য তাদের এই প্রেমকাহিনী। কিন্তু ফাউস্ট প্রকাশের পর বেশি দিন আর তাদের প্রেম টিকলো না। বিয়ের আলোচনা তো কখনো আসেইনি। গ্যোটে নতুন নতুন প্রেমিকা অভিমুখে যাত্রা শুরু করতে লাগলেন। সেই সাথে সাহিত্য তো আবিষ্কার হচ্ছেই!

গ্যোটের জীবনের বহু প্রেমের মাঝে একটি প্রেম অবশেষে বিশেষ হয়ে উঠলো। ক্রিস্টিনা ভলপিয়াস নামের এক নারীর সাথে তার দীর্ঘদিনের প্রেম ছিল। তার সাথে বিয়ে হলো। সংসারও টিকে ছিল তার সাথে। কিন্তু যখন বিয়ে হলো, তখন তাদের প্রথম সন্তানের বয়স ১৭ বছর। আর প্রেমের বয়স ২০ বছর। গ্যোটের বয়স ৫৭ বছর। গ্যোটে মোট ৫ সন্তানের জনক হয়েছিলেন। কিন্তু সকল সন্তানই তার জীবদ্দশায় মারা যান, স্ত্রী-ও তার জীবদ্দশায় মারা যান।


গ্যেটের জন্ম জামনির ফ্রাঙ্কফুট শহরে। তারিখটি ছিল ১৭৪৯ সালের ২৮শে আগস্ট। গ্যেটের প্রপিতামহ ছিলেন কামার, পিতামহ দজি। পিতামহ চেয়েছিলেন সম্ভ্রান্ত নাগরিক হিসেবে ছেলেকে গড়ে তুলতে। গ্যেটের পিতা যোহান ক্যাসপর পড়াশেুসা শেষ করে উচ্চপদস্থ কমচারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন। যোহান ছিলেন যেমন শৃঙ্খলাপরায়ণ তেমনি সুপণ্ডিত। অন্যদিকে গ্যেটের মা ছিলেন সহজ সরল উদার হদয়ের মানুষ। গ্যেটেন পিতা এবং মাতা দুজনেরই ছিল ব্যাপক প্রভাব। গ্যেটে লিখেছেন, আমার জীবন সম্বন্ধে দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছিল পিতার কাছ থেকে মায়ের কাছে পেয়েছিলাম সৃষ্টির প্রেরণা।

ছেলেবেলা থেকেই গ্যেটে ছিলেন এক ভিন্ন চরিত্রের মানুষ। পিতা যোহান ক্যাসপার চেয়েছিলেন ছেলে তাঁর মতই একজন উচ্চপদস্থ রাজকমচারী হবে। চার বছর বয়সে গ্যেটেকে স্কুলে ভতি করে দেওয়া হল। কিন্তু স্কুলের ছোট্ট গণ্ডির মধ্যে অল্পদিনেই গ্যেটের প্রাণ হাঁপিয়ে উঠল। মাস্টারদের শাসন, অন্য ছেলেদের দুষ্টামি, কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলার বেড়াজালে কিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারলেন না। অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাধ্য হয়ে পিতা তাঁকে বাড়িতে এনে গৃহশিক্ষক রেখে পড়াবার ব্যবস্থা করলেন। একদিকে চলতে লাগল ল্যাটিন, গ্রীক, ইটালিয়ান, ইংরাজি ভাষা শিক্ষা, অন্যদিকে ছবি আকাঁ, গান শেখা। এরই মধ্যে শৈশব কালেরই গ্যেটের মনে গড়ে উঠেছিল এক ভিন্ন জগৎ। যা প্রচলিত জীবন পথ তেকে স্বতন্ত্র, ছ বছর বয়সে ঈশ্বরের অস্তিত্বে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে পথে পথে ঘুরে বেড়াতেন গ্যেটে। দুচোখ ভরে দেখতেন প্রকৃতির অপরুপ শোভো। মানুষজন বাড়িঘর জীবনের নানা রুপ। যা কিছু একবার দেখেতেন জীবনের স্মৃতিপটে তা অক্ষয় হয়ে থাকত। কৈশোরের এই অভিজ্ঞতা পরবতীকালে তাঁর নানান রচনায় মূর্ হয়ে উঠেছে। কৈশোরেই শুরু হয়েছিল তাঁর সাহিত্য জীবনের হাতেখড়ি। তিনি নিজের সম্বন্ধে লিখেছেন, ‘‘যখন আমার দশ বছর বয়স তখন আমি কবিতা লিখতে শুরু করি যদিও জানতাম না সেই লেখা ভাল কিম্বা মন্দ। কিন্তু উপলব্ধি করতে পারতাম অসাধারণ কিছু সৃষ্টি করবার ক্ষমতা আমার মধ্যে রয়েছে।” প্রকৃতপক্ষে জন্ম থেকেই তিনি কবি। কবিতা ছিল তাঁর সত্তায় আর সেই সত্তার সাথে মিশে ছিল তাঁর প্রেম। যে প্রেমের শুরু মাত্র পনেরো বছর বয়সে। শেষ প্রেম চুয়াত্তর বছর বয়সে।

ইয়োহান ক্যাস্পার আইন ব্যবসায় ব্যর্থ হলেও তার ইচ্ছা ছিল সন্তান গ্যোটে তার সেই অভাব পূরণ করবেন। বড় আইনজীবী হবেন। সেজন্য সন্তানকেও লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি করলেন। সেই সূত্রে গ্যোটের ফ্রাঙ্কফুর্ট জীবনের অবসান ঘটলো। তখন তার বয়স মাত্র ১৫ বছর। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরুর আগেই, অর্থাৎ ফ্রাঙ্কফুর্টে থাকাকালীন সময়ে বাবার লাইব্রেরির বই পড়ে গ্যোটে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বুৎপত্তি অর্জন করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ছয়টি ভাষা; জার্মান, হিব্রু, ল্যাটিন, ইতালী, ফরাসি ও ইংরেজি রপ্ত করেন। শুধু তা-ই নয়, ছবি আঁকা, নৃত্য কৌশল, অসি চালনা ও কবিতার ব্যাকরণসহ নানা বিষয়ে এই অল্প বয়সেই তিনি পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ঠিক যেন সৈয়দ মুজতবা আলীর সেই 'ইন হরফন মৌলা' বা সকল কাজের কাজি।

গ্যোটের আইন পড়তে ভালো লাগে না। ভালো লাগে সাহিত্য পড়তে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা বাদ দিয়ে সাহিত্যের জগতে ডুবে থাকেন। বিষয়টি আর গোপন থাকলো না, শিক্ষকরাও টের পেয়ে গেলেন। শিক্ষকদের বারবার সতর্কতার মুখে গ্যোটের আইন পড়া চলছিল বটে, কিন্তু নিজে ডুবে গেলেন সাহিত্যের মহাসমুদ্রে। 


সাহিত্য সাধনা করতে গিয়ে তিনি সন্ধান পেলেন বিশিষ্ট সাহিত্য গবেষক ও ইতিহাসবেত্তা হেবেংকেলমানের। গ্যোটে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন। তার কাছ থেকে সাহিত্যের নানা দিক শিখতে লাগলেন। ইংরেজি ও ফরাসি সাহিত্য অধ্যয়ন করতে থাকলেন। এমন সময় জার্মানিতে বিখ্যাত একটি নাট্যগ্রন্থ প্রকাশিত হলো, নাম 'লাওকোন'; লেখক গোটহোল্ড ইফ্রেইম লেসিং।

বইটি গ্যোটের হস্তগত হওয়ার পর নিমিষেই পড়ে ফেললেন। তিনি লেখকের প্রেমে পড়ে গেলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, যে করেই হোক এই লেখককে খুঁজে বের করে তার সহচর্য নিতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, গোটহোল্ড ইফ্রেইম লেসিং ড্রেসডেন শহরে বসবাস করেন।গ্যোটে লিপজিগ ছেড়ে ড্রেসডেনে চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে প্রথমে এক মুচির ঘরে আশ্রয় নিয়ে শহরের আনাচে কানাচে শিল্প-সাহিত্য ও লেখকদের খুঁজে বেড়াতে লাগলেন। গোটহোল্ড ইফ্রেইমের সাথেও সাক্ষাৎ ঘটে গেল। পাশাপাশি আরও অনেক সাহিত্যিকের সাথে সেখানে তিনি পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান।

একপর্যায়ে গ্যোটে আবার লিপজিগে তথা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসলেন। তবে এখন তার মাথায় একটি শিল্পবোধ জন্ম নিয়েছে। তিনি চারদিকে তাকিয়ে দেখলেন, সবাই সুন্দর সুন্দর পোশাক পরেন, অথচ তার পোশাক অনেক মলিন। সাথে সাথে তিনি দর্জিখানায় গিয়ে একটি ফিটফাট পোশাক তৈরি করে নিলেন। তারপর থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে রুচিশীল ছেলে হিসেবে গণ্য হলেন।

আইনের ছাত্রের যখন কবি কবি ভাব, তখন তো কত প্রেমিকাই জুটে যাওয়ার কথা! কত প্রেমিকা যে গ্যোটের জীবনে এসেছে তার হিসেব খোদ তার জীবনীকাররাও সঠিকভাবে বের করতে পারেন     .

গ্যোটের আইনের পড়ালেখা সাফল্যের সাথে শেষ হলো। ১৯৬৬-৬৭ সালের দিকে তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ফলে তিনি লিপজিগ ত্যাগ করে ফের বাবা-মায়ের কাছে ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে চলে গেলেন। সুস্থ হওয়ার পর তিনি ফ্রাঙ্কফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন উচ্চতর শিক্ষার জন্য। এখানে আরও বছর দেড়েক পড়ালেখা করলেন। এই ফাঁকে আইন ব্যবসার জন্য আদালতের অনুমতিও পেয়ে গেলেন। কিন্তু আইন ব্যবসা তার আর তেমন করা হয়নি। উল্টো এ সময়ে তিনি বিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকে পড়লেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান নিয়ে পড়া বন্ধুবান্ধবদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিলেন। তাদের সাথে চুপিচুপি ক্লাসও করতে থাকলেন।পরিস্থিতি দেখে গ্যোটের বাবা বুঝতে পারলেন, ছেলে এখানে থাকলে তাকে দিয়ে আর আইন ব্যবসা হবে না। তাই তিনি পরামর্শ দিলেন উইটর্জলার শহরে গিয়ে আইন ব্যবসা শুরু করতে। বাবার আদেশ বলে কথা। মানসিকভাবে রাজি না হলেও বাবার আদেশ মেনে উইটর্জলার শহরে গিয়ে আইন ব্যবসা শুরু করলেন গ্যোটে।

সেখানে এক বৃদ্ধের সাথে তার পরিচয় ঘটলো, নাম আমটমান বুফ। স্ত্রী মারা যাওয়ায় বৃদ্ধের দুঃখের জীবন চলে যাচ্ছে প্রায় এক ডজন ছেলেমেয়ে নিয়ে। এর মধ্যে বড় মেয়ের নাম চার্লট লোটে বফ। বৃদ্ধের কাছে আসা যাওয়ার ফাঁকে প্রেমিক পুরুষ গ্যোটের প্রেমে পড়ে গেলেন লোটে। কিন্তু এ এক জটিল প্রেম। কারণ, ইতিমধ্যেই লোটের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আরেক ছেলের সাথে। সেই ছেলেটির নাম কেশটন।গ্যোটের প্রেম শেষপর্যন্ত তাদের বিয়ে ঠেকাতে পারল না। প্রেমের মাস ছয়েক পরে সেই কেশটনের সাথেই লোটের বিয়ে হয়ে গেল। তবে আজীবন গ্যোটের সাথে যোগাযোগ ছিল তার। দেখা করতেন, একসাথে ঘুরতেন, চিঠি আদান-প্রদান করতেন। কেশটন বিষয়টিকে একভাবে মেনে নিয়েছিলেন আর কী! 

কিন্তু কথায় আছে, কবিদের প্রেমিকা আসলেও কবির ভালো, আবার চলে গেলেও কবির ভালো! কারণ উভয় অবস্থাতেই কবির কবিতা আসে। গ্যোটে তো একজন কবি। তাই প্রেমিকা লোটেকে মনের মতো করে না পেলেও তিনি তার লেখার উপাদান পেয়েছিলেন ঠিকই। সেই দুঃখবোধ নিয়ে ১৭৭৪ সালে রচনা করলেন তার বিখ্যাত উপন্যাস 'দি সরও অফ ইয়াং ওয়ার্থার' বা 'যুবক ওয়ার্থারের কষ্ট'। 

এরপরও গ্যোটের জীবনে বহু প্রেম এসেছে, পাশাপাশি সাহিত্য সাধনাও অব্যাহত ছিল। তার সুখ্যাতি ইতিমধ্যেই বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৭৭৪ সালের শেষের দিকে একটি ভিন্ন ঘটনা ঘটলো। তার কাছে উইম্বার রাজদরবারের এক প্রতিনিধি আসলো। সাথে দুই রাজকুমারও আছেন। তারা সবাই মিলে গ্যোটেকে তাদের রাজদরবারে নিমন্ত্রণ জানালো। দরবারে গেলে প্রথমে তাকে সাহিত্যিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো। তারপর তার উপরে আসলো মন্ত্রিত্বের ভার। তিনি যথাক্রমে কৃষি, খনিজ সম্পদ, অর্থ ও সামরিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে ফের তিনি বিজ্ঞান চর্চায় মনোযোগী হন। ব্যস্ততা বহুগুণে বেড়ে যায়। তবুও সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রাখেন তিনি।উপন্যাস লিখলেও গ্যেটে অনুভব করেছিলেন উপন্যাসে নয়, নাটকেই তাঁর প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটা সম্ভব । একক প্রচেষ্টায় গড়ে তুললেন নাটকের দল লিটলট থিয়েটার । এই দলের প্রয়োজনে কয়েকটি অসাধারণ নাটক রচনা করেছিলেন । প্রথম পর্বের নাটকে দেখা যায় তারুণ্য আর যৌবনের উদ্দামতা । তার Stella নাটকে দেখা যায় নায়ক তার স্ত্রীর সাথে বাস করে, অন্যদিকে তার প্রেমিকাকেও ভালবাসে । তিনজরেন মধ্যে গড়ে উঠেছে এক পারস্পারিক সম্পর্ক । এ পরোক্ষভাবে দুই পত্নী গ্রহণের মতবাদ । এর বিরুদ্ধে তীব্র জনমত গড়ে ওঠে । নিরুপায় হয়ে গ্যেটে নাটকের শেষ অঙ্কের পরিবর্তন ঘটালেন । নায়ক স্থির করতে পারে না কাকে বেছে নেবে স্ত্রী না প্রেমিকাকে? মানসিক দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত হয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করে ।

কিন্তু ক্রমশেই গ্যেটের মধ্যেকার এই বিদ্রোহ মনোভাব প্রশমিত হয়ে আসে । যৌবনের উদ্দমতায় যিনি বিদ্রোহী হয়ে সব কিছুকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন, এখন হয়ে ওঠেন প্রজ্ঞাবান দার্শনিক, যিনি সব কিছুর মধ্যে অন্বেষণ করেন সৌন্দরযের প্রজ্ঞার, তিনি জানতেন অভিজাদের বাইরের সৌন্দরযের মধ্যে প্রকৃত সৌন্দর্যকে খুঁজে পাওয়া যাবে না । একদল কয়লা খনির শ্রমিক, রুটি তৈরির কারিগরকে দেখে বলেছিলেন তথাকথিত এই নিচু সমাজের মানুষেরাই ঈশ্বরে চোখে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে সুন্দর ।

গ্যেটের জীবনের আরেকটি ঘটনা, কবি শীলারের সাথে পরিচয় । এই পরিচয় অল্পদিনের মধ্যেই গভীর বন্ধুত্বে পরিণত হল । যদিও দু’জনে ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রের মানুষ । গ্যেটের বয়স তখন ৪৫, শীলারের ৩৫ । গ্যেটে  প্রাণবন্ত সজীব, শীলার অসুস্থ । ধর্মের প্রতি গ্যেটের কোন আগ্রহ ছিল না তিনি বিশ্বাস করতেন অন্তরের প্রকৃতির সৌন্দরযে । অন্যদিকে শীলার ছিলেন ধর্মভীরু, তিনি বিশ্বাস করতেন ন্যায়বিচার । গ্যেটে পেয়েছেন ভাগ্যের অকৃপণ সহায়তা, নারীর প্রেম কিন্তু শীলার পেয়েছেন শুধু দারিদ্র্য আর বঞ্চনা । এত বৈষম্য সত্ত্বেও দু’জনের বন্ধুত্ব ছিল অকৃত্রিম । এই বন্ধুত্ব দু’জনের সাহিত্য সৃষ্টির ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহদণ করেছিল । শীলার Horen নামে একটি পত্রিকা সম্পাদন করতেন । গ্যেটে এই পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন । এই সময় তাঁদের লেখার একাধিক বিরূপ সমালোচনা হতে থাকে । দু’জনে সরস বুদ্ধিদীপ্ত কবিতায় তার জবাব দিতে থাকেন । ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে যৌথ উদ্যেগে প্রকাশিত হয় কাব্যগ্রন্থ  Musen Almanach ।

১৮০৫ সালে যখন শীলারের মৃত্যু হয়, গ্যেটে শিশুর মত কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন । এক বন্ধুকে লিখেছিলেন আমার অর্ধেক অস্তিত্ব চলে গেল ।

মাত্র ৪৫ বছর বয়সে বন্ধু দেহরক্ষা করলেও ঈশ্বরের আশীর্বাদে দীর্ঘ জীবন পেয়েছিলেন গ্যেটে । ১৭৪৯-১৮৩২ প্রায় তিরাশি বছর এই সুদীর্ঘ জীবনে অনেক কিছু হারাতে হয়েছে তাঁকে প্রিয় বন্ধু, আদরের বোন, প্রিয়তমা স্ত্রী, একমাত্র সন্তান । এত বেদনার মধ্যেও তাঁর জীবনের অপ্রতিহত গতি কখনো রুদ্ধ হয়নি । তিনি তাঁর সমস্ত যন্ত্রণা বেদনাকে ব্যর্থতাকে রূপান্তর ঘটিয়েছেন তাঁর সৃষ্টির মধ্যে । এমন বিস্ময়কর বহুমুখী প্রতিভা মানব ইতিহাসে দুর্লভ । কি ছিলেন না তিনি? কবি, নাট্যকার, চিত্রকর, সঙ্গীতজ্ঞ, বিজ্ঞানী, দার্শনিক । তিনি প্রায় ৬০টি বই লিখেছেন – এর মধ্যে আছে গাথা, গীতকবিতার ব্যঙ্গনাটক, কাব্য, নাটক, প্রবন্ধ, উপন্যাস, মজাদার কাহিনী, ভূত-দৈত্যাদানবের গল্প । তাঁর এই বহুব্যাপ্ত প্রতিভার নির্যাস দিয়ে সমস্ত জীবন ধরে সৃষ্টি করেছেন ফাউস্ট, যার প্রথম খণ্ড লিখতে লেগেছিল ত্রিশ বছর, দ্বিতীয় খণ্ড শেষ করতে লেগেছিল পঁচিশ বছর ।

বৃদ্ধ হয়েও যৌবনের মত তারুণ্যের দীপ্তিতে ভরপুর হয়ে থাকতেন গ্যেটে । শোনা যায় ভাইমারের যুদ্ধের পর যখন নেপোলিয়নের সৈন্যবাহিনী জার্মানি দখল করে, নেপোলিয়ন আদেশ দিয়েছিলেন গ্যেটের প্রতি সামান্যতম অমর্যাদা যেন না করা হয় । তিনি গ্যেটেকে আমন্ত্রণ করেছিলেন তাঁর প্রাসাদে ।

গ্যেটে যখন এলেন, নেপোলিয়ন বিস্ময়ভরা চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে বলে উঠেছিলেন, একটা মানুষ আপনি! বৃদ্ধ গ্যেটের ব্যক্তিত্ব, তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়েছিলেন নেপোলিয়ন । তাঁর সাথে নানান বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন । বহু বিষয়ে গ্যেটে নেপোলিয়নের মতের সাথে একমত হতে পারেননি । গ্যেটে স্পষ্টভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করেছিলেন । গ্যেটে যখন চলে যান, নেপোলিয়ন গভীর শ্রদ্ধায় আবার বলেছিলেন একটা মানুষ বটে । গ্যেটে সম্বন্ধে নেপোলিয়নের এই মন্তব্য যথার্থই সত্য । একজন পরিপূর্ণ মানুষ । জীবনের অন্তিম লগ্নে এসেও এই মানুষটি বিস্মৃত হননি তিনি মানুষ, ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ জীব, যে প্রতিমুহূর্তে নিজেকে উত্তরণ করে চলেছে অন্ধকার থেকে আলোকে ।

তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে চারটি উপন্যাস, মহাকাব্য ও গীতিকাব্য, গদ্য ও গদ্যকাব্য, নাটক, স্মৃতিকথা, একটি আত্মজীবনী, সাহিত্যিক ও নন্দনতাত্ত্বিক সমালোচনা এবং উদ্ভিদবিদ্যা, শারীরবিদ্যা ও রং বিষয়ক রচনা। এর পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য সাহিত্যিক ও বৈজ্ঞানিক খণ্ডরচনা, ১০ সহস্রাধিক চিঠি এবং প্রায় ৩ হাজার চিত্রকর্ম.

উল্লেখযোগ্য রচনাবলি :  

ফাউস্ট ,ডি লাইডেন ডেস ইউঙেন ভেরটার্স ,Wilhelm Meister's Apprenticeship,Elective Affinities,Prometheus,Zur Farbenlehre,Italienische Reise,West–östlicher Divan। Etc

দাম্পত্যসঙ্গী : ক্রিস্টিয়ানা ভাল্পিয়াস (বি. ১৮০৬; মৃ. ১৮১৬)


সন্তান :৫ (চারজন বাল্যকালে প্রয়াত)

অগাস্ট ফন গ্যোটে

জুলিয়াস অগাস্ট ভাল্টার (১৭৮৯–১৮৩০)

এমন শোকার্ত গ্যোটে ১৮৩২ সালের মার্চে হঠাৎ ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। এর কয়েকদিন পর, ২২ মার্চ, তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তার কফিন রাখা হয় উইম্বার রাজদরবারের সংরক্ষিত স্থানে। আজও তা জার্মানিতে সংরক্ষিত আছে।




============∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆=======